Follow palashbiswaskl on Twitter

ArundhatiRay speaks

PalahBiswas On Unique Identity No1.mpg

Unique Identity No2

Please send the LINK to your Addresslist and send me every update, event, development,documents and FEEDBACK . just mail to palashbiswaskl@gmail.com

Website templates

Jyoti basu is dead

Dr.B.R.Ambedkar

Wednesday, January 23, 2013

শুধু আমাদের গ্রাম নয়, বা শুধু উত্তরাখন্ড নয় বাঙ্গালি অবাঙ্গালি নির্বিশেষ সারা ভারতে নেতাজিকে নিয়ে আবেগ ও উদ্দীপনা ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদের মুল ভিত্তি, যা আমরা পশ্চিমবঙ্গে উপলব্ধি করতে পারি না। অথচ বাঙ্গলার ইতিহাস ভূগোল থেকে চিরদিনের জন্য বহিস্কৃত তফশিলি উদ্বাস্তুদের এই নেতাজী, রবীন্দ্রনাথ ও বিবেকানন্দই রক্ষাকবচ। তাঁদের কৃতিত্ব ব্যক্তিত্বই বিপদে আমাদের সর্বত্র রক্ষা করে, তাঁদের নাম মহিমায় উদ্ভাষিত আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে সবরকম সহযোগিতা করে স্থানীয মানুষ,ভারতের সর্বত্র। নতুবা ব্রাক্হ্মণ্যবাদী আধিপাত্য বাংলার বাইরেও আমাদের অস্তিত্ব বিলোপ করার কম চেষ্টা ত করেনি। প্রণব মুখার্জী এক হাতেই সারা দেশে কালো নাগরিকত্ব আইন ও ইউনিক আইডেন্টিটি নাম্বার প্রণয়ন করে উদ্বাস্তু বাঙ্গালিদের এ দেশের বাইরে ফেলে দেবার সবরকম ব্যবস্থাই করেছেন। তবূ আমরা বেঁচে বর্তে আছি ত হারানো ইতিহাস, ছিনিযে নেওয়া পরিচিতি নিয়ে। জেলা মুখ্যালয নয়, এমনকি রাজ্যের রাজধানী দেরাদুনেও নয় উত্তরাখন্ডের কেন্দ্রীয় নেতাজি জয়ন্তী পালন রাজ্য ঙওয়ার পর থেকেই উদ্বাস্তু কলোনী বাসন্তীপুরে। এই তথ্য প্রমাণিত করে যে বাঙ্গালির বেঁচে বর্তে থাকার জন্য নে

শুধু আমাদের গ্রাম নয়, বা শুধু উত্তরাখন্ড নয় বাঙ্গালি অবাঙ্গালি নির্বিশেষ সারা ভারতে নেতাজিকে নিয়ে আবেগ ও উদ্দীপনা ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদের মুল ভিত্তি, যা আমরা পশ্চিমবঙ্গে উপলব্ধি করতে পারি না।  অথচ বাঙ্গলার ইতিহাস ভূগোল থেকে চিরদিনের জন্য বহিস্কৃত তফশিলি উদ্বাস্তুদের এই নেতাজী, রবীন্দ্রনাথ  ও বিবেকানন্দই রক্ষাকবচ। তাঁদের কৃতিত্ব ব্যক্তিত্বই বিপদে আমাদের সর্বত্র রক্ষা করে, তাঁদের নাম মহিমায় উদ্ভাষিত আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে সবরকম সহযোগিতা করে স্থানীয মানুষ,ভারতের সর্বত্র।  নতুবা ব্রাক্হ্মণ্যবাদী আধিপাত্য বাংলার বাইরেও আমাদের অস্তিত্ব বিলোপ করার কম চেষ্টা ত করেনি। প্রণব মুখার্জী এক হাতেই সারা দেশে কালো নাগরিকত্ব আইন ও ইউনিক আইডেন্টিটি নাম্বার প্রণয়ন করে উদ্বাস্তু বাঙ্গালিদের এ দেশের বাইরে ফেলে দেবার সবরকম ব্যবস্থাই করেছেন। তবূ আমরা বেঁচে বর্তে আছি ত হারানো ইতিহাস, ছিনিযে নেওয়া পরিচিতি নিয়ে।  জেলা মুখ্যালয নয়, এমনকি রাজ্যের রাজধানী দেরাদুনেও নয় উত্তরাখন্ডের কেন্দ্রীয় নেতাজি জয়ন্তী পালন রাজ্য ঙওয়ার পর থেকেই উদ্বাস্তু কলোনী বাসন্তীপুরে।  এই তথ্য প্রমাণিত করে যে বাঙ্গালির বেঁচে বর্তে থাকার জন্য নেতাজির গুরুত্ব কি অপরিসীম।  এ কথা ভুললে চলবে না যে কোলকাতার মেয়র থাকা কালীন নিজের মেয়র পরিষদে তিনি পূর্ব বাংলার এত তফশিলি নেতা যোগেন্দ্রনাথকে শামিল করেছিলেন। দুর্বাগ্যবশতঃ যে আধিপাত্যবাদী রাজনীতির স্বার্থে কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার পর নেতাজিকে ইস্তীফা দিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন করতে হয়, যে ব্রাহ্মণ্যবাদী ষড়যন্ত্রে তাঁকে ভারত থেকে নির্বাসিত হতে হয়, যার খেসারত আজও এই উপমহাদেশের সমস্ত মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে যুদ্ধ গৃহযুধ্ধে প্রতিনিয়ত রক্তাক্ত হয়ে দিচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গে আজও সেই পরামপরা অব্যাহত। বাংলার বাইরে নেতাঝিকে যখন দলমত নির্বিশেষ সবাই স্মরণ করছেন সেকানে রাজনৈতিক স্বার্থে নেতাজিকে নিয়েই বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছি আমরা। 

পলাশ বিশ্বাস


উত্তুরে হাওয়ার দাপটে ফের নামল তাপমাত্রার পারদ। আজ শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকালের থেকে দুই ডিগ্রি কম। শীতের এই তৃতীয় ইনিংসে শীতের সপ্তাহের শেষ দিকে পারদ নামতে আরও নামতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। 

এর জেরে রাজ্যজুড়ে শীতের অনুভূতি তীব্র হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তবে দিনের তাপমাত্রা খুব বেশী না কমার কারণে দিনের বেলায় শীতের অনুভূতি তেমন থাকবে না। রাতের দিকে তীব্র হবে শীতের অনুভূতি।  


নেতাজির ১১৭তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে উত্তরাখন্ডে আমাদের গ্রামে রাজ্যের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান হচ্ছে বহুবছর যাবত
। প্রচন্ড শীতের মধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার স্কুল থেকে আগত ছাত্র ছাত্রীদের প্রভাতফেরীতে গ্রামের ঘুম ভাঙ্গে। এবার শীত অনেক বেশী, উত্তরাখন্ড ত বটেই, লাখনৌ, এলাহাবাদ, মিরাট, বেরেলীতে তাপমান শূন্য বা তারও নীচে। গ্রামের বাড়িতে এটেজ্ড বাথরুমের চল নেই।  কিছুদিন আগে বাড়িতে ভর সন্ধ্যায় আমাদের মেজ বৌমা বাথরূমের রাস্তায় ঠান্ডায় ফ্রিজ হয়ে গিয়েছিল। তখনও সবাই জেগে,তাই রক্ষা। শীতে কিন্তু নেতাজিকে শ্রদ্ধা জানানোর কর্তব্যে কোনও গাফিলতি হওয়ার কথা নেই।  শুধু আমাদের গ্রাম নয়, বা শুধু উত্তরাখন্ড নয় বাঙ্গালি অবাঙ্গালি নির্বিশেষ সারা ভারতে নেতাজিকে নিয়ে আবেগ ও উদ্দীপনা ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদের মুল ভিত্তি, যা আমরা পশ্চিমবঙ্গে উপলব্ধি করতে পারি না।  অথচ বাঙ্গলার ইতিহাস ভূগোল থেকে চিরদিনের জন্য বহিস্কৃত তফশিলি উদ্বাস্তুদের এই নেতাজী, রবীন্দ্রনাথ  ও বিবেকানন্দই রক্ষাকবচ। তাঁদের কৃতিত্ব ব্যক্তিত্বই বিপদে আমাদের সর্বত্র রক্ষা করে, তাঁদের নাম মহিমায় উদ্ভাষিত আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে সবরকম সহযোগিতা করে স্থানীয মানুষ,ভারতের সর্বত্র।  নতুবা ব্রাক্হ্মণ্যবাদী আধিপাত্য বাংলার বাইরেও আমাদের অস্তিত্ব বিলোপ করার কম চেষ্টা ত করেনি। প্রণব মুখার্জী এক হাতেই সারা দেশে কালো নাগরিকত্ব আইন ও ইউনিক আইডেন্টিটি নাম্বার প্রণয়ন করে উদ্বাস্তু বাঙ্গালিদের এ দেশের বাইরে ফেলে দেবার সবরকম ব্যবস্থাই করেছেন। তবূ আমরা বেঁচে বর্তে আছি ত হারানো ইতিহাস, ছিনিযে নেওয়া পরিচিতি নিয়ে।  জেলা মুখ্যালয নয়, এমনকি রাজ্যের রাজধানী দেরাদুনেও নয় উত্তরাখন্ডের কেন্দ্রীয় নেতাজি জয়ন্তী পালন রাজ্য ঙওয়ার পর থেকেই উদ্বাস্তু কলোনী বাসন্তীপুরে।  এই তথ্য প্রমাণিত করে যে বাঙ্গালির বেঁচে বর্তে থাকার জন্য নেতাজির গুরুত্ব কি অপরিসীম।  এ কথা ভুললে চলবে না যে কোলকাতার মেয়র থাকা কালীন নিজের মেয়র পরিষদে তিনি পূর্ব বাংলার এত তফশিলি নেতা যোগেন্দ্রনাথকে শামিল করেছিলেন। দুর্বাগ্যবশতঃ যে আধিপাত্যবাদী রাজনীতির স্বার্থে কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার পর নেতাজিকে ইস্তীফা দিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন করতে হয়, যে ব্রাহ্মণ্যবাদী ষড়যন্ত্রে তাঁকে ভারত থেকে নির্বাসিত হতে হয়, যার খেসারত আজও এই উপমহাদেশের সমস্ত মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে যুদ্ধ গৃহযুধ্ধে প্রতিনিয়ত রক্তাক্ত হয়ে দিচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গে আজও সেই পরামপরা অব্যাহত। বাংলার বাইরে নেতাঝিকে যখন দলমত নির্বিশেষ সবাই স্মরণ করছেন সেকানে রাজনৈতিক স্বার্থে নেতাজিকে নিয়েই বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছি আমরা। 

আজ সুভাষ চন্দ্র বসুর ১১৭তম জন্মজয়ন্তী। দেশ জুড়ে নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হচ্ছে নেতাজিকে। নেতাজি ভবনে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করবেন রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী। উপস্থিত থাকবেন নেতাজি কন্যা অনিতা পাফ। নেতাজির জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বেলতলা গার্লস হাইস্কুল থেকে একটি পদযাত্রা বেরোবে।

 তাতে অংশ নেবেন মুখ্যমন্ত্রী। ফরওয়ার্ড ব্লকের তরফে রেডরোডে পালন করা হবে নেতাজির জন্মজয়ন্তী। থাকবেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ।  প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।এমনটাই ঠিক ছিল।কিন্তু ছন্দপতন হয়েই গেল।


নেতাজির ১১৭তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানকে ঘিরে তৈরি হল বিতর্ক। কেন্দ্রীয় নেতাজি জয়ন্তী কমিটির তরফে আজ রেড রোডে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। 

তবে প্রতিবছর মূর্তিতে মাল্যদানের জন্য মই বা মঞ্চের আয়োজন করে পূর্ত দফতর। এই বছর কোনও মই বা মঞ্চের আয়োজন না থাকায় নেতাজির মূর্তিতে মালা দিতে পারেননি কেউই। অগত্যা মূর্তির পাদদেশে মালা রেখে যান শ্রদ্ধা জানাতে আসা অগনিত মানুষ। 

গতবছর এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনু্ষ্ঠানের আয়োজনেও কোনওরকম ত্রুটি ছিলনা। তবে এইবছর অনুষ্ঠানে রাজ্যের কয়েকজন মন্ত্রী উপস্থিত থাকলেও, নেই মুখ্যমন্ত্রী।
 

ইতিমধ্যেই সরকারের তরফে সাফাই দিয়েছেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তবে ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষের অভিযোগ অনুষ্ঠানে খামতি থাকায় অপমান করা হয়েছে নেতাজিকে।


কয়েকদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, এবার তিনি নেতাজি ভবনে সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিবস পালন করবেন৷ বামেরা শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করবে রেড রোডে৷ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেছিলেন, নেতাজিকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন ঘিরে গত বছর যে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা এড়াতেই মুখ্যমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ কিন্তু, শেষ পর্যন্ত তাতেও এড়ানো গেল না বিতর্ক৷ নেতাজির ১১৭তম জন্মদিনে দেখা দিল নয়া বিতর্ক৷


নেতাজি ভবনে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন ঘোষণা করেন, কোদালিয়ায় সুভাষচন্দ্র বসুর পৈতৃক ভিটে রাজ্য সরকার হেরিটেজ হিসেবে সংরক্ষণ করবে৷ সংলগ্ন জমিতে নেতাজির একটি স্মৃতি-স্মারক তৈরি করা হবে, যেখানে মূলত তুলে ধরা হবে নেতাজির জীবন সংগ্রাম৷ 
যদিও, ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা অশোক ঘোষ সাফ জানিয়েছেন, এরকম প্রতিশ্রুতি আগেও দেওয়া হয়েছে৷ স্মৃতি-স্মারক তাঁরা হতে দেবেন না৷তিনি বলেছেন, এর আগে প্রাক্তন মুথ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়ও কার্জন পার্কে মনুমেন্ট গড়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তত্কালীন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা হেমন্ত বসুকে। সেই সময়ও তাঁরা এই প্রস্তাবে রাজি হননি। নেতাজির মৃত্যু রহস্য যেখানে এখনও উদ্ঘাটিত হয়নি দাবি করে অশোক ঘোষ জানিয়ে দেন তাঁরা মনুমেন্ট গড়ার প্রস্তাবের বিরোধিতা করবেন। 
মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিকে কটাক্ষ করেছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র৷ তিনি বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য যথাযথভাবে না জানা পর্যন্ত এ ব্যাপারে তিনি কোনও প্রতিক্রিয়া জানাবেন না।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন ঘোষণা করেন, আগামী বছর থেকে নেতাজির জন্মদিবসে হাজরা থেকে প্রভাতফেরির আয়োজন করা হবে৷ আরও বেশি মানুষ যাতে জমায়েত হতে পারেন, সেজন্য নেতাজি ভবন চত্বরে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে৷ তবে নেতাজি মনুমেন্ট-বিতর্ক এখন কোনদিকে গড়ায়, রাজনৈতিক মহলের নজর সেদিকেই৷ 

http://abpananda.newsbullet.in/state/34/32830

নেতাজির স্মৃতিসৌধ গড়া নিয়েও বিতর্কে জড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী। সুভাষচন্দ্রের জন্মভিটে কোদালিয়ায় স্মতিসৌধ গড়বে রাজ্য সরকার। বুধবার নেতাজি ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ। তাঁর স্পষ্ট ঘোষণা, "মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা থাকায় নেতাজির নামাঙ্কিত স্মৃতিসৌধ মেনে নেবেন না বাংলার মানুষ।" 

সোমবার ক্যানিংয়ে সভা সেরে ফেরার পথে নেতাজি সুভাষচন্দ্রের জন্মভিটে কোদালিয়ায় গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পরদিনই ওই বাড়িটিতে গিয়েছিলেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা। বুধবার নেতাজির ১৭৭তম জন্মদিবসে নেতাজি ভবনে আয়োজিত সরকারি অনুষ্ঠান মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, আগামী বছরেই কোদালিয়ায়  জন্মভিটেতে নেতাজির স্মৃতি সৌধ তৈরি করবে রাজ্য সরকার। 
 
মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরই শুরু হয়ে যায় বিতর্ক। রেড রোডে নেতাজিমূর্তিতে মাল্যদান পর্ব শেষ হওয়ার পরপরই স্মৃতিসৌধ নির্মাণ কর্মসূচির বিরোধিতা করা হবে বলে জানিয়ে দেন প্রবীণ ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা অশোক ঘোষ।
 
নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের ঘোষিত অবস্থান জানা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। এরপরেও তিনি কীভাবে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কর্মসূচি ঘোষণা করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে নানা মহলে। বুধবার নেতাজির ১৭৭তম জন্মদিবস উপলক্ষ্যে একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সকালে শক্তিসংঘ ক্লাবের তরফে বেলতলা গার্লস হাইস্কুল থেকে একটি পদযাত্রায়  অংশ নেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর রাজ্য সরকারের উদ্যোগে নেতাজি ভবনে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। সেখানে নেতাজির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী। উপস্থিত ছিলেন নেতাজি কন্যা অনিতা পাফও। মুখ্যমন্ত্রী জানান আগামী বছরও নেতাজি ভবনেই হবে মূল সরকারি অনুষ্ঠান।  

http://zeenews.india.com/bengali/nation/mamata-wants-netaji-s-memorial-ashok-protested_10907.html


মঙ্গলবার, 26 জুন 2012 16:20

'সুভাষ বসুর বিমান দুর্ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছেন প্রণব মুখার্জি!'

'সুভাষ বসুর বিমান দুর্ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছেন প্রণব মুখার্জি!'
২৬ জুন (রেডিও তেহরান) : ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সেনানি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনাবলী 'ধামাচাপা' দেয়ার প্রচেষ্টায় সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন অর্থমন্ত্রী এবং ইউপিএ জোটের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী প্রণব মুখার্জি। গান্ধী-নেহেরুর কথিত অহিংস আন্দোলনকে গুরুত্ব না দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সুযোগকে গ্রহণ করে 'আজাদ হিন্দ ফৌজ' নামের একটি বাহিনী গঠন করেন সুভাষ বসু এবং তিনি  ব্রিটিশবিরোধী প্রত্যক্ষ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এ কারণে কংগ্রেসপন্থী নেতাদের কাছে সুভাস বসু কখনই গ্রহণীয় হয়ে ওঠেননি। ১৯৪৫ সালে তাইওয়ানের কাছে এক রহস্যজনক বিমান দুর্ঘটনায় সুভাষ বোস নিহত হয়েছেন বলে ভারত সরকারিভাবে বিশ্বাস করে। কিন্তু, এ ধারণা নাকচ করে দেয়ার মতো পর্যাপ্ত আলামত থাকা সত্ত্বেও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময় প্রণব মুখার্জি তার করেননি। বরং উল্টো তিনি এ কথা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করেছেন। 'ইন্ডিয়াজ বিগেস্ট কভার-আপ' নামের একটি বইয়ে এসব কথা তুলে ধরেছেন ভারতের প্রবীণ সাংবাদিক অঞ্জু ধর। বিমান দুর্ঘটনার ৬৫ বছর পর গোপন নথি হিসেবে বিবেচিত কিছু রেকর্ডের ভিত্তিতে এ বই লেখা হয়েছে। আর ব্রিটিশ, আমেরিকা এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এসব গোপন নথিপত্র প্রকাশ করে। বইটি আগামী মাসে প্রকাশ হওয়ার কথা রয়েছে। অঞ্জু ধর তার বইয়ে ১৯৯৬ সালের একটি ঘটনা তুলে ধরেছেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম সচিব সে সময় গোপন একটি নোট দেন। এ নোটে তিনি জানান, রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি'র আর্কাইভে সুভাষ বসু সম্পর্কে কোনো কাগজপত্র আছে কিনা তা খুঁজে দেখার জন্য কূটনৈতিক চ্যানেলে রাশিয়ান ফেডারেশনকে অনুরোধ জানাতে পারে ভারত। এ নোটটি দেখার পর  ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সালমান হায়দারকে ওই যুগ্ম সচিবের সঙ্গে আলাপ করার নির্দেশ দেন প্রণব। আলাপের পর ওই যুগ্ম সচিবের মনোভাব পুরোপুরি বদলে যায়। তিনি তখন নোট দেন যে, কেজিবি'র আর্কাইভ নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি করা হলে তাতে হিতে বিপরীত হবে এবং রুশ-ভারত সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অঞ্জু ধর লিখেছেন, তাইওয়ানে সুভাষ বসু মারা গেছেন বলে যে কথা প্রচলিত ছিল ভারতে তা সবচেয়ে বেশি বিশ্বাসকারীদের দলে ছিলেন প্রণব মুখার্জি। ১৯৯৪ সালে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোপন চিঠিতে মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য জাপান সরকারের কাছ থেকে সুভাষ বসুর ডেথ সাটিফিকেট চাওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু, জাপানি কাগজপত্র ভূয়া হয় বলে উল্লেখ করে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা নাকচ করে দেয়। এ ঘটনার এক দশক পরে সুভাষ বসুর মৃত্যুর বিষয়ে বিচারপতি মুখার্জি কমিশনে যে সাতজন সাক্ষ্য দিয়েছিলেন তাদের একজন ছিলেন প্রণব মুখার্জি। ২০০৪ সালে মুখার্জি আবার ক্ষমতায় ফিরে আসেন। তখন মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের নিয়ে ওই কমিশনের প্রতিবেদন যাচাই করতে বসেন তিনি। ওই কমিশন নেতাজি সুভাষ বোসের রহস্যজনক অন্তর্ধানের বিষয়ে প্রতিবেদনে যে উপসংহার দেন তা নাকচ করে দেয় ভারতের মন্ত্রিপরিষদ।      লেখক অঞ্জু ধর আরো মনে করেন, "তাইওয়ানের রহস্যজনক বিমান দুঘর্টনার পর সুভাষ বসু হয়তো রাশিয়ায় চলে গিয়েছিলেন। ১৯৪৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ভারত সরকার এ বিষয়ে রুশ সরকারকে কিছুই জিজ্ঞাসা করার সামান্য গরজ পর্যন্ত দেখায়নি।" বিমান দুঘর্টনায় মারা না গেলে সুভাষ বসুর ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কি ঘটেছে?  এমন প্রশ্নের জবাবে অঞ্জু ধর লিখেছেন, সুভাষ বসু ফয়জাবাদে মারা গেছেন বলে কিছু কিছু আলামত থেকে মনে হয়। ভারত সরকার এ সংক্রান্ত সব গোপন কাগজপত্র বিশেষ করে গোয়েন্দা দফতরগুলো কাছে থাকা কাগজপত্র প্রকাশ না করা পর্যন্ত এ বিষয়ে চূড়ান্তভাবে কিছু বলা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।#

তেহরান রেডিও/সমর/এসআই/২৬.১২ {jcomments on}

http://bangla.irib.ir/2010-04-21-08-29-09/2010-04-21-08-29-54/item/38170-%E2%80%98%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B7-%E0%A6%AC%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%A6%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%98%E0%A6%9F%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A6%BE-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%9B%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A3%E0%A6%AC-%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9C%E0%A6%BF-%E2%80%99

নেতাজি সুভাষ ও তাঁর আজাদ হিন্দ ফৌজ

ফাস্টনিউজ : নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু
বিশ শতকের গোড়ার দিকে কোনো কোনো চরমপন্থী বিপ্লবী দেশের বাইরে গিয়ে সশস্ত্র বাহিনী গঠন করে ভারতকে ব্রিটিশদের হাত থেকে উদ্ধার করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাঁদেরই একজন ছিলেন রাসবিহারী বসু। ১৯১৫ সালে রাসবিহারী চলে যান জাপানে। সেখান থেকে প্রবাসী ভারতীয়দের সংগঠিত করে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে একটি সশস্ত্র সামরিক বাহিনী স্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন। ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে সেই সময় অসংখ্য ভারতীয় জওয়ান চাকরি করতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় জাপানের সঙ্গে ব্রিটিশদের যুদ্ধ বাধলে এদের একটি বিরাট অংশ জাপানিদের হাতে বন্দী হন।

১৯৪২ সালের মার্চ মাসে জাপানের রাজধানী টোকিয়োতে ভারতীয়দের একটি সম্মেলনে গঠিত হয় 'ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেনডেন্স লিগ' বা 'ভারতীয় স্বাধীনতা লিগ'। ১৯৪২ সালে ব্যাংককে আরও একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনেই রাসবিহারী বসুকে লিগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয় এবং আজাদ হিন্দ বাহিনী (ইংরেজিতে ইন্ডিয়ান ন্যাশানাল আর্মি বা আইএনএ) নামে একটি সামরিক বাহিনী গডে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জাপানিদের হাতে যুদ্ধবন্দী ৪০,০০০ ভারতীয় সেনা নিয়ে গড়ে ওঠে আজাদ হিন্দ ফৌজ। ক্যাপ্টেন মোহন সিং ফৌজের অধিনায়ক নিযুক্ত হন। উক্ত সম্মেলনেই সুভাষচন্দ্র বসুকে আমন্ত্রণ জানানো হয় আজাদ হিন্দ ফৌজের ভার স্বহস্তে গ্রহণ করার জন্য। সুভাষচন্দ্র টোকিয়োতে এসে পৌঁছান ১৯৪৩ সালের জুন মাসে। পরের মাসে সিঙ্গাপুরে এসে ফৌজে যোগ দেন। রাসবিহারী বসু সুভাষচন্দ্রের হাতে আজাদ হিন্দ ফৌজের ভার তুলে দেন। বাহিনী সুভাষচন্দ্রকে অভিবাদন জানায় 'নেতাজি' নামে। সিঙ্গাপুরেই নেতাজি স্থাপন করেন আরজি-হুকুমত-এ-আজাদ হিন্দ বা অস্থায়ী আজাদ হিন্দ সরকারের। কংগ্রেসের ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা গৃহীত হয় ভারতের জাতীয় পতাকা হিসেবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে' গানটি নির্বাচিত হয় ভারতের জাতীয় সংগীত হিসেবে। নেতাজি আজাদ হিন্দ ফৌজের দুটি প্রধান কার্যালয় স্থাপন করেন – একটি রেঙ্গুনে, অপরটি সিঙ্গাপুরে। জাপান সেনাবাহিনী ব্রিটিশদের যুদ্ধে হারিয়ে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অধিকার ব্রিটিশদের হাত থেকে কেড়ে নিয়েছিল। ১৯৪৩ সালের নভেম্বরে এই দ্বীপাঞ্চল জাপানি কর্তৃপক্ষ তুলে দেয় আজাদ হিন্দ সরকারের নামে। নেতাজি স্বয়ং আসেন আন্দামনে। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের নামকরণ করেন 'শহীদ ও স্বরাজ দ্বীপপুঞ্জ'। এরপরই শুরু হয় আজাদ হিন্দ ফৌজের যুদ্ধাভিযান।


ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আজাদ হিন্দ বাহিনী প্রথমে তিনটি ব্রিগেড গঠন করেছিল – গান্ধী ব্রিগেড, আজাদ ব্রিগেড ও নেহেরু ব্রিগেড। পরে সুভাষ ব্রিগেড ও রানি ঝাঁসি ব্রিগেড নামে আরও দুটি ব্রিগেড গড়ে তোলা হয়। সুভাষ ব্রিগেড ছিল বাহিনীর বাছাই করা সেনাদের নিয়ে গঠিত। নেতাজির অনিচ্ছাসত্ত্বেও এই ব্রিগেডের সদস্যরা ব্রিগেডের নামকরণ তাঁর নামে করেছিলেন। রানি ঝাঁসি ব্রিগেড ছিল পুরোপুরি মহিলা-সেনাদের নিয়ে গঠিত একটি ব্রিগেড। প্রবাসী ভারতীয়রা ফৌজকে অর্থ ও রসদ দুইই জুগিয়েছিল দু-হাত ভরে। আজাদ হিন্দ ফৌজের স্লোগান ছিল 'জয় হিন্দ' ও 'দিল্লি চলো'। নেতাজি ডাক দিলেন, 'তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো।'

জাপানি বাহিনীর সঙ্গে সমান তালে যুদ্ধ চালিয়ে আজাদ হিন্দ বাহিনী পৌঁছে গেল ব্রহ্মদেশ-ভারত সীমান্ত অঞ্চলে। সেদিনটি ছিল ১৯৪৪ সালের ১৮ মার্চ। মুক্ত ভারতের মাটিতে প্রথমবারের মতো উড়ল জাতীয় পতাকা। যদিও ইম্ফলের যুদ্ধে পিছু হঠতে হল আজাদ হিন্দ বাহিনীকে। এরপরই যুদ্ধে জাপানিদের পরাজয় তাদের জয়ের আশা শেষ হয়ে গেল।

১৯৪৫ সালের মার্চ মাসে ব্রিটিশদের আক্রমণে পিছু হঠলেন নেতাজিও। রেঙ্গুন থেকে চলে এলেন সিঙ্গাপুরে, সেখান থেকে ব্যাংককে। এই বছরই মার্চ মাসে খবর পাওয়া গেল একটি বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে নেতাজির। প্রকৃত সত্য অনাবিষ্কৃতই থেকে গেল।


১৯৪৩ সালে টোকিও সম্মেলনে সুভাষচন্দ্র বক্তৃতা দিচ্ছেন।
এই হল নেতাজি সুভাষ ও আজাদ হিন্দ ফৌজের বীরত্বগাথার সংক্ষিপ্ত বিবরণ। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে বাধ্য, নেতাজি এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানের নায়ক। কিন্তু কোনো বিপ্লব বা কোনো অভ্যুত্থানই সম্পূর্ণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় না, যদি সেই বিপ্লব বা অভ্যুত্থান ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থের বদলে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে পরিচালিত হয়। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু নিছক একজন বিপ্লবী নন, তিনি ছিলেন এক দূরদ্রষ্টা রাষ্ট্রনেতা। পৃথিবীর ইতিহাসে রাষ্ট্রবিপ্লব আমরা অনেক দেখেছি ও দেখছি। কিন্তু ক'জন নেতা বিপ্লবোত্তর-উদ্ভুত সমস্যার অনুপুঙ্খ অনুধ্যানের মাধ্যমে অগ্রসর হয়েছেন বিপ্লবের পথে? ক'জন নেতাই বা নিজের স্বার্থকে সম্পূর্ণভাবে বলি দিয়ে দেশের স্বার্থকেই জীবনের একমাত্র ব্রত করে তুলেছেন?

সুভাষচন্দ্রের একটি স্বপ্নের ভারত ছিল। কলকাতায় মহাজাতি সদনের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে একদিন তিনি বলেছিলেন, "'যে স্বপ্নে আমরা বিভোর হয়েছি তা' শুধু স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন নয়। আমরা চাই ন্যায় ও সাম্যের উপর প্রতিষ্ঠিত এক স্বাধীন রাষ্ট্র – আমরা চাই এক নূতন সমাজ ও এক নূতন রাষ্ট্র, যার মধ্যে মূর্ত হয়ে উঠবে মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ ও পবিত্রতম আদর্শগুলি।" আবার শুধুমাত্র নামসর্বস্ব রাজনৈতিক স্বাধীনতার মোহও তাঁর ছিল না। তিনি বিলক্ষণ জানতেন, অর্থনৈতিক স্বাধীনতাহীন তথাকথিত স্বাধীন রাষ্ট্র বিদেশির হাতের পুতুল ছাড়া কিছুই না। জাপান বা জার্মানির সাহায্য নেওয়ার সময়ও তাঁকে সদা সতর্ক থাকতে হয়েছিল, যাতে সেই সাহায্যের বিনিময়ে একদিন না ভারতের মাথা বিকিয়ে যায়। আজাদ হিন্দ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে জাপানের আর্থিক ঋণ শোধের উদ্যোগ সেই সতর্ক মনোভাবেরই বার্তাবহ। ভারতীয় অর্থনীতিতে সুভাষচন্দ্রের শ্রেষ্ঠ দান পরিকল্পনার অর্থনৈতিক পরিকল্পনা। সোভিয়েত ধাঁচে ভারতে পরিকল্পনার অর্থনীতি প্রকৃতপক্ষে সুভাষচন্দ্রেরই মস্তিষ্কপ্রসূত। এই জন্য গান্ধীবাদী অর্থনীতিদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস থেকে তাঁকে বহিষ্কারও করা হয়। কিন্তু তাঁর পথই যে সঠিক ছিল, স্বাধীন ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাস তার জ্বলন্ত সাক্ষী।

যুদ্ধের ময়দানের সুভাষচন্দ্রের ব্যর্থতার কয়েকটি নির্দিষ্ট কারণ ছিল। আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনানায়ক শাহনওয়াজ খান ফৌজের পরাজয়ের জন্য জাপানিদের দায়ী করেছেন। তাদের অহেতুক কালক্ষেপ এবং কিছুক্ষেত্রে ফৌজের প্রতি অবান্তর অনাস্থা ফৌজের গতিকে ব্যাহত করেছিল। জাপানের সহায়তা মুক্তহস্তের সহায়তা ছিল না, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল বিশ্বযুদ্ধের শেষভাগে জাপানের পশ্চাদপসারণ। উপরন্তু কংগ্রেস ও কমিউনিস্টরা কেউই নেতাজির নীতিকে সমর্থন করেননি। কমিউনিস্টদের নেতাজি-বিরোধিতা তো রীতিমতো অশ্লীলতার পর্যায়ে পর্যবসিত হয়েছিল – আজও সেকথা বহুআলোচিত। কংগ্রেসও নেতাজির বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্রিটিশদেরই নৈতিক সমর্থন জোগায়। তবে সবচেয়ে বড়ো কারণ ছিল, সুভাষচন্দ্র সম্পর্কে ব্রিটিশ বাহিনীর ক্রমাগত অপপ্রচার, সংবাদমাধ্যমের উপর কঠোর নজরদারি ও নিষেধাজ্ঞার ফলে নেতাজি ও তাঁর বাহিনীর আদর্শ ও কার্যকলাপ সম্পর্কে দেশের মানুষ সম্পূর্ণ অবহিত হতে পারেননি। যুদ্ধোদ্ভুত দেশের করুণ পরিস্থিতিও ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তুমুল উদ্যোগে গণসংগ্রাম পরিচালনার প্রতিকূলে ছিল।

কিন্তু সুভাষচন্দ্রের আপাত-পরাজয় যে আদৌ পরাজয় না তা টের পাওয়া যায় কিছুদিন পরেই। নেতাজির অন্তর্ধানের পর ('নেতাজির মৃত্যু' শব্দবন্ধটি বহু মিথ্যা ও রহস্যের দ্বারা আবৃত, তাই সেই শব্দবন্ধটি পরিহার করলাম) ব্রিটিশ সরকার যুদ্ধবন্দী আজাদ হিন্দ ফৌজ সেনানীদের বিচারের সভা বসায় দিল্লির লালকেল্লায়। শাহনওয়াজ খান, গুরুবকস সিং ধিলন, প্রেম সেহগল প্রমুখের বিরুদ্ধে আনা হয় রাজদ্রোহিতার অভিযোগ। কিন্তু জনগণের মধ্যে থেকে তাঁদের মুক্তির দাবি ওঠে। ১৯৪৫ সালের অক্টোবর মাসে ১৬০টি রাজনৈতিক সভা অনুষ্ঠিত হয় আজাদ হিন্দ বাহিনীর সমর্থনে। কংগ্রেস কতকটা বাধ্য হয়েই গঠন করে আইএনএ ডিফেন্স কমিটি। জওহরলাল নেহেরু, বল্লভভাই দেশাই, তেজবাহাদুর সপ্রু, কৈলাসনাথ কাটজু ও আসফ আলির মতো নেতাদের এগিয়ে আসতে হয় বাহিনীর সমর্থনে। যদিও ঐতিহাসিক নিমাইসাধন বসু মনে করেন, কংগ্রেস নেতাদের এহেন আচরণ ছিল নেতাজির জনপ্রিয়তাকে ভাঙিয়ে নির্বাচনী ফায়দা লোটার অভিসন্ধিপ্রসূত। সে যাই হোক, ব্রিটিশ সরকার আজাদ হিন্দ ফৌজের সদস্যদের দোষী সাব্যস্ত করলেও, শেষ পর্যন্ত তাদের প্রতি নরম হতে বাধ্য হয়।  আর নেতাজির কীর্তিকাহিনির যথাযথ খবর ছড়িয়ে পড়তেই ভারতে অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়। কংগ্রেসের নিরামিষ আন্দোলন তিন দশকের প্রচেষ্টায় যা করতে পারেনি, সুভাষচন্দ্রের তথাকথিত ব্যর্থ সামরিক অভিযান কয়েক মাসের মধ্যে তা করে দেখায়। ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর তিন শাখাতেই ভারতীয় জওয়ানদের মধ্যে অভূতপূর্ব অসন্তোষ দানা বাঁধে। ১৯৪৬ সালে বোম্বাইয়ের নৌবিদ্রোহ প্রমাণ করে দেয়, জন-অসন্তোষ এবার এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখান থেকে তাকে ঠেকানোর উপায় নেই। ১৮৫৭ সালের পর ব্রিটিশ ভারতীয় বাহিনীর হাতে এত বড়ো প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়নি ব্রিটিশদের। একথা বললে আদৌ অত্যুক্তি করা হবে না যে, স্বাধীনতার জন্য অসূর্যাস্ত-পশ্যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের উপর যদি প্রকৃত কোনো চাপ কেউ দিয়ে থাকেন তবে তিনি একমাত্র নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।

সুভাষচন্দ্র বিরুদ্ধে কারো কারো অভিযোগ হিটলার ও মুসোলিনীর মতো নেতার সাহায্য গ্রহণ। একথা মনে রাখতে হবে, নেতাজি 'শত্রুর শত্রু পরম মিত্র' নীতির বশেই তাদের সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন। সেই অবস্থায় নেতাজির সামনে বিকল্পও কিছু ছিল না। কিন্তু সাহায্য প্রার্থনা করলেও নেতাজি নিজে কোনোদিন ফ্যাসিবাদী মনোভাবের পরিচয় দেননি। হিটলারের রাশিয়া আক্রমণের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন সুভাষ। পছিলেন নাৎসীদের রোষনজরেও। কিন্তু ইতালি, জার্মানি বা জাপান কারোরই হাতের পুতুলে পরিণত হননি। তাঁর একমাত্র কারণ সুভাষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দূরদর্শিতা।

রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, "সুভাষচন্দ্র, বাঙালি কবি আমি, বাংলাদেশের হয়ে তোমাকে দেশনায়কের পদে বরণ করি। গীতায় বলেন, সুকৃতের রক্ষা ও দুষ্কৃতের বিনাশের জন্য রক্ষাকর্তা বারংবার আবির্ভূত হন। দুর্গতির জালে রাষ্ট্র যখন জড়িত হয় তখনই পীড়িত দেশের অন্তর্বেদনার প্রেরণায় আবির্ভূত হয় দেশের দেশনায়ক।" কবিগুরুর উচ্চারণ মিথ্যা হয়নি। তাঁর চরম বিরোধীও একদিন তাঁকে সেই স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালের ২৩ জানুয়ারি গান্ধীজি তাঁকে 'প্রথম ভারতীয় ও শেষ ভারতীয়' বলে বর্ণনা করেন। আর ব্রিটিশ সরকার? ব্রিটিশ সরকারের একটি গোপন রিপোর্টে লেখা হয়েছিল, "সুভাষচন্দ্র বসু হয়তো মারা গিয়েছেন, কিন্তু তাঁর কাজের অনেকটাই আজও বেঁচে আছে।"


২৫.১০.২০১২ / ফাস্টনিউজ / বিএম / ১৭ : ১০


ধর্মতলায় নেতাজির মূর্তির পাদদেশে মঞ্চ বাঁধার কাজ শুরু করল ফরওয়ার্ড ব্লক। এদিন  মঞ্চ বাঁধার সময়  হাজির ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ। তাঁর ক্ষোভ, এই প্রথম নেতাজির জন্মদিনে নেতাজি মূর্তির পাদদেশে কোনও সরকারি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হল না। এমনকী মূর্তির পাদদেশে যে অনুষ্ঠান  হবে না সেবিষয়েও সরকার ফরওয়ার্ড ব্লককে কিছুই জানায়নি বলেও অভিযোগ করেছেন অশোক ঘোষ। 

ঊনিশশো সত্তর সাল থেকে প্রতিবারই তেইশে জানুয়ারি ধর্মতলায় নেতাজি মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানানোর অনুষ্ঠান করত রাজ্য সরকার । কিন্তু গতবার তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরই মাল্যদান নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। নেতাজি মূর্তিতে কে আগে মালা দেবে তাই নিয়ে সরকার ও বিরোধী পক্ষের চলে চাপানউতোর।  এবার পুরোপুরি  নেতাজির মূর্তির পাদদেশে অনুষ্ঠানই বাতিল করে দেয় সরকার। ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষের অভিযোগ, অনুষ্ঠান বাতিলের কথা আগে থেকে সরকার জানায়নি। এমনকী বিষয়টি নিয়ে  বারবার চিঠি দেওয়া হলেও তারও কোনও প্রত্যুত্তর আসেনি। 



ফরওয়ার্ড ব্লকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তারা নেতাজির জন্মত্‍সব ওই জায়গাতেই পালন করবে। এত কম সময়ের মধ্যে মঞ্চ বাঁধার কাজ শেষ করতে মঙ্গলবার নিজেই ডেকরেটর নিয়ে হাজির ছিলেন অশোক ঘোষ, সঙ্গে ছিলেন  ফরওয়ার্ড ব্লকের অন্য কর্মীরাও। 


http://zeenews.india.com/bengali/kolkata/netaji-neglected-on-birthday_10881.html


২৫ শে জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ২:২৩

নেতাজির দেশপ্রেম নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে সিপিএম অতীতে ভুল করেছিল বলে খোলাখুলি স্বীকার করলেন দলের শীর্ষ নেতা ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বছর দশেক আগে দলের সদ্য প্রয়াত 'কিংবদন্তি' নেতা জ্যোতি বসু প্রথম স্বীকার করেছিলেন, নেতাজির মূল্যায়নে তাদের বড় ভুল হয়ে গিয়েছিল। এদিন মুখ্যমন্ত্রী পূর্বসূরি শীর্ষ নেতার সুরে জনগণের সামনে শুধু ভুল স্বীকারই করেননি, তিনি এবং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু নেতাজির পার্টির তথা বামফ্রন্টের শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতৃত্বের সঙ্গে এক মঞ্চ থেকে ২৩ জানুয়ারি দিনটি 'দেশপ্রেম দিবস' ঘোষণার দাবিতেও সরব হন। খবর কলকাতার বর্তমান পত্রিকার।

শনিবার সুভাষচন্দ্রের ১১৪তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে রেড রোডে নেতাজির মূর্তির পাদদেশে রাজ্য সরকার ও ফরওয়ার্ড ব্লক নিয়ন্ত্রিত নেতাজি জন্মজয়ন্তী কমিটি আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পর স্বাভাবিকভাবে আপ্লুত হয়ে পড়েন শরিক দলের সুপ্রিমো অশোক ঘোষ। তিনি মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেবকে মঞ্চের উপরেই জড়িয়ে ধরে আশীর্বাদও করেন।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন ঐ অনুষ্ঠানে বলেন, একটা সময়ে আমরা কমিউনিস্টরা নেতাজির দেশপ্রেম নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে ভুল করেছিলাম। আসলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান, জার্মানি, ইতালির মতো ফ্যাসিবাদী দেশগুলি সোভিয়েত রাশিয়া ও তার সহযোগী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির বিরুদ্ধে জোট বেঁধেছিল। আমরা সোভিয়েতের পক্ষ নিয়েছিলাম সে সময়। আর নেতাজির পথ ছিল ভিন্ন। কিন্তু তিনি ভারত থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের অবসানের লক্ষ্যে ঐ রণকৌশল নিয়েছিলেন। আমরা সেটা বুঝিনি। নেতাজির দেশপ্রেম এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মনোভাবে সত্যিই কোনও খাদ ছিল না। তাই বছর দশেক আগে পার্টির নেতা জ্যোতি বসু প্রকাশ্যেই নেতাজি সম্পর্কে আমাদের ভুল মূল্যায়নের কথা স্বীকার করেন।

ফরওয়ার্ড ব্লকসহ চার বাম দলের তরফে 'দেশপ্রেম দিবস' ঘোষণার দাবিকে এদিন পূর্ণ সমর্থন জানান মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রসঙ্গে তিনি কংগ্রেসের সমালোচনা করে বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে গান্ধীজির নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কিন্তু তাই বলে নেতাজির ভূমিকাকে অস্বীকার করে অন্যায় করছে কংগ্রেস। ধর্মনিরপেক্ষতা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সম্পর্কে নেতাজির প্রদর্শিত পথেই আজ দেশ এগুতে চাইছে। অথচ তাকে নিয়ে কংগ্রেসের অস্পষ্ট অবস্থান দেশের মানুষের কাছে বোধগম্য নয়।

বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এদিন বলেন, দেশপ্রেম আজ সত্যিই দেশে দুর্মূল্য হয়েছে। সাধারণ মানুষ নয়, লুটেরা আর শোষকদের সুবিধার্থে দেশের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে নেতাজি শুধু ব্রিটিশ নয়, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে গান্ধীজিকে আগাম সতর্ক করেছিলেন। তার সেই আশঙ্কা আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। অশোক ঘোষ বলেন, আজ চরম সংকটের মুহূর্তে দেশকে রক্ষা করতে হলে ফের মানুষের মনে দেশপ্রেম জাগ্রত করতে হবে। আর তা করতে হলে নেতাজিকে উপযুক্ত সম্মান জানানো ছাড়া উপায়। দেশপ্রেম দিবসের দাবি এখনও না মেনে মনমোহন সিংয়ের সরকার অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ করেছে। 

http://m.somewhereinblog.net/blog/rakibkhanblog/29085415



আবার ২৩শে

দেখতে দেখতে আরো একটা ২৩শে জানুয়ারী চলে এলো । বাড়িতে নেতাজীর ধুলো জমে যাওয়া পুরনো ফটোফ্রেমটা ঝাড়পোচ করার সময়ও উপস্থিত ! আসলে এটাই হয় নেতাজিই হোক বা যিনিই হোন - জন্মদিন এবং বর্ষার জমাটি ভুতুড়ে সন্ধ্যে ছাড়া তাদের যে আমাদের মনেই পড়ে না। আমরা ১৪ই আগস্ট তিরঙ্গা ফ্ল্যাগ পরিষ্কার করি,পরদিন সকালে ফুরফুরে হাওয়া দিচ্ছে এমন জায়গায় পাড়া প্রতিবেশীদের দু'চারজনকে ঘুম থেকে তুলে পতাকা উত্তোলন করি। তারপর,কাঁপা কাঁপা উদাত্ত কন্ঠে 'জনগনমন। পরদিন আবার তিরঙ্গা যথাস্থানে,অর্থাত আলমারির এককোণে ঘুমাতে যায় ।

সবই আসলে এক সুতোয় গাঁথা । নেতাজির মত একটা জীবনকে বিশেষ দিনে সামান্য মনে করার বৃথা চেষ্টা । তাঁর আত্মত্যাগ ,তাঁর জ্ঞান,তাঁর দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাপরাধীনতার মত অসম্ভব গ্লানির জাল কেটে বেরোনোর অদম্য জেদ দেশীয় নেতাদের সাহায্য সেভাবে না পেয়েও দিনের পর দিন,মাসের পর মাস,বছরের পর বছর প্রায় একা লড়ে আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠনের প্রচেষ্টা,এবং ক্রমে দিল্লি দখলের মত দুঃসাহস আজকের দিনে আরব্য রজনীর কাহানি মনে হতেই পারে । একটা নির্বীর্য জাতিকে চাবুক মেরে জাগিয়েছিলেন যে মানুষটা -শুধু তার রহস্যজনক অন্তর্ধানই আমাদের প্রকৃত 'স্বাধীনতাপাওয়া থেকে বঞ্চিত করে গেল । এ কথা প্রাজ্ঞজন মাত্রেই স্বীকার করবেন - স্বাধীনতা উত্তর ভারতে যোগ্য নেতার যে অভাব ছিল ,তা পূরণের ক্ষমতা একমাত্র নেতাজিরই ছিল । হয়ত দেশভাগের মত কলঙ্কিত অধ্যায়ও দেখতে হত না ....আমার গ্লানি লাগে ,যখন শুনি দেশের নেতাদের যে পরিমাণ কালো টাকা সুইস ব্যাঙ্কে পচছে -তা দিয়ে কোটি কোটি নিরন্ন মানুষকে পাঁচ বছর বসিয়ে খাওয়ানো যায় ,আমি লজ্জায় গুমরে মরি -যখন শুনি আমারই দেশের মা বোনরা পথে ঘটে ধর্ষিতা হনতাদেরই স্বজাতির হাতে । আমি ভাবতে থাকি,নেতাজি কি -এই লুটপাট ,খুন ,ধর্ষণ ,কালোবাজারীর অবাধ স্বাধীনতা চেয়েছিলেন ? নাকি ..সে এক অন্য স্বাধীনতা- যা আমরা আজও ছুঁতে পারিনি ! আবার আপামর বাঙালি তাদের অতিপ্রিয় নেতাজিকে নিয়ে এই জন্মদিনটায় মাতামাতি করবেমুখ্যমন্ত্রী যথারীতি বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন । চ্যানেলে চ্যানেলে স্মৃতিকথা ,আলোচনার ফোয়ারা ছুটবে । পরদিন আবার সব অতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে ,দৃষ্টিকটু ভাবে ।
আমি কিন্তু এই দিনটা নীরবেআমার ঘরের কোণেই কাটিয়ে দেব !

http://anyanishad.blogspot.in/2013/01/blog-post_2563.html


শুভ পাল, কলকাতা

নেতাজি কন্যা দুর্হিতা অনীতা পাফ এবার রেনকোজি মন্দির থেকে বাবার চিতাভস্ম বার্লিনে নিয়ে যেতে চান। কিছুদিন আগেই তার অনুরোধ ইউপিএ সরকারের কাছে পেঁৗছে। কিন্তু কেন্দ্র কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।
অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় নেতাজির একটি স্মারকনিধি নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছেন। মূলত বামদের বিরোধিতার জন্য এ প্রস্তাব নিয়ে এগোতে পারছেন না। এর মধ্যে অনীতার আর্জি নতুন সমস্যা তৈরি করেছে। টোকিও শহরের প্রান্তে রেনকোজি মন্দিরে ১৯৪৫ সালের পর থেকেই নেতাজির অস্থিভস্ম রক্ষিত রয়েছে। সমপ্রতি মুখার্জি কমিশন নেতাজির মৃত্যু তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় হয়নি বলায় বিতর্ক আর তীব্র হয়েছে।
সমস্যা দেখা দিয়েছে রেনকোজি মন্দির নিয়ে। সেখানকার প্রধান পুরোহিতের বংশধররা কেউই পুরোহিতের পেশায় নেই। অথচ এই মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের জণ্য জাপান সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হয়। অর্থাৎ ভারত সরকার মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়মিত বাজেট থেকে ১০ লাখ ইয়েন অর্থ সাহায্য করে।
ভবিষ্যতে কে রেনকোজি মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ করবেন, প্রশ্ন সেটাই। সমপ্রতি অনীতা টোকিও গিয়েছিলেন। কিছুদিন আগে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ভারতে এসেছিলেন। তখন সরকারিভাবে আলোচনা না হলেও 
বৈঠকে প্রসঙ্গটি উঠেছিল। গত সপ্তাহেই ড. শিশির বসুর পুত্র হার্ভার্ড অধ্যাপক সুগত বসু অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে এ সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়। কেন্দ্রের বক্তব্য_ নেতাজির মৃত্যুর বিষয়ে ফরওয়ার্ড বস্নকের মতো রাজনৈতিক দল অনড় মনোভাব নেয়ায় নেতাজিকে জাতীয় সম্মান দেয়া নিয়ে সমস্যা ফয়সালা করা যাচ্ছে না। ১৯৯৫ সালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে প্রণব মুখোপাধ্যায় নেতাজির 'চিতাভস্ম' নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাই নিয়ে তুলকালাম ঘটে যায়। এবার সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ফরওয়ার্ড বস্নকের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস অবশ্য কেন্দ্রের এ উদ্যোগকে সমর্থন করছেন না




সুভাষ স্মৃতি সংরক্ষণে উদ্যোগ বোলপুরে



সুভাষ স্মৃতি সংরক্ষণে উদ্যোগ বোলপুরে
বিপ্লবীদের সঙ্গে সুভাষ বসু।
হেমাভ সেনগুপ্ত 
বোলপুর: রবীন্দ্রনাথের পল্লিগঠনের পাশাপাশি নেতাজির সশস্ত্র বিপ্লবের তত্ত্বের সফল অনুশীলন কেন্দ্র আমার কুঠি সেই ইতিহাস সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়েছে৷ ঠিক ৭৫ বছর আগে শান্তিনিকেতনের কাছে এই আশ্রমিক পরিবেশে সুভাষচন্দ্র বসুর সফরের স্মৃতি তাঁর জন্মদিনে এবারও ছুঁয়ে যাবে এখানে৷ তারই তোড়জোর চলেছে মঙ্গলবার৷ অধিকাংশের মৃত্যু হলেও, এখনও জীবিত প্রবীণরা ডুবে গিয়েছেন স্মৃতিচারণায়৷ 

১৯৩৮-এর ৮ ডিসেম্বর আমার কুটিরের বিপ্লবীদের উজ্জীবিত করেছিলেন পরবর্তী কালে আজাদহিন্দ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক৷ নেতাজির জন্মদিন উদযাপনের আগে সেই ইতিহাস বড় বেশি করে মনে পড়ে নবতিপর শান্তি চক্রবর্তীর৷ তাঁর চোখের সামনে ভাসছে সুভাষ বসুর সেই সফর৷ সে কথাই বলছিলেন তিনি৷ শান্তিবাবু জানালেন, 'তিনি যেদিন এলেন, আমি অতিথি আপ্যায়ণ ও খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলাম৷ বিপ্লবী পান্নালাল দাশগুপ্ত, সুষেন মুখোপাধ্যায় ও মনোরঞ্জন দত্ত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নেতাজিকে এখানকার কাজকর্ম দেখাচ্ছিলেন৷ এই এলাকার শত শত তরুণ সেদিন সাম্য সদন পতাকা হাতে তাঁকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন৷' 

কৃষি, পশুপালন, হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ ও উত্‍পাদন ইত্যাদির পাশাপাশি বিপ্লবী কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ওই বাহিনী গড়েছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামীরা৷ শান্তিনিকেতনের কাছে ওই জায়গায় তখন গভীর জঙ্গল৷ সেখানে আমার কুঠিতে ছিল বিপ্লবীদের গোপন আস্তানা৷ শান্তিবাবু বলেন, 'নেতাজি আসায় সেই ডেরার অস্তিত্ব টের পেয়ে গিয়েছিল ব্রিটিশ পুলিশ৷ গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেল সুষেন মুখোপাধ্যায়কে৷ কিন্তু নেতাজির প্রেরণায় ১৯৪২-এ বোলপুরে ব্রিটিশ ফৌজকে আক্রমণ করেছিলেন এখানকার বিপ্লবীরা৷' 



সেই ইতিহাস পরবর্তী প্রজন্মকে জানাতে উদ্যোগী হয়েছেন আমার কুটিরের কর্তৃপক্ষ৷ বুধবার নেতাজির জন্মদিনে তাঁর সেই সফরের বিরল ছবি, তখনকার আবাসিক বিপ্লবীদের ছবি ও তাঁদের কর্মকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরতে একটি স্থায়ী সংগ্রহশালার উদ্বোধন করা হবে৷ এখনও পর্যটকরা আসেন এখানে৷ ওই সংগ্রহশালায় তাঁদের আকর্ষণ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন আমার কুঠি সোসাইটির সচিব প্রশান্ত ঘোষ৷ তিনি বলেন, 'সুভাষ বসুর প্রেরণাই আমাদের এগিয়ে চলার পাথেয়৷'


সিঙাড়া ভোগে দিয়েই 'নেতাজি পুজো'



সিঙাড়া ভোগে দিয়েই 'নেতাজি পুজো'
সিঙাড়ার থালা হাতে সব্যসাচীবাবু, সঙ্গে পরিবার। --নিজস্ব চিত্র
সূর্যকান্ত কুমার 

পূর্বস্থলী: কাচের দেওয়াল আলমারিতে চকচকে খয়েরি বার্নিশ করা হাতলওলা কাঠের চেয়ার৷ চেয়ারের পিঠে হেলান দিয়ে রাখা ঝাপসা হয়ে আসা নেতাজির সাদা কালো ছবি৷ ছবিতে ফুলের মালা৷ শাঁখ-ঘণ্টা-ধূপ-ধুনোয় নিত্যপূজা চলছে৷ আলমারির সামনে গোটা পরিবার৷ বাড়ির কর্তা, অশীতিপর সব্যসাচী রায়ের হাতে কাচের প্লেট৷ কুলদেবতাকে ভোগ নিবেদন করবেন বলে হাত বাড়িয়ে আছেন চেয়ারের দিকে৷ 

খিচুড়ি-পায়েস-মিষ্টি-নকুলদানা বা মিছরি নয়, প্লেটে রয়েছে গোটা আষ্টেক ঘরে বানানো সিঙাড়া৷ রায় পরিবারের 'কুলদেবতা' নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নিত্যপূজায় এই সিঙাড়া ভোগ দেওয়াই ট্র্যাডিশন! সেই ১৯৩২ সাল থেকে এই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে৷ কিন্তু ট্র্যাডিশনের গোড়াটা কোথায়? সব্যসাচীবাবু জানালেন, আমাদের পরিবার কট্টর কংগ্রেসি৷ ১৯৩২-এ রায় পরিবারের কর্তা রমেশচন্দ্র ও তাঁর ভাই সুরেশচন্দ্র ছিলেন পুরোদস্তুর স্বাধীনতা সংগ্রামী৷ রমেশবাবুর স্ত্রী শিবভাবিনী দেবী ছিলেন বর্ধমান জেলা মহিলা কংগ্রেসের তদানীন্তন সভানেত্রী৷ ফলে রায়বাড়িতেই বসেছিল কংগ্রেসের কর্মীসভা৷ কাষ্ঠশালীতে জনসভা সেরে রায়বাড়িতে পৌঁছে এই কাঠের চেয়ারে বসেই বৈঠক করেছিলেন নেতাজি৷ শিবভাবিনী নিজের হাতে সিঙাড়া তৈরি করে খাইয়েছিলেন দেশনেতাকে৷ শোনা যায়, তারিফ করেছিলেন সুভাষ! 

সেই থেকে রমেশবাবু ও তাঁর ভাইয়েরা বলে দেন, ওই চেয়ারে আর কেউ বসবে না৷ এ বার থেকে দেবতার আসনজ্ঞানে অর্চনা হবে ওই চেয়ারের৷ আর সেই পূজার ভোগ যে সিঙাড়া হবে, তাতে আর সন্দেহ কী? মঙ্গলবার তাই রায় পরিবারে ছিল সাজো সাজো রব৷ সকাল থেকে পুজোর প্রস্তুতি, জাঁকজমক তো ছিলই৷ তার উপর ২৩ জানুয়ারি গোটা পাড়াকে সিঙাড়া খাওয়ানোর তোড়জোড়৷ প্রতিবেশিদের সেদিন সিঙারা বিলোনোও যে রায় পরিবারের প্রথা৷ বাড়ির বৌ-ঝিয়েরা হাতে তৈরি করেন ওই সিঙাড়া৷ প্রসাদ হিসেবে বিলি করা হয়৷ 

সেই সব আগুনঝরা দিনের স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে এখনও আবেগে ভেসে যান বাড়ির সবাই৷ বৃদ্ধ সব্যসাচীবাবু বলেন, 'একাশি বছর ধরে আগলে রেখেছি এই স্মৃতি৷ ওই চেয়ারের জন্যই আমাদের বাড়ির নাম-যশ৷ ফলে আমাদের বাড়িতে এই চেয়ারই দেবতার আসন৷' রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা নরেন দে-ও জানান, 'রায়বাড়ির কথা অনেক শুনেছি৷ দলের মুখপত্র লোকমতে এ নিয়ে লিখেওছি৷' কাজেই ২৩ জানুয়ারি নিছক আরেকটা ছুটির দিন নয় পূর্বস্থলীর রায়বাড়িতে৷ এ দিন পুজোর দিন, এ দিন স্মৃতির উচ্ছাসের দিন৷ আর সিঙাড়া খাওয়ার দিন তো বটেই!

বাগবাজার সর্বজনীন দুর্গোৎসবের সভাপতি ছিলেন স্বয়ং নেতাজি সুভাষ

বাগবাজার সর্বজনীনের দুর্গাপ্রতিমা, ছবি: লেখক।

বাগবাজার সর্বজনীন দুর্গোৎসব ও মেলা কলকাতার দুর্গাপুজোর একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। উত্তর কলকাতার বাগবাজার অঞ্চলে গিরিশ পার্কের কাছে একটি বিশাল মাঠে এই পূজা ও মেলার আয়োজন করা হয়।

বাগবাজার সর্বজনীনের পুজো কলকাতার সবচেয়ে পুরনো সর্বজনীন দুর্গাপুজোগুলির মধ্যে একটি। ১৯১৯ সালে বাগবাজারের বাসিন্দারা প্রথম এই পুজোর আয়োজন করেছিলেন। প্রথম বার পুজো হয়েছিল নেবুবাগান লেন ও বাগবাজার স্ট্রিটের সংযোগস্থলে সরকার হাউসে। সেই সময় এই পুজোর নাম ছিল "নেবুবাগান বারোয়ারি দুর্গাপূজা"। তারপর তিন বছর সরকার হাউসেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল পুজো। ১৯২৪ সালে পুজো সরে আসে বাগবাজার স্ট্রিট ও পশুপতি বসু লেনের সংযোগস্থলে। তার পরের বছর পুজো হয় কাঁটাপুকুরে। ১৯২৬ সালে সমাজকর্মী নগেন্দ্রনাথ ঘোষাল ও আরও কয়েক জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ভার নেন এই পুজোর। তাঁদের প্রচেষ্টায় সুষ্ঠভাবে পুজো করার জন্য গড়ে ওঠে একটি সংগঠন। ১৯২৭ সালে পুজো হয় বাগবাজার কালীমন্দিরে। ১৯২৯ সালে প্রথম এই পুজো উপলক্ষ্যে মেলা বসে।

১৯৩০ সালে কলকাতা পৌরসংস্থার অল্ডারম্যান দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হন। এই সময় থেকেই পুজোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে স্বদেশী আন্দোলনের ধ্যানধারণা। পুজোর নাম বদলে হয় "বাগবাজার সর্বজনীন দুর্গোৎসব ও মেলা"। যে দুর্গানগর মাঠে এখন মেলা বসে, সেটি আসলে ছিল কলকাতা পুরসভার রাস্তা-সারাই বিভাগের মেটাল-ইয়ার্ড। দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার তৎকালীন মেয়র সুভাষচন্দ্র বসুকে (যিনি পরে পরিচিত হয়েছিলেন নেতাজি সুভাষ নামে) অনুরোধ করেন এখানে মেলা আয়োজনের অনুমতি দেওয়ার জন্য। সুভাষচন্দ্র অনুমতি দেন। সেই সঙ্গে দেন পাঁচশো টাকা চাঁদাও। সেই থেকে এইখানেই চলে আসছে বাগবাজার সর্বজনীনের পুজো। ১৯৩৮ ও ১৯৩৯ সালে সুভাষচন্দ্র প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন বাগবাজার সর্বজনীনের পুজোর সঙ্গে। এই দুই বছর তিনিই ছিলেন পুজোকমিটির সভাপতি। সুভাষচন্দ্র ছাড়াও সন্তোষ কুমার বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, হরিশঙ্কর পাল প্রমুখ ব্যক্তিবর্গও এই পুজোর সঙ্গে জড়িত ছিলেন এককালে।

আশ্বিন শুক্লা পঞ্চমীর দিন হয় পুজোর উদ্বোধন। লক্ষ্মীপুজোর দিন হয় সমাপ্তি। মহাষ্টমীর সকালে বীরাষ্টমী উৎসব ও বিজয়াদশমীর সকালে সিঁদুর খেলা এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অনুশীলন সমিতির সদস্য বিপ্লবী পুলিন দাস এই পুজোর বীরষ্টমী উৎসবের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।

বাগবাজার সর্বজনীনের বৈশিষ্ট্য হল দুর্গাপুজোর সাবেকিয়ানা ধরে রাখা। এখানে থিমপুজো হয় না। এমনকি বিগত কয়েক দশক ধরে প্রতিমাও তৈরি হচ্ছে একই ধাঁচে। একচালা আকর্ণনয়না দেবীমূর্তি। শোলার সাজসজ্জা নয়নাভিরাম। মণ্ডপসজ্জাও এখানকার দেখার মতো হয়। থিমের হুজুগে মাথা না গলিয়েও শুধুমাত্র ঐতিহ্য আর সাবেকিয়ানাকে সম্বল করেই যে বছরের পর বছর কলকাতার এক নম্বর পুজোর তালিকায় সগৌরবে বিরাজ করা যায়, সেটাই জানান দিয়ে যায় বাগবাজার সর্বজনীন।

Published: সেপ্টেম্বর 25th, 2011 at 0:28
Categories: ব্লগাড্ডা
Tags: 

রাসবিহারীর ইচ্ছেপূরণ মৃত্যুর ৬৮ বছর পরে



রাসবিহারীর ইচ্ছেপূরণ মৃত্যুর ৬৮ বছর পরে
বিপ্লবীর সমাধির মাটি বিসর্জন ফটকগোড়ার ঘাটে। ছবি- মৃণাল বসু।
প্রদীপ চক্রবর্তী

হুগলি: অগ্নিযুগের বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর শেষ ইচ্ছে ছিল, মৃত্যুর পর যেন তাঁর চিতাভস্ম চন্দননগরের ফটকগোড়া গঙ্গার ঘাটে বিসর্জন দেওয়া হয়৷ রাসবিহারীর জন্ম বর্ধমানে হলেও তাঁর ছাত্র জীবন শুরু হয় এই ফটকগোড়া থেকেই৷ তাই শেষ জীবন জাপানে কাটলেও এই বিপ্লবীর মন পড়ে ছিল চন্দননগরেই৷ রাসবিহারীর শেষ ইচ্ছেকে মর্যাদা দিতেই সোমবার ৬৮তম মৃত্যু বার্ষিকীতে তাঁর সমাধি স্থলের মাটি ভাসিয়ে দেওয়া হল সেই ফটকগোড়া গঙ্গর ঘাটেই৷ প্রসঙ্গত, ১৯৪৫ সালের ২১ জানুয়ারি জাপানে তিনি মারা যান৷ টোকিও শহরের জোজোজি মন্দিরের কাছে তামা শ্মশানে তাঁকে বৌদ্ধ মতে সমাধিস্থ করা হয়৷ গত অক্টোবর মাসে চন্দননগর হেরিটেজ কমিটি এবং চন্দননগর পুর নিগমের উদ্যোগে সেই মাটি এ দেশে আনা হয়৷

এ দিন ওই বিসর্জনকে ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিপুল উত্‍সাহ দেখা যায়৷ সকাল দশটা নাগাদ প্রথমে চন্দননগরের ফটকগোড়ায় জগদ্ধাত্রী বারোয়ারিতলায় রাসবিহারীর মূর্তিতে মালা দেওয়া হয়৷ তার পর জাপান থেকে আনা সেই সৌধের মাটি শববাহী গাড়িতে করে শোভাযাত্রা সহকারে নিয়ে আসা হয় গঙ্গার ঘাটে৷

উপস্থিত ছিলেন চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী, হেরিটেজ কমিটির সম্পাদক এবং রাসবিহারী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ চক্রবর্তী, স্থানীয় বিধায়ক অশোক সাউ প্রমুখ৷ শেষে সেই মাটি বিসর্জন দেওয়া হয় গঙ্গায়৷

কল্যাণবাবু জানান, মারা যাওয়ার আগে রাসবিহারী একটি মুখ বন্ধ খামে লিখে রেখে যান, তাঁর মৃত্যুর পর শেষকৃত্য নিয়ে যেন কোনও আড়ম্বর না হয়৷ তিনি চান, দেহটি চিকিত্‍সা বিজ্ঞানের কাজে লাগুক৷ তাঁর আরও ইচ্ছে ছিল, চিতা ভস্ম বিসর্জন দেওয়া হোক চন্দননগরে৷ তিনি এও বলে গিয়েছিলেন, চিঠিটি তাঁর মৃত্যুর পর পরিবারের ছয় সদস্যের সামনে যেন খোলা হয়৷ কিন্তু যে সময়ে রাসবিহারী মারা যান, তখন তাঁর শাশুড়ি খুব অসুস্থ হয়ে পড়ায় সেই চিঠি আর খোলা হয়নি৷ সেটি খোলা হয় অনেক পরে৷

কল্যাণবাবু জানিয়েছেন, দীর্ঘ প্রায় ৭০ বছর এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার নানা টালবাহানা চালিয়েছে৷ তাই এই বিপ্লবীর শেষ ইচ্ছে এতদিন পূরণ করা যায়নি৷ চন্দননগরবাসীর ঐকান্তিক চেষ্টায় অবশেষে সেই ইচ্ছে পূরণ করা সম্ভব হল৷ তাঁর আক্ষেপ, জাপানে বসে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের যে ইতিহাস রাসবিহারী বিদেশী জাপানি ভাষায় লিখেছিলেন, তা আজও বাংলায় অনুবাদ করা সম্ভব হয়নি৷ তিনি জানান, দেশকে স্বাধীন করার স্বপ্ন নিয়েই এই বিপ্লবী জাপান পাড়ি দেন৷ ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে ছুঁতে পারেনি৷

বাস্তববাদী কূটনীতির পথিকৃৎ তিনিই

বার্লিন শহরের বাড়িটিতে পদ্মাসনে বসে তিনি। সামনে বিছানো একটি আস্ত পৃথিবীর মানচিত্র। একাগ্র মনে কী ভাবছেন ব্রিটিশ ভারত থেকে পলাতক, জার্মানিতে আশ্রয়প্রাপ্ত সুভাষচন্দ্র বসু? কী ভাবছেন বোঝা গেল তাঁর জার্মান ভাষা-শিক্ষক গিয়েসলার ওয়্যার্সিং ঘরে ঢুকতেই। তাঁকে একটিও কথা বলার ফুরসত না দিয়ে একনাগাড়ে বলতে শুরু করলেন সুভাষ কত বড় ভুল করছে জার্মানি। সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে কত বড় অন্যায় করছে। 
সে দিন ১৭ জুলাই, ১৯৪১। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। রোজ বড় বড় হেডলাইন। তবু মাসখানেক আগে, ২২ জুন যে আকস্মিক খবরটি এল, সবাই নতুন করে চমকে উঠল। সোভিয়েত ইউনিয়নে হঠাৎ হানা দিয়েছে হিটলারের জার্মানি। এতই অপ্রত্যাশিত আক্রমণ, এতই অজ্ঞাত এই 'অপারেশন বার্বাডোসা'র প্রস্তুতি যে গোটা পৃথিবী বিভ্রান্ত হয়ে পড়ল। প্রবল হতাশা ও বিষাদে ডুবে গেলেন সুভাষচন্দ্র। পালিয়ে আসার পর থেকে যে দুরাশায় নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন, এক খবরের ঘায়ে সেটা যেন ধসে গেল। পরিকল্পনা ছিল, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বশক্তিগুলির একটি কোয়ালিশন তৈরি, যাতে ব্রিটেনকে সাম্রাজ্য গুটিয়ে ফেলতে চাপ দেওয়া সম্ভব হয়। আর এই পরিকল্পনার প্রধান দুই স্তম্ভ-দেশ হিসেবে তিনি ভাবছিলেন জার্মানি ও সোভিয়েত ইউনিয়নকে।
নাতসি জার্মানি ও কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নকে একসঙ্গে পাওয়ার আশা করছিলেন সুভাষ? শুনতে বিদঘুটে নয়? না, ১৯৪১ সালে কিন্তু ব্যাপারটা বিদঘুটে ছিল না। বিশ্বযুদ্ধের দুনিয়ায় কে কার সঙ্গে আঁতাঁত করবে, তার একটা যুক্তি নিশ্চয়ই থাকে, তবে সেগুলো প্রায়শই আদর্শতাড়িত যুক্তি নয়। তাই, ১৯৩৮ সালে যখন স্তালিন হাত মেলালেন হিটলারের সঙ্গে, ভারতে ও অন্যত্র কমিউনিস্টদের হৃদয় বিচূর্ণ হয়ে গেলেও ঘটনাটায় বিস্ময়ের কিছু ছিল না। অনাক্রমণ চুক্তির মধ্যে আন্তরিক সৌহার্দ্যের প্রশ্ন থাকে না বিশেষত যুদ্ধ-পরিস্থিতিতে থাকে শুধু রাষ্ট্রিক স্বার্থের প্রশ্ন। সুভাষচন্দ্রের স্তালিন ও হিটলারকে একসঙ্গে পাশে পাওয়ার আশাকে তাই উচ্চাশা বা দুরাশা বললেও বোকামি বলা চলত না সে দিন। দুই দেশের মধ্যে চুক্তি জাজ্বল্যমান তখনও। অবশ্য সেটা বাইরে থেকেই। কয়েক মাস আগেই যখন পলাতক স্বাধীনতা সংগ্রামীটি ভারত সীমান্ত পার করে আফগানিস্তান হয়ে মস্কোর মধ্য দিয়ে ইউরোপের দিকে আসছিলেন, তখনই কাকপক্ষীর অগোচরে চুক্তি ভেঙে 'অপারেশন বার্বাডোসা'র পরিকল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। কেউ জানতে পারেনি। তখনই যদি শুরু হত আক্রমণ, সুভাষ হয়তো সোভিয়েতেই আটকে যেতেন, পশ্চিম দিকে আর এগোতেই পারতেন না।
দিশারি। ইন্দিরা গাঁধী, জওহরলাল নেহরু, সুভাষচন্দ্র বসু, ১৯৩৮।
শেষ পর্যন্ত জুনে যখন আক্রমণ ঘটল, জার্মানিতে পৌঁছে সুভাষ তাঁর 'কাজ' শুরু করে দিয়েছেন। জার্মানির বিদেশমন্ত্রী জোয়াকিম ভন রিবেনট্রপ-এর সঙ্গে অনেক আলোচনা হয়েছে তাঁর। রিবেনট্রপ সহানুভূতির সঙ্গে শুনেছেন, কিন্তু পাকা কথা দেননি। এমন সময়ে সোভিয়েত-আক্রমণের খবর পেয়ে দুটো বড় সমস্যায় পড়লেন সুভাষ। প্রথমত, দেশের সঙ্গে তাঁর স্থলপথের সংযোগ বন্ধ হল। দ্বিতীয়ত, মস্কোকে বোঝাবার কোনও পথই খোলা রইল না। (পথ খোলা না থাকলেও আশাটা অবশ্য রয়েই গেল। চার বছর পর, অনেক অবিশ্বাস্য পথ ঘুরে, আবারও এক বার সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা করবেন তিনি, পুব দিক দিয়ে ঢুকতে চাইবেন সে দেশে, তাইওয়ান থেকে। তাইপে-র মাটি ছেড়ে কি উঠেছিল সোভিয়েত-মুখী বিমান? উঠেই ভেঙে পড়েছিল ১৯৪৫ সালে ১৮ অগস্ট?)
নেতাজি-রচনা ও গবেষণার বিপুলতার মধ্যেও এত দিন অবধি একটা ফাঁক থেকে গিয়েছিল। যে দুই দফায় তিনি ইউরোপে ছিলেন (১৯৩৩-৩৬ এবং ১৯৪১-৪৩), তাঁর কর্মব্যস্ত দিনযাপনের বিষয়ে আমরা বেশি কিছু জানতে পারিনি। সম্প্রতি শূন্যস্থান পূর্ণ হল সুগত বসুর নেতাজি-জীবনী এবং তার পর-পরই প্রকাশিত ইয়ান কুলমান-এর গবেষণায়। জানা গেল জরুরি খুঁটিনাটি, জানা গেল কী ভাবে শিক্ষক ওয়্যার্সিং-এর কাছে বিষোদ্গারের পর মন্ত্রী রিবেনট্রপকেও শাসিয়েছিলেন তিনি: যুদ্ধবাহিনী নিয়ে জার্মানরা যতই ভারতের দিকে এগোবে, ভারতীয় জনসাধারণ ততই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠবে, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এগোলেও সেই বাহিনীকে ভারতীয়রা শত্রু বলে মনে করবে কেবল সোভিয়েত-আক্রমণের কারণেই, will be regarded as the approach not of a friend, but of an enemy (সুগত বসু)। জানতে পারি, রোমে বসে 'অপারেশন বার্বাডোসা'র খবর পেয়ে বার্লিনে ফিরতে ইচ্ছেই ছিল না তাঁর, তবু ফিরতে হল, ফেরার আগে জার্মান আন্ডারসেক্রেটারি অব স্টেট ওরমানকে লিখলেন, The public reaction in my country to the new situation in the East is unfavourable towards your government (ইয়ান কুলমান)। 
কুলমান অবশ্য সতর্ক করেছেন, জার্মানি বা ইতালির উপর সুভাষের আলাদা কোনও টান ছিল না, এ কথা যেমন ঠিক, তেমনই এও ঠিক যে মস্কোয় আসার অনেক আগে, ১৯৪০ সালেই, কলকাতায় ইতালির কনসাল জেনারেল-এর সঙ্গে বৈঠক করেন সুভাষ, জানতে চান, ইতালিতে গিয়ে আশ্রয় পেতে পারেন কি না। অর্থাৎ এমন নয় যে মস্কোই তাঁর প্রথম পছন্দ ছিল। এমন পরস্পর-বিসংযুক্ত দেশের সমর্থন কুড়োতে চাইছিলেন যে মানুষটি, নাতসিজম ফ্যাসিজম কমিউনিজম, কোনওটির প্রতিই তাঁর আদর্শগত 'কমিটমেন্ট' ছিল না, অন্তত বিদেশনীতির ক্ষেত্রে তার ছাপ পড়তে দিতে তিনি রাজি ছিলেন না।
তা হলে কী ছিল তাঁর চালিকা-নীতি? যা ছিল, সেটাকে আমরা বলতে পারি প্রয়োগবাদিতা, 'প্র্যাগম্যাটিজম'। আর তাই, বাছবিচার ছাড়াই নাতসি বা ফ্যাসিস্ট দেশগুলির অপকর্মের বিষয়ে চোখ বন্ধ করে নিজের অ্যাজেন্ডা নিয়ে নানা দেশের দ্বারে দ্বারে ঘুরছিলেন তিনি, যেখান থেকে যা পাওয়া যায় নেবেন বলে: সমালোচকের যুক্তি হবে এই। আর সমর্থকের যুক্তি ঘুরে যাবে একশো আশি ডিগ্রি: কেমন খোলা মনে ইউরোপে এসেছিলেন সুভাষ, যেখানে যখন যতখানি সুযোগ মেলে, স্বদেশের স্বাধীনতার স্বার্থে তার সদ্ব্যবহার করবেন বলে।
স্বাধীনতার আগে থেকেই সুভাষচন্দ্র বিষয়ে ভারতীয়দের মত একেবারে আড়াআড়ি ভাগ হয়ে গেল। জাতীয় কংগ্রেস ও কমিউনিস্টদের খুব কম বিষয়ে মতৈক্য, বিশেষত জাতীয়তা-স্বাধীনতার প্রশ্নগুলিতে, কিন্তু এ ক্ষেত্রে তারা সমস্বর: ইনি আস্ত কুইসলিং, তোজোর কুকুর। নরওয়ে-তে ভিদকুন কুইসলিং যেমন অক্ষশক্তির আক্রমণের সুযোগে তাদেরই সহায়তায় দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, সুভাষও জার্মান কিংবা জাপানি বাহিনী নিয়ে ব্রিটিশ ভারতের দিকে এগোচ্ছেন নিজে ক্ষমতার শীর্ষে বসবেন বলে: নেতৃমহল থেকে উৎসারিত ছিছিক্কার নিচুমহলের রাজনীতিতেও যথেষ্ট ছড়াল। স্বাধীন ভারতেও সরাসরি বামে দক্ষিণে নেমে এল এই উত্তরাধিকার, বিশেষত বাঙালি সমাজে। এখনও পর্যন্ত শিক্ষিত বুদ্ধিমান বাঙালির পক্ষে নেতাজিকে হেয় না করে কথা বলাটা চূড়ান্ত আনফ্যাশনেব্ল।
উল্টো দিকে অনেকের কাছেই নেতাজি এক নম্বর হিরো, কেননা 'যে কোনও উপায়ে' একমাত্র তিনিই ব্রিটিশকে শায়েস্তা করতে পারেন। আজাদ হিন্দ ফৌজ তৈরির সময় গ্রামে-গঞ্জে রেডিয়োয় কান পেতে থাকত বড়রা, আর ছোটদের বইয়ের ভাঁজে, ড্রয়ারের কোণে, এমনকী ফটো-স্ট্যান্ডে সৌম্য রবীন্দ্র-মুখের পিছনে লুকোনো থাকত কাগজ-কাটা নেতাজি-মুখ! আশাময়তার এমন ঘূর্ণিপাক আমরা আজ কল্পনাও করতে পারি না, তবে বুঝতে পারি 'ক্ষমতার হিসেব' কিংবা 'ফ্যাসিবিরোধী রাজনীতির বিচ্যুতি', এ সব জন-আবেগের মধ্যে মোটেও জায়গা পায়নি। রাজনীতির জগৎ যতই নেতাজি ও তাঁর পথকে ব্রাত্য করে দিল, সাধারণ সমাজ ততই তাঁকে ঘিরে উন্মথিত হয়ে উঠল। এই প্রবল দ্বিখণ্ডিত পরিচিতিতেই নেতাজিকে পেল উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত। 
আবেগপ্রাবল্যে অনেক সময় অনেক ভাবনা হারিয়ে যেতে বসে। পর পর এই দুইটি হাতে-গরম বই তেমন কয়েকটা ভাবনা ফিরিয়ে আনে। যেমন, নেতাজির বিদেশি সহায়তা-ভিক্ষার তথ্য থেকে নতুন করে ভাবা যায় তাঁর রাষ্ট্রসম্পর্ক চিন্তার ধরনটা নিয়ে। বাস্তবে যদি সে দিন নেতাজি জাপানি বাহিনী নিয়ে পৌঁছতেন ভারতের মূল ভূখণ্ডে, কী হত? জাপানিরা জিতলে, এ দেশ কি জাপানি উপনিবেশ হয়ে পড়ত? কাগজে-কলমে এ সম্ভাবনা ছিল কম, হিটলার নাকি মনে করতেন, ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য শেষ হলে আর কোনও সাম্রাজ্যই হালে পানি পাবে না। তা ছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জাপান যে অঞ্চল উপনিবেশ-মুক্ত করেছিল, সেগুলির কোনওটিতেই তারা নিজেরা উপনিবেশ গেড়ে বসেনি। তবে কিনা, ভারতের মতো আকর্ষণীয় জমি বিষয়ে তারা কি উদাসীন থাকতে পারত? সে দিনের প্রেক্ষিতে নেতাজির আশার যাথার্থ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। কিন্তু আরও একটি গুরুতর প্রশ্ন ওঠে: নেতাজির নৈতিকতা নিয়ে, সুবিধাবাদী রাজনীতির ঘরানা নিয়ে।
এই দ্বিতীয় প্রশ্নটি কিন্তু এ বার 'অতীত' হয়ে যাওয়ার সময় এসেছে, একুশ শতকের ভারতে। সি পি আই এম যেমন নেতাজি বিষয়ে তাদের এতকালের অচ্ছুতপনার পাপক্ষালন সেরে ফেলেছে, তেমনই সমগ্র ভারতীয় রাষ্ট্রও একটা ভ্রম-সংশোধন করতে পারে এ বার। এ দেশে 'রিয়্যালিস্ট' বা বাস্তববাদী কূটনীতির নতুন ধারা যে ভাবে হৃষ্টপুষ্ট হচ্ছে, নৈতিকতার বোঝা মাথা থেকে নামিয়ে স্বার্থ-নির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আদর্শ বিকশিত হচ্ছে, তাতে আর এই সংশয় কি পাঠ্যবইয়েও উঁকি দিতে পারে যে, নেতাজি ভ্রষ্ট পথে বিচরণ করছিলেন? স্বাধীন ভারতে এই পথের নিশানা প্রথম এসেছিল ১৯৬২ সালের ভারত-চিন যুদ্ধের পর। নেহরুর অত্যধিক আদর্শতাড়িত বিদেশনীতিই দেশকে বিপদের সামনে ছুঁড়ে ফেলেছিল, এই আত্মধিক্কার থেকে। অর্ধশতক পর সেই নীতি আজ প্রত্যয়ী পূর্ণকলায় বিকশিত। যে যুক্তিতে আজ নয়াদিল্লি মায়ানমারে সামরিক শাসনের অত্যাচার অবজ্ঞা করে জুণ্টা সরকারের সঙ্গে মিত্রভাব বজায় রাখে, যে যুক্তিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের লেকচার অগ্রাহ্য করে ইরানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক মিত্রতায় টোল পড়তে দেয় না, যে যুক্তিতে সিরিয়ার একনায়ক গোটা জাতিকে মেরে-পিটিয়ে জাহান্নমে পাঠিয়ে দিলেও ইউরোপ-আমেরিকার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাল্টা-মারে নামতে অস্বীকার করে— সুভাষচন্দ্র তো সেই যুক্তিই দিয়েছিলেন। জার্মানি বা ইতালির অভ্যন্তরীণ ঘটনাবলি বিষয়ে তিনি সহানুভূতি-পরায়ণ তো ছিলেনই না, তা নিয়ে তাঁর বিশেষ হেলদোলও ছিল না। কেবল পরাধীন ভারতের স্বার্থের প্রিজম্ দিয়ে তিনি দেখছিলেন সম্পর্কগুলিকে: শত্রুর শত্রু আমার মিত্র, এই কৌটিল্য-মতে আস্থা রাখছিলেন। ব্রিটেন আমেরিকা সোভিয়েত ইউনিয়ন সকলেই রেখেছিল বিশ শতকের কোনও না কোনও পর্বে!
স্বার্থচালিত পথই কি কূটনীতির সেরা পথ? তর্ক উঠুক। কিন্তু নেতাজির স্বার্থ-যুক্তির বিরুদ্ধে যে নৈতিকতার যুক্তি, তা দিতে পারত নেহরুর ভারত, নেহরু-উত্তর ভারতের আর সেই অধিকার নেই। বরং স্বীকার করা হোক, দেশের জাতীয় সংগীত কিংবা জাতীয় প্রতীক যেমন নেতাজির ভাবনা থেকেই আহরিত হয়েছে, আমাদের বর্তমান কূটনীতিও তাঁরই পরোক্ষ দান!

ঋণ: ইয়ান কুলমান, নেতাজি ইন ইউরোপ, রেনলাইট/রূপা, ২০১২। সুগত বসু, হিজ ম্যাজেস্টি'জ অপোনেন্ট, অ্যালেন লেন/পেঙ্গুইন, ২০১১।
http://www.anandabazar.com/23edit3.html

নেতাজিকে ঘিরে বিতর্ক, নিন্দায় সরব বিদগ্ধ মহল
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু নাকি গুয়াহাটিতে 'বহিরাগত'! তাঁর জন্মদিনের প্রাক্কালে তাঁকে ঘিরেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে গুয়াহাটিতে! তাঁর নামাঙ্কিত ব্যানার, পোস্টারে কালি ছেটানো হল! তাঁর নামে রাস্তার নাম, সেই নাম পরিবর্তনের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করা হল!
নেতাজিজয়ন্তীর দিন দুয়েক আগে থেকেই নেতাজিকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে এই বিতর্ক। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক, সমাজবিদ, বিদগ্ধ সমাজ নিন্দায় মুখর। আজ, নেতাজির সহযোগী তরুণরাম ফুকনের জন্মদিনে বাঙালি ও অসমীয় সমাজ একযোগে 'ভুঁইফোড়' নেতাজি-বিরোধিতার সমালোচনায় জোটবদ্ধ হল।
নেতাজির ১১৭ তম জন্মদিন পালনে অন্যান্য বারের মতোই প্রস্তুত হচ্ছিল গুয়াহাটি। কলোনিবাজারে, বিনোবা নগর প্রাথমিক স্কুলের সামনে আগামী কাল নেতাজির আট ফুট উঁচু মূর্তির আবরণ উন্মোচন করবেন বিধায়ক রবীন বরদলৈ। পাশাপাশি, 'বৃহত্তর অসম নেতাজি জন্মজয়ন্তী উদ্যাপন কমিটি'-র উদ্যোগে আগামী কাল সকালে প্রভাত ফেরি, সাই চত্বরে অঙ্কন প্রতিযোগিতা, রক্তদান শিবির ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কমিটির সদস্য প্রণবস্বরূপ নেওগ জানান, পল্টনবাজার নেতাজি চক থেকে শোভাযাত্রা বের হবে। থাকবেন রবীন বরদলৈ, মন্ত্রী গৌতম রায়, প্রাক্তন বিধায়ক অজয় দত্ত। ভাষণ দেবেন অসমিয়া সাহিত্যিক অতুলানন্দ গোস্বামী। বেলা ১২ টা ২০ মিনিটে, নেতাজির জন্ম-মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ তুলবেন জাতীয় পতাকা। এমন সময় এই বিপত্তি!
নেতাজির নামে রাস্তার প্রতিবাদে গুয়াহাটিতে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র
গত কাল কলোনি বাজারের ছাদে লাগানো নেতাজির ছবি ও রাস্তার নাম-সহ ব্যনারে পরাণ শইকিয়া নামে এক ব্যক্তি কালি ছিটিয়ে দেন। এ নিয়ে স্থানীয় সাংস্কৃতিক সমাজ প্রতিবাদে পথে নামে। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত স্থানীয় মানুষ অবরোধ তুলে নেন। কিন্তু ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেফতার না করায় ক্ষোভ ছিলই। আজ সকালে হঠাৎই মহিলাদের একটি দলকে সামনে রেখে ব্যাটালিয়ন গেটে শুরু হয় পাল্টা অবরোধ। সামনের ব্যানারে লেখা, 'গড়ভাগা পথের নাম বদল চলবে না।' প্রতিবাদী মহিলারা দাবি করেন, 'বহিরাগত' নেতাজির নামে অসমের রাস্তার নাম বদল তাঁরা মেনে নেবেন না। প্রতিবাদকারীদের দাবির মধ্যেও কোনও মিল নেই। কেউ লিখে এনেছেন, 'গড়ভাগা পথের নাম অপরিবর্তিত রাখতে হবে', কারও হাতে পোস্টার, 'শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের নামে রাস্তার নাম রাখতে হবে', কেউ বলছেন, 'রাস্তার নাম হোক ভূপেন হাজরিকার নামে।' কেউ স্লোগান দেন, 'লখরা রোড জিন্দাবাদ।' প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে চলে রাস্তা অবরোধ। প্রশাসনের বক্তব্য, রাস্তার নাম বদল নিয়ে ২০০৮-এর ফেব্রুয়ারিতে পুরসভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশিত হয়। তখন কোনও আপত্তি ওঠেনি। তাই ২০০৮-এর অগস্টে পুরসভা বিজ্ঞপ্তি জারি করে শরাব ভাটি থেকে লখরা পর্যন্ত রাস্তার নাম 'নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস রোড' রাখে। জনতা হোটেল চকের নাম হয় নেতাজি সুভাষ চক। এত দিন পরে, হঠাৎ নেতাজিকে নিয়ে এই বিতর্কে সমাজসেবী অজয় দত্ত বলেন, "অসমীয়া সমাজ নেতাজি প্রসঙ্গে বরাবরই একজোট। কার্যত বাংলা-অসমের মধ্যে এখনকার মতো সুসম্পর্ক আগে হয়নি। সেটাই ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। যার বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।" 'সেভ গুয়াহাটি, বিল্ড গুয়াহাটির' সভাপতি ধীরেন বরুয়া বলেন, "দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাইতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার নাম নেতাজির নামে রাখা হয়েছে। অথচ যে মানুষ উত্তর-পূর্বের বুকে যুদ্ধ চালিয়ে প্রথম স্বাধীন ভারতের পতাকা তুললেন তিনি আজ বহিরাগত?" রাজ্যের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী গোপীনাথ বরদলৈয়ের পুত্র রবীন বরদলৈ বলেন, "আজ কিছু অজ্ঞ, স্বার্থান্বেষী মানুষের প্ররোচনায় যে কাণ্ড ঘটল তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।"
http://www.anandabazar.com/23desh7.html

টাটার শ্রমিকনেতা ছিলেন নেতাজি

কলকাতা প্রতিনিধি | তারিখ: ২৬-০১-২০১০

কেউ হয়তো জানেন, আবার কেউ হয়তো জানেন না; বিশ্ববরেণ্য স্বাধীনতা-সংগ্রামী নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু কিন্তু একসময় টাটার শ্রমিকনেতা ছিলেন। ১৯২৮ থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ নয় বছর তিনি জামসেদপুরের টাটা ইস্পাত কারখানার টাটা লেবার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন। পরে অবশ্য এই শ্রমিক সংগঠনের নাম হয় 'টাটা স্টিল ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন'।
নেতাজি শ্রমিকনেতা হিসেবে ১৯২৮ সালের ২ নভেম্বর টাটা স্টিলের তত্কালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এন বি সকালাতবালাকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। ওই চিঠিতে টাটা কোম্পানির বিভিন্ন পদে ভারতীয়দের নিয়োগের দাবি করেছিলেন তিনি। কারণ, ওই টাটা স্টিলে তখন ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের আধিপত্য বেশি ছিল। 
এবার ২৩ জানুয়ারি নেতাজির ১১৪তম জন্মজয়ন্তীতে জন্মস্থান ওড়িশার কটকে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সেই তিন পাতার চিঠিটি তুলে দেওয়া হয় ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের হাতে।

http://www.prothom-alo.com/detail/news/37637


Child workers - B pixel Schlagworte Familie , Konstruktion , Tochter , Arbeit , IND , Mädchen , Gebäude , Wasser , Mannschaft , Schwester , Kind , Zement , Wirtschaft , Ökonomie , Bau

আপনাদের মতামত

'দরকার অন্তরের পরিশুদ্ধি, মানবতাবোধের জাগরণ'

সুভাষ চক্রবর্তী লিখেছেন, 'গৃহকর্মীদের দাসীর মর্যাদা না দিয়ে শ্রমিকের মর্যাদা দিতে হবে' – এক কথায় এটি একটি অনবদ্য প্রতিবেদন৷ এই প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে গৃহকর্মীদের একটি অপ্রিয় হলেও চূড়ান্ত বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে৷

ঘরকন্নার কাজে সহায়তাকারীদের প্রতি অসভ্য ও বর্বরোচিত আচরণ আধুনিক সভ্য সমাজে ভাবাই যায় না৷ অথচ বাস্তবে তাই ঘটে চলেছে৷ আমরাও যে নিজ নিজ পেশাগত কাজে প্রত্যেকেই এক এক জন শ্রমিক, এই বাস্তব সত্যটি ভুলে যাই সকলেই৷ কাজের মানুষদের বা অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর শ্রেণির মানুষের অধিকারকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়াটা অবশ্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ তবে সবচেয়ে আগে যেটা দরকার তা হলো, প্রতিটি মানুষের জীবনের মূল্যবোধকে সামাজিক স্বীকৃতি দেওয়া আর আমাদের অন্তরের পরিশুদ্ধি, মানবতাবোধের জাগরণ৷

তিনি আরো জানিয়েছেন, আজ ২৩শে জানুয়ারি, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিন৷ প্রতি বছর এই দিনে নতুন দিল্লির রাজপথে ২৬শে জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের বর্ণাঢ্য প্যারেডের মহড়া অনুষ্ঠিত হয়৷ এই দিনে যানবাহন চলাচলের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণের কারণে অফিসে দুপুর একটার আগে আসা হয়ে ওঠে না৷ অফিসে এসেই আগে ওয়েবসাইট খুলে দেখে নিলাম বিভিন্ন বিষয়ের ওপর তুলে ধরা সর্বশেষ প্রতিবেদন৷ কারণ একটাই, ডয়চে ভেলের সাথে যে প্রতিদিন থাকতেই হবে, সেখানে যে আছে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে সংগৃহীত সর্বশেষ ঘটনাবহুল প্রতিবেদনগুলো৷

Niedersachsen/ Der Kanzlerkandidat der SPD, Peer Steinbrueck, steht am Samstag (19.01.13) in Goettingen beim Strassenwahlkampf der SPD fuer die Landtagswahl 2013 in Niedersachsen vor roten Luftballons. Die Wahl findet am Sonntag (20.01.13) statt. Foto: Swen Pfoertner/dapdপেয়ার স্টাইনব্রুক

নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিনে আমি আজকের জার্মানিতে নেতাজিকে কেমন চোখে দেখা হয়, সে বিষয়ে জানতে চাই৷ ২৩শে জানুয়ারি জার্মানির কোথাও নেতাজির জন্মদিন পালন করা হয় কি? উত্তরের আশায় থাকলাম৷ সুখময় মাজী, গঙ্গাজলঘাটী, বাঁকুড়া৷

সম্প্রতি কিছু শ্রোতা আমার সম্মান নষ্টের জন্য আমার উপর হিংসা পরায়ন হয়ে বিভিন্ন বেতারে আমার নাম দিয়ে কুভাষায় চিঠি লিখছে৷ আপনাদের কাছে অনুরোধ, আমার নামে আসা কোনো ভিক্তিহীন চিঠির উত্তর দেবেন না৷ শুভেচ্ছান্তে মো. রাসেল সিকদার, সভাপতি জ্ঞান বিকাশ কেন্দ্র রেডিও ক্লাব, শ্রীনাথদী, কেন্দুয়া, মাদারীপুর৷

লোয়ার স্যাক্সনির নির্বাচনে এসডিপি প্রার্থী পেয়ার স্টাইনব্রুকের জয় চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের অস্বস্তি বেশ কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ আঙ্গেলা ম্যার্কেলের নাম ও জার্মানিতে তাঁর সম্বন্ধে ডয়চে ভেলে থেকে জানার সুযোগ পেয়েছি৷ ব্যক্তি হিসেবে তাঁকে কখনোই খারাপ মনে হয়নি৷ পিয়ার স্টাইনব্রুক সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানা নেই৷ ম্যার্কেল দীর্ঘদিন চ্যান্সেলার পদে থাকার কারণে তাঁর গৃহীত পদক্ষেপগুলি হয়ত বা কারো কারো খারাপ লাগতে পারে৷ না হলে বিরোধী পক্ষের এসডিপি প্রার্থী পেয়ার স্টাইনব্রুক লোয়ার স্যাক্সনির নির্বাচনে এতটা সাফল্য হয়ত পেতেন না৷

Israel's Prime Minister Benjamin Netanyahu touches the Western Wall in Jerusalem's Old City after casting his ballot for the parliamentary election January 22, 2013. Israelis look set to elect Netanyahu to a third term with a smaller majority on Tuesday, pushing the Jewish State even further to the right, away from peace with Palestinians and towards a showdown with Iran. REUTERS/Uriel Sinai/Pool (JERUSALEM - Tags: POLITICS ELECTIONS)ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু

ইসরায়েলের সংসদীয় নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু একতাবদ্ধ ইসরাইল গঠনের যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা প্রশংসার দাবি রাখে৷ লিকুদ পার্টি পুনরায় জয়ী হবে, কিন্তু সেই জয়টাও হবে খুব কষ্ট-সৃষ্টে – এমনটাই মনে করেন জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা৷ হোম পার্টির নাফতালি বেনেট ভোটারদের মনে কিছুটা জায়গা করে নিতে পেরেছেন৷ ফলে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ক্ষমতা কিছুটা হলেও ধাক্কা খাবে বলেই মনে হয়৷ শুভেচ্ছাসহ বিশ্বনাথ মণ্ডল, সভাপতি ওয়ার্ল্ড রেডিও ক্লাব, চক হড়হড়িয়া, ইসলামপুর মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত৷

- মতামতের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ সবাইকে৷

সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

http://www.dw.de/%E0%A6%A6%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%85%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%BF-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%8B%E0%A6%A7%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%97%E0%A6%B0%E0%A6%A3/a-16545499

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু : ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সবচেয়ে বর্ণময় ব্যক্তিত্ব

মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে নেতাজি

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সবচেয়ে বর্ণময় ব্যক্তিত্ব। দেশের বাইরে গিয়ে বিদেশি শক্তির সাহায্যে এক বিরাট সেনাবাহিনী গড়ে তুলে তিনি সরাসরি ভারতের ব্রিটিশ সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করেছিলেন। তাঁর এই আক্রমণের জেরেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশরা আর বেশিদিন ভারতকে নিজেদের অধীনে রাখতে পারেননি।

১৮৯৭ সালের ২৩ জুন এখনকার ওড়িশা রাজ্যের কটক শহরে সুভাষচন্দ্র জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি অবশ্য ছিল পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার বারুইপুরের কাছে কোদালিয়া গ্রামে। ১৯১৯ সালে দর্শনে প্রথম শ্রেণিতে বিএ পাস করেন তিনি। এরপর বাবা-মায়ের ইচ্ছায় ১৯২০ সালে ইংল্যান্ডে গিয়ে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসেন। এই পরীক্ষাতে চতুর্থ স্থান অধিকার করলেও, ১৯২১ সালে সিভিল সার্ভিস থেকে পদত্যাগ করেন এবং দেশে ফিরে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের অধীনে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন। দেশবন্ধুর মৃত্যুর পর তিনি তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়ে কলকাতা শহরের মেয়র হয়েছিলেন। ১৯৩৮ সালে মহাত্মা গান্ধীর লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য তাঁকে ইংরেজরা জেলে বন্দী করে। ১৯৩৮ সালে হরিপুরা কংগ্রেস অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতি নির্বাচিত হন সুভাষ। কিন্তু গান্ধীজির সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় ১৯৩৯ সালের এপ্রিল মাসে তিনি সেই পদ ত্যাগ করেন। এরপর জওহরলাল নেহেরুর সঙ্গেও তাঁর মতবিরোধ হয়। তখন কংগ্রেসের মধ্যেই তিনি ফরওয়ার্ড ব্লক নামে একটি রাজনৈতিক উপদল তৈরি করেন। এরপরই ব্রিটিশ সরকার তাঁকে গৃহবন্দী করে।

১৯৪১ সালের ২৬ জানুয়ারি সুভাষচন্দ্র বাড়ি থেকে অন্তর্হিত হন। এরপর দেশের বাইরে গিয়ে ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য সৈন্য ও রসদ সংগ্রহ শুরু করেন। প্রথমে জার্মানির সঙ্গে কথা বলেন। পরে জাপানের সক্রিয় সাহায্য আদায় করেন। ১৯৪২ সালের জানুয়ারি মাসে রেডিও বার্লিন থেকে নিয়মিত বেতার সম্প্রচারও শুরু করে দেন সুভাষ। পরের বছর পূর্ব এশিয়ায় গিয়ে রাসবিহারী বসুর হাত থেকে ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। গড়ে তোলেন আজাদ হিন্দ ফৌজ। এই ফৌজে তিনিই হন সর্বাধিনায়ক। দেশবাসী তাঁকে 'নেতাজি' অর্থাৎ 'মহান নেতা' সম্মানে ভূষিত করেন। ১৯৪২ সালের ২১ অক্টোবর নেতাজি 'আর্জি-হুকুমৎ-এ-আজাদ হিন্দ' বা 'আজাদ হিন্দ সরকার' ঘোষণা করেন। এই সরকার সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ভারতে ব্রিটিশ শাসনমুক্ত করার জন্য বদ্ধপরিকর হয়। জাপানি বাহিনীর সহায়তায় আজাদ হিন্দ ফৌজ ভারত অভিযান চালায়। মণিপুরের কোহিমা দখল করে স্বাধীন ভারতের প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে এই বাহিনী। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জও দখল করেছিলেন তাঁরা। নেতাজি এই দ্বীপের নাম রেখেছিলেন 'শহীদ ও স্বরাজ দ্বীপপুঞ্জ'।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নেতাজি সুভাষচন্দ্রের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সকল দেশবাসীকে এক অখণ্ড জাতিসত্ত্বায় বেঁধে জাতীয় সংহতিকে দৃঢ় করেছিলেন। আজাদ হিন্দ ফৌজের জওয়ানদের মধ্যে তিনি ভালবাসা ও আনুগত্যের এক আশ্চর্য অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করেছিলেন। এমনকি দেশ স্বাধীন হলে সেদেশের প্রশাসন ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনা কেমন হবে, তাও ঠিক করে রেখেছিলেন তিনি। ১৯৯২ সালে তাঁকে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান 'ভারতরত্ন' দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়। কিন্তু তাঁর পরিবারবর্গের আপত্তিতে এই সম্মান দেওয়া হয়নি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সুভাষচন্দ্রকে 'দেশনায়ক'আখ্যা দিয়ে তাসের দেশ নৃত্যনাট্যটি তাঁকে উৎসর্গ করেন। উৎসর্গপত্রে লেখেন: "স্বদেশের চিত্তে নূতন প্রাণ সঞ্চার করবার পূণ্যব্রত তুমি গ্রহণ করেছ, সেই কথা স্মরণ ক'রে তোমার নামে 'তাসের দেশ' নাটিকা উৎসর্গ করলুম।" আজাদ হিন্দ ফৌজের অভিযান ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলেও, সুভাষচন্দ্রের শৌর্য ও আপোষহীন রণনীতি তাঁকে ভারতব্যাপী জনপ্রিয়তা দান করে। নেতাজির জন্মদিন বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে একটি রাষ্ট্রীয় ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। স্বাধীনতার পর কলকাতারর একাধিক রাস্তা তাঁর নামে নামাঙ্কিত করা হয়। বর্তমানে কলকাতার একমাত্র ইন্ডোর স্টেডিয়াম নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম তাঁর নামে নামাঙ্কিত। নেতাজির জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে দমদম বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তিত করে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রাখা হয়। তাঁর নামে কলকাতায় স্থাপিত হয় নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও নেতাজি সুভাষ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং দিল্লিতে স্থাপিত হয় নেতাজি সুভাষ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি। কলকাতা মেট্রোর দুটি স্টেশন বর্তমানে নেতাজির নামাঙ্কিত: "নেতাজি ভবন" (পূর্বনাম ভবানীপুর) ও "নেতাজি" (পূর্বনাম কুঁদঘাট)।

বলা হয়, ১৯৪৫ সালের ১৮ অগস্ট তাইওয়ানের তাইপেইতে এক বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর সত্যতা আজও প্রমাণিত হয়নি।

তথ্য ও ছবি : সংগৃহীত

http://www.salekkhokon.me/?p=1557


বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদার

বাংলাদেশ তথা ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদারের শততম জন্মবর্ষ পূর্ণ হলো ৫ মে। সামান্য কিছু ব্যতিক্রম বাদে কোথাও এই মহীয়সী সংগ্রামী নারীর জীবনাদর্শ ও দেশের জন্য মহান আত্মত্যাগ নিয়ে কোনো খবরের কাগজে প্রতিবেদন ছাপা হয়নি বা কোনো ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কোনো আলোচনা হয়নি। এর আগেও দেখেছি, স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদ ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসির শততমবর্ষ অতিক্রান্ত হয়েছিল, আমরা তা স্মরণ করতে ভুলে গিয়েছিলাম।

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ উপমহাদেশের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মহান বিপ্লবী নেতা নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর শততম জন্মবার্ষিকী ভারতবর্ষে পালিত হলেও বাংলাদেশের কেউ জানতেও পারল না কবে এই দিনটি পার হয়ে গেছে। মহান বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেনের জন্মশতবর্ষ কলকাতায় ও চট্টগ্রামে পালিত হয়েছিল বেসরকারি উদ্যোগে। কলকাতা থেকে সূর্য সেনের কয়েকজন সহযোদ্ধা, যাঁরা তখনো জীবিত ছিলেন, তাঁরা বাংলাদেশে এসেছিলেন; কিন্তু ঢাকায় তাঁদের কোনো রাষ্ট্রীয়ভাবে সংবর্ধনা দেওয়া হয়নি। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী এসব মহান রাজনৈতিক নেতা ও বিপ্লবীকে ভুলে যাওয়া অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করা আমাদের জন্য জাতি হিসেবে লজ্জার কথা।  নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, সূর্য সেন, ক্ষুদিরাম, বাঘা যতীন, প্রীতিলতা তাঁদের ভুলে যাওয়া কোনো অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি বলে আমার মনে হয় না। এটি একটি প্রতিক্রিয়াশীল মানসিকতার পরিচায়ক মাত্র। এমনকি সেই পাকিস্তানি মানসিকতার জের এখনো চলে আসছে বললেও বোধ হয় অত্যুক্তি হবে না।

আমাদের দেশে সাধারণত স্বাধীনতার ইতিহাস শুরু করা হয় ১৯৪৭ সাল তথা পাকিস্তান আমল থেকে। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত যে গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ইতিহাস তা নিঃসন্দেহে গৌরবের। ষাটের দশকে আমি নিজেও এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছি। সেই আন্দোলনের পরিণতিতে ১৯৭১ সালের যে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ,তা নিয়ে মহান মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার নিজেরও গর্ব আছে। থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একই সঙ্গে পাকিস্তান আমলের আগে যে ব্রিটিশবিরোধী মহান রক্তাক্ত সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে, যার ঐতিহ্যের অধিকারী উপমহাদেশের ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান_এ তিন দেশেরই জনগণ, সেই মহান ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে ভুলে গেলে চলবে না। ভারত ও বাংলাদেশের আছে একই সাধারণ ইতিহাস, একই সাধারণ ঐতিহ্য-সংস্কৃতি এবং একই ভাষা (বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা, আসামের অংশবিশেষের জনগণের ভাষা হলো বাংলা)।

তাই রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল উভয় দেশের সাধারণ সম্পত্তি। বিদ্যাসাগর, মাইকেল, বঙ্কিম, মীর মশাররফ হোসেন, লালন শাহ, শরৎচন্দ্র, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুকান্ত ভট্টাচার্য প্রমুখ আমাদের দুই দেশের মহান সম্পদ। এ তো গেল সাহিত্য-সংস্কৃতির কথা। যেসব রাজনীতিবিদ ও বিপ্লবী ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন, তাঁদের কি দেশ বিভাগের মতোই ভাগ করা যাবে? নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু তো বটেই (যাঁর অন্তর্ধান ঘটেছিল ১৯৪৫ সালে), এমনকি মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু, আবুল কালাম আজাদ বা উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের খান আবদুল গাফফার খান আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নায়ক এবং একই ঐতিহ্যের অংশ। তাঁদের প্রত্যেককেই আমরা যদি শ্রদ্ধা জানাতে না পারি, তবে সে কলঙ্ক আমাদের, অন্য কারোর নয়।

প্রসঙ্গক্রমে আসতে পারে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নাম। তিনিও যে ইতিহাসের অংশ, সেটা তো আর অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু তাঁকে আমরা সম্মান জানাতে পারছি না। কারণ তাঁর রাজনীতিটা ছিল প্রতিক্রিয়াশীল,সাম্প্রদায়িক ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সহযোগী। উপরন্তু তিনি বাংলা ভাষাকে অস্বীকার করে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি যে অন্যায় আচরণ করেছিলেন, তাতে বাংলাদেশের জনগণের কাছ থেকে নিন্দা ও ধিক্কারই তাঁর পাওনা ছিল।

আমাদের দেশে দেখা গেছে, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তো বটেই, এমনকি অধিকাংশ বুদ্ধিজীবীর মধ্যেও ভাবখানা এমন যেন ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু হয়েছে স্বাধীনতার ইতিহাস। তার আগের ইতিহাস যেন আমাদের পাঠ্য নয়। কিন্তু ২০০ বছরের সশস্ত্র ও নিরস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বহু শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা ব্রিটিশকে তাড়াতে সক্ষম হয়েছিলাম। এই সংগ্রামের মধ্যে ছিল তিনটি ধারা। প্রথমত সশস্ত্র ধারা,১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ,যাকে কার্ল মার্কস বলেছিলেন_ভারতের প্রথম স্বাধীনতার যুদ্ধ, যার প্রধান নেতা বা নেত্রী ছিলেন নানা সাহেব, তাতিয়া তোপি, ঝাঁসির রানি প্রমুখ।

এই সংগ্রাম ছিল হিন্দু-মুসলমানের মিলিত লড়াই। সশস্ত্র সংগ্রামের নবপর্যায়ের ধারা তৈরি হয়েছিল বিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকে তৃতীয় দশক পর্যন্ত, যাঁর নায়ক ছিলেন অরবিন্দ ঘোষ (একপর্যায় পর্যন্ত)। সূর্য সেন, বাঘা যতীন, রাসবিহারী বসু এবং অনুশীলন, যুগান্তর দলের নেতারা। আরো পরে আমরা দেখব মহান জাতীয়তাবাদী বিপ্লবী নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দু ফৌজের সশস্ত্র যুদ্ধ, যাতে হিন্দু-মুসলমান উভয়ই ছিলেন সেনাপতি ও সাধারণ সৈনিকের পদে। ১৯৪৬ সালের বোম্বাইয়ের মহান নৌ-বিদ্রোহ ব্রিটিশ যুগের সর্বশেষ সশস্ত্র সংগ্রামের ঘটনা, সেটিও ছিল হিন্দু-মুসলমানের মিলিত লড়াই।

সশস্ত্র সংগ্রামের পাশাপাশি ছিল মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে দেশ কাঁপানো গণ-আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, লবণ আন্দোলন ও ভারত ছাড় আন্দোলন। তৃতীয় আরেকটি ধারাও ছিল,তা হলো,শ্রমিক-কৃষকের জঙ্গি সংগ্রাম,যার নেতৃত্বে ছিলেন কমিউনিস্টরা। এই তিন ধারার যোগফলেই এসেছিল ভারতবর্ষের স্বাধীনতা।সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামকে পথভ্রষ্ট,বিভক্ত ও দুর্বল করার জন্যই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের আনুকূল্যে গড়ে উঠেছিল একটি প্রতিক্রিয়াশীল আন্দোলন, দ্বিজাতিতত্ত্বভিত্তিক পাকিস্তান আন্দোলন। বাংলাদেশের মুসলমান জনগণ সাময়িকভাবে বিভ্রান্ত হয়েছিল। পাকিস্তান আমলে যাঁরা এ দেশের জনগণকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, দুর্ভাগ্যক্রমে তাঁরা সবাই একদিন পাকিস্তান আন্দোলনের নেতা বা কর্মী ছিলেন। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান_সবাই পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। পরবর্তী সময়ে মওলানা ভাসানী অসাম্প্রদায়িক ও সমাজতন্ত্র অভিমুখী রাজনীতির উদ্বোধন ঘটিয়েছিলেন। ষাটের দশকে বাঙালি জনগণের পাকিস্তানবিরোধী জাতীয়তাবাদী চেতনায় যে বিশাল জাগরণ ঘটেছিল, তা সম্ভব হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য নেতৃত্বের কারণেই।

মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কিন্তু ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের ইতিহাসকে বাদ দিয়ে নয়। উপরন্তু ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা কেবল পাকিস্তানকে দ্বিখণ্ডিত করে নতুন এক দেশ করিনি, অর্থাৎ আরেকটি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করিনি (অথবা অনেকে যেভাবে বলেন, লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন করেছি মাত্র; তা কিন্তু নয়), আমরা জিন্নাহ্র দ্বিজাতিতত্ত্ব খণ্ডন করেই প্রগতিশীল চেতনার জন্ম দিয়েছি। সে জন্য বাংলাদেশ পাকিস্তানের আরেকটি সংস্করণ নয়, যদিও তেমনটি বানানোর চেষ্টা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গেই বলতে হয় যে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অনুমোদন অথবা সংবিধানের শুরুতে 'বিসমিল্লাহ' শব্দ যোগ ইত্যাদি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ।

আবারও বলতে চাই যে পাকিস্তানি ভাবধারা নানাভাবে আমাদের শাসকবর্গ ও তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের একাদশের মধ্যে সচেতন বা অসচেতনভাবে আছে বলেই আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে অস্বীকার করি, যে মহান ঐতিহ্যের মধ্যে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকান্ত, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় অথবা ঝাঁসির রানি, তিতুমীর, ভগৎ সিং, সূর্য সেন, বাঘা যতীন, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু অথবা মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু, আবুল কালাম আজাদ, খান আবদুল গাফফার খান প্রমুখ। এসব নেতার কোনো কোনো ভূমিকা নিয়ে হয়তো কারোর সমালোচনা থাকতে পারে। কোনো রাজনৈতিক নেতাই সমালোচনার ঊধর্ে্ব নন। কিন্তু তাঁরা সবাই সাম্রাজ্যবাদবিরোধী যোদ্ধা হিসেবে আমাদের শ্রদ্ধেয় এবং আমাদের ঐতিহ্যের অংশ।

প্রসঙ্গক্রমে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করতে চাই। পাকিস্তান আমলে লেখক খন্দকার ইলিয়াস একটি বহুল প্রচারিত ও বহুল প্রশংসিত বই লিখেছিলেন 'ভাসানী যখন ইউরোপে'। আইয়ুব সরকার বইটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকার হাইকোর্টে রিট হয়েছিল, হাইকোর্ট অবশ্য নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছিলেন। হাইকোর্টের বিচারক নিষিদ্ধ রাখার পক্ষে যেসব যুক্তি দিয়েছিলেন, তার মধ্যে সূর্য সেনের প্রসঙ্গটি এসেছিল। বিচারকের মতে, সূর্য সেন ছিলেন ডাকাত ও হত্যাকারী, উপরন্তু হিন্দু। যে বইয়ে সূর্য সেনের প্রশংসা করা হয়েছে, সেই বই নাকি পাকিস্তানে চলতে দেওয়া যায় না। বইটির এক স্থানে মওলানা ভাসানী দেশপ্রেমিক সূর্য সেনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছিলেন,লেখক নিজেও শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন। এটাই ছিল অপরাধ। এটাই ছিল পাকিস্তানি মানসিকতা। বর্তমানে এতটা সোচ্চার না হলেও সেই পাকিস্তানি মানসিকতা কি একবারে শেষ হয়ে গেছে? আমার সন্দেহ আছে। অন্যথায় বীরকন্যা স্বাধীনতার যোদ্ধা প্রীতিলতা কেন মিডিয়ায় এতটা উপেক্ষিত হবেন? কেন দেখতে পাই না জন্মশতবর্ষে রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠান? প্রীতিলতার নামে ও সূর্য সেনের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থাকলেও কেন নেই সেখানে তাঁদের কোনো আবক্ষ মূর্তি।

যে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করতে গিয়ে প্রীতিলতা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, চট্টগ্রামের সেই ইউরোপিয়ান ক্লাবটিকে কেন এখনো মিউজিয়ামে রূপান্তরিত করা হয়নি। এটি এখন একটি সরকারি অফিস। অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় আছে। প্রীতিলতার বা সংগ্রামের চিহ্নমাত্র নেই।চট্টগ্রামে সূর্য সেনের একটি মূর্তি আছে, জে এম সেন হলের পাশে তাও আবার খাঁচার মধ্যে বন্দি অবস্থায়। ছি! ছি! এ যে কত বড় লজ্জার কথা। লিখতেও সংকোচ বোধ হচ্ছে। আশা করি, আমরা যেন ব্রিটিশবিরোধী ঐতিহ্যপূর্ণ সংগ্রামের ইতিহাসকে খণ্ডিত না করি অথবা ইচ্ছাকৃত উপেক্ষা না করি কিংবা সাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে বিকৃত করার চেষ্টা না করি। ঝাঁসির রানি, তিতুমীর, সূর্য সেন, ভগৎ সিং, ক্ষুদিরাম, কানাই লাল, বাঘা যতীন, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদার যে মহান ঐতিহ্য তৈরি করে গেছেন, আমরা যেন তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকেও যেন স্থান পান এসব জাতীয় বীর। আমাদের শিশুরা যেন গড়ে ওঠে তাঁদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে। মহীয়সী বীর নারী ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের অকুতোভয় যোদ্ধা প্রীতিলতা ওয়াদ্দাদারের জন্মশতবর্ষে তাঁর প্রতি সশস্ত্র সালাম ও শ্রদ্ধা।

লেখক : হায়দার আকবর খান রনো, রাজনীতিক ও কলামিস্ট
পোষ্টটি কালের কন্ঠ থেকে সংগ্রহীত

http://www.kishorgonj.com/?p=9611

বাঙালির মতো জাপানিদেরও তিন বাঙালি ব্যক্তিত্বকে নিয়ে আগ্রহ ও কৌতূহল আদৌ কম নয়। এঁরা হলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজনীতিবিদ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এবং বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অবশ্য বাংলাদেশে জন্ম বিচারপতি ডঃ রাধাবিনোদ পাল জাপানে সবচেয়ে নমস্য ব্যক্তিত্ব। প্রবীণদের কাছে প্রিয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে নেতাজির বিকল্প নেই বললেই চলে।

তেমনি একজন প্রবীণ ব্যক্তিত্ব ৮৫ বছর বয়সী তেৎসুরো ইয়ামামোতো। ৩৫ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠা  গ্রীষ্মের প্রচন্ড খরতাপকে তুচ্ছ করে বহু দূর থেকে এসেছিলেন নেতাজিকে শ্রদ্ধা জানাতে আগস্ট মাসের ১৮ তারিখে। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তাই শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে এসেছিল। দাঁড়িয়ে কথা বলার মতো শক্তি নেই তাঁর শরীরে তথাপি প্রায় ঘন্টাখানেক নেতাজিকে নিয়ে কথা বললেন। মনে হয়  সারাদিন কথা বললেও তিনি ক্লান্ত-শ্রান্ত  হবেন না! এতখানি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা বহন করছেন প্রবীণ জাপানিরা, যাঁরা একদিন নেতাজির সঙ্গে কাজ করেছেন বা সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছেন।

প্রতি বছর এই দিনে টোকিওর সুগিনামি-ওয়ার্ডের ওয়াদা শহরে অবস্থিত রেনকোজি বৌদ্ধমন্দিরে নেতাজির মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়ে থাকে। দুপুর  ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় উপস্থিত থাকেন  নেতাজির প্রায় ৭০ জন জাপানি ও বিদেশী ভক্ত। অধিকাংশই জাপানি, জনা কয়েক ভারতীয় আর বাংলাদেশী দু-একজন। আমার দেখামতে গত দশ বছরেও বাংলাদেশ দূতাবাসের কোন কর্মকর্তা মন্দিরে পা ফেলেননি এই দিবসটিতে। তারা জানেন কিনা সেটাই সন্দেহ জাগায় মনে। তবে প্রতি বছর ভারতীয় দূতাবাস থেকে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা একজন উপস্থিত থাকেন। এবারও এসেছিলেন ডেপুটি চীফ অব মিশন মিঃ সঞ্জয় পান্ডা।

এই স্মরণসভার আয়োজনের প্রথম উদ্যোক্তা 'নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস একাডেমী-জাপান' এর প্রতিষ্ঠাতা-কর্মসচিব নেতাজিভক্ত মাসাও হায়াশি। তিনি নেতাজির ভ্রাতুষ্পুত্র অমিয়নাথ বসুর অনুরোধে এই সংস্থাটি স্থাপন করেছিলেন প্রায় শতাধিক নেতাজি ভক্তকে নিয়ে ১৯৫৮ সালে। যাঁদের অধিকাংশই এখন মৃত। ২০০৬ সালে হায়াশিও ইহলোক ত্যাগ করার পর একাডেমীটি  বন্ধ হয়ে যায় ফলে মন্দির কর্তৃপক্ষই  এখন এই সভার আয়োজন করে আসছে।

জানা  যায় যুদ্ধশেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাজির চিতাভস্ম রেনকোজি মন্দিরের তৎকালীন প্রধান পুরোহিত রেভারেন্ড মোচিজুকি গ্রহণ করেছিলেন একদিন ভারতবর্ষ  স্বাধীন হলে  পরে এই পবিত্র চিতাভস্ম তাঁর স্বদেশভূমিতে ফেরত দেবেন বলে। কিন্তু নানা বিতর্ক এবং সন্দেহের কারণে এখনো নেতাজির চিতাভস্ম জন্মভূমি পশ্চিমবঙ্গে ফেরত যায়নি। ৬৫ বছর ধরে তিনি এখনো জাপান প্রবাসী। মাসাও হায়াশি মৃত্যু পর্যন্ত বহু দেনদরবার করা  সত্ত্বেও ফলপ্রসূ হতে পারেননি। নেতাজির কন্যা অনিতা বসু (Anita Bose Pfaff, জন্ম ১৯৪২-) পর্যন্ত  ভারতের  প্রাক্তন কয়েকজন প্রধানমন্ত্রীকে  আবেদন-নিবেদন করেছেন কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

প্রকৃতপক্ষে না হওয়ার কারণ নেতাজির মৃত্যু নিয়ে নানা রকম রহস্য ও জটিলতা। নেতাজির আত্মীয়সহ ভারতীয়রা এখনো মনে করেন নেতাজি ১৮ আগস্ট আদৌ তাইওয়ানে মৃত্যুবরণ করেননি, বরং তিনি আজও এশিয়ার কোথাও না কোথাও পালিয়ে আছেন ১১৩ বছর বয়সে! সত্যিই নেতাজি তাইওয়ানে মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা অনুসন্ধান কাজ চালানো হয়েছে তিনবার। সর্বশেষ ২০০২ সালে ভারতের সুপ্রীম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম কে মুখার্জির নেতৃত্বে অনুসন্ধানী দল তাইওয়ান থেকে রাশিয়া, লন্ডন এবং জাপানেও আসেন কিন্তু বিমান দুর্ঘটনার আলামত খুঁজে  পাননি। শেষ পরীক্ষা  হিসেবে রেনকোজিতে রতি চিতাভস্ম ডিএনএ পরীক্ষার  জন্য চাওয়া হলে মন্দির কর্তৃপক্ষ দেননি   বলে ভারত অ ভিযোগ  করেছে এবং এরপর আর কোন অগ্রগতি  হয়নি। কিন্তু জাপানি ভক্তরা দৃঢ়ভাবেই বিশ্বাস করেন যে, নেতাজি এই তারিখে ভিয়েতনামের রাজধানী  সাইগন  থেকে তাইওয়ানের তাইপে হয়ে রাশিয়া যাওয়ার পথে তাইপের অদূরে মাৎসুয়ামা বিমানবন্দরে এক বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। নেতাজিকে বহনকৃত একটি জাপানি যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় পতিত হলে পরে তাঁর সারা শরীর আগুনে ঝলসে যাওয়ার ফলে অজ্ঞান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন মিলিটারি  হাসপাতালে। যদিওবা তাঁকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছিল বলে নেতাজির ভারতীয় এবং জাপানিদের ভাষ্য থেকে জানা যায়। জাপানি চিকিৎসক ইয়োশিমি তানেয়োশি কর্তৃক নেতাজির মৃত্যু সংক্রান্ত প্রামাণ্য সনদপত্র পর্যন্ত বলছে নেতাজি তাইওয়ানে মারা গিয়েছেন। এই ঘটনার সঙ্গে একটি দুর্ঘটনাজনিত পূর্বাভাস  পাওয়া যায় নেতাজি লিখিত একটি চিরকূটে। ১৯৫৬ সালে গঠিত নেতাজি অনুসন্ধান কমিটিপ্রধান নেতাজি সহযোগী এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের (INA) প্রাক্তন লে.কর্নেল শাহ্ নেওয়াজ খানের কাছে নেতাজির ব্যক্তিগত বিশ্বস্ত সহকর্মী ই.ভাস্করন কর্তৃক হস্তান্তরকৃত  সেই চিরকূটে লেখা ছিল: I am writing this letter, because I am going for a long journey. Who knows I won't get into a plane accident.

আবার অন্যদিকে একাধিক দলিলপত্রের বদৌলতে জানা যায় নেতাজির জীবিত থাকার খবর। যেমন অধ্যাপক.গবেষক পূরবী রায় বলছেন, নেতাজি ইরান হয়ে রাশিয়ায় গিয়েছেন এবং জীবিত  ছিলেন স্টালিনের মৃত্যু পর্যন্ত। স্টালিনের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ধারণকৃত প্রামাণ্যচিত্রে নেতাজিকে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে বলেও ভিন্নমত রয়েছে। নেতাজি গঠিত ফরোয়ার্ড ব্লকের প্রবীণ নেতারা বলছেন, পূর্ববর্তী রাজনৈতিক মতানৈক্যের কারণে নেতাজি যাতে ভারতে প্রত্যাবর্তন করে ক্ষমতা   দখল করতে না পারেন তার জন্য প্রতিপক্ষ নেহেরু স্টালিনের মাধ্যমে রাশিয়ায় নেতাজিকে আটকে রেখেছিলেন অথবা হত্যা করিয়েছিলেন। আবার একটি  দুষ্প্রাপ্য  আলোকচিত্র যার তারিখ ২৭ মে ১৯৬৪, নেহেরুর মৃত্যুতে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে নেতাজি  সন্ন্যাসীর বেশে এসেছিলেন--যা পরবর্তীকালে বহুল প্রচারিত রহসম্যয় 'ভগবানজি' নামক জনৈক আধ্যাত্মিক শক্তিধারী সন্ন্যাসীর ঘটনাবলিকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তাহলে কী নেতাজির তাইওয়ান বিমান দুর্ঘটনা ছিল তাঁরই সাজানো একটি পরিবল্পনা অন্তর্ধান হওয়ার জন্য? নাকি নেহেরুই সাজিয়েছেন এমন নাটক যাতে মানুষ মনে করে নেতাজি মৃত্যুবরণ করেছেন? নেতাজির বিশ্বস্ত সহযোগী হাবিবুর রহমান এবং দুটি অনুসন্ধান কমিটিপ্রধান শাহ্ নেওয়াজ খান এবং জিডি খোশলা কেন মিথ্যে ভাষ্য দিলেন যে নেতাজি তাইওয়ানেই বিমান  দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছেন--এও এক মহারহস্য! বস্তুত নেতাজির মৃত্যু  বা অন্তর্ধান   সম্পর্কে বহু তথ্য ও রহস্য বিদ্যমান। যার গবেষণা করে শেষ করা যাবে না। তাঁর মৃত্যুর কারণ খোঁজার চেয়ে বরং এই মহান দেশপ্রেমিকের জীবন, কর্ম ও আদর্শ থেকে নতুন এবং অনাগত প্রজন্ম কী শিক্ষালাভ  করতে পারে সেটাই উপলক্ষ হওয়া উচিৎ। 

তাই অধিকাংশ জাপানি এখন আর এই রহস্যময় মৃত্যু নিয়ে কথা বলেন না। তথাপি প্রবীণ ভক্তদের অকাট্য বিশ্বাস: নেতাজি তাইওয়ানেই মৃত্যুবরণ করেছেন এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা যারা প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন তাইহোকুতে নেতাজির মরদেহ সৎকার করে জাপানি বৌদ্ধধর্মীয় রীতি অনুযায়ী  কিছু চিতাভস্ম টোকিও পর্যন্ত নিয়ে আসেন।  তখন বিধ্বস্ত টোকিওতে এই চিতাভস্ম সংরক্ষণ  করার মতো কেউ যখন এগিয়ে আসেননি তখন নেতাজিভক্ত রেভারেন্ড মোচিজুকি তা নিয়ে এসে একটি বিশেষ পাত্রে সংরক্ষণ  করেন মন্দিরের দ্বিতলে অবস্থিত মূলবেদির ডানপাশে। আজও সেখানে এই চিতাভস্ম রক্ষিত আছে। প্রতি বছর ১৮ আগস্ট সকলের জন্য মন্দির উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। একবার যদিওবা আগুন লেগে মন্দিরের কিয়োদংশ পুড়ে গেলে চিতাভস্মও বিনষ্ট হয়ে যায় বলে কথিত আছে কিন্তু তার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। যুদ্ধের পর প্রথম রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ, প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু, কন্যা ইন্দিরা গান্ধী, অটলবিহারী   বাজপেয়ী এখানে  এসে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। নেতাজির আত্মীয় অমিয়নাথ বসু, শিশিরকুমার বসু, কৃষ্ণা বসু প্রমুখও এসেছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কোন রাজনৈতিক নেতা এই মন্দির পরিদর্শন করেননি এমনকি নেতাজির শেষ অনুসারী বলে কথিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও নন--এটা এক রহস্য। পরবর্তীকালে জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা, শেখ হাসিনা একাধিকবার জাপানে এলেও কেউ  শ্রদ্ধা নিবেদন   করতে যাননি। কোন রাষ্ট্রদূতও গিয়েছেন কিনা জানা যায় না। আমার জানামতে বাংলাদেশ থেকে কবি নির্মলেন্দু গুণ, সাংবাদিক চিত্ত রিবেরু, কবি সমুদ্র গুপ্ত, এফবিসিসিআই এর প্রাক্তন সহ-সভাপতি দেওয়ান সুলতান আহমেদ, কথাসাহিত্যিক ফখরুজ্জামান চৌধুরী, সাহিত্যিক.অভিনয়শিল্পী দিলারা জামান, লোকসাহিত্য বিশেষজ্ঞ শামসুজ্জামান খান রেনকোজি মন্দিরে  গিয়েছেন নেতাজির আবক্ষ   প্রস্তরমূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। উল্লেখ্য যে, এই মূর্তি স্থাপন করেছেন নেতাজিভক্ত শ্রীমতি এমোরি কিকুকোর কন্যা কাজুকো মাৎসুশিমা ১৯৯৫ সালে নেতাজির পঞ্চাশতম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে  বর্তমানে সত্তোর্ধ এবং প্রতি বছরই উপস্থিত হন স্মরণসভায়। এবারও যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁরা হলেন, নেতাজির দুই দেহরক্ষী  ইয়ামামোতো তেৎসুরু, ইসাও ইয়ামাদা সেইসঙ্গে গবেষক  মোতোইউকি   নেগেশি, গবেষক তোশিআকি ওওৎসুকা, কিয়োদো সংবাদসংস্থার অন্যতম সম্পাদক তাকেজুমি বান, গবেষক ইয়োশিআকি হারা, জাপান-ভারত অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট হিরোশি হিরাবায়াশি ও সিনিয়র ডিরেক্টর ইউজি হারা, রাজনীতিক ও সুগিনামি-ওয়ার্ড পৌর পরিষদ-সদস্যা ইয়োশিকো মাৎসুউরা, নেতাজি গবেষক গেন নাকামুরা প্রমুখ। প্রধান অতিথিদ্বয় ইয়ামামোতো ও ইয়ামাদা নেতাজি সম্পর্কে আবেগ থরোথরো দীর্ঘ স্মৃতিচারণ করেন। কিভাবে জার্মানির ডুবোজাহাজ থেকে জাপানি  ডুবোজাহাজে নেতাজিকে স্থানান্তরিত করা হয় সেই লোমহর্ষক বর্ণনা  দেন! উল্লেখ্য যে, তিন জন দেহরীর একজন শত্রুপক্ষের  গুলিতে নিহত হন। ইয়ামামোতা বিভিন্ন সময়ে সরকারি ও বেসকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, উপদেষ্টা হিসেবে দেশ-বিদেশে কাজ করেছেন, লিখেছেন 'কো-রান নো সেকাই' বা 'কোরানের জগৎ' নামে একটি গ্রন্থ। সম্প্রতি     নিজের স্মৃতিকথা গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেছেন সেখানে অনেক অজানা কথা লিখেছেন নেতাজি সম্পর্কে।

প্রতি বছর এখনো নেতাজির জাপানি ভক্ত, সহযোগী ও সহকর্মী যাঁরা জীবিত আছেন তাঁদের স্মৃতিচারণ শুনে মনে হয়: দেশপ্রেমিক নেতাজির  তেজস্বীতার আগুন আজও নেভেনি--আজও তাঁর সেই দীপ্ত-দর্পিত স্বাধীনচেতা  হৃদয়ের উত্তাপ-উষ্ণতা আমাদেরকেও ছুঁয়ে যায়।


Editor : Probir Bikash Sarker

http://www.manchitro.com/Gobeshona.html


অ-  অ+
কলকাতা করেসপন্ডেন্ট, বাংলামেইল২৪ডটকম

কলকাতা: উপমহাদেশের বরেণ্য দেশনায়ক, আজাদহিন্দ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর বুধবার ১১৭তম জন্মদিবস। ১৮৯৭ সালের এ দিনটিতেই ভারতের উড়িশা রাজ্যের কটক শহরে (ওড়িয়া বাজার) জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

নেতাজী ছিলেন কটক প্রবাসী বিশিষ্ট বাঙালি আইনজীবী জানকীনাথ বসু ও প্রভাবতী দেবীর চোদ্দো সন্তানের মধ্যে নবমতম। ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত সুভাষচন্দ্র কটকের একটি ইংরেজি স্কুলে পড়াশোনা করেন। বর্তমানে এই স্কুলটির নাম স্টিওয়ার্ট স্কুল। এরপর তাকে ভর্তি করা হয় কটকের রর্যাভেনশ কলেজিয়েট স্কুলে। সুভাষচন্দ্র ছিলেন মেধাবী ছাত্র। ১৯১১ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় কলকাতা থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯১৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে দর্শনে বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

এরপর সুভাষচন্দ্র কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজউইলিয়াম হলে উচ্চশিক্ষার্থে ভর্তি হন। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ভাল নম্বর পেয়ে তিনি প্রায় নিয়োগপত্র পেয়ে যান। কিন্তু বিপ্লব-সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সেই নিয়োগ প্রত্যাখ্যান করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, 'কোনো সরকারের সমাপ্তি ঘোষণা করার সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা হল তা থেকে [নিজেকে] প্রত্যাহার করে নেওয়া।'

এ সময় অমৃতসর হত্যাকাণ্ড ও ১৯১৯ সালের দমনমূলক রাওলাট আইন ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের বিক্ষুদ্ধ করে তুলেছিল। ভারতে ফিরে সুভাষচন্দ্র স্বরাজ নামক সংবাদপত্রে লেখালিখি শুরু করেন এবং বঙ্গীয় প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির প্রচার দায়িত্বে নিযুক্ত হন। তার রাজনৈতিক গুরু ছিলেন বাংলায় উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ। ১৯২৪ সালে দেশবন্ধু যখন কলকাতা পৌর সংস্থার মেয়র নির্বাচিত হন, তখন সুভাষচন্দ্র তার অধীনে কর্মরত ছিলেন। ১৯২৫ সালে অন্যান্য জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে তাকেও বন্দি করে মান্দালয়ে নির্বাসিত করা হয়।

১৯৩৮ সালে তিনি মহাত্মা গান্ধীর বিরোধীতার মুখে ভারতীয় কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৩৯ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের জন্য ত্রিপুরা সেশনে কংগ্রেসের প্রসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনে গান্ধী পট্টভি সিতারামায়াকে সমর্থন দেন। নির্বাচনের ফলাফল শোনার পর গান্ধী বলেন 'পট্টভির হার আমার হার'। কিন্তু জয়যুক্ত হলেও তিনি সুষ্ঠুভাবে কার্য সম্পাদন করতে পারছিলেন না।

গান্ধীর অনুগামীরা তার কাজে বাধা সৃষ্টি করছিলেন। এভাবে সুভাষ চন্দ্র বসু এ নির্বাচনে জয় লাভ করলেও গান্ধীর বিরোধীতার কারণে তাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়।  আর তা না হলে কার্যনির্বাহী কমিটির সব সদস্য পদত্যাগ করবে। এ কারণে তিনি নিজেই কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেন এবং অল ইন্ডিয়া ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি জাতীয় পরিকল্পনা পরিষদের প্রস্তাবনা দেন।

ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী মূলত গড়ে উঠেছিল জাতীয়তাবাদী নেতা রাসবিহারী বসুর হাতে। ১৯৪৩ সালে রাসবিহারী সেনাবাহিনীর দ্বায়িত্ব সুভাষচন্দ্র বসুর কাছে হস্তান্তর করেন।

এদিকে প্রতিবারের মতো কলকাতায় বামফ্রন্ট ও কেন্দ্রীয় নেতাজী জন্মজয়ন্তী কমিটির পক্ষ থেকে বুধবার যৌথভাবে সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তী পালন করা হবে। এ উপলক্ষে ধর্মতলা রেড রোডে দুপুরে সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, ফরওয়ার্ড ব্লকের বাংলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষসহ বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ এই কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকেও কলকাতার নেতাজী ভবনে তার জন্মজয়ন্তী পালন করা হবে। এখানে উপস্থিত থাকবেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী।

এছাড়াও রাজ্যের সর্বত্র বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিবস পালন করা হবে।

বাংলামেইল২৪ডটকম/আরডি/আরপি/ ১০৫৫ ঘণ্টা, ২৩ জানুয়ারি ২০১৩

নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর মৃত্যুরহস্য

২৫ শে আগস্ট, ২০১১ সকাল ৯:৩৫ |

আরও ঘনীভূত হল নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর মৃত্যুরহস্য। তিনি বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হননি বলে জানিয়েছেন এক ব্যক্তি। নেতাজির গাড়িচালক দাবিদার ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, যে বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজি নিহত হয়েছেন বলে ব্যাপকভাবে প্রচলিত, সে ঘটনার চার মাস পর তিনি নেতাজিকে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে নামিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন।
১০৭ বছর বয়সী এই ব্যক্তির নাম নিজামুদ্দিন। পেশায় গাড়িচালক। বাড়ি আজমগড় জেলার বিলাড়িগঞ্জ এলাকার ইসলামপুরে। তিনি নিজেকে নেতাজির আজাদ হিন্দ ফৌজের একজন সদস্য হিসেবে দাবি করেছেন। ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে নেতাজি ১৯৪২ সালে এ বাহিনী গঠন করেন। একটি পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে নিজামুদ্দিন বলেন, তিনি নিশ্চিত নেতাজি কোনোভাবেই ১৯৪৫ সালের বিমান দুর্ঘটনায় মারা যাননি। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ওই বিমান দুর্ঘটনার তিন থেকে চার মাস পর তিনি নেতাজিকে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছ দিয়ে প্রবাহিত সিতাংপুর নদীর তীরে নামিয়ে দিয়ে গেছেন। নেতাজি যে গাড়ি থেকে সেখানে নেমেছেন সেটার চালক ছিলেন তিনি নিজে। তাহলে তিনি বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেলেন কীভাবে? নদীর তীরে নেমে যাওয়ার পর নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ভাগ্যে কী ঘটেছিল সে ব্যাপারে তিনি আর কিছুই জানেন না বলে জানান। নিজামুদ্দিন বলেন, তিনি নেতাজির সান্নিধ্য পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন। অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে যাওয়ার আগে তিনি আবার স্বাধীন ভারতে ফেরার অঙ্গীকার করেছিলেন।
নিজামুদ্দিন দাবি করেন, নেতাজির ঘনিষ্ঠ সহচর এস ভি স্বামীর সঙ্গেও তার বৈঠক হয়েছিল। স্বামী ছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। নিজামুদ্দিন তার দাবির সপক্ষে সে সময় তাকে দেওয়া প্রত্যাবাসন সনদ দেখান। আজাদ হিন্দ ফৌজের সঙ্গে তার সম্পর্ক থাকার এটিই একমাত্র প্রমাণ। সুত্র : জি নিউজ

মিসবাহউদ্দিন খান স্মারক বক্তৃতা

'সর্বভারতীয় রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন সুভাষ চন্দ্র বসু'


বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক | তারিখ: ১৭-১১-২০১২

বিপ্লবী সুভাষ চন্দ্র বসু সর্বভারতীয় রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি কখনোই ভারত-পাকিস্তান বিভক্তি মেনে নিতেন না। আর সাংস্কৃতিক দিক থেকে তিনি মনেপ্রাণে বাঙালি ছিলেন।
গতকাল শুক্রবার পঞ্চম মিসবাহউদ্দিন খান স্মারক বক্তৃতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্বাধীনতাপূর্ব ভারতের বিশিষ্ট এ জাতীয়তাবাদী নেতা সম্পর্কে এ কথা বলেন। 
রাজধানীর ধানমন্ডির উইমেন ভলান্টারি অ্যাসোসিয়েশন (ডাব্লিউভিএ) মিলনায়তনে মুনতাসীর মামুন-ফাতেমা ট্রাস্ট স্মারক বক্তৃতাটির আয়োজন করে। 
'সুভাষ চন্দ্র বসুর রাজনীতি ও জাতীয়তাবাদের সীমা' শীর্ষক স্মারক বক্তৃতায় সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সুভাষ চন্দ্রের ঘটনাবহুল রাজনৈতিক জীবনের ওপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ যেভাবে পরিচালিত হয়েছে, তাতে সুভাষ বসুর চিন্তা-চেতনার অনেক মিল পাওয়া যায়। তিনি সামগ্রিক অভ্যুত্থানে বিশ্বাস করতেন। সবার একত্রে প্রতিরোধ গড়ে তোলা, 'জয় বাংলা' স্লোগান, প্রবাসী সরকার গঠন, বেতারের ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে তিনি অনেক আগেই চিন্তা করে গেছেন।
অধ্যাপক মিসবাহউদ্দিনের ৮৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এ স্মারক বক্তৃতায় আলোচকেরা মিসবাহউদ্দিন খানের স্মৃতিচারণা করেন। ছোট ভাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, 'তিনি ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসাধারণ ভূমিকা ছিল।...পরিবারের প্রতি ছিল গভীর মমতা। তিনি তাঁর আট ভাইবোন ও তিন ছেলেকে মানুষ করেছেন।' 
মিসবাহউদ্দিন খানের আরেক ছোট ভাই অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীসহ শুভানুধ্যায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মিসবাহউদ্দিনের বড় ছেলে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।



সুভাষ চন্দ্র বসু


http://gunijan.org.bd/GjProfDetails_action.php?GjProfId=303
 
 
trans
সুভাষ চন্দ্র বসু খুব মেধাবী ছাত্র ছিলেন। সকলেই আশা করেন যে প্রবেশিকা পরীক্ষায় তিনি একটি বিশেষ স্থান অধিকার করবেন। কিন্তু পরীক্ষা শুরু হওয়ার কিছুদিন আগে থেকে তিনি পড়াশুনায় অমনোযোগী হয়ে পড়েন। ফলে পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাপারে তাঁর পরিবারের সবাই খুব হতাশ হন। সুভাষচন্দ্র বসু তখন পরীক্ষার ফলাফলের চেয়ে শ্রীরামকৃষ্ণের বাণী- জীব শিব এবং স্বামী বিবেকানন্দের বাণী- সেবা ধর্মকেই তাঁর জীবনের সার বলে গ্রহণ করেছেন। 
১৯১৩ সালে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষা দিলেন। কিন্তু সবার ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করলেন। সবাই তাঁর ভাল ফলাফলে খুব খুশি হলেন। ভাল ফলাফলের কারণে তিনি কুড়ি টাকা বৃত্তি পেলেন। কিন্তু এই বৃত্তির টাকা তিনি নিজে খরচ না করে দীন দুঃখীর সেবায় দান করলেন।

প্রবেশিকা পরীক্ষার পর নেতাজী তাঁর মাকে একটি চিঠি লিখেন। সেই চিঠির শেষের অংশটিতে তিনি লিখেন-"আমি যদি না পড়িয়া এ স্থান পাই তবে যাহারা লেখাপড়াকে উপাস্য দেবতা মনে করিয়া তজ্জন্য প্রাণপাত করে তাহাদের কি অবস্থা হয়? তবে প্রথম হই আর লাষ্ট হই আমি স্থিররূপে বুঝিয়াছি লেখাপড়া ছাত্রের উদ্দেশ্য নহে- বিশ্ববিদ্যালয়ের 'চাপ্রাস' (ডিগ্রী) পাইলে ছাত্ররা আপনাকে কৃতার্থ মনে করে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের 'চাপ্রাস' (ডিগ্রী) পাইলে যদি কেহ প্রকৃত জ্ঞান না লাভ করিতে পারে- তবে সে শিক্ষাকে আমি ঘৃণা করি। তাহা অপেক্ষা মূর্খ থাকা কি ভাল নয়? চরিত্র গঠনই ছাত্রের প্রধান কর্ত্তব্য- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা চরিত্র গঠনকে সাহায্য করে-আর কার কিরূপ উন্নত চরিত্র তাহা কার্য্যেই বুঝিতে পারা যায়। কার্য্যই জ্ঞানের পরিচায়ক। বই পড়া বিদ্যাকে আমি সর্বান্তকরণে ঘৃণা করি। আমি চাই চরিত্র-জ্ঞান-কার্য। এই চরিত্রের ভিতরে সবই যায়- ভগবদ্ভক্তি,- স্বদেশপ্রেম,- ভগবানের জন্য তীব্র ব্যাকুলতা সবই যায়। বই পড়া বিদ্যা তো তুচ্ছ সামান্য জিনিষ- কিন্তু হায় কত লোকে তাহা লইয়া কত অহঙ্কার করে।" (সুধীরকুমার মিত্র বিরচিত 'বাংলার পাঁচ স্মরণীয় বিপ্লবী': সম্পাদনা-দেবপ্রসাদ জানা, পৃষ্ঠা-২৬১)।

মায়ের কাছে লেখা চিঠির কথাগুলোকে তিনি তাঁর নিজের জীবনের ক্ষেত্রে অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। আর তাইতো পড়াশুনার মাধ্যমে তিনি প্রকৃত জ্ঞান লাভ করেছেন। শুধু নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা না করে দেশ ও মানুষের কথা চিন্তা করেছেন সবসময়। মানুষের দুঃখ, কষ্টগুলোকে তিনি অনেক বড় করে দেখেছেন। আর সেকারণেই ব্রিটিশদের শোষণ ও নির্যাতন থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে মুক্ত করার জন্য আজীবন লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে ভারতবর্ষ থেকে বিতাড়িত করার জন্য যে সকল মহান ব্যক্তি, বিপ্লবী, লড়াকু যোদ্ধা জীবন উৎসর্গ করেছেন, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু তাঁদের মধ্যে অন্যতম।

অহিংসায় নয়, উদারতায় নয়, শক্তি প্রয়োগ করেই ব্রিটিশকে ভারত থেকে তাড়াতে হবে- এই মন্ত্রকে ধারণ করে তিনি ব্রিটিশ শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে আমৃত্যু লড়াই-সংগ্রাম চালিয়েছেন । ভারতের যুব সম্প্রদায়কে নেতাজী বলেছিলেন "তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব"। ভারত উপমহাদেশে সশস্ত্র বিপ্লববাদীদের সংগঠক হিসেবেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যে কারণে বিপ্লবী যোদ্ধারা তাঁকে নেতাজী বলে সম্বোধন করতেন। তিনি এ উপমহাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনেরও অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন।

নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু জন্মগ্রহণ করেন ১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারী। উড়িষ্যার কটক শহরে এক বাঙালি পরিবারে। তবে তাঁদের পৈতৃক নিবাস ছিল চব্বিশ পরগণা জেলার অন্তর্গত কোদালিয়া গ্রামে। নেতাজীর বাবা জানকীনাথ বসু। তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষে বাংলা ছেড়ে কটকে চলে যান। সেখানে তিনি অইনজীবী হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। এ পেশায় তিনি অল্পদিনের মধ্যে বিশেষ সুনাম অর্জন করেন। তিনি জ্ঞানী ও সুপণ্ডিত ব্যক্তি ছিলেন। তিনি কটক মিউনিসিপ্যালিটি ও কটক জেলা বোর্ডের সভাপতি ছিলেন। নেতাজীর মায়ের নাম প্রভাবতী দেবী। তিনি কলকাতার হাটখোলার প্রসিদ্ধ দত্ত পরিবারের মেয়ে ছিলেন। অভিজাত সমাজে তাঁদের বিশিষ্ট স্থান ছিল। তিনি ছিলেন গৃহিণী ও ধর্মপ্রাণ মানুষ। গরীব-দুঃখী মানুষের সেবা করা ছিল তাঁর সহজাত স্বভাব। নেতাজী ছিলেন বাবা-মার নবম সন্তান ও ষষ্ঠ পুত্র।

১৯০২ সালে পাঁচ বছর বয়সে সুভাষ চন্দ্র বসু খ্রীষ্টান পাদ্রীদের দ্বারা পরিচালিত কটক প্রোটেষ্ট্যান্ট ইউরোপীয়ান স্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুলে তিনি ৭ বছর পড়াশুনা করেন। এই স্কুলে বাংলা ছাড়া অন্য সকল বিষয় পড়ানো হতো। ছেলেবেলা থেকে তিনি মেধাবী ও বুদ্ধিমান ছিলেন। এজন্য শিক্ষকরা তাঁকে খুব পছন্দ করতেন এবং ভালবাসতেন।

১৯০৮ সালে তিনি কটকের রাভ্যেনশ কলেজিয়েট স্কুলে চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি হন। এই স্কুলে পড়ার সময় তিনি নিজ উদ্যোগে বাংলা ও সংস্কৃত ভাষা খুব ভাল করে শিখে নেন। পড়াশুনার পাশাপাশি তিনি নিয়মিত ব্যায়াম চর্চা করতেন। বাগানে তরিতরকারি ও ফুল গাছের প্রতি তাঁর খুব ঝোঁক ছিল। প্রতিদিন তিনি বাড়ির মালিদের সাথে গাছে পানি দিতেন। তিনি প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হতেন।

এই সময় বেণীমাধব দাস নামক এক পণ্ডিত রাভ্যেনশ কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তাঁর সরল অমায়িক ব্যবহারের কারণে ছাত্ররা তাঁকে শ্রদ্ধা করত। এই শিক্ষকের প্রভাব সুভাষ চন্দ্রের উপর পড়ে। মা প্রভাবতী দেবী এবং শিক্ষক বেণীমাধব দাসের নৈতিক আদর্শ তাঁর জীবনকে সুন্দরভাবে গড়তে সহায়তা করে।

সুভাষ চন্দ্র বসুর বয়স যখন ১৩/১৪ বছর তখন তাঁদের এক আত্মীয় কটকে তাঁদের বাড়ীতে বেড়াতে আসেন। তিনি তাঁদের বাড়ীর নিকটেই থাকেন। নেতাজী একদিন তাঁর বাড়ীতে বেড়াতে যান এবং তাঁর ঘরে স্বামী বিবেকানন্দের অনেকগুলো বই দেখতে পান। তিনি স্বামীজীর বইগুলো তাঁর কাছ থেকে আনেন এবং পড়েন। এভাবে স্বামী বিবেকানন্দ ও তাঁর গুরুদেব শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের প্রতি তিনি আকৃষ্ট হন। স্বামীজীর বক্তৃতা ও চিঠিপত্রগুলো তাঁকে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করে।

স্বামীজীর বক্তৃতাবলী ও শ্রীরামকৃষ্ণের উপদেশ পাঠ করার পর তিনি পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়েন। আধ্যাত্মিক উন্নতি করার জন্য যোগ অভ্যাস শুরু করেন। কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে দরিদ্রনারায়ণের সেবায়, রুগ্নের শুশ্রূষায় এবং দুঃস্থের দুঃখ মোচনে অধিকাংশ সময় ব্যয় করতেন। কি করে স্বামীজীর আদর্শকে তাঁর জীবনে সফল করবেন, ইহাই তখন নেতাজীর একমাত্র চিন্তা।

প্রবেশিকা পাশ করার পর তিনি কলকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজে আই.এ ভর্তি হন। এই কলেজে পড়ার সময় তিনি স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শ ও ধর্ম চর্চায় আরও বেশী মন দেন। আই.এ. পড়ার একপর্যায়ে মানব সেবার উদ্দেশ্যে তিনি গৃহ ত্যাগ করেন। এসময় তিনি ভারতবর্ষের বিভিন্ন তীর্থস্থান ঘুরে বেড়ান। কয়েক মাস পর বাড়িতে ফিরে আসেন। বাড়িতে আসার পর তিনি টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে অনেক দিন ভোগেন। সুস্থ হওয়ার পর বার্ষিক পরীক্ষার পূর্বে তিনি পড়াশুনায় মনোযোগ দেন।

১৯১৫ সালে সুভাষ চন্দ্র বসু আই.এ. পরীক্ষায় মেধাস্থান অর্জন করে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ওই বছরই তিনি দর্শনে অনার্স নিয়ে প্রেসিডেন্সী কলেজে বি.এ. ভর্তি হন। প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় অধ্যাপক ওটেন বাঙালী ছাত্রদের প্রতি অপমানজনক ব্যবহার করায় তিনি তাঁর ওপর খুব ক্ষিপ্ত হন এবং অধ্যাপক ওটেনকে প্রহার করেন। এই ঘটনার কারণে তাঁকে প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। ফলে বাধ্য হয়ে তাঁকে প্রেসিডেন্সি কলেজ পরিত্যাগ করতে হয়। কলেজ জীবন থেকেই তাঁর মধ্যে স্বদেশপ্রেম ও বাঙালী জাতীয়তাবোধ গভীরভাবে বিকশিত হতে থাকে।

অবশেষে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের (স্কটিশ চার্চ কলেজের অধ্যক্ষ) সহযোগিতায় তিনি কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন। স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ১৯১৯ সালে তিনি ডিস্টিংশনসহ দর্শন শাস্ত্রে অনার্স ডিগ্রী অর্জন করেন এবং ওই পরীক্ষায় কলেজে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। ১৯২০ সালে তিনি ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস এ-পরীক্ষা দেন এবং চতুর্থ স্থান অধিকার করেন। ওই বছর তিনি ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে (আইসিএস) যোগ দেন। ১৯২১ সালের এপ্রিল মাসে তিনি ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস থেকে পদত্যাগ করে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন। ভারতকে ব্রিটিশদের হাত থেকে স্বাধীন করার জন্য তিনি সরকারি চাকুরি ত্যাগ করেন। ১৯২১ সালের ১০ ডিসেম্বর আইন অমান্য আন্দোলনের অভিযোগে চিত্তরঞ্জন দাস ও সুভাষ চন্দ্র বসুকে ব্রিটিশ পুলিশ গ্র্রেফতার করে। ১৯২২ সালে তিনি মুক্তি পান।

গান্ধীজির সাথে সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। কিন্তু গান্ধীজির অহিংস আন্দোলনের প্রতি তাঁর কোনো আগ্রহ ছিল না। তাই গান্ধীজিকে ছেড়ে তিনি আসেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের নিকট। তাঁর সান্নিধ্যে থেকে তিনি নিজেকে রাজনীতিতে আরো পরিপক্ক করে গড়ে তোলেন। এরপর নেতাজী স্বাধীনতা সংগ্রামী চিত্তরঞ্জন দাসের সাথে রাজনীতি শুরু করেন। ১৯২৪ সালের এপ্রিল মাসে তিনি কলকাতা কর্পোরেশনের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার হিসাবে নিযুক্ত হন। চিত্তরঞ্জন দাস তখন কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন। সুভাষ চন্দ্র বসুর মাসিক বেতন ছিল ৩০০০ টাকা। কিন্তু তিনি সিদ্ধান্ত নেন মাসে ১৫০০ টাকা বেতন নিবেন। ওই বছর অক্টোবর মাসে নেতাজীকে স্বদেশী বিপ্লবীদের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। ব্রিটিশরা তাঁকে বার্মার কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। ১৯২৫-২৭ সাল পর্যন্ত তিনি মান্দালয়সহ বিভিন্ন কারাগারে ছিলেন।

১৯২৭ সালে তিনি জেল থেকে মুক্তি পান। ১৯২৮ সালে কলকাতায় সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সাধারণ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তিনি 'বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স' বাহিনী গড়ে তোলেন। যার চরিত্র ছিল সামরিক। 'হিন্দুস্থান সেবক দল' নামে আরেকটি বাহিনী সেসময় তৈরী হয়েছিল। কিন্তু সে দলের সাথে এ দলের পার্থক্য হল 'বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স' বাহিনীতে নারী ও পুরুষ বিপ্লবী ছিল। 'বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স' বাহিনীকে সামরিক মানসিকতায় শিক্ষা প্রদান করা হয় এবং এ বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে স্বাধীনতার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করা হয়। পরবর্তী কালে আজাদ হিন্দ ফৌজ গড়ার ক্ষেত্রে নেতাজী এই 'বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স' বাহিনী থেকে প্রেরণা পান। ১৯২৯ সালে পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসে তিনি ও বিপ্লবীরা ব্রিটিশ সরকারের পাশাপাশি একটি প্যরালাল সরকার গঠন করার প্রস্তাব করেন।

১৯৩০ সালের ২৩ জানুয়ারি ব্রিটিশ আইনের বিরুদ্ধে এক পদযাত্রায় প্রধান ভূমিকা পালন করার জন্য তাঁকে আবার আটক করা হয়। ওই বছর জেল থেকে বেরিয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি কলকাতার মেয়র হিসাবে নিযুক্ত হন। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের মহিরুহ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৩১ সালে নেতাজীর নেতৃত্বে কলকাতায় শোভাযাত্রা চলাকালে ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে আবার গ্রেফতার করে। এসময় তিনি ৬ মাস পর মুক্তি পান। মুক্তির পরও বিপ্লববাদী সশস্ত্র আন্দোলনের জন্য ব্রিটিশ সরকার নেতাজীকে তাঁর বাড়িতে নজর বন্দি করে রাখে। ১৯৩২ সালে তিনি আইন অমান্য আন্দোলনের নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে ওই আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তি হয়ে উঠেন। এসময় তাঁকে আবার ব্রিটিশ সরকার কারাগারে প্রেরণ করে। কিন্তু জনতার আন্দোলনের মুখে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। বারবার কারা নির্যাতনের কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

১৯৩৩ সালের মাঝামাঝি সময় তিনি ব্রিটিশ সরকারের চোখে ধুলো দিয়ে ইউরোপে চলে যান। ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত তিনি ইউরোপের বহু রাজনৈতিক নেতা ও মহান ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসেন। কারণ তিনি উপলব্ধি করেন, ভারতমাতাকে ব্রিটিশ সরকারের হাত থেকে স্বাধীন করতে হলে বাইরের দেশের সেনা ও রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতা দরকার হবে। এ সময় তিনি সমগ্র ইউরোপ ঘুড়ে বেড়ান এবং ভারতের স্বাধীনতার জন্য তীব্র প্রচার চালান।

তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রাগে, বার্লিনে, মিউনিখে, মিলানে ও রোমে সভা সমাবেশ করেন। ভারতের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্বজনমত সংগ্রহ করেন এবং ভারতীয়দের সংগঠিত করেন। ১৯৩৬ সালের ৮ এপ্রিল দেশে আসার পর ব্রিটিশ সরকার তাঁকে আবার গ্রেফতার করে। এই গ্রেফতারের প্রতিবাদে নিখিল ভারত 'সুভাষ দিবস' পালন করে। ১৯৩৭ সালে তিনি মুক্তি পান। ওই বছর তিনি তাঁর ব্যক্তিগত সচিব এমিলিকে সহধর্মীনী করেন। ১৯৪২ সালে তাঁদের কন্যা সন্তান অনিতার জন্ম হয়।

১৯৩৮ সালে ভারতবাসী তাঁকে কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেন। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে সুভাষ চন্দ্র বসু গান্ধীজীর অহিংস নীতির বিরোধিতা করে ইংরেজ সরকারকে ৬ মাসের মধ্যে স্বাধীনতা প্রদানের জন্য এক চরমপত্র পাঠানোর প্রস্তাব করেন। কিন্তু জাতীয় কংগ্রেস সহিংস সংগ্রাম শুরু করার পক্ষে ছিলেন না। গান্ধীজী ওই বিপদের সময় ইংরেজ সরকারকে বিব্রত করতে চাননি। এ প্রশ্নে তীব্র মতবিরোধ দেখা দিলে সুভাষ বসু পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং তিনি 'ফরওয়ার্ড ব্লক' নামে আরেকটি দল গঠন করেন। কলকাতায় প্রবল জনমত সৃষ্টি করলে ইংরেজ সরকার ভীত হয়ে ১৯৪০ সালের ২ জুলাই নেতাজিকে গ্রেফতার করে এবং কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে তাঁকে আটকে রাখে। ১৯৪১ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি গৃহবন্দি অবস্থায় পলায়ন করে আফগানিস্তান হয়ে রাশিয়ার পথে যাত্রা করেন। সেখানে তিনি ভারতের স্বাধীনতার জন্য সোভিয়েত শক্তির সমর্থন চান। কিন্তু স্টালিন সুভাষ চন্দ্র বসুর আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন।

দেশে ফিরে সুভাষ বসু সরকারি গোয়েন্দাদের নজরদারি এড়ানোর জন্য মৌনব্রত ও নির্জনবাসের ঘোষণা দেন ও তাঁর ভাতিজা অমিয় বোসের অনুমোদন ছাড়া কারো সঙ্গে দেখা করতেন না। ওই সুযোগে তিনি মৌলভী জিয়াউদ্দীনের মতো দাড়ি রাখেন ও তাঁর মতোই পোশাক পরে গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ১৯৪১ সালের ২৮ মার্চ পালিয়ে আফগানিস্তান ও মস্কো হয়ে জার্মানির বার্লিন পৌঁছেন। তিনি জার্মান থেকে সাবমেরিনযোগে জাপান পৌঁছেন। জাপান-অধিকৃত সিঙ্গাপুরে রাসবিহারী বসুর তত্ত্বাবধানে ভারতীয় উপমহাদেশের যুদ্ধবন্দীদের নিয়ে 'আজাদ- হিন্দু ফৌজ' গঠন করেন এবং এর সর্বাধিনায়ক হন।

১৯৪২ সালে ব্রিটিশ সরকার 'ফরওয়ার্ড ব্লক' দলকে বেআইনি ঘোষণা করে। সমগ্র ভারত জুড়ে 'ফরওয়ার্ড ব্লক' দলের সব পার্টি অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯৪৩ সালে নেতাজি জাপানে যান। ১৯৪৩ সালের ৪-৭ জুলাই সিঙ্গাপুরস্থ মহাএশিয়া মিলনায়তনে ভারতীয় স্বাধীনতা লীগের প্রধান নেতৃবৃন্দের মহাসভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসিডেন্ট বিপ্লবী রাসবিহারী বসু দাঁড়িয়ে সভায় একজন চমৎকার নতুন অতিথি হিসেবে সুভাষচন্দ্র বসুকে পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সঙ্গে লীগের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে সুভাষ বসুকে স্থলাভিষিক্ত করার জন্য নিজের ইচ্ছের কথা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, "ইতিমধ্যে টোকিওতে আমাদের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং তিনি দায়িত্ব গ্রহণে সম্মত হয়েছেন।" শারীরিক অসুস্থতা এবং বার্ধক্যজনিত কারণে বর্তমান পদ তাঁর পক্ষে ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান রাসবিহারী বসু । এরপর সভার সকল নেতৃবৃন্দ এবং সদস্য প্রাণবন্ত করতালি দিয়ে সুভাষ বসুকে স্বাগত জানান। রাসবিহারী বসু প্রবাসে ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সম্মানিত পরিচালক নির্বাচিত হওয়ার কারণে সুভাষ বসুকে 'নেতাজি' উপাধি ঘোষণা করেন। রাসবিহারী বসুর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এই মহাসভায় সুভাষ চন্দ্র বসু দু'ঘন্টাব্যাপী এক জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেন।

১৯৪৪ সালের ২১ মার্চ 'আজাদ হিন্দ ফৌজ' ভারতভূমির মনিপুরে প্রবেশ করে। এই ফৌজের কার্যাবলী খুব দ্রুত ভারতব্যাপি ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু জাপান ১৯৪৫ সালের শুরুতে 'আজাদ হিন্দ ফৌজ'কে সহযোগিতা করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা প্রত্যাখান করে নেয়।

১৯৪৫ সালে ১৫ আগস্ট দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষ হয়েছে কিন্তু ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন তখনও চূড়ান্ত পর্যায়ে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু হিন্দ ফৌজকে ভেঙ্গে দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যান । কেউ জানে না কোথায় আছেন তিনি। তন্ন তন্ন করে খুঁজছে তাঁকে বৃটিশ সরকার। এ সময় কর্নেল ভোঁসলে ঘোষণা করেন, নেতাজি না থাকলেও, জাপানিরা হেরে গেলেও 'আজাদ হিন্দ ফৌজ' শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়াই করে যাবে। কয়েক হাজার ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পরও কোহিমা পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছিল আজাদ হিন্দ বাহিনীর কোনো কোনো দল। বৃটিশদের আর কোনো শক্তি ছিল না ভারতীয়দেরকে দাবিয়ে রাখার। শেষ পর্যন্ত ১৯৪৭ সালে বৃটিশ শাসক পাক-ভারত ভাগের মধ্য দিয়ে লেজ গুটায়। অর্জিত হয় বহুকাঙ্খিত ভারতের স্বাধীনতা, যে স্বাধীনতার জন্য নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুসহ অসংখ্য বিপ্লবী জীবন বিপন্ন করে লড়াই- সংগ্রাম করেছেন।

ধারণা করা হয় নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ১৯৪৫ সালের ১৯ আগষ্ট টোকিও যাবার পথে তাইওয়ানে এক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। তবে তাঁর মৃত্যুর সঠিক তারিখ ও স্থান সম্পর্কে এখনো বিতর্ক রয়েছে। তাঁর দেহাবশেষ কোনোদিনও উদ্ধার করা যায়নি।

তথ্য ও ছবিসূত্র:
১। বাংলার পাঁচ স্মরণীয় বিপ্লবী: সম্পাদনা-দেবপ্রসাদ জানা, দীপ প্রকাশন- কলকাতা। প্রকাশকাল ৫ জানুয়ার ২০০৮ সাল।
২। আমি সুভাষ বলছি: শ্রীশৈলেশ দে। রবীন্দ্র লাইব্রেরী, কলকাতা। প্রকাশকাল- রথযাত্রা-১৩৮১ প্রথম খন্ড, রথযাত্রা -দ্বিতীয় খণ্ড ১৩৮৪, রথযাত্রা -তৃতীয় খণ্ড ১৩৮৯।
৩। বাংলা ছোটদের সুভাষ চন্দ্র: কালীপদ দাস। সাহিত্যমালা প্রকাশনী। প্রকাশকাল ১৯৯৫ সাল।
৪। আধুনিক ভারত: প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়। দ্বিতীয় খণ্ড (১৯২০- ১৯৪৭) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষৎ, কলকাতা, ১৯৯৯।

লেখক: রফিকুল ইসলাম (শেখ রফিক)

সুভাষচন্দ্র বসু


উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু
Subhas Bose.jpg
জন্মজানুয়ারি ২৩১৮৯৭
কটকউড়িষ্যা (অধুনা (ওড়িশা),ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু১৮ অগস্ট, ১৯৪৫ (সরকারি মতে)
তাইওয়ান (সরকারি মতে)
সমাধিরেনকোজি মন্দির (সরকারি মতে, এখানে নেতাজির চিতাভষ্ম রক্ষিত)
বাসস্থান৩৮/২ এলগিন রোড (অধুনা লালা লাজপত রাই সরণি), কলকাতা
জাতীয়তাভারতীয়
পেশারাজনীতিবিদ
যে জন্য পরিচিত ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী ওআজাদ হিন্দ ফৌজের সংগঠক ও সর্বাধিনায়ক
উচ্চতা৫ ফুট ৮.৫ ইঞ্চি
উপাধি নেতাজি
রাজনৈতিক দলভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস,ফরওয়ার্ড ব্লক
ধর্মহিন্দু
দাম্পত্য সঙ্গীএমিলি শেঙ্কল
সন্তানঅনিতা বসু-পাফ
পিতা-মাতাজানকীনাথ বসু ও প্রভাবতী দেবী
আত্মীয় শরৎচন্দ্র বসু
ওয়েবসাইট
নেতাজি রিসার্চ ব্যুরো
মিশন নেতাজি

সুভাষচন্দ্র বসু এই শব্দ উচ্চারণ (জন্ম: ২৩ জানুয়ারি১৮৯৭ – তথাকথিত মৃত্যু১৮ অগস্ট১৯৪৫ (যদিও এই মত বিতর্কিত) ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক কিংবদন্তি নেতা। তিনি নেতাজি নামে সমধিক পরিচিত।

সুভাষচন্দ্র পরপর দুইবার ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে আদর্শগত সংঘাত এবং কংগ্রেসের বৈদেশিক ও আভ্যন্তরিণ নীতির প্রকাশ্য সমালোচনা[১] করার জন্য তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়। সুভাষচন্দ্র মনে করতেন গান্ধীজির অহিংসার নীতি ভারতের স্বাধীনতা আনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। এই কারণে তিনি সশস্ত্র বিদ্রোহের পক্ষপাতী ছিলেন। সুভাষচন্দ্র ফরওয়ার্ড ব্লক নামক একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করে[২] ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতের পূর্ণ ও সত্বর স্বাধীনতার দাবি জানাতে থাকেন। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাঁকে এগারো বার কারারুদ্ধ করেছিল। তাঁর বিখ্যাত উক্তি "তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো।"

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পরেও তাঁর মতাদর্শের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি; বরং এই যুদ্ধকে ব্রিটিশদের দুর্বলতার সুবিধা আদায়ের একটি সুযোগ হিসেবে দেখেন। যুদ্ধের সূচনালগ্নে তিনি লুকিয়ে ভারত ত্যাগ করে সোভিয়েত ইউনিয়নজার্মানি ও জাপান ভ্রমণ করে ভারতে ব্রিটিশদের আক্রমণ করার জন্য সহযোগিতা লাভের উদ্দেশ্যে। জাপানিদের সহযোগিতায় তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজ পুনর্গঠন করেন এবং পরে তার নেতৃত্ব দান করেন। এই বাহিনী সৈনিকেরা ছিলেন মূলত ভারতীয় যুদ্ধবন্দী এবং ব্রিটিশ মালয়, সিঙ্গাপুর সহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে কর্মরত মজুর। জাপানের আর্থিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক সহায়তায় তিনি নির্বাসিত আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠা করেন এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্বদান করে ব্রিটিশ মিত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে ইম্ফল ও ব্রহ্মদেশে যুদ্ধ পরিচালনা করেন।

ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে নাৎসি ও অন্যান্য যুদ্ধবাদী শক্তিগুলির সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনের জন্য কোনো কোনো ঐতিহাসিক ও রাজনীতিবিদ সুভাষচন্দ্রের সমালোচনা করেছেন; এমনকি কেউ কেউ তাঁকে নাৎসি মতাদর্শের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন বলে অভিযুক্ত করেছেন। তবে ভারতে অন্যান্যরা তাঁর ইস্তাহারকেরিয়েলপোলিটিক (নৈতিক বা আদর্শভিত্তিক রাজনীতির বদলে ব্যবহারিক রাজনীতি)-এর নিদর্শন বলে উল্লেখ করে তাঁর পথপ্রদর্শক সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবাদর্শের প্রতি সহানুভূতি পোষণ করেছেন।

উল্লেখ্য, কংগ্রেস কমিটি যেখানে ভারতের অধিরাজ্য মর্যাদা বা ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাসের পক্ষে মত প্রদান করে, সেখানে সুভাষচন্দ্রই প্রথম ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষে মত দেন। জওহরলাল নেহরু সহ অন্যান্য যুবনেতারা তাঁকে সমর্থন করেন। শেষপর্যন্ত জাতীয় কংগ্রেসের ঐতিহাসিক লাহোর অধিবেশনে কংগ্রস পূর্ণ স্বরাজ মতবাদ গ্রহণে বাধ্য হয়। ভগৎ সিংহের ফাঁসি ও তাঁর জীবন রক্ষায় কংগ্রেস নেতাদের ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ[৩] সুভাষচন্দ্র গান্ধী-আরউইন চুক্তি বিরোধী একটি আন্দোলন[৪] শুরু করেন। তাঁকে কারারুদ্ধ করে ভারত থেকে নির্বাসিত করা হয়। নিষেধাজ্ঞা ভেঙে তিনি ভারতে ফিরে এলে আবার তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয়।

মনে করা হয় ১৯৪৫ সালের ১৮ অগস্ট তাইওয়ানে একটি বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। তবে তাঁর এই তথাকথিত দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর বিরুদ্ধ প্রমাণও বিদ্যমান।

পরিচ্ছেদসমূহ

  [আড়ালে রাখো

[সম্পাদনা]প্রথম জীবন

১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারি, বর্তমান ওড়িশা রাজ্যের কটক শহরে (ওড়িয়া বাজার) জন্মগ্রহণ করেন সুভাষচন্দ্র বসু। তিনি ছিলেন কটক-প্রবাসী বিশিষ্ট বাঙালি আইনজীবী জানকীনাথ বসু ও প্রভাবতী দেবীর চোদ্দো সন্তানের মধ্যে নবম। ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত সুভাষচন্দ্র একটি কটকের ইংরেজি স্কুলে পড়াশোনা করেন; বর্তমানে এই স্কুলটির নাম স্টিওয়ার্ট স্কুল। এরপর তাঁকে ভর্তি করা হয় কটকের রর্যাভেনশ কলেজিয়েট স্কুলে। সুভাষচন্দ্র ছিলেন মেধাবী ছাত্র। ১৯১১ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় কলকাতা থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি। ১৯১৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত স্কটিশ চার্চ কলেজথেকে দর্শনে সাম্মানিক সহ বি.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

এরপর সুভাষচন্দ্র কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজউইলিয়াম হলে উচ্চশিক্ষার্থে ভর্তি হন। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ভাল নম্বর পেয়ে তিনি প্রায় নিয়োগপত্র পেয়ে যান। কিন্তু বিপ্লব-সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সেই নিয়োগ প্রত্যাখ্যান করেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, "কোনো সরকারের সমাপ্তি ঘোষণা করার সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা হল তা থেকে [নিজেকে] প্রত্যাহার করে নেওয়া"। এই সময় অমৃতসর হত্যাকাণ্ড ও ১৯১৯ সালের দমনমূলক রাওলাট আইন ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের বিক্ষুদ্ধ করে তুলেছিল। ভারতে ফিরে সুভাষচন্দ্র স্বরাজ নামক সংবাদপত্রে লেখালিখি শুরু করেন এবং বঙ্গীয় প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির প্রচার দায়িত্বে নিযুক্ত হন। তাঁর রাজনৈতিক গুরু ছিলেন বাংলায় উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ[৫] ১৯২৪ সালে দেশবন্ধু যখনকলকাতা পৌরসংস্থার মেয়র নির্বাচিত হন, তখন সুভাষচন্দ্র তাঁর অধীনে কর্মরত ছিলেন। ১৯২৫ সালে অন্যান্য জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে তাঁকেও বন্দী করা হয় এবং মান্দালয়ে নির্বাসিত করা হয়। এখানে তিনি যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।[৬]

সুভাষচন্দ্র ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ হিন্দু। তিনি ধ্যানে অনেক সময় অতিবাহিত করতেন।[৬] স্বামী বিবেকানন্দের ভাবাদর্শ তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছিল।[৭]ছাত্রাবস্থা থেকে তিনি তাঁর দেশপ্রেমিক সত্ত্বার জন্য পরিচিত ছিলেন।

[সম্পাদনা]কর্মজীবন ও রাজনীতিতে প্রবেশ

বোস 1939 এর সর্ব ভারতীয় কংগ্রেস কমিটির সভা. টনি মিত্র ছবি শ্লীলতা

প্রায় বিশ বছরের মধ্যে সুভাষ চন্দ্র মোট ১১ বার গ্রেফতার হয়েছিলেন তাকে ভারত ও রেঙ্গুনের বিভিন্ন জায়গায় রাখা হয়েছিল। ১৯৩০ সালে তাকে ইউরোপে নির্বাসিত করা হয়। ১৯৩৪ সালে তিনি তাঁর প্রথম প্রেম এমিলি সেচঙ্কল এর সাথে পরিচিত হনভিয়েনায়তে। ১৯৩৭ সালে তারা ব্যাড গ্যাস্টিনে বিয়ে করেন।

তাঁর পিতার মৃত্যুর পর ব্রিটিশ সরকার তাকে শুধু মাত্র ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের উদ্দ্যেশ কিচ্ছুক্ষণের জন্য কলকাতা আসার অনুমতি দেয়।১৯৩৮ সালে তিনি গান্ধির বিরোধীতার মুখে ভারতীয় কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৩৯ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের জন্য ত্রিপুরা সেসনে কংগ্রেসের প্রসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনে গান্ধি পট্টভি সিতারামায়াকে সমর্থন দেন; নির্বাচনের ফলাফল শোনার পর গান্ধি বলেন "পট্টভির হার আমার হার"। কিন্তু জয়যুক্ত হলেও তিনি সুষ্ঠু ভাবে কার্য সম্পাদন করতে পারছেলেন না। গান্ধীর অনুগামীরা তার কাজে বাধা সৃষ্টি করছেলেন। গোবিন্দ বল্লভ পন্থ এইসময় একটি প্রস্তাব পেশ করেন যে, "কার্যনির্বাহক পরিষদকে পুনর্গঠন করা হোক"। এভাবে সুভাষ চন্দ্র বসু এ নির্বাচনে জয় লাভ করলেও গান্ধির বিরোধীতার ফল স্বরুপ তাকে বলা হয় পদত্যাগ পত্র পেশ করতে নইলে কার্যনির্বাহি কমিটির সকল সদস্য পদত্যাগ করবে। এ কারণে তিনি নিজেই কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেণ এবং অল ইন্ডিয়া ফরওয়ার্ড ব্লক (All India Forword Block) গঠন করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি জাতীয় পরিকল্পনা পরিষদের প্রস্তাবনা দেন।

[সম্পাদনা]দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

সুভাষ চন্দ্র বসু প্রস্তাব করলেন, কবে ব্রিটিশরা ভারতীয়দের স্বাধীনিতার অনুমোদন দেবে তার জন্য বসে না থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে সুবিধা নেওয়া উচিত। তিনি বিশ্বাস করতেন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা নির্ভর করে অন্য দেশের রাজনৈতিক, সামরিক ও কুটনৈতিক সমর্থনের উপর। তাই তিনি ভারতের জন্য একটি সামরিক বাহিনী গড়ে তোলার উদ্দ্যেগ গ্রহণ করেণ।

[সম্পাদনা]ভারত থেকে পলায়ন

ভারতবর্ষের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ গ্রহণের ব্যাপারে সুভাষ বসু নাখোশ ছিলেন। তিনি সে সময় গৃহ বন্দি ছিলেন। তিনি বুঝতে পারলেন ব্রিটিশরা তাঁকে যুদ্ধের আগে ছাড়বে না। তাই তিনি দুইটি মামলার বাকি থাকতেই আফগানিস্তান ও সোভিয়েত ইউনিয়ন হয়ে জার্মানী পালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু আফগানিস্তানের পশতু ভাষা না জানা থাকায় তিনি ফরওয়ার্ড ব্লকের উত্তর-পশ্চিম সিমান্ত প্রদেশের নেতা মিয়া আকবর শাহকে তার সাথে নেন। যেহেতু তিনি পশতু ভাষা জানতেন না তাই তাঁর ভয় ছিল, আফগানিস্তানবাসীরা তাকে ব্রিটিশ চর ভাবতে পারে। তাই মিয়া আকবর শাহের পরামর্শে তিনি অধিবাসীদের কাছে নিজেকে একজন কালা ও বোবা বলে পরিচিত করেণ। সেখান থেকে সুভাষ বসু মস্কো গমন করেন একজন ইতালির কাউন্ট অরল্যান্ডো মাজ্জোট্টা" নামক এক নাগরিকের পরিচয়ে। মস্কো থেকে রোম হয়ে তিনি জার্মানী পৌছেন। তিনি বার্লিনে মুক্ত ভারতীয় কেন্দ্র (Free India Center) গড়ে তোলেন। ভারতের স্বাধীনতার জন্য তিনি জার্মান চ্যান্সেলর এডলফ হিটলারের সাহায্য প্রার্থনা করেণ। কিন্তু ভারতের স্বাধীনতার ব্যাপারে হিটলারের উদাসিনতা তার মনোবল ভেঙ্গে দেয়। ফলে ১৯৪৩ সালে সুভাষ বসু জার্মান ত্যাগ করেণ। একটি জার্মান সাবমেরিন তাকে সমুদ্রের তলদেশে একটি জাপানি সাবমেরিনে পৌছিয়ে দেয়, সেখান থেকে তিনি জাপান পৌছেন।

[সম্পাদনা]ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী

ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী (INA=Indian National Army) মূলত গড়ে উঠেছিল জাতীয়তাবাদী নেতা রাসবিহারি বসুর হাতে, ১৯৪৩ সালে রাসবিহারি বসু এই সেনাবাহিনীর দ্বায়িত্ব সুভাষ চন্দ্র বসুকে হস্তান্তর করেণ । একটি আলাদা নারী বাহিনী (রানি লক্ষ্মীবাঈ কমব্যাট) সহ এতে প্রায় ৮৫,০০০ হাজার সৈন্য ছিল। এই বাহি্নীর কর্তৃত্ব ছিল প্রাদেশিক সরকারের হাতে, যার নাম দেওয়া হয় "মুক্ত ভারতের প্রাদেশিক সরকার" (আরজি হুকুমাত-ই-আজাদ হিন্দ)। এই সরকারের নিজস্ব মুদ্রা, আদালত ও আইন ছিল। অক্ষ শক্তির ৯ টি দেশ এই সরকারকে স্বীকৃতি দান করে। আই.এন.এ.-র সৈন্যরা জাপানিজদের আরাকান ও মেইক্টিলার যুদ্ধে সাহায্য করে।

সুভাষ চন্দ্র বসু আশা করেছিলেন, ব্রিটিশদের উপর আই.এন.এ.-র হামলার খবর শুনে বিপুল সংখ্যাক সৈন্য ভারতীয় সেনাবাহিনী থেকে হতাশ হয়ে আই.এন.এ.-তে যোগ দেবে। কিন্তু এই ব্যাপারটি তেমন ব্যাপকভাবে ঘটল না। বিপরীতদিকে, যুদ্ধে পরিস্থিতির অবনতির সাথে সাথে জাপান তার সৈন্যদের আই.এন.এ. থেকে সরিয়ে নিতে থাকে। একই সময় জাপান থেকে অর্থের সরবরাহ কমে যায়। অবশেষে, জাপানের আত্মস্বমর্পন এর সাথে সাথে আই.এন.এ. ও আত্মসমর্পন করে।

[সম্পাদনা]রাজনৈতিক চিন্তাধারা

সুভাষ চন্দ্র বসু ও মহাত্মা গান্ধি
সুভাষ চন্দ্র বসু ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ

[সম্পাদনা]বিখ্যাত উক্তি

সুভাষ চন্দ্র বসুর সবচেয়ে বিখ্যাত উক্তি হল, "তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব" (হিন্দিতে, তুম মুঝে খুন দো, ম্যায় তুমহে আজাদি দুঙা)। ৪ জুলাই ১৯৪৪ সালে বার্মাতে এক র‌্যালিতে তিনি এই উক্তি করেণ। তার আর একটি বিখ্যাত উক্তি হল "ভারতের জয় ("জয় হিন্দ"), যা কিনা পরবর্তিতে ভারত সরকার গ্রহণ করে নেয়।

[সম্পাদনা]নিখোঁজ ও মৃত্যু

মূল নিবন্ধ: নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর মৃত্যু রহস্য

একটি মতে নেতাজী সোভিয়েত রাশিয়ার কাছে বন্দী অবস্থায়, সাইবেরিয়াতে মৃত্যুবরণ করেন।

''''আর একটি মতে ঃ বর্তমানে রেনকোজি মন্দিরে রাখা নেতাজির চিতাভষ্ম পরীক্ষা করে জানা গেছে -ঐ চিতা ভস্ম নেতাজির নয়। আসলে ভারতবর্ষে নেতাজির তুমুল জনপ্রিয়তায় ঈর্স্বানিত হয়ে একদল উঁচুতলার ভারতীয় নেতা এবং ইংরেজ সরকার মিলিত ভাবে ষড়যন্ত্র করে নেতাজীকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়।তাই ভারতীয় সরকার কখনো নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের প্রকৃত মৃত্যুর কারণ জনসমক্ষে আনেন নি।''''

[সম্পাদনা]সম্মাননা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সুভাষচন্দ্রকে 'দেশনায়ক'[৮] আখ্যা দিয়ে তাসের দেশ নৃত্যনাট্যটি তাঁকে উৎসর্গ করেন। উৎসর্গপত্রে লেখেন: "স্বদেশের চিত্তে নূতন প্রাণ সঞ্চার করবার পূণ্যব্রত তুমি গ্রহণ করেছ, সেই কথা স্মরণ ক'রে তোমার নামে 'তাসের দেশ' নাটিকা উৎসর্গ করলুম।"[৯] আজাদ হিন্দ ফৌজের অভিযান ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলেও, সুভাষচন্দ্রের শৌর্য ও আপোষহীন রণনীতি তাঁকে ভারতব্যাপী জনপ্রিয়তা দান করে। নেতাজির জন্মদিন বর্তমানেপশ্চিমবঙ্গে একটি রাষ্ট্রীয় ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। স্বাধীনতার পর কলকাতার একাধিক রাস্তা তাঁর নামে নামাঙ্কিত করা হয়। বর্তমানে কলকাতার একমাত্র ইন্ডোর স্টেডিয়াম নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম তাঁর নামে নামাঙ্কিত। নেতাজির জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে দমদম বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তিত করেনেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রাখা হয়। তাঁর নামে কলকাতায় স্থাপিত হয় নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও নেতাজি সুভাষ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং দিল্লিতে স্থাপিত হয় নেতাজি সুভাষ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি। কলকাতা মেট্রোর দুটি স্টেশন বর্তমানে নেতাজির নামাঙ্কিত: "নেতাজি ভবন" (পূর্বনাম ভবানীপুর) ও "নেতাজি" (পূর্বনাম কুঁদঘাট)।

[সম্পাদনা]আরো দেখুন

[সম্পাদনা]পাদটীকা

  1.  "১৯৩৮ খ্রীস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে হরিপুরায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে সুভাষ বসু প্রস্তাবিত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো প্রবর্তনের তীব্র সমালোচনা করেন এবং এই প্রচেষ্টা কার্যকরী করা হলে তা সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করার আবেদন করলেন। এছাড়া সুভাষ বসু কংগ্রেসকে একটি ব্যাপক গণসংগঠনে পরিণত করে জাতীয় আন্দোলনকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানালেন। কংগ্রেস সভাপতি পদে আসীন থাকার সময় সুভাষ বসু যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো বর্জন ও আপোষহীন সংগ্রামের সপক্ষে বলিষ্ঠ মতামত প্রকাশ করতে লাগলেন। জুলাই মাসে (১৯৩৮ খ্রীঃ) এক বিবৃতিতে তিনি ঘোষণা করলেন–কংগ্রেসের অধিকাংশ সদস্য যদি ফেডারেশন সম্পর্কে কোনো আপোষরফায় রাজি হয় তাহলে কংগ্রেস দলে গৃহযুদ্ধের সূচনা হবে।" আধুনিক ভারত (১৯২০–১৯৪৭), দ্বিতীয় খণ্ড, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষৎ, কলকাতা, ১৯৯৯, পৃ. ১৫২
  2.  আধুনিক ভারত (১৯২০–১৯৪৭), দ্বিতীয় খণ্ড, প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষৎ, কলকাতা, ১৯৯৯, পৃ. ১৫৬
  3.  "করাচী কংগ্রেস উদ্বোধনের ঠিক আগে ২৩ মার্চ ভগৎ সিং, শুকদেব ও রাজগুরুর ফাঁসির ঘটনায় তীব্র হয় র‌্যাডিকাল জাতীয়তাবাদীদের হতাশা ও ক্রোধ।"আধুনিক ভারত (১৮৮৫-১৯৪৭), সুমিত সরকার, কে পি বাগচী অ্যান্ড কোম্পানি, কলকাতা, ২০০৪, পৃ.২৬৭
  4.  "ভাইসরয় আরউইন গোলটেবিল বৈঠকের প্রস্তাব করে প্রথম যে ঘোষণা করেন তাকে সুভাষচন্দ্র প্রথম থেকেই খুব সন্দেহের চোখে দেখেছিলেন। তাঁর মনে হয়েছিল আসলে এটি ব্রিটিশ সরকারের একটি ফাঁদ মাত্র। প্রথমে মতিলাল নেহরু, মদনমোহন মালব্য, সর্দার প্যাটেল প্রমুখ নেতারা ও গান্ধীজি নিজে আরউইনের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে একটি বিবৃতিতে সই দেন। সুভাষচন্দ্র, জওহরলাল ও আরও কয়েকজন এর বিরোধিতা করে পৃথক এক ইস্তাহার প্রচার করার মনস্থ করেন। কিন্তু... জওহরলাল গান্ধীজির কথায় তাঁর মত পরিবর্তন করেন।" দেশনায়ক সুভাষচন্দ্র: এক ঐতিহাসিক কিংবদন্তি, নিমাইসাধন বসু, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ১৯৯৭, পৃ. ১৩৯
  5.  "রাজনৈতিক গুরু হিসাবে সুভাষচন্দ্র গান্ধীজির তুলনায় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসকেই গণ্য করেছিলেন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দেশবন্ধু নির্দেশিত পথই অনুসরণ করে গেছেন।" - "সুভাষচন্দ্র একটি সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন", সুধী প্রধান, পশ্চিমবঙ্গ পত্রিকা, ডিসেম্বর-জানুয়ারি ১৯৯৬-৯৭ সংখ্যা (নেতাজি সংখ্যা), পৃ. ১০৯
  6. ↑ ৬.০ ৬.১ http://www.answers.com/topic/subhash-chandra-bose
  7.  "বিবেকানন্দের আদর্শকে যে-সময়ে জীবনে গ্রহণ করেছিলাম তখন আমার বয়স বছর পনেরও হবে কিনা সন্দেহ। বিবেকানন্দের প্রভাব আমার জীবনে আমূল পরিবর্তন এনে দিল।" - "স্বামী বিবেকানন্দ: মনীষীদের চোখে (সুভাষচন্দ্র বসু)", পশ্চিমবঙ্গ পত্রিকা জানুয়ারি ২০০৪ সংখ্যা (স্বামী বিবেকানন্দ বিশেষ সংখ্যা), পৃ. ৭১
  8.  "সুভাষচন্দ্রকে নিয়ে বাঙালির গর্ব নিশ্চয় ছিল। এই গর্ববোধ রবীন্দ্রনাথ অনুপম ভাষায় ব্যক্ত করেছিলেন সুভাষচন্দ্রের প্রতি তাঁর মানপত্রে। কবি লিখেছিলেন, "বাঙালি কবি আমি, বাংলাদেশের হয়ে তোমাকে দেশনায়কের পদে বরণ করি। গীতায় বলেন, সুকৃতের রক্ষা ও দুষ্কৃতের বিনাশের জন্য রক্ষাকর্তা বারংবার আবির্ভূত হন। দুর্গতির জালে রাষ্ট্র যখন জড়িত হয়, তখনই পীড়িত দেশের অন্তর্বেদনার প্রেরণায় আবির্ভূত হয় দেশের অধিনায়ক।" রবীন্দ্রনাথ 'রাষ্ট্রের দুর্গতির অবসানে'র জন্যে, দেশের অন্তর্বেদনার প্রেরণায় আবির্ভূত 'দেশনায়ক' সুভাষচন্দ্রের রূপ প্রত্যক্ষ করেছিলেন।" - দেশনায়ক সুভাষচন্দ্র: এক ঐতিহাসিক কিংবদন্তি, নিমাইসাধন বসু, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ১৯৯৭, পৃ. ২৩৩-৩৪
  9.  রবীন্দ্র-নাট্য-পরিক্রমা, উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, ওরিয়েন্ট বুক কোম্পানি, কলকাতা, ১৪০৫ ব., পৃ. ৩৪৭

[সম্পাদনা]অতিরিক্ত গ্রন্থপঞ্জি

বাংলা
ইংরেজি
  • Indian Pilgrim: an unfinished autobiography / Subhas Chandra Bose; edited by Sisir Kumar Bose and Sugata Bose, Oxford University Press, Calcutta, 1997
  • The Indian Struggle, 1920-1942 / Subhas Chandra Bose; edited by Sisir Kumar Bose and Sugata Bose, Oxford University Press, Calcutta, 1997 ISBN 978-0-19-564149-3
  • Brothers Against the Raj—A biography of Indian Nationalists Sarat and Subhas Chandra Bose / Leonard A. Gordon, Princeton University Press, 1990
  • Lost hero: a biography of Subhas Bose / Mihir Bose, Quartet Books, London; 1982
  • Jungle alliance, Japan and the Indian National Army / Joyce C. Lebra, Singapore, Donald Moore for Asia Pacific Press,1971
  • The Forgotten Army: India's Armed Struggle for Independence, 1942-1945, Peter W. Fay, University of Michigan Press, 1993,ISBN 0-472-08342-2 / ISBN 81-7167-356-2
  • Democracy Indian style: Subhas Chandra Bose and the creation of India's political culture / Anton Pelinka; translated by Renée Schell, New Brunswick, NJ : Transaction Publishers (Rutgers University Press), 2003
  • Subhas Chandra Bose: a biography / Marshall J. Getz, Jefferson, N.C. : McFarland & Co., USA, 2002
  • The Springing Tiger: Subhash Chandra Bose / Hugh Toye : Cassell, London, 1959
  • Netaji and India's freedom: proceedings of the International Netaji Seminar, 1973 / edited by Sisir K. Bose. International Netaji Seminar (1973: Calcutta, India), Netaji Research Bureau, Calcutta, India, 1973
  • Correspondence and Selected Documents, 1930-1942 / Subhas Chandra Bose; edited by Ravindra Kumar, Inter-India, New Delhi, 1992.
  • Letters to Emilie Schenkl, 1934-1942 / Subhash Chandra Bose; edited by Sisir Kumar Bose and Sugata Bose, Permanent Black : New Delhi, 2004
  • Japanese-trained armies in Southeast Asia: independence and volunteer forces in World War II / Joyce C. Lebra, New York : Columbia University Press, 1977
  • Burma: The Forgotten War / Jon Latimer, London: John Murray, 2004

[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ

Wikisource-logo.svg
এই নিবন্ধ সম্পর্কে উইকিসোর্সেমৌলিক রচনা রয়েছে:


লরির ধাক্কায় ভাঙা নেতাজি-মূর্তির ঠাঁই আঁস্তাকুড়ে
থানার জঞ্জালে পড়েছিলেন নেতাজি। সরকারি অফিসাররা খবর পেয়েও উদ্যোগী হননি। এমনকী এলাকার বিধায়কও শুনেও শোনেননি। ব্যবস্থা নিতে এগিয়ে আসেননি কেউই। শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের চেষ্টাতেই আজ, ২৩ জানুয়ারি, তাঁর জন্মদিনেই ধানবাদের গোবিন্দপুর চকে নতুন করে প্রতিষ্ঠা পেতে চলেছেন সুভাষচন্দ্র। কলকাতার চিৎপুর থেকে গোবিন্দপুরে এসে পৌঁছেছে তাঁর মূর্তি। অপেক্ষা শুধু আবরণ উন্মোচনের।
ধানবাদে জি টি রোডের উপরেই, গোবিন্দপুর চকে ১৯৯০-এ বসানো হয় নেতাজির আবক্ষ মূর্তি। প্রতি বছর ২৩ জানুয়ারি মুর্তির সামনে থেকেই স্থানীয়রা প্রভাতফেরী শুরু করেন। কিন্তু গত বছর অক্টোবর মাসে ট্রাকের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে নেতাজির মুর্তিটি। ধর থেকে আলাদা হয়ে যায় মুণ্ড। ভাঙাচোরা অবস্থায় সেটি প্রথমে রাস্তাতেই পড়েছিল। পরে স্থানীয় গোবিন্দপুর থানার পুলিশ ভাঙা মূর্তিটি তুলে নিয়ে গিয়ে ফেলে রাখে থানা চত্বরের ভিতরে, জঞ্জাল ফেলার জায়গায়। যেখানে পড়ে থাকে ভাঙাচোরা গাড়ি, উদ্ধার হওয়া মোটর সাইকেল, সেখানেই ঠাঁই হয় ভাঙা নেতাজি মূর্তির।
দ্বিখণ্ডিত নেতাজি মূর্তির জায়গা হয়েছে ধানবাদের গোবিন্দপুর থানার আঁস্তাকুড়ে। —নিজস্ব চিত্র
ঘটনাটি জানতে পেরে প্রথম সরব হন স্থানীয় সংগঠন 'ঝাড়খণ্ড বাংলাভাষা উন্নয়ন সমিতি'-র সদস্যরা। সংগঠনের অভিযোগ, চার মাস ধরে সুভাষচন্দ্রের মূর্তি পড়ে থাকল জঞ্জালের মধ্যে। কারও মধ্যে কোনও হেলদোল নেই! সংগঠনের নেতা বেঙ্গু ঠাকুরের অভিযোগ, "বিডিও থেকে শুরু করে পুলিশ,ক সকলের কাছে আমরা আবেদন করেছি, নতুন করে মূর্তি বসিয়ে দিন। এমনকী থানায় গিয়েও বলেছি, অন্তত জঞ্জাল থেকে তুলে মূর্তিটি একটি ভালো জায়গায় রাখার জন্য। কিন্তু কোনও মহলে কোনও হেলদোল হয়নি।" শেষে বাংলা ভাষা উন্নয়ন সমিতির সদস্যদের সঙ্গে গোবিন্দপুরের সাধারণ লোকজন বিডিও অফিসে ধর্নায় বসে।
গোবিন্দপুর ব্লকের বিডিও সঞ্জীব কুমার অবশ্য দাবি করে বলেন, "আমরা বলেছিলাম, সিমেন্ট দিয়ে দেব। ওঁরা যেন মুর্তি সারিয়ে নেন। কিন্তু ওঁরা আর আমার কাছে আর আসেননি।" উল্লেখ্য, ধানবাদের এই জি টি রোড হয়েই গাড়িতে গোমো যান নেতাজী। চালকের আসনে ছিলেন ভ্রাতুস্পুত্র শিশির। গোমো স্টেশন থেকে ট্রেন ধরেন নেতাজী। স্থানীয় গোবিন্দপুর এলাকার ব্যবসায়ী, শরৎ দুরানির কথায়, "ভাবতেও পারছি না, কী করে দিনের পর দিন থানার আস্তাকুঁড়েয় নেতাজির মুর্তি ফেলে রাখল পুলিশ! কোন আক্কেলে খবর পাওয়া সত্ত্বেও বিডিও মুর্তিটা জঞ্জালের স্তুপ থেকে ওঠানোর উদ্যোগ নিলেন না!" নেতাজির মূর্তি এ ভাবে পড়ে থাকা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই এলাকায় জনমত গড়ে তুলেছিলেন স্থানীয় গোবিন্দপুর এলাকার বাসিন্দারা। শেষ পর্যন্ত সোমবারই মূর্তিটি জঞ্জালের স্তুপ থেকে তুলে আনতে বাধ্য হন গোবিন্দপুর থানার পুলিশ কর্মীরা। গোবিন্দপুর থানার পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, "যেভাবে বিষয়টি দেখানো হচ্ছে তা ঠিক নয়। এটা ঠিকই, মুর্তিটি বেশ কয়েকদিন জঞ্জালের মধ্যে পড়েছিল। কিন্তু পরে সেটিকে তুলে আনা হয়।" সরকারি স্তরে মুর্তি বসানো নিয়ে 'টালবাহানা' চলতে থাকায় শেষ পর্যন্ত গোবিন্দপুর চকে মুর্তি বসাতে উদ্যোগী হয়েছে বাংলা ভাষা উন্নয়ন সমিতি ও স্থানীয় নাগরিক সমাজ। সমাজের সচিব অশোক গিরি জানিয়েছেন, "কলকাতা থেকে মূর্তি তৈরি করিয়ে আনা হয়েছে। নেতাজির জন্মদিনেই তার আবরণ উন্মোচন করার কথা। দেখা যায়!"
http://www.anandabazar.com/23desh6.html


মহিলাদের ওপর নিগ্রহের ঘটনায় দেশের বর্তমান আইনেই ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব বলে জানাল ভার্মা কমিটি। তবে তারজন্য আইনের শাসনের পাশাপাশি দ্রুত বিচার জরুরি বলে জানান কমিটির প্রধান বিচারপতি জে এস ভার্মা। আজই দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে রিপোর্ট জমা দেয় বিচারপতি ভার্মা নেতৃত্বে তৈরি ওই কমিটি। 

দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ডের পরই মহিলাদের ওপর যৌন নিগ্রহে কঠোর শাস্তির দাবি ওঠে বিভিন্ন মহলে। প্রধানত যুবসম্প্রদায় পথে নামায় উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা দেশ। এরপরই যৌন নিগ্রহের শাস্তি নিয়ে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয় কেন্দ্র। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রাক্তন বিচারপতি জে এস ভার্মার নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি করা হয়। গত ১৬ ডিসেম্বর ঘটনার এক সপ্তাহ পর তিন সদস্যের বিশেষ কমিটি গঠিত হয়। রিপোর্ট পেশের পর সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশে বিচারপতি ভার্মা বলেন, ভারতের যুবসমাজই চিন্তাধারায় পরিবর্তন আনার রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছে। আমরা যুব সমাজের কাছে ঋণী। প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে তারা অত্যন্ত পররণত মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে। যেভাবে কোনও পূর্ব পরিচয় ছাড়াই সাধারণ মানুষ একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাতে আমি সত্যিই অভিভূত। আমি এটাকে কোনও আন্দোলন বলব না, এটা স্বতস্ফূর্ত প্রতিবাদ। তরুণ প্রজন্ম আমাদের, প্রবীন প্রজন্মকে এমন কিছু শিক্ষা দিয়েছে যেই বিষয় আমরা সত্যিই সচেতন ছিলাম না। তরণ প্রজন্ম সচেতন। এটাই সমাজে প্রকৃত পরিবর্তন আনার প্রথম ধাপ। আমি নিশ্চিত, ধীরে ধীরে এই পরিবর্তনে গতি আসবে। 

ভার্মা জানিয়েছেন রিপোর্ট পেশের সময় কমিটি শুধু ভারতের নয়, দেশের বাইরে থেকেও বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েছে। অক্সফোর্ড ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অস্ট্রেলিয়ার এক বিচারক ও কানাডার সুপ্রিম কোর্টের চিফ জাস্টিস রিপোর্ট পেশে বিশেষ সাহায্য করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। 

No comments: