Follow palashbiswaskl on Twitter

ArundhatiRay speaks

PalahBiswas On Unique Identity No1.mpg

Unique Identity No2

Please send the LINK to your Addresslist and send me every update, event, development,documents and FEEDBACK . just mail to palashbiswaskl@gmail.com

Website templates

Jyoti basu is dead

Dr.B.R.Ambedkar

Monday, July 8, 2013

কবিতাকে মেয়েদের নেহাত বন্ধুই নয় হাতিয়ারও করতে চেয়েছিলেন মল্লিকা

কবিতাকে মেয়েদের নেহাত বন্ধুই নয় হাতিয়ারও করতে চেয়েছিলেন মল্লিকা

কবিতাকে মেয়েদের নেহাত বন্ধুই নয় হাতিয়ারও করতে চেয়েছিলেন মল্লিকা
কবিরা নিজেদের একটু বেশিই লেখেন আর বাংলা কবিতায় যেহেতু চিরকালই গীতিকবিতার প্রাবল্য সেহেতু বাংলা কবিরা নিজেদের একটু বেশি বেশিই লিখেছেন৷ মল্লিকা সেনগুপ্ত এ ক্ষেত্রে ছিলেন এক বিরল ব্যতিক্রম৷ কবির যে মুদ্রাদোষ তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করে দেয়, সেই মুদ্রাদোষ হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে তিনি অন্যদের একজন মনে করে নিজেকে লিখেছেন; তাঁর লেখা তাই অন্যদের 'জন্য' লেখা হয়নি, অন্যদের 'হয়ে' লেখাও হয়নি, হয়ে উঠেছে অন্যদেরই লেখা৷ গোটা ভারতবর্ষ জুড়েই যে বছর আক্রান্ত মেয়েদের কথা, মেয়েদের সমস্যা পাবলিক পরিসরের অনেকটা জুড়ে থেকেছে, সেই বছরটিতে কবি মল্লিকা সেনগুপ্তর 'কবিতা সমগ্র' পড়তে পড়তে মনে হল যতখানি মনোনিবেশ মল্লিকা সেনগুপ্তর কবিতা দাবি করে ততখানি মনোযোগ দিয়ে পাঠক ও সমালোচক মল্লিকার কবিতা পড়েছেন কি? তাঁর অকাল প্রয়াণ তাঁকে যতখানি উদযাপনের বস্ত্ত বানিয়েছে ততখানি আমাদের ভাবনার সামগ্রী করে তোলেনি৷

মেয়েদের কথা বললাম বটে, তবে এমনটা মনে করার কোনও কারণ নেই শুধু মেয়েদের জন্যই কবিতা লিখেছেন মল্লিকা৷ তাঁর কবিতায় বার বার কথা বলেছে হাঘরে আর দেবদাসীরা৷ যদিও মল্লিকা সেনগুপ্তর কবিতা সম্পর্কে একটি লাইনও লেখা হলে মেয়েদের কথাই আগে চলে আসে কারণ যখন কবিতা লিখতে এসেছিলেন মল্লিকা তখন হাঘরেদের নিয়ে কবিতা লেখার কলমের অভাব ছিল না, কম পড়েছিল মেয়েদের কথা বলতে পারে এমন কলম৷ আশির দশকের সূচনায় কলম ধরে মেয়েদের জীবনকে কী ভাবে তাঁর কবিতায় আনলেন মল্লিকা? 'কবিতা সমগ্র'-তে গ্রন্থিত মল্লিকার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'চল্লিশ চাঁদের আয়ু' (১৯৮৩ ) থেকে শেষ প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ 'বৃষ্টিমিছিল বারুদমিছিল' (২০০৯ ) পর্যন্ত মল্লিকার যে যাত্রা সেই যাত্রার সঙ্গী হলে দেখা যায় নির্যাতিতা মহিলাদের পাশাপাশি লড়াকু মহিলারাও বার বার বিষয় হয়েছেন মল্লিকার কবিতায়৷ স্কুলবাসে যৌন হেনস্থার শিকার হয় ছোট্ট একটি মেয়ে --- সে মেয়ে জায়গা পায় মল্লিকার কবিতায়৷ জায়গা পান আম্রপালী, তুতেনখামেনের মা, সুজাতা, উইনি ম্যান্ডেলা, ফুলন দেবী --- এ রকম অতীত আর সমকাল, মিথ আর বর্তমানের নানা চরিত্র৷ বার বার মল্লিকা নতুন ভাবে নির্মাণের চেষ্টা করেছেন সীতা আর কৃষ্ণাকে৷ কিন্ত্ত, বাংলা কবিতায় নির্যাতিতা আর সংগ্রামী মহিলাদের জীবনকে লিখনের বিষয় অনেক মহিলা কবিই করেছেন৷ নির্যাতিতা দ্রৌপদীকে নতুন করে নির্মাণ করেছেন এমনকী পুরুষ কবিরাও৷ মল্লিকা তা হলে নতুন কী করেছেন? 'কবিতা সমগ্র' পড়তে পড়তে মনে হল মূলত তিনটি কারণে বাংলা কবিতা মল্লিকা সেনগুপ্তকে বিস্মৃত হতে পারবে না৷

নারীজীবনকে, তার যন্ত্রণা, লড়াই ও মহিমাকে, মল্লিকার আগে কবিতায় ধরেছিলেন পঞ্চাশ, ষাট আর সত্তর দশকের বেশ কয়েকজন মহিলা কবি৷ কিন্ত্ত তাঁরা কেউই বিষয় ও ভাষায় মল্লিকার মতো অতখানি স্পষ্ট ছিলেন না৷ আর্থসামাজিক কারণেই তাঁরা অতখানি স্পষ্ট হতে পারেননি৷ প্রথাগত ভাবে কবিতা বলতে বাঙালি যা বোঝে সেই শুদ্ধ কবিতা রচনার দায়ও অনেক সময়েই তাঁদের প্রতিবাদের পায়ে পরিয়েছিল বেড়ি, তাঁদের রাগকে করে তুলেছিল সাংকেতিক৷ এই দায় মল্লিকা বহন করেননি৷ অবশ্য একেবারেই করেননি বললে ভুল বলা হবে৷ 'চল্লিশ চাঁদের আয়ু'কে তো বটেই এমনকী 'আমি সিন্ধুর মেয়ে'কেও গত শতাব্দীর পঞ্চাশ বা ষাট দশকের মহিলা কবিদের কবিতার অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ হিসেবে দেখা যেতে পারে৷ নতুন মল্লিকার দেখা মিলল যে বইটিতে সে বইটির নাম 'অর্ধেক পৃথিবী'৷ 'কবিতা সমগ্র'-এর ভূমিকায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যথার্থই লিখেছেন, '১৯৯৩ সালে প্রকাশিত হয় মল্লিকার 'অর্ধেক পৃথিবী'৷ এই গ্রন্থে তার কিছু কিছু কবিতা অন্যদিকে মোড় নিয়েছে৷' 'অর্ধেক পৃথিবী'তে মল্লিকা আর শুদ্ধ কবিতার বেড়ি পরিয়ে তাঁর কবিতাকে পঙ্গু করে রাখেননি, স্পেডকে তিনি স্পেডই বলেছে , বর্শাফলকের মতো তাঁর কাব্যভাষা ছিন্ন করেছে সাংকেতিক কুয়াশা, আলো ফেলেছে এমন কিছু কিছু বিষয়ের উপর, যে বিষয়গুলি মল্লিকার আগে আর অন্য কোনও কবির কলমে ঠাঁই পায়নি৷ কিন্ত্ত এতখানি স্পষ্ট ভাষায় কবিতা লিখলেন কেন মল্লিকা? মল্লিকার কবিতাগ্রন্থগুলির ধারাবাহিক পাঠ থেকে এটা বেশ বোঝা যায় যে দিন যত গিয়েছে কবি ততই চেয়েছেন লড়াইয়ের ময়দানে তাঁর কবিতা কেবল একটি মেয়ের বন্ধুই নয়, হয়ে উঠুক তার হাতিয়ারও, আর কে না জানে হাতিয়ার যতই ধারালো , 'ততই কার্যকরী!' একথা মানতেই হবে যে আজকের তরুণী কবিরা যে ভাষায় কবিতা রচনা করেন সেই ভাষাটির নির্মাণে মল্লিকা সেনগুপ্তর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷

'অর্ধেক পৃথিবী' গ্রন্থটির প্রথম কবিতা 'আপনি বলুন মার্কস'৷ এই কবিতাটিতেই মল্লিকা প্রশ্ন তুলেছিলেন, 'ছড়া যে বানিয়েছিল, কাঁথা বুনেছিল /দ্রাবিড় যে মেয়ে এসে গম বোনা শুরু করেছিল/আর্যপুরুষের ক্ষেতে, যে লালন করেছিল শিশু/সে যদি শ্রমিক নয়, শ্রম কাকে বলে?'; গৃহশ্রম নিয়ে মার্কসের অবস্থানকে কূট তর্কের মুখোমুখি করেছেন যে সব মার্কসবাদী ও নারীবাদী তাত্ত্বিক তাঁরা অনেকেই হয়তো এই কবিতাটিতে মল্লিকার অবস্থানটিকেও প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারেন, কিন্ত্ত এ নিয়ে অন্তত কোনও প্রশ্ন থাকতে পারে না যে কবিতার অঙ্গনে তত্ত্বের সঙ্গে যে বোঝাপড়া মল্লিকা এই কবিতাটিতে সেরে নিয়েছেন তা বাংলা কবিতায় সম্পূর্ণ নতুন৷ 'আপনি বলুন মার্কস'-এর পরে বার বার তত্ত্বের সঙ্গে এই বোঝাপড়া মল্লিকার কবিতার কেন্দ্রে জায়গা পেয়েছে৷ 'ফ্রয়েডকে খোলা চিঠি'-তে তিনি লিখেছেন, 'পুরুষের দেহে এক বাড়তি প্রত্যঙ্গ /দিয়েছে শাশ্বত শক্তি, পৃথিবীর মালিকানা তাকে / ফ্রয়েডবাবুর মতে ওটি নেই বলে নারী হীনমন্য থাকে /পায়ের তলায় থেকে ঈর্ষা করে পৌরুষের প্রতি৷ ' 'ছেলেকে হিস্ট্রি পড়াতে গিয়ে' কবিতায় জানিয়ে দেন হিস্ট্রি আসলে 'হিজ স্টোরি', লেখেন, 'আসলে হিজড়ে ছিল ইতিহাসবিদ'৷ এই ধরনের কবিতাগুলিতে কবিতার ভিতরেই মল্লিকা এক তর্কের উত্থাপন করেছেন, মেয়েদের নির্যাতনের বাস্তবতাকে অশ্রুসজল অক্ষরে বর্ণনা করে হাততালি পেতে চাননি, সেই বাস্তবতাকে, হ্যাঁ, কবিতাতেই, বিশ্লেষণ করে পাঠকের মস্তিষ্ককে আক্রমণ করেছেন৷ গোটা পৃথিবী জুড়েই বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ থেকে এমন কিছু লেখক-কবি কলম হাতে নিয়েছেন যাঁরা প্রমাণ করেছেন সাহিত্য ও তত্ত্বের মধ্যবর্তী দেওয়ালটি স্থানু ও অনড় তো নয়ই, বরং ছিদ্রময়৷ বাংলা কবিতায় মল্লিকা সেনগুপ্ত এই সমস্ত কবি লেখকদেরই প্রতিনিধি৷ কবিতার কেন্দ্রে তত্ত্ব এবং তর্ককে এ ভাবে দাপটের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা বাংলা কবিতায় মল্লিকা সেনগুন্ত ছাড়া খুব কম লোকই করেছেন৷ এই অত্যন্ত জরুরি ও প্রয়োজনীয় কাজটি করে মল্লিকা বাংলা কবিতাকে অনেকখানি আন্তর্জাতিক করে গিয়েছেন৷

'কবিতা সমগ্র ' পড়তে পড়তে মনে হয় আরও একটি কাজ মল্লিকা করেছেন যেটিও ঠিক তাঁর মতো করে তাঁর আগে আর কেউ করেননি৷ কেবল ইতিহাস আর মিথ নয়, সাহিত্যের পুনর্নির্মাণও আজকের পৃথিবীতে কবি-লেখকদের, বিশেষত নারীবাদী কবি-লেখকদের, অত্যন্ত প্রিয় একটি কাজ৷ এই কাজটিও বিশেষ নৈপুণ্যের সঙ্গে করে গিয়েছেন মল্লিকা৷ ইতিহাস আর পুরাণকেই নয়, প্রায় মিথ হয়ে যাওয়া ক্লাসিক বাংলা কবিতাকেও পুনর্নির্মাণ করেছেন তিনি৷ 'বীরপুরুষের মা ' এই পুনর্নির্মাণের এক সার্থক উদাহরণ৷ রবীন্দ্রনাথের 'বীরপুরুষ'-এ হিরো ছোট্ট ছেলেটি, সেই কেন্দ্রে, মা মার্জিনে৷ মল্লিকার কবিতায় কিন্ত্ত মার্জিন থেকে কেন্দ্রে এসে দাঁড়ান বীরপুরুষের মা৷ মল্লিকা লেখেন, 'একলা মা আর একলা ছেলে/ডাকাতগুলো দেখতে পেলে/কী হবে বল্ বীরপুরুষ খোকা?/তুই করবি যুদ্ধ, আর আমি রইব বোকা !/স্পষ্ট বলছি তা হবে না আর/তুই ওদের তির ছুঁড়লে আমিও দেব মার৷' এই রকম পংক্তি রচনার জন্য বাংলা কবিতার মল্লিকা সেনগুপ্তকে, কবি হিসেবে তাঁর সাহস, ধী ও দক্ষতাকে, প্রয়োজন ছিল৷

'কবিতা সমগ্র' বলেই এই গ্রন্থে কেবলই মল্লিকার প্রকাশিত কবিতাই যে আছে তা নয়, আছে অপ্রকাশিত কবিতা, অনুবাদও৷ অনুবাদেও মল্লিকা তাঁর নিজের কবিতার মতোই ঋজু৷ বইটির 'গ্রন্থ পরিচয়' অংশটি বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে কেবল তথ্য সন্নিবেশন-ই যে 'গ্রন্থ-পরিচয়ের' কাজ হতে পারে না, একটি গ্রন্থের শেষে স্বল্প-পরিসরে সীমায়িত থাকে বলে বইয়ের 'মার্জিন', গ্রন্থের 'অপর' বলে গ্রন্থ পরিচয়কে যে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যায় না তা বেশ বোঝা যায় এই বইটির গ্রন্থ পরিচয় অংশটি পাঠ করলে৷ কেবল মল্লিকার বইগুলির সম্পর্কে তথ্য সন্নিবেশ করেই গ্রন্থ-পরিচয়কার থেমে যাননি৷ কখনও মল্লিকার কবিতাকে বিশ্লেষণ করেছেন, কখনও মল্লিকার প্রকাশকের অকাল প্রয়াণকে স্মরণ করেছেন, কখনও আবার পাঠকের নাগালে এনে দিয়েছেন খুব ব্যক্তিগত তথ্যও৷ 'বৃষ্টিমিছিল বারুদমিছিল' বইটির পরিচয়ে যেমন লেখা হয়েছে: 'শেষ বইটিও মল্লিকা উত্সর্গ করে গেছেন স্বাতীদি ও সুনীলদাকে যাঁদের সঙ্গে জীবনের শেষ ভ্রমণ গোয়ায়৷ রোরো হাঁপিয়ে যেত, মল্লিকা টিটি করে ঘুরে বেরিয়েছে সমুদ্রের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে, এও এক আশ্চর্য জীবন৷ ফিরে এসে নতুন করে মহাভারত লিখতে বসেছিল, কবিতায়৷ সেই লম্বা খেরোর খাতা এখন মল্লিকার ড্রয়ারে শুয়ে আছে৷' এই অংশটি পাঠ করলে অবশ্য প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয় এই খেরোর খাতাটিতে লিপিবদ্ধ অসমান্ত মহাভারত কেন ঠাঁই পেল না 'কবিতাসমগ্র'তে ? আরও একটি মৃদু অভিযোগও প্রকাশক বা সম্পাদকের বিরুদ্ধে তোলা যায়৷ অস্ট্রেলিয়ান অ্যাবওরিজিনাল মহিলা কবিদের কবিতা অনুবাদ করেছিলেন মল্লিকা৷ 'কবিতা সমগ্র'-তে সেই কবিতাগুলি জায়গা পায়নি৷ 'দাম্পত্যের গান ও অন্যান্য' এই শিরোনামে সুবোধ সরকার ও মল্লিকা সেনগুপ্ত অনুবাদ করেছিলেন কন্নড় কবি সুমতীন্দ্র নাডিগের কবিতাও৷ এই বইটির কোন কবিতাগুলি আর কোনগুলি মল্লিকার অনুবাদ বইটিতে উ‌‌ল্লেখ নেই৷ যদি ধরেও নেওয়া যায় সব কবিতাগুলিই যৌথ অনুবাদ তা হলেও কি এই অনুবাদগুলিকে মল্লিকা সেনগুপ্তর 'কবিতাসমগ্র' বর্জন করতে পারে? কবিতার কেন্দ্রে তত্ত্ব এবং তর্ককে এ ভাবে দাপটের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা বাংলা কবিতায় মল্লিকা সেনগুপ্ত ছাড়া খুব কম লোকই করেছেন৷ এই অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কাজটি করে মল্লিকা বাংলা কবিতাকে অনেকখানি আন্তর্জাতিক করে গিয়েছেন৷

No comments: