মঙ্গল শোভাযাত্রার স্লোগান রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার,সিলেটে প্রতিমা ভাংচুর
জামাত শিবির রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ | Facebook
জামাত শিবির রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ. 801 likes · 186 talking about this.-
রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ চাইঃ মুক্তির সংগ্রাম ২০১৩ | Facebook
রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ চাইঃ মুক্তির সংগ্রাম ২০১৩. 93 likes · 15 talking about this. -
রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ চাই - বাঁধ ভাঙার আওয়াজ
www.somewhereinblog.net/blog/shakilmolla/29059978 - Bangladeshআজ মহান স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে আমার সোনার বাংলা স্বাধীন পরাধীনতার হাত থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। এই দিনে আমাদের অঙ্গীকার হউক আজাকার মুক্ত বাংলাদেশ চাই। দেখানে রাজাকার সেখানে প্রতিরোধ। আসুন সবাই মিলে রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ গড়ি।
চাই রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ | উন্মোচন |
Feb 23, 2013 – মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু• রাজাকার অর্থ স্বেচ্ছাসেবক।Mar 26, 2013 – বোস্টন বাংলা নিউজ - বোস্টন থেকে প্রকাশিত প্রথম এবং একমাত্র বাংলা অনলাইন পত্রিকা.
ঢাকায় পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে বরণ করে নিয়েছে ১৪২০ বঙ্গাব্দকে। সার্বজনীন এ উৎসবে নগরীর পথে পথে এখন লাখো মানুষের ঢল। অশুভ শক্তিকে বিতাড়ন করা মঙ্গল শোভাযাত্রায় দেখা গেছে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আর সম্প্রীতির জোয়ার।
অথচ সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার বারঠাকুরী ইউনিয়নের অমলশীদ গ্রামে কালীমন্দিরের ৬টি প্রতিমা ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা।
শনিবার দিবাগত গভীর রাতে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার দিবাগত রাতের আঁধারে মন্দিরের তালা ভেঙ্গে দুর্বৃত্তরা ভেতরে প্রবেশ করে ৬টি প্রতিমা ভাংচুর করে পালিয়ে যায়। সকালে এসে মন্দিরের প্রতিমা ভাঙা অবস্থায় দেখতে পাই এলাকার লোকজন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মতিন জানান, "আমাদের এলাকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ঠের জন্য দুর্বৃত্তরা এ ভাংচুর ঘটিয়েছে। আমরা এর নিন্দা জানিয়ে আগামী মঙ্গলবার বিকেলে আমলশীদ বাস স্টেশনে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছি।"
সংবাদ পেয়ে জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) টিটন খীসা, জকিগঞ্জ সার্কেলের এএসপিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসিকুর রহমান জানান, রাতের আধারে দুর্বৃত্তরা কালী মন্দিরের ভেতরের থাকা প্রতিমার নাক ও মুখ ভাঙচুর করেছে।এটিকে রহস্যজনক উল্লেখ করে ওসি বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এখানে আরো বড় ধরণের ধ্বংসাত্বক কার্যক্রম হতে পারতো। দুর্বৃত্তরা কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙ্গে প্রবেশ করলেও সেখানে কোনো আলামত পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান। দুর্বৃত্তদের ধরতে অনুসন্ধান চলছে বলে তিনি জানান।বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এ বিষয়ে থানায় এখনো কোনো মামলা হয়নি বলেও জানান ওসি।
সার্বজনীন এ উৎসবের নানা আয়োজনের মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের এ বর্ণিল আয়োজনটি রঙে-ঢঙে পায় ভিন্ন এক মাত্রা। তরুণ শিল্পীদের রাত-দিন মননশীল শ্রমে গড়ে উঠেছে শোভাযাত্রার নানা অনুষঙ্গ। আর এসব নবীণ শিল্পীদের নানা পরামর্শ দিয়ে কাজকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন চারুকলার শিক্ষক ও সাবেক শিক্ষার্থীরা।
এবারের পঁচিশতম শোভাযাত্রার স্লোগান 'রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ/মুক্তিযুদ্ধ অনিশ্বেষ'।
রোববার পহেলা বৈশাখ সকাল পৌনে ১০টায় চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে থেকে বের হয় বর্ষবরণের মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাক-ঢোল, খঞ্জনিসহ নানা বাদ্য-বাজনার মুখরতার সঙ্গে আয়োজনের মূল অনুষঙ্গ ছিল নয়টি শিল্প-কাঠামো, হরেক রকমের মুখোশ, টাট্টু ঘোড়া ও বর্ণিল প্ল্যাকার্ড।
২৪ জন ঢাকি ঢাক বাজিয়ে শোভাযাত্রার সূচনা করেন। এর পরপরই ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতির মেলবন্ধনে গড়ে তোলা নানা অনুষঙ্গ নিয়ে শুরু হয় শোভাযাত্রা।
জাতীয় মঙ্গল শোভাযাত্রা উদযাপন পর্ষদের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী সকাল সাড়ে ৯টায় মঙ্গল শোভাযাত্রার আনুষ্ঠানিক উদ্বোন করেন। এরপর শোভাযাত্রাটি চারুকলা থেকে বেরিয়ে শাহবাগ মোড় পেরিয়ে রূপসী বাংলা ঘুরে টিএসসি হয়ে পুনরায় চারুকলায় এসে শেষ হয়।
বরাবরের মতো এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের নির্দেশনায় ছিলেন স্নাতকোত্তর শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীরা। নানা বিষয়ে তাদের পরামর্শ দিচ্ছেন অনুষদের ডিন আবুল বারক আলভী এবং দুই শিল্পী-শিক্ষক শিশির ভট্টাচার্য ও নিসার হোসেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'বাংলাদেশ হবে রাজাকার, আল বদর ও যুদ্ধাপরাধীমুক্ত অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক দেশ। যে দেশে সব ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের ধর্ম পালন করার স্বাধীনতা অর্জন করবে। যেটা আমাদের প্রিয় নবি করিম (সা.) তার মদিনা সনদ ও বিদায় হজে বলে গেছেন। ঠিক সেভাবেই এই দেশ চলবে। শনিবার গণভবনে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মদিনায় হিজরতের পর সেখানে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শাস্তি স্থাপনে হজরত মুহাম্মদ (সা.) যে সংবিধান প্রণয়ন করেন, তাই ইতিহাসে মদিনা সনদ নামে পরিচিত। মদিনা সনদে বলা হয়েছিল- মুসলিম, খ্রিস্টান, ইহুদিসহ অন্যান্য সম্প্রদায় ধর্মীয় ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে। কেউ কারো ধর্মীয় কাজে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
স্থানীয় সূত্রের খবর, অস্ত্র উদ্ধারের পরে পুলিশ-সিআরপি যৌথবাহিনী এলাকার বেশ কিছু ধান জমি খুঁড়তে শুরু করে৷ যেখানে বন্দুক উদ্ধার হয়েছে, তার পাশের জমিতে মাটির নীচে লুকনো পাতকুয়ো থেকে পাম্প ও লোহার পাইপ উদ্ধার হয়৷ খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে আসেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা অশোক প্রতিহার, বিশ্বজিত্ মণ্ডল, ত্রিভঙ্গ মাইতি প্রমুখ৷ তিলাবনি গ্রামের বাসিন্দা অশোকবাবু বলেন, 'সিপিএমের আমলেই এ সব অস্ত্র ব্যবহার হত৷ নেতাই-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত সিপিএম নেতা শেখ খলিলউদ্দিনের নেতৃত্বে এখানে হার্মাদ ক্যাম্প চলত৷ সশস্ত্র শিবিরের ভয়ে কাঁপতাম৷ আমরা বারবার প্রশাসনকে জানিয়েছি যে এ সব এলাকায় প্রচুর অস্ত্র রয়েছে, তা উদ্ধারে উদ্যোগী হোন৷ তারই প্রমাণ মিলল আজকের ঘটনায়৷'
প্রসঙ্গত, যেখান থেকে অস্ত্র মিলেছে, সেই খালপাড় থেকে এক কিলোমিটার দূরেই নেতাই গণহত্যার মূল অভিযুক্ত শেখ খলিলউদ্দিনের বাড়ি৷ তবে ২০১১-র জানুয়ারির পর থেকেই খলিল ফেরার বলে পুলিশ সূত্রের দাবি৷ তবে খাতায় কলমে তিনি এখনও সিপিএমের বিনপুর জোনাল কমিটির সদস্য৷ শনিবার নেড়া গ্রামের বাড়িতে বসে খলিলউদ্দিনের খুড়তুতো ভাইয়ের স্ত্রী জানান, 'দু'বছর হল খলিল ঘরছাড়া৷ পুলিশ এত দিন বাদে বলছে খলিল খালপাড়ে অস্ত্র পুঁতে রেখেছে৷ কী করে এমন বলছে জানি না৷' সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকার অবশ্য বলেন, 'ওরা এখন যা ইচ্ছে গল্প ফাঁদছে৷ কিছু বলার নেই৷' এসপি সুনীল চৌধুরী বলেন, 'সিআরপি-র সঙ্গে যৌথ ভাবে তল্লাশি চালিয়ে ছ'টি দেশি পিস্তল ও চারটি একনলা বন্দুক মিলেছে৷ ওই জমি কার, সেটা খতিয়ে দেখে তার বিরুদ্ধে এফআইআর করা হবে৷'
বৈশাখে ৩ শয়তানের প্রতি ঘৃণা!
অধ্যাপক যতীন সরকার, অতিথি লেখক, ডেস্ক, ১৪ এপ্রিল ২০১৩ :
ঢাকা: নতুন বছরের শুরুতে সবাই কেবল শুভেচ্ছাই প্রকাশ করে। আমি কিন্তু শুভেচ্ছার চেয়ে বেশি করে বলি ঘৃণার কথা। ঘৃণা, ঘৃণা, ঘৃণা! রুদ্র, প্রচণ্ড, প্রকট, প্রচুর, পবিত্র ঘৃণা!
হ্যাঁ, বর্ষ শুরুতে অন্যের মতো আমিও শুভেচ্ছা জানাই বটে। তবে পাত্র-অপাত্র-নির্বিশেষে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাতে রাজি নই। বন্ধুর জন্য আমি শুভেচ্ছার ডালি উজাড় করে দিই। কিন্তু শত্রুর জন্য শুভেচ্ছা নয়, তাকে কেবলই ঘৃণা, তার মুখে ঘৃণার থুথু ছিটিয়ে দিতে পারলেই পরম তৃপ্তি পাই। এমনকি, এ ক্ষেত্রে আমি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথেরও একটি বক্তব্যের বিরুদ্ধে অবস্থান না নিয়ে পারি না। নববর্ষ বন্দনাবিষয়ক একটি কবিতায় কবিগুরু লিখেছিলেন- ্তুবন্ধু হও, শত্রু হও, যেখানে যে-কেহ রও/ক্ষমা করো আজিকার মতো,/পুরাতন বরষের সাথে পুরাতন অপরাধ যত।্থ
এতে মহান কবির মহত্ত্ব ও ক্ষমাশীলতার প্রকাশ ঘটেছিল বটে, কিন্তু আমি সবিনয়ে এর বিরুদ্ধাচরণ করি। কবির সঙ্গে তো একালের শত্রুদের পরিচয় ছিল না। একান্ত ক্রান্তদর্শী হয়েও তিনি জানতে পারেননি যে এককালে এই বাংলাদেশে রাজাকার আলবদরের মতো কতকগুলো দেশদ্রোহী মানবদ্রোহী ও নরকের কীটসদৃশ মানবসন্তান দেশজুড়ে কী তাণ্ডব চালিয়ে যাবে। কবিগুরুর উপদেশ অনুসারে নববর্ষের দিনেও এদের যদি আমরা ক্ষমা করে দিই, তবে সে-ক্ষমাকে তারা আমাদের দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ বলেই ধরে নেবে এবং শত্রুতা সাধনে আরো প্রচণ্ড হিংস্র হয়ে উঠবে। তাই এদের ক্ষমা করা মানে একটি ক্ষমাহীন অন্যায় আচরণ করা। কখনো যাতে এ রকম আচরণ আমরা না করি সে উপদেশ তো কবিগুরুই আমাদের দিয়ে গেছেন। ্তুঅন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে/তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহ্থে-এ-ও তো তাঁরই অনুজ্ঞা। তিনিই তো আমাদের হয়ে প্রার্থনা জানিয়েছেন-
ক্ষমা যেথা ক্ষীণ দুর্বলতা
হে রুদ্র নিষ্ঠুর যেন হতে পারি তথা
তোমার আদেশে। যেন রসনায় মম
সত্যবাক্য ঝলি উঠে খরখড়গসম
তোমার ইঙ্গিতে। যেন রাখি তব মান
তোমার বিচারাসনে লয়ে নিজ স্থান।
কবিগুরুর এ-ধরনের অনুজ্ঞা ও প্রার্থনার মর্মবাণীটি সমস্ত অন্তর দিয়ে অনুভব করা, এবং তাঁর শিক্ষার আলোকে হৃদয়কে আলোকিত করে তোলাই হবে নববর্ষে আমাদের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য। মানতেই হবে যে, সেই দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে আমরা অবহেলা করেছি। আমরা ভালোবাসার পাত্রাপাত্র বিবেচনা করিনি, যাকে ভালোবাসা উচিত নয় তাকেও ভালোবেসেছি, ঘৃণার পাত্রকে ঘৃণাভরে দূরে ঠেলে দেওয়ার বদলে ভালোবেসে বুকে তুলে নিয়েছি। যথাবিহিত নিষ্ঠুরতার চর্চা না করে ক্লীবতার কোলে গা ঢেলে দিয়েছি। এ-রকম করেছি বলেই স্বাধীনতার শত্রুরা স্বাধীন দেশে মাথা তুলে দাঁড়াতে পেরেছে, সংগ্রামের বিজয়ের ফলকে অনায়াসে লুট করে নিয়েছে। স্বাধীনতা-সংগ্রামেরকালে যারা আমাদের নারীদের সম্ভ্রম নষ্ট করেছে, স্বাধীনতা-উত্তরকালে তাদেরই চেলাচামুণ্ডারা প্রচণ্ড শক্তিধর হয়ে উঠেছে, তারাই এখন ধর্মের দোহাই পেড়ে চরম অধর্মাচরণ করে যাচ্ছে, নারী নির্যাতন ও নারীত্বের অবমাননায় মেতেছে, পবিত্র ধর্মকে বেচাকেনার পণ্যে পরিণত করেছে, ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, মানবধর্মের সাধক শিল্পী কবি বুদ্ধিজীবী মনীষীদের ধর্মদ্রোহী আখ্যা দেওয়ার ষ্পর্ধা দেখাচ্ছে। বাঙালির বর্ষবরণ উৎসবের প্রতি ওদের রোষ ও বিদ্রূপ সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আবহমান বাংলা ও বাঙালির সুস্থ সংস্কৃতির প্রবাহকে ওরা রুদ্ধ করে দিতে চেয়েছে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে বোমা মেরেছে, সংস্কৃতিসেবীদের হত্যা করেছে। নববর্ষ উপলক্ষেও কেউ যদি ওদের ক্ষমা করতে বলে, তাকেও প্রচণ্ড ঘৃণায় জর্জরিত করে তুলতে হবে, তার প্রতিও নিষ্ঠুর হয়ে উঠতে হবে। প্রতিটি নববর্ষের দিনেই অন্যায়কারীর প্রতি ঘৃণাকে সুতীব্র করে তোলার জন্য কবিগুরুর কথাই সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিই-
মুহূর্তে তুলিয়া শির একত্র দাঁড়াও দেখি সবে;
যার ভয়ে ভীত তুমি সে-অন্যায় ভীরু তোমা-চেয়ে,
যখনি জাগিবে তুমি তখনি সে পালাইবে ধেয়ে।
যখনি দাঁড়াবে তুমি সম্মুখে তাহার তখনি সে
পথকুক্কুরের মতো সংকোচে সত্রাসে যাবে মিশে।
কবিগুরু তাঁর জীবনের শেষ নববর্ষের ভাষণে সুদৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন, ্তুমানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ।্থ সেই ভাষণেই তিনি তাঁর ্তুআশ্থার কথা জানিয়ে বলেছিলেন,-
্তুমহাপ্রলয়ের পরে বৈরাগ্যের মেঘমুক্ত আকাশে ইতিহাসের একটি নির্মল আত্মপ্রকাশ হয়তো আরম্ভ হবে এই পূর্বাচলের সূর্যোদয়ের দিগন্ত থেকে। আর একদিন অপরাজিত মানুষ নিজের জয়যাত্রার অভিযানে সকল বাধা অতিক্রম করে অগ্রসর হবে তার মহৎ মর্যাদা ফিরে পাবার পথে।্থ
মহৎ কবির এই সুমহান আশা বাস্তবায়িত করার দায়িত্ব তো আমাদেরই গ্রহণ করতে হবে। সুষ্ঠুভাবে সেই দায়িত্বটি পালনের জন্যও শত্রুদের বিরুদ্ধে ঘৃণার অস্ত্রকে শানিত করে তোলার কোনো বিকল্প নেই।
এ প্রসঙ্গেই মনে পড়ছে লিবিয়ার এক সময়কার রাষ্ট্রনায়ক কর্নেল গাদ্দাফির কথা। স্বৈরাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে গাদ্দাফির পতন ঘটেছে। সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে ভুলতে পারি না খ্রিস্টীয় নববর্ষ উপলক্ষে ১৯৮৩ সালে প্রদত্ত তার বাণীটির কথা। সেই বাণীতে একান্ত চাঁচাছোলা ভাষায় তিনি বলে দিয়েছিলেন, ্তুশয়তানরাই এখন বিশ্বের ধনী দেশগুলোর নেতৃত্ব করছে।্থ সাম্রাজ্যবাদী এই শয়তানদের শয়তানিতে আমাদের বাংলাদেশের মানুষেরও কম ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। এই শয়তানরাই তো পাকিস্তানের পৃষ্ঠপোষকতা করে, আলবদর-রাজাকারদের শক্তি জুগিয়ে, আমাদের স্বাধীনতাকে তাদের সপ্তম নৌবহর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে ডুবিয়ে দিতে চেয়েছিল। এই শয়তানরাই তো এখন এককেন্দ্রিক বিশ্বের প্রভু হয়ে উঠেছে। নববর্ষে এই শয়তানদের বিরুদ্ধেও অবশ্যই ঘৃণার অস্ত্র ছুঁড়ে দিতে হবে। এ ব্যাপারে বেশ কয়েক বছর আগেই আমাদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন প্রয়াত লোককবি শাহ আবদুল করিম। তিনটি শয়তানকে তিনি চিহ্নিত করেছিলেন এভাবে-
বড় শয়তান সাম্রাজ্যবাদ নতুন নতুন ফন্দি আঁটে
মধ্যম শয়তান পুঁজিবাদ বসে বসে মজা লোটে
সামন্তবাদ জালিম বটে দয়া নাই তাহার মনে
তিন শয়তানের লীলাভূমি শ্যামল মাটি সোনার বাংলার
গরিবের বুকের রক্তে রঙিন হলো বারে বার
সোনার বাংলা করলো ছারখার সাম্রাজ্যবাদ শয়তানে
স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে মজা মারলো শোষকে
এখন সবাই বুঝতে পারে চাবি ঘুরছে কোন পাকে
মধু হয় না বল্লার চাকে বাউল আবদুল করিম জানে।
এই তিন শোষক শয়তানের প্রতি তীব্র ত্নী প্রচণ্ড ঘৃণার প্রকাশ ঘটিয়ে আমাদের নববর্ষকে সার্থক করে তুলতে হবে।
লেখক: শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক
http://dhakanews24.com/?p=167035
নববর্ষের অন্তর্নিহিত শক্তি এর অসাম্প্রদায়িক চেতনা৷ এই শক্তি নববর্ষে পুরো জাতিকে এক করে৷ আর ঐক্যবদ্ধ এই চেতনার এবারের প্রত্যাশা বাংলাদেশে যেন যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হয়৷ যেন নিষিদ্ধ করা হয় জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি৷
এবারের বাংলা নববর্ষের বিশেষ তাত্পর্য আছে৷ একদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে৷ আর তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে দেশের মানুষ সেচ্চার৷ সোচ্চার গণজাগরণ মঞ্চ৷ বিপরীতে বিচার বানচাল করতে সহিংসতা ছড়াচ্ছে জামায়াত-শিবির৷ আর নতুন গজিয়ে ওঠা হেফাজতে ইসলাম চ্যালেঞ্জ করেছে চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতিকে৷ আছে জাতীয় নির্বাচনকে নিয়ে চরম রাজনৈতিক সংকট৷
তাহলে বাংলা নতুন বছরে কেমন হবে দেশ৷ বা নিজের দেশকে কেমন দেখতে চান দেশের মানুষ৷ কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন ডয়চে ভেলেকে বললেন, নতুন বছরে যেন যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হয়৷ নিষিদ্ধ হয় জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি৷
কেন এই প্রত্যাশা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন পহেলা বৈশাখ বাঙালির সর্বজনীন অসাম্প্রদায়িক উত্সব৷ এই উত্সবে মিলিত হন ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সবাই৷ আর অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়েই বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ করেছে, দেশকে স্বাধীন করেছে৷ সেই স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যারা, যারা স্বাধীনতা প্রিয় মানুষকে হত্যা করেছে তাদের বিচার ছাড়া এই চেতনা পূর্ণতা পাবেনা৷ তাদের কোনো রাজনৈতিক অস্তিত্ব এই বাংলায় থাকতে পারেনা৷
তিনি মনে করেন বর্তমান রাজনৈতিক সংকট কাটাতেও সবাইকে অসাম্প্রদায়িক মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এক হতে হবে৷ আসতে হবে এক মঞ্চে৷ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী শক্তির সঙ্গে আপোশ করে, তাদের প্রশ্রয় দিয়ে দেশকে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব নয়৷ সম্ভব নয় রাজনৈতিক সংকট নিরসন৷ পহেলা বৈশাখের যে অন্তর্নিহিত শক্তি অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্ম নিরপেক্ষতা তাকে সবার মাঝে সঞ্চারিত করতে পারলেই জাতি এগিয়ে যাবে৷ আর যারা এর বিরোধী সেই অশুভ শক্তিকে উপড়ে ফেলতে হবে৷
এবার বাংলা নববর্ষ বরণের মূল ভাব 'রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ অনিঃশেষ৷' রমনা বটমূলে, ছায়ানটের বর্ষবরণ, চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা, রবিরাগের আয়োজন, সাংস্কৃতিক জোটের অনুষ্ঠান সবখানে এই মূল ভাবই প্রতিফলিত হচ্ছে৷ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহ সম্পাদক আহকামউল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখেই এই মূল ভাব ঠিক করা হয়েছে৷
তিনি বলেন ১লা বৈশাখকে অশুভ শক্তি ভয় পায়৷ কারণ বাংলা নববর্ষ বাঙালিকে এক করে৷ গ্রাম থেকে শহর, কেন্দ্র থেকে প্রান্ত বাঙালি একাত্ম হয় এই অসাম্প্রদায়িক চেতনার উত্সবে৷ সাম্প্রদায়িক এবং মৌলবাদী শক্তি রমনা বটমূলে বাংলা বর্ষবরণে বোমা হামলা চালায়৷ হেফাজতে ইসলাম বাঙালি সংস্কৃতিকে বলে বিজাতীয় সংস্কৃতি৷ তাদের এই অশুভ তত্পরতা নতুন নয়৷ কিন্তু বাঙালির সংস্কৃতি আর চেতনার কাছে তারা সব সময়ই পরাজিত হয়েছে৷ ভবিষ্যতেও হবে৷ তাদের হুংকার কোনো কাজে আসবেনা৷ বাংলাদেশ হবে রাজাকার মুক্ত চিরন্তন মুক্তিযুদ্ধের সবুজ ভূমি৷
DW.DE
- তারিখ 14.04.2013
নতুন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হল বাংলা নতুন বছর, ১৪১৯; বিদায় ১৪১৮। বাংলা নতুন বছরকে বরণ করতে চলছে প্রস্তুতি; নানা আয়োজনে, নানা আঙ্গিকে তা চলছে দেশজুড়ে।
ঢাকায় এ উপলক্ষে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকার প্রধান সড়কে ২ লাখ বর্গফুট এলাকাজুড়ে আয়োজন করা হয়েছে পৃথিবীর দীর্ঘতম অলপনা অঙ্কন। এ আয়োজনের নাম দেয়া হয়েছে'আঁকব আমরা দেখবে বিশ্ব'। জানা যায়, এ অলপনা অঙ্কনের আয়োজন করেছে বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি এয়ারটেল।
রাতে সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকাতে ফার্মগেটের খামারবাড়ি থেকে আসাদ গেট এলাকার আড়ং পর্যন্ত সংসদ ভবনের সামনে সড়ক দ্বীপের উভয় পার্শ্বে ২ লাখ বর্গফুট এলাকা জুড়ে অঙ্কন করা হচ্ছে বিশাল এ অলপনা । বাঙালি সংস্কৃতির বিভিন্ন ধরনে নকশা এসব অলপনায় উঠে এসেছে। অলপনা অঙ্কনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর মহাখালী, ক্যান্টনমেন্ট, তেজগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পরিবার পরিজনদের সঙ্গে নিয়ে ভিড় জমিয়েছেন শত শত শিশু, পুরুষ, নারী। কেউ কেউ এসে এই অলপনা অঙ্কনে অংশ নিয়েছেন। এছাড়া চোখে পড়ে বাঙালি সংস্কৃতিপ্রেমী দু'চারজন বিদেশি নাগরিককেও।
অলপনা অঙ্কনকে কেন্দ্র করে সেখানে গড়ে ওঠা তথ্য কেন্দ্রের দেওয়া তথ্যমতে, এই অলপনা অঙ্কনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীরা, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপ অল্টারনেটিভসহ (ইউডা) রাজধানীর ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগের আড়াই শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী অংশ নিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা উৎসুক সাধারণ দর্শনার্থীরাও তথ্যকেন্দ্র থেকে কুপন সংগ্রহের মাধ্যমে এ অলপনা অঙ্কনে অংশ নিয়েছেন।
তথ্যকেন্দ্র থেকে আরও জানা গেছে, শুক্রবার দিনগত রাত ১১ টা থেকে অলপনা অঙ্কন শুরু করেছেন তারা। ভোর ৫ টা পর্যন্ত তা চলবে। অঙ্কন সুবিধার কথা বিবেচনা করে পুরো ২ লাখ বর্গফুট অঞ্চলকে ২০টি জোনে ভাগ করে অঙ্কন কাজ শুরু করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে অলপনা অঙ্কনে কর্মরত ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপ আল্টারনেটিভের (ইউডা) চারুকলা বিভাগের ছাত্র বাবু এবং প্রিতম জানান, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১০০ জন ছাত্র-ছাত্রী এ অলপনা অঙ্কনে অংশ নিয়েছেন। প্রাণের স্পন্দনকে পুঁজি করে বাঙালি সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার জন্য রাত জেগে কাজ করছেন তারা। তারা আশা করছেন এ অলপনা গিনিজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান করে নিবে।
এ ব্যাপারে দর্শনার্থী তাহমিনা বেগম বিথী রাত দেড়টার দিকে জানান, বৃহৎ এলাকাজুড়ে আলপনা করা হচ্ছে শুনেই তিনি বাচ্চাদের নিয়ে দেখতে এসেছেন। তেজগাঁও কলেজের গলিতে তাঁর বাসা। তিনি সাড়ে ১২ টার দিকে সংসদ ভবনের সামনে এসেছেন। তার পরিবারের মোট ৮ জন সদস্য তার সঙ্গে রয়েছেন। যতক্ষণ ভালো লাগবে তারা সেখানে থাকবেন।
মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আনিকা নূর। পত্রিকায় সংবাদ পড়ে সে এসেছিল তার বাবা-মায়ের সঙ্গে এই অনন্য কর্মযজ্ঞে শামিল হতে। নকশায় রঙের প্রলেপ দিতে দিতে তার উচ্ছ্বসিত কণ্ঠের প্রতিক্রিয়া, 'এই অনুষ্ঠানে এসে এবারের নববর্ষের অনুষ্ঠানটাই অন্য রকম আনন্দময় হয়ে উঠেছে। আমার আরও বন্ধুর এসেছে আলপনা আঁকতে। খুবই মজা করছি সবাই মিলে।' এই আয়োজনে সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিল এশিয়াটিক ৩৬০ মার্কেটিং কমিউনিকেশন।
কলকাতায় নববর্ষের ঠিক আগে ছুটির দিন রবিবারেও গড়িয়াহাট, হাতিবাগানে হাঁটা দায়। ভ্যাপসা গরম দূরে সরিয়ে শেষ বেলায় চৈত্র সেলের কেনাকাটা সারতে দিনভর ব্যস্ত শহর। কাঠফাটা রোদ্দুর, ভ্যাপসা গরম আর বাসে-ট্রামে গুতোগুতি। তবুও থেমে নেই কেনার হিড়িক। হাতে আর মাত্র একটা দিন। কেনাকেটা সারতে হবে আজই। যে কোনও মূল্যে।
চড়া দামের হাত থেকে বাঁচতে হবেই। সকলেই রাজি তাই চড়া রোদ সইতেও। তবে চৈত্র সেল হলেও চলেছে বেজায় দরদাম। আর ক্রেতাদের এই দরকষাকষি , প্রচন্ড গরম সবমিলিয়ে নাজেহাল বিক্রেতারাও কোলাজ।
বাংলা,বাঙালি ও বাংলা সন
শামসুজ্জামান খান
বাংলা,বাঙালি ও বাংলা সন নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা কিছু কম হয়নি। তবু এই তিনটি বিষয়েরই কোনো কোনো দিক সম্পর্কে আমরা যেসব সুস্পষ্টভাবে ধারণা পেয়েছি, তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। কয়েক বছর আগে কলকাতার দেশ পত্রিকায় একটি লেখা ছাপা হয়েছিল 'কে বাঙালি? কেন বাঙালি?'—এই শিরোনামে। সে আলোচনায়ও বিষয়টির যুক্তিসংগত ফয়সালা হয়েছিল এমন নয়। এই আলোচনা হয়তো আরও বহুদিন চলবে। চলা প্রয়োজনও। কারণ, ইতিহাসের তথ্যপ্রমাণ এবং বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহের মীমাংসা না হলে তা অনুসন্ধিৎসু মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। বর্তমান লেখায় আমরা এই তিনটি বিষয়েরই ইতিহাসনির্ভর এবং যুক্তিসিদ্ধ সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করতে পারব, এমন নয়। সে ধরনের মীমাংসার জন্য ঐতিহাসিক, পণ্ডিত ও বিদগ্ধজনদের পারস্পরিক তর্ক-তদন্ত প্রয়োজন হবে এবং সেই ধারাতেই হয়তো একদিন আমরা প্রকৃত ইতিহাসের সন্ধান পাব।
বর্তমান লেখাটিতে আমরা বাংলা, বাঙালি ও বাংলা সনের একটি সমন্বিত বিকাশধারার অনুসন্ধানে প্রয়াসী হব। এখন অনেকেই বলেন, বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস দুই হাজার-আড়াই হাজার বছরের পুরোনো। এ তথ্যের সবটাই যে ইতিহাস, পুরাতত্ত্ব, রাজবংশসমূহের মুদ্রা, প্রাচীন লেখমালা বা শিলালিপির মাধ্যমে আমরা পরিষ্কারভাবে জেনে গেছি, এমন নয়। বাংলার কোনো কোনো প্রাচীন সভ্যতার কোনো কোনো কেন্দ্রস্থানে খননের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি যে, বাংলা একটি প্রাচীন দেশ। আমাদের ইতিহাস এবং সাহিত্যের নানা তথ্য-উপাত্ত-ইঙ্গিতের মাধ্যমে বাঙালির ইতিহাসকেও বেশ প্রাচীন বলেই মনে করা যায়।
তবে বাঙালি জাতির বিকাশ স্বাভাবিকভাবেই ওই দুই ইতিহাসের সুস্পষ্ট মীমাংসানির্ভর বলে অনেকটাই অর্বাচীন। আর যদি বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথা বলি, তাহলে তো তা বহুলাংশে পাশ্চাত্যের জাতিরাষ্ট্র গঠনের আধুনিক রাজনৈতিক চিন্তাধারা প্রভাবিত—সে সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ কোথায়? প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে আমাদের কিংবদন্তিপ্রতিম পণ্ডিত সাবেক জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক বলেছিলেন, বাঙালি বা বাঙালিত্বের ইতিহাস পাঁচ শ বছরের বেশি নয়। পঞ্চদশ শতাব্দী থেকেই এই ইতিহাস একটা রূপ নিতে থাকে। রাজ্জাক সাহেবের এই বক্তব্যের পরও ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা অস্পষ্ট-সুস্পষ্ট ইঙ্গিতময় যেসব ইশারাসূচকের দিশা পাই, তাতে বাংলা ও বাঙালিত্বের বিকাশকে আরও শতাধিক বছর বা তার থেকেও পিছিয়ে নেওয়া সম্ভব। এর আরও আগে এই সময়কে চিহ্নিত করতে গেলে কিছু কিছু পরোক্ষ এবং কম জোরালো যুক্তির ওপর নির্ভর করতে হবে। অষ্টম শতকে পাল যুগে যে চিত্রকলা এবং ভাস্কর্য পাওয়া গেছে, তাকে অনেকেই বাঙালির সৃজনপ্রতিভার চমৎকার নিদর্শন বলে মনে করেন।
এ ছাড়া চর্যাপদে সিদ্ধাচার্য ভুসুকের রচনায় আমরা পাই, 'আজি ভুসুকু বঙ্গালি ভৈলী'। বাংলাদেশে যেসব জনপদ প্রাচীনকাল থেকেই গড়ে উঠেছিল, তার একটি অংশের নামও ছিল 'বঙ্গা'। এসব বিষয় থেকে বাংলা ও বাঙালিত্বের প্রত্নরূপের একটা পরিচয় পাওয়া যায়।
তবে আমরা ইতিহাসের দিক থেকে এই বিষয়টায় গুরুত্ব দিতে চাই, মধ্যযুগের স্বাধীন বাংলার চতুর্দশ শতকে সুলতান শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ্র উপাধিটির ওপর। তিনি নিজেকে 'শাহে বাঙালিয়ান' বলে ঘোষণা করেছিলেন। বাঙালি যদি তখন একটি শক্তিশালী জনগোষ্ঠী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত না করত, তাহলে অমিত শক্তিধর একজন মুসলিম শাসক নিজেকে 'শাহে বাঙালিয়ান' বা 'বাঙালিদের বাদশা' বলে গৌরব বোধ করতেন না। এ ঘটনাটিকে যদি আমরা জোরালো প্রমাণ হিসেবে ধরে নিই, তাহলে চতুর্দশ শতকেই বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে যে পৌঁছেছিল, সে সম্পর্কে সন্দেহ থাকে না।
সুলতানি আমলে আলাউদ্দীন হোসেন শাহ্ প্রমুখও একটি সমন্বিত জাতি গঠনের লক্ষ্যে যে কাজ করেছিলেন, তার প্রমাণ পাওয়া যায় ওই সময়ে বিপুল পরিমাণ অনুবাদ সাহিত্যের বিকাশের মধ্যে। বেদ, উপনিষদ, রামায়ণ, মহাভারত ইত্যাদি ভারতীয় ধর্ম-সংস্কৃতি ও ইতিহাসসাধনার উপাদান বাংলায় অনুবাদ করিয়ে তাঁরা প্রকৃতপক্ষে একটি ধর্মনিরপেক্ষ, পরমতসহিষ্ণু বাঙালি জাতি গঠনের পদক্ষেপই গ্রহণ করেছিলেন—এ সম্পর্কে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
অষ্টম শতাব্দী থেকে ত্রয়োদশ-চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত যেসব আরবীয় দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে আসেন, তাঁরাও এই অঞ্চলে তাঁদের ধর্ম চাপিয়ে দেওয়ার প্রয়াস পাননি; বরং স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে আরবীয় সংস্কৃতির মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে একটি বহুত্ববাদী সমাজ ও সংস্কৃতি গঠনের সহায়তা করেছিলেন—ইতিহাসে এমন প্রমাণ পাওয়া যায়।
বাংলা যত দিন উত্তর ভারতের রাজকীয় শক্তির অধীনে আসেনি, তখন বাঙালির সংস্কৃতি যেমন গড়ে উঠতে থাকে, তেমনি বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধি এবং বাঙালি জাতি গঠনের পরোক্ষ প্রয়াসও লক্ষ করা যায়। কিন্তু ষোড়শ শতকে মোগলদের শাসনামলে মহামতি আকবর যখন বাংলাদেশ দখল করে তাকে গোটা ভারতবর্ষের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করতে সক্ষম হন, তখনই বাংলা ভাষা ও বাঙালিত্ব বিকাশের ধারায় কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হয় বলে শেষ মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাসের নানা ইঙ্গিত থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়।
ষোড়শ শতকের কবি সৈয়দ সুলতান যখন বাংলা ভাষায় তৎকালে প্রচলিত প্রেমোপাখ্যান রচনার নিয়মিত ধারার সঙ্গে ইসলাম ধর্মের বিষয় সম্পর্কে লিখতে প্রয়াসী হন, তখন গোঁড়া সম্প্রদায়ের লোকেরা কবিকে 'মোনাফেক'রূপে চিত্রিত করেন। কবি এ বিষয়ে শব-ই-মিরাজ গ্রন্থে লিখেছেন, 'যারে যেই ভাষে প্রভু করিল সৃজন। সেই ভাষ তাহার অমূল্য রতন।' এতে স্পষ্ট হয়, বাংলা ভাষার ব্যাপক প্রচার ও প্রসার অভিজাত সম্প্রদায় এবং শাসক শ্রেণীর কাছে কাঙ্ক্ষিত ছিল না।
কবিকে 'মোনাফেক' বলা সত্ত্বেও তিনি দমেননি, বাংলা ভাষায়ই ধর্মচর্চাও করে গেছেন। এ অবস্থা যে পরবর্তী শতাব্দীতে আরও তীব্র রূপ ধারণ করেছিল, তার প্রমাণ পাওয়া যায় আবদুল হাকিমের (সপ্তদশ শতক) রচনায়: 'যে সবে বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী, সেসব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।' এতে প্রমাণিত হয়, সমাজপতি এবং শাসকদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে বাংলার কবি-সাহিত্যিকেরা বাংলা ভাষার চর্চাকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করে বাঙালি জাতি গঠনে বিশিষ্ট অবদান রেখে গেছেন। তবে মধ্যযুগের মুসলিম সুলতানি আমলে যে জিনিসটি সম্ভব হয়নি, মোগল আমলে তা হয়েছে। বাঙালি মুসলমানের মধ্যে উত্তর ভারতের প্রভাবে আশরাফ-আতরাফ সমস্যার সৃষ্টি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ইরান এবং উত্তর ভারতের সংস্কৃতি ও ভাষার প্রভাবে বাঙালি অভিজাত মুসলমানদের (আশরাফ) জন্য হিন্দুস্থানি এবং উর্দু ভাষাকে গ্রহণযোগ্য করা হয়। আর আতরাফ অর্থাৎ নিম্নশ্রেণীর মুসলমানদের জন্য বাংলাকে নির্ধারণ করা হয়। এতে শত শত বছর ধরে বাংলা ও বাঙালির অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক এবং মানবিক ধারার যে বিকাশ সাধিত হচ্ছিল, তা বাধাগ্রস্ত হয়।
ওপরে আমরা বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসের যে বিষয়গুলো পর্যালোচনা করেছি, তাতে কোনো মোগল সম্রাট বা উত্তর ভারতের সংস্কৃতি-প্রভাবিত শাসক সমন্বয়বাদী বাংলা সন প্রবর্তন করেছিলেন—এমন মনে করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে তাঁরা যখন গোটা বাংলাকে মোগল শাসনে এনেছিলেন, তখন সুষ্ঠুভাবে শাসন পরিচালনা এবং খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য যদি অপরিহার্য হয়ে থাকে, তাহলেই হয়তো তাঁরা বাংলা সন প্রবর্তন করে থাকতে পারেন। এসব বিষয়ের আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত অনুপুঙ্খ তথ্যপ্রমাণ নেই। কোনো কোনো বিখ্যাত ঐতিহাসিক মোগল সম্রাট আকবর বাংলা সন প্রবর্তন করেন, এমনটি বলে থাকেন। কিন্তু আকবরের আইন-ই-আকবরীতে আকবর বাংলা সন প্রবর্তন করেছিলেন—এমন কথা লেখা নেই। তিনি ভারতের বিভিন্ন অংশে যেসব সন প্রবর্তন করেছিলেন, তা পরিষ্কারভাবে উপর্যুক্ত গ্রন্থে লেখা আছে। তবে তিনি যে সর্বভারতীয় ইলাহী সন প্রবর্তন করেছিলেন, বাংলা সনের প্রবর্তনে তার প্রভাব থাকা খুবই সম্ভব এবং এ কথাও নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, আকবর বাংলা সন প্রবর্তন না করলেও কোনো না কোনো মুসলমান বাদশা বা সুলতান যে এ সন প্রবর্তন করেন, তাতে কোনো সন্দেহের কারণ নেই। এমনও হতে পারে যে আকবরের ইলাহী সনকেই উৎস হিসেবে ধরে বাংলা অঞ্চলের কোনো রাজা-বাদশাহ বা সুবেদার বাংলা সন প্রবর্তন করে থাকতে পারেন। বাংলা সনকে 'সন' বা 'সাল' বলা হয়। 'সন' আরবি শব্দ। 'সাল' ফার্সি শব্দ। কোনো মুসলমান শাসক এই সন প্রবর্তন না করলে বাংলা বর্ষপঞ্জিকে বাংলা সনের তারিখ বলা হতো না। 'তারিখ' শব্দটিও মুসলমানি শব্দ। অতএব, বাংলা সন কোনো মুসলমান শাসকের এবং মুসলিম আমলেই যে সৃষ্টি, এ সম্পর্কে সন্দেহের কোনো অবকাশ থাকে না।
মোগল সুলতানেরা ইরানের নববর্ষ উৎসব উপলক্ষে দিল্লিতে এবং পার্শ্ববর্তী কোনো কোনো অঞ্চলে উৎসবের আয়োজন করতেন। দিল্লিতে নারীদের জন্য এ উপলক্ষে 'মিনা বাজার' আয়োজন করা হতো। এই ধারার সঙ্গে বাংলা সনের সরাসরি কোনো সম্পর্ক না থাকলেও এ থেকে কিছু অনুপ্রেরণায় হয়তো বাংলা অঞ্চলের কোনো সুবেদার এ অঞ্চলে বাংলা সন প্রবর্তনে উৎসাহিত হয়ে থাকতে পারেন। মুর্শিদ কুলী খান, আলীবর্দ্দী খাঁ প্রমুখ বাঙালির নানা উৎসব অনুষ্ঠান যেমন—বেড়াভাসান, জমিদারদের পুণ্যাহ এবং ব্যবসায়ীদের হালখাতা ইত্যাদিতে যোগ দিতেন বলে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তাঁরাও বাংলা সন প্রবর্তনে ভূমিকা রেখে থাকতে পারেন।
ইংরেজ আমলে রবীন্দ্রনাথদের পরিবারে পাশ্চাত্য নববর্ষের অনুসরণে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের সূচনা হয় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে। পরে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের ব্যবস্থা করেন। কলকাতার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারেও এভাবে ধীরে ধীরে বাংলা নববর্ষ সম্পর্কে কিছু উৎসাহ-উদ্দীপনার খবরাদি পাওয়া যায়।
পূর্ব বাংলায় বাংলা নববর্ষ উৎসব উদ্যাপিত হতো প্রায় প্রাচীনকাল থেকেই। নববর্ষের আদি অনুষ্ঠান হিসেবে ড. মুহম্মদ এনামুল হক 'আমানি' উৎসবের কথা বলেছিলেন। এটি ছিল কৃষকদের উৎসব। চৈত্রসংক্রান্তির রাতে কিষানিঘরে একটি নতুন ঘটে আতপ চাল পানিতে ভিজিয়ে রাখতেন এবং তাতে একটি আমগাছের কচি পাতাযুক্ত ছোট ডাল রেখে দিতেন। পরদিন সকালে সেই পাতাযুক্ত ডাল থেকে ঘরের চারদিকে পানি ছিটিয়ে দিতেন। এতে গোটা ঘরটি পরিশুদ্ধ হলো বলে মনে করা হতো এবং সারা বছরের জন্য মঙ্গল কামনায় এ অনুষ্ঠান করা হতো। কৃষক যখন খেতে হাল দিতে যেতেন, তাঁর শরীরেও ওই পানি ছিটিয়ে দেওয়া হতো। মনে করা হতো, এতে খেতে বেশি পরিমাণ ফসল ফলবে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নববর্ষ উপলক্ষে গ্রামীণ মেলাও অনুষ্ঠিত হতো। এই মেলা একদিকে যেমন ছিল নববর্ষের আনন্দ আয়োজনের জন্য, তেমনি সাংবাৎসরিক সাংসারিক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে রাখারও একটি প্রধান উপায়। এ ছাড়া খেলাধুলারও আয়োজন হতো। গোল্লাছুট, দাঁড়িয়াবান্ধা, হাডুডু, লাঠিখেলা, গরুর দৌড়, মোরগের লড়াই, যাত্রা-জারিগান, পাঁচালি, পুঁথিপাঠ, পুতুলনাচ, সার্কাস ইত্যাদি বিনোদনের ব্যবস্থাও ছিল।
বাংলার কৃষি অর্থনীতিতে মানুষের হাতে নগদ পয়সা না থাকায় বাকিতে কেনাবেচা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। ফসল বিক্রির টাকায় নববর্ষের দিনে সারা বছরের বাকি শোধ করতেন গ্রাহক-অনুগ্রাহকেরা। আর মুদি দোকানি বা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকানপত্রের মালিকেরা নববর্ষ উপলক্ষে 'হালখাতা'র আয়োজন করতেন। এতে ধূপ-ধুনো এবং রংবেরঙের কাগজ দিয়ে দোকানপাট সাজানো হতো। দোকানি গ্রাহক-অনুগ্রাহকদের মিষ্টিমুখে আপ্যায়িত করতেন আর গ্রাহকেরা সারা বছরের বাকির টাকা পরিশোধ করে নতুন খাতা বা হালখাতা খুলতেন। অন্যদিকে জমিদার বাড়িতে প্রজারা নববর্ষে 'পুণ্যাহ' উৎসবে যোগ দিতেন। সেখানেও মিষ্টিমুখ এবং পান-সুপারি দিয়ে প্রজাদের আপ্যায়িত করা হতো। আর প্রজারাও তাঁদের সারা বছরের খাজনা পরিশোধ করতেন। মোটামুটিভাবে এই ছিল গ্রামবাংলার নববর্ষ উৎসবের চালচিত্র।
পাকিস্তান আমলে পূর্ব বাংলায় বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন কেন্দ্রীয় সরকারের বাধার মুখে পড়ে। তারা একে 'হিন্দুয়ানি' বলে আখ্যায়িত করে। বাঙালি পণ্ডিতেরা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ প্রমুখের নেতৃত্বে সম্রাট আকবর যে বাংলা সন প্রবর্তন করেছিলেন, সেটি বলেই বাঙালির নববর্ষকে বাধাগ্রস্ত না করার আহ্বান জানান। পাকিস্তান সরকার সেই দাবি অগ্রাহ্য করে। এ রকম একটি অবস্থার মধ্য দিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয় 'ছায়ানট' (১৯৬১) নামক আজকের খ্যাতনামা সাংস্কৃতিক সংগঠনটি। এই সংগঠন ১৯৬৭ সাল থেকে রমনার বটমূলে নিয়মিতভাবে বাঙালি সংস্কৃতির নানা আঙ্গিকে পরিবেশনার মধ্য দিয়ে বর্ণাঢ্যভাবে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন করতে শুরু করে। সেই নববর্ষ উৎসব প্রতিবছরই বিশাল থেকে বিশালতর হতে থাকে। এখন সেই অনুষ্ঠান বাঙালির সর্ববৃহৎ জাতীয় অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বাংলা ও বাঙালিত্বের বিকাশে এবং বাঙালির অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক চেতনাকে শাণিত করার ক্ষেত্রে বাংলা নববর্ষ উৎসব তুলনারহিত।
নতুন আঙ্গিকে বাঙালির এই মহান জাতীয় উৎসবটি এখন শুধু ঢাকা শহরেই নয়, গোটা বাংলাদেশের শহর-বন্দর-গ্রামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একসময় যা ছিল গ্রামীণ বাংলাদেশের কৃষকের ক্ষুদ্র এবং সীমিত অনুষ্ঠান, তা এখন বাঙালির সংস্কৃতি ও জীবনদর্শনের বাঙ্ময় প্রকাশের এক অনন্য রূপ যেমন লাভ করেছে; তেমনি তা নানা সামাজিক, অনাসৃষ্টি, ধর্মান্ধতা, স্বৈরশাসন প্রভৃতির বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের মঙ্গল-শোভাযাত্রায় ব্যবহূত মুখোশ, প্রতীক, কার্টুন ও আবহমান বাংলার নানা ভাবব্যঞ্জনার চিত্রণের মাধ্যমে বাংলা নববর্ষ বাঙালি সংস্কৃতির সৌন্দর্যচেতনা, মানবিকবোধ এবং শ্রেয়চেতনার এক অনুপম উদাহরণ হয়ে উঠেছে।
ঢাকানিউজ24ডটকম/এসডি.
http://dhakanews24.com/?p=167062
হারিয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের ঐতিহ্যবাহী শুভ হালখাতা উৎসব
ডেস্ক, ১৪ এপ্রিল ২০১৩ :
পুরাতনকে ধুয়ে মুছে নতুনকে বরণ করতে বাংলা ও বাঙ্গালীর ব্যবসায়ীদের ঐতিহ্যবাহী শুভ হালখাতা উৎসব হারিয়ে যাচ্ছে। আগে হালখাতা উৎসবের কার্ড ছাপা হতো। কার্ডে হিন্দু ব্যবসায়ীদের জন্য মাটির সরাতে কলাগাছের পাতা, ডাব এবং উপরে হিন্দু দেবতা গণেশের ছবি থাকতো।
অনুরূপভাবে মুসলিম ব্যবসায়ীদের কার্ডে থাকতো মসজিদের মিনার। এ উভয় রীতির মধ্যেও ছিল হালখাতার আমন্ত্রণ। কিন্তু এখন আর ময়মনসিংহের গ্রাম-গঞ্জে হালখাতার কার্ড ছাপা হয় না।
বাংলা বছরের প্রথম দিনে এ উৎসবও খুব একটা পালন হয় না। অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলা নববর্ষের প্রাণ এ উৎসব।
তবে নিছক ঐতিহ্য হিসেবে ময়মনসিংহ শহরের গুটিকয়েক হিন্দু ব্যবসায়ী এ উৎসব পালন করেন। পয়লা বৈশাখে নতুন হিসাবের পাতা খুলেন।
জানা গেছে, ময়মনসিংহের গ্রামে-গঞ্জে আগে বেশ ঘটা করেই হালখাতা উৎসব হতো। দোকানে সাজ সজ্জার পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা তাদের পাওনাদারদের কাছ থেকে বকেয়া টাকা আদায় করে নতুন হিসাবের খাতা খুলতেন।
এ সময় তাদের লুচি আর রসগোল্লা দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো। এখন আর সেই দিন নেই।
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার পোড়াকান্দুলিয়া বাজারে প্রায় দু'শ দোকানের মধ্যে মাত্র ৭ থেকে ৮টি দোকান পয়লা বৈশাখে হালখাতা উৎসব হচ্ছে। তবে কার্ড ছাপিয়ে নয়, মুঠোফোনে কল করে কিংবা ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে।
বাংলা বছরের প্রথম দিনে হালখাতা উৎসব করা পোড়াকান্দুলিয়া বাজারের ক্ষুদে ব্যবসায়ী কামাল খান বলেন, কার্ড ছাপানো বাড়তি ঝামেলা। এ কারণে মোবাইলে কাস্টমারদের মিষ্টি খাওয়ার দাওয়াত দিয়েছি।
নববর্ষের প্রথম দিনে হালখাতা উৎসব না হওয়ার কারণ জানিয়ে পোড়াকান্দুলিয়া বাজারের ব্যবসায়ী শহীদুল্লাহ সরকার জানান, এক সাথে সবাই হালখাতা করলে সব বকেয়া উঠে না। সবাই পাওনা পরিশোধ করে না।
এ কারণে বৈশাখের শেষের দিকে কৃষকের ঘরে নতুন ধান উঠার পর হালখাতা উৎসব হবে।
তবে ঐতিহ্য হিসেবে বছরের প্রথম দিন হালখাতা উৎসব করেন ময়মনসিংহ শহরের বড় বাজার এলাকার ব্যবসায়ী অখিল দেবনাথ (৬০)।
তিনি জানান, ৩০ বছর ধরে এ উৎসব করছি। এখন মোবাইলেই সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। ক্রেতার সঙ্গে ভোক্তার সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় করার জন্য দিনটি গুরুত্বপুর্ণ।চ্
এন.আই.
২০০১ সালের ১৪ই এপ্রিল, বাংলা ১৪০৮ সনের ১লা বৈশাখ রমনার বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে জঙ্গিদের বোমা হামলায় নিহত হন ১০ জন৷ আর আহত হয় ২০ জন৷ বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে শুরু হয় শোকের মাতম৷ সকালের কান্নায় বেদনার্ত হয়ে ওঠে পুরো দেশ৷ কিন্তু সময়ে সব কিছু যেন ফিকে হয়ে আসে৷ অনেকেই ভুলে যায় নৃশংসতার কথা, ভয়াবহতার কথা৷ ভুলে যায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের৷ আর যারা পঙ্গু অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তাদের খোঁজই বা কে রাখে৷ আর এ কারণেই ১২ বছরেও সেই বোমা হামলার ঘটনার বিচার শেষ হয়নি৷ কবে শেষ হবে তাও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেন না৷
রমনা বটমূলে বোমা হামলার ঘটনায় মোট দুটি মামলা হয়েছিল৷ একটি বিস্ফোরক আইনে, আর অন্যটি হত্যা মামলা৷ কিন্তু শুরু থেকেই এই মামলা নিয়ে চলে নানা টানাহ্যাঁচড়া৷ মামলার আলামত গায়েবেরও অভিযোগ ওঠে৷ মামলা দায়েরের ৭ বছর পর ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে দুটি মামলায়ই চার্জশিট দেয়া হয়৷ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ ১৪ জনকে আসামি করা হয়৷ আর আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয় ২০০৯ সালের এপ্রিলে৷ মামলার বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আব্দুল্লাহ ভূঁইয়া জানান, এই মামলার আসামিরা কোটালিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা এবং ২১শে আগষ্টের গ্রেনেড হামলাসহ আরো অনেক মামলার আসামি৷ ফলে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ পড়লেও প্রায় সময়ই অন্য মামলায় তারিখ থাকায় তাদের হাজির করা যায়না৷ ফলে দিনের পর দিন মামলা পিছিয়ে যাচ্ছে৷ সাক্ষীদের ঠিকমত হাজির করা হয়না৷ তিনি জানান তাই মামলার বিচার কাজ বলতে গেলে থমকে আছে৷
অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর এসএম জাহিদ হোসেন জানান বিষ্ফোরক আইনের মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ বেশ কিছু দূর এগোলেও এখন থমকে আছে৷ তিনি জানান এই মামলার বিচার কাজ ১৩৫ দিনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা৷ কিন্তু নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে না পারায় পরবর্তী করণীয় নিয়ে তারা উচ্চ আদালতের নির্দেশনা চেয়েছেন৷ কিন্তু অনেক দিন হলো কোনো নির্দেশনা দিচ্ছেনা উচ্চ আদালত - যা তাদের হতাশ করেছে৷
তবে হত্যা মামলাটির পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ই এপ্রিল সোমবার৷ বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আব্দুল্লাহ ভূঁইয়া জানান যদি পরবর্তী হাজিরার দিনগুলোতে আসামি এবং সাক্ষীদের ঠিকমতো হাজির করা যায় তাহলে আড়াই তিন মাসের মধ্যে মামলার বিচার কাজ শেষ হওয়ার কথা৷ তবে সব কিছু নির্ভর করছে আসামি এবং সাক্ষীদের নির্ধারিত তারিখে নিয়মিত আদালতে হাজিরার ওপর৷
এদিকে এই মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল গনি টিটোও হতাশা প্রকাশ করেন৷ তাঁর দাবি ১৪ আসামির মধ্যে আটক কয়েকজন আছেন যারা বিচারে নির্দোষ প্রমাণ হবেন৷ অথচ তারা ১২ বছর ধরে বিনা বিচারে কারাগারে বন্দি আছেন৷
১৪ আসামির বিরুদ্ধেই আদালত অভিযোগ গঠন করলেও সব আসামি এখনো গ্রেফতার হয়নি৷ হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ৮ জন এখন কারাগারে আছেন৷ জামিনে আছেন একজন৷ আর ৫ জন এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে৷
DW.DE
বাঙালির প্রাণের উত্সব পহেলা বৈশাখ এবার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে৷ অনুষ্ঠানস্থলগুলোতে কাউকে বিকেল ৫টার পর থাকতে দেবেনা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী৷ রোববার বাংলা বর্ষবরণে যখন পুরোপুরি প্রস্তুত বাঙালি, তখন এই খবরে নেমে এসেছে হতাশা৷
এবারই ব্যতিক্রম হল৷ জানিয়ে দেয়া হলো, ১লা বৈশাখের উত্সবে সময়ের নিয়ন্ত্রণ আরোপের করার কথা৷ পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ জানিয়েছেন, সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় নববর্ষের উত্সব আয়োজন চলবে৷ এরপর আর না৷
এই সিদ্ধান্ত কেন নেয়া হল? জবাবে মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, নিরাপত্তার কথা ভেবে৷ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ তবে তাঁর দাবি, আগেও বর্ষবরণের অনুষ্ঠান বিকেল ৫টার মধ্যেই শেষ করার অনুরোধ করা হতো, তবে কাউকে বাধ্য করা হত না৷ কিন্তু এবার বিকেল ৫টার পর রমনা বটমূল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ নববর্ষের কোন অনুষ্ঠান আর চলবেনা৷ আর অনুষ্ঠানস্থলে কাউকে থাকতে দেয়া হবেনা৷ কেউ থাকতে চাইলে বের করে দেয়া হবে৷
তিনি আরও জানান, এবার ঢাকায় ২৫টি জায়গায় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়া হয়েছে৷ এর বাইরেও অনুষ্ঠান হবে৷ আইন-শৃঙ্খলায় নিয়োগ করা হচ্ছে ১০ হাজার পুলিশ, ব়্যাব ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দা৷ ২০০ চেকপোস্টে তল্লাশী হবে৷ আর থাকছে ভ্রাম্যমাণ নজরদারি৷ উত্সবে যোগ দেয়া মানুষের জন্যই এই নিরাপত্তা৷ কিন্তু এবার পরিস্থিতি একটু আলাদা ৷ তাই নিরাপত্তা ঝুঁকিও বেশি৷ রাজনৈতিক অস্থিরতা যেমন আছে আছে মৌলবাদীদের হুমকি৷ তাই বিকেল ৫টার পর তারা কোনভাবেই বাংলা বর্ষবরণের অনুষ্ঠান চলতে দেবেন না তাঁরা৷ পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ অবশ্য জানিয়েছেন, গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশ বা অনুমোদন পাওয়া কোন রাজনৈতিক সমাবেশ এই আদেশের আওতায় পড়বেনা৷
মহানগর পুলিশের এই সিদ্ধান্তে নগরবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে৷ কেউ বলছেন, নিরাপত্তা ঝুঁকি সম্পর্কে পুলিশ নিশ্চিত হলে তাদের এছাড়া আর কিইবা করার আছে৷ তবে কেউ কেউ বলছেন, ঝুঁকিমুক্ত পরিবেশে উত্সবের আয়োজনে সহায়তা করা পুলিশের কাজ৷ যারা নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে৷
কথা সাহিত্যিক মুজতবা আহমেদ মুরশেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, বাংলা বর্ষবরণ উত্সবে মহানগর পুলিশের এই নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত বেদনাদায়ক৷ এর আগে এরকম আর কখনো ঘটেনি৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবাধে প্রাণের উত্সবের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে৷ আর তা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে নয়৷ তিনি বলেন, ১লা বৈশাখ একটি সর্বজনীন উত্সব ৷ একটি ক্ষুদ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী এর বিরোধী৷ তাদের হুমকিতে যদি এবার বিকেল ৫টার মধ্যে সব অনুষ্ঠান শেষ করতে হয়৷ তাহলে পরের বছর দেখা যাবে অনুষ্ঠান বন্ধেরই দাবি তুলবে মৌলবাদীরা৷ অথবা বলবে, ছায়ানটের অনুষ্ঠানে হামদ-নাত গাইতে হবে৷ এটা মেনে নেয়া যায়না৷ মুরশেদ বলেন, যারাই হুমকি দিক না কেন৷ আর তাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ভয় পেলেও বাঙালি ভয় পায়না৷ তারা প্রাণের উত্সব বাংলা নববর্ষ উদযাপনে এই নিয়ন্ত্রণ মানবেনা৷
নববর্ষের শুভেচ্ছা
সাদেকুর রহমান : নিয়ত উদয়াস্তের ধারাবাহিকতায় সূর্য যখন পূর্ব দিগন্তে নিজেকে জানান দিয়েছে তখন দুয়ারে নতুন বছর। বেশ কয়েক ঘণ্টা আগেই ১৪১৯ বঙ্গাব্দ হয়েছে অতীত। আজ রোববার পহেলা বৈশাখ। পঞ্জিকার শাসনে মাসের নামটি অপরিবর্তনীয় থাকলেও এসেছে বাংলা নববর্ষ-১৪২০ বঙ্গাব্দ। পুরনো জীর্ণ, হতাশা-ব্যর্থতা, তথা ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনের তাবৎ অমানিশা উতড়ে সহজাত সুন্দরের প্রয়াস সবার। নতুন দিন, নতুন বছরের সাথে নতুন স্বপ্ন-প্রত্যাশায় জাল বুনছে জাতি। অস্থিরতা সহিংসতা কেটে যাক, হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি টুটে যাক বৈশাখের উৎসব মুখরতায়। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আজ জাতীয় ছুটির দিন। তাপদাহের সাথে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যেও রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বর্ষবরণে চলছে নানা আয়োজন। পান্তা-ইলিশ, মুড়ি-মুড়কি আর কত কি থাকবে!
এদিকে বাংলা সববর্ষ উপলক্ষে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ এডভোকেট, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক শুভেচ্ছা বাণী দিয়েছেন। এছাড়া বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বিশ্বের সব বাংলাভাষী মানুষকে উষ্ণ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তার পক্ষ থেকে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরী এক বিবৃতিতে এই শুভেচ্ছা জানান।
এবারো রাজধানী রমনা পার্ক ও আশপাশ এলাকা বর্ষবরণ উৎসবের প্রাণকেন্দ্র। বর্ষবরণের সকল প্রস্তুতি গতকালই সম্পন্ন হয়েছে। পহেলা বৈশাখে যাতে কোন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে লক্ষ্যে রমনা বটমূল ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা, চাকরুকলা ইনস্টিটিউট, শাহবাগ, শিশুপার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, মৎস্যভবন, বাংলা একাডেমী, হাইকোর্ট এলাকাসহ রমনা পার্কের চারপাশে পথে পথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান নিয়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু হয়েছে কদিন আগে থেকেই। বিপুল সংখ্যক পুলিশ-র্যাবের পাশাপাশি বটমূলের চারপাশে থাকবে ক্লোজ-সার্কিট ক্যামেরা এবং বিস্ফোরক শনাক্ত করার অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। রাজধানীতে যানবাহন ও পথচারী চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানকে ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া বিকেল ৫টার পর রমনা পার্কে ও সন্ধ্যা ৭টার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কাউকে অবস্থান না করতে নাগরিকদের আহ্বান জানিয়েছে ডিএমপি।
নববর্ষে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সমাজের জঞ্জাল সরাতে ঘোষণা করেছেন নতুনের মহত্তম আহ্বান 'ঐ নতুনের কেতন ওড়ে... তোরা সব জয়ধ্বনি কর'। রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমদ বাংলা নববর্ষকে দাওয়াত করেন আরও প্রত্যয়মগ্ন হয়ে গভীর আকুলতায় 'অগণ্য অসংখ্য বাধা ওড়ায়ে হয় প্রবল কণ্ঠে তুলি পুরুষ হুংকার, হে বৈশাখ এসো...।' পহেলা বৈশাখ, কেবল জ্যোতির্বিদ্যা নিরুপিত পৃথিবী আহ্নিক গতির ওপর নির্ভরশীল একটি দিন তা নয়। আমাদের জীবনে চেতনা এবং স্বকীয় সংস্কৃতির পরিচয়ও বটে। যদিও অপসংস্কৃতির চর্চার বাড়াবাড়িতে এই দিনটি প্রায় ফসিল হয়ে এসেছে।
বাংলা নববর্ষ বাঙালি মুসলমানদের মনে-প্রাণে নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। কারণ বাংলা সাল হিজরী সালেরই ঔরশজাত। ইতিহাস বলছে, বাংলাদেশ ভূ-খ-ে মুসলিম শাসন কায়েম হয়েছে ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীর বঙ্গ বিজয়কাল থেকে। সে সময় এদেশের সভ্যতার সাবেক হিজরী সালের প্রতিষ্ঠা হয়। পরবর্তীতে খাজনা আদায়সহ রাজকার্যের সুবিধার জন্য মোঘল স¤্রাট আকবর হিজরীর পাশাপাশি বাংলা সাল প্রবর্তন করেন এবং অগ্রহায়ণের পরিবর্তে বৈশাখ থেকে বর্ষ গণনা শুরু করেন। বাংলা মাস পায় রাজকীয় মর্যাদা। এর আগে এই ভূখ-ে মহাধুমধামের সাথে 'নওরোজ' উৎসব পালিত হতো। বাংলা সালের গণনা শুরু হয় ১৫৫৬ ঈসাব্দের ১১ এপ্রিল থেকে। তবে আমাদের দেশে সরকারিভাবে বাংলা সাল-তারিখ ব্যবহার হয় না বললেই চলে।
বাংলা নববর্ষ উদযাপনের সবচেয়ে বড় দিকটি হলো বৈশাখী মেলা। সারা দেশে অন্তত ২৭০টি বৈশাখী মেলা হয়ে থাকে বলে বিসিক জানায়। পহেলা বৈশাখে ঢাকা পরিণত হয় মেলার নগরীতে। বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে বিসিকের উদ্যোগে এবারও বসছে দশ দিনব্যাপী লোকজ মেলা। সাম্প্রতিক সময়ে বৈশাখের বিভিন্ন আমেজের ছোঁয়া লেগেছে ব্যবসায়িক ও সাংগঠনিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে। ক্রেতা আকর্ষণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ বৈশাখী অফার ঘোষণা করেছে। অডিও-ভিডিও কোম্পানিগুলোও নববর্ষ উপলক্ষে নতুন অ্যালবাম বাজারে ছেড়েছে। পত্রিকাগুলো বের করছে বিশেষ সংখ্যা। হোটেল রেস্তোরাঁয় আয়োজন করা হয়েছে পান্তা-ইলিশসহ বৈশাখী খানাপিনার আয়োজন। শুভেচ্ছা বিনিময়ে কাগুজে কার্ডের পাশাপাশি ব্যবহৃত হয়েছে ই-মেইল, এসএমএস। বৈশাখী সাজ-পোশাকে ছেলে-বুড়ো সকলে অনন্য সাধারণ আনুষ্ঠানিতায় নববর্ষকে বরণ করে নেবে।
বর্ণাঢ্য আয়োজন
বাংলা বর্ষবরণের উৎসবের ঢেউ লেগেছে বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে। উপজাতীয়দের নিজস্ব সংস্কৃতি অনুযায়ী পাহাড়ে বৈসাবী উৎসব শুরু হয়েছে দুই দিন আগে। ১৪২০ বঙ্গাব্দকে বরণ করতে আক্ষরিক অর্থে সরকারি অয়োজন না থাকলেও বেসরকারি সকল আয়োজন সফল করতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ছায়ানটের অনুষ্ঠানেই বাংলা বর্ষবরণের মূল অনুষ্ঠান। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাংলা সনের প্রথম দিন সকাল সোয়া ৬টায় রমনা অশ্বঋমূলে এসরাজ, বাঁশী ও বেহালার সুরে আহ্বান করা হবে নববর্ষকে। কণ্ঠ সঙ্গীতে অংশ নেবে ছায়ানটের শিল্পী ও সঙ্গীত বিদ্যায়তনের শিক্ষার্থীরা। সম্মেলক গান করবেন ১১০ জন শিল্পী ও ৪২ জন শিশুশিল্পী। বড়দের দলে থাকছেন ৬৮ জন। এর বাইরে একক পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসবেন জনপ্রিয় ১৪ শিল্পী। এদের মধ্যে থাকছেন ছায়ানট সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল, চন্দনা মজুমদার, লাইসা আহমেদ লিসা, শারমিন সাথী ইসলাম ময়না, ফারহানা আখতার শার্লি, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস ও বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী। অনুষ্ঠানটি বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ন্ডসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক সৈয়দ আবুল বারক আলভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতি বছরের মতো এবারও বর্ষবরণ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা উদযাপনের জন্য চারুকলা শিক্ষার্থীবৃন্দ বিভিন্ন আয়োজন সম্পন্ন করেছে। এটি মঙ্গল শোভাযাত্রার ২৫তম আয়োজন। সকাল ১০টায় বর্ণময় শোভাযাত্রাটি শাহবাগ হয়ে রূপসী বাংলা হোটেল থেকে টিএসসি ঘুরে চারুকলা অনুষদে এসে শেষ হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দিবেন।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবারও বাংলা নববর্ষ উদযাপন করবে লালন চর্চা কেন্দ্র। কবি নির্মলেন্দুগুণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন। ফকির লালন সাঁঈ প্রকৃতির ক্ষণের সঙ্গে মিলিয়ে ভোরবেলায় যে 'গোষ্ঠনীলা' করতেন সেই সঙ্গীত দিয়ে শুরু হবে অনুষ্ঠান। সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলবে প্রথম পর্বের অনুষ্ঠান। এরপর বিরতি দিয়ে বিকেল ৩টায় শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব।
'বছরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক, এসো হে বৈশাখ'Ñ স্লোগান নিয়ে শিল্পকলা একাডেমী আয়োজন করছে বাংলা শুভ নববর্ষ ১৪২০। সন্ধ্যা ৬টায় একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আলোচনা সভা ছাড়াও থাকছে সমবেত সঙ্গীত, সমবেত নৃত্য, একক সঙ্গীত, আবৃত্তি ও বাউল গান পরিবেশন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম প্রধান অতিথি থাকবেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাব সদস্য ও তাদের পরিবারের জন্য দিনভর অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। সকাল ৮টায় মুড়ি-মুড়কি, খৈ-বাতাসা, পান্তা-ইলিশ সহযোগে প্রাতঃরাশ, ১০টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী পুতুল নাচ এবং দুপুর ১টায় বিশেষ মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়েছে। প্রেস ক্লাব সদস্যদের ছেলেমেয়েদের পরিবেশনায় 'এসো হে বৈশাখ এসো' গান দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সূচনা হবে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি এবারও সেগুনবাগিচাস্থ নিজস্ব ক্যাম্পাসে বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে দিনব্যাপী কর্মসূচি নিয়েছে। সদস্য সাংবাদিক ও পরিবারের সদস্যদের সকালে মোয়া-মুড়কিসহ নাস্তা ও বাঙ্গলি ঐতিহ্যসমৃদ্ধ দুপুরের খাবারে আপ্যায়ন করা হবে। একই সাথে ইউনিটির সারেগামা শিক্ষার্থী ও আমন্ত্রিত জাতীয় শিল্পীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা থাকবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) উদ্যোগে বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে সকাল পৌনে ৭টায় দক্ষিণ নগরভবন থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের হবে। র্যালিটি জিরো পয়েন্ট, জাতীয় প্রেস ক্লাব, পুরানা পল্টন মোড়, শিক্ষাভবন হয়ে নগর ভবনে গিয়ে শেষ হবে। এতে থাকবে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার গাড়ি, লাঠিখেলা, মোটরবহর ইত্যাদি। সকাল ৯টায় নগরভবনের ব্যাংক ফ্লোরে নববর্ষের পান্তাভাতসহ বাংলা খাবার পরিবেশন করা হবে।
বর্ণাঢ্য আয়োজন
বাংলা বর্ষবরণের উৎসবের ঢেউ লেগেছে বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে। উপজাতীয়দের নিজস্ব সংস্কৃতি অনুযায়ী পাহাড়ে বৈসাবী উৎসব শুরু হয়েছে দুই দিন আগে। ১৪২০ বঙ্গাব্দকে বরণ করতে আক্ষরিক অর্থে সরকারি অয়োজন না থাকলেও বেসরকারি সকল আয়োজন সফল করতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ছায়ানটের অনুষ্ঠানেই বাংলা বর্ষবরণের মূল অনুষ্ঠান। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাংলা সনের প্রথম দিন সকাল সোয়া ৬টায় রমনা অশ্বঋমূলে এসরাজ, বাঁশী ও বেহালার সুরে আহ্বান করা হবে নববর্ষকে। কণ্ঠ সঙ্গীতে অংশ নেবে ছায়ানটের শিল্পী ও সঙ্গীত বিদ্যায়তনের শিক্ষার্থীরা। সম্মেলক গান করবেন ১১০ জন শিল্পী ও ৪২ জন শিশুশিল্পী। বড়দের দলে থাকছেন ৬৮ জন। এর বাইরে একক পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসবেন জনপ্রিয় ১৪ শিল্পী। এদের মধ্যে থাকছেন ছায়ানট সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল, চন্দনা মজুমদার, লাইসা আহমেদ লিসা, শারমিন সাথী ইসলাম ময়না, ফারহানা আখতার শার্লি, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস ও বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী। অনুষ্ঠানটি বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ন্ডসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক সৈয়দ আবুল বারক আলভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতি বছরের মতো এবারও বর্ষবরণ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা উদযাপনের জন্য চারুকলা শিক্ষার্থীবৃন্দ বিভিন্ন আয়োজন সম্পন্ন করেছে। এটি মঙ্গল শোভাযাত্রার ২৫তম আয়োজন। সকাল ১০টায় বর্ণময় শোভাযাত্রাটি শাহবাগ হয়ে রূপসী বাংলা হোটেল থেকে টিএসসি ঘুরে চারুকলা অনুষদে এসে শেষ হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দিবেন।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবারও বাংলা নববর্ষ উদযাপন করবে লালন চর্চা কেন্দ্র। কবি নির্মলেন্দুগুণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন। ফকির লালন সাঁঈ প্রকৃতির ক্ষণের সঙ্গে মিলিয়ে ভোরবেলায় যে 'গোষ্ঠনীলা' করতেন সেই সঙ্গীত দিয়ে শুরু হবে অনুষ্ঠান। সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলবে প্রথম পর্বের অনুষ্ঠান। এরপর বিরতি দিয়ে বিকেল ৩টায় শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব।
'বছরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক, এসো হে বৈশাখ'Ñ স্লোগান নিয়ে শিল্পকলা একাডেমী আয়োজন করছে বাংলা শুভ নববর্ষ ১৪২০। সন্ধ্যা ৬টায় একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আলোচনা সভা ছাড়াও থাকছে সমবেত সঙ্গীত, সমবেত নৃত্য, একক সঙ্গীত, আবৃত্তি ও বাউল গান পরিবেশন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম প্রধান অতিথি থাকবেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাব সদস্য ও তাদের পরিবারের জন্য দিনভর অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। সকাল ৮টায় মুড়ি-মুড়কি, খৈ-বাতাসা, পান্তা-ইলিশ সহযোগে প্রাতঃরাশ, ১০টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী পুতুল নাচ এবং দুপুর ১টায় বিশেষ মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়েছে। প্রেস ক্লাব সদস্যদের ছেলেমেয়েদের পরিবেশনায় 'এসো হে বৈশাখ এসো' গান দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সূচনা হবে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি এবারও সেগুনবাগিচাস্থ নিজস্ব ক্যাম্পাসে বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে দিনব্যাপী কর্মসূচি নিয়েছে। সদস্য সাংবাদিক ও পরিবারের সদস্যদের সকালে মোয়া-মুড়কিসহ নাস্তা ও বাঙ্গলি ঐতিহ্যসমৃদ্ধ দুপুরের খাবারে আপ্যায়ন করা হবে। একই সাথে ইউনিটির সারেগামা শিক্ষার্থী ও আমন্ত্রিত জাতীয় শিল্পীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা থাকবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) উদ্যোগে বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে সকাল পৌনে ৭টায় দক্ষিণ নগরভবন থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের হবে। র্যালিটি জিরো পয়েন্ট, জাতীয় প্রেস ক্লাব, পুরানা পল্টন মোড়, শিক্ষাভবন হয়ে নগর ভবনে গিয়ে শেষ হবে। এতে থাকবে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার গাড়ি, লাঠিখেলা, মোটরবহর ইত্যাদি। সকাল ৯টায় নগরভবনের ব্যাংক ফ্লোরে নববর্ষের পান্তাভাতসহ বাংলা খাবার পরিবেশন করা হবে।
http://www.dailysangram.com/news_details.php?news_id=113886
শুভ হালখাতা- ১৪২০ বঙ্গাব্দ | Facebook
Sun 14 Apr - Shop No: D-103, Basement Floor, Khandakar Haque Tower, Kandhir Par, 3501 Comillaখদ্দেররাও তাদের সামর্থ অনুযায়ী পুরোনো দেনা শোধ করে দেন। আগেকার দিনে ব্যবসায়ীরা একটি মাত্র মোটা খাতায় তাদের যাবতীয় হিসাব লিখে রাখতেন। এই খাতাটি বৈশাখের প্রথম দিনে নতুন করে হালনাগাদ করা হতো। হিসাবের খাতা হাল নাগাদ করা থেকে "হালখাতা"-র উদ্ভব। সেই রীতি অনুযায়ী আগামী ১লা বৈশাখ ১৪২০ বঙ্গাব্দ আমাদের দোকানে পালিত হবে ...
শুভ নববর্ষ ১৪২০ বঙ্গাব্দ। - বাঁধ ভাঙার আওয়াজ
www.somewhereinblog.net/blog/mhshimuls/29816965 - Bangladeshইলিশ আর পান্তা ভাত আমার দুই চোখের বিষ। হায় হায়, তাইলেতো আমি পূর্ণ বাঙ্গালী হইতে পারলামনা। এই দুইটা জিনিসরে আমি ঘৃণা করি। হায় হায়, তাইলেতো আমি পুরাই লুল। আমি একদিনের বাঙ্গালী সাজতে চাইনা। হায় হায়, তাইলেতো আমি দেশদ্রোহী। আমি দুঃখিত। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ ১৪২০ বঙ্গাব্দ।
পহেলা বৈশাখ, বাঙ্গালীদের সার্বজনীন উৎসবঃ শুভ নববর্ষ, স্বাগত ১৪২০ ...
www.somewhereinblog.net/blog/kobid/29817074 - Bangladeshএসো হে বৈশাখ এসো এসো্, তাপসনিশ্বসবায়ে, মুমূর্ষুরে দায় উড়ায়ে, বৎসরের আবজর্চনা দূর হয়ে যাক। এসো, এসো হে বৈশাখ এসো এসো্। চিরায়ত এই আহ্বানের মধ্য দিয়ে শুরু হলো পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষ ১৪২০ বঙ্গাব্দ। পহেলা বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম মাসের প্রথম দিন, তথা...
Eidesh.com: Events: বর্ণিল বৈশাখী শোভাযাত্রা- ১৪২০ বঙ্গাব্দ
বর্ণিল বৈশাখী শোভাযাত্রা- ১৪২০ বঙ্গাব্দ. When: রবিবার, এপ্রিল ১৪, ২০১৩ ১২:০০ পি.এম. Where: ম্যাকগিল ডাউন-টাউন ক্যাম্পাস. Details: ম্যাকগিলের বাংলাদেশী গ্রাজুয়েট স্টুডেন্টরা, এই প্রথমবারের মত ম্যাকগিল ডাউন-টাউন ক্যাম্পাসে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।এই উদযাপনের শুরুতে থাকছে বাঙালির চিরায়ত বর্ণিল বৈশাখী ...
স্বাগত ১৪২০ বঙ্গাব্দ: আজ পহেলা বৈশাখ বাঙালির উৎসবের দিন | Daily ...
dailyspandan.com/.../স্বাগত-১৪২০-বঙ্গাব্দ-আজ-প... - Bangladesh23 hours ago – স্বাগত ১৪২০ বঙ্গাব্দ: আজ পহেলা বৈশাখ বাঙালির উৎসবের দিন. শিকদার খালিদ: পহেলা বৈশাখ বাঙালির উৎসবের দিন। বাঙলা বছরকে অভিবাদন জানানোর দিন। এদিন গোটা বাঙালি আলোড়িত হয়, আন্দোলিত হয়। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ বলেন, 'প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র, দীন, একাকী। কিন্তু উৎসবের দিনে মানুষ বৃহৎ, সে সমস্ত মানুষের সঙ্গে একত্র ...
স্বাগত ১৪২০ বঙ্গাব্দ | Daily Spandan | দৈনিক স্পন্দন
dailyspandan.com/2013/04/.../স্বাগত-১৪২০-বঙ্গাব... - Bangladesh23 hours ago – স্বাগত ১৪২০ বঙ্গাব্দ. ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখি ঝড়, তোরা সব জয়ধ্বনি করÑ কবির এ বাণী হƒদয়ে ধারণ করে নতুন একটি বাংলা বর্ষ সমাগত। পুরনো বছরের জরা ও গ্লানি ঝেড়ে ফেলে এ দিনটিতে আমরা নতুনকে বরণ করব। স্বাগত জানাই ১৪২০ সনকে। খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে বাংলা নববর্ষ প্রবর্তন করেছিলেন মুঘল সম্রাট আকবর। তবে তা এখন আর ...
আজ পয়লা বৈশাখ ১৪২০ বঙ্গাব্দ - KhulnaNews.com
15 hours ago – KhulnaNews.com :: 24 Hours Online Bangla News Portal.-
বিদায় ১৪১৯ বঙ্গাব্দ , স্বাগতম ১৪২০ বঙ্গাব্দ « গড়াই ২৪
ঢাকা:চৈত্র সংক্রান্তি। বাংলা সনের শেষ দিন। ঋতুরাজ বসন্তেরও শেষ দিন। বাংলা বছরের শেষ দিন হওয়ায় চৈত্র মাসের শেষ এ দিনটিকে চৈত্র সংক্রান্তি বলা হয়। শনিবার ৩০ চৈত্র মহাকালের বুকে ঠাই নিচ্ছে ১৪১৯। ১৪২০ বঙ্গাব্দের শুরু হবে রোববার। বৈশাখ বন্দনায় মেতে উঠবে বাঙালি। চৈত্র মাসের শেষ দিনটিতে ফেলে আসা বছরের হিসাবের খাতাকে ...
সুখী-সমৃদ্ধ হোক সবার জীবন : স্বাগত ১৪২০ বঙ্গাব্দ - আমার দেশ
1 day ago – ১৪২০ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন। ঐতিহ্যবাহী এ দিনটিকে বাংলাদেশে বরণ করা হয় সর্বজনীন উত্সবের মধ্য দিয়ে। আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই। রাজনৈতিক সহিংসতার ভয়ঙ্কর আবহেও এবার নববর্ষ উত্সবের আয়োজন শুরু হয়েছে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই। সাজ সাজ রব না পড়লেও বিরাজমান বিষণ্ন পরিবেশকে অতিক্রম করে একসঙ্গে ...'আজি বাংলাদেশের হদয় হতে'দীপ্তা দাস
গত বছর এক বাংলাদেশের বন্ধু চিঠি পাঠিয়েছিল আমাকে। নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে ওপার বাংলার পয়লা বৈশাখের বৈচিত্র্যময় কিছু ছবি পাঠিয়েছিল। তাতে বলেছিল, নববর্ষের সময় একবার যেন ওদের দেশে যাই। কিন্তু আমার আর যাওয়া হয়নি। তবে ফেসবুকে ওর সঙ্গে কথা বলি। এইতো সেদিন ফেসবুকে ওর কথায় মাঝে মাঝেই ফিরে আসছিল গতবছরের নববর্ষের গান-কবিতা-মজা-পান্তাভাত আর ইলিশ মাছ ভাজার স্বাদ।
কথা প্রসঙ্গে ও আমাকে বলেছিল, পয়লা বৈশাখ নাকি বাংলাদেশের অহংকার ও ঐতিহ্যপূর্ণ সংস্কৃতি। এই অনুষ্ঠান আমাদের পশ্চিমবাংলায় হালখাতায় আর নতুন জামা কেনার প্রস্তুতিতে কখন, কোথা দিয়ে সময়টা কেটে যায়, তা আমরা ঘুণাক্ষরেও টের পাই না। তবে বাংলাদেশের বাঙালিরা নববর্ষকে কেন্দ্র করে মেতে ওঠে অন্যতম উত্সবের আঙ্গিনায়। নববর্ষকে ঘিরে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায়, গ্রামে, শহরে পাঁচদিন ব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন এলাকায় অনুষ্ঠিত মেলাগুলির বৈচিত্র্যও নানারকম। আমাদের সঙ্গে ওদের নববর্ষের অনেক মিলের মধ্যে একটা মিল হল, এদিন ভোর সকালে উঠে, স্নান সেরে, নতুন জামা পরে মন্দিরে পূজো দেওয়া। সেদিন ভালো-মন্দ খাবার রান্না করেন আমাদের বাড়ির মায়েরা। তবে ওদের ওখানে বেশিরভাগ বাড়িতে সেদিন ইলিশ মাছ ভাজা-পান্তা ভাত ও নানা রকম ভর্তা রান্না হয়। এটিই নাকি সংস্কৃতি। এমনিতেই খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে বাঙালিরা খুব হ্যাংলা হয়। তাই বিশেষ দিনগুলিতে বিশেষ রান্না-পদ না থাকলে মনের তৃপ্তিই হয় না। তাই এপার বাংলায় পয়লা বৈশাখের দিন বাঙালির পাতে থাকে কষা মাংস, ডাব চিংড়ি, রুই মাছের পাতুরি, নানান ভাজাভুজি। তারপর দই, মিস্টির সহযোগ তো রয়েছেই।
বাংলাদেশি বন্ধু ইমন নাকি বাংলাদেশের 'পয়লা বৈশাখ'-এর উপর রীতিমতো রিসার্চও শুরু করে দিয়েছে। সেদিন বলছিল, হিন্দু সৌর পঞ্জিকা অনুসারে বাংলার বারোটি মাস বহু পুরনো। তবে আধুনিক ও প্রাচীন যে কোনও পঞ্জিকাতেই নববর্ষের ব্যাপারে অনেক মিল রয়েছে। বর্তমানের 'নববর্ষ' অবিভক্ত বাংলাদেশে 'ঋতুধর্মী' উত্সব নামে পরিচিত ছিল। সেই ধারা এখনও বাংলাদেশে বর্তমান থাকলেও পশ্চিমবঙ্গে তার বৈচিত্র্য অনেকটাই ফিকে হয়ে গিয়েছে। অনেক আগে প্রধানত কৃষিকাজের উপর পয়লা বৈশাখের উত্সবটির গুরত্ব ছিল। তারপর প্রচুর বদল হয়েছে উত্সবের। বাংলা একাদেমি কর্তৃক নির্ধারিত আধুনিক পঞ্জিকা অনুসারে, ১৪ এপ্রিল দিনটিকে বাংলাদেশে পয়েলা বৈশাখ উত্সব নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
বাংলাদেশে পয়লা বৈশাখের দিনটি দিয়েই শুরু হয়ে যায় নানা মেলার আয়োজন। যেমন বৈশাখি মেলা, জব্বারের বলি খেলা, বউমেলা, ঘোড়ামেলা প্রভৃতি। প্রতিটি মেলার বৈচিত্র্য আবার আলাদা আলাদা। ইমন জানিয়েছিল, বউমেলা নিয়ে জয়রামপুরের মানুষের ধারণা, প্রায় ১০০ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে পয়লা বৈশাখের দিনে এই মেলা বসে। প্রাচীন একটি বটবৃক্ষের তলায় বিশেষ করে কুমারী, নববধূ ও মাতৃস্থানীয়া মহিলারা তাঁদের মনোস্কামনা পূরণের আশায় এই মেলায় এসে পুজা-অর্চনা করতেন। আগে পাঁঠাবলির রেওয়াজ ছিল। তবে আইনের লালসুতোর প্যাঁচে বলিপ্রথা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, বদলে গিয়েছে পুজা-অর্চনার পালা। নেই সেই আগের মতে ধুমধামও। তবে মানুষের মনে আন্তরিকতার ছোঁয়া এখনও বর্তমান।
কথায় কথায় ওর ছোট্টবেলাকার কিছু কাহিনি ফুটে উঠেছিল ফেসবুকে। ইমন যখন বেশ ছোট্ট, তখন আব্বার সঙ্গে এক বৈশাখি মেলায় কুস্তি খেলার প্রতিযোগিতা দেখতে গিয়েছিল। সেই রেওয়াজ এখন অবশ্য লুপ্তপ্রায়। এপার বাংলায় চড়ক মেলার মতোই চট্টগ্রামে জব্বারের বলি খেলার আয়োজন করা হয়। সেখানে পেশাদার কুস্তিগিররা শারীরিক কসরত্ দেখিয়ে গ্রামের মানুষজনদের মনোরঞ্জন করে। ইমনের খুব দুঃখ। কারণ, এখন আর সেই কুস্তি খেলার আয়োজন কমে গিয়েছে। পেশাদার বলি বা কুস্তিগিরদের অভাবে বলি খেলার প্রতি আকর্ষণ কমে গেলেও এখনও মেলার প্রতি আকর্ষণ অপরিবর্তিত।
আমাদের এখানে পয়লা বৈশাখের দিন, সন্ধে হলেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিমন্ত্রণ রক্ষা ছাড়া তেমন কিছু বৈচিত্র্য থাকে না। তাছাড়া দোকানগুলিতেও হালখাতার নিমন্ত্রণরক্ষার্থ ছাড়া তেমন বাড়তি কিছু হয় না। নববর্ষের মতো ষোলোআনা ও ঘরোয়া বাঙালি উত্সবে বাঙালিরা রবীন্দ্র সংগীতের তালে-সুরে গান গাইবে না তা কি হয়। তার সঙ্গে সকলের মিলে আড্ডা দিয়ে কবিতা পাঠ করা। কিন্তু আশ্চর্ষ, এপার বাংলায় সেই দৃশ্য সচরাচর দেখাই যায় না। আমার জানতে ইচ্ছে হয়েছিল, বাংলাদেশে কি সেই সংস্কৃতি এখনও বর্তমান? ইমন বলেছিল, সত্যিই পয়লা বৈশাখের দিন, ঢাকার রমনা ময়দানে বটমূলে সংগীতের মধ্যে দিয়ে বর্ষবরণ ও পরে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। ঢাকায় বৈশাখী উত্সবের একটি আবশ্যিক অঙ্গ হল এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা রং-বেরঙের মুখোশ তৈরি করে শোভাযাত্রার মাত্রাটি অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেয়। সেই শোভাযাত্রা দেখতে অসংখ্য মানুষের ভিড় হয় শাহবাগ ও রমনার রাস্তায়। সন্ধে থেকে শুরু হয় আড্ডা-কবিতা পাঠ-নাচ-গানের আসর।
শুনে মনটা কেঁদে ওঠে। এখানে বাংলা ভাষা নিয়ে এই মাতামাতিটা কোথায়? স্মার্টফোন, আইফোনের যুগেও ভাষা ও সংস্কৃতির এমন স্বচ্ছ্বতা বোধহয় বাংলাদেশের মানুষের কাছেই রয়ে গিয়েছে। এখন গণতন্ত্রের অধিকারের দাবিতে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মন অশান্ত। অস্থির। তাই বর্ষবরণের দিন ইমনদের এখন একটাই প্রার্থনা, "একদিন ঝড় থেমে যাবে, পৃথিবী আবার শান্ত হবে।"ব্রাত্য-সনের রুদ্ধকথা
শ্রমণা রায় গোস্বামী
আজ কত তারিখ? না, ইংরেজি তারিখের কথা বলছি না। বাংলা ক্যালেন্ডারে আজ কত তারিখ? খুবই সহজ... পয়লা বৈশাখ। কিন্তু সাল? বাংলা মতে আজ থেকে কত সাল শুরু? এ প্রশ্নে নিঃসন্দেহে অধিকাংশই সংবাদপত্রের প্রথম পাতা হাতড়াবেন। বাংলা নববর্ষের এই প্রথম দিনটায় আহারে-বাহারে অন্তত বাঙালিয়ানা ঠেলে বেরোলেও বাঙালি জীবন থেকে বাংলা তারিখ সরতে সরতে খবরের কাগজের মাথার এক কোণে আর পঞ্জিকার দুই মলাটে মুখ লুকিয়েছে। সাধারণ বাঙালির কাছে যতটা অস্পষ্ট বাংলা ক্যালেন্ডারের হিসেব, তার চেয়েও বেশি ধোঁয়াশায় ভরা এর উত্পত্তির ইতিহাস।
ঠিক কবে থেকে চালু হয় বাংলা ক্যালেন্ডার, তা নিয়ে ইতিহাসে কোনও প্রামাণ্য তথ্য নেই। বিভিন্ন ইতিহাসবাদিদের গবেষণায় উঠে আসে বিভিন্ন তথ্য। কারোর মতে বঙ্গাব্দের সূচনা করেন আকবর বাদশা। এই মতবাদে বিশ্বাসী ঐতিহাসিকদের দাবি, ১৫৮৪ খৃষ্টাব্দে এক নতুন ক্যালেন্ডারের সূচনা করেন আকবর। তারিখ-ই-ইলাহি নামে পরিচিত সেই ক্যালেন্ডারই পরবর্তী কালে বঙ্গাব্দ হিসেবে প্রবর্তিত হয়। এর আগে বাংলায় শকাব্দ মতে দিনের হিসেব করা হত। শকাব্দ ক্যালেন্ডারে প্রথম মাস ছিল চৈত্র। আকবরনামায় আবুল ফজলের বর্ণনা থেকে জানা যায়, রাজকার্যে সেই সময় প্রচলিত ছিল হিজরি ক্যালেন্ডার। যা চান্দ্র হিসেবে চলত। কিন্তু কৃষিকাজে প্রচলিত ছিল সৌর ক্যালেন্ডার। চান্দ্র ও সৌর ক্যালেন্ডারে দিনের তফাত থাকায় কর সংগ্রহে অসুবিধে হত। যে সময় চাষির ঘরে ফসল উঠত, কর সংগ্রহ করা হত তার অনেক পরে হিজরি ক্যালেন্ডার মেনে। স্বাভাবিক ভাবেই এতে সমস্যায় পড়তেন গরিব কৃষকরা। এই সমস্যা এড়াতে আকবর তাঁর রাজত্বকালের প্রসিদ্ধ বৈজ্ঞানিক ও জ্যোতির্বিদ আমির ফতহুল্লা শিরাজিকে সৌরমতে এক নতুন ক্যালেন্ডার বানানোর নির্দেশ দেন। ১৫৮৪ সাল থেকে তারিখ-ই-ইলাহি চালু হয়, যা আকবরের রাজত্বকালের ২৯তম বর্ষ। কিন্তু ঐতিহাসিকদের মতে আকবরের নির্দেশেই তারিখ-ই-ইলাহিতে দিনের হিসেব শুরু হয়েছে আকবরের সিংহাসনে অভিষেকের বছর থেকে, অর্থাত্ ১৫৫৬।
এইখানে বিতর্কের অবকাশ রয়েছে। ১৫৫৬ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত হিসেব করলে হয় ৪৫৭ অর্থাত্ আজ থেকে ৪৫৭ বছর আগে তাঁর রাজ্যপাটের দায়িত্বে আসেন আকবর বাদশা। কিন্তু বাংলা ক্যালেন্ডারে এটা ১৪২০ সাল। আকবরের চালু করা তারিখ-ই-ইলাহি যদি বঙ্গাব্দ হয়, তাহলে এতগুলো বছরের হিসেব কোথায় গেল?
কোনও কোনও ঐতিহাসিক অবশ্য এর উত্তর দিয়েছন। তাঁদের মতে হিজরি ক্যালেন্ডারের হিসেবে ৯৬৩ সনে চালু হয় তারিখ-ই-ইলাহি। রাজকার্য ও কৃষিকাজ একই ক্যালেন্ডার মতে চালাতে একটিই ক্যালেন্ডার রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন আকবর। সে জন্য হিজরি ক্যালেন্ডারের সঙ্গে তারিখ-ই-ইলাহিকে মিশিয়ে দেওয়া হয়। হিজরি মতে বছরের প্রথম মাস ছিল মহরমের। হিজরি ক্যালেন্ডারে ৯৬৩ সনে মহরমের প্রথম দিনটিই পয়লা বৈশাখ হিসেবে ধরা হয়। সে হিসেবে দেখলে বছরের গরমিলের হদিশ পাওয়া যায়। কিন্তু এখানেও প্রশ্ন থেকে যায়, চান্দ্র মতে হিজরি ক্যালেন্ডার ও সৌর মতে তারিখ-ই-ইলাহি কী ভাবে মেশানো সম্ভব, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে ইতিহাসবিদদের মধ্যেই।
বিরুদ্ধ মত আরও রয়েছে। আকবর যদি তাঁর রাজত্বসীমায় সারা ভারতেই এই ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেন, তাহলে শুধু দুই বাংলা ও অসমের কিছু অংশে এর প্রচলন রয়ে গেল, আর বাকি ভারতে অবলুপ্তি ঘটল কেন? উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম ছড়ানো, আকবরের বিশাল রাজত্বসীমায় এক এক জায়গায় কৃষিকাজ ও উত্পাদিত ফসলের প্রকারভেদ ছিল। সব জায়গায় ফসল উত্পাদনের সময় মোটেও এক ছিল না। তাহলে একটি ক্যালেন্ডারে সর্বত্র কৃষিকাজ ও কর সংগ্রহের হিসেব কী করে রাখা সম্ভব, সে প্রশ্ন তুলেছেন ঐতিহাসিকদের অনেকেই। তাছাড়া বাংলায় আকবর বা মুঘল বাদশাদের প্রভাব কোনও দিনও খুব একটা প্রত্যক্ষ ভাবে ছিল না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাঁর রাজত্বের এই উত্তর-পূর্ব অংশ শাসিত হত স্থানীয় রাজাদের দ্বারা। তাঁরাই সাধারণত দিল্লির বাদশাকে কর দিয়ে থাকতেন। আকবর বা মুঘল শাসনের প্রভাব খুব একটা না থাকলে তারিখ-ই-ইলাহি কী করে বঙ্গাব্দ হিসেবে প্রচলিত হল, সে প্রশ্ন রয়েছে ঐতিহাসিকদের মধ্যে।
তারিখ-ই-ইলাহির মাসগুলি প্রচলিত ছিল করওয়াদিন, আরদি, ভিহিশু, তীর, আমারদাদ, শাহরিয়ার, আবান, আজুর, দাই, বহম ও ইশকান্দের মিজ নামে। সেখান থেকে বাংলা ক্যালেন্ডারে বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য নামের প্রবর্তন কেন হল, সে প্রশ্নের উত্তর নেই। বাংলায় বারোটি মাসের নাম এসেছে বারোটি নক্ষত্রের নাম থেকে। বিশাখা থেকে বৈশাখ, জৈষ্ঠা থেকে জৈষ্ঠ্য, উত্তর ও পূর্ব আষাঢ়া নক্ষত্রের নাম থেকে আষাঢ়, শ্রাবণা থেকে শ্রাবণ, উত্তর ও পূর্ব ভাদ্রপদ থেকে ভাদ্র, অশ্বিনী থেকে আশ্বিন, কৃত্তিকা থেকে কার্তিক, অগ্রহায়ণ (মার্গশীর্ষ) এসেছে মৃগশিরা নক্ষত্রের নাম অনুসারে, পুষ্যা থেকে পৌষ, মঘা থেকে মাঘ, উত্তর ও পূর্ব ফাল্গুনী নক্ষত্রের নাম থেকে ফাল্গুন এবং চিত্রা নক্ষত্রের নাম অনুসারে চৈত্র।
অন্য এক দল ঐতিহাসিকদের মতে বঙ্গাব্দ চালু করেছিলেন বাংলার রাজা শশাঙ্ক। তাঁর অসম জয়কে স্মরণীয় করতে শশাঙ্ক বঙ্গাব্দের সূচনা করেন বলেও ইতিহাসে ধারণা পাওয়া যায়। কিন্তু বাংলার বাইরে বেনারস ও বর্তমান ওডিশার চিল্কার দিকে অগ্রসর হলেও তাঁর অসম জয়ের কোনও প্রামাণ্য নথি সেভাবে পাওয়া যায়নি। তাই শশাঙ্কই বঙ্গাব্দ চালু করেছিলেন কিনা, সে প্রশ্নও ধোঁয়াশায় মোড়া। এক মতে হোসেন শাহী বংশের সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ (১৪৯৩-১৫১৯) বঙ্গাব্দের প্রবর্তক। প্রখ্যাত পণ্ডিত সিলভ্যাঁ লেভি তিব্বতি রাজা রি-স্রঙ-সন বা তাঁর পুত্র স্রঙ-সানের সঙ্গে বঙ্গাব্দের যোগ আছে বলে ভেবেছিলেন। কিন্তু এই 'সন' আরবি শব্দ, বাংলা নয়।
বিশেষ উত্সব-পার্বণে বাংলা তারিখের খোঁজ পড়লেও বাংলা ক্যালেন্ডার বহুদিন ধরেই ব্রাত্য। নববর্ষে দোকানে দোকানে হালখাতার অনুষ্ঠানে মিষ্টির প্যাকেটের সঙ্গে একটা করে বাংলা ক্যালেন্ডারও পাওয়া যায়। তবে বেশিরভাগ বাড়িতেই রাবার ব্যান্ডে বন্দি হয়ে তার ঠাঁই হয় তাকের এক কোণে। দেওয়ালে ঝোলার সৌভাগ্য হয় না। নববর্ষের প্রথম দিনে একদিনের বাঙালিয়ানাতেও শিকে ছেঁড়ে না বাংলা ক্যালেন্ডারের। যেমন প্লাস্টিক পেন্টে মোড়া আধুনিক বাঙালির চর্চিত দেওয়ালে তার ঠাঁই নেই, তেমনই ইতিহাসের প্রামাণ্য নথিতে খোঁজ নেই এর উত্পত্তির ইতিহাসের। মত-পাল্টা মত, ধারণা-পাল্টা ধারণা পেরিয়ে নববর্ষের প্রাক্কালে একবার কি খুঁজে দেখা যায় না বঙ্গাব্দের ইতিহাস?বর্ষ শুভ হোকনিবেদিতা দাঁ
এই কামনা দিয়েই শুরু করলাম। শুধু আমি কেন এই শুভ কামনা দিয়ে তো পৃথিবীর সব মানুষই শুরু করেন নতুন বছর। এক গাল হেসে একে অপরকে অভিবাদন জানিয়ে প্রতি নতুন বছরের শুরুটাই তো করি এই কামনায়, এই আশায়, যাতে ভাল কাটে বছরের প্রতিটি দিন।
একটা করে নতুন বছরের হাত ধরেই তো এগিয়ে চলা আগামীর পথে। নতুন স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার দিকে আরও একটা পদক্ষেপ তো এই নতুন বছরের সূত্র ধরেই। মনে মনে বারবার একটা প্রার্থনাই ঘুরে ফিরে আসে... এই বছরটা যেন ভালো কাটে বাবা! রবি ঠাকুর তো তাই লিখেছিলেন 'যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে যাওয়া গীতি, অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক।' প্রতি বছরই মনের মধ্যে ঘুরপাক খায় এই একান্ত কামনা।
একটি হিন্দি ছবির জনপ্রিয় সংলাপ ছিল, 'আগর কিসি ভি চিজ কো দিল সে চাহো তো পুরি কায়ানাত্ তুমহে উসসে মিলানে কি কোশিশ্ মেঁ লাগ জাতা হ্যায়।' কথায় বলে জীবনের টুকরো টুকরো ঘটনাই নাকি প্রতিবিম্বিত হয় চলচ্চিত্রে। সেটাই যদি সত্যি হয়, তাহলে এই সংলাপও তো কোথাও না কোথাও সত্যিই! 'সত্যি'! কথাটা কি একটু কানে লাগছে? যদি সত্যিই ইচ্ছাশক্তির এতই মূল্য থাকে তা হলে কেন বছরে বছরে বহু মানুষের স্বপ্ন ভেঙে যায়? কেন চিড় ধরে ভালোবাসার সম্পর্কে? তারা কি শুভকামনা দিয়ে বর্ষবরণ করেনি? কে জানে! হয়তো করেছিল, কিন্তু কায়ানাত্ ওরফে আল্লা, গড, ভগবান তখন নিদ্রা গিয়েছিলেন। কিংবা স্বর্গলোকের সার্ভার ডাউন ছিল। তাই বছর শুভ হোক 'রিকোয়েস্ট'-টা 'সাকসেসফুলি ডেলিভারড' হয়নি। ফলে যত বিপত্তি!
কিংবা হয়তো 'সাকসেসফুলি ডেলিভারড' হয়েছিল কিন্তু 'স্প্যাম' বা 'জাঙ্ক' বক্সে গিয়ে জমা পড়েছিল। তাই উপরওয়ালার চোখে পড়েনি। আসলে আপনি তো আর্জেন্ট মার্ক করে দুরু দুরু বুকে বছরের শুরুর দিনটায় উপরওয়ালার দরবারে আর্জি জানিয়ে দিলেন। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন তাঁর মেলবক্সে এমন কত 'আর্জেন্ট' মার্ক করা দরখাস্ত জমা পড়ে। আমরা সবাই যে শুধুই ভাল থাকতে চাই। খারাপ! না বাবা, সেটা পাশের বাড়ির অন্দরমহলে আসুক, কিন্তু 'আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে', আমার বাড়ির চৌকাঠ যেন খারাপের পা পেরোতে না পারে। আর তাই তো বছর এগোতে এগোতে যখন আস্তে আস্তে সব চাওয়াগুলো মনের মতো করে সফল হয় না তখনই মনে হতে থাকে, ধুত্ এ বছরটা একেবারে ভাল গেল না।
কথাটা দার্শনিক মনে হলেও, একটা বছর ভাল কাটল না খারাপ সেটা তো সম্পূর্ণ নির্ভর করে এক এক জনের দৃষ্টিভঙ্গির উপরে। আমার কাছে যা ভালো, আর এক জনের কাছে তা একেবারেই ভালো নয়। প্রশ্ন করতেই পারেন, শুরুতে যে ঘর ভাঙার উদাহরণ দিলাম সেটা তো এখনই বলা যুক্তির সঙ্গে খাপ খাচ্ছে না! যদি বলি আলবাত খাপ খাচ্ছে, বলবেন পাগলের প্রলাপ? একটা সংসার ভেঙে যাওয়া, ভালোবাসার সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার মধ্যে কীসের ভালো লুকিয়ে আছে? আছে, কারণ যে সম্পর্কটা ভেঙে যাচ্ছে, সেটা আসলে একটা মরে যাওয়া সম্পর্কের খোলস ছাড়া আর কিছুই নয়। একটা প্রাণহীন খোলসপ্রায় সম্পর্ককে শুধু শুধু বাঁচিয়ে রাখার মধ্যে শুভটা কোথায় আছে বলতে পারেন? সেই দমবন্ধ করা সম্পর্কের মধ্যে থাকতে থাকতে বার বার মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছিল, 'ঠাকুর আবার সবকিছু ভালো করে দাও। এই নতুন বছরটা যেন একটু শান্তি নিয়ে আসে।' আপনি প্রার্থনা করেছিলেন এই ভেবে যে, কোমায় চলে যাওয়া সম্পর্কটা হুট করে একদিন ভেন্টিলেশন ছেড়ে বেরিয়ে আসবে। কিন্তু ওই যে উপরওয়ালা বসে আছেন, তিনি মনে করেছিলেন যে ভেন্টিলেশন থেকে বেরিয়ে আসলেও সারা জীবন সেই সম্পর্কটা প্যারালাইজড হয়ে থাকবে। তাই আপনার দরখাস্তকে 'অ্যাপ্রুভ' করে 'বিগ বস' আপনার জন্যে বরাদ্দ করলেন একদম নতুন প্রাণোচ্ছ্বল 'টেলরমেড সম্পর্ক'। আর সেই শুভকে স্বাগত জানাতে গেলে ঠিক পুরনো বছরের মতোই জীর্ণ সম্পর্ককে বিদায় জানানোটাও অনিবার্য।
মোদ্দা কথা, রাত আর দিনের মতোই শুভ ও অশুভ মিলেমিশে রয়েছে। একজনের অস্তিত্ব আছে বলেই অন্য জনকে পাওয়ার আশা এত তীব্র। তাই ভাল-খারাপের তরজায় কয়েকটা নিষ্পাপ দিনকে কাটাছেঁড়া নাই বা করলাম। বরং প্রতি বছরের মতোই এই বছরটাকেও স্বাগত জানান প্রাণখুলে, উষ্ণ আলিঙ্গনে। মনের মধ্যে আশাটা জিইয়ে রাখুন যে, ভালো আপনি থাকবেন, যে কোনও পরিস্থিতেই ভালো আপনাকে থাকতে হবেই। এই প্রবল ইচ্ছাশক্তিই তো এগিয়ে নিয়ে যাবে। সব শুভ কামনাই যদি এক বছরে সফল হয়ে যায়, তাহলে তার মূল্যটা বড়ই ফিকে হয়ে পড়বে, পথ চলার ইচ্ছেটাও তো হারিয়ে যাবে। অজানার দিকে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যেও তো রয়েছে এক চরম উত্তেজনা, শিরায় শিরায় ছড়িয়ে পড়ে এক শিরশিরে অনুভুতি। অপ্রাপ্তির খিদেটাই তো এগিয়ে নিয়ে যায় সেই শীর্ষ। আর যাত্রাপথ যত দুর্গম, শীর্ষ পৌঁছানোর পরিতৃপ্তিও তো ততোধিক।বাঁদুবাবুর নববর্ষ
প্রীতমপ্রতীক বসু
'বলেছো ঠিকই।' আড়মোড়া ভাঙেন জ্যোতিষ চাকি। এটা অবশ্য, যাকে বলে, পোশাকি নাম। পরিচয়, বাঁদুবাবু নামে। নামটারও পিছনে একটা ইতিহাস আছে। এ তল্লাটে যে কাউকে 'বাঁদুবাবু'র বাড়ি বললে এককথায় বোঁ করে দেখিয়ে দেবে। নামবৃত্তে পরে আসা যাবে। ভাঁড়ের চা'টা একচুমুকে গলাদ্ধকরণ করে ফের শুরু করলেন জ্যোতিষ, ওরফে বাঁদুবাবু-- 'আমার নাম নিয়ে আড়ালে-আবডালে অনেক কথাই তো হয়। কেউ পেরেছে সামনে বলতে! কোনও বাপের ব্যাটা পারবে না।' উল্টো দিকে বসা তারক বোস বয়সে খানিকটা বড় হলেও, বাঁদুবাবুর দাপটের সামনে তিনিও 'জুনিয়র'। আমতা-আমতা করে বলেই ফেললেন, 'সে হক কতা। কিন্তু তোমার নিজেরও তো একটা প্রেস্টিজ আচে...।' কথা কেড়ে নেন রমেন বর্মণ, 'ধুত্তোর পেস্টিজ। ও তো পেশার কুকার। পেশারে, পেশারে আমাদের অবস্থা আইঢাই, আর ওরা সব নীতি কপচাচ্ছে।'
বিকেলের পড়ন্ত রোদে বিরক্তি ছিটকে পড়ে অন্যদের মুখে। রোজকার এই বৈকালিক আড্ডায় রমেন বর্মন মূর্তিমান স্পয়েল স্পোর্ট। বিশ্বচরাচরে যা কিছু তাঁর অপছন্দের, তার সব কিছুর সঙ্গেই তিনি 'ওদের' জড়িয়ে নেন। এই 'ওরা'টা যে ঠিক কারা, তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু ধস্তাধস্তির পরেও সন্ধান মেলেনি। ফলে, আগে যা ছিল আগ্রহ, এখন সেটা স্বাভাবিক ভাবেই বিরক্তি। তার উপর 'র-ফলা'য় গোলমাল। এমনকী 'রেফ'গুলোও গোলমেলে। ক্ষণে ক্ষণে উঠে যান আড্ডা ছেড়ে। বলেন, 'রক্তে চিনি বেড়েছে তো, তাই পোস্সাবটাও ঘন ঘন হচ্ছে।' মোট কথা, রমেন বর্মনকে কেউ বিশেষ পছন্দ করেন, এমন নয়। পাড়ার ছেলেছোকরাদের সঙ্গে সম্পর্কটা তো আরও খারাপ। চাঁদা নিয়ে রমেনবাবুই ওদের উপর জুলুমবাজি করেন। পুজোর চাঁদা ৫০০ হলে, রমেনবাবু দেবেন ৬০। বাঁধাধরা। মাগ্গিগন্ডার বাজারে এর বেশি দেওয়া সম্ভব নয় যে। তবে পুজোর পাড়াতুতো খানাপিনায় রোজ হাজির। বলেন, সমাজে না মিশলে নাকি বাঁধন আঁট হয় না।
ছিক করে খানিকটা পানের পিক ফেলেন উত্তাল চাকলাদার। প্রসঙ্গে ফিরে বললেন, 'এত দিন হয়ে গেল, প্রতিবাদ করলেন না। করতেই পারেন। আমরা আপনার পাশে আছি। এগিয়ে যান। ব্যাপারটা পাল্টাতেই হবে।' বৃদ্ধ অস্থিতে জাদু দেখাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন উত্তাল। ছেলেপিলেরা দিনমানে জ্বালাবে, টিপ্পনি কাটবে, আর সেগুলো ঘুরপথে কানে আসবে, এ দিনও দেখার ছিল? সে সময় হলে এদ্দিনে ঘুসিয়ে সবক'টাকে সাবড়ে দিতেন। দাঁতের ডাক্তারের খরচ লাগত না। এখনও অবশ্যি উত্তাল হাতের আঙুলগুলো মুঠো করেন। লাঠি ধরতে। উর্দি গায়ে কত কালু-বিলু-পল্টাকে শায়েস্তা করেছেন, তার ইয়ত্তা নেই। কব্জির জোরে ভাটার টান, কলজের জোরে তো এখনও জোয়ার। বাঁদু-টিকার হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বেন।
'হুঃ! যত্তসব...গোঁয়ার-গোবিন্দ চললেন পাল্টাতে।' টিপ্পনি জিএস-এর। ওই নামেই পরিচিত। গগন সমাদ্দার ছিলেন অঙ্কের অধ্যাপক। হিসেব কষে চলেন। 'ও ভাবে কিস্সু হবে না। বাঁদুদাকে অন্য ডিফারেনশিয়ালে কাজ হাসিল করতে হবে। ধরা যাক, এক্স...', কথাটা শেষ করার আগেই ঝামটা গদাধর পালের, 'অ্যাই, শুরু হল। এক্স, ওয়াই...ধুস। স্রেফ আন্দোলন। মিছিল বের কর, চারটি পোস্টার সাঁটিয়ে দাও, একবেলা অনশন, স্মরকলিপি, বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি। অব্যর্থ।' মহাকরণের করণিক ছিলেন। জানেন, কোন রোগের কী ওষুধ।
যত মত, তত পথ। গোলকধাঁধায় যেতে নারাজ বাঁদুবাবু। ঠান্ডা মাথায় জিজ্ঞেস করলেন, 'তা হলে খাড়াইলটা কী? যে কোনও একটা করতে হবে। সবগুলো তো আর একসঙ্গে করা যাবে না।' আসলে পাড়ার ছোঁড়াদেরও তেমন দোষ নেই। জ্যোতিষ যখন বাবু হননি, হাফপ্যান্ট জোতে, তখন একদিন ধুন্ধুমার ব্যাপার। স্কুল থেকে ফিরছিল বছর সাতেকের জোতে। শহরতলির পাড়া। হনুমানের উত্পাত লেগেই থাকত। তা সেই রামভক্তদের একজনের মেজাজ গিয়েছিল বিগড়ে। মাঝপথে জোতের ব্যাগ ধরে টানাটানি। দোষের মধ্যে টানাটানিটা একটু বেশিই করে ফেলেছিল। জোতের ব্যাগ থেকে বেরিয়ে পড়ে রবারের ক্রিকেট বল। ঘটনাচক্রে, বাবা আবার ঠিক সে সময়েই রাস্তায় হাজির। ছেলে-হনুমান দ্বৈরথে স্কুলের ব্যাগ থেকে বলের উদয় হবে, তা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি। তত ক্ষণে হনুমানের চোখও পড়েছে বলের উপর। বলকে ফল ভেবে চোঁ তুলে ভোঁ দৌড়। আর জোতের কর্ণমূলে বাবার বিরাশি সিক্কার থাপ্পড়, 'বল নিয়ে স্কুলে যাস! বাঁদর!' সব শুনেটুনে মা বললেন, 'ভালোই তো। বাঁদরের বল হনুমানে নিয়েছে। স্বজাতিই তো বাবা। রাগ করে না।' মায়ের কথাটা আবার পটলের কানে কী ভাবে যেন ঢুকেছিল। হনুমান উপাখ্যান প্রচার পেতে বিশেষ সময় লাগেনি।
ব্যস। জ্যোতিষ, ওরফে জোতে সেই দিন থেকে বাঁদর। সটান বাঁদর না ডেকে বন্ধুরা কেটেছেঁটে 'বাঁদু' করে নিয়েছিল। কিন্তু বিবর্তনে যেমন বাঁদরের লেজ এখনও খসেনি, তেমনই জ্যোতিষের 'বাঁদু'ত্বও ঘোচেনি। দেখতে দেখতে সত্তর পেরিয়েছেন জ্যোতিষ। বেসরকারি ফার্মে বড় চাকরি করেছেন, আয়-রোজগার ছিল মোটা। স্ত্রী গত হয়েছেন বছর সাতেক। এক ছেলে আইআইটি-আইআইএম, ছোটটি যাদবপুর থেকে সিভিল করার পর প্রেমে পতিত হয়েছিল। টিসিএস-এর চাকরি সম্বল করেই বিয়ে। বড়টির ছেলে প্রাইমারিতে। হাসিখুশি থাকেন জ্যোতিষ। সবসময়। হাসিখুশির মোড়কে। হ্যাঁ।
বাড়ি থেকে অনেক দূরে। চাকরিতে প্রোমোশনটা পেয়ে সুলতার জন্য একফালি জমিটা কিনেছিলেন। বলেছিলেন, 'বুড়ো-বুড়িতে এখানে থাকব।' সুলতার কোলে তখন সুমিত আসব-আসব করছে। খানিকটা লজ্জা, খানিকটা আনন্দে সুলতার ফরসা মুখটা লালচে হয়ে উঠেছিল। চৈত্রশেষের এক পড়ন্ত বিকেলে বার্ধক্যের স্বপ্নটা দেখেছিলেন দু'জনে। কিন্তু পরিবার-পরিবার করে সুলতার আর আসা হল না। যে দিন চলে গেলেন, সে দিন জ্যোতিষের হাতটা ধরে বলেছিলেন, 'তুমি যাও। আমি চললাম।' শেষকৃত্য করেছিলেন জ্যোতিষ নিজেই। পেল্লায় বাড়িটা স্ত্রীর নামেই রেখেছিলেন জ্যোতিষ। দুই ছেলে নিজেদের নাম দেখতে চেয়েছিল। চেয়েছিল জমিটাও। জ্যোতিষ রাজি হননি। দু'জনেই বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। অশক্ত মা-বাবাকে রেখে। তার পর সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় সুলতার স্ট্রোক, গড়িয়ে পড়া এবং...।
সুলতার কাজ করার পর দুই ছেলেকে ডেকে লিখে দিয়েছিলেন বাড়িটা। আর জমানো টাকায় গড়ে তুলেছিলেন 'সুলতা-স্মৃতি'।
সেই জমিতে যেখানে এক চৈত্র অপরাহ্নে সুলতার সঙ্গে একসঙ্গে দাঁড়িয়েছিলেন।
একা নয়, নিয়ে এসেছেন তারক বোস, রমেন বর্মন, উত্তাল চাকলাদার, জিএস, গদাধর পালদের। যাঁরা তাঁর মতোই পরিবারে অপাংক্তেয়। বৃদ্ধাবাস বলেন না, 'সুলতা-স্মৃতি'কে তিনি মজা করে বলেন ভেন্টিলেটর। মৃতপ্রায়কে জীবনে ফিরিয়ে দেওয়ার খোপ। আর মজা করে তাঁর 'বাঁদু' নামটা ছড়িয়ে দিয়েছেন এ পাড়ার ছেলেছোকরাদের মধ্যে। তাদের টিপ্পনিতে কপট রাগ দেখান, উত্ত্যক্ত হন মিছিমিছি। ছেলেগুলো ভাবে বুঝি, সত্যিই বুড়ো খেপেছে। তারক, রমেনদের কাছে এ নিয়ে কপট ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নানা ফন্দি-ফিকির করে বুড়োরা বসে। এই চলে বছরভর। আবার বুড়োদের সব সমস্যায় পাশে ওই ছেলেগুলোই। পাড়াটাকে এ ভাবেই একসুতোয় বেঁধেছেন বাঁদুবাবু।
চৈত্রের শেষ বিকেলে বৃদ্ধরা চললেন এগিয়ে। গুনগুন শব্দ ভেসে আসছে। কী ভাবে শায়েস্ত করা যায় ছোঁড়াগুলোকে, আলোচনা তা নিয়েই। লালচে সূর্য এবার পাটে নামবে। সেই সুলতার লজ্জা দেখা রোদ, শেষ চৈত্রের এ রোদটা ভালোই চেনেন জ্যোতিষ। একবার মুখ তুলে দেখলেন, মুচকি হাসলেন। সুলতাও কি হাসলেন আড়াল থেকে? জ্যোতিষ মনে মনে বললেন, 'আসছে বছর, আবার হবে।' বিসর্জন নয়, এ শব্দবন্ধ জ্যোতিষের কাছে এগিয়ে চলার আহ্বান, জীবনের হৃদস্পন্দন। পয়লা বৈশাখ আসছে...পেরিয়ে গেল আরও একটা বছর। বাঁদুবাবু আঁকড়ে ধরতে চান নতুন বছরটাকে। কে বলে সুলতা নেই? 'সুলতা-স্মৃতি'ই তো বাঁদুবাবুর বাড়ি।
No comments:
Post a Comment