লিবিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সর্বসম্মতভাবে লিবিয়ার নেতা কর্ণেল গাদ্দাফি এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে৻
নিরাপত্তা পরিষদ একই সঙ্গে লিবিয়ার ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে৻
এছাড়া কর্ণেল গাদ্দাফির পরিবারের সম্পদ জব্দ করা এবং লিবিয়ার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ তদন্তের জন্য বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৻
লিবিয়ার বিরুদ্ধে এই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এই প্রস্তাব পাশ করাতে কূটনীতিকদের যথেষ্ট বেগ পেতে হয়৻ বিশেষ করে লিবিয়ার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তদন্তের জন্য পাঠানোর বিষয়টি৻
কূটনৈতিক টানাপোড়েন
ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানী ছিল এর প্রস্তাবক, কিন্তু বিরোধিতা আসে চীনের দিক থেকে৻ কিন্তু শেষ পর্যন্ত সমঝোতা হয় এবং নিরাপত্তা পরিষদ সর্বসম্মতভাবে এটি অনুমোদন করে৻ এতে কর্ণেল গাদ্দাফি এবং তার পরিবারের সম্পদ জব্দ করার কথাও বলা হয়েছে, এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বিদেশ ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৻
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বলেন, তার লিবিয়ার শাসকদের কাছে একটি শক্ত বার্তা পাঠাতে চেয়েছেন৻
"লিবিয়ার শাসক গোষ্ঠী যা করছে তা সব ধরণের আন্তর্জাতিক রীতি নীতি এবং মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লংঘন৻ নিরাপত্তা পরিষদ যে প্রস্তাব পাশ করেছে, তা লিবিয়ার শাসকদের কাছে এমন একটি সুস্পষ্ট বার্তা পাঠাবে যে মৌলিক মানবাধিকারের লংঘন সহ্য করা হবে না এবং যারা এসব গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের জবাবদিহি করতে হবে৻"
নিরাপত্তা পরিষদের এই প্রস্তাবের পর ব্রিটেন ঘোষণা করেছে যে তারা কর্ণেল গাদ্দাফি এবং তার পরিবারকে কোন কূটনৈতিক সুরক্ষা দেবে না৻ এর মানে তাঁরা যদি এখন ব্রিটেনে আসেন, যে কোন অভিযোগে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা যাবে৻
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ওবামা প্রশাসনও একই রকমের পদক্ষেপ গ্রহনের ঘোষণা দেয়৻ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এসব পদক্ষেপকে লিবিয়ার অনেক মানুষ স্বাগত জানিয়েছে, কিন্তু বিক্ষোভকারীদের অনেকেই বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ নিজেদের স্বার্থেই এখন এই অবস্থান নিচ্ছে৻
বিক্ষোভকারীদের একজন মোহাম্মদ মোস্তফা ইসমায়েল বলেন, "আমরা যখন গাদ্দাফিকে ক্ষমতা থেকে প্রায় বিতাড়িত করে ফেলেছি, তখন ওবামা আর ইউরোপীয়ানরা আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে চাইছে৻ প্রেসিডেন্ট ওবামা আসলে কেবল যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপীয়ানদের স্বার্থ রক্ষা করতে চাইছেন৻"
নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন গাদ্দাফি
লিবিয়ার বেশিরভাগ অংশের ওপর যে কর্ণেল গাদ্দাফির এখন আর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই তা এখন স্পষ্ট৻ এমনকি রাজধানী ত্রিপলিরও কোন কোন শহরতলী এখন বিদ্রোহীদের দখলে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে৻ সেখানকার লোকজন রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে, যাতে গাদ্দাফির সাদা পোষাকধারী বাহিনী ঢুকতে না পারে৻
বিবিসির একজন সংবাদদাতা জন লাইন বলছেন, শেষ রক্ষার জন্য কর্ণেল গাদ্দাফি এখন তার সমর্থকদের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছেন লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য৻
ত্রিপলির ঠিক কতোটা অংশ এখন গাদ্দাফির বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে তাও স্পষ্ট নয়৻ জন লাইন বলছেন, হয়তো বেশিরভাগ অংশ এখনো তাদের দখলে, বা এমনো হতে পারে যে কর্ণেল গাদ্দাফির মূল ঘাঁটি এবং তার আশে-পাশের এলাকাতেই কেবল তাদের নিয়ন্ত্রন বজায় আছে৻
দলত্যাগী এক বিমান বাহিনী কমান্ডার দাবী করছেন, সামরিক বাহিনীর ৮৫ শতাংশই এখন বিদ্রোহীদের পক্ষে যোগ দিয়েছে৻ এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অবশিষ্ট সামরিক অধিনায়করা আর কত সময় কর্ণেল গাদ্দাফির পেছনে থাকবেন এবং তাকে রক্ষার মতো কতোটা শক্তি আসলে তাদের আছে৻
শরণার্থীদের স্রোত
এদিকে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা আজ জানিয়েছে, লিবিয়ার এই সংঘাত থেকে বাঁচতে প্রায় এক লক্ষ মানুষ গত এক সপ্তাহে সেখান থেকে পালিয়ে গেছে৻
জাতিসংঘ বলছে, এদের বেশিরভাগই তিউনিসিয়া আর মিশরের অভিবাসী শ্রমিক, কিন্তু বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান এবং সুদানের অনেক মানুষও এদের মধ্যে রয়েছে৻
জাতিসংঘ বলছে, এসব দেশের প্রায় ৭৫ জন মানুষ লিবিয়া আর মিশরের সীমান্তের মাঝখানে নো ম্যান্স ল্যান্ডে আটকে পড়েছে৻ জাতিসংঘ হুশিয়ারী দিয়েছে যে শরণার্থী পরিস্থিতি দ্রুত এক মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে৻
No comments:
Post a Comment