নারীঘাতী, শিশুঘাতী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সোচ্চার মিছিলে মহিলারা
নিজস্ব প্রতিনিধি
কলকাতা, ২৬শে ফেব্রুয়ারি- লোকসভা নির্বাচনের ফল বেরনোর মাত্র ৪৮ঘন্টার মধ্যেই মুণ্ডেশ্বরী নদীর তীরে একচিলতে ঘর, সংসার সব হারিয়েছিলেন তাপসী দলুই।
তৃণমূল হামলায় গুঁড়িয়ে যাওয়া, আগুনে ভস্মীভূত হওয়া ঘরের দাওয়ায় শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে শোলবাঘা গ্রামের সেই অসহায় গৃহবধূর বুক ফাটা কান্না- মিছিলের একেবার সামনে ধরা ব্যানারেই ছিল বর্বরতার চিহ্ন বয়ে বেড়ানো সেই ছবিটি। ছবিটির গায়েই লেখা, 'এ কিসের পদধ্বনি...নৈরাজ্য নয় শান্তি চাই'।
একেবারে সামনে এই ব্যানারটি রেখেই মহানগরীর রাজপথে তৃণমূলী-মাওবাদী হিংস্রতার বিরুদ্ধে ঘৃণা উগরে দিয়েই পথ হাঁটলেন মহিলারা। যেভাবে তৃণমূলী-মাওবাদী সন্ত্রাসের লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠছে মহিলা,শিশুরাও- সেই ভয়ঙ্কর প্রবণতার বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদী মিছিলে কোন স্লোগান ওঠেনি। কেননা সন্ত্রাস, নাশকতার বিরুদ্ধে নিজেদের সোচ্চার প্রতিবাদকে জানান দিতে মৌন মিছিলেই পা মেলালেন মহিলারা। রাজ্য জুড়ে তৃণমূলী-মাওবাদী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির কলকাতা জেলা কমিটির উদ্যোগে শুক্রবার বিকেলে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেল পর্যন্ত এই মিছিল হয়। নারীঘাতক, শিশু ঘাতক তৃণমূলী-মাওবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে স্লোগান লেখা ব্যানার, পোস্টারে সুসজ্জিত ছিলো এই মিছিল।
বামপন্থীদের সমর্থন করার অপরাধে লোকসভা নির্বাচনের ফল বেরনো মাত্রই সব কিছু হারিয়ে সন্তানকে কোলে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাতে হয়েছিলো তাপসী দলুইকে। সেই শুরু- তারপর গোটা রাজ্যজুড়ে কোথাও মাওবাদী, কোথাও তৃণমূলী কোথাও বা কংগ্রেসী দুষ্কৃতীদের হাতে বারে বারে আক্রান্ত হতে হয়েছে এরাজ্যের মহিলা সমাজকে। চার বছরের কন্যা সন্তান সুমনার সঙ্গে আগুনে পুড়িয়ে খুন করা হয়েছে হুগলীর ধনিয়াখালির গ্রামের বাসিন্দা ঝরনা মাণ্ডিকে। ছেলে সি পি আই(এম) করে, শুধু মাত্র এই অপরাধেই বাঁকুড়ার বারিকুলের বাগডুবি গ্রামের বাসিন্দা নবীন হেমব্রমের ৮৫ বছরের বৃদ্ধা মা কমলা হেমব্রম ও ৫৬ বছর বয়সী দিদি সরস্বতী হেমব্রমকে ঘরের ভিতর খাটের উপর চিতা বানিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার মাওবাদী-তৃণমূলী সাক্ষীও রয়েছে রাজ্যবাসী। তথাকথিত পরিবর্তনের নামে যেভাবে সাধারণ গৃহবধূ থেকে শুরু আই সি ডি এসের কর্মী, প্রাথমিক শিক্ষিকা থেকে শুরু করে কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী, এমনকি কর্মরত মহিলা পুলিসও যেভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন তৃণমূলের নেতৃত্বে তাতে উদ্বিগ্ন গোটা সমাজই। খুন, হামলার পাশাপাশি ধর্ষণ করে অপহরণের ঘটনাও বাদ যাচ্ছেনা মাওবাদী-তৃণমূলী নৈরাজ্যে। নারীঘাতক এই হিংস্রতার শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ভাষাকে আরো সংহত করতেই তাই রাস্তায় এরাজ্যের মহিলা সমাজ।
গোটা রাজ্যবাসীকে শিহরিত করেছিলো ছবি মাহাতোর ঘটনা। জঙ্গলমহলের শালবনীর বাসিন্দা তিন সন্তানের জননী ছবি মাহাতোকে গণ-ধর্ষণ করে জীবিত অবস্থাতেই মাটিতে পুঁতে দিয়েছিলো মাওবাদী-তৃণমূলী জল্লাদ বাহিনী। প্রায় ২৭দিন পরে মাটি খুঁড়ে উদ্ধার হয়েছিলো ছবি মাহাতোর পচা-গলা মৃতদেহটি। তবুও একটি শব্দও শোনা যায়নি তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির মুখ থেকে। এদিনে প্রতিবাদী মৌন মিছিল থেকে দাবি জানানো হয়েছে ছবি মাহাতোর অপরাধীদের কঠিন শাস্তি দিতে হবে। বারাসতের ইভিটিজিং ঘটনার পরবর্তীতে স্টার আনন্দ চ্যানেলের বিতর্কসভায় যেভাবে এস এফ আই এর সমর্থক মৌসুমী ঘোষের উপর তৃণমূলীদের পৈশাচিক হামলা হয়েছিল তার প্রতিবাদ জানিয়ে লেখা পোস্টারও ছিলো এই মৌন মিছিলে। জঙ্গলমহলে মাওবাদী-তৃণমূলী বাহিনীর হাতে এখনও পর্যন্ত অপহৃত আই সি ডি এস কর্মী সম্প্রীতি মাহাতো, চুনীবালা রানা, অনিমা দেব সিংহ, প্রাথমিক শিক্ষিকা ফুলমণি মাণ্ডির এখনও কোন খোঁজ মেলেনি। মহানগরীর রাজপথে হাজারো মহিলার সেই সোচ্চার প্রতিবাদের মৌন মিছিল থেকে তাঁদের উদ্ধারের দাবিও জানানো হয়। এদিনের মিছিলে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সর্বভারতীয় নেত্রী বনানী বিশ্বাস, সংগঠনের কলকাতা জেলা কমিটির সভানেত্রী আনোয়ারা মির্জা, সম্পাদক লক্ষীমণি ব্যানার্জি, মহিলা নেত্রী কুমকুম চক্রবর্তী, বনবাণী ভট্টাচার্য প্রমুখ। মিছিলে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ মহিলা সমিতির তরফে শ্যামশ্রী দাস, ফারজানা চৌধুরি, অগ্রগামী মহিলা সমিতির তরফে শর্বানী ভট্টাচার্য ।
No comments:
Post a Comment