ধ্যানচন্দ্র, রামচন্দ্র এবং 'স্কুপ'ভাগ্য
স্ট্রাইকার
আমাদের খেলার রামায়ণের রামচন্দ্র ওরফে ধ্যানচন্দ্রের সাক্ষাত্কারের সোনালি -জয়ন্তী থেকে আর মাত্র চার বছর দূরে৷ সামান্য ঠিকে ক্রীড়া -সাংবাদিক , তাই ধ্যানচাঁদের মতো ব্যক্তিত্বকে ছোঁয়ার আগে অন্তরে সেদিন ভরপুর থরথরানি ছিল৷ প্রায় কাকডাকা ভোর৷ পার্ক স্ট্রিটের চৌমাথায় ভারত -পিতা সারা রাতে হিমমেখে -ডান্ডি অভিযানের প্রতীকে মগ্ন৷ সঙ্গী ফোটোগ্রাফার সুনীল দাশ৷ পঞ্চাশ -ষাটের দশকে ক্রীড়া-মগ্ন কলকাতার খেলার খবর যার লেন্সই বেশি ঝলসে উঠত৷ গন্তব্য পার্ক স্ট্রিটের মোড়ের কাছেই বাস্কেট কাম হকির মেয়েদের অনুশীলনের মাঠ৷ এখন পাতালে সেঁধিয়েছে৷ এই মাঠে লেসলি ক্লডিয়াসের বউ নি জুয়েল , লিয়েন্ডারের মা জেনিফার বা শিরিন কিয়াসরা প্র্যাকটিস করেছেন৷ যত আবেগ উাস এখানে এসেই যেন ঠোক্কর খেল৷ চারিদিক ভোঁ ভাঁ, কা কস্য পরিবেদন৷ জেদের পারদ কিন্ত্ত চড় চড় করে চড়ছে৷ সবই অলীক স্কুপের টান৷
ঠাহর হল একবার তবে কাছেই কিড স্ট্রিটের এম এল এ হস্টেলে ঢুঁ মারি৷ দোতলার ঘরের বারান্দায় আমাদের হকি -রত্ন সাক্ষাত্ দাঁড়িয়ে৷ গায়ে গেঞ্জি৷ তখন মুখ ধোওয়া হয়নি৷ পেটানো চেহারায় সামরিক অনুশাসন গমগম করছে৷ মাথার উপর ভাঙা বাল্ব৷ রাত ভোর দানাপানি পেটে পড়েনি৷ সন্তর্পণে সৌজন্যের হাত বাড়ালাম৷ মেজাজ যথারীতি খাট্টা৷ হাতে হাত দিতেই প্রায় তড়িতাহত৷ এই পানি -পীড়নে এক সময় হিটলার , ব্র্যাডম্যান ও জওহরলালরাও ধন্য হয়েছেন৷ ব্যস্ত ক্রীড়া -পরিষদের ডাকে উনি বঙ্গজনের পরম অতিথি৷ অথচ হেনস্থার শিকার !এমন বিপন্ন অবস্থায় কথা বলা দায়৷ আশ্চর্য এরই মধ্যে কথা বললেন , যদিও যথেষ্ট বিরক্তির সঙ্গে৷
ব্যক্তিগত ভাবে নিজেও বার বার ভেবেছি৷ সময়ের কাঁটাটা যদি তিরিশ বছর পিছিয়ে দিই৷ অদূরে ময়দানে বেটনের -বাসন্তী পুজো হচ্ছে৷ ভারত সেঁচে হিরেমতি খচিত ডজন তিনেক দলের তুল্যমূল্য লড়াই৷ দর্শকের দু'চোখ ভরে দেখার বাসনা , ধ্যান -রূপ দুই ভাইয়ের পুশ -ড্রাই-ফ্লিকের স্টিকের ঝলক৷ এ যেন হকির কুম্ভ মেলা৷ বেটন হচ্ছে , স্যুভেনিরে ছড়া কাটা হচ্ছে নামজাদা টিমের নামের আদ্যাক্ষর ঘিরে৷
দুই ভাই উঠতেন মধ্য কলকাতার ব্রডওয়ে হোটেলে৷ সারা কলকাতা ভেঙে পড়ত ওই হোটেলের আশপাশে , নিছক গৌরবান্বিতের গৌরবছটায় পুলকিত হতে৷
সময়ের তফাতে এমন বীরের বঞ্চনা , অথচ হস্টেলের ওই কয়েকশো গজ দূরে কান পাতলে ঈথারে সেই ধ্যান -রূপের খেলার সমঝদারদের হাততালি বোধ হয় শোনাও যেত৷
এই সব সাতপাঁচ ভাবছিলাম ধ্যানচন্দ্রকে অসহায় দেখতে দেখতে৷ লা পিয়েরের সিটি অব জয় তখন আমার গলার কাঁটায় পরিণত - সিটি অব পরাজয়৷
টুকটাক কথা হল, নোট নিলাম৷ দেশ টুকরো টুকরো হয়ে হকির ভারতও দু-আধখানা হওয়ায় জাদুকরও যথেষ্ট ক্ষুব্ধ৷ তবে সিন্থেটিক মাঠে খেলতে উপমহাদেশের প্লেয়ারদের বাধ্য করা হচ্ছে , এটা তাঁর কাছে ঢাল -তরোয়াল কেড়েকুড়ে যুদ্ধে নামানোরই সামিল৷ ওঁর টনটনে বিশ্বাস দেখেছিলাম , ভারত -পাক এক থাকলে এ ভাবে জব্দ করা যেত না৷ এমন ভারত -বিদ্বেষী হকি -পরিবেশে দেশেও যেন হকি -চর্চায় ভাঁটা চলেছে , এতে তাঁর দুঃখের আর শেষ নেই৷ তিনি যেন ভারতীয় হকির শেষ দেখতে পাচ্ছিলেন৷
ভাবুন, পরাধীন ভারতে ১৯৩৬ -এর বার্লিন অলিম্পিকে ব্রিটিশ -পতাকা হাতে মার্চ পাস্ট করতে হয়৷ বুকের জ্বালা মেটে খেলার মাঠে নামার আগে৷ জাতীয় কংগ্রেসের তেরঙায় প্রণাম জানিয়ে তাঁরা মাঠে ঢোকেন৷ যেন আনন্দমঠের বীর সন্ন্যাসী৷ লক্ষ্য --হকি স্টিক হাতে আমরা দেশের জন্য বলি প্রদত্ত৷ হায় ! জাদুকরের সাক্ষাত্কারের সন্তাহখানেক পরে কলকাতার তাবত্ সাংবাদিকদের স্কুপ -মিসের আপশোসে কিন্ত্ত খবরদার ক্ষোভ মেটায় ধ্যানচাঁদকে দিয়ে জোর করে ঘটনার প্রতিবাদ লিখিয়ে৷ উনি লেখেন , ওঁকে সাংবাদিক জানলে আমার কথা বলতাম না৷ অলমতি বিস্তারেন !
আমাদের খেলার রামায়ণের রামচন্দ্র ওরফে ধ্যানচন্দ্রের সাক্ষাত্কারের সোনালি -জয়ন্তী থেকে আর মাত্র চার বছর দূরে৷ সামান্য ঠিকে ক্রীড়া -সাংবাদিক , তাই ধ্যানচাঁদের মতো ব্যক্তিত্বকে ছোঁয়ার আগে অন্তরে সেদিন ভরপুর থরথরানি ছিল৷ প্রায় কাকডাকা ভোর৷ পার্ক স্ট্রিটের চৌমাথায় ভারত -পিতা সারা রাতে হিমমেখে -ডান্ডি অভিযানের প্রতীকে মগ্ন৷ সঙ্গী ফোটোগ্রাফার সুনীল দাশ৷ পঞ্চাশ -ষাটের দশকে ক্রীড়া-মগ্ন কলকাতার খেলার খবর যার লেন্সই বেশি ঝলসে উঠত৷ গন্তব্য পার্ক স্ট্রিটের মোড়ের কাছেই বাস্কেট কাম হকির মেয়েদের অনুশীলনের মাঠ৷ এখন পাতালে সেঁধিয়েছে৷ এই মাঠে লেসলি ক্লডিয়াসের বউ নি জুয়েল , লিয়েন্ডারের মা জেনিফার বা শিরিন কিয়াসরা প্র্যাকটিস করেছেন৷ যত আবেগ উাস এখানে এসেই যেন ঠোক্কর খেল৷ চারিদিক ভোঁ ভাঁ, কা কস্য পরিবেদন৷ জেদের পারদ কিন্ত্ত চড় চড় করে চড়ছে৷ সবই অলীক স্কুপের টান৷
ঠাহর হল একবার তবে কাছেই কিড স্ট্রিটের এম এল এ হস্টেলে ঢুঁ মারি৷ দোতলার ঘরের বারান্দায় আমাদের হকি -রত্ন সাক্ষাত্ দাঁড়িয়ে৷ গায়ে গেঞ্জি৷ তখন মুখ ধোওয়া হয়নি৷ পেটানো চেহারায় সামরিক অনুশাসন গমগম করছে৷ মাথার উপর ভাঙা বাল্ব৷ রাত ভোর দানাপানি পেটে পড়েনি৷ সন্তর্পণে সৌজন্যের হাত বাড়ালাম৷ মেজাজ যথারীতি খাট্টা৷ হাতে হাত দিতেই প্রায় তড়িতাহত৷ এই পানি -পীড়নে এক সময় হিটলার , ব্র্যাডম্যান ও জওহরলালরাও ধন্য হয়েছেন৷ ব্যস্ত ক্রীড়া -পরিষদের ডাকে উনি বঙ্গজনের পরম অতিথি৷ অথচ হেনস্থার শিকার !এমন বিপন্ন অবস্থায় কথা বলা দায়৷ আশ্চর্য এরই মধ্যে কথা বললেন , যদিও যথেষ্ট বিরক্তির সঙ্গে৷
ব্যক্তিগত ভাবে নিজেও বার বার ভেবেছি৷ সময়ের কাঁটাটা যদি তিরিশ বছর পিছিয়ে দিই৷ অদূরে ময়দানে বেটনের -বাসন্তী পুজো হচ্ছে৷ ভারত সেঁচে হিরেমতি খচিত ডজন তিনেক দলের তুল্যমূল্য লড়াই৷ দর্শকের দু'চোখ ভরে দেখার বাসনা , ধ্যান -রূপ দুই ভাইয়ের পুশ -ড্রাই-ফ্লিকের স্টিকের ঝলক৷ এ যেন হকির কুম্ভ মেলা৷ বেটন হচ্ছে , স্যুভেনিরে ছড়া কাটা হচ্ছে নামজাদা টিমের নামের আদ্যাক্ষর ঘিরে৷
দুই ভাই উঠতেন মধ্য কলকাতার ব্রডওয়ে হোটেলে৷ সারা কলকাতা ভেঙে পড়ত ওই হোটেলের আশপাশে , নিছক গৌরবান্বিতের গৌরবছটায় পুলকিত হতে৷
সময়ের তফাতে এমন বীরের বঞ্চনা , অথচ হস্টেলের ওই কয়েকশো গজ দূরে কান পাতলে ঈথারে সেই ধ্যান -রূপের খেলার সমঝদারদের হাততালি বোধ হয় শোনাও যেত৷
এই সব সাতপাঁচ ভাবছিলাম ধ্যানচন্দ্রকে অসহায় দেখতে দেখতে৷ লা পিয়েরের সিটি অব জয় তখন আমার গলার কাঁটায় পরিণত - সিটি অব পরাজয়৷
টুকটাক কথা হল, নোট নিলাম৷ দেশ টুকরো টুকরো হয়ে হকির ভারতও দু-আধখানা হওয়ায় জাদুকরও যথেষ্ট ক্ষুব্ধ৷ তবে সিন্থেটিক মাঠে খেলতে উপমহাদেশের প্লেয়ারদের বাধ্য করা হচ্ছে , এটা তাঁর কাছে ঢাল -তরোয়াল কেড়েকুড়ে যুদ্ধে নামানোরই সামিল৷ ওঁর টনটনে বিশ্বাস দেখেছিলাম , ভারত -পাক এক থাকলে এ ভাবে জব্দ করা যেত না৷ এমন ভারত -বিদ্বেষী হকি -পরিবেশে দেশেও যেন হকি -চর্চায় ভাঁটা চলেছে , এতে তাঁর দুঃখের আর শেষ নেই৷ তিনি যেন ভারতীয় হকির শেষ দেখতে পাচ্ছিলেন৷
ভাবুন, পরাধীন ভারতে ১৯৩৬ -এর বার্লিন অলিম্পিকে ব্রিটিশ -পতাকা হাতে মার্চ পাস্ট করতে হয়৷ বুকের জ্বালা মেটে খেলার মাঠে নামার আগে৷ জাতীয় কংগ্রেসের তেরঙায় প্রণাম জানিয়ে তাঁরা মাঠে ঢোকেন৷ যেন আনন্দমঠের বীর সন্ন্যাসী৷ লক্ষ্য --হকি স্টিক হাতে আমরা দেশের জন্য বলি প্রদত্ত৷ হায় ! জাদুকরের সাক্ষাত্কারের সন্তাহখানেক পরে কলকাতার তাবত্ সাংবাদিকদের স্কুপ -মিসের আপশোসে কিন্ত্ত খবরদার ক্ষোভ মেটায় ধ্যানচাঁদকে দিয়ে জোর করে ঘটনার প্রতিবাদ লিখিয়ে৷ উনি লেখেন , ওঁকে সাংবাদিক জানলে আমার কথা বলতাম না৷ অলমতি বিস্তারেন !
No comments:
Post a Comment