রেল চলেছে ধ্বংসের পথে, অভিযোগ পলিট ব্যুরোর
আই এন এন: ভাঁড়ার শূন্য, তাই লোক দেখাতে ভাঁওতাবাজির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে রেল বাজেটে। ঘোষণা করা হয়েছে রকমারি প্রকল্প। শুক্রবার লোকসভায় পেশ করা রেল বাজেট সম্পর্কে এমনই কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সি পি আই (এম) পলিট ব্যুরো। স্পষ্ট বলা হয়েছে, এইসব প্রকল্পগুলি কখনই বাস্তব রূপ নেবে না। বাস্তবিকই চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটে ভুগছে রেল। আসলে ধ্বংসাত্মক লাইনেই চলছে ভারতীয় রেল। এদিন রেল বাজেট নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সি পি আই (এম) পলিট ব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি পরিষ্কার বলেন, রেলমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বাজেট প্রস্তাবে যেভাবে অকাতরে প্রকল্প ঘোষণা করে গেলেন তাতে ভারতীয় রেলকে আরও দেউলিয়া অবস্থার দিকেই ঠেলে দেবে। পূর্ব ঘোষিত বহু প্রকল্প বকেয়া পড়ে আছে, অথচ দায়িত্ব এড়িয়ে গোটা বিষয়টি যোজনা কমিশনের ঘাড়ে ছেড়ে দিলেন রেলমন্ত্রী। এদিকে, এই রেল বাজেট আসলে রেলমন্ত্রীর ইচ্ছাপত্রেরই প্রকাশ ঘটেছে বলে কটাক্ষ করেছে সি আই টি ইউ। যে বাজেটে প্রকল্পগুলির অর্থ সংস্থান এবং সময়সীমা—কোনো কিছুরই উল্লেখ নেই। পলিট ব্যুরোর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির হার ৮শতাংশ হলেও মাসুল বাবদ আয়ের পরিমাণ একটুও বাড়েনি। রেলে নিরাপত্তার বেহাল দশা, এরফলে গত এক বছরে ২০০জনেরও বেশি নিহত হয়েছেন দুর্ঘটনায়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং খাবার-দাওয়ারের মতো যাত্রী সুবিধার মান দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে, সময় মেপে ট্রেনও চলাচল করছে না। প্রকৃত তথ্য গোপন করে ২০১১-১২সালের প্রস্তাবিত রেল বাজেটে রেল পরিচালনার আনুপাতিক হার (অপারেটিং রেসিও) কম করে দেখিয়ে ৯২.১শতাংশ উল্লেখ করা হয়েছে। এসবই পরিসংখ্যানের কারিকুরি। চলতি আর্থিক বছরের শেষে গিয়ে দেখা যাবে রেলে পণ্য পরিবহন হয়েছে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার থেকে ২কোটি টন কম (রেলমন্ত্রী তাঁর বাজেট পেশের সময় স্বীকারও করেছেন একথা)। এর থেকেই রেলের অপদার্থতা আরও প্রকট হয়। তাসত্ত্বেও, বাজেটে পণ্য মাসুল বাবদ আয়ের পরিমাণ গতবারের মতোই থাকবে বলে দাবি করা হয়েছে। বাস্তবের থেকে বেশি পরিমাণ পণ্য পরিবহন বাবদ আয় হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। এর ওপর, ২০১০-১১সালে রেল যে লভ্যাংশ দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার থেকে ১৭০০কোটি টাকা কম দিয়েছে। কৃত্রিমভাবে রেল পরিচালনার আনুপাতিক হারও বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। এরপর রেলের হিসাব প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। পলিট ব্যুরো বলেছে, রেল বাজেটে বার্ষিক যোজনা বরাদ্দ ৫৭,৬৩০কোটি টাকা ঘোষণা করা হয়েছে। গত বছর খরচ হয়েছে ৪০৩১৪.৯৩কোটি টাকা। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, এই অর্থের সিংহভাগই জোগান দেওয়া হবে কেন্দ্রীয় বাজেটের বর্ধিত তহবিল থেকে (মোট বাজেট সহায়তা)। যে বাজেট সহায়তা গত বছর ছিল ১৫৮০০কোটি টাকা, বেড়ে দাঁড়াবে ২০০০০কোটি টাকা। আই আর এফ সি থেকে ঋণ বাবদ আসবে ২০৫০০কোটি, যা গতবার ছিল ১০১০০কোটি। অথচ রেলের অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ যেমন যাত্রী ও পণ্য পরিবহন বাবদ খরচ গতবারের তুলনায় ৩০০কোটি কম ঘোষণা করা হয়েছে। এর থেকে স্পষ্ট, রেলের নিজস্ব সম্পদ সংগ্রহের পরিমাণ আরও অবনতি ঘটবে। উলটে, সাধারণ বাজেট এবং বাজার থেকে ঋণ নিয়ে সম্পদ সংগ্রহের লক্ষণ স্পষ্ট। রেলের অর্থনৈতিক অবস্থাকে আরও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়ার প্রবণতা ফুটে উঠছে এই বাজেটে। ২০১০-১১সালের রেল বাজেটেও বহু প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছিল। যার মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের স্টেশন, রেলের কোচ ও লোকো তৈরির কারখানা, ওয়াগন ও অ্যাক্সেল ইউনিট নির্মাণ, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, অটো হাব, স্পোর্টস কমপ্লেক্স তৈরি, হাসপাতাল নির্মাণ ইত্যাদি বিষয়গুলি ছিল। এবারের বাজেট দেখে মনে হচ্ছে, ঐ ঘোষণাগুলি পুরোটাই চমক ছিল। কেননা এরমধ্যে কিছু প্রকল্প এবারও দেখা যচ্ছে অথবা বেমালুম ভুলে যাওয়া হয়েছে। যোজনা বরাদ্দ এবং নির্দিষ্ট সময়সীমা ব্যতীত প্রকল্প ঘোষণা স্রেফ ভাঁওতা ছাড়া কিছুই নয়। এবারের বাজেটেও এমন অনেক ভাঁওতা দেওয়া হয়েছে। এতে ভারতীয় রেলের মতো মহান প্রতিষ্ঠানের মর্যাদাই ক্ষুন্ন হচ্ছে। সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো, গত বাজেটে ৬টি উচ্চ গতিসম্পন্ন যাত্রী করিডরের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। এবারের বাজেটে এর কোনো উল্লেখই নেই। পলিট ব্যুরো মনে করে, অত্যন্ত হালকা চালে পরিসংখ্যান-ভাঁওতার আশ্রয় নিয়ে রেলমন্ত্রী বাজেট ঘোষণাকালে দাবি করলেন, রেলে যাত্রী সুরক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি ঘটেছে। অথচ গত এক বছরে রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২১৬জনের। রেলমন্ত্রীর আচরণেই স্পষ্ট যে তিনি সাধারণ মানুষের মৃত্যু নিয়ে মোটেই উদ্বিগ্ন নন। তিনটি রেল জোনে সংঘর্ষ প্রতিরোধী যন্ত্র বা অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস বসানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ২০০৯সালের বাজেটে। তা আজো তা হয়নি। এখন আরো চার জোনে ঐ অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস বসানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আবার এবারের বাজেটে 'ট্রেন প্রোটেকশন ওয়ার্নিং সিস্টেম' বসানোর কোনো উল্লেখই নেই। গত বাজেটে অবশ্য এই ব্যবস্থা বসানোর কথা বড়াই করে বলা হয়েছিল। পলিট ব্যুরোর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফের শূন্যপদ পূরণ নিয়ে ফাঁকা প্রতিশ্রুতি শোনালেন রেলমন্ত্রী। অথচ এখনও পর্যন্ত ১লক্ষ ৭৫হাজার গ্রুপ সি ও ডি পদ এবং ১৩হাজার আর পি এফ পদ পূরণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বস্তুত, ২০০৯-র মার্চ থেকে ২০১০-র মার্চের মধ্যে ভারতীয় রেলের কর্মীসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে ২৪৬০০। এখন মোট রেলকর্মীর সংখ্যা ১৩লক্ষ ৬১হাজার ৫১৯জন। মোটেই ১৪লক্ষ নয়, যা রেলমন্ত্রী বলার সময় বার বার উল্লেখ করছিলেন। এটা স্পষ্ট, রেলমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে ভারতীয় রেল ধ্বংসের পথে চলছে। প্রধানমন্ত্রী কি জোটধর্ম পালনের স্বার্থেই এসব মুখ বুঁজে অনুমোদন করছেন? সীতারাম ইয়েচুরিও রেল বাজেটে অকাতরে প্রকল্প ঘোষণা প্রসঙ্গে কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-কে। তাঁরও প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী কি জোট রাজনীতির স্বার্থ দেখছেন? এদিকে রেলের দেউলিয়া অবস্থা। যেমন, অর্থনীতির প্রশ্নে ৯শতাংশ মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের কথা বলা হচ্ছে। তাহলে সেক্ষেত্রে রেলের বিকাশ প্রয়োজন ১১শতাংশ। কিন্তু বাস্তবে সেই বিকাশের হার ৩.৫শতাংশ। অধিকাংশ প্রকল্পই বকেয়া। আর সেসবই যোজনা কমিশনের ঘাড়ে চাপিয়ে দায় এড়িয়েছেন রেলমন্ত্রী। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিকাশের উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ করে ইয়েচুরি বলেন, রেলের পণ্য পরিবহন দিনে দিনে কমে ৩৫শতাংশে এসে ঠেকেছে। রেল পরিচালনার আনুপাতিক হার নিয়েও ভুল তথ্য দেওয়া হচ্ছে। রেলমন্ত্রী বলেছেন, ষষ্ঠ বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন দিতে গিয়ে রেল বহু লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে উঠতে পারেনি। এতে রেলমন্ত্রীর শ্রমিক-কর্মচারী বিরোধী মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রেলমন্ত্রী যেভাবে চলছেন তাতে আমরা নয়, জনগণই একসময় তাঁকে প্রশ্ন করবেন। জবাব তাঁকে দিতে হবে। সি আই টি ইউ-র অভিযোগ, বকেয়া প্রকল্প যোজনা কমিশনের ঘাড়ে ফেলে দিয়ে ফের নতুন নতুন প্রকল্পের কথা অকাতরে ঘোষণা করেছেন রেলমন্ত্রী। বহু নতুন ট্রেন ঘোষণা হয়েছে কিন্তু সেই পরিমাণ ইঞ্জিন, বগি এমনকি রেললাইন পর্যন্ত নেই। এমনকি রেলের বার্ষিক রিপোর্টেই স্পষ্ট যে রেলের কর্মীসংখ্যা দিনে দিনে হ্রাস পাচ্ছে। সি আই টি ইউ স্পষ্টতই রেলমন্ত্রীর ঘোষিত 'উদার অবসর প্রকল্প'-এর ঘোরতর বিরোধিতা করেছে সি আই টি ইউ। এদিন রেল বাজেট সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লক অভিযোগ করেছে যে, রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিকাঠামো উন্নতি সম্পর্কে কোনো কথাই নেই। উলটে রেলমন্ত্রী তাঁর নিজের ভাবমূর্তি বাড়ানোর দিকেই নজর দিয়েছেন বেশি। গত বাজেটে উল্লেখিত বহু প্রকল্পের কোনো উল্লেখই নেই এবারের বাজেটে। এই রেলমন্ত্রীর আমলে রেলের আর্থিক পরিস্থিতির বেহাল দশা হয়েছে।
রাজ্য
সোনারপুরে হার্ডওয়্যার পার্কের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী
বিমান বসু: অর্জিত অধিকার রক্ষার সঙ্গেই জনবিচ্ছিন্ন করুন গণতন্ত্রের ওপর হামলাকারী শক্তিকে
জাতীয়
সংস্কারেরই গতি বাড়ানোর সুপারিশ অর্থনৈতিক সমীক্ষায়
কৃষিক্ষেত্রের বেহাল দশা বেআব্রু তবু দিশাহীন অঙ্গীকার সমীক্ষায়
আন্তর্জাতিক
খেলা
সংশয় ও ভেত্তোরিদের উড়িয়ে দৌড় জারি রাখলেন পন্টিংরা
ব্রডদের বীরুভীতি, ভারতের জুজু শর্ট বল পাঁজরে আঘাত পেয়ে ভূ-পতিত সেওয়াগ
আড্ডা ঘর
মিডিয়ার সঙ্গে কর্পোরেট সংস্থার আঁতাত
আপনার কী মতামত?
আপনার রায়
মাওবাদী-তৃণমূল আঁতাতের বিষয়টি কি উপেক্ষা করছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পি চিদাম্বরম?
হ্যাঁ | |
না | |
জানি না | |
No comments:
Post a Comment