আদালতের রায় যাহাই হউক মূল প্রশ্ন থাইকাই গেল মনুস্মৃতি রাজত্বে সমতা ও ন্যায়ের পক্ষে সওয়াল করিলেই কি রাষ্ট্রদ্রোহী,হিন্দুদ্রোহী কিংবা মাওবাদী?
কতটা ন্যায় কামদুনিক ভাগ্যে জুটিল বলা মুশ্কিল,তবু মাওবাদী তকমা কি মুছিল!
তবু অভিযোগ উঠতাছে শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় খালাস পাওয়া দুজনের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ যোগাড় করেন নি তদন্তকারীরা।
কামদনুনি ধর্ষণে ফাঁসির রায়ের পরও বোঝা মুশ্কিল এই বাংলায় এবং বাকী ভারতবর্ষে কত না কামদুনি ন্যায়ের দাবিতে আজও অধীর প্রতীক্ষায় নানাবিধ তকমায় বিভূষিত,যেমন রোহিত ভেলুমা।যেমন কামদুনির মাইয়ারা।
পলাশ বিশ্বাস
ইয়কুব মেননের ফাঁসির সময় আম্বেডকর স্টুডেন্ট ইউনিয়ন ফাঁসির সাজার সিদ্ধান্ততঃ বিরোধিতা করে রাষ্ট্রদ্রোহী তকমা পায় এবং মনুস্মৃতির হস্তক্ষেপে ঔ ইউনিযনের পাঁচ ছাত্রদের বহিস্কার করা হয় এবং রোহিত ভেমুলা নামক এক দলিত কিম্বা ওবিসি ছাত্রকে আত্মহননের পথ বেছে নিতে হয়।
যার বিরুদ্ধে দেশ তোলপাড় মনুস্মৃতিকে অবিলম্বে খারিজ করার দাবিতে।
সেই তিনিই অসুর বিনাশায় গির্বাচন প্রাক্কালে অকালে বোধন করিলেন নির্বিরোধ,না হলে হিন্দুদ্রোহী হতে হয়,রাষ্ট্রদ্রোহী হতে হয়।
তেমনটি ভারতের এই অঙ্গরাজ্যে মগের মুল্লুকে বারম্বার হইতাছে।বারম্বার।ইহাই আবার ক্ষমতার চাবিকাঠি,অনন্ত সন্ত্রাসে বিবেকের জলান্জলি ও প্রতিবাদের শ্রাদ্ধকর্ম।
শাসকের রক্তচক্ষুকে ুপেক্ষা করিলেই মাওবাদী - এমনটাই রেওয়াজ,যার ফলে সাজানো ঘটনার অভিযোগে কামদুনির প্রতিবাদীদের মাওবাদী তকমা জুটিল।
আদালতের রায় যাহাই হউক মূল প্রশ্ন থাইকাই গেল মনুস্মৃতি রাজত্বে সমতা ও ন্যায়ের পক্ষে সওয়াল করিলেই কি রাষ্ট্রদ্রোহী,হিন্দুদ্রোহী কিংবা মাওবাদী?
আদালতের রায়ে বোঝা হইল না,যাহারা মাওবাদী ভূষণ বিভূষণ রুপে একদা বিখ্যাত হইলেন কামদুনি প্রসঙ্গে,তাহাদের কি ভবিষ্যতে নাগরিক মনে করা হইবে কি হইবে না।
সওয়াল তার চাইতেও ভয়ন্কর অভিযোগের আঙ্গুল যাহাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার,,তাহারা বেকসুর খালাস হইয়াছেন এবং আদালতচত্বরে রায়ে দোষী সাব্যাস্ত হইবার পরপর যে শোলে সিনেমার মত সংলাপে কামদুনির ধর্ষিতা মাইযার মতই হাল হইবে,সেই প্রসঙ্গে কি ঔ কথিত মাওবাদীদের নিরাপত্তার যথেষ্ট ব্যবস্থা হইল কি হইল না।
সারা পৃথীবীতে ফাঁসির পক্ষে ও বিপক্ষে বিতর্ক দীর্ঘ কাল যাবত এবং সব দেশেই সুশীল সমাজ ফাঁসির বিরুদ্ধে সওয়াল করে থাকেন,ভারতবর্ষেও।
সুশীল সমাজের বাইরে ব্রাত্য অছুত দলিত কিংবা ওবিসি কন্ঠে সেই প্রতিবাদ ধ্বনিত হইলেই মহাভারত অশুদ্ধ হইল।
কামদুনির জনবিন্যাস সম্পর্কে যাহারা ঔ এলকায় আদৌ যাতায়াত করেননি,না বললেই নয়,যাহাদের বিরুদ্ধে মনুসমৃতির হিন্দুত্ব এজেন্ডা সেই দলিত,ওবিসি কিংবা সংখ্যালঘুরাই ওখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ এবম্ ধর্ষমের বিরুদ্ধে আইনের পথেই লোকতন্ত্রের স্বাধিকার ভঙ্গ না করিয়াই তাহারা প্রতিবাদ করিয়াছিলেন।
এই রায় শেষ রায় নয়,বলাই বাহুল্য।আইনি প্যাঁচে উচ্চতর আদালতে আরও দু একজন যে বেকসুর খালাস হইবেন না,বলা মুশ্কিল।
ইতিপূর্বে ফাঁসিতে ঝুলানো হইযাছিল ধনন্জয় ভট্টাচার্যকেও, কিন্তু ধর্ষণ সুনামি থামে নাই,বরন্চ বঙ্গভূমি যে ধর্ষণভূমি,সে অভিযোগও উঠতাছে।পরিসংখ্যানও সাক্ষ্য দিতাচে যুতসই।
অতএব কামদুনি প্রসঙ্গে এই রায়ে কামদুনির জনগোষ্টিদের যারা সারা রাজ্যেই সংক্যাগরিষ্ঠ,তাহাদের মাইয়াদের কতটা নিরাপত্তা সংরক্ষিত হইল,সে প্রশ্ন তাকিয়াই গেল, যেহেতু রেপ করিয়ে দেওয়ার এবং সত্যি সত্যি রেপও রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের লড়াই দস্তুর এই পরিবর্তনে এবং আরও একটি পরিবর্তনের জন্যলেশওযার বর্গী সৈন্যবাহিনী বাংলা দাপাইয়া দশ দিগন্তে অসুর বধের আয়োজন করতাছে।
নির্ভয়া কান্ডে সারা দেশে তোলপাড় আন্দোলনের ফলে যে ধর্ষণের সাজা ফাঁসি আইন হইল,তাহা হয়ত কামদুনি প্রসঙ্গে অন্ততঃ কার্যকরি হইলেও হইতে পারে।কিন্তু কাগজ খুললাই বিশেষতঃ আদিবাসী ও দলিত এমনকি পিছড়ে রমনীকে ঝাঁকে ঝাঁকে ধর্ষণের খবর অনিবার্য পাঠ।
উড়ীষ্যার বলঙ্গীর জেলায় এক দলিত সপ্তদশী কন্যাকে তার পিতা মাতার এক্টিবিজ্মের অপরাধে ধর্ষম কইরা হত্যা করা হইয়াছিল,সাজা কাহারও হয় নাই।
রাজস্থানের নাগৌর জেলায় জমি দখলের লড়াইযে তিন দলিত মহিলাকে শুধু ধর্ষণই করা হইল না,তাহাদের যৌনাঙ্গে অন্যতর পদার্থ ঢুকাইয়া শেষ পর্যন্ত তাহাদের
ট্রাক্টর দিয়ে পিষে ফেলা হইল,আইন সেখানেও আইনের পথে চলে নাই।
ছত্তিশগড়ে সরাসরি মনুস্মৃতি রাজ,যাহার লাগিয়া বাংলার হিন্দু দলিত শরণার্থীদের একাংশকে নাগরিকত্বে লালীপাপ দিয়া বাংলার দুর্জেয় দুর্গ দখলের অশ্বমেধ বর্গী হামলা অবিরাম চলিতেছে এবং শারদা মামলা রফা দফা হওয়েন পর এই কোলকাতা বুকে ছাত্রদের গত ডিসেম্বরে এবংএি জানুয়ারিতেও বজরং বাহিনী রাম ক্যালানো কেলাইয়াছে এবং ধর্মনিরপেক্ষ শাসকের পুলিশ নির্বাক বেবাক খাড়াইয়া থাকিয়াছে,উপরন্তু নির্বিরোধ ম য়ে মমতা,ম য়ে মোসলমান এবং ম য়ে মালদার ধ্বনি তুলে দুর্গাভক্তদের আবাহন করা হইয়াচে যে রোহিতের আত্মহত্যা প্রসঙ্গে যে তামাশা চলতাছে,তাহাতে শামিল প্রতিবাদীদের দেখিয়া অসুর কুল ধ্বংস করিতেই হইবে।
সেই ছত্তিশগড়ে সলোয়া জুড়ুম নাম্নী দেশভক্তির এক অদ্ভূত কারসাজিতে আদিবাসী রমনিদের ধর্ষণ দেশভক্তির নজির।
সোনী সোরী মনামক এক আদিবাসী মায়ের যোনিতে পাথর ঢুকানোর শৌর্য্যপুরস্কারও রাষ্ট্রপতির হস্তে জুটিয়াছে,সেই রাষ্ট্রপতিই আবার বাবরি ধ্বংসের জন্য রাজীব গান্ধী এবং নরসিম্হা রাওকে দোষী ঘোষিত করিলেন।
সারা দেশ দুনিয়া যাহাদের অভিযুক্ত বলিয়াই জানে,তাহাদের বিরুদ্ধে টূঁ শব্দটি করেননি।বাঙালিত্বের গৌরবে প্রাণ জুঢ়াইল কিন্তু কামদনুনি ধর্ষণে ফাঁসির রায়ের পরও বোঝা মুস্কিল এই যে বাংলায় এবং বাকী ভারতবর্ষে কত না কামদুনি ন্যায়ের দাবিতে আজও অধীর প্রতীক্ষায় নানাবিধ তকমায় বিভূষিত,যেমন রোহিত ভেলুমা।যেমন কামদুনিক মাইয়ারা।
পশ্চিমবঙ্গে কলকাতার উপকণ্ঠে কামদুনি গ্রামে এক কলেজ ছাত্রীকে গণধর্ষণ করে খুনের দায়ে তিনজনকে আজ ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হওয়া বাকি তিনজনকে আমৃত্যু কারাবাসের আদেশ দিয়েছে কলকাতা নগর দায়রা আদালত।
বৃহস্পতিবার এই ছয়জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক সঞ্চিতা সরকার।
২০১৩ সালের ওই নৃশংস ঘটনায় মোট নয় জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। একজন অভিযুক্ত বন্দীদশাতেই মারা যান, অন্য দুজনকে প্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস করে দেয় আদালত।
অভিযোগ উঠতাছে শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় খালাস পাওয়া দুজনের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ যোগাড় করেন নি তদন্তকারীরা। এদের খালাসের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আপীল করা হবে।
দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে দুদিন ধরে সাজা নিয়ে সওয়াল জবাব চলে সরকার ও দোষীদের আইনজীবীদের মধ্যে। তারপরেই আজ বিকেলে সাজা ঘোষণা করা হয়।
সইফুল আলি, আনসার আলি আর আমিন আলি – এই তিনজনের ফাঁসির আদেশ হয়েছে। আমিনুর ইসলাম, ভোলা নস্কর, এমানুল ইসলাম – এদের আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
২০১৩ সালের ৭ই জুন দুপুরে কলেজ থেকে হেঁটে গ্রামের বাড়ির দিকে যাওয়ার সময়েই ওই ছাত্রীকে একটি পরিত্যক্ত কারখানায় নিয়ে যায় দোষীরা।
সেখানে তাকে গণধর্ষণ করে প্রমাণ লোপাটের জন্য পা চিরে দিয়ে হত্যা করা হয়।
এই ঘটনাকে বিরলতম আখ্যা দিয়ে বিচারক তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আজ। দোষীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে গত আড়াই বছর ধরেই আন্দোলন করে আসছেন ওই ছাত্রীর গ্রামের দুই বান্ধবী আর তার ছোটবেলার স্কুলের শিক্ষক। দোষীদের শাস্তির দাবিতে রাষ্ট্রপতির কাছেও গিয়াছিলেন তারা।
ঘটনার দশ দিন পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী কামদুনি গ্রামে গেলে নির্যাতিতার ওই দুই বন্ধু যখন তাকে প্রশ্ন করেন, তখনই মমতা ব্যানার্জী তাদের মাওবাদী আখ্যা দিয়াছিলেন।
তবে তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতৃত্ব গ্রামবাসীদের ওই প্রতিবাদ আন্দোলনকে অনেকটাই স্তিমিত করে দিতে সক্ষম হয়। নির্যাতিতার পরিবারকে গ্রাম থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, তার ভাইকে সরকারি চাকরি দেওয়া হয়। আন্দোলন থেকে সরে গেলেও নির্যাতিতার পরিবার দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তিই চেয়েছিল।
No comments:
Post a Comment