মুম্বই: ডলারের তুলনায় ফের টাকার দামের রেকর্ড পতন৷ ১ ডলারের তুলনায় টাকার দাম দাঁড়াল প্রায় ৬৮ টাকা৷ নিম্নমুখী সেনসেক্স, নিফটি সূচকও৷
এদিন দিনের শুরুতে ডলারে তুলনায় টাকার দাম ৬৮ টাকা ছাড়ায়৷ যদিও পরে এক ডলারের দাম দাঁড়ায় ৬৭ টাকা ৯৬ পয়সা৷কিন্তু পরে আবার বেড়ে হয় ৬৮টাকা ৭১ পয়সা। এই পতন ডলারের তুলনায় টাকার দামের সর্বকালীন পতন৷ ফলে শেয়ার সূচকও নিম্নমুখী৷ দিনের শুরুতে বম্বে স্টক এক্সচেঞ্চের সূচক নামে ৪৯০ পয়েন্ট৷ নিফটির সূচকও নিম্নমুখী৷ একই সঙ্গে ফের বাড়ল সোনার দাম৷ ১০ গ্রাম সোনার দাম ছাড়াল ৩৪ হাজার টাকা৷ এদিকে, সংবাদসংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর সেপ্টেম্বরে ডিজেলে লিটারপিছু ৪ টাকা দাম বাড়তে পারে৷
সস্তায় খাবারের স্লোগানে ভোট-বাক্স ভরার তাগিদে চওড়া হবে রাজকোষ ঘাটতি। মুখ থুবড়ে পড়বে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অর্থনীতিও। এই আশঙ্কায় মঙ্গলবার টাকার নিরিখে এক ধাক্কায় ১৯৪ পয়সা বেড়ে যায় ডলারের দর। পৌঁছে যায় ৬৬.২৪ টাকায়। পাউন্ডের দাম দাঁড়ায় ১০২.৮০ টাকা। আগের দিনের তুলনায় ২৬৮ পয়সা বেশি। টাকার এই পতনের দিনে ৫৯০ পয়েন্ট খোয়ায় বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক সেনসেক্সও। লগ্নির
নির্ভরযোগ্য গন্তব্য হিসেবে গতকয়েক দিনের মতো গতকালও আরও চকচকে হয় সোনা। কলকাতার বাজারে ১০ গ্রাম পাকা সোনার দর পৌঁছয় ৩৩,৭০০ টাকায়।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম অবশ্য গতকাল আশ্বাস দিয়েছেন, ঘাটতি না-বাড়িয়েও খাদ্য-সুরক্ষা প্রকল্পে টাকা জোগানোর ক্ষমতা কেন্দ্রের রয়েছে। ফের দাবি করেছেন, টাকার দাম হওয়া উচিত অনেকটাই বেশি। আরও এক বার পরোক্ষে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে দায়ী করে বলেছেন, ২০০৯ থেকে ২০১১-র মধ্যে মন্দা ঠেকানোর লক্ষ্যে উৎসাহ প্রকল্প চালানোর জেরেই আজ বেহাল হয়ে পড়েছে অর্থনীতি। সেই দশা কাটিয়ে ওঠার জন্য সাহায্যও চেয়েছেন বিরোধীদের। তা সত্ত্বেও গতকাল লোকসভায় বাম-বিজেপির প্রবল আক্রমণের মুখে পড়ে মনমোহন সিংহের সরকার।
সোমবার লোকসভায় খাদ্য সুরক্ষা বিল পাশ করেছে কেন্দ্র। এর পর রাজ্যসভাতেও তা পাশ হলে দেশের ৬৭% মানুষকে নামমাত্র দামে খাদ্যশস্য জোগানোর দায় নেবে সরকার। বছরে এ জন্য ১ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকা দেবে তারা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঠিক এখানেই আতঙ্কিত বোধ করেছেন লগ্নিকারীরা। কারণ, তাঁরা মনে করছেন, বৃদ্ধি ৫ শতাংশের আশেপাশে থমকে যাওয়ার অর্থ কর থেকে সরকারের আয় কমা। তার উপর আবার এই বিপুল ব্যয়ের বোঝা ঘাড়ে নিলে অবধারিত ভাবে বাড়বে রাজকোষ ঘাটতি। একেই চলতি খাতে বাণিজ্য ঘাটতিতে (দেশে ডলার আসার তুলনায় তা অনেক বেশি বেরিয়ে যাওয়া) রাশ টানতে কেন্দ্র নাজেহাল। তার উপর আবার এই সমস্যাও মাথাচাড়া দিলে, আরও গভীর গাড্ডায় পড়বে দেশের অর্থনীতি। খোয়াতে হতে পারে ক্রেডিট রেটিং-ও (ভারতকে ধার দেওয়া কতটা নিরাপদ, তার মূল্যায়ন)।
এই আশঙ্কাকে গতকাল আরও উস্কে দিয়েছে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম গত পাঁচ বছরের মধ্যে সব থেকে উঁচুতে পৌঁছে যাওয়া। মূলত সিরিয়ায় ডামাডোলের কারণে এ দিন ব্যারেল-পিছু তেলের দর ছিল ১১৩ ডলার। এমনিতেই চড়া ডলারে তেলের দাম মেটাতে কেন্দ্র গলদঘর্ম। এর উপর বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বাড়লে আরও বেশি ডলার গুনতে হবে। মুশকিল হবে চলতি খাতে ঘাটতি কমিয়ে আনা। এই সমস্ত আশঙ্কাই ধস নামিয়েছে টাকার দরে। অর্থমন্ত্রী অবশ্য দাবি করেছেন, ভারতীয় অর্থনীতির যা শক্তি বা আয়তন, তাতে খাদ্যসুরক্ষা বিলের জন্য টাকা জোগাড় করা সমস্যা হবে না। হিসাব কষে দেখিয়েছেন, খাদ্যে ভর্তুকি বাবদ ৯০ হাজার কোটি টাকা গত বাজেটেই তুলে রেখেছেন তিনি। যার মধ্যে ১০ হাজার কোটি আবার রাখা হয়েছে খাদ্য সুরক্ষা বিলের কথা মাথায় রেখেই। আশ্বাস দিয়েছেন, খাদ্য সুরক্ষার দায় কাঁধে নিয়েও রাজকোষ ঘাটতিকে লক্ষ্যমাত্রার (জাতীয় আয়ের ৪.৮%) মধ্যেই বেঁধে রাখবেন তিনি। কোনও ভাবেই টপকাবেন না চলতি খাতে ঘাটতির লক্ষ্মণরেখা (জাতীয় আয়ের ৩.৭% বা ৭ হাজার কোটি ডলার)।
No comments:
Post a Comment