বটতলায় কি কাম সারি সারি ডট কাম!
গৌরিকায়ণে ভিন্ন মুক্তবাজারি সমাজবাস্তবের ইতিকথা।
আধিপাত্যের গমডলে যারা চিরদিনই রাজা মহারাজ,রানী মহারানী, জমিদারির গন্ধ যাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে,প্রতি লোমকূপে,সারা বাংলাই আজ তাহাদের বাগানবাড়ি,সর্বত্রই তাহাদের খাসমহল।ব্রাত্যজনেরা যেমন বহিস্কৃত চিলেন তেমনি রহিয়াছেন।নিস্কৃতি নাই।
এক্ষনে সবাই ভূষণ,বিভূষণ।উপরন্তু এমপি ,এমএলএ।
উত্তম সুচিত্রা সত্যজিত মৃণালেরা কেন যে এমপি হইলেন না,হইলে তাহারাও যোদ্ধা বোদ্ধা হইতেন।
রাজনৈতিক সীমানা যাই থাকুক দক্ষিণবঙ্গের জীবন যাপন সীমান্ত রেখা মুছে দিয়েছে,জীবন যাপন সংস্কৃতিতে এপার ওপার অপরাধকর্মের মহোত্সব।রাজনীতি ও অপরাধের সীমারেখা মুছে গেছে।
রোজগার বলতে নারী পাচার,শিশু পাচার,মদ ও মাদক,মধুচক্র,দেহ ব্যবসা,স্মাগলিং এবং বিশুদ্ধ অপরাধ।পুলিশ প্রশাসন,মন্ত্রী, আমলা. জনপ্রতিনিধি সবার হাত রক্তে রাঙানো।
পলাশ বিশ্বাস
বাঙালি বাজারের বক্তব্য অনুযায়ী এখন পুরোদস্তুর সাবালক।ন্যাকা ন্যাকা বাঙালিয়ানার অভিযোগ রিমিক্স রবীন্দ্র উত্সবেও অমিল।সাতের দশকের বাংলা সাহিত্য বেমালুম লোপাট।
নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের পর রাজনৈতিক ছত্রছায়ার সাংস্কৃতি সাহিত্যিক পরিসরে যাওয়ার দুঃসাহস আমি আর করিনি,কারণ যে নিগ্রোইড অশ্বেত অনার্য গোষ্ঠির বিলুপ্তপ্রায় বঙ্গীয় কৃষিসমাজের রক্তে জীবন যাপন,তার প্রবাহ কোথাও বাঁচিয়ে রাখার সুযোগ নেই বাংলায় দপদপিয়ে মুক্তবাজারের আধিপাত্যে।
তাই নন্দন এ্যাকেডেমি চত্বরে বা সরকারী পুস্তক মেলার সাংস্কৃতিক উত্সবে আমি 2003 থেকেই নেই।
আগেও যে তেমনকরে ছিলাম,তা কিন্তু নয়।তবু উত্তরাখন্ডে বাঙালি উদ্বাস্তু পরিবারে সেই ছোটবেলা থেকে বাংলায় লেখার অভ্যাস ছিল।
কবিতা ছিল জীবনের পরতে পরতে আর ছিল দেশভারদগের পরেও বারো মাসে তেরো পরব।
নদী ছিল না তবু,পদ্মা মেঘনা মধুমতির ঢেউ জীবনযাপনের অনিবার্য অঙ্গ ছিল।
তাঁরা কিছুই আনতে পারেনি সীমান্তের ওপার থেকে,ঠোঁটে কিন্তু মাতৃভাষা ছিল পুব বাংলার নানাবিধ বাহাল উচ্চারণে,যা শেষ পর্যন্ত ইংরেজি হিন্দী মিলিয়ে সুস্বাদু খিছুড়ি হয়ে যায়।
ছিল গান,হরেক জেলার হরেক গান।ছিল সুর।
আমরা রাজ্যে রাজ্যে এমনকি আন্দামানে,পাহাড়ে,জঙ্গলে,মরুভূমে একটার পর একটা বাংলা গড়ে তুলেছি উদ্বাস্তু পরিচয় মুছে দিয়ে।
বাংলায় সেই ছড়ানো ছিটোনো অভদ্র অপরিস্কৃত অশুদ্ধ সারি সারি বাংলার কোনো স্থান কোনো কালে হয়নি।
এমনকি গোটা একটি বাঙালি রাজ্য ত্রিপুরাও বাংলার কাছে আজও অছুত।
কেরিয়ার জলান্জলি দিয়ে তাই বাংলায় ধারাপ্রবাহ কথা বলেতে পারব কিংবা বাংলায় ঝরঝর শ্রাবণের মত লিখে কোনোদিন সত্যি সত্যি পদ্মা মেঘনা মধুমতি যমুনাকে স্পর্শ করতে পারবো আর পিতৃপুরু,দের ,সেই যশোর,ফরিদ পুর,ঢাকা,খুলনা বরিশাল রাজশাহী,চট্টগ্রামকে দুর থেকে অনুভব করতে পারব,বলেই বেনাগরিক ছোটলোক অছুত হয়েও ভদ্র কুলীণ বাংলায় বসবাস করে গেলাম টানা পচিঁশ বছর।
ওপার বাংলার রক্তপ্রবাহের জিন নিয়ে বড় হলেও বাংলার এপার ওপার অবিভক্ত বাংলার হিজলি ব্যারাকগুলি অক্ষতই রয়ে গেছে ইতিহাস ভূগোল থেকে বিতাড়িত অবান্ছিত অনাহুত জনগোষ্য়ির মধ্যে.যাদের উত্তরসুরিরা ঝাঁকে ঝাঁকে অগ্নিবলাকা হয়ে আত্মাহুতি দিয়েছিল দেশ শ্বাধীন করার লড়াইয়ে।
আমরা সেই চোয়াড়ের বংশধর,সেই অবিভক্ত মেদিনীপুর ও অবিভক্ত সুন্দরবনের ডিফারেন্ট জনগোষ্ঠি,যারা কারোর বাপের জমিদারি,ইংরেজ শাসন বর্দাস্ত করেনি।
আমাদের রক্তে যেমন চন্ডালধারা,তেমনিই চোয়াড়ের আগুন।তেমনিই প্রায়াত অনিল ঘঢ়াইযের লেখা সাহিত্যের পরতে পরতে জীবন জীবিকার অক্লান্ত শ্রমিক আমরা,যেমন মহাশ্বেতাদির আদিবাসী বিদ্রোহের শরিক আমরাও অথবা মাণিকের,সোমনাথ হোড়ের দুর্ভিক্ষের ছবিতে সেই আমরাই ,আবার তেভাগা,খাদ্য আন্দোলনে আমরাই।
তেলাঙ্গানার মতই বিদ্রোহ হয়েছিল অবিভক্ত উত্তরপ্রদেশের নেনীতালের তরাইয়ে জিম কার্বেটের জঙ্গলে যেখানে তৈরি হল বাঙালি রিফুইজি কলোনী।
সেই বিদ্রোহের নেতা ছিলেন আমার বাবা।
সেও ছিল আদিবাসী কৃষক বিদ্রোহের,সন্যাসী,নীল বিদ্রোহের ধারাবাহিকতা।
আমরা ছোটবেলায় পড়তাম দৈনিক বসুমতীর পাতায় বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদকীয় এবং ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের ফুটবল দেখা হত।ঢাকা রেডিওতে গান শোনা হত,কবিগান তরজাও সেই রেডিওতে।
রবীন্দ্রসহ্গীত তেমন করে আমাদের জানা ছিল না যদিও রবীন্দ্রনাথের,নেতাজির,শরতের পরিচয়ে আমাদের ওঠাবসা।
রবীন্দ্র নজরুল সুকান্তে নীরার হাতে হাত রাখা,স্বপ্ন দেখা তেভাগার ভিটেহারা প্রজন্মের।
নক্সাল আন্দোলনের ঢেউও আছড়ে পড়েছিল উদ্বাস্তু উপনিবেশে।
মনোরন্জন ব্যাপারি কিছুটা লিখেচেন ,বাকিটা লেখার কথা চিল আমার,কিন্তি বাংলায় লেখার ইজাজত বা সুযোগ হল না বাংলায় পঁচিশ বছরের বসবাসেও।
যে গোলামগিরির কল্যাণে কোলকাতায় থাকা,সেখান থেকেও দানাপানির অব্যহতি আগামি মে মাসে।
মাণিক থেকে সিধে মহাশ্বেতা বা নবারুণ,মাঝখানে বাংলা সাহিত্যে যারা সত্তর দশকে হই হই করে ছিলেন,আমার সেই সব প্রিয় লেখক কবিরা হঠাত দেখতে দেখতে হারিয়ে গেলেন।
বাংলা সাহিত্যের এপারের জীবনযাপণে মুক্ত বাজারের যে ভোগ সহবাস সংস্কৃতি,তাতে সেই সব স্বপ্ন দেখা পরিবর্তনাকামী শিল্পিরা হারিয়ে গেলেন একে একে।
এক্ষনে সবাই ভূষণ,বিভূষণ।উপরন্তু এমপি ,এমএলএ।
উত্তম সুচিত্রা সত্যজিত মৃণালেরা কেন যে এমপি হইলেন না,হইলে তাহারাও যোদ্ধা বোদ্ধা হইতেন।
আর কাগজে কাগজে পাতা ভর্তি তেল।ভযন্কর সুন্দর পরিবেশ। নিদারুণ জীবন যাপন নির্বিঘ্ন শান্ত শ্মশানের পরিবেশে।পদাতিকেরা হারিয়ে গেলেন।মিছিলের দেখা নেই।
কবিতা ব্যান্ডে হারিয়ে গেছে।শিল্প শুধু ব্রান্ডিং,মার্কেটিং।আমরা যারা ব্রাত্য,তাঁগের কস্মিনকালে কোনো জায়গা ছিল না,আজ আরও বেশি করে ব্রাত্য আমরা।তাই গানে নেই প্রাণ।
স্বাধীনতা ও দেশভাগের পর সাত দশক ও কয়েক প্রজন্ম পেরিয়ে আমরা বেওয়ারিস বেনাগির অবান্ছিত অনাহুত রবাহুত বেনাগরিক ঘুসপেঠিযা,নূতন করে অছুত উদ্বাস্তু আমরা।
শুধু কি আমরা?
শুধু কি ভারত ভাগের বলি যারা,তাঁরা?
রাজনৈতিক সীমানা যাই থাকুক দক্ষিণবঙ্গের জীবন যাপন সীমান্ত রেখা মুছে দিয়েছে,জীবন যাপন সংস্কৃতিতে এপার ওপার অপরাধকর্মের মহোত্সব।রাজনীতি ও অপরাধের সীমারেখা মুছে গেছে।
রোজগার বলতে নারী পাচার,শিশু পাচার,মদ ও মাদক,মধুচক্র,দেহ ব্যবসা,স্মাগলিং এবং বিশুদ্ধ অপরাধ।পুলিশ প্রশাসন,মন্ত্রী, আমলা. জনপ্রতিনিধি সবার হাত রক্তে রাঙানো।
ভাঙ্গড় হাসনাবাদ থেকে মালদা মুর্সিদাবাদ হয়ে দার্জিলিং আসনসোল পর্যন্ত বেদখল মগের মুল্লুক।সেই সমাজ বাস্তবের কথা কেউ লিখতে পারে না।পাহাড়ে হাসি,জঙ্গল মহলে হাসি,উন্নয়ণ বরাত খয়রাতের প্লাবনে বুভুক্ষ বাঙালির চালচিত্র আজ সত্যি বড় দুর্গা আর সাতের দশকের অব্যহতির পর আহা কি আনন্দ,বাহা কি আনন্দ,পাতা ভর্তি তেল,শ্রেণীবদ্ধ বিজ্ঞাপনে ঝাঁকে ঝাঁকে রমণ সঙ্গিনী।
জলে জঙ্গলে পাহাড়ে রমরম রিসর্ট মধুচক্র এবং শিরোনাম সেই খাট ভাঙ্গা থেকে শুরু।দীঘা,বকখালি গঙ্গাসাগর ও গোটা এফোঁড় ওপোঁড় গহ্গার ঢেউ এখন ধর্ষণ সংস্কৃতি আড়াআড়ি ধর্মোন্মাদী বিবাজন কলকাতা ডাইরেক্টএক্শন ও নোয়াকালি দাঙ্গার এত বছর পরেও গৌরিকায়ণ।রাজনীতিতে বাণিজ্যে বিপণনে ধর্মীয় বিস্ফোরণ।
গোটা বাংলাটাই বিধবা পল্লীর মতই শোকমগ্ন,সন্ত্রাস কবলিত,উপহারে সাদা থান,কাটা মুন্ডু,বাস্তু সাপের হিসহিসানি।রক্ত প্রলয়।
কালিয়াচক সংস্কৃতি এখন গোটা বাংলার সংস্কৃতি।ক্ষেত খামারে আত্মহকত্যা ও দশ দিগন্তে ট্রেন ট্রেনে রুজি রোজগারের খোঁজে নাগরিকত্বহীন হয়ে বাঙালির অনন্ত ভেসে থাকা।
হিন্দু মুসলিম,সবর্ণ অসবর্ণ,আদিবাসী,ঘটি বাঙাল ভেদাভেদ নেই গৌরিকায়ন সুনামিতেও।
সমস্ত বাঙালি জাতিই আজ সর্বার্থে সর্বহারা।
বিপ্লবের এই জমিতে শুধু নেই বামেরা,এই সেদিনও যারা রাজকার্যে দর্জেয় ঘাঁটি গড়ে তুলেছিলেন,যাদের মুখে এখন শিল্প কৃষির বধ্যভূমিতে বিপ্লব নেই কোথাও,শ্রেণীসংগ্রাম বা কমরেড কপচানো বুলিও অনুপস্থিত,যেহেতু জমি দিব না শিল্প তাড়ুয়া দেবীর কামরেড ক্যালানি উত্সবের থীম সঙ্গ জীবন মুখি মাটি উত্সবের মত শিল্প চাই শিল্প চাই।
শিল্পের এই মুক্তবাজার বড় বেশি রকম সাবালক।পদে পদে প্রমাণ মিলছে।মোবাইলে পর্ণ চালু হওযার আগেই বাংলা সাহিত্য পড়া ছেড়ে দিতে হল,দক্ষিণী অথাবা হিন্দী ছবির ফ্রেম টু ফ্রেম রিমেক বসন্তে রবীন্দ্র রিমিক্সে সিনেমা দেখা বন্ধ করতে হল।
মানুছের খুন পসীনায় গড্ঢিত কষ্টের ধন রামকেশ্টদের চিটফান্ড হয়ে গোটা একটা পরিবর্তন হল,শুধু গৌরিকায়ণই বাদ ছিল।
সেটাও সবুরে মেওয়া ফলের মত হবেই হবে।
কলকাতা ছেড়ে বাঙালিরা যেমন সাব আরবান,তেমনিই বাংলা না ছেড়ে ভাত কাপড় জোটা দায়,চিত্রার্পিত দৃশ্য সারি সারি আর রেড রোড,রাজ ভবন,রাইটার্স নবান্ন দাপিয়ে রইশ ড্রাইভিং,মন্ত্রিত্বও লৌহকপাটের বিদিশা অন্ধাকার।
পরিচয়ের উলট পালট হইল,বিয়ে শাদি প্রেমের আজাদি হইল,জাতের নামে বজ্জাতি কম হইল না।
আধিপাত্যের গমডলে যারা চিরদিনই রাজা মহারাজ,রানী মহারানী, জমিদারির গন্ধ যাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে,প্রতি লোমকূপে,সারা বাংলাই আজ তাহাদের বাগানবাড়ি,সর্বত্রই তাহাদের খাসমহল।ব্রাত্যজনেরা যেমন বহিস্কৃত চিলেন তেমনি রহিয়াছেন।নিস্কৃতি নাই।
বইমেলাতে নীল সাহিত্যের মঠে মৌমাছি ভন ভন নব্বইয়ের দশকেও দেখেছি।দেখতে দেখতে লাল মাটির দ্যাশ সুর হয়ে গেলো।
ধানসিঁড়ির সকল দেশের রানি হইল গিয়া ভিখারিনী।ইহা ইস্তক তবু ছিক ছিল,দেহ সর্বস্ব ভোগে নিষ্ণাতই হইতে থাকিল সাহিত্য সংস্কৃতি রাজনীতি জীবন যাপনের সকল অভিমুখ,ইহাই আজ সমাজ বাস্তব।
এবার দেখুন সমাজ বাস্তবের এই চালচিত্রঃ
No comments:
Post a Comment