পর্যালোচনা
সক্রেটিসের অযৌক্তিক মৃত্যুদণ্ড কিছু যৌক্তিক প্রশ্ন
মিনা ফারাহ
২৩ এপ্রিল ২০১৫,বৃহস্পতিবার, ০০:০০
সত্য মোকাবেলায় ভীত রোমানেরা আধুনিক পশ্চিমা চিন্তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বিষপানে মৃত্যুদণ্ডে বাধ্য করেছিল পণ্ডিত সক্রেটিসকে। সেও প্রায় ২৪০০ বছর আগে। বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠীর জোর দাবি, তারা এমন ডিজিটালাইজড, যে জন্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার পায়। তাদের দাবি সত্য হলে আমাদের দাবিও সত্য। দার্শনিক অ্যান রেন্ড বলেছেন, 'কেকটা খেয়েও ফেলব, আবার সেটা থাকতেও হবে, দুটোই একসাথে সম্ভব নয়।' ট্রাইব্যুনাল-৭৩ নিয়ে বিতর্ক নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। তর্কবিদ্যায় 'কারণ' বলে একটি শব্দ আছে, যা বোঝার জন্য প্রয়োজন চিন্তাশীল মন। 'কারণ' নিয়ে আমার মাথাব্যথার কারণ, ঢাকায় এখন ডিএনএ প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায় ধর্ষণের কারণে যদি একটিও যুদ্ধশিশুর জন্ম হয়ে থাকে, উচিত ছিল রায় সন্দেহাতীত করতে এই প্রযুক্তির ব্যবহার। তাহলে পশ্চিমাদের সন্দেহাতীত বিচারের চাপ এবং ন্যায়বিচারপ্রার্থীদের চোখে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ এড়ানো যেত। প্রধানমন্ত্রীকেও এত বেশি ব্যাখ্যা করা থেকে রেহাই দেয়া যেত। চাইলেই কারো জীবন নেয়াটা একধরনের হত্যাকাণ্ড; জুরিসপ্রুডেন্সের ভাষায় ফার্স্ট ডিগ্রি মার্ডার।
সংবিধান সংশোধন করে বহু আগেই সমালোচনার অধিকার হরণ করা হয়েছে সুপরিকল্পিতভাবে। মুখ খুললেই হামলা-মামলা, শাস্তির পাহাড় নিয়ে কি কারো সন্দেহ আছে? কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত পশ্চিমারা যতই সমালোচনা করুক, এসব আমলে না নিয়ে বরং তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতেই পছন্দ করছে রাষ্ট্র। এ দিকে মানবাধিকার পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হওয়ায় দেশ থেকে অর্থ আর মানুষ, দুটোই বিদেশে পাড়ি দেয়ার মহোৎসব অব্যাহত। এসব খবর মিডিয়ায় না আসার কারণ আমরা বুঝি। পৃথিবীতে মনে হয় একটি জাতিই আছে, একই সাথে যারা অতি আনন্দ এবং অতি আত্মতৃপ্তিতে ভরপুর। একই সাথে যারা উৎসব ও ফাঁসির আনন্দে সমান হারে মেতে ওঠার আগে চিন্তা করে না। কারণ, চিন্তা তাদেরকে করতে দেয়া হয় না। দেব-দেবীরা যা বলেন, সেটাই বেদ। অথচ সারা দিনে আমরা বহু মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে শুনি। ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ বিচার করার মতো চিন্তাশীল মনের সৃষ্টি ও সন্ধান করছি। কিন্তু কূলকিনারা পাই না এই বিশাল জগতের। প্রতিটি মুহূর্তেই সামনে এসে দাঁড়ায় নতুন ব্যক্তিত্ব, চিন্তার নতুন ফর্মুলা। প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তাভাবনা, সুস্থ ও প্রগতিশীল মনের কোনো বিকল্প নয়। এক ব্যক্তি, এক আদর্শ, এক দলের মধ্যে সবার চিন্তাভাবনা সীমাবদ্ধ। একটি জাতিকে কূপমণ্ডূক করতে এই ফর্মুলাই যথেষ্ট।
ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, কারণ-অকারণ, মনুষ্যত্বের এসব সংজ্ঞা এখন অকার্যকর। মানুষের বহু অভ্যাসের মধ্যে একটি হচ্ছেÑ কেউ পাখি ধরে, কেউ তা কিনে মুক্ত করে দেয়; যেমনÑ আমার বাবা। তিনি খাঁচাবন্দী পাখি সহ্যই করতে পারতেন না। সব দেখে মনে হচ্ছে, আরেকটি জনগোষ্ঠী যেন এতিম। এতিম মারছে, গুলি ঠেকানোর সাহস কার? বারবারই দেখছি, পশ্চিমাদের প্রতিবাদের ভাষায় প্রতিপকে নির্মূল করার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। দায়িত্ব পালনে কতটা সফল হেগের আইসিসি? ঝুঁকিপূর্ণ দেশে বিচার সন্দেহাতীত করতে ট্রাইব্যুনালকে তারা হয় আরেক দেশে নিয়ে গেছে কিংবা সরাসরি সম্পৃক্ত হয়েছে। এমন উদাহরণ বহু। একটার পর একটা বিতর্কিত রায় কার্যকর হলে বিরোধী দল পুরোপুরি নির্বংশ হবে। এটা যে রাজনৈতিক এজেন্ডা, প্রমাণ অবশ্যই রয়েছে। সেই আইসিসি সচেতন হলে প্রতিটি ফাঁসিই হতো সন্দেহাতীত প্রমাণের ভিত্তিতে, যা হয়নি বলে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত করলেন ব্রাড অ্যাডামস। বলেছেন, 'অস্বচ্ছ বিচারের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেয়া জীবনের অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। মৃত্যুদণ্ডের মতো রায় বাস্তবায়ন করার জন্য স্বচ্ছ ও মানসম্মত বিচার হলো মূল শর্ত।' অকথ্য গালিগালাজ না করলে সেটা বক্তব্য হয় না, এই ধারণা ভুল। সুবিচারপ্রার্থীদের সন্দেহ সত্য না হলে গণভবনে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে এত কথা বলতে হলো কেন? অতি আত্মতৃপ্তি রোগে আক্রান্ত বাছাই করা সাংবাদিকদেরকে যে কাজে আনা হয়েছিল, কাঠের ঘোড়ার মতো সব ঠিকঠাক করা হলো। তবে সাদ্দামের ফাঁসির প্রসঙ্গ তোলাটা একেবারেই অপ্রযোজ্য। কারণ, ওবামার সাথে ইরানের পারমাণবিক বোমার বিরুদ্ধে যে চুক্তি হলো আর পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য-প্রস্থ কারণ নিয়ে চীনের সাথে যে চুক্তি... এমন তুলনা নেহাত বালখিল্য। কিন্তু কাঠের ঘোড়া কাঠ দিয়ে তৈরি, তাই তারা নি®প্র্রাণ-নিষ্কর্মা। বুদ্ধি নিয়ে মাথা ঘামায় না কাঠ, ওটাকে বন্ধক দিয়েছে মহাজনদের কাছে, যার ওপর তারা প্রাসাদ বানিয়েছে। জাতি তাদের থেকে কিছুই আশা করে না, কিছু দেয়ারও মতা তাদের নেই। কাষ্ঠলোকেরা আরো যে অপকর্মটি সাফল্যের সাথে করছেন, জাতির মগজের বাল্বটি নিভিয়ে ফেলে অন্ধকারে ঘিরে ফেলা।
বিশেষ করে স্কাইপ কেলেঙ্কারির পর ট্রাইব্যুনালকে হেগের হাতে না নেয়ার কোনোই কারণ ছিল না, ফলে যা হওয়ার তাই দেখছি। এখন 'স্বেচ্ছাচারিতা'র অভিযোগ আনা যেমন লজ্জাজনক, সুবিচারপ্রার্থীদের জন্যও দুঃখজনক। কিন্তু সেটা না হওয়ার প্রধান অন্তরায় ভারত। এই অঞ্চলে ভারতের প্রভাব আমেরিকার মতো। তারা যা চায়, সেটাই হচ্ছে। জঙ্গি নিধনের নামে জামায়াত-বিএনপি-শিবিরকে অযৌক্তিকভাবে তারা আর দেখতে চায় না বলেই আজকের পরিস্থিতি। এই আলামত এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট। অথচ বর্ডারে কুকুর-বিড়ালের মতো গুলি করে মানুষ মারছে বিএসএফ, কাষ্ঠঘোড়া সম্প্রদায় তবুও নীরব। 'পুলিশের পিস্তল পকেটে রাখার জন্য নয়।'Ñ প্রধানমন্ত্রী। বিরোধী দল বিনাশের স্বর্গরাজ্যে লালকেল্লার মালিক মতাধারীদের মুখে এসব কথার মধ্যে সিগন্যাল কী?
সংবিধান সংশোধন করে বহু আগেই সমালোচনার অধিকার হরণ করা হয়েছে সুপরিকল্পিতভাবে। মুখ খুললেই হামলা-মামলা, শাস্তির পাহাড় নিয়ে কি কারো সন্দেহ আছে? কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত পশ্চিমারা যতই সমালোচনা করুক, এসব আমলে না নিয়ে বরং তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতেই পছন্দ করছে রাষ্ট্র। এ দিকে মানবাধিকার পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হওয়ায় দেশ থেকে অর্থ আর মানুষ, দুটোই বিদেশে পাড়ি দেয়ার মহোৎসব অব্যাহত। এসব খবর মিডিয়ায় না আসার কারণ আমরা বুঝি। পৃথিবীতে মনে হয় একটি জাতিই আছে, একই সাথে যারা অতি আনন্দ এবং অতি আত্মতৃপ্তিতে ভরপুর। একই সাথে যারা উৎসব ও ফাঁসির আনন্দে সমান হারে মেতে ওঠার আগে চিন্তা করে না। কারণ, চিন্তা তাদেরকে করতে দেয়া হয় না। দেব-দেবীরা যা বলেন, সেটাই বেদ। অথচ সারা দিনে আমরা বহু মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে শুনি। ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ বিচার করার মতো চিন্তাশীল মনের সৃষ্টি ও সন্ধান করছি। কিন্তু কূলকিনারা পাই না এই বিশাল জগতের। প্রতিটি মুহূর্তেই সামনে এসে দাঁড়ায় নতুন ব্যক্তিত্ব, চিন্তার নতুন ফর্মুলা। প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তাভাবনা, সুস্থ ও প্রগতিশীল মনের কোনো বিকল্প নয়। এক ব্যক্তি, এক আদর্শ, এক দলের মধ্যে সবার চিন্তাভাবনা সীমাবদ্ধ। একটি জাতিকে কূপমণ্ডূক করতে এই ফর্মুলাই যথেষ্ট।
ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, কারণ-অকারণ, মনুষ্যত্বের এসব সংজ্ঞা এখন অকার্যকর। মানুষের বহু অভ্যাসের মধ্যে একটি হচ্ছেÑ কেউ পাখি ধরে, কেউ তা কিনে মুক্ত করে দেয়; যেমনÑ আমার বাবা। তিনি খাঁচাবন্দী পাখি সহ্যই করতে পারতেন না। সব দেখে মনে হচ্ছে, আরেকটি জনগোষ্ঠী যেন এতিম। এতিম মারছে, গুলি ঠেকানোর সাহস কার? বারবারই দেখছি, পশ্চিমাদের প্রতিবাদের ভাষায় প্রতিপকে নির্মূল করার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। দায়িত্ব পালনে কতটা সফল হেগের আইসিসি? ঝুঁকিপূর্ণ দেশে বিচার সন্দেহাতীত করতে ট্রাইব্যুনালকে তারা হয় আরেক দেশে নিয়ে গেছে কিংবা সরাসরি সম্পৃক্ত হয়েছে। এমন উদাহরণ বহু। একটার পর একটা বিতর্কিত রায় কার্যকর হলে বিরোধী দল পুরোপুরি নির্বংশ হবে। এটা যে রাজনৈতিক এজেন্ডা, প্রমাণ অবশ্যই রয়েছে। সেই আইসিসি সচেতন হলে প্রতিটি ফাঁসিই হতো সন্দেহাতীত প্রমাণের ভিত্তিতে, যা হয়নি বলে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত করলেন ব্রাড অ্যাডামস। বলেছেন, 'অস্বচ্ছ বিচারের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেয়া জীবনের অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। মৃত্যুদণ্ডের মতো রায় বাস্তবায়ন করার জন্য স্বচ্ছ ও মানসম্মত বিচার হলো মূল শর্ত।' অকথ্য গালিগালাজ না করলে সেটা বক্তব্য হয় না, এই ধারণা ভুল। সুবিচারপ্রার্থীদের সন্দেহ সত্য না হলে গণভবনে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে এত কথা বলতে হলো কেন? অতি আত্মতৃপ্তি রোগে আক্রান্ত বাছাই করা সাংবাদিকদেরকে যে কাজে আনা হয়েছিল, কাঠের ঘোড়ার মতো সব ঠিকঠাক করা হলো। তবে সাদ্দামের ফাঁসির প্রসঙ্গ তোলাটা একেবারেই অপ্রযোজ্য। কারণ, ওবামার সাথে ইরানের পারমাণবিক বোমার বিরুদ্ধে যে চুক্তি হলো আর পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য-প্রস্থ কারণ নিয়ে চীনের সাথে যে চুক্তি... এমন তুলনা নেহাত বালখিল্য। কিন্তু কাঠের ঘোড়া কাঠ দিয়ে তৈরি, তাই তারা নি®প্র্রাণ-নিষ্কর্মা। বুদ্ধি নিয়ে মাথা ঘামায় না কাঠ, ওটাকে বন্ধক দিয়েছে মহাজনদের কাছে, যার ওপর তারা প্রাসাদ বানিয়েছে। জাতি তাদের থেকে কিছুই আশা করে না, কিছু দেয়ারও মতা তাদের নেই। কাষ্ঠলোকেরা আরো যে অপকর্মটি সাফল্যের সাথে করছেন, জাতির মগজের বাল্বটি নিভিয়ে ফেলে অন্ধকারে ঘিরে ফেলা।
বিশেষ করে স্কাইপ কেলেঙ্কারির পর ট্রাইব্যুনালকে হেগের হাতে না নেয়ার কোনোই কারণ ছিল না, ফলে যা হওয়ার তাই দেখছি। এখন 'স্বেচ্ছাচারিতা'র অভিযোগ আনা যেমন লজ্জাজনক, সুবিচারপ্রার্থীদের জন্যও দুঃখজনক। কিন্তু সেটা না হওয়ার প্রধান অন্তরায় ভারত। এই অঞ্চলে ভারতের প্রভাব আমেরিকার মতো। তারা যা চায়, সেটাই হচ্ছে। জঙ্গি নিধনের নামে জামায়াত-বিএনপি-শিবিরকে অযৌক্তিকভাবে তারা আর দেখতে চায় না বলেই আজকের পরিস্থিতি। এই আলামত এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট। অথচ বর্ডারে কুকুর-বিড়ালের মতো গুলি করে মানুষ মারছে বিএসএফ, কাষ্ঠঘোড়া সম্প্রদায় তবুও নীরব। 'পুলিশের পিস্তল পকেটে রাখার জন্য নয়।'Ñ প্রধানমন্ত্রী। বিরোধী দল বিনাশের স্বর্গরাজ্যে লালকেল্লার মালিক মতাধারীদের মুখে এসব কথার মধ্যে সিগন্যাল কী?
যা বলেছেন তারা
জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিশন, 'আমরা অবিলম্বে জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল জনাব কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। কামারুজ্জামানকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছে, এই গোটা বিচারপ্রক্রিয়া নিয়েই অনেক প্রশ্ন ও অভিযোগ রয়েছে। এই বিচারে মোটেও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখা হয়নি।' বিবৃতিতে আরো বলা হয়Ñ ট্রাইব্যুনাল ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৬টি রায় দিয়েছেন, যার মধ্যে ১৪টিই মৃত্যুদণ্ড। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা বিরোধী দলের সদস্য। জাতিসঙ্ঘ জোর দিয়ে বলেছে, মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে, এমন বিচারের েেত্র যথাযথ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অস্বচ্ছ বিচারের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেয়া জীবনের অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল কনভেন্টে স্বারকারী একটি দেশ। সেটাকে বিবেচনায় নিয়ে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিশন মনে করে, মৃত্যুদণ্ডের মতো রায় বাস্তবায়ন করার জন্য স্বচ্ছ ও মানসম্মত বিচার হলো মূল শর্ত।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন : 'কামারুজ্জামানসহ সব মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করুন। সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কোনো অপরাধের প্রতিকার নয়; বরং সুষ্ঠু বিচার করতে আদালতের যে ব্যর্থতা, তা অপরিবর্তিত থেকে যায়।' তারা সব মৃত্যুদণ্ড মুলতবি করার আহ্বান জানান।
শেষ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান। স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র মেরি হার্প বলেছেন, 'আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচার অবশ্যই হতে হবে সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করে। আমরা অগ্রগতি দেখেছি। কিন্তু এখনো বিশ্বাস করি যে, আদালতের কার্যক্রমের আরো মানোন্নয়ন করে দেশ ও আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা অনুসরণ নিশ্চিত করা যেতে পারে। যতণ এসব বাধ্যবাধকতা পূরণ না হবে, ততণ ফাঁসি কার্যকর না করাই উত্তম পন্থা। যেসব দেশ মৃত্যুদণ্ড আরোপ করছে, অবশ্যই তা করতে হবে সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং উচ্চমান বজায় রেখে, সুষ্ঠু বিচারের নিশ্চয়তার ওপর শ্রদ্ধা রেখে।'
'বিচার গুরুতর ত্র"টিপূর্ণ, ফাঁসি স্থগিত করুন'Ñ বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থা। বিবৃতিতে বলা হয়, রিভিউ আবেদনের 'মেরিট' না শুনেই আপিল বিভাগ তার রিভিউ খারিজ করে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে। 'মৃত্যুদণ্ড একটি অপরিবর্তনীয় এবং নিষ্ঠুর সাজা। এটা আরো ভয়াবহ হয় যখন এ ধরনের সাজা পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করে দেখতে বিচার বিভাগ ব্যর্থ হয়। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারে ন্যায়বিচার লঙ্ঘনের ক্রমাগত এবং বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে, যার নিরপে বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা দরকার।' বলেছেনÑ এইচআরডব্লিউ এশিয়া ডিরেক্টর, ব্রাড অ্যাডামস। আরো বলেছেন, কামারুজ্জামানের বিচার চলাকালে আদালতে সাী ও ডকুমেন্টসহ আসামিপরে উপস্থাপিত প্রমাণাদিকে সীমিত করে দেয়া হয়েছে। সাীদের জেরাকালে তারা তাদের আগের বক্তব্যের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তা চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন আদালত। ব্রাড বলেছেন, দু'জন বিচারক এর আগে পপাত করলে তাদের প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য আসামিপরে আবেদনও নাকচ করে দেয়া হয়েছে।
ওই আলামতসাপেে বলাই বাহুল্য, বিচার নিয়ে যেসব অঘটন, ন্যায়বিচারপ্রার্থীদের জন্য এগুলো গুরুতর ঘটনা। জেনেভা কনভেনশনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা স্পষ্টই বলছেন, কিভাবে স্বেচ্ছাচারিতার পরিচয় দেয়া হচ্ছে। ফাঁসি না দিতে এত নারাজি এবং অনুরোধ যা জেনেভা কনভেনশনের ইতিহাসে একমাত্র ঘটনা, কিন্তু অপ্রতিরোধ্য এ রাষ্ট্র। প্রশ্নবিদ্ধ বিচার চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণায় আমরা আরো বেশি শঙ্কিত। ঝুঁকিপূর্ণ বিচারকে নিরপে করতে আইসিসির হস্তেেপর উদাহরণ বহু। এসব ব্যত্যয়ের কারণেই ডেভিড বার্গম্যানদের মতো সমালোচকদের কলম চলছিল। কিন্তু বিধিবাম! কেউই কিছু বলতে পারবে না। স্টালিনইজম ঘৃণা করি। আমার একটি স্ট্যাটাসের কারণে হৈ-হুল্লোড় শুরু হয়ে গেছে। গোয়েন্দারাও অতিরিক্ত ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এটা মানবাধিকার হরণ না হলে, কোনটা? সমালোচনার অধিকার কি একাই রাষ্ট্রের! ভবিষ্যতে কর্নেল তাহেরের মতো আর কোনো বিচারেরও পরিণতি অভিন্ন হবে না, এত আত্মতৃপ্তির কারণ আওয়ামী লীগের না থাকাই ভালো। বিচার নিয়ে অতিকথন সন্দেহের ত্রে বিশাল করেছে।
ট্রাইব্যুনাল-৭৩, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের সাথে অনুস্বারকারী হওয়ায় এর কাঠামোর বাইরে যাওয়ার কোনোই উপায় নেই। সেটা নিশ্চিত করতে যা প্রয়োজন, তা কখনোই করা হয়নি বলেই অনিয়ম ঘটছে। 'স্কাইপ কেলেঙ্কারির মতো লাইন বিচ্যুতি দেখেও কিছুই না করে ন্যায়বিচারপ্রার্থীদের ওপর অবিচার করা হয়েছে।' বিচারক এবং বিচারের বাইরের অনাহূত এক প্রবাসীর মাঝে কথোপকথনে রায় লেখার সাথে পদোন্নতি নিয়ে দরকষাকষি এবং বিচার শেষ হওয়ার আগেই ৫০০ পৃষ্ঠার রায় লেখা... জেনেভা কনভেনশনের চ্যাপ্টারে এ ধরনের বিচারের কথা কোথায় লেখা আছে? এই কথোপকথন প্রথম ফাঁস করেছিল ইকনোমিস্ট ম্যাগাজিন, সেখানে মিসট্রায়ালের সর্বোচ্চ প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হলো না। স্কাইপ কেলেঙ্কারি তদন্তের সময় শেষ হয়ে যায়নি। ট্রাইব্যুনালের বড় ধরনের ঘাটতির কথা উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা, এ প্রেক্ষাপটেই ফাঁসির অপোয় বিরোধী দলের শীর্ষ কয়েক নেতা, যাদের অবর্তমানে দল ভীষণ তিগ্রস্ত হবে এবং হচ্ছে। সব ক'টারই ফাঁসি হবেÑ এমন ইঙ্গিত সর্বোচ্চপর্যায় থেকে দিতে এক মুহূর্তও দেরি হয়নি অতি আত্মতৃপ্ত নির্বাহীদের। এই রেফারেন্স থাকলে ভবিষ্যতে অন্য দেশের েেত্র আইসিসির হস্তপে প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তবে এই দফায় পশ্চিমাদের ভাষার ব্যবহার, শব্দ প্রয়োগ আর ব্যাখ্যাগুলো অতীতের চেয়ে অধিকতর গভীর ও তীব্র। তবুও প্রমাণ করা হলো, ট্রাইব্যুনাল কাউকেই পাত্তা দেবেন না। '৭৪-এর ত্রিপীয় চুক্তির মাধ্যমে ১৯৫ জন শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল, যাদের কয়েকজন এখনো জীবিত থাকা সত্ত্বেও ফিরিয়ে এনে বিচারের কথা একবারও উচ্চারণ করল না সরকার। নিরপে ব্যক্তিদের প্রশ্ন, কেন নয়? ওদের অধীনেই '৭১-এর গণহত্যা; নয় কি? আমাদের চিন্তা অন্যেরা করে দেয় বলেই জাতির এত দুর্দশা। উৎসবের নামে ঘুম পাড়িয়ে রাখা জাতির চিন্তাশক্তি মরণঘুমে নিমগ্ন। নিজের মাথা অন্যকে ধার দিলে অনাদরে-অবহেলায় মগজ অন্যের শুকনো জমি হয়ে যায়। শুধু কি তাই? ১৯৭৪ সালে ওআইসির শীর্ষ সম্মেলনে ওই যুদ্ধাপরাধী টিক্কা খানের সাথে করমর্দন করেছেন কে? খুনি ভুট্টো ঢাকায় এলেন কোন সাহসে? ওই যুদ্ধাপরাধী ঢাকায় এলে মুসোলিনির সমতুল্য গণহত্যাকারীর সাথে এক গাড়িতে বসে কারা গিয়েছিলেন? কথায় কথায় নুরেমবার্গের উদাহরণ; কিন্তু মুসোলিনিতুল্য ১৯৫ জন অপরাধীর মুক্তির বিষয়টি লুকিয়ে রাখা হয়। শাক দিয়ে মাছ ঢাকা কি এতই সহজ? হিটলারতুল্যদের মুক্তি দিয়ে চুনোপুঁটিদের বিচার, হেগের ইতিহাসে অদ্ভুত ঘটনা। যারা ইতিহাস জানে এবং পড়ে, একমাত্র তারাই এসব প্রশ্ন তুলতে পারে। সোস্যাল মিডিয়া তোলপাড় করা, ভুট্টোকে বুকে জড়িয়ে ধরা ওআইসির ছবিগুলো কি কথা বলে না? সে জন্যই তো সুবিচারপ্রার্থীদের এত আহাজারি এবং বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড়। অন্ধ বলেই সোস্যাল মিডিয়ার বিপ্লব দেখছে না। নিয়াজি, ফরমান আলী, টিক্কা খানকে যারা মুক্তি দিতে পারে; তাদেরও বিচারের জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অতি আত্মতৃপ্ত সরকার যে বিশ্বকর্মা, ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। সুবিচার লাভের অধিকার একমাত্র চেতনাবাদীদেরই নয়। ১৯৫ জন অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীর মুক্তি যে ছেলের হাতের মোয়া নয়, বিষয়টি শহীদ পরিবারের সবচেয়ে আগে বোঝা উচিত ছিল এবং উপযুক্ত দাবিও করা উচিত ছিল। কারণ, তারাই ফাঁসি দেখার জন্য অধীর হয়ে আছে। ফাঁসি দিলেই উল্লাসে ফেটে পড়া টকশো থেকে শাহবাগ পর্যন্ত। এ দিকে অপরপরে কথা বলার অধিকার সীমিত। সুতরাং আমার অভিযোগই সত্য, সবাই কাষ্ঠঘোড়া অথবা কেকটা খাবো আবার থাকতেও হবে। এসব প্রশ্নের জবাব না পাওয়া পর্যন্ত হত্যার সমালোচনা চলাই স্বাভাবিক।
আমার লেখাটির মূল উদ্দেশ্য ট্রাইব্যুনালকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা এবং মুরব্বিদের কুম্ভিরাশ্র" ভূমিকার কঠোর সমালোচনা। পরোক্ষভাবে একদলীয় শাসন কায়েমে যা খুশি করছে রাষ্ট্র। ব্রাড অ্যাডামস বলছেন, 'সন্দেহাতীত প্রমাণ ছাড়া শাস্তি কার্যকর করা উচিত নয়, আবার কার্যকর করলেও কিছুই করছেন না।' অর্থাৎ কেকটা খেয়ে ফেলব আবার কেকটা থাকতেও হবে। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির ফোনে কাজ না হওয়ায় পশ্চিমাদের নিয়ে আমাদের সন্দেহের মাত্রা আরো বেড়েছে। তার মানে কি এই, জিওপলিটিক্সে ভালো অবস্থানের কারণে ুদ্র শক্তির জাদুর কাঠির ডগায় বন্দী বড় বড় পরাশক্তি এবং এসবই পুঁজিবাদীদের নাটক! কাউকেই বিশ্বাস করা উচিত নয়, বরং সমালোচনা চলতে থাকুক।
এই দফায় বার্তা আরো বেশি স্পষ্ট। 'দুর্গন্ধ' টের পাওয়া মাত্রই ট্রাইব্যুনালকে আন্তর্জাতিক পর্যবেকদের সাথে সম্পৃক্ত করা কিংবা ট্রাইব্যুনালকে অন্য দেশে নিয়ে বিচার সন্দেহাতীত করা উচিত ছিল। তবে সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি। কিন্তু বান কি মুনের রহস্যজনক ভূমিকার বিরুদ্ধে ুব্ধ হয়ে আগেও লিখেছি। এই লোকটার আচরণ বুশের মতো; যেন জাতিসঙ্ঘের প্রধান কাজ পুঁজিবাদীদের স্বার্থ উদ্ধার। ট্রাইব্যুনাল-৭৩-এর যত সমালোচনা আজ পর্যন্ত করেছে পশ্চিমারা, আইসিসির ইতিহাসে এটাই প্রথম হওয়া সত্ত্বেও কেন তারা বক্তব্যের মধ্যে সীমাবদ্ধÑ প্রশ্ন সমালোচকদের। 'স্কাইপ কেলেঙ্কারি থেকে সুখরঞ্জন বালির মতো ঘটনাগুলো বারবারই জানান দিয়েছে, আসুন দেখুনÑ এখানে মিসট্রায়াল, কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি।' সম্প্রতি হঠাৎ করেই বিচারকদের অভিশংসনের বিষয়টি আগুন নেভাতে পেট্রল ব্যবহারের সমান। বিচারক নিজামুল হকের পদত্যাগের ঘটনা সন্দেহাতীত বিচারের সম্ভাবনা নস্যাৎ করেছে। 'ইমরান বাহিনী' তৈরি করে অরাজকতাকে গ্রহণযোগ্য করা হয়েছে। ফলে রায় পাল্টে ফাঁসি দেয়া সম্ভব হয়েছে। গণজাগরণ মঞ্চের পর 'আন্তর্জাতিক মানদণ্ড' বললে হাস্যকর শোনাবে। সমষ্টিগতভাবে যেসব নৈরাজ্য অব্যাহত, এতে অবশ্যই ন্যায়বিচারপ্রার্থীরা রাষ্ট্রের স্বেচ্ছাচারী শাসনের কাছে দারুণ অসহায়। একে কোনোভাবেই গণতন্ত্র বলা যায় না। গণতন্ত্রে বহু দল-মতকে গ্রহণ করা হয়, এখানে চলছে কৌশলে একদলীয় শাসন কায়েমের সব আয়োজন।
জাতিসঙ্ঘ যথার্থ উল্লেখ করেছে, অর্থাৎ ১৬টি রায়ের মধ্যে ১৪টিতে যাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে সবাই বিরোধী দল তথা বিএনপি ও জামায়াত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের বেশির ভাগই বিরোধী শরিকের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ বলে উল্লেখ করেছে আন্তর্জাতিক মিডিয়া। গুরুত্ব পেয়েছে ইসলামি সংগঠনের নেতাদের হত্যার কথা। বিরোধী দলের আন্দোলনে মূলত তারাই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। তাদের অবর্তমানে বিএনপির অবস্থা হতে পারে, নুন ছাড়া কাবাব।
এই হারে মানবাধিকার ভঙ্গ করা হবে আর চুপ করে দেখব? যুক্তিকে যুক্তির জায়গায় থাকতে দিতে হবে। সুবিচারের প্রশ্নে আপস নেই; কারণ অবিচার হলে অপশক্তির ভাগ্য খুলে যায়। আওয়ামী লীগের ভেতরেও অবস্থান নেয়া যুদ্ধাপরাধীর নাম তো তালিকার মধ্যেই। তাদের বিচার কবে? নাকি ২০ দলকে ধ্বংস করাই মেনিফেস্টো! অভিযোগের বদলে বরং হেগের আইসিসির দায়িত্ব ছিল সনদ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া; কারণ বিচার স্বচ্ছ না হওয়ার অভিযোগ তো তাদেরই। সর্বোচ্চসংখ্যক ধর্ষিতাদের ট্রাইব্যুনালের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়নি। এখন তারা যে আপত্তির কথা বলছেন, ২০০৬ সালে বিধবা গ্রামে আমার অভিজ্ঞতাও একই এবং সে কারণেই পিছিয়ে গেছি। এ নিয়ে বহুবার লিখেছি, কিন্তু ফল হয়েছে ভয়াবহ, বেড়েছে গোয়েন্দাদের অত্যাচার। ফাঁসি একটি অপরিবর্তনযোগ্য শাস্তি। যে অভিযোগে ফাঁসি, তা সন্দেহাতীত করতে সব ক'জন বিধবার জবানবন্দী এবং জেরা-পাল্টা জেরা, কোনোটারই বিকল্প ছিল না।
ভলতেয়ারের বিখ্যাত কথাটি আবারো লিখছিÑ 'আমি তোমার আদর্শের সাথে দ্বিমত করতে পারি, কিন্তু তোমার বলার স্বাধীনতার জন্য প্রয়োজনে জীবন দেবো।' মিডিয়ায় বারবার আমার যে সাাৎকারটি দেখানো হয়, সেখানে বলেছি ৯ মাস পর দেশে ফিরে আমার শোনা কথা। কখনোই বলিনি কোনো খুনের কথা। কিন্তু পরবর্তী সময়ে যা শুনছি, আগাছার মতো খুন ও ধর্ষণের হাত-পা গজাচ্ছে। যেভাবে ধর্ষণের কথা বলা হচ্ছে, এ যেনÑ আমের আচার। তুরিন আফরোজের মতো যারাই পরবর্তী সময়ে ট্রাইব্যুনালের সাথে সম্পৃক্ত হতে পেরেছেন, তারা এত কথা না বলে বরং সব ক'টা জীবিত ধর্ষিতা ও বিধবাকেই আদালতে হাজির না করার কোনোই কারণ ছিল না। হাতের নাগালে থাকা সত্ত্বেও তিগ্রস্তদের (বিশেষ করে ধর্ষিতা) হাজির করা সুবিচারের তাগিদেই উচিত ছিল। ধর্মেই তো আছে, চারজন চাুষ সাীর কথা। ফলে 'মেরিট' প্রমাণ না হওয়ায় 'মোটিভ' স্পষ্ট। এত ধর্ষণ হলে বিধবা গ্রামে অন্তত একটি হলেও যুদ্ধশিশু থাকবে এবং তার সাথে যদি ডিএনএ মিলে যেত, সন্দেহাতীত বিচার নিশ্চিত করতে সেটাই উত্তম পন্থা। যদি না-ও হয়ে থাকে, তবুও উচিত ছিল। কারণ, এই সুযোগ এখন বাংলাদেশেই। ফলে কারো কোনো প্রশ্ন থাকত না। আমরা সুবিচার চাই, সন্দেহাতীত বিচারও চাই। ডিজিটাল পৃথিবীতে ডিএনএ পরীার মাধ্যমে অপরাধ প্রমাণ করার বিষয়টি এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে এবং বিধবাপল্লী এ ক্ষেত্রে তালিকার শীর্ষে বলে মনে করি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ৪০০-এর বেশি পরিচয়হীন নিহত সৈন্যের দেহাবশেষ কবর থেকে তুলে ডিএনএ পরীার মাধ্যমে শনাক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত ন্যায়বিচার রায় যত 'মধুমাখা' বাণী শোনাচ্ছেন, বাস্তবে, 'বিচার মানি, কিন্তু মাথা থেকে পা পর্যন্ত তালগাছটা আমার।' তালগাছ না হলেও সেটা তালগাছ এবং সেটাই আমার। সুবিচারের পে বান কি মুন ও ব্রাড অ্যাডামসরা একমাত্র বুলি কপচানো ছাড়া কিছুই করেননি, ভবিষ্যতেও করবেন না। এই বছরেই বাকি রায়গুলো কার্যতালিকায় বলে জানানোর জন্য অপো সইছে না নির্বাহীদের। তাদের বক্তব্যে রায় কার্যকর করার রগরগে জৌলুশ অনেকটাই বিয়েবাড়ির মুরগি রোস্টের মতো। এখনই সময়, ট্রাইব্যুনালকে প্রভাবমুক্ত রাখতে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া কিংবা আইসিসির সদস্যদের সরাসরি সম্পৃক্ততা। অন্যথায় আপত্তির নামে কুম্ভিরাশ্র" বন্ধ করুন। কেকটা খেয়ে ফেলব আবার থাকতেও হবেÑ এই পলিসি বন্ধ করুন। ট্রাইব্যুনালকে নিয়ে আমার চেয়ে নিরপে পর্যবেণ খুব কম লোকেরই আছে বলে মনে করি। মাননীয় প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে মেরিট ও মোটিভকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার অনুরোধ।
রাষ্ট্র ব্যর্থ, তাই দায়িত্বপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকেই মানবাধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করার পে প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে হবে। সব তথ্যপ্রমাণ তাদের হাতে। সময় চলে যাচ্ছে, অন্যথায় সর্বনাশ আরো হবে। বিচার চাই, স্বেচ্ছাচারিতা ঘৃণা করি।
farahmina@gmail.com
www.minafarah.com
জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিশন, 'আমরা অবিলম্বে জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল জনাব কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। কামারুজ্জামানকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছে, এই গোটা বিচারপ্রক্রিয়া নিয়েই অনেক প্রশ্ন ও অভিযোগ রয়েছে। এই বিচারে মোটেও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখা হয়নি।' বিবৃতিতে আরো বলা হয়Ñ ট্রাইব্যুনাল ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৬টি রায় দিয়েছেন, যার মধ্যে ১৪টিই মৃত্যুদণ্ড। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা বিরোধী দলের সদস্য। জাতিসঙ্ঘ জোর দিয়ে বলেছে, মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে, এমন বিচারের েেত্র যথাযথ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অস্বচ্ছ বিচারের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেয়া জীবনের অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল কনভেন্টে স্বারকারী একটি দেশ। সেটাকে বিবেচনায় নিয়ে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিশন মনে করে, মৃত্যুদণ্ডের মতো রায় বাস্তবায়ন করার জন্য স্বচ্ছ ও মানসম্মত বিচার হলো মূল শর্ত।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন : 'কামারুজ্জামানসহ সব মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করুন। সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কোনো অপরাধের প্রতিকার নয়; বরং সুষ্ঠু বিচার করতে আদালতের যে ব্যর্থতা, তা অপরিবর্তিত থেকে যায়।' তারা সব মৃত্যুদণ্ড মুলতবি করার আহ্বান জানান।
শেষ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান। স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র মেরি হার্প বলেছেন, 'আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচার অবশ্যই হতে হবে সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করে। আমরা অগ্রগতি দেখেছি। কিন্তু এখনো বিশ্বাস করি যে, আদালতের কার্যক্রমের আরো মানোন্নয়ন করে দেশ ও আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা অনুসরণ নিশ্চিত করা যেতে পারে। যতণ এসব বাধ্যবাধকতা পূরণ না হবে, ততণ ফাঁসি কার্যকর না করাই উত্তম পন্থা। যেসব দেশ মৃত্যুদণ্ড আরোপ করছে, অবশ্যই তা করতে হবে সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং উচ্চমান বজায় রেখে, সুষ্ঠু বিচারের নিশ্চয়তার ওপর শ্রদ্ধা রেখে।'
'বিচার গুরুতর ত্র"টিপূর্ণ, ফাঁসি স্থগিত করুন'Ñ বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থা। বিবৃতিতে বলা হয়, রিভিউ আবেদনের 'মেরিট' না শুনেই আপিল বিভাগ তার রিভিউ খারিজ করে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে। 'মৃত্যুদণ্ড একটি অপরিবর্তনীয় এবং নিষ্ঠুর সাজা। এটা আরো ভয়াবহ হয় যখন এ ধরনের সাজা পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করে দেখতে বিচার বিভাগ ব্যর্থ হয়। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারে ন্যায়বিচার লঙ্ঘনের ক্রমাগত এবং বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে, যার নিরপে বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা দরকার।' বলেছেনÑ এইচআরডব্লিউ এশিয়া ডিরেক্টর, ব্রাড অ্যাডামস। আরো বলেছেন, কামারুজ্জামানের বিচার চলাকালে আদালতে সাী ও ডকুমেন্টসহ আসামিপরে উপস্থাপিত প্রমাণাদিকে সীমিত করে দেয়া হয়েছে। সাীদের জেরাকালে তারা তাদের আগের বক্তব্যের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তা চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন আদালত। ব্রাড বলেছেন, দু'জন বিচারক এর আগে পপাত করলে তাদের প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য আসামিপরে আবেদনও নাকচ করে দেয়া হয়েছে।
ওই আলামতসাপেে বলাই বাহুল্য, বিচার নিয়ে যেসব অঘটন, ন্যায়বিচারপ্রার্থীদের জন্য এগুলো গুরুতর ঘটনা। জেনেভা কনভেনশনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা স্পষ্টই বলছেন, কিভাবে স্বেচ্ছাচারিতার পরিচয় দেয়া হচ্ছে। ফাঁসি না দিতে এত নারাজি এবং অনুরোধ যা জেনেভা কনভেনশনের ইতিহাসে একমাত্র ঘটনা, কিন্তু অপ্রতিরোধ্য এ রাষ্ট্র। প্রশ্নবিদ্ধ বিচার চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণায় আমরা আরো বেশি শঙ্কিত। ঝুঁকিপূর্ণ বিচারকে নিরপে করতে আইসিসির হস্তেেপর উদাহরণ বহু। এসব ব্যত্যয়ের কারণেই ডেভিড বার্গম্যানদের মতো সমালোচকদের কলম চলছিল। কিন্তু বিধিবাম! কেউই কিছু বলতে পারবে না। স্টালিনইজম ঘৃণা করি। আমার একটি স্ট্যাটাসের কারণে হৈ-হুল্লোড় শুরু হয়ে গেছে। গোয়েন্দারাও অতিরিক্ত ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এটা মানবাধিকার হরণ না হলে, কোনটা? সমালোচনার অধিকার কি একাই রাষ্ট্রের! ভবিষ্যতে কর্নেল তাহেরের মতো আর কোনো বিচারেরও পরিণতি অভিন্ন হবে না, এত আত্মতৃপ্তির কারণ আওয়ামী লীগের না থাকাই ভালো। বিচার নিয়ে অতিকথন সন্দেহের ত্রে বিশাল করেছে।
ট্রাইব্যুনাল-৭৩, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের সাথে অনুস্বারকারী হওয়ায় এর কাঠামোর বাইরে যাওয়ার কোনোই উপায় নেই। সেটা নিশ্চিত করতে যা প্রয়োজন, তা কখনোই করা হয়নি বলেই অনিয়ম ঘটছে। 'স্কাইপ কেলেঙ্কারির মতো লাইন বিচ্যুতি দেখেও কিছুই না করে ন্যায়বিচারপ্রার্থীদের ওপর অবিচার করা হয়েছে।' বিচারক এবং বিচারের বাইরের অনাহূত এক প্রবাসীর মাঝে কথোপকথনে রায় লেখার সাথে পদোন্নতি নিয়ে দরকষাকষি এবং বিচার শেষ হওয়ার আগেই ৫০০ পৃষ্ঠার রায় লেখা... জেনেভা কনভেনশনের চ্যাপ্টারে এ ধরনের বিচারের কথা কোথায় লেখা আছে? এই কথোপকথন প্রথম ফাঁস করেছিল ইকনোমিস্ট ম্যাগাজিন, সেখানে মিসট্রায়ালের সর্বোচ্চ প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হলো না। স্কাইপ কেলেঙ্কারি তদন্তের সময় শেষ হয়ে যায়নি। ট্রাইব্যুনালের বড় ধরনের ঘাটতির কথা উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা, এ প্রেক্ষাপটেই ফাঁসির অপোয় বিরোধী দলের শীর্ষ কয়েক নেতা, যাদের অবর্তমানে দল ভীষণ তিগ্রস্ত হবে এবং হচ্ছে। সব ক'টারই ফাঁসি হবেÑ এমন ইঙ্গিত সর্বোচ্চপর্যায় থেকে দিতে এক মুহূর্তও দেরি হয়নি অতি আত্মতৃপ্ত নির্বাহীদের। এই রেফারেন্স থাকলে ভবিষ্যতে অন্য দেশের েেত্র আইসিসির হস্তপে প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তবে এই দফায় পশ্চিমাদের ভাষার ব্যবহার, শব্দ প্রয়োগ আর ব্যাখ্যাগুলো অতীতের চেয়ে অধিকতর গভীর ও তীব্র। তবুও প্রমাণ করা হলো, ট্রাইব্যুনাল কাউকেই পাত্তা দেবেন না। '৭৪-এর ত্রিপীয় চুক্তির মাধ্যমে ১৯৫ জন শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল, যাদের কয়েকজন এখনো জীবিত থাকা সত্ত্বেও ফিরিয়ে এনে বিচারের কথা একবারও উচ্চারণ করল না সরকার। নিরপে ব্যক্তিদের প্রশ্ন, কেন নয়? ওদের অধীনেই '৭১-এর গণহত্যা; নয় কি? আমাদের চিন্তা অন্যেরা করে দেয় বলেই জাতির এত দুর্দশা। উৎসবের নামে ঘুম পাড়িয়ে রাখা জাতির চিন্তাশক্তি মরণঘুমে নিমগ্ন। নিজের মাথা অন্যকে ধার দিলে অনাদরে-অবহেলায় মগজ অন্যের শুকনো জমি হয়ে যায়। শুধু কি তাই? ১৯৭৪ সালে ওআইসির শীর্ষ সম্মেলনে ওই যুদ্ধাপরাধী টিক্কা খানের সাথে করমর্দন করেছেন কে? খুনি ভুট্টো ঢাকায় এলেন কোন সাহসে? ওই যুদ্ধাপরাধী ঢাকায় এলে মুসোলিনির সমতুল্য গণহত্যাকারীর সাথে এক গাড়িতে বসে কারা গিয়েছিলেন? কথায় কথায় নুরেমবার্গের উদাহরণ; কিন্তু মুসোলিনিতুল্য ১৯৫ জন অপরাধীর মুক্তির বিষয়টি লুকিয়ে রাখা হয়। শাক দিয়ে মাছ ঢাকা কি এতই সহজ? হিটলারতুল্যদের মুক্তি দিয়ে চুনোপুঁটিদের বিচার, হেগের ইতিহাসে অদ্ভুত ঘটনা। যারা ইতিহাস জানে এবং পড়ে, একমাত্র তারাই এসব প্রশ্ন তুলতে পারে। সোস্যাল মিডিয়া তোলপাড় করা, ভুট্টোকে বুকে জড়িয়ে ধরা ওআইসির ছবিগুলো কি কথা বলে না? সে জন্যই তো সুবিচারপ্রার্থীদের এত আহাজারি এবং বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড়। অন্ধ বলেই সোস্যাল মিডিয়ার বিপ্লব দেখছে না। নিয়াজি, ফরমান আলী, টিক্কা খানকে যারা মুক্তি দিতে পারে; তাদেরও বিচারের জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অতি আত্মতৃপ্ত সরকার যে বিশ্বকর্মা, ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। সুবিচার লাভের অধিকার একমাত্র চেতনাবাদীদেরই নয়। ১৯৫ জন অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীর মুক্তি যে ছেলের হাতের মোয়া নয়, বিষয়টি শহীদ পরিবারের সবচেয়ে আগে বোঝা উচিত ছিল এবং উপযুক্ত দাবিও করা উচিত ছিল। কারণ, তারাই ফাঁসি দেখার জন্য অধীর হয়ে আছে। ফাঁসি দিলেই উল্লাসে ফেটে পড়া টকশো থেকে শাহবাগ পর্যন্ত। এ দিকে অপরপরে কথা বলার অধিকার সীমিত। সুতরাং আমার অভিযোগই সত্য, সবাই কাষ্ঠঘোড়া অথবা কেকটা খাবো আবার থাকতেও হবে। এসব প্রশ্নের জবাব না পাওয়া পর্যন্ত হত্যার সমালোচনা চলাই স্বাভাবিক।
আমার লেখাটির মূল উদ্দেশ্য ট্রাইব্যুনালকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা এবং মুরব্বিদের কুম্ভিরাশ্র" ভূমিকার কঠোর সমালোচনা। পরোক্ষভাবে একদলীয় শাসন কায়েমে যা খুশি করছে রাষ্ট্র। ব্রাড অ্যাডামস বলছেন, 'সন্দেহাতীত প্রমাণ ছাড়া শাস্তি কার্যকর করা উচিত নয়, আবার কার্যকর করলেও কিছুই করছেন না।' অর্থাৎ কেকটা খেয়ে ফেলব আবার কেকটা থাকতেও হবে। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির ফোনে কাজ না হওয়ায় পশ্চিমাদের নিয়ে আমাদের সন্দেহের মাত্রা আরো বেড়েছে। তার মানে কি এই, জিওপলিটিক্সে ভালো অবস্থানের কারণে ুদ্র শক্তির জাদুর কাঠির ডগায় বন্দী বড় বড় পরাশক্তি এবং এসবই পুঁজিবাদীদের নাটক! কাউকেই বিশ্বাস করা উচিত নয়, বরং সমালোচনা চলতে থাকুক।
এই দফায় বার্তা আরো বেশি স্পষ্ট। 'দুর্গন্ধ' টের পাওয়া মাত্রই ট্রাইব্যুনালকে আন্তর্জাতিক পর্যবেকদের সাথে সম্পৃক্ত করা কিংবা ট্রাইব্যুনালকে অন্য দেশে নিয়ে বিচার সন্দেহাতীত করা উচিত ছিল। তবে সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি। কিন্তু বান কি মুনের রহস্যজনক ভূমিকার বিরুদ্ধে ুব্ধ হয়ে আগেও লিখেছি। এই লোকটার আচরণ বুশের মতো; যেন জাতিসঙ্ঘের প্রধান কাজ পুঁজিবাদীদের স্বার্থ উদ্ধার। ট্রাইব্যুনাল-৭৩-এর যত সমালোচনা আজ পর্যন্ত করেছে পশ্চিমারা, আইসিসির ইতিহাসে এটাই প্রথম হওয়া সত্ত্বেও কেন তারা বক্তব্যের মধ্যে সীমাবদ্ধÑ প্রশ্ন সমালোচকদের। 'স্কাইপ কেলেঙ্কারি থেকে সুখরঞ্জন বালির মতো ঘটনাগুলো বারবারই জানান দিয়েছে, আসুন দেখুনÑ এখানে মিসট্রায়াল, কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি।' সম্প্রতি হঠাৎ করেই বিচারকদের অভিশংসনের বিষয়টি আগুন নেভাতে পেট্রল ব্যবহারের সমান। বিচারক নিজামুল হকের পদত্যাগের ঘটনা সন্দেহাতীত বিচারের সম্ভাবনা নস্যাৎ করেছে। 'ইমরান বাহিনী' তৈরি করে অরাজকতাকে গ্রহণযোগ্য করা হয়েছে। ফলে রায় পাল্টে ফাঁসি দেয়া সম্ভব হয়েছে। গণজাগরণ মঞ্চের পর 'আন্তর্জাতিক মানদণ্ড' বললে হাস্যকর শোনাবে। সমষ্টিগতভাবে যেসব নৈরাজ্য অব্যাহত, এতে অবশ্যই ন্যায়বিচারপ্রার্থীরা রাষ্ট্রের স্বেচ্ছাচারী শাসনের কাছে দারুণ অসহায়। একে কোনোভাবেই গণতন্ত্র বলা যায় না। গণতন্ত্রে বহু দল-মতকে গ্রহণ করা হয়, এখানে চলছে কৌশলে একদলীয় শাসন কায়েমের সব আয়োজন।
জাতিসঙ্ঘ যথার্থ উল্লেখ করেছে, অর্থাৎ ১৬টি রায়ের মধ্যে ১৪টিতে যাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে সবাই বিরোধী দল তথা বিএনপি ও জামায়াত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের বেশির ভাগই বিরোধী শরিকের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ বলে উল্লেখ করেছে আন্তর্জাতিক মিডিয়া। গুরুত্ব পেয়েছে ইসলামি সংগঠনের নেতাদের হত্যার কথা। বিরোধী দলের আন্দোলনে মূলত তারাই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। তাদের অবর্তমানে বিএনপির অবস্থা হতে পারে, নুন ছাড়া কাবাব।
এই হারে মানবাধিকার ভঙ্গ করা হবে আর চুপ করে দেখব? যুক্তিকে যুক্তির জায়গায় থাকতে দিতে হবে। সুবিচারের প্রশ্নে আপস নেই; কারণ অবিচার হলে অপশক্তির ভাগ্য খুলে যায়। আওয়ামী লীগের ভেতরেও অবস্থান নেয়া যুদ্ধাপরাধীর নাম তো তালিকার মধ্যেই। তাদের বিচার কবে? নাকি ২০ দলকে ধ্বংস করাই মেনিফেস্টো! অভিযোগের বদলে বরং হেগের আইসিসির দায়িত্ব ছিল সনদ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া; কারণ বিচার স্বচ্ছ না হওয়ার অভিযোগ তো তাদেরই। সর্বোচ্চসংখ্যক ধর্ষিতাদের ট্রাইব্যুনালের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়নি। এখন তারা যে আপত্তির কথা বলছেন, ২০০৬ সালে বিধবা গ্রামে আমার অভিজ্ঞতাও একই এবং সে কারণেই পিছিয়ে গেছি। এ নিয়ে বহুবার লিখেছি, কিন্তু ফল হয়েছে ভয়াবহ, বেড়েছে গোয়েন্দাদের অত্যাচার। ফাঁসি একটি অপরিবর্তনযোগ্য শাস্তি। যে অভিযোগে ফাঁসি, তা সন্দেহাতীত করতে সব ক'জন বিধবার জবানবন্দী এবং জেরা-পাল্টা জেরা, কোনোটারই বিকল্প ছিল না।
ভলতেয়ারের বিখ্যাত কথাটি আবারো লিখছিÑ 'আমি তোমার আদর্শের সাথে দ্বিমত করতে পারি, কিন্তু তোমার বলার স্বাধীনতার জন্য প্রয়োজনে জীবন দেবো।' মিডিয়ায় বারবার আমার যে সাাৎকারটি দেখানো হয়, সেখানে বলেছি ৯ মাস পর দেশে ফিরে আমার শোনা কথা। কখনোই বলিনি কোনো খুনের কথা। কিন্তু পরবর্তী সময়ে যা শুনছি, আগাছার মতো খুন ও ধর্ষণের হাত-পা গজাচ্ছে। যেভাবে ধর্ষণের কথা বলা হচ্ছে, এ যেনÑ আমের আচার। তুরিন আফরোজের মতো যারাই পরবর্তী সময়ে ট্রাইব্যুনালের সাথে সম্পৃক্ত হতে পেরেছেন, তারা এত কথা না বলে বরং সব ক'টা জীবিত ধর্ষিতা ও বিধবাকেই আদালতে হাজির না করার কোনোই কারণ ছিল না। হাতের নাগালে থাকা সত্ত্বেও তিগ্রস্তদের (বিশেষ করে ধর্ষিতা) হাজির করা সুবিচারের তাগিদেই উচিত ছিল। ধর্মেই তো আছে, চারজন চাুষ সাীর কথা। ফলে 'মেরিট' প্রমাণ না হওয়ায় 'মোটিভ' স্পষ্ট। এত ধর্ষণ হলে বিধবা গ্রামে অন্তত একটি হলেও যুদ্ধশিশু থাকবে এবং তার সাথে যদি ডিএনএ মিলে যেত, সন্দেহাতীত বিচার নিশ্চিত করতে সেটাই উত্তম পন্থা। যদি না-ও হয়ে থাকে, তবুও উচিত ছিল। কারণ, এই সুযোগ এখন বাংলাদেশেই। ফলে কারো কোনো প্রশ্ন থাকত না। আমরা সুবিচার চাই, সন্দেহাতীত বিচারও চাই। ডিজিটাল পৃথিবীতে ডিএনএ পরীার মাধ্যমে অপরাধ প্রমাণ করার বিষয়টি এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে এবং বিধবাপল্লী এ ক্ষেত্রে তালিকার শীর্ষে বলে মনে করি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ৪০০-এর বেশি পরিচয়হীন নিহত সৈন্যের দেহাবশেষ কবর থেকে তুলে ডিএনএ পরীার মাধ্যমে শনাক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত ন্যায়বিচার রায় যত 'মধুমাখা' বাণী শোনাচ্ছেন, বাস্তবে, 'বিচার মানি, কিন্তু মাথা থেকে পা পর্যন্ত তালগাছটা আমার।' তালগাছ না হলেও সেটা তালগাছ এবং সেটাই আমার। সুবিচারের পে বান কি মুন ও ব্রাড অ্যাডামসরা একমাত্র বুলি কপচানো ছাড়া কিছুই করেননি, ভবিষ্যতেও করবেন না। এই বছরেই বাকি রায়গুলো কার্যতালিকায় বলে জানানোর জন্য অপো সইছে না নির্বাহীদের। তাদের বক্তব্যে রায় কার্যকর করার রগরগে জৌলুশ অনেকটাই বিয়েবাড়ির মুরগি রোস্টের মতো। এখনই সময়, ট্রাইব্যুনালকে প্রভাবমুক্ত রাখতে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া কিংবা আইসিসির সদস্যদের সরাসরি সম্পৃক্ততা। অন্যথায় আপত্তির নামে কুম্ভিরাশ্র" বন্ধ করুন। কেকটা খেয়ে ফেলব আবার থাকতেও হবেÑ এই পলিসি বন্ধ করুন। ট্রাইব্যুনালকে নিয়ে আমার চেয়ে নিরপে পর্যবেণ খুব কম লোকেরই আছে বলে মনে করি। মাননীয় প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে মেরিট ও মোটিভকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার অনুরোধ।
রাষ্ট্র ব্যর্থ, তাই দায়িত্বপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকেই মানবাধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করার পে প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে হবে। সব তথ্যপ্রমাণ তাদের হাতে। সময় চলে যাচ্ছে, অন্যথায় সর্বনাশ আরো হবে। বিচার চাই, স্বেচ্ছাচারিতা ঘৃণা করি।
farahmina@gmail.com
www.minafarah.com
__._,_.___
No comments:
Post a Comment