Follow palashbiswaskl on Twitter

ArundhatiRay speaks

PalahBiswas On Unique Identity No1.mpg

Unique Identity No2

Please send the LINK to your Addresslist and send me every update, event, development,documents and FEEDBACK . just mail to palashbiswaskl@gmail.com

Website templates

Jyoti basu is dead

Dr.B.R.Ambedkar

Monday, January 21, 2013

রাজনীতির ভাষা মস্তাতানিকেও লজ্জা দিচ্ছে। আজকাল দাম বাড়ানো নিয়ে কেন্দ্রের সমালোচনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে নজিরবিহীন ভাবে আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। ক্যানিংয়ের সভায় তিনি বলেন, সারের দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করে তিনি দশবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, "তাহলে আর কী করব? তাহলে কী মারব?"দিল্লীতে কান পাতলেই শোনা যাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে বাহুবল ধনবল আস্ফালন।গণতান্ত্রিক পদ্ধতির অকাল মৃত্যু হয়েছে।এি পরিবেশে এই গণতন্ত্রের কাছে আমরা কি আশা করতে পারি?দেশের গৃহমন্ত্রী হিন্দুত্বের সন্ত্রাসের কথা বলে সরাসরি সঁঘ পরিবার ও তার রাজনৈতিক মুখকে দায়ী করতে দ্বিধ বোধ করছেন না ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুত্বকে মৌলবাদী হিন্দুত্বের মোকাবিলায় ভোটের অন্কে এগিয়ে নিয়ে যেতে।কংগ্রেস হলফ করে বলছে প্রমাম আছে।তাহলে আইন তার কাজ করছে না কেন ?রাষ্ট্রপতিকে আইনের শাসন নিয়ে বলতে হচ্ছে কেন? তার চাইতে বড় কথা মাোবাদীদের প্রতক্ষ্য সমর্থনে ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী যখন প্রধানমন্ত্রীকে মারার কথা বলতে দ্বিধা বোধ করছেন না, তখন এঈ বাংলায়, এই দেশে রাজনৈতিক হিংসা , ঘৃণা ও সন্ত্রাসের সিলসিলা কি করে শেষ হবে? পলাশ বিশ্




রাজনীতির ভাষা মস্তাতানিকেও লজ্জা দিচ্ছে আজকাল দাম বাড়ানো নিয়ে কেন্দ্রের সমালোচনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে নজিরবিহীন ভাবে আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। ক্যানিংয়ের সভায় তিনি বলেন, সারের দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করে তিনি দশবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, "তাহলে আর কী করব? তাহলে কী মারব?"দিল্লীতে কান পাতলেই শোনা যাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে বাহুবল ধনবল আস্ফালন।গণতান্ত্রিক পদ্ধতির অকাল মৃত্যু হয়েছে।এি পরিবেশে এই গণতন্ত্রের কাছে আমরা কি আশা করতে পারি?দেশের গৃহমন্ত্রী হিন্দুত্বের সন্ত্রাসের কথা বলে সরাসরি সঁঘ পরিবার ও তার রাজনৈতিক মুখকে দায়ী করতে দ্বিধ বোধ করছেন না ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুত্বকে মৌলবাদী হিন্দুত্বের মোকাবিলায় ভোটের অন্কে এগিয়ে নিয়ে যেতে।কংগ্রেস হলফ করে বলছে প্রমাম আছে।তাহলে আইন তার কাজ করছে না কেন ?রাষ্ট্রপতিকে আইনের শাসন নিয়ে বলতে হচ্ছে কেন? তার চাইতে বড় কথা মাোবাদীদের প্রতক্ষ্য সমর্থনে ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী যখন প্রধানমন্ত্রীকে মারার কথা বলতে দ্বিধা বোধ করছেন না, তখন এই বাংলায়, এই দেশে রাজনৈতিক হিংসা , ঘৃণা ও সন্ত্রাসের সিলসিলা কি করে শেষ হবে? 

পলাশ বিশ্বাস



রাজনীতির ভাষা মস্তাতানিকেও লজ্জা দিচ্ছে আজকাল দাম বাড়ানো নিয়ে কেন্দ্রের সমালোচনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে নজিরবিহীন ভাবে আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। ক্যানিংয়ের সভায় তিনি বলেন, সারের দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করে তিনি দশবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, "তাহলে আর কী করব? তাহলে কী মারব?"দিল্লীতে কান পাতলেই শোনা যাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে বাহুবল ধনবল আস্ফালন।গণতান্ত্রিক পদ্ধতির অকাল মৃত্যু হয়েছে।এি পরিবেশে এই গণতন্ত্রের কাছে আমরা কি আশা করতে পারি?দেশের গৃহমন্ত্রী হিন্দুত্বের সন্ত্রাসের কথা বলে সরাসরি সঁঘ পরিবার ও তার রাজনৈতিক মুখকে দায়ী করতে দ্বিধ বোধ করছেন না ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দুত্বকে মৌলবাদী হিন্দুত্বের মোকাবিলায় ভোটের অন্কে এগিয়ে নিয়ে যেতে।কংগ্রেস হলফ করে বলছে প্রমাম আছে।তাহলে আইন তার কাজ করছে না কেন ?রাষ্ট্রপতিকে আইনের শাসন নিয়ে বলতে হচ্ছে কেন? তার চাইতে বড় কথা মাোবাদীদের প্রতক্ষ্য সমর্থনে ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী যখন প্রধানমন্ত্রীকে মারার কথা বলতে দ্বিধা বোধ করছেন না, তখন এই বাংলায়, এই দেশে রাজনৈতিক হিংসা , ঘৃণা ও সন্ত্রাসের সিলসিলা কি করে শেষ হবে?

এবার বিতর্কের সূত্রপাত মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে
এই সময়: এবার বিতর্কের সূত্রপাত মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে। সারের দাম নিয়ে কেন্দ্রের সমালোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এদিন কটাক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে। বলেছেন, একাধিক বার প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করেও কাজ হয়নি। তাঁর দাবিতে কর্ণপাত করেনি কেন্দ্র। 

এ প্রসঙ্গেই নিজেই অসহায়তা বোঝাতে গিয়ে বিতর্ক টেনে আনেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, 'সারের দাম আমরা বাড়াই না, বাড়ায় কেন্দ্র। এই নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে দশবার বলেছি। আর কী করব? মারব?' সেই সঙ্গে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, মানুষের স্বার্থে লড়াই করতে তিনি যত দূর সম্ভব যাবেন। 

জয়পুরে চিন্তন বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, অ-কংগ্রেসি রাজ্যগুলি কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলিকে নিজেদের বলে প্রচার করছে। নাম না-করলেও, রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য ছিল, এই অভিযোগের প্রধান উদ্দিষ্ট হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। এদিন প্রধানমন্ত্রীর দাবি খারিজ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, 'কর বাবদ রাজ্যের থেকে টাকা নিয়ে যায় কেন্দ্র। সেই টাকাই আবার কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নামে রাজ্যকে দেওয়া হয়। রাজ্যের টাকা কেন্দ্রকে নিয়ে যেতে দেব না।'

ভোটের ঢাকে কাঠি দিয়েই সামনে এলেন নতুন যুবরাজ
চিন্তন শিবিরের ফাঁকে মায়ের সঙ্গে জরুরি আলোচনা
নয়াদিল্লি: সেনাপতির অভিষেকে শিবিরে এখন উন্মাদনা৷ তাঁকে ঘিরে যুদ্ধ জয়ের স্বপ্ন৷ 

তাই তাঁর প্রথম বক্তৃতার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন চিন্তন শিবিরে উপস্থিত প্রতিটি মানুষ৷ রবিবার কংগ্রেসের সহ-সভাপতি হিসেবে রাহুল গান্ধীর প্রথম বক্তৃতায় মিলেমিশে গেল আবেগ ও বাস্তব৷ 

ঠাকুরমা ইন্দিরা গান্ধীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাজীব-তনয় বললেন, ' একমাত্র কংগ্রেসই দেশের ডিএনএ বুঝতে পারে৷ আমার সবটুকু দিয়ে আমি লড়াই করব দেশের জন্য৷' অর্থাত্, কংগ্রেস রাহুলকে সামনে রেখে ২০১৪ সালের লোকসভা জয়ের যে অঙ্ক কষেছে, সেই অঙ্কের হিসেব মেনেই বার্তা দিলেন যুবরাজ৷ 

ভোটের জন্য তিনি পুরো তৈরি তা বুঝিয়ে দিতেই এ দিন সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিলেন দুর্নীতি দমন ও খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে৷ দুর্নীতিমুক্ত না হতে পারলে যে দেশের যুব প্রজন্ম কংগ্রেসের পাশে দাঁড়াবে না, তা বিলক্ষণ জানেন তিনি৷ তাই তিনি বলেন, 'সাধারণ মানুষ রাজনীতি থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন ভাবছেন৷ গণতন্ত্রের পক্ষে তা সুখের কথা নয়৷ নিজেকে কলুষমুক্ত করে দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য ভাবতে হবে৷ সেখানে দুর্নীতির কোনও স্থান নেই৷ সেটাই কংগ্রেসের প্রতিটি কর্মীর কর্তব্য৷' মা সনিয়াও চিন্তন বৈঠকের সূচনায় প্রায় একই কথা বলেছিলেন৷ তাঁর আক্ষেপ, 'যাঁরা নিজেরা দুর্নীতিগ্রস্ত, তাঁরাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলেন৷ যাঁরা নারীনিগ্রহে অভিযুক্ত, তাঁদের মুখে মহিলাদের সুরক্ষার কথা শুনতে অবাক লাগে৷ কিন্ত্ত বাস্তবে সেটাই হচ্ছে৷' 

সম্প্রতি দিল্লির গণধর্ষণ রাজধানীতে মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে বিশাল প্রশ্ন তুলে দিয়েছে৷ নিরাপত্তা যে নেই, প্রকারান্তরে তা স্বীকার করতে হয়ছে সরকারকে৷ রাহুলের মুখেও শোনা গেল মহিলাদের জন্য নিরাপদ দেশ গড়ার কথা৷ বললেন, 'দেশের তরুণরা ক্ষুব্ধ৷ তাঁরা ক্ষমতার প্রদর্শন দেখতে দেখতে ক্লান্ত৷ রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন তাঁরা৷ আমার প্রশ্ন, কেন কিছু মানুষের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকবে?' প্রয়োজনে যে পুরো ব্যবস্থার খোলনলচে বদলে ফেলা হবে সে কথাও বলেন তিনি৷ গুরুত্ব দেন পঞ্চায়েতগুলিকে আরও ক্ষমতা দেওয়ার উপর৷ জানান, তিনি চেষ্টা করবেন যাতে যুব প্রজন্মের মধ্যে থেকে ৪০-৫০ জন নেতা তৈরি করা যায়৷ তাঁর দল এখন নবীন-প্রবীণের এক সামঞ্জস্যপূর্ণ মিশেল, সেই ঐতিহ্য ধরে রাখার উপর জোর দেন তিনি৷ 

মনমোহন সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, 'দেশের সব উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকায়৷' একে একে বলেন ১০০ দিনে কাজ, ক্যাশ ট্রান্সফার ও খাদ্য বিলের উপযোগিতার কথা৷ বলেন, 'এ দেশে আর কোনও বাচ্চা না খেয়ে ঘুমোতে যাবে না৷ খাদ্য সুরক্ষা বিল সবার মুখে খাবার তুলে দেবে৷ ক্যাশ ট্রান্সফার দেবে নগদ টাকা৷' সহজেই অনুমেয়, এই দু'ই প্রকল্পই হবে কংগ্রেসের লোকসভা প্রচারের মূল হাতিয়ার৷ এর পরেই আবেগতাড়িত হয়ে বলেন, 'সকলে যখন আমাকে কাল অভিনন্দন জানাচ্ছিলেন, আমার মা সেই সময় আমার ঘরে বসে কাঁদছিলেন৷ কারণ তিনি জানেন ক্ষমতা আসলে বিষ৷ আর আমার মা তাতে আসক্ত নন৷' হাততালিতে ফেটে পড়ে সভাকক্ষ৷ রাহুলের মুখে তখন স্মিত হাসি, কিন্ত্ত শরীরী ভাষা বুঝিয়ে দিল ২০১৪-ই পাখির চোখ৷

ভারত সঞ্চারে ১ লক্ষ ভিআরএস
নয়াদিল্লি: বেতন খরচ কমাতে সংস্থার এক লক্ষ কর্মীকে স্বেচ্ছাবসরে পাঠাতে চায় রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থা ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (বিএসএনএল)৷ সংস্থাটির বেতন বাবদ খরচের পরিমাণ তাদের আয়ের ৪৮ শতাংশ৷ সংস্থার এক আধিকারিক জানান, 'বিএসএনএল-এ প্রয়োজনের তুলনায় এক লক্ষ বেশি কর্মী কাজ করেন৷ ওই কর্মীরা স্বেচ্ছাবসর নিক চায় সংস্থাটি৷' তিনি আরও বলেন, 'ওই কর্মীদের বেতন বাবদ খরচের কথা মাথায় রেখেই সরকারের কাছে বিএসএনএল স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছে৷ এই কর্মীরা স্বেচ্ছাবসর গ্রহণ করলে সংস্থাটির বেতন বাবদ খরচ ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমে যাবে, যা সংস্থাটির পক্ষে সম্ভবপর৷' 
২০১১ সালের মার্চ মাস অবধি বিএসএনএলের মোট কর্মী সংখ্যা ছিল ২.৮১ লক্ষ৷ ২০০৪-০৫ অর্থবর্ষ থেকে সংস্থাটির লাভের পরিমাণ ক্রমাগত কমতে থাকলেও ২০০৯-১০ অর্থবর্ষে ক্ষতি করে বিএসএনএল৷ ২০১০-১১ অর্থবর্ষে বেতন ও থ্রিজি এবং বিডব্লিউএ স্পেকট্রাম কেনা বাবদ খরচের হাত ধরে সংস্থাটির ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে ৬,৩৮৪ কোটি টাকা হয়৷ অতিরিক্ত কর্মী সমস্যা ছাড়া তাদের বয়স ও প্রয়োজনীয় কর্মদক্ষতার অভাব সংস্থাটির আর্থিক ক্ষতির অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন আধিকারিকটি৷ 
ক্ষতির পরিমাণ কমাতে আগামী পাঁচ বছরে তাদের জমি ও টাওয়ার নির্মাণ সংস্থা বিক্রি করার পরিকল্পণা নিয়েছে বিএসএনএল৷ এই বাবদ আনুমানিক ৮,০০০ কোটি টাকা তুলতে পারা যাবে বলে আশাবাদি সংস্থাটি৷

নয়াদিল্লি: কোষাগারে আরও ৩,০০০ কোটি টাকা আনতে অয়েল ইন্ডিয়ার (ওআইএল বা অয়েল) দশ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করবে সরকার৷ ২৪ জানুয়ারি এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পালানিয়াপ্পান চিদম্বরমের নেতৃত্বে ক্ষমতাপ্রাপ্ত মন্ত্রীগোষ্ঠীর বৈঠকে৷ 
এক সরকারি আধিকারিকের কথায়, ক্ষমতাপ্রাপ্ত মন্ত্রীগোষ্ঠী ২৪ জানুয়ারি অয়েলের শেয়ারের বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করবে৷ অফার ফর সেলের (ওএফএস) মাধ্যমে ১০ শতাংশ বা ৬.০১ কোটি শেয়ার বাজারে ছাড়বে৷ বাজার দরের চেয়ে সামান্য কম দামে এই শেয়ার বিক্রি হবে৷ শুক্রবার বাজার বন্ধের সময় ওআইএলের প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৫৬১ টাকা৷ অর্থাত্‍ বাজার দরে শেয়ার বিক্রি করলে ৩,৩০০ কোটি টাকার বেশিই কোষাগারে ঢুকবে৷ 
এই মুহূর্তে সরকারের হাতে অয়েল ইন্ডিয়ার ৭৮.৪৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে, বিলগ্নিকরণের ফলে সরকারের হাতে ৬৮.৪৩ শতাংশ শেয়ার থাকবে৷ এখন অয়েল ইন্ডিয়ার অথরাইজড শেয়ার ক্যাপিটালের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা, এর মধ্যে বাজারে ইস্যু হওয়ার শেয়ারের দাম (পেড আপ ক্যাপিটাল) ২০৪.৪৫ কোটি টাকা৷ বিপুল ভর্তুতি দেওয়া ডিজেলের দাম বিনিয়ন্ত্রণের পথে সরকার পদক্ষেপ করার পরেই চড় চড় করে দাম বাড়ছে তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলির শেয়ারে দাম৷ শুক্রবার বাজার বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ বন্ধের সময় অয়েল ইন্ডিয়ার শেয়ারের দাম বৃহস্পতিবারের তুলনায় ৮.৭৫ শতাংশ বেশি ছিল৷ 
কেরোসিন, রান্নার গ্যাস সহ বিভিন্ন জিনিসে ভতুর্কির ৪০ শতাংশই দেওয়া হয় ওআইএল, এনটিপিসি-র মতো সংস্থা থেকে সরকারের যে আয় হয় তা থেকে৷ খুচরো বিক্রেতারা যাতে ডিজেলের দাম বাড়াতে পারেন সে ব্যাপারে ১৭ জানুয়ারি সরকার ছাড়পত্র দিয়েছে৷ এক আধিকারিক জানিয়েছেন, 'তেল ক্ষেত্রগুলির বাজার এখন ভালো৷ তাই শেয়ার বিক্রিতে ভালোই সাড়া পাওয়া যাবে বলে মনে হচ্ছে৷' 
চলতি অর্থবর্ষেই ৩০ হাজার কোটি টাকা বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ তারই অঙ্গ হিসাবে অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডের (অয়েল) দশ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে ২,৭০০ কোটি টাকা তুলতে চাইছে সরকার৷ পাশাপাশি এনটিপিসির ৯.৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে ১২ হাজার কোটি টাকা দেশের কোষাগারে ঢোকাতে চাইছে সরকার৷ 
অয়েল ইন্ডিয়ার শেয়ার বাজার দরে ছাড়া হলেও এনটিপিসির শেয়ার নিলাম করার কথা প্রস্তাব দিয়েছে সরকার৷ এখন সরকারের হাতে এনটিপিসির ৮৪.৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে৷ বিলগ্নিকরণের পরে সরকারের হাতে এনটিপিসির শেয়ার থাকবে ৭৫ শতাংশ৷ ২০০৪ সালেই প্রথম এই সংস্থার শেয়ার বাজারে ছাড়া হয়৷ 
২০১২-১৩ সালের বাজেটে ৩০ হাজার কোটি টাকা বাজার থেকে তোলার কথা হলেও এখনও পর্যন্ত, অর্থাত্‍ প্রথম তিনটি ত্রৈমাসিক মিলিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন সংস্থার শেয়ার বাজারে ছেড়ে ৬,৯০০ কোটি টাকা তুলেতে পেরেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ এর মধ্যে ন্যাশনাল মিনারেল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের (এনএমডিসি) শেয়ার বিক্রি করেই ৬০০০ কোটি টাকা ও হিন্দুস্তান কপারের শেয়ার বিক্রি করে ৮০৮ কোটি টাকা এসেছে৷ আগে, ন্যাশনাল বিল্ডিংস কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশনের (এনবিসিসি) শেয়ার থেকে ১৫৪ কোটি টাকা আয় হয়েছিল৷ 
অয়েল ইন্ডিয়া, স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (সেইল) ও হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস সহ দশটি সংস্থাকে চিহ্নিত করেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ রাষ্ট্রীয় ইস্পাত নিগম ও হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্সের প্রত্যেকটির ১০ শতাংশ করে শেয়ার বিক্রি করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে৷ এ ছাড়া ন্যালকোর ১২.১৫ শতাংশ, সেইলের ১০.৮২ শতাংশ ও মেটান অ্যান্ড মিনারেল ট্রেডিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার (এমএমটিসি) ৯.৩৩ শতাংশ শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ এর পরের ধাপে ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেডের (ভেল) ৫ শতাংশ ও হিন্দুস্তান কপারের ৪.০১ শতাংশ শেয়ার বিক্রিরও প্রস্তাব রয়েছে৷

নয়াদিল্লি: চলতি অর্থবর্ষে পাওয়ার ফিনান্স কর্পোরেশন, রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন কর্পোরেশন, হাডকো সমেত অনেকগুলি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাজারে করমুক্ত বন্ড ছাড়লেও, ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষের বাজেটে এই সংস্থাগুলিকে আর করমুক্ত বন্ড ছাড়ার অনুমতি নাও দিতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার৷ করমুক্ত বন্ড বিক্রি করে বাজার থেকে যে টাকা এই সংস্থাগুলি তুলেছে তা পরিকাঠামো উন্নয়নে ব্যবহার না করায় সরকার এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷ দীর্ঘমেয়াদি পরিকাঠামো প্রকল্পগুলিতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি যাতে বিনিয়োগ করে প্রাথমিক ভাবে সেই উদ্দেশেই তাদের করমুক্ত বন্ড বাজারে ছাড়ার অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় সরকার৷ কিন্তু, সংস্থাগুলির কাছে বন্ড বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ বিভিন্ন সংস্থাকে ঋণ দিয়ে সুদ বাবদ উপার্জন করাই পছন্দশীল৷ তবে সংস্থাগুলির এই পদক্ষেপ বন্ডের কর ছাড় সুবিধার বিপরীতধর্মী হওয়ায় সংস্থাগুলিকে আর করমুক্ত বন্ড বিক্রির মাধ্যমে টাকা তোলার অনুমতি নাও দিতে পারে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক৷ ইতিমধ্যেই বিষয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের গোচরে এনেছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক৷ 
অন্যদিকে রাজস্বে ক্ষতি হওয়ার জন্য এই ধরণের ঋণপত্র (বন্ড) বাজারে ছাড়ার বিরোধিতা করেছে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডিরেক্ট ট্যাক্সেস (সিবিডিটি)৷ ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে করমুক্ত বন্ড মারফত বাজার থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা তোলার অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক৷ এর মধ্যে ন্যাশনাল হাইওয়েজ অথরিটি অফ ইন্ডিয়াকে ১০ হাজার কোটি টাকা, ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ফিনান্স কর্পোরেশনকে ১০ হাজার কোটি টাকা, আইআইএফসিএলকে ১০ হাজার কোটি টাকা, হাডকোকে ৫ হাজার কোটি, ন্যাশনাল হাউজিং ব্যাঙ্ককে ৫ হাজার কোটি, সিদবিকে ৫ হাজার কোটি, বন্দর খাতে ৫ হাজার কোটি ও বিদ্যুত্ ক্ষেত্রে ১০ হাজার কোটি টাকা তোলার অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক৷ পরে অবশ্য সিদবি-র নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেয় মন্ত্রকটি৷ ২০১১-১২ অর্থবর্ষে এই পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার কোটি টাকা৷


নয়াদিল্লি: রিয়েল এস্টেট এমনকি ব্রোকিং সংস্থাগুলিকেও ব্যাঙ্ক খোলার অনুমতি দেওয়ার পক্ষে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক৷ উপযুক্ত 'সেফ গার্ড' থাকলে যাতে এই ধরনের সংস্থাগুলিও ব্যাঙ্ক ব্যবস্থায় আসতে পারে সে জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে অনুরোধ করেছে অর্থমন্ত্রক৷ 
ব্যাঙ্ক স্থাপনের জন্য নতুন লাইসেন্স দেওয়া দিয়ে অর্থমন্ত্রকের মত হল, অনুমোদন পাক রিয়েল এস্টেট ও ব্রোকার সংস্থাগুলি, তবে কোথাও কোনও ভাবে যেন তাদের ব্যাঙ্ক ব্যবসার ক্ষেত্রে ওই সব সংস্থার নাম না উল্লেখ করা হয়৷ এ ছাড়া ওই সব সংস্থার ভেন্ডর ও গ্রাহকরা যাতে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ না পান সে ব্যাপারটিও নিশ্চিত করতে হবে৷ এমন লক্ষ্মণরেখা টানতে হবে যাতে কোনও ভাবেই ব্যাঙ্কের সিইওদের প্রভাবিত করা না যায়৷ এই ধরনের পদক্ষেপ করলে ঝুঁকি অনেকটা কমবে বলেই মন্ত্রকের ধারনা৷ 
বেসরকারি ব্যাঙ্কের জন্য লাইসেন্স দেওয়া নিয়ে ২০১১ সালে যে খসড়া রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে খসড়া তৈরি করেছে তাতে বলা হয়েছে, 'গত তিন বছরে যে সব সংস্থা বা গ্রুপের সম্পত্তি বা আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ (১০ শতাংশ) রিয়েল এস্টেট, নির্মাণ, ব্রোকিংয়ের কোনও একটি থেকে বা মিলিত হবে হয়েছে সেই সব সংস্থা ব্যাঙ্ক খুলতে পারবে না৷' 
এই ধরনের সংস্থাকে অনুমোদন না দেওয়ার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের যুক্তি, এই ধরনের ব্যবসায় ক্যাপিটাল মার্কেটের নানা ঝুঁকি থাকে, একই সঙ্গে এই ধরনের ব্যবসার সঙ্গে ব্যাঙ্কর ব্যবসার ধরণও পুরোপুরি পৃথক৷ এই ধরনের সংস্থা যাতেক ব্যাঙ্ক ব্যবসায় না থাকে সে জন্য আন্তর্জাতিক স্তরেও নড়াচড়া শুরু হয়েছে বলেও জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক৷ 
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গাইল লাইনে সুস্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে, আগেও এ দেশে এই ধরনের সংস্থার সঙ্গে ব্যাঙ্কের বোর্ড মিটিংও সন্তোষজনক হয়নি৷ 
তবে অর্থমন্ত্রকের মত হল, নন-অপারেটিং হোল্ডিং কোম্পানির পরিবর্ত হিসাবে নন-অপারেটিভ ফিনান্সিয়াল হোল্ডিং কোম্পানি শুধুমাত্র একটি ক্ষেত্রেই গঠন করা হতে পারে তখনই যখন আর্থিক সংস্থাটি নন-অপারেটিভ ফিনান্সিয়াল হোল্ডিং কোম্পানি হবে৷ অর্থমন্ত্রক চায়, এ ক্ষেত্রে আর্থিং সংস্থাটির নিয়ন্ত্রক হবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আর অন্য সংস্থাটির নিয়ন্ত্রক স্থির হবে সেই সংস্থার ধরন অনুযায়ী৷ 
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রস্তাব হল নতুন ব্যাঙ্কগুলির ২৫ শতাংশ শাখা গ্রামের এমন অঞ্চলে করতে হবে যেখানে ব্যাঙ্ক পরিষেবা নেই এবং জনসংখ্যা দশ হাজারের কম৷


রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির করমুক্ত বন্ড ছাড়া মানা
নয়াদিল্লি: চলতি অর্থবর্ষে পাওয়ার ফিনান্স কর্পোরেশন, রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন কর্পোরেশন, হাডকো সমেত অনেকগুলি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাজারে করমুক্ত বন্ড ছাড়লেও, ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষের বাজেটে এই সংস্থাগুলিকে আর করমুক্ত বন্ড ছাড়ার অনুমতি নাও দিতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার৷ করমুক্ত বন্ড বিক্রি করে বাজার থেকে যে টাকা এই সংস্থাগুলি তুলেছে তা পরিকাঠামো উন্নয়নে ব্যবহার না করায় সরকার এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷ দীর্ঘমেয়াদি পরিকাঠামো প্রকল্পগুলিতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি যাতে বিনিয়োগ করে প্রাথমিক ভাবে সেই উদ্দেশেই তাদের করমুক্ত বন্ড বাজারে ছাড়ার অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় সরকার৷ কিন্তু, সংস্থাগুলির কাছে বন্ড বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ বিভিন্ন সংস্থাকে ঋণ দিয়ে সুদ বাবদ উপার্জন করাই পছন্দশীল৷ তবে সংস্থাগুলির এই পদক্ষেপ বন্ডের কর ছাড় সুবিধার বিপরীতধর্মী হওয়ায় সংস্থাগুলিকে আর করমুক্ত বন্ড বিক্রির মাধ্যমে টাকা তোলার অনুমতি নাও দিতে পারে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক৷ ইতিমধ্যেই বিষয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের গোচরে এনেছে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক৷
অন্যদিকে রাজস্বে ক্ষতি হওয়ার জন্য এই ধরণের ঋণপত্র (বন্ড) বাজারে ছাড়ার বিরোধিতা করেছে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডিরেক্ট ট্যাক্সেস (সিবিডিটি)৷ ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে করমুক্ত বন্ড মারফত বাজার থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা তোলার অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক৷ এর মধ্যে ন্যাশনাল হাইওয়েজ অথরিটি অফ ইন্ডিয়াকে ১০ হাজার কোটি টাকা, ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ফিনান্স কর্পোরেশনকে ১০ হাজার কোটি টাকা, আইআইএফসিএলকে ১০ হাজার কোটি টাকা, হাডকোকে ৫ হাজার কোটি, ন্যাশনাল হাউজিং ব্যাঙ্ককে ৫ হাজার কোটি, সিদবিকে ৫ হাজার কোটি, বন্দর খাতে ৫ হাজার কোটি ও বিদ্যুত্ ক্ষেত্রে ১০ হাজার কোটি টাকা তোলার অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক৷ পরে অবশ্য সিদবি-র নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেয় মন্ত্রকটি৷ ২০১১-১২ অর্থবর্ষে এই পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার কোটি টাকা৷

নয়াদিল্লি: রিয়েল এস্টেট এমনকি ব্রোকিং সংস্থাগুলিকেও ব্যাঙ্ক খোলার অনুমতি দেওয়ার পক্ষে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক৷ উপযুক্ত 'সেফ গার্ড' থাকলে যাতে এই ধরনের সংস্থাগুলিও ব্যাঙ্ক ব্যবস্থায় আসতে পারে সে জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে অনুরোধ করেছে অর্থমন্ত্রক৷ 
ব্যাঙ্ক স্থাপনের জন্য নতুন লাইসেন্স দেওয়া দিয়ে অর্থমন্ত্রকের মত হল, অনুমোদন পাক রিয়েল এস্টেট ও ব্রোকার সংস্থাগুলি, তবে কোথাও কোনও ভাবে যেন তাদের ব্যাঙ্ক ব্যবসার ক্ষেত্রে ওই সব সংস্থার নাম না উল্লেখ করা হয়৷ এ ছাড়া ওই সব সংস্থার ভেন্ডর ও গ্রাহকরা যাতে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ না পান সে ব্যাপারটিও নিশ্চিত করতে হবে৷ এমন লক্ষ্মণরেখা টানতে হবে যাতে কোনও ভাবেই ব্যাঙ্কের সিইওদের প্রভাবিত করা না যায়৷ এই ধরনের পদক্ষেপ করলে ঝুঁকি অনেকটা কমবে বলেই মন্ত্রকের ধারনা৷ 
বেসরকারি ব্যাঙ্কের জন্য লাইসেন্স দেওয়া নিয়ে ২০১১ সালে যে খসড়া রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে খসড়া তৈরি করেছে তাতে বলা হয়েছে, 'গত তিন বছরে যে সব সংস্থা বা গ্রুপের সম্পত্তি বা আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ (১০ শতাংশ) রিয়েল এস্টেট, নির্মাণ, ব্রোকিংয়ের কোনও একটি থেকে বা মিলিত হবে হয়েছে সেই সব সংস্থা ব্যাঙ্ক খুলতে পারবে না৷' 
এই ধরনের সংস্থাকে অনুমোদন না দেওয়ার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের যুক্তি, এই ধরনের ব্যবসায় ক্যাপিটাল মার্কেটের নানা ঝুঁকি থাকে, একই সঙ্গে এই ধরনের ব্যবসার সঙ্গে ব্যাঙ্কর ব্যবসার ধরণও পুরোপুরি পৃথক৷ এই ধরনের সংস্থা যাতেক ব্যাঙ্ক ব্যবসায় না থাকে সে জন্য আন্তর্জাতিক স্তরেও নড়াচড়া শুরু হয়েছে বলেও জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক৷ 
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গাইল লাইনে সুস্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে, আগেও এ দেশে এই ধরনের সংস্থার সঙ্গে ব্যাঙ্কের বোর্ড মিটিংও সন্তোষজনক হয়নি৷ 
তবে অর্থমন্ত্রকের মত হল, নন-অপারেটিং হোল্ডিং কোম্পানির পরিবর্ত হিসাবে নন-অপারেটিভ ফিনান্সিয়াল হোল্ডিং কোম্পানি শুধুমাত্র একটি ক্ষেত্রেই গঠন করা হতে পারে তখনই যখন আর্থিক সংস্থাটি নন-অপারেটিভ ফিনান্সিয়াল হোল্ডিং কোম্পানি হবে৷ অর্থমন্ত্রক চায়, এ ক্ষেত্রে আর্থিং সংস্থাটির নিয়ন্ত্রক হবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আর অন্য সংস্থাটির নিয়ন্ত্রক স্থির হবে সেই সংস্থার ধরন অনুযায়ী৷ 
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রস্তাব হল নতুন ব্যাঙ্কগুলির ২৫ শতাংশ শাখা গ্রামের এমন অঞ্চলে করতে হবে যেখানে ব্যাঙ্ক পরিষেবা নেই এবং জনসংখ্যা দশ হাজারের কম৷

বিদেশি বিনিয়োগ ১৩ হাজার কোটি
মুম্বই: এ বছর ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের শেয়ার বাজারে বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের পরিমাণ ১৩ হাজার কোটি টাকা হল৷ কেন্দ্রীয় সরকার জেনারেল অ্যান্টি অ্যাভয়ডেন্স রুল (জিএএআর) এখনই লাগু না করে তা দু'বছরের জন্য পিছিয়ে দেওয়ায় এবং ডিজেলের মূল্য আংশিক বিনিয়ন্ত্রণ করার ফলেই এই বৃদ্ধি৷ 
শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি-র তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারি মাসের প্রথম আঠারো দিনে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলি মোট ৪২,৯২৬ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছে৷ অন্যদিকে একই সময়ে মোট ২৯,৫২৫ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে তারা৷ এর ফলে নিট বিনিয়োগের পরিমাণ হয়েছে ১৩,৪০১ কোটি টাকা৷ 
২০১০ সালে ভারতের শেয়ার বাজারে সর্বাধিক বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ হয়েছিল৷ বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১.৩৩ লক্ষ কোটি টাকা৷ বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের নিরিখে এর পরেই রয়েছে ২০১২৷ ওই বছর ভারতের শেয়ার বাজারে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলির মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ১.২৮ লক্ষ কোটি টাকা৷ 
তবে, জিএএআর ২০১৬-র এপ্রিল পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া ও ডিজেলের মূল্য বিনিয়ন্ত্রিত করাই একমাত্র কারণ নয়৷ শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস 'ফিসক্যাল ক্লিফ' বিল পাশ করানোয় সেই দেশে করের পরিমাণ বেড়ে গেছে৷ এর ফলে ভারতের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের আগ্রহ বেড়েছে মার্কিন অধিবাসী ও প্রতিষ্ঠানগুলির৷ তবে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের পাশাপাশি ঋণ হিসাবেও ৫৬৩ কোটি টাকা তুলেছে এই সংস্থাগুলি৷ এর ফলে শেয়ার ও ঋণপত্র মিলিয়ে মোট বিনিয়োগ হয়েছে ১২,৮৩৮ কোটি টাকা৷ 
বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলির বিনিয়োগের উপর ভিত্তি করে শুক্রবার মুম্বই শেয়ার বাজার সূচক সেনসেক্স ৬১২ পয়েন্ট বা, ৩.১৫ শতাংশ বেড়ে কুড়ি হাজার ছুঁয়েছে৷ ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের শেয়ার বাজারে রেজিস্টার্ড বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১,৭৫৯ টি৷ এছাড়াও ৬,৩১৫ টি সাব অ্যাকাউন্টও আছে মুম্বই শেয়ার বাজারে৷

'মা তো জানেন ক্ষমতা আসলে বিষ, রাতে আমার ঘরে এসে কাঁদছিলেন'

জয়পুর: তিনি বলছিলেন ঠাকুমার কথা। বলছিলেন, "ছোটবেলায় যে দুই পুলিশ আমাকে ব্যাডমিন্টন খেলা শিখিয়েছিলেন, তাঁরাই এক দিন ঠাকুমাকে খুন করলেন।"
সেই প্রসঙ্গেই এল বাবার কথা, "সে দিন হাসপাতালে জীবনে প্রথম দেখলাম, বাবা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। আমার দেখা সব থেকে সাহসী মানুষ ছিলেন তিনি। তবু তাঁকে কাঁদতে দেখলাম সে দিন।"
এবং তার পরে মা: "গত কাল সকলে আমাকে অভিনন্দন জানালেন। রাতে মা আমার ঘরে এসে কেঁদে ফেললেন। কারণ তিনি জানেন, ক্ষমতার মধ্যে আসলে বিষ রয়েছে।"
ক্ষমতার অলিন্দে আনুষ্ঠানিক ভাবে পা-রাখার পরের দিন এটাই উপলব্ধি রাহুল গাঁধীর।
দলের দু'নম্বর পদে আসার পরে প্রকাশ্যে বক্তৃতা দিচ্ছেন, মঞ্চে বসে আছেন মা সনিয়া, মঞ্চের পাশে বোন প্রিয়ঙ্কা। গোটা হল তো বটেই, সারা দেশ তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে। দেখতে চাইছে, জওহরলাল নেহরু থেকে ইন্দিরা, রাজীব হয়ে যে ঐতিহ্য বহন করে চলেছে গাঁধী-নেহরু পরিবার, তার নবীনতম প্রজন্ম কী বলেন। কী দিশা দেখান।
বক্তৃতার পরে একাধিক তুলনা উঠে আসছে বিভিন্ন মহল থেকে। কেউ বলছেন, এটা যেন ভারতের বারাক ওবামার বক্তৃতা। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্টের মতো রাহুলও বলেছেন বদলের কথা। শুধু বলেননি, জানতে চেয়েছেন হাজির কংগ্রেস কর্মী-নেতাদের কাছ থেকে, তাঁরা কি পরিবর্তন চান? সকলে 'হ্যাঁ' বলে চিৎকার করে উঠলে হাল্কা হাসি দেখা গেল রাহুলের মুখে। তার পরে জানালেন, তিনিও চান। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে কোনও বদল নয়। বরং সময় নিয়ে, ধীরেসুস্থে। বললেন, এই বদল আনতে পারে কংগ্রেসই।
বিজেপির মুখপাত্র নির্মলা সীতারামন আবার মিল খুঁজে পেলেন রাহুলের বাবার সঙ্গে। বললেন, "আমার মনে আছে, রাজীব যখন দলে প্রথম বড় দায়িত্ব নেন, খুব আবেগঘন বক্তৃতা দিয়েছিলেন। খুব খুব অনুপ্রাণিত করার মতো বক্তৃতা ছিল সেটা।"
আবেগ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল কংগ্রেস-মঞ্চের কাছেও। ছেলের কথা শুনে বাঁ হাতে চোখ মুছছিলেন মা সনিয়া। পাশেই বসেছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত। তাঁর চোখেও জল। হাত বাড়িয়ে অল্প চাপ দিলেন সনিয়ার হাতে। তার পরে হাত ধরে চুমু খেলেন। রাহুলের বক্তৃতা শেষ করতেই এগিয়ে গিয়ে চুমু খেলেন তাঁর কপালে। তত ক্ষণে বহু হাত উঠে আসতে চাইছে মঞ্চে। কেউ এগিয়ে দিচ্ছেন শাল, কেউ এগিয়ে দিচ্ছেন কিছু লেখা কাগজ। মায়ের পাশে বসে রাহুল চুমু খেলেন তাঁর গালে। পরে জড়িয়ে ধরলেন মাকে। মনমোহন সিংহ এগিয়ে এসে জাপ্টে ধরলেন রাহুলকে। দু'জনের মুখেই তখন চওড়া হাসি।
দলের একটা বড় অংশ বলছে, রাহুল ওই বক্তৃতায় দেখাতে চেয়েছেন, গত আট বছর ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে, কখনও ভাট্টা পারসলে কৃষকদের বাড়িতে ঢুকে, কখনও উত্তরপ্রদেশের দলিত মহিলা কলাবতীর দাওয়ায় বসে তিনি যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন, তা কী ভাবে তাঁকে গড়ে তুলেছে। যিনি দলের দায়িত্ব নিতে তৈরি। দলকে দিশা দেখাতেও। দলের অধিকাংশ নেতারই বক্তব্য, শনিবার অভিষেকের পরে রবিবার রাহুলের এই আবেগ এবং যুক্তি, ইতিহাস এবং সমসাময়িক, সামাজিক সুরক্ষা ও আর্থিক সংস্কারের মধ্যে ভারসাম্য রেখে দেওয়া বক্তৃতা বুঝিয়ে দিল, তিনি তৈরি। এবং সনিয়া গাঁধীকে কার্যত নিয়ে গেল রাজমাতার ভূমিকায়। সম্প্রতি কংগ্রেস শীর্ষ নেতাদের সনিয়া জানিয়েছেন, আর চার বছর। তার পরে অবসর নেবেন তিনি। এ বার রাহুলের অভিষেকের পরে, সংগঠন থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে রাহুলের দেখানো দিশার পরে তাঁর কাজ যে হাল্কা হয়ে গেল, সেটা দলের অনেক নেতাই মেনে নিচ্ছেন।
কী ভাবে দিশা দেখালেন রাহুল? কী ভাবে ভারসাম্য রাখলেন সব ক্ষেত্রে? আজ দু'ভাষায় বক্তৃতা করেন রাহুল, ইংরেজি এবং হিন্দিতে। ইংরেজিতে বললেন দক্ষিণ ভারতীয়দের চাহিদা মেনে। হিন্দিতে বললেন মূলত উত্তর ভারতের কথা মাথায় রেখে। তিনি দেশের ইতিহাসকে জুড়লেন দলের ইতিহাসের সঙ্গে, দলের ইতিহাসকে জুড়লেন পরিবারের ইতিহাসের সঙ্গে। বললেন, "১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের তাড়িয়েছিলাম আমরা, অহিংসার সাহায্যে। কংগ্রেস পার্টি বলেছিল, আমরা হিংসার ব্যবহার করব না।" তার পরেই তিনি জানান, লাখ লাখ মানুষের আওয়াজকে নিয়ে এই স্বাধীনতার লড়াই চালিয়েছিলেন গাঁধীজি। সেই সাফল্য পাথেয় করে এগিয়ে গিয়েছিলেন জওহরলাল নেহরু। পরের ৬০ বছরের ইতিহাস বলতে গিয়ে তিনি এনেছেন ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ থেকে তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলি-যোগাযোগ ব্যবস্থার বিকাশের কথা। জানিয়েছেন, কী ভাবে সড়ক থেকে তথ্যপ্রযুক্তি, মানুষ থেকে সংবাদমাধ্যম সব ক্ষেত্রে যোগাযোগ সহজতর হয়েছে। এর সঙ্গে জুড়েছেন বাবার কথা। জানিয়েছেন, ১৯৮৪ সালে ঠাকুমা ইন্দিরা যখন মারা যান, ভারত তখন গভীর সঙ্কটে। অথচ আজ এই দেশই বিশ্বের ভবিষ্যৎ। এই দেশের কথা সবাই বলছে, সবাই শুনছে। এই উত্তরণের পিছনে কংগ্রেস সরকারের সামাজিক কাজের গুরুত্ব যে যথেষ্ট, সে কথাও জানিয়েছেন। বলেছেন আধার কার্ডের কথা। বলেছেন সরাসরি গরিবদের হাতে ভর্তুকি পৌঁছনোর কথা। আর সে কথা বলতে গিয়ে জানিয়েছেন, "আমার বাবা বলতেন, এক টাকার মাত্র ১৫ পয়সা মানুষের হাতে পৌঁছয়। আজ আমরা সেই ব্যবস্থা তৈরি করেছি যেখানে এই প্রশ্নের জবাব মিলবে। ৯৯% মানুষের হাতে টাকা পৌঁছবে।"
একই সঙ্গে রাহুল উল্লেখ করেছেন যুব সম্প্রদায়ের সাম্প্রতিক রাগের কথাও। বলেছেন, "আমাদের যুব সম্প্রদায় এত রেগে গিয়েছে কেন... তারা পথে নেমেছে কেন.... তারা ক্রুদ্ধ কারণ তারা বিচ্ছিন্ন... তারা রাজনৈতিক নেতাদের থেকে বিচ্ছিন্ন। তারা রাস্তার ধার থেকে দেখে, লাল বাতি জ্বালিয়ে ক্ষমতাবানরা চলে যাচ্ছেন।" বলেছেন মেয়েদের কথা: "মহিলাদের কেন ভুগতে হচ্ছে। কারণ, কিছু লোক তাঁদের কণ্ঠরোধ করছেন।" বলেছেন গরিবদের কথা: "কেন গরিবরা ক্ষমতাহীন এবং গরিবির মধ্যে বন্দি... কারণ তাঁদের জীবন নিয়ে যাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন, প্রয়োজনে যাঁদের কাছে গিয়ে জবাব চাইতে পারবেন ওই গরিবরা, তাঁরা অনেক দূরের বাসিন্দা।" বললেন, "বন্ধ ঘরে বসে এক দল মানুষ সারা দেশের সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।"
ছোটবেলায় আমি ব্যাডমিন্টন খেলতে ভালবাসতাম। যে দুই পুলিশকর্মী আমার ঠাকুমাকে রক্ষা করতেন, তাঁরাই আমাকে খেলা শিখিয়েছিলেন। তাঁরাই আমার বন্ধু ছিলেন। এক দিন তাঁরা ঠাকুমাকে খুন করেন। আমার জীবনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। বাবা তখন বাংলায় ছিলেন। তিনি এলে আমরা হাসপাতালে যাই। জীবনে প্রথম দেখলাম, বাবা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। আমার দেখা সব থেকে সাহসী মানুষ ছিলেন তিনি। তবু তাঁকে কাঁদতে দেখলাম সে দিন।.... শনিবার সকলে আমাকে অভিনন্দন জানালেন। রাতে মা আমার ঘরে এসে কেঁদে ফেললেন। কারণ তিনি জানেন, ক্ষমতার মধ্যে আসলে বিষ রয়েছে।
জয়পুরের সঙ্কল্প
• ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলিকে একজোট হওয়ার ডাক
• প্রধানত রাজনৈতিক ও আমলা স্তরে দুর্নীতি রোধ
• আর্থিক বৃদ্ধি ও সামাজিক সুরক্ষার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা
• খাদ্য সুরক্ষা আইন, ভূমি সংস্কার ও কৃষিতে উৎসাহ
• 'নাবার্ড'-এর ধাঁচে মহিলাদের জন্য জাতীয় ব্যাঙ্ক
• ১৮-৬০ বছরের পরিত্যক্তা ও বিধবাদের পেনশন
• সোশ্যাল মিডিয়া সামলাতে ব্লক স্তরে আইটি সেল

রাহুল গাঁধীর বক্তব্য শোনার পর বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের মতামতঃ

রাহুল গাঁধী নিজেকে বড় জাতীয় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করলেন আজ। একই সঙ্গে
সেই সব সমালোচকদের চুপ করিয়ে দিলেন, যাঁরা ওঁকে নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন।
দিগ্বিজয় সিংহ

ভারতকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য রাহুলই যোগ্যতম নেতা।
শীলা দীক্ষিত

একটা ঐতিহাসিক বক্তব্য। নতুন ভারতের জন্য একটা দিশা দেখালেন তিনি।
সচিন পায়লট

http://abpananda.newsbullet.in/national/60-more/32719-2013-01-21-03-58-24


কলকাতাঃ শহরে শীতের প্রত্যাবর্তন৷ কয়েকদিনের ব্যবধানে শহরে আবার ফিরল শীত৷ আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ স্বাভাবিকের থেকে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম৷ 

উত্তুরে হাওয়া ফের সক্রিয় হওয়ায় শীত আবার ফিরে এল বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর৷ আবহবিদরা জানিয়েছেন, আগামী কয়েকদিন আরও ঠাণ্ডা পড়বে৷ তবে আগেরমতো কনকনে ঠাণ্ডা না পড়লেও শীতের আমেজ এখন থাকবে৷ 


ক্যানিং: জয়পুরে মনমোহন সিংহের সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে তাঁকে নজিরবিহীন আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ চিন্তন শিবিরে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, কেন্দ্রের প্রকল্পগুলিতে নিজেদের বলে প্রচার করে সাফল্য দাবি করছে বিরোধীরা। সরাসরি তাঁর নাম করা না হলেও কটাক্ষের আঁচ লেগেছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর গায়েও। সোমবার ক্যানিংয়ের সভায় পাল্টা কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়ে মনমোহন সিংহ, সনিয়া গান্ধীকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, কর বাবদ রাজ্যের থেকে টাকা নিয়ে যায় কেন্দ্র৷ সেই টাকাই আবার কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নামে রাজ্যকে দেয়৷ রাজ্যের টাকা কেন্দ্রকে নিয়ে যেতে দেব না৷ বলেও হুঁশিয়ারি দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সারের দাম নিয়েও প্রধানমন্ত্রীকে নজিরবিহীন আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সারের দাম বাড়ায় কেন্দ্র৷ এ নিয়ে দশবার প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি৷ আর কী করব? প্রধানমন্ত্রীকে গিয়ে কি মারব? 

রাজনীতির ভাষা :শোভন ও অশোভন
আবুল বাশার খান
বাংলাদেশের সামপ্রতিক রাজনৈতিক কথকথায় অমার্জিত ভাষা প্রায় প্রলাপের উক্তি হিসেবে স্বাদে, গন্ধে, সমাজের পর্বে পর্বে অভিঘাত সৃষ্টি করছে। রাজনীতিবিদদের ভাষা, ব্যক্তিমনের গুণবাচক উপাদান হওয়া সঙ্গত। একইভাবে এই ভাষার প্রয়োগ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জন্য পরিচিতি বাচকও। 

রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা যে ভাষায় কথা বলেন, তা রাষ্ট্রিক, কৃষ্টিক ও আর্থিক ধারণার একটি পাটাতনে দাঁড়িয়ে স্বকীয়তার সীমানায় থেকেই বলেন। এই সীমাবন্ধনই তাকে পরিচিত করে, সুনির্দিষ্ট ইতি-নেতিবাচক ইমেজ তৈরি করে। মনীষার অভাবহেতু, স্বভাবতই অমার্জিত, অশোভন কৃত্যাচার নেতৃত্ব, বয়স ও অবস্থান নির্বিশেষে বেমানান। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বিবমিষা কথা, সাধারণ মানুষের ক্ষুদ্ধতা, রটনা ও বৈরিতা মিলিয়ে রাজনীতির জমিনে নতুন মেধাবী মুখের কোন আকর্ষণ নেই। ভালো লোকের কোন ভাত নেই। তরুণ নেতৃত্ব, পাইপলাইনের নেতৃত্ব-অর্থবিত্ত, টেন্ডার বাণিজ্য, ভর্তি ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ বাজিকরির মতো ফফর দালালিতে নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণে উদগ্রীব। তারা অনুসরণীয় নেতৃত্বের ভবিষ্যত্ কাণ্ডারি, লাভালাভের বাটোয়ারার ওয়ারিশদার।

বড় আয়নায় যেমন চেহারা দেখা যায়, ছোট আয়নাতেও তেমন চেহারা দেখা যায়। ব্যক্তি হচ্ছে ছোট আয়না, রাষ্ট্র হচ্ছে বড় আয়না। ব্যষ্টির মধ্যেও রাষ্ট্র প্রকৃতির উপস্থিতি যেমন, তেমনি সমষ্টির মধ্যেও রাষ্ট্র প্রকৃতির উপস্থিতি লক্ষণীয়। সমাজই হবে সংস্কৃতির নার্সারি, ভাষার সর্বোত্তম প্রয়োগ, শিক্ষণ ও অর্থ উত্পাদনের ক্ষেত্র। রাজনীতিকদের জীবনাদর্শ, রাষ্ট্রদর্শনের বুদ্ধিবৃত্তিক পাটাতনে ভিত্তিশীল হলেই জাতির পক্ষে অগ্রসরমাণ হওয়া সম্ভব। চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াসের মতে, আদর্শ রাষ্ট্রশাসক সে ব্যক্তি, যিনি প্রত্যেক নাগরিককে নামে চেনেন। খারাপ শাসকের চেয়ে বাঘ আর বিপদ সংকুল জঙ্গলও ভালো। কনফুসিয়াস রাষ্ট্র শক্তির সঙ্গে প্রজাশক্তির মেলবন্ধন চেয়েছিলেন। আর ভারতবর্ষের দূরত্ব, কতো দূরপনেয় ছিল, এর নজির নবাব সিরাজ-উদ্দৌলা ইংরেজের সঙ্গে যুদ্ধে হারে, কৃষক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতার অস্তমিত সূর্য দেখে। নৃতাত্ত্বিক দার্শনিক ম্যালিনোস্কির মতে, ধর্মের সবটুকু কালচার, কিন্তু কালচারের সবটুকুই ধর্ম নয়। পাকিস্তানি জামানায় শাসকের রবীন্দ্রবর্জিত মুসলিম মানসিকতায়, দীর্ণতায় প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান, বুলবুল চৌধুরীর নৃত্যানুষ্ঠান দেখে বলেছিলেন, তুমি পাকিস্তানি কালচারের প্রাণ। যদিও কালচার হয় জাতি পরিচয়ে। যদিও সংস্কৃতিহীনতার সংস্কৃতি জারির দিকেই বর্তমান মধ্যযুগীয় দৌড় পথ খুঁজছে। ষাটের দশকে হিন্দু সাহিত্যিকেরা বলতো, বাঙালির কালচার নেই, যা আছে তা এগ্রিকালচার। জাপানী এক অধ্যাপক বলেছিলেন, এগ্রিকালচার নামে বাঙালির যা আছে, তা আসলে আগ্লিকালচার। এ সব একাডেমিক পরিহাস বাঙালির পরিচয় নয়। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতিকরা কি পরিচিতি নির্মাণ করে চলেছেন? 

কিছু কিছু বাক্যবাণে মনে হয়, প্রধানমন্ত্রী প্রত্যক্ষভাবে জিয়া পরিবারকে লক্ষ্য করে বিশেষ উদ্দেশ্য অর্জন করতে চান। তারেক রহমান দুর্নীতি ও চরিত্র হননের টার্গেটে পরিণত হন। অপরদিকে, সজিব ওয়াজেদ জয়ও নিষ্ফল ও দুর্বল আক্রমণের শিকার হন। গ্রামীণ ঝগড়ার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, চোরের মার বড় গলা। বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া এসব শুনে হতভম্ব হয়ে পড়েন। আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সবজান্তার মতো বলেন, জিয়া মুক্তিযোদ্ধা নয়, পাকিস্তানি এজেন্ট। সমরযুদ্ধের ইতিহাসও তিনি নতুন করে জাতিকে প্রমাণসহ জানাতে চান। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ন্যূনতম মূল্যবোধের তোয়াক্কা না করেই বলেন, ৭১ এ খালেদা জিয়া ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন। শেখ হাসিনা জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো ভুলে গিয়ে খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন, উনার জন্ম দার্জিলিং এর চা বাগানে। মতিয়া চৌধুরী জাতিকে নতুন ইতিহাস শেখাতে চোখ-মুখ খিচিয়ে বলেন, খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধী। শেখ হাসিনা ব্যক্তিগত আক্রমণে বলেন, উনি এতিমের সম্পদ লুটকারী। যেন বাকযুদ্ধ নয়, গৃহযুদ্ধের কমান্ডার মতিয়া চৌধুরী বলেন যে, খালেদাকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করা হবে। জাসদ (ইনু) দের মহাজোটভুক্ত হাসানুল হক ইনু বলেন খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করা হবে। ওয়ান ইলেভেনের ভূত যেন রাজনীতির পিছু ছাড়ছে না। খালেদা জিয়া জনসভায় বলেন যে, সরকারের টপ টু বটম চোর। এই সরকার বিশ্বচোর। চট্টগ্রামের মহাসমাবেশে খালেদা জিয়া সরকারের উদ্দেশে বলেন, সরকারকে ল্যাংড়া, লুলা করে দেয়া হবে। দেখি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কত দূর যায়। প্রত্যুত্তরে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আল্লাহ উনাকেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটায়। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কারো বেডরুম পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়। সৌদি কূটনীতিক খালাফ রাস্তায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ বললেন, এই সরকারের আমলে ঘরে খুন, বাইরে গুম। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল হানিফের বক্তব্যে উত্তেজিত হয়ে বলেন, ওর জিহ্বা কেটে কুত্তা দিয়ে খাওয়াবো। সর্বশেষ বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া ঢাকার গাবতলীতে এক পথসভায় বলেন, সাপকে বিশ্বাস করা যায়, আওয়ামী লীগকে না। প্রধানমন্ত্রী সারাদিন মিথ্যা কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিক্রিয়ায় জানান যে, উনার আশপাশে কারা? উনি সাপের ঝাঁপি মাথায় নিয়ে হেঁটে চলছেন। ওঝা মরে সাপের বিষে। নবম জাতীয় সংসদের উপনেতা সাজেদা চৌধুরী খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, তিনি কালনাগিনী।

ভাষার বিষে নীল হওয়া রাজনীতির উদ্ধৃত কিছু উদাহরণ-বাক্য থেকে উপলব্ধি করা যায় যে, শুধু পার্শ্বচরিত্র নয়, রাজনীতির দূষণ খাস মহলেও পৌঁছে গেছে। রাজনীতি হতে সুবচন নির্বাসনে গেছে। দেশে মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগের ঘনঘটায় চলতি রাজনীতিতে সাপ ভিলেনের চরিত্রে হঠাত্ আবির্ভূত। ফাঁফা কথামালার রাজনীতি বাতাসে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। অন্ত:সার শূন্য ঠুনকো মেধাহীন কথার ফুলঝুঁড়িতে রাজনীতি পুঁতিগন্ধময়, তমসাচ্ছন্ন। জনগণের ললাট লিখন, দুর্ভোগ, দুর্ভাগ্যের অমোচনীয় দাগে কলঙ্কিত। আশাহীন, দিশাহীন রাজনৈতিক শূন্যগর্ভ ভাষণে ও দু:শাসনে জনগণ ভবিষ্যত্ নিয়ে শঙ্কিত। পাকিস্তান আমলে মুসলিম লীগের ছয় বছরের শাসন আমলে আবুল হোসেন সরকারের মন্ত্রীসভাকে বলা হতো, 'লুটপাট কোম্পানি'। আলী বাবা ও চল্লিশ চোরের আমলে ১৯৫৭ সালের ২১ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় বাঙালিদের জন্য পৃথক ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা, প্রাদেশিক পরিষদের স্বতন্ত্র সদস্য মেজর গণির উদ্ধৃতিতেও সাপের মাথায় ব্যাঙের নাচন দেখা যায়। সেই যুক্তফ্রন্ট সরকার আমলে ভূত-বা সাপের প্রসঙ্গ নতুন কিছু নয়, বরং বেশ পুরানো। পার্লামেন্টের ভাষণে সরকারের মতিগতি নিয়ে বলা হয়, 'বলিবে দক্ষিণে, যাইবে উত্তরে, সাপের মাথায় ব্যাঙ নাচে, জলে শিলা ভাসে, বানর সঙ্গীত গায়'। আমরা আজ অশোভন অনুকরণপ্রিয়তায় কার সঙ্গীত বারবার গাইছি?

লেখক :সহকারী অধ্যাপক, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

রাজনীতির ভাষা, মুহিতের পাঠশালা
শনিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১২

মাকসুদুল আলম: আমাদের অর্থমন্ত্রী দেশটির সাংবাদিকদের প্রতি বেজায় নাখোশ। তাঁর ক্ষোভের কারণ, 'ইকোনমিস্ট' বা 'ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল' অথবা 'গার্ডিয়ান' এর মত বিদেশী পত্রিকাগুলো যখন বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে ইতিবাচক কিছু বলে বা কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তখন সাংবাদিকরা উৎফুল্ল হয়ে সে খবর বেশ গুরুত্বের সঙ্গে ছাপায়। অথচ তিনি বা ক্ষমতাসীন সরকারের কেউ আগেভাগে সে রকম কিছু বললেও, পাত্তা দেয় না এই সংবাদ কর্মীরা। যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে ছাপা হয় না সেই সংবাদ। তাই তিনি তাঁর মনের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। অবসর সময়ে তিনি এই সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ দিতে চেয়েছেন। অর্থমন্ত্রীর পাঠশালায় না জানি কয়বার  'রাবিশ', 'বোগাস', 'ননসেন্স', 'ফটকাবাজ', 'আই অ্যাম একদম ফেড-আপ' ইত্যাদি শ্রুতিমধুর ভাষা শুনতে হয় সাংবাদিকদের। বোধ হয়, সেই ভয়েই অর্থমন্ত্রীর পাঠশালায় ভর্তির কোনো বিজ্ঞাপন বা খবর এখনো আসেনি দেশটির সংবাদপত্রগুলোতে।
সম্প্রতি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় বিরোধী জোটের নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব মহানগরে গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এই উপলক্ষে বিগত ২৬শে ডিসেম্বর বিরোধী জোটের পূর্ব-ঘোষিত পথসভায় রাজধানী ঢাকায় দুঃসহ যানজটের সৃষ্টি হয় বলে খবরে প্রকাশ। একথা আর কন্ঠ নিচু করে ভয়ে ভয়ে বলার প্রয়োজন নেই যে, ক্ষমতার লোভে দিশেহারা আমাদের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের রাজনীতি হয়েছে দূষিত ও সংঘাতময়। রাস্তায় স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত করে, রাজপথে ব্যাপক জনসমাবেশের আয়োজন করে, ঢাকঢোল পিটিয়ে, বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে, জাঁকজমকপূর্ণ মিছিল করে, এক কথায় জনজীবন স্থবির করে দিয়ে রাজপথে নিজেদের রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের ধারাটি আমাদের সংস্কৃতিতে প্রচলিত ও খুবই পুরনো। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগেও প্রচলিত ও পুরনো ধাঁচের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি না শুধুমাত্র আমরাই। সাধারণ নাগরিকের ভোগান্তিকে কিছুই মনে করে না আমাদের দেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা। এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা ও মন্ত্রিত্ব বর্জনকারী সরকারী দলের নীতি নির্ধারণী কমিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাও কিছুদিন আগে আক্ষেপ করে বলেছেন যে, রাজনীতিবিদদের কাছ থেকেও রাজনীতি এখন হাতছাড়া হয়ে গেছে। প্রবীণ এই রাজনীতিবিদের কথা থেকেও স্পষ্ট বোঝা যায় যে, বাংলাদেশের রাজনীতি এখন চলে গেছে ভূঁইফোড় ব্যবসায়ী, তথাকথিত দেশপ্রেমিক আর বিত্তশালী সওদাগরের হাতে। ব্যক্তিগতভাবে খুশি হতাম যদি অর্থমন্ত্রী আমাদের কলুষিত রাজনীতিতে আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা শিক্ষা প্রশিক্ষণের একটি ব্যবস্থা করার ইচ্ছা ব্যক্ত করতেন। কেননা আমাদের দেশের রাজনীতিতে এখন মার্জিত রুচিবোধ ও বাংলা ভাষার সঠিক প্রয়োগের বড়ই অভাব। আমাদের রাজনীতিতে নেই কারও প্রতি কোনরকম শ্রদ্ধাবোধ। রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশী নারায়ণ (অতিথি) ডেকে এনে সম্মামনা দিতে পারলেও, দেশীয় গুণীজনদের অসত্য ও অরুচিকর মন্তব্যের শিকার হতে হয় এখানে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর-উত্তম, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ও দেশবরেণ্য আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, বিশিষ্ট সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও প্রবীণ কলামিস্ট এ.বি.এম. মূসা, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মত প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদেরকেও অপমানিত হতে হয় এই দেশে। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা, নুন্যতম শালীনতা, সৌজন্যবোধ ও মার্জিত ব্যবহার তো দুরের কথা, জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে দলীয় সভা-সমাবেশ পর্যন্ত নিয়মিতভাবে চলে একে অপরের প্রতি বিষেদাগার কিংবা অশ্রদ্ধামূলক মন্তব্যের অসুস্থ প্রতিযোগিতা। প্রকাশ্য জনসভায় 'তেল মারতে ভারত যাওয়া' কিংবা 'সাপের ঝাঁপি মাথায় নিয়ে খেলা' যেমন একজন সরকার প্রধানের মুখের ভাষা হতে পারে না, তেমনি 'সাপকে বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু তাদেরকে (আওয়ামী লীগকে) নয়' কিংবা 'আবুল (কান) টানলে মাথা আসে' এসব একথাও একজন দায়িত্বশীল বিরোধী দলীয় নেতার মুখের ভাষা হওয়া উচিত নয়। এই দেশে তারাই সাপ, তারাই ওঝা। মাঝখানে শুধুশুধুই কামড় খায় আমজনতা।
প্রকৃতপক্ষে, আমাদের দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের কাঁদা ছোড়াছুড়িতে মাঝখানে লাভবান হচ্ছে মহাজোটের শরিক ভাগ্যাহত বামপন্থী দলগুলো। হালুয়া-রুটির ভাগ তারা প্রয়োজনের চেয়ে বেশিই পাচ্ছে। মাওলানা ভাষানীর মতো নিঃস্বার্থ রাজনীতি তাদের প্রয়োজন নেই। মহাজোটের শরিক হয়ে ক্ষমতার যে সুযোগ তারা পেয়েছে, সে সুযোগ হয়তো বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কোনোদিন আসবে কিনা সন্দেহ। সাধারণ প্রকৌশলীদের জাতীয় সংগঠন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ এর কার্যকরী পরিষদ নির্বাচনের মত ছোটোখাটো একটি নির্বাচনে ২৬টি পদের যে কোনো একটি পদ পেতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও জিততে পারেন না জোট সরকারের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। নিজের দল খন্ডিত জাসদের যোগ্যতায় জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার সৌভাগ্য কোনোদিন হয়নি বামপন্থী এই মন্ত্রীর। অথচ তিনি মাঝে-মধ্যেই পত্রপত্রিকার শিরোনাম হয়ে যান আমাদের গণমাধ্যম নির্ভর রাজনীতিতে। অর্থমন্ত্রীর অর্থ-বিষয়ক মন্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে ছাপা না হলেও, সংবাদপত্রগুলোতে বাদ যায় না এই রাজনীতিবিদের হুমকি-ধমকি। নিজের শক্তিতে তিনি রাজনীতির ময়দান থেকে মাইনাস করে দিতে চান তিন তিন-বার নির্বাচিত একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে। এর আগে তিনি সাবেক সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের বিচার চেয়ে মামলা করেছিলেন। এখন তিনি গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হলেও, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের অভিযোগে সাবেক স্বৈরশাসককে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো তো দুরের কথা, তাঁর পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নিচ্ছেন কিনা কে জানে?
আবার প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কাঁদা ছোড়াছুড়িতে লাভবান হচ্ছে রাজনীতিতে ধুমকেতু হিসাবে উড়ে এসে জুড়ে বসা, হঠাত নেতা বনে যাওয়া ছোটখাটো রাজনীতিবিদরাও। বাংলাদেশের ইতিহাসে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুথান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং নব্বই এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনগুলো হচ্ছে মাইলফলক। বাংলাদেশের ইতিহাসের  মাইলফলক গুলোর মধ্যে কোনটিতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কিংবা সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয়ভাবে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী-লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের ভুমিকা বা অবদান রয়েছে, তা লেখকের সীমিত জ্ঞানে জানা নেই। তাঁর পদ যত না বড়, তার চেয়ে ঢের উঁচু গলার স্বর। অর্থমন্ত্রীর মন্তব্যকে অর্থহীন মনে করা হলেও সংবাদপত্রগুলোতে ঠিকই স্থান পায় এই পাতি নেতার মন্তব্য। প্রায় প্রতিদিনই পত্রপত্রিকার শিরোনাম হন তিনি। বিরোধী দলীয় নেত্রীকে অতীত কর্মকাণ্ডের জন্যে নাকে খত দিয়ে, দেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে পরামর্শ দেন তিনি। ছোটখাটো রাজনীতিবিদের পাশাপাশি পত্রপত্রিকায় স্থান পায় মানবাধিকার কর্মীদের হাক-ডাক ও মায়াকান্না। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অসহায় লিমনকে নিয়ে কান্নাকাটি করলেও, আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে মন্তব্য করতে ব্যস্ত থাকলেও, বিশ্বজিত দাসের প্রতি বিন্দুমাত্র সহায়তা দেখায়নি। রাজনীতির ভাষা, মানবতার ভাষা এসব ক্ষেত্রে নীরব থাকে। কিন্তু কেন? এর উত্তর আমাদের নিজেদেরই খুঁজে বের করতে হবে।
(জাপান প্রবাসী কলাম লেখক)

http://www.mzamin.com/details.php?nid=MzYzNTI=&ty=MA==&s=Mzg=&c=MQ==


রাজনীতির ভাষা
মামুন রশীদ
মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমান সম্মুখযুদ্ধ করেনি' আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর এমন বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে গত বুধবার (২১.০৪.২০১১) এক সমাবেশে সংসদের বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ভবিষ্যতে কেউ এমন কথা বললে তার জিব কেটে রাসত্মায় ফেলে দেয়া হবে। একই সমাবেশে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী বলেন, তারেক রহমানকে শাস্তি দেয়া সহজ কাজ নয়। পুলিশ সরিয়ে দিন_ স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা সচিবালয় তচনছ করে দেবে। সমাবেশের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেন, জিয়াউর রহমানের পরিবার নিয়ে কেউ কটূক্তি করলে আমরা তার বিরুদ্ধে মামলা করব না। মামলার 'ম' তুলে দিয়ে 'হ' বসালে যা হয়, সেটা করা হবে। তিনি কটূক্তিকারীদের ওপর হামলা করার জন্য স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। রাজধানীর মুক্তাঙ্গনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত সমাবেশে এসব বক্তব্য দেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ। 
এই বক্তব্য যে শুধু বিএনপি নেতাদের, তা কিন্তু নয়। আবার এমনও নয় যে, রাজনীতিবিদদের মুখের এই ভাষা শুধু আজকের। আমাদের রাজনৈতিক কালচারে এ ভাষা বেশ প্রাচীন। কি সরকারী দল, কি বিরেধী দল; প্রত্যেকেই একই রকম ভাষা ব্যবহার করছে একে অন্যের বিপৰে। আবার এ রকম অশস্নীল, কুরম্নচিপূর্ণ ভাষা যে শুধু দলগুলোর মাঝারি সত্মরের নেতানেত্রীদের মধ্যকার তেমন ভাবারও কোন কারণ নেই। আমাদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও এ রকম ভাষা ব্যবহারে পিছিয়ে নেই। শীর্ষ দুই দলের প্রধান দুই নেত্রীও বিভিন্ন সময় এ রকম নিম্ন সত্মরের, নিম্ন রম্নচির ভাষায় একে অন্যকে আক্রমণ করেছেন। আর এই আক্রমণ শুধু ব্যক্তি পর্যায়েই সীমাবদ্ধ থাকেনি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়েও বিভিন্ন সময় অশোভন, কুরম্নচিপূর্ণ কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমানকে নিয়ে হয়েছে নানা কটুক্তি। আর এ ধরনের কথা সংসদের বাইরে নয়, সংসদের ভেতরেও বলা হচ্ছে হররোজ। 
জাতি হিসেবে সত্যিকার অর্থেই আমাদের জন্য এ বড় লজ্জার। এ বড় বেদনার। কারণ সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে পুরো পৃথিবী যখন হাইটেক জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে, বিশ্ব থেকে ৰুধা, দারিদ্র্য দূর করার চেষ্টা করছে। পৃথিবীর যেখানে গণতন্ত্র নেই সেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করছে; সেখানে আমরা দীর্ঘদিনের সামরিক শাসন থেকে মুক্ত হয়ে আমাদের অর্জিত গণতন্ত্রের চর্চা না করে ব্যক্তিগত বিদ্বেষে মেতে উঠেছি। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা যখন জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি, ভোটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি, সেখানে গণতন্ত্রের অন্যান্য বিষয়কে এগিয়ে নেবার চেষ্টা না করে বরং নিজেদের অর্জিত গণতন্ত্রের প্রাথমিক ধাপকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছি। 
আমাদের নেতানেত্রীরা সংসদের ভেতরে এবং বাইরে কথার মাধ্যমে একে অন্যের ওপর চড়াও হচ্ছেন। কিন্তু যে ভাষায় তাঁরা একে অন্যের ওপর চড়াও হন তা কোন্ পর্যায়ের মানুষের মুখের ভাষা? স্থান, কাল, পাত্রের বিচার এৰেত্রে তাঁরা হারিয়ে ফেলছেন। একে অন্যকে ঘায়েল করার জন্য তাঁরা বসত্মিতে বাস করা মানুষের মুখের ভাষার সঙ্গে নিজেদের মিলিয়ে ফেলছেন। প্রতিপৰ রাজনীতির প্রতি শ্রদ্ধাহীনতাই আমাদের এই সংস্কৃতির বড় কারণ। সংসদের ভাষা, রাজনীতির ভাষা আর রকের ভাষার মধ্যে পার্থক্য ধরার মতো শিৰা আমরা অর্জন করতে পারিনি। সংসদে দাঁড়িয়ে ফ্লোর নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অহেতুক কথা বলাও আমাদের সংস্কৃতি। মাঠের বক্তৃতা আর সংসদের বক্তৃতার মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে_ এ শিৰা শুধু আমাদের তরম্নণ নয়, প্রবীণ সাংসদরাও অনেক সময় মনে রাখতে পারেন না। তাঁরা ভুলে যান সংসদীয় গণতন্ত্রের ভাষা। 
আমরা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলি। কিন্তু প্রকৃত গণতন্ত্র থেকে যে আমরা এখনও অনেক অনেক দূরে রয়েছি, সেই বোধ আমাদের মাঝে ক্রিয়া করে না। শুধু ভোটের মাধ্যমেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না। মানুষের শুধু ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা গেলেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এটা বলা যায় না। ভোটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটি অংশ। একটি পার্ট। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে একটি মাইলফলক। আমরা স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪০ বছর পেরিয়ে এসে গণতন্ত্রের পথে এই একটি বিষয় এখন পর্যনত্ম নিশ্চিত করতে পেরেছি। তাও রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে নয়। এখনও আমরা রাজনৈতিক দলগুলো সরকারে থাকা কোন রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারিনি। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। দীর্ঘ সামরিক শাসন, রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির মধ্য দিয়ে সময় পার করা আমাদের জন্য তাই ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়টিও পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে। গণতান্ত্রিক রাজনীতির সংস্কৃতিতে একে অপরের মতামতকে গুরম্নত্ব দেয়া, সহনশীলতাও একটি গুরম্নত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে সফল করতে হলে অগণতান্ত্রিক শক্তিগুলো শেষ করতে হবে। শেষ করতে হবে অগণতান্ত্রিক রীতিনীতি। সেই সঙ্গে পরমত সহিষ্ণুতা যেমন অর্জন করতে হবে তেমনি যদি আমরা সত্যিকার অর্থেই দেশের পরিবর্তন চাই, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই, সামনের দিনগুলোতে আর কখনই যেন কোন অপশক্তি ৰমতায় না আসতে পারে সে দিক নিশ্চিত করতে চাই; তাহলে আমাদের অবশ্যই গণতন্ত্রের ভাষা শিখতে হবে। সংসদের ভেতরে-বাইরে নিজ নিজ রম্নচি অনুযায়ী ভাষা ব্যবহার করতে হবে। সেই সঙ্গে জানতে হবে রকে বসা যুবকের ভাষা আর রাজনীতির ভাষার পার্থক্য। আর যখন আমরা এগুলো আয়ত্ত করতে পারব তখনই কেবল গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যেতে পারব। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। তার আগে কোনভাবেই আমাদের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম শেষ হবে না। দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে না। 

mamun_rashid3000@yahoo.com.

চোখ তুলে ফেলা আর ল্যাংড়া লুলা বানানো --- এগুলোই তো রাজনীতির ভাষা!

২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ৯:৩১ |রাজনীতির ভাষা নিয়ে দারুণ সব গবেষণা হচ্ছে। শাজাহান খান বললেন-- তিনি নাকি চোখ তুলে নেবেন। এর আগে খালেদা জিয়া বললেন-- ল্যাংড়া লুলা বানিয়ে দেবো। এর আগে সংসদে বলেছিলেন চুপ বেয়াদপ। সেদিন যেন কোন নেতা বললেন শত বছর জেল খাটতে হবে।

এসবই রাজনীতির ভাষা।
ভাষাবিদরা এবার নতুন করে চিন্তা করতে পারেন যে রাজনীতির জন্য কোনো ভাষা ব্যবহার নির্দেশিকা তৈরি করা যায় কিনা?

দেশে নিরক্ষরতার হার কমলেও শিক্ষার হার বাড়ছে না। তাইতো দেশের মন্ত্রী টন্ত্রী যারা হয় তাদের ভাষাজ্ঞান এতো সীমিত। জনগণের উপর শ্রদ্ধা রেখেই বলছি-- এই জনতাই তাদের নির্বাচন করেন। ছাগল দিয়ে হালচাষ যেমন হয় না তেমনি যাকে তাকে রাজনীতিও হয় না। 
অবশ্য বাংলাদেশটাই একটা বিচিত্র দেশ। আলেকজান্ডার তো আর এমনি এমনি বলেন নাই -- কী বিচিত্র এই দেশ সেলুকাস।


রাজনীতির ভাষা ও বাংলাদেশ

 
0
 
0
 
Rate This


আমাদের এ জগতে  জগত জুড়ে ভাষার দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে বিজ্ঞান ও কম্পিউটারের কারণে। বিশেষ করে আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় খুব সহজে  নিত্য নতুন শব্দ প্রবেশ করছে  এবং ভাষাকে করছে সমৃদ্ধ। বাংলা ভাষার বিরাট গুণ হচ্ছে, এ ভাষা খুব সহজে বিদেশী শব্দকে নিজের করে নিতে পারে। আপনারা সবাই জানেন যে , বাংলা ভাষায় বহু বিদেশী শব্দ রয়েছে যা এখন আমাদের নিজেদের হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশী রয়েছে ফার্সী শব্দ। প্রতিদিন আমরা যে শব্দে কথা কথা বলি তার ভিতর হাজার হাজার  বিদেশী শব্দ রয়েছে। যা কখনই আপনার মনে হয়নি  বিদেশী। এদেশে সর্বশেষ বিদেশী শাসক ছিলো ইংরেজরা। ১৯০ বছর তারা ভারতবর্ষকে শাসন করেছে। ফলে আমাদের ভাষায় ইংরেজীর প্রভাব খুব বেশী। তবে ইংরেজীকে বিশ্বের লিংগুয়া ফ্রাংকা বলা হয়। ১৯০ বছরে ইংরেজরা পুরো ভারতবর্ষ, বিশেষ করে বাংলাদেশকে সীমাহীন শোষণ করে লন্ডনকে গড়ে তুলেছে। এদেশের কোটি কোটি মানুষকে হত্যা করেছে। সেই ইংরেজদের সাথে আমাদের এখনও সুসম্পর্ক। এখনও আমরা অনেক ক্ষেত্রে লন্ডনের কথা শুনি। উইলিয়াম হান্টারের বই পড়লে আমাদের নতুন প্রজন্ম বুঝতে পারবে আমাদের  এই দেশটি সুজলা সূফলা শস্য শ্যামলা ছিল। জগতের ধন ভান্ডার ছিল এখানে। তাই এদেশে এসেছে আরব, ফরাসী পর্তুগীজ ও ইংরেজরা। অন্যরা ব্যবসা করেছে। কিন্তু ইংরেজরা ষড়যন্ত্র করে বাংলাদেশ দখল করে নেয়। পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠি বাংলাদেশকে শোষণ করেছে ২৩ বছর। ফলে বাংলাদেশের বাংগালী মুসলমানেরা অবাংগালী মুসলমানদের থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ে তোলে। আলোচনার মাধ্যমে টেবিলে বসে এ সমস্যার সমাধান করা যেতো। কিন্তু পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠির যড়যন্ত্রের ফলে ৭১ এর রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। ২৩ বছর অবাংগালী মুসলমানেরা  বাংগালী মুসলমানদের শোষণ করেছে। এখন মানে বিগত ৪০ বছর ধরে একশ্রেণীর রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীরা জোট বেঁধে দেশবাসীকে শোষণ করছে। ব্যান্কের কেরাণী আজ ব্যান্কের চেয়ারম্যান। অফিসের পিয়ন এখন শিল্পগ্রুপের মালিক।

আমাদের রাজনীতিতে এখন দুটি বড় রাজনৈতিক দল। একটির জন্ম হয়েছে মুসলীম লীগ ত্যাগ করে ১৯৪৯ সালে ঢাকার রোজ গার্ডেনে। নতুন দলের নাম ছিল আওয়ামী মুসলীম লীগ। এই নামের সাথে একটি বাংলা শব্দও নেই। আওয়াম মানে জনতা। মুসলীম লীগ ইংরেজী শব্দ। মুসলমান শব্দটিও বাংলা নয়। এটি একটি আরবী শব্দ। লীগ একেবারেই ইংরেজী শব্দ। নতুন দলের সভাপতি হয়েছিলেন আসাম মুসলীম লীগের সভাপতি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। সাধারন সম্পাদল ছিলেন সামশুল হক। এই দলটি সেকুলার হওয়ার জন্যে ১৯৫৫ সালে মুসলীম শব্দ বাদ দিয়ে শুধু আওয়ামী লীগে পরিণত হয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বাংলাদেশ ন্যাশানালিস্ট পার্টির জন্ম হয় ১৯৭৮ সালে জেনারেল জিয়ার নেতৃত্বে। ইংরেজী নামের সংক্ষেপ করেই দলটির নাম হয়েছে বিএনপি। সৃস্টি লগ্নে বিএনপির মেজর পার্টনার ছিল মাওলানা ভাসানীর ন্যাপ। এখনও বিএনপিতে সাবেক ন্যাপ নেতাদের প্রভাব বেশী। মুসলীম লীগ সহ আরও  বহু ছোটখাট দলের নেতারা জিয়া সাহেবের আহবানে বিএনপিতে যোগদান করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তথাকথিত সেকুলার দল ছাড়া বাকি সব দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ফলে দেশে আওয়ামী লীগ ছাড়া তেমন কোন রাজনৈতিক দল ছিলনা। বামপন্থী বলে পরিচিত কিছু নেতা বিভিন্ন দলের ব্যানারে কাজ করতেন। বামপন্থী দল এত বছর পরেও সাধারন মানুষের ভিতর তেমন শিকড় বিস্তার করতে পারেনি। তাদের গলা বড়, মিডিয়া তাদের বড় করে দেখায়। নিজেরা একা ভোটে দাঁড়ালে ৫শ' হাজারের বেশী ভোট পায়না। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বামপন্থীরা সবাই দলবেঁধে নৌকা মার্কা নিয়ে ভোট করেছে। বর্তমান মন্ত্রী সভায় বামপন্থীদের দল ভারী। সারা দেশে বামপন্থীদের পাঁচ হাজার সমর্থক থাকলেও দল রয়েছে কমপক্ষে ২০টা। কেউ পাঁচশ'র বেশী পান না। তবুও আওয়ামী লীগ কেন বামপন্থীদের এত গুরুত্ব দিচ্ছে তা  আমার কাছে বোধগম্য নয়। ৭৫ সালে বামপন্থীরা বংগবন্ধুর কাঁধে চড়ে বাকশাল বানিয়েছিল। বাকশাল গঠণ করে বংগবন্ধু নিজের দল আওয়ামী লীগ সহ সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন।

৪৭ ও ৭০ এর আগে রাজনীতিতে যে ভাষা ব্যবহৃত হতো এখন আর তেমন ভাষা নেই। পশ্চিম বাংলার কিংবদন্তী নেতা জ্যাতি বসু একবার বলেছিলেন, তখনকার রাজনীতিতে নুরুল আমি সাহেব ছিলেন সবচেয়ে বিনীত রাজনীতিক। নুরুল আমি সাহেব অবিভক্ত বংগদেশের  সংসদের স্পিকার ছিলেন। পরে পূর্ব পাকিস্তানের চীফ মিনিস্টার ছিলেন। রাজনৈতিক কারণে তিনি বর্তমান বাংলাদেশে তিনি একজন নিন্দিত ব্যক্তি। ব্যক্তিগত জীবনে নুরুল আমি সাহেব ছিলেন একজন বিরল সত্‍ মানুষ। সেই সময়ে আরও অনেক মানুষ ছিলেন যাঁরা ছিলেন খুবই সত্‍ এবং তাঁদের আদব কাডা ছিল খুবই পরিশীলিত। অবিভক্ত বংগদেশের সংসদ বিবরণী পড়েলে আমরা জানতে পারবো তাঁরা কি ভাষায় কথা বলতেন। প্রতিপক্ষকে কি ভাষায় আক্রমন করা হতো তা জানার জন্যে ওইসব বিবরণী পড়া অবশ্য কর্তব্য বলে আমি মনে করি। অবিভক্ত বংগদেশে শেরে বাংলা, স্যার নাজিমুদ্দিন ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এই তিনজনকেই আমরা কিছুটা দেখেছি। আমাদের আগের জেনারেশন বা মুরুব্বীরা আরও বেশী দেখেছেন। তাঁদের ভাষা সম্পর্কেও আমাদের কিছু ধারণা আছে। এই তিনজনই নেতাই ছিলেন খুবই উচ্চ শিক্ষিত বিনয়ী। এঁদের কারোরই আদব কায়দা ছিল খুবই উচ্চ মানের। এঁদের ভিতর মাওলানা ভাসানী ছিলেন একটু ব্যতিক্রম ধর্মী। মাওলানা সাহেব ছিলেন অতি সাধারন মানুষের নেতা। কিন্তু তাঁর সততা ও সাংগঠনিক ক্ষমতা ছিল অপরিসীম। তিনি ৪৭ এর আগে ছিলেন আসাম মুসলীম লীগের সভাপতি। পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে মুসলীম লীগ ছেড়ে দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন আওয়ামী মুসলীম লীগ। মাওলানা ভাসানী অনলবর্ষী বক্তা। পশ্চিমা মিডিয়া তাঁকে বলতো 'ফায়ার ইটার'। তিনি ছিলেন ইসলামী সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী। ফলে তাঁকে আমেরিকা রাশিয়া উভয়েই ভুল বুঝতো। মাওলানা সাহেবদের জামানার  সকল  রাজনীতিকই ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে খুবই সাবধান ছিলেন। প্তিপক্ষকে কখনই অশালীন ভাষায় আক্রমন করতেন না। অশালীন কথা না বলা বা  ভাষা ব্যবহার না করা ছিল তাঁদের সংস্কৃতি। তাই তাঁদের রাজনীতির ভাষা অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় ছিল। বংগবন্ধু এবং তাঁর বন্ধুরা ছিলেন রাজনীতিতে শালীন ব্যবহারের শেষ জেনারেশন। সংসদ বা পার্লামেন্টের লাইব্রেরীতে গেলেই এর প্রমান পাওয়া যাবে।

৭৩ এর জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের তেমন কোন সদস্য ছিলেন না। আওয়ামী লীগ সম্ভবত ২৯৩ সীট দখল করতে পেরেছিল। শুনেছি খোন্দকার মোশতাক সাহেব নির্বাচনে না জিতলেই তাঁকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছিল। আমলারা ও চামচারা বংগবন্ধুকে বুঝিয়েছিলেন  একটি সীটও বিরোধী দলকে দেয়া যাবেনা। কারণ বিরোধী দল জিতলে বংগবন্ধুর জনপ্রতিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। লোকে বলবে 'জাতির পিতার দলের জনপ্রতিয়তা কমে গেছে'। বংবন্ধু আমলা ও চামচাদের কথায় সায় দিয়েছিলেন। কিন্তু ৭৫ এর পরে সবাই তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। ওই সংসদেও ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটা সীমা ও শালীনতা ছিল। ৭৯ এর সংসদে আওয়ামী লীগ সহ অন্যন্যদের বেশ কিছু সীট ছিল। সেই সংসদে বিরোধী দলের নেতা ছিলেন আওয়ামী লীগের আসাদুজ্জামান সাহেব। তিনি ছিলেন খুবই একজন পরিশীলিত মানুষ। সেই সংসদে আতাউর রহমান খান ও খুলনার সবুর সাহেব ছিলেন। বেশ কয়েকজন নামী দামী রাজনীতিক ওই সংসদের সদস্য ছিলেন। আতাউর রহমান সাহেব ৫৫ সালে পূর্ব পাকিস্তানের চীফ মিনিস্টার ছিলেন। আইউবের আমলে সবুর সাহেব ছিলেন সংসদের নেতা। ৭৯ এর জাতীয় সংসদের নেতা ছিলেন শাহ আজিজ সাহেব। মেনন ও শাহজাহান সিরাজ প্রথমবার সংসদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই সংসদেও ভাষার ব্যবহার ছিল শিক্ষণীয়। সত্যি কথা হলো রাজনীতিতে ভাষার পতন শুরু হয়েছে বেশ কয়েক যুগ হলো। রাস্তার ভাষা আর সংসদের ভাষা যে এক নয় তা এখনকার নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জানেন না। এখনতো লেখাপড়া না জানলেও সংসদ সদস্য হওয়া যায়। যারা স্কুল কলেজ পাশ করেছেন তাঁরাও পেশী শক্তিতে বিশ্বাস করেন। শক্তিই এখন ক্ষমতার উত্‍স। তাই স্কুল কলেজের সার্টিফিকেট পাওয়া মাস্তানরাই রাজনীতি করবেন এবং ক্ষমতায় যাবেন। রাস্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন সাহেব একবার বলেছিলেন, ছাত্ররা আর লেখাপড়া করবেনা। কারণ লেখাপড়া না করেই মন্ত্রী হওয়া যায়। এখন ধনী ব্যবসায়ীরাই সংসদ দখল করে রেখেছেন। এখন নাকি জাতীয় সংসদের সদস্য হতে গেলে খুব কম করে হলেও চার পাঁচ কোটি  টাকা লাগে। বাংলাদেশ কোন ভদ্রলোকের পক্ষেই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা সম্ভব হবেনা। ৭০ এর আগে ছাত্র রাজনীতিতে ভাল ছাত্ররা আসতো। এমন কি দুটো ফার্স্ট ডিভিশন না থাকলে কোন ছাত্র হল নির্বাচনে নমিনেশন পেতনা। এ অবস্থার পতন হতে শুরু করেছে  আইউব আমল থেকে। আইউব খান ও মোনেম খান ছাত্র রাজনীতিতে লাঠি সোটা, সাইকেল চেইন, সাপ, হকিস্টিক আমদানী করেছেন। তবে এর বিস্তৃতি খুব বেশী ছিলনা। এখন পিস্তল বন্দুক দা ছুরি রামদা লগি বৈঠা নিয়ে  দেশের রাজনীতি বেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক কালের টিভি আর পত্রিকার ছবি দেখলেই দেশবাসী বুঝতে পারেন আমাদের রাজনীতির ভাষা এখন অস্ত্রের ভাষায় পরিণত হয়েছে। লগি বৈঠা আওয়ামী লীগের ব্রান্ড নৌকার সরঞ্জাম। এ গুলো না হলে নৌকা চলেনা। বংবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা লগিবৈঠার শ্রেস্ঠ ব্যবহার করেছেন ২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবর। লগি আর বৈঠার আঘাতে দেশের মুল্যবান কয়েকটি জীবন নস্ট হয়েছে।

অস্ত্রের ভাষার কথা আমরা প্রথম শুনেছি জেনারেল আইউবের মুখে। যদিও ছাত্রদের ভিতর অস্ত্রের ব্যবহার প্রথম শুরু করেছিলেন জেনারেল আইউব স্বয়ং। আগেই বলেছি, এখন ছাত্র বা রাজনৈতিক কর্মীরা লাঠিসোটা আর হকি স্টিক ব্যবহার করেনা। স্বাধীনতার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সাত খুন হয় অটোমেটিক অস্ত্রের দ্বারা। তখন ছাত্রলীগের এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে হত্যা করেছে অস্ত্র দ্বারা। এখনও আমরা মাঝে মাঝে শুনতে পাই অস্ত্র জমা দিয়েছি, কিন্তু ট্রেনিং জমা দিইনি। রাজনীতির কারণে এখন আমরা নানা মাত্রায়, নানা ডাইমেনশনে মুক্তিযুদ্ধকে দেখতে পাই। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রাজনীতি করতে করতে এখন দেখা যাচ্ছে ৪/৫ বছরের ছেলে মেয়েরাও মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছে। ৪/৫ বছরের সেই শিশুর বয়স  এখন ৪০/৪৫ বছর। টিভিতে ইন্টারভিউ দিয়ে বলছে, আমি আমার বাবা বা দাদাকে লাঠি হাতে প্যারেড করতে দেখেছি। আমি দাদাকে পানি পান করিয়েছি। সম্মানিত কবীর চৌধুরী বলেছিলেন, এখন শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকলেই চলবে। কিন্তু দেশবাসী আজও জানেন না মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটা কি? আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই নানা ধরনের চেতনার কথা বলে থাকেন। স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর একুশের চেতনা। আমিতো দেখছি এই চেতনার নানা মাত্রা বা ডাইমেনশন আছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের চেতনা এক রকম আর আমার চেতনা আরেক রকম। বিএনপি বা সমমনা দলগুলো ভাবে অন্য রকম। ভারত ভাবে আরও অন্য রকম।

হানাদার পাকিস্তান বাহিনীর অতর্কিত আক্রমনের ফলে প্রায় এক কোটি লোক দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যায়। এই এক কোটি লোকের ৯০ ভাগ ছিলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। দশ ভাগ ছিলেন সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়। স্বাধীনতার জন্যে যুদ্ধ করেছেন বাংগালী সৈনিক, ইপিআর, আনসার ও পুলিশ। মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়েছেন এ দেশের ছাত্র জনতা। এদের ৯০ ভাগই মুসলমান বা সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়। যাদের জন্যে স্বাধীনতা অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল। এরা সবাই ছিলেন বাংগালী মুসলমান। এককালে এরাই চেয়েছিলেন পাকিস্তান । পাকিস্তানীদের জুলুম নির্যাতনের কারণেই বাংগালী মুসলমানেরা বাধ্য হয়েই স্বাধীনতার দাবী তুলেছে আর জান কোরবান করে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অংশ গ্রহণ ছিল খুবই নগণ্য। তবে একথা সত্য যে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাঁরা নির্যাতিত হয়েছেন বেশী। একই ভাবে সদা ভীত সন্ত্রস্ত ছিলেন এদেশে থেকে যাওয়া সাড়ে ছ'কোটি মানুষ। এদের নিয়ে  ৭২ সালে ইংরেজী সাপ্তাহিক হলিডে লিখেছিল ' সিক্সটিফাইভ মিলিয়ন কোলাবোরেটরস'। তখন বংগবন্ধু এবং তাঁর ভক্তদের হুঁশ এসেছিল যে, দেশের সাড়ে ছ'কোটি লোককে কোলাবোরেটর বানিয়ে দেশ চালানো যাবেনা।আগেগি বলেছি যে, কোলকাতা বা বাংলাদেশ সীমান্তের আশে পাশের ভারতীয় রাজ্য ও জেলা গুলোতে আশ্রয় নিয়েছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইয়েরা। এ কথা সত্য যে, সে সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা বেশী অত্যাচারিত হয়েছিলেন। এমন কি প্রতিবেশী অনেক মুসলমানেরও তাদের উপর অত্যাচার করেছে। নামজাদা আওয়ামী নেতাদের অনেকেই ছিলেন কোলকাতা শহরে। আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতাদের একভাগও সরাসরি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেননি। তাঁরা বক্তৃতা বিবৃতি ও রাজনৈতিক লবিতে অংশ গ্রহণ করেছেন। সাংবাদিক বুদ্ধিজীবীরাও তাই করেছেন। সীমান্তে বা দেশের ভিতর প্রবেশ করে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছেন ছাত্র যুবক শ্রমিক কৃষক ভাইয়েরা। তাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন সেনাবাহিনীর অফিসার, জওয়ান, পুলিশ, ইপিআর ও আনসার বাহিনীর দেশপ্রেমিক শক্তি। বলা হয়ে থাকে মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ লোক শহীদ হয়েছেন। যদিও এই সংখ্যা নিয়ে নানা জনে নানা মত প্রকাশ করছেন। তবুও এই সংখ্যাকে যদি সঠিক ধরে নেই তাহলে আওয়ামী লীগের নেতৃ স্থানীয় এক ভাগ লোকও শহীদ হননি। কেয়েকটি দক্ষিণপন্থী ও ইসলামী দল ছাড়া সব রাজনৈতিক দলই মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছে। রাজনৈতিক কারণে ও ভারত সরকারের প্রভাবে আওয়ামী লীগ প্রবাসী সরকার গঠন করে ও নেতৃত্ব দেয়। যহোক এসব হলো প্রাসংগিক কথা।

মাস খানেক ধরে রাজনীতির ভাষা নিয়ে পত্রিকা ও রাজনীতির মাঠ বেশ গরম। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ভাষা সব সময়েই একটু ব্যতিক্রম ধর্মী। তিনি শালীন ও পরিশীলিত ভাষায় কথা বলতে হয়ত পারেননা। এখন সবাই ধরে নিয়েছেন যে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী নেত্রী ওভাবেই কথা বলেন এবং তিনি যা বলেন তা হয়ত তাঁর অন্তরের কথা নয়। এর আগে আদালতও তাঁকে 'রং হেডেড' বলে আখ্যায়িত করেছেন। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই বলে থাকেন, নেতৃ যদি কম কথা বলতেন তাহলে দলের উপকার হতো। কথা বলার ব্যাপারে নেতৃর আদর্শকে অনুসরণ করে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ইতোমধ্যই চ্যাম্পিয়নশীপ লাভ করেছেন। কেউ কেউ বলেন, ওভাবে কথা বললে প্রধানমন্ত্রী খুশী হন। ইদানিং এ ভাষার প্রভাব আদালত ও সংসদে বিস্তৃতি লাভ করেছে। আদালত কথায় কথায় প্রতিদিনই কাউকে না কাউকে পাকিস্তান পাঠাবার পরামর্শ দিচ্ছেন। সাংবাদিক সাগর রুনীর হত্যার ব্যাপারে সংবাদ পরিবেশনের ব্যাপারেও আদালত কথা বলেছেন। কিন্তু সাংবাদিকরা বলেছেন, তাঁরা আদালতের এই পরোক্ষ  সেন্সরশীপ মানেন না। বেশ কিছুদিন থেকে আদালত এভাবে কথা বলে চলেছেন। সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মাকসুদকেও আদালত হুমকি ধামকি দিয়েছেন। আমরাতো শুনেছিলাম আদালত স্বাধীন হয়ে গেছেন। সিনেমা হলের মালিকানা  বিষয়ক মামলায় আদালত অন্য বিষয়ে রায় দিয়ে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরী করেছেন এবং সেই অস্থিরতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ওই মামলার পূর্ণাংগ রায় এখনও লেখা শেষ হয়নি। সিনেমা হলের মালিকানার বিষয়টিও সুরাহা হয়নি।

রাজনীতির অশালীন ভাষা এখন সংসদে ঢুকে পড়েছে। কেউ কেউ বলছেন নিষিদ্ধ পল্লীর ভাষা সংসদে ঢুকে পড়েছে। স্পীকার সাহেব নিজেই এতে বিব্রত বোধ করছেন। বিষয়টির সূত্রপাত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ভাষা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বিরোধী দলীয় কয়েকজন সদস্য নাকি নিয়মনীতি ভংগ করেছেন। বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ বলেছেন, এ ভাষা চালু করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর দলীয় নেতারা। বিরোধী দলীয় সদস্যদের ভাষায় ক্ষুব্দ হয়ে নাসিম সাহেব তাঁদের সদস্যপদ বাতিলের কথা বলেছেন। এখন আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে মাতম উঠেছে ভাষা নিয়ে। এতদিন তাঁদের ধারণা ছিল অশালীন ভাষা ব্যবহারের অধিকার তাঁদের একচেটিয়া। খালেদা জিয়ার সমস্যা তিনি ওই ভাষায় কথা বলতে পারেন না। এমন কি তাঁর দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারীও ওই ভাষা রপ্ত করতে পারেন নি এখনও। রাজনীতিতে অশালীন ভাষার ব্যবহার ও প্রতিপক্ষকে অশ্রাব্য ভাষায় আক্রমণ করার যে রেওয়াজ চালু হয়েছে তা অবশ্যই অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। আমারতো মনে হয় আওয়ামী লীগ শালীন ভাষায় ফিরে এলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বিএনপির নেতা ও কর্মীদের এ অশালীন ভাষা আর শিখতে হবে না।

লেখক: কবি ও সাংবাদিক

ershadmz40@yahoo.com

http://humannewspaper.wordpress.com/2012/03/13/%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A7%80%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B7%E0%A6%BE-%E0%A6%93-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6/


আমার ভাষা আমার একুশ

ভাষার রাজনীতি, রাজনীতির ভাষা

সৌরভ সিকদার | তারিখ: ২০-০২-২০১০

র ফলাফলকে এটি প্রভাবিত করে। সাম্প্রতিক নির্বাচনে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' শব্দটি সমাজ ভাষাবিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে মনস্তাত্ত্বিক ভাষাবিজ্ঞানের বিশ্লেষণের বিষয়বস্তু হতে পারে। আমরা একটু অতীতে ফিরে তাকাতে পারি। ১৯৩৩ সালে হিটলার যখন জার্মানির রাষ্ট্রনায়ক হলো, সে সময় রাইখ সংস্কৃতি সংসদ গড়ে উঠেছিল গোয়েবলসের নেতৃত্বে। সমগ্র জাতির চিন্তাধারা রাইখ নেতৃত্বের অনুগামী করতে শিল্প-সাহিত্য, সংবাদপত্র, বেতার, থিয়েটার সবকিছুতেই প্রচারণার কাজ করে তারা। এক জার্মান এক সংস্কৃতিপন্থী—এই ভাবনা সবাই মেনে না নিলেও শেষ পর্যন্ত ভাষিক অহংকার ও জাত্যাভিমানে ভয়ে ভক্তিতে শ্রদ্ধায় এক জার্মান হয়ে ওঠে। হিটলার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে যে অস্ত্র প্রয়োগ করেছিল তার নাম ভাষা, রাজনৈতিক ভাষা। এ প্রসঙ্গে তার বক্তৃতা এবং জীবনীগ্রন্থ মাইন ক্যাম্প-এর কথা উল্লেখ করাই যথেষ্ট। আমরা আমাদের বাংলাদেশের কথা যদি অলোচনা করি তবে দেখব, শুধু ভাষার রাজনীতি অনুধাবন করতে না পেরে পাকিস্তানি শাসকেরা অনেক সংগ্রাম করেও শেষ পর্যন্ত পরাজয় মেনে নিয়ে বাংলাদেশ নামের নতুন মানচিত্র জন্ম দিতে বাধ্য হয়েছিল। একইভাবে বঙ্গবন্ধু সাতই মার্চের যে ভাষণ, সেটিও ছিল বাংলা ভাষাভাষী বাঙালির আত্মচেতনা এবং ঐক্য প্রয়াসের অন্যতম ভিত্তি। ভাষা দিয়ে, শব্দ দিয়ে মানুষকে মুক্তির মিছিলে দাঁড় করানো সম্ভব হয়েছিল। তাই ভাষার রাজনীতি না বুঝে পাকিস্তান ভেঙে গেল (আরও অনেক কারণও ছিল), পক্ষান্তরে রাজনীতির ভাষা দিয়ে মাতৃভাষা তথা মাতৃভূমির প্রতি আনুগত্য তৈরির এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন হলো সেদিন এই গাঙ্গেয় বদ্বীপে। ইতিহাসে আমরা ভিন্নচিত্রও দেখি, জনমানুষের ভাষা ও ভাব না বুঝে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিণতিতে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। আমাদের দেশে মাঝেমধ্যেই রাজনীতিবিদেরা যথার্থ ভাষা ব্যবহার না করার পরিণতি তাঁদের দিতে হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। 
ভাষা যে কত বড় রাজনৈতিক হাতিয়ার তার প্রমাণ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যখন এ দেশের শাসনভার গ্রহণ করে, তখন তাদের সাদা চামড়ার প্রশাসনিক ব্যক্তিরা এ দেশের ভাষা শেখার জন্য ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ স্থাপন করেছিলেন বাংলা শেখার জন্য। 'নেটিভ'দের ভাষা না জানলে শাসন-শোষণ করা যায় না—তাই এ প্রচেষ্টা। রাজনৈতিক আধিপত্য বজায় রাখতে তাই শোষিত শ্রেণীর ভাষা জানা আবশ্যক। ইংরেজরা সেটা জানত বলেই রাজনীতিতে কাজে লাগিয়েছে ভাষাকে। পাকিস্তানি শাসকেরা ভাষা ভুলে ধর্মের রাজনীতিতে অগ্রসর হয়ে পাকিস্তান রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
ভাষার নিজস্ব শক্তি আছে। একে কাজে লাগাতে পারলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল হয়। আবার জনগণের সঙ্গে ভাষিক বিচ্ছিন্নতা তৈরি করলে বৈরিতা তৈরি হয়। ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের দ্বন্দ্ব মূলত ভাষাকে কেন্দ্র করে, যা পরবর্তী কালে রাজনৈতিক সমস্যায় পর্যবসিত হয়। মুহাম্মদ আবদুল হাই লিখেছেন, 'ভাষা ব্যবহারে মানুষের যথেচ্ছ অধিকার থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক প্রশ্নে মানুষকে এমনিভাবে সংকুচিত হয়ে যেতে হয়, মনের কথা মুখ পর্যন্ত এসে আটকে যায়। নিছক রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে সহজভাবে নিজের ভাষার ওপরেও সে তার নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। আর রাষ্ট্র! তার অনুসৃত আদর্শ প্রচারের জন্য রাষ্ট্রীয় প্রচার বিভাগের মারফত ভাষা ব্যবহারের সব রকম মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে স্বদেশে ও বিদেশে তার মত বিস্তার করে দিতে মোটেও কুণ্ঠিত হয় না।'
কখনো কখনো রাজনীতিবিদ তথা রাজনৈতিক সরকার ভাষাকে ব্যবহার করে সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বলে চালিয়ে যেতে চায় নিজের শাসন ক্ষমতাকে আরও দীর্ঘায়িত করার জন্য। কিন্তু একসময় আসল ঘটনা বেরিয়ে পড়লে বিপরীত ফলই ঘটে। ভাষা নিয়ে রাজনীতি করলে তার পরিণতি যে কী হয়, তা পাকিস্তান ছাড়া আর কে ভালো জানে। আমাদের ভাষা আন্দোলনের এক কৃতী ব্যক্তিত্ব আহমদ রফিক এ বিষয়ে আমাদের বলেন, 'আমাদের বাংলা ভাষা রাজনৈতিক কারণেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিল। ওরা পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু ঘোষণা দিয়ে নিজেদের অদূরদর্শিতার পরিচয়ই প্রকাশ করেছিল। সে আমলে এ নিয়ে ইত্তেহাদ এবং আজাদ-এ অনেক লেখালেখিও হয়েছে। মুহম্মদ এনামুল হক, কাজী মোতাহার হোসেন তাঁদের লেখায় সতর্ক করে দিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভাষার প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়ল রাজনীতির বৃত্তের মধ্যে এবং এর পরিণতি আমাদের ভাষা আন্দোলন এবং বাংলাদেশের জন্ম। এ কারণেই আমি বলি, ভাষা থেকে আমরা নতুন ভূখণ্ডে পৌঁছে গেছি। ভাষা আন্দোলন তাই শুধু ভাষারই আন্দোলন নয়, এটি রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনও।'
ভাষার ওপর মানুষের যেমন জন্মগত অধিকার, তেমনি দেশের রাজনৈতিক প্রয়োজন অনুসারেও তার ভাষা নিয়ন্ত্রিত অথবা বাধার সম্মুখীন হয়। রাজনীতির শক্তি তার ভাষার স্বাধীনতার সামনে দেয়াল তুলে দেয়। আবার অন্যভাবে মানুষের ভাষার স্বাধীনতা খর্ব হলে, ভাষা প্রতিরোধ করা হলে, তখন ভাষা ও রাজনীতি পরস্পরের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। আর এ যুদ্ধে ভাষার জয়ের সম্ভাবনাই বেশি থাকে। কেননা ভাষার সঙ্গে মানুষের আবেগ এবং অস্তিত্বের প্রশ্ন জড়িত।
ভাষার শক্তি মূলত তার সৌজন্য এবং নমনীয়তার মধ্যে। গত নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দৃষ্টান্ত দিয়ে, এ বিষয়ের ইতি টানতে চাই। ওবামা তাঁর ভাষণে মানুষকে হতাশা থেকে স্বপ্নের জগতে টেনে আনেন, ভুল স্বীকার করতে ভালোবাসেন, বিরোধী পক্ষের প্রশংসা করতে চেষ্টা করেন, সবশেষে 'আমিত্ব' বর্জন করে একাকার হয়ে যান সাধারণ মানুষের মধ্যে। এখানেই তাঁর ভাষার শক্তি। ওবামার ভাষণগুলো পড়লে আমাদের রাজনীতিবিদেরা উপকৃত হবেন। তাঁরা আরও বেশি মানুষের কাছে আসতে পারবেন। আর যে যত সহজে সহজ ভাষায় মানুষের কাছে আসতে পারে, সে তত আপন হয়ে ওঠে। এখন আর আমাদের ভাষা নিয়ে রাজনীতি করার অবকাশ নেই এই বাংলা ভাষা প্রধান রাষ্ট্রে। কিন্তু রাজনীতির ভাষা পরিবর্তন করার অবকাশ রয়ে গেছে। সরকার এবং বিরোধী দল ভেবে দেখলে একুশে ফেব্রুয়ারির ঐতিহ্যময় এ দেশে শুধু ভাষা দিয়ে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হতে পারে। অন্তত বাংলাদেশের জনগণ তাই প্রত্যাশা করে। সে ভাষা কি আপনারা পড়তে পারেন?
সৌরভ সিকদার: অধ্যাপক, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-07-20/news/43626

কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়ে মনমোহন-সনিয়াকে পাল্টা আক্রমণে মমতা৷ বললেন, রাজ্যের টাকায় দেওয়া হচ্ছে ভর্তুকি, চলছে প্রকল্প৷


আজই কার্যকর হল রেলের নতুন ভাড়া। দশ বছর পর পর রেলের ভাড়া বৃদ্ধি হল। জানুয়ারি মাসের ৯ তারিখ ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় রেল।

রেলমন্ত্রী জানান, ক্ষতি সামাল দিতেই কুড়ি শতাংশ হারে ভাড়াবৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত। নজিরবিহীনভাবে রেল বাজেটের এক মাস আগে ভাড়া বৃদ্ধির ফলে আজ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত রেলের আয় হবে বারোশ কোটি টাকা। যাত্রীভাড়া বাড়ানোয় রেলের আয় বাড়বে ৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।


জয়পুরে সহ সভাপতি পদে আনুষ্ঠানিক অভিষেক রাহুল গান্ধীর। আর জয়পুরের চিন্তন শিবির থেকেই কংগ্রেস হাইকমান্ড স্পষ্ট করে দিল ২০১৪ ভোটে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে আক্রমণের পথেই হাঁটতে চলেছে তারা। জয়পুরেই আনুষ্ঠানিক অভিষেক হল রাহুল গান্ধীর।


সমঝোতা এক্সপ্রেস, মক্কা মসজিদ এবং মালেগাঁও বিস্ফোরণে হাত রয়েছে আরএসএসের। জয়পুরে কংগ্রেসের চিন্তন শিবিরের শেষ দিনে রবিবার এই অভিযোগ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্ডে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা আরএসএস এবং বিজেপির বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শিবির থেকে হিন্দু সন্ত্রাসবাদের বীজ ছড়ানো হচ্ছে বলেও এদিন দাবি করেন সুশীল কুমার শিন্ডে। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে বিজেপি। এই বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবিলম্বে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি জানায় বিজেপি। তবে পরে চাপে পড়ে নিজের মন্তব্য থেকে সরে আসেন শিন্ডে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই তাঁর এই মন্তব্য বলে জানান শিন্ডে।


 
কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির প্রস্তাবে রবিবারই সিলমোহর দিয়েছে এআইসিসি। সরকারিভাবে ঘোষণা না হলেও ২০১৪ লোকসভা ভোটে কংগ্রেস যে রাহুলের নেতৃত্বেই লড়বে তা স্পষ্ট। নেতৃত্বে রাহুল। লোকসভা ভোটকে পাখির চোখ করে আক্রমণাত্মক কংগ্রেস। সোনিয়া-মনমোহনরা জানেন, নেতৃত্বে রাহুলের অভিষেক দলের নেতা-কর্মীদের অক্সিজেন জোগাবে। সেই ভরসাতেই টানা তিন বার দিল্লির কুর্সি দখলের স্বপ্ন দেখছে নানা সঙ্কটে বেসামাল কংগ্রেস। 
 
 
ট্র্যাক রেকর্ড বলছে, ভোটযুদ্ধে এখনও তেমন সাফল্য দেখাতে পারেনি রাহুলের নেতৃত্ব। তবু সেই রাহুলেই কংগ্রেসের আস্থা রাখার বড় কারণ যে গান্ধী পরিবারকে ঘিরে দেশের মানুষের সীমাহীন আবেগ। সেই আবেগকে উস্কে দিয়েই নরেন্দ্র মোদীকে মোকাবিলার ঘুঁটি সাজাতে শুরু করে দিল সোনিয়া গান্ধীর কংগ্রেস।


জয়পুরের চিন্তন শিবির থেকেই কার্যত আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিল কংগ্রেস। যে ইস্যুটি ইউপিএ দুই সরকারকে সবচেয়ে সমস্যায় ফেলেছিল সেই দুর্নীতি ইস্যুকেই অস্ত্র করে লড়াইয়ের বার্তা দিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। আজ জয়পুরে কংগ্রেসের চিন্তন শিবিরের সমাপ্তি ভাষণে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে ইতিমধ্যেই সরকার পাঁচদফা পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তার সঙ্গেই কংগ্রেস সভানেত্রীর বক্তব্যে উঠে এল দিল্লির ধর্ষিতা তরুণীর কথাও। তিনি জানিয়ে দিলেন মেয়েটির মৃত্যু বৃথা যাবে না। নারী সুরক্ষা প্রশ্নে চিন্তন শিবিরের সমাপ্তি ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর গলাতেও দলের সভানেত্রীর সুর শোনা গেল। 

সোনিয়া তাঁর বক্তব্যে বললেন নারীদের প্রাথমিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর দল লড়াই জারি রাখবে। প্রতিশ্রুতি দিলেন নারী সুরক্ষার জন্য দেশে নিশ্চিত আইনেরও। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন মহিলাদের সমানাধিকারের জন্য আইন প্রণয়নই শেষ কথা নয়। তিনি বললেন দিল্লির ঘটনার পর এটা পরিষ্কার যে সামাজিক দৃষ্টিকোনের বদল ভীষণ প্রয়োজনীয়। 

বিশ্ব জুড়ে চলতে থাকা আর্থিক মন্দার ছায়া পড়েছে ভারতের অর্থনীতিতেও। সেই পরিস্থিতি থেকে দেশকে বাঁচাতেই আর্থিক সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জয়পুরে দলের চিন্তন শিবিরে এমনটাই বললেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যগুলিকে সাহায্য করতে এগিয়ে গিয়েছে। তবে কংগ্রেস ক্ষমতায় নেই এমন অনেক রাজ্যই কেন্দ্রীয় প্রকল্পকে নিজেদের বলে চালাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন সোনিয়া গান্ধী। জানালেন যাঁরা এ কাজ করছেন দ্রুতই তাঁদের পর্দা ফাঁস করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেও এই প্রসঙ্গ উঠে এল। তিনি বললেন আসল সত্যিটার সঙ্গে মানুষের পরিচিত হওয়া প্রয়োজনীয়। 

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে ইউপিএ সরকারের আমলে ভারতে আর্থনীতির বিকাশের কথা তুলে ধরলেন। জানালেন এভাবে চললে আগামী দুহাজার তিরিশের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে উঠে আসবে ভারত। এর সঙ্গেই আটই জানুয়ারি পাকিস্তান সীমান্তে যা করেছে তা খুবই নিন্দার।ভারত বিষয়টি উপর নজর রাখছে।  ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সহবস্থানই চায়। তবে সেক্ষেত্রে পাকিস্তানকেও এগোতে হবে বলে জয়পুরে মন্তব্য করলেন প্রধানমন্ত্রী।


ভোপাল :ভাইয়ের মুক্তির ব্যাপারে ভারত সরকারের ভূমিকায় অখুশি পাকিস্তানের জেলে বন্দি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সরবজিত সিংহের বোন দলবীর কউর। হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, সরবজিতকে ছাড়ানোর ব্যাপারে সময়মতো ততপরতা দেখায়নি দিল্লি।দেখালে ভাই হয়ত আজ আমার পাশে থাকত! সরবজিতের মু্ক্তির সমর্থনে জনমত গড়ে তোলার এক অনুষ্ঠানে এখানে এসেছেন দলবীর ও সরবজিতের মেয়ে পুনম। দলবীর বলেছেন, দীর্ঘদিন আগে তিনি পাকিস্তানের জেলে ভাইয়ের বন্দী থাকার ব্যাপারে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিংহ রাওয়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। পুনম জানান, সম্প্রতি তাঁদের পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর বাবাকে ছেড়ে দিতে পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য উদ্যোগী হতে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে অনুরোধ করা হয়েছে। পুনম জানিয়েছেন, এপর্যন্ত তাঁরা ১৭৩ জন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে দেখা করে তাঁদের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। কিন্তু একজনও এব্যাপারে সাহায্য করতে পারেননি। লাহোর ও ফয়সলাবাদে পরপর বিস্ফোরণে ১৯৯০ সালে ১৪ জনের মৃত্যুর ঘটনায় সরবজিতকে দোষী সাব্যস্ত করে পাক কর্তৃপক্ষ। তাঁর ঠাঁই হয় কোট লাখপত জেলে। তবে সরবজিত পাল্টা দাবি করেন, তিনি চাষবাষ করেন। ভুল করে তিনি সীমান্ত পেরিয়ে পাক ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েছিলেন। 

http://abpananda.newsbullet.in/national/60-more/32748-2013-01-21-14-27-11   


বিজেপি, আরএসএস, কংগ্রেস। ফের একবার বাকযুদ্ধে দেশের প্রথম সারির তিন রাজনৈতিক শিবির। এবার `গেরুয়া সন্ত্রাস` নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্ডের করা মন্তব্যকে ঘিরে। জয়পুরে কংগ্রেসের চিন্তন শিবিরের শেষ দিনে দেশের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমনন্ত্রী বিজেপি ও রাষ্ট্রীয় সয়মসেবক সংঘকে একহাত নেন। শিন্ডের রায় ছিল, `গেরুয়া সন্ত্রাসে` মদত দিচ্ছে বিজেপি ও আরএসএস। সমঝোতা এবং মালেগাও বিস্ফোরণের মতো ঘটনায় বিজেপিও জড়িত। তা থেকেই সন্ত্রাসে বিজেপির মদত স্পষ্ট হয়ে যায় বলে দাবি করেন শিন্ডে। 

এই ঘটনায় ইউপিএকে আক্রমণ শানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যগের দাবি পদত্যাগের দাবি জানাল বিজেপি। অবিলম্বে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিজেপি নেতা রবি শঙ্কর প্রসাদ। সোমবার রবি শঙ্কর বলেন, "স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের আমরা নিন্দা করছি। তিনি নিজেই জানেন না কী বলছেন তিনি।" একই সঙ্গে সোনিয়া গান্ধীর ক্ষমা ও শিন্ডের পদত্যাগেরও দাবি জানিয়েছেন এই বিজেপি নেতা। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর করা `গেরুয়া সন্ত্রাস` তত্তের জবাব দিতে প্রসাদ বলেন, "গেরুয়া জাতীয় পতাকার রঙ। কীভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেটিকে সন্ত্রাসের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলতে পারেন?" তিনি আরও বলেন, "আমরা কখনই বলিনি, `মুসলিম সন্ত্রাস`। কারণ সন্ত্রাসের কোনও ধর্ম হয় না।" 

বিজেপির তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, শিন্ডের মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিতে দেশব্যাপী প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তুলবেন তাঁরা। সেই মর্মে ২৪ জানুয়ারি একাধিক কর্মসূচি নিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টির শীর্ষ নেতৃত্ব। সোনিয়ার ব্যাখা দাবি করে রবি শঙ্কর প্রসাদ বলেন, "আমরা জানতে চাই কংগ্রেসও কী শিন্ডের বক্তব্যকে সমর্থন করে?"


বিতর্কের বেড়াজাল থাকা সত্ত্বেও, দ্বিতীয়বারের জন্য বিজেপি সভাপতি হতে চলেছেন নীতিন গড়কড়ি। তাও আবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। আজই ভারতীয় জনতা পার্টি দলীয় সভাপতি নির্বাচনের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। সভাপতি পদের জন্য বিকল্প প্রার্থী না মেলায়, গড়কড়ির নামেই ঐকমত্যে পৌঁছেছে বিজেপি। রাজপুতদের শহর থেকে শনিবারই সেনাপতির নাম ঘোষণা করেছে কংগ্রেস। তারুণ্যের কাঁধে ভর করে দল যখন হাতের জোর বাড়াতে চাইছে, তখন সেনাপতি ঠিক করতে তত্পর হয়েছে বিজেপি শিবিরও। 

রবিবারই দলীয় সভাপতি নির্বাচনের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে বিজেপি। যে নীতিন গড়কড়িকে নিয়ে দলের এত মাথাব্যথা, শেষ পর্যন্ত তিনিই বিজেপি সভাপতি হওয়ার দিকে নিষ্কন্টক ভাবে এগোচ্ছেন। সূত্রের খবর, ২৩ জানুয়ারি গড়কড়ি তাঁর মনোনয়ন দাখিল করতে পারেন। মনোনয়ন দখলের ছাড়পত্র পেয়ে গেলে গড়কড়ির সভাপতি হওয়া একরকম পাকা। কারণ এই নির্বাচনে আর কোনও প্রতিদ্বন্দ্বীই নেই।


নয়াদিল্লিঃ রাহুল গাঁধী যখন আনুষ্ঠানিক ভাবে সহ-সভাপতি হয়ে জয়পুরে আবেগমথিত বক্তৃতা দিচ্ছেন, তখন বিজেপি শিবিরে নেতৃত্ব দখলের লড়াই এক নতুন মোড় নিয়েছে।
নিতিন গডকড়ীই যে আবার সভাপতি হবেন, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রধান মোহন ভাগবত সেটা আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন শীর্ষনেতাদের কাছে। ২৩ জানুয়ারি সম্ভবত নাম ঘোষণা হবে নতুন সভাপতির। আজ নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে গিয়েছে। এই পদে যাতে আর কেউ প্রার্থী না হন, সর্বসম্মতিক্রমেই যাতে সভাপতি নির্বাচন হয়, সে বিষয়ে সঙ্ঘ তৎপর। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, রাহুল যখন কংগ্রেসের প্রধান মুখ হতে চলেছেন, তখন বিজেপিতে সেই জায়গাটা কাকে দেওয়া হবে? এ নিয়ে দলের মধ্যেই প্রবল বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে।
দলের প্রধান মুখ হিসেবে লালকৃষ্ণ আডবাণীর বেশি পছন্দের প্রার্থী বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ। এ বিষয়ে ভাগবতের সঙ্গে আডবাণীর কথাও হয়েছে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আডবাণী চেয়েছিলেন, যাতে এ বার গডকড়ীকে সরিয়ে সুষমাকেই বিজেপি সভাপতি করা হয়। গডকড়ীর বদলে অরুণ জেটলির নামেও আডবাণীর সমর্থন ছিল না। কিন্তু সভাপতি হিসেবে সুষমার নাম নিয়ে জেটলি-সহ বেশ কিছু নেতা প্রবল আপত্তি জানান। রাজনাথ সিংহকেও সর্বসম্মত প্রার্থী করা সম্ভব হয়নি। ফলে গডকড়ীই ফের সভাপতি হচ্ছেন। এই অবস্থায় অতি উৎসাহী গডকড়ী আজই উত্তরপ্রদেশে একটি জনসভার আয়োজন করছেন। বিজেপি শীর্ষনেতারা সেই সভা নিয়ে যত না উত্তেজিত, তার থেকে অনেক বেশি উত্তেজিত, রাহুলের মোকাবিলায় কাকে প্রার্থী করা হবে তা নিয়ে।
আডবাণী-শিবির নরেন্দ্র মোদীর বদলে সুষমাকেই দলের কাণ্ডারী করার পক্ষে। তাঁদের যুক্তি হল, কংগ্রেস অধিবেশনে সনিয়া থেকে রাহুল গাঁধী, যে ভাবে পরিবর্তিত ভারতে নতুন কংগ্রেস গড়ার ডাক দিয়েছেন, তার চরিত্র মূলত 'প্যান-ইন্ডিয়ান'। রাহুল বারবার বলেছেন, হিন্দুস্তানের ডিএনএ কংগ্রেসেই নিহিত। সনিয়াও বারবার সকলকে নিয়ে চলার কংগ্রেস-নীতিতে জোর দিচ্ছেন। আর এই নীতিটা মূলত সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী, পরধর্ম সহিষ্ণুতার আদর্শকে সামনে রেখে তৈরি। আডবাণী-সহ বিজেপির বহু নেতার বক্তব্য, নরেন্দ্র মোদীই কাণ্ডারী হচ্ছেন ধরে নিয়ে কংগ্রেস তাদের ঘুঁটি সাজাচ্ছে। যে মুহূর্তে মোদীর নাম ঘোষণা হবে, সঙ্গে সঙ্গে কংগ্রেস গোধরা বা সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নকে তুলে ধরে মেরুকরণের রাজনীতি শুরু করবে। মোদীকে মুসলিম-বিদ্বেষী বলে প্রচার চালিয়ে ভারতের বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বিজেপিকে আবার বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করবে। এই নেতাদের আশঙ্কা হল, সে ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধি এবং কংগ্রেসের নব্যউদার অর্থনীতির বিরোধিতার তাসটা লঘু হয়ে বিজেপি বিরোধিতার বিষয়টিই বড় হয়ে উঠতে পারে।
বিজেপির এই নেতাদের আরও একটি বিষয় ভাবাচ্ছে। তা হল মোদীর সাফল্য নিয়ে সংশয়। তাঁদের মতে, গুজরাতে নরেন্দ্র মোদী সফল। গত দশ বছর ধরে সে রাজ্যে আর্থিক বৃদ্ধির হার ১০ শতাংশেরও বেশি। যা জাতীয় হারের থেকে বেশি। তার উপর গুজরাতে ফের জিতে এসে দলের বড় অংশের নেতা-কর্মীর মধ্যে একটা নৈতিক কর্তৃত্বও অর্জন করেছেন। ফলে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা নিয়ে দলের একটা বড় অংশের চাপ রয়েছে। কিন্তু যে প্রশ্নটা রয়েই যাচ্ছে, তা হল, গুজরাতে উন্নয়নের সফল কারিগর হলেও সর্বভারতীয় মঞ্চে মোদী কি
রাজধর্মের প্রতীক হয়ে উঠতে পারবেন? এই প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে সঙ্ঘ পরিবারের অন্দরেও।
এখানেই শেষ নয়। অরুণ জেটলি-সুষমা স্বরাজ এমনকী রাজনাথ সিংহ প্রত্যেকেই নিজেদের প্রধানমন্ত্রী পদের যোগ্য দাবিদার বলে মনে করেন। আডবাণীর মতো প্রবীণ নেতাও নিজেকে এই ইঁদুর দৌড়ের বাইরে রাখতে চান না। তিনি এখনও স্পষ্ট বলতে রাজি নন যে, এ বার আর তিনি প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হতে চান না। সব মিলিয়ে ক্ষমতার অন্তর্দ্বন্দ্ব বিজেপিতে ক্রমবর্ধমান।
আর এখানেই কংগ্রেস অনেকটা এগিয়ে। তাদের মস্ত বড় সুবিধা এই যে, সেখানে গাঁধী পরিবারের কোনও প্রতিনিধিকে সামনে আনা হলে দলের সব স্তরের নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে যান। রাহুল নিজে বলতে পারেন যে, আমাদের দলে ৪০ থেকে ৫০ জন এমন নেতা তৈরি করা উচিত, যাঁদের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা থাকবে। কিন্তু বাস্তবে গাঁধী পরিবারের বাইরে কেউ প্রধানমন্ত্রী পদপ্রাথী হবেন, এমন আশা কেউই করছেন না। উল্টে রাহুল রাজি হলে মনমোহন সিংহও গদি ছাড়তে প্রস্তুত হয়ে যাবেন।
প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী হওয়া নিয়ে বিজেপির অন্দরের এই টানাপোড়েনের ফলে রীতিমতো সমস্যায় সঙ্ঘ পরিবার। বিজেপির মধ্যে অনেকেই এক কথায় মোদীকে মেনে নিতে নারাজ। আবার সুষমাকে নিয়েও আপত্তি আছে অনেকের। তবে বিজেপির ক্ষমতার উৎস আরএসএসের মধ্যেই নিহিত। ফলে সকলেরই নজর এখন নাগপুরে, সঙ্ঘ পরিবারের সদর দফতরের দিকে। আর নাগপুরের বক্তব্য হল, এখনই তাড়াহুড়োর দরকারটা কী! লোকসভা নির্বাচন তো হবে ২০১৪ সালে। ভোটের আগে কাউকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী না-ও করা হতে পারে (যদিও আডবাণী সেটাই চান)। তবে লোকসভা নির্বাচনের ছ'মাস আগে প্রচারের মুখ হিসেবে কারও নাম ঘোষণা করা হতেই পারে। কী হবে, কেউ জানেন না।
বিজেপির এক শীর্ষনেতার হতাশ মন্তব্য, "রাহুল গাঁধী যখন রাজ্যওয়াড়ি প্রচার শুরু করে দেবেন, তখনও কি আমরা নেতা বাছাই নিয়ে মারামারি করে যাব?''

http://abpananda.newsbullet.in/national/60-more/32721-2013-01-21-04-51-25


সীমান্ত সমস্যা, পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী
উত্তেজনা কমেনি। পাক সীমান্তে কড়া প্রহরা বিএসএফ-এর -- রয়টার্স
জয়পুর: কংগ্রেসের চিন্তন শিবিরের শেষ দিন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং৷ স্বভাবত শান্ত মনমোহন সিং রবিবার স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায়, কিন্ত্ত সে ব্যাপারে পাকিস্তানকে উদ্যোগ নিতে হবে৷ ভারতীয় জওয়ানদের হত্যা এবং পাকিস্তানের তরফে অনাক্রমণ চুক্তিভঙ্গের ব্যাপারে ভারতে যে মোটেই সুর নরম করছে না, এ কথাও জানিয়ে দেন তিনি৷ 

রবিবার জয়পুরের ওই বৈঠকে তিনি বলেন, 'নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে দুই ভারতীয় জওয়ানকে হত্যার যে ঘটনা পাকিস্তান ঘটিয়েছে, তা অমানবিক৷ এর প্রভাব দু'দেশের সম্পর্কের ওপরও পড়েছে৷ এ ধরনের অমানবিক ঘটনাকে মোটেই এত সহজে মেনে নেওয়া হবে না৷ ভেবেচিন্তে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হবে৷ আমাদের পদক্ষেপই প্রমাণ করবে, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমরাও ভালো সম্পর্ক চাই৷' 

চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি ভারতীয় দুই জওয়ানের হত্যা ও সীমান্তে অশান্তির পর প্রধানমন্ত্রী কড়াভাবে জানিয়েছিলেন, পাকিস্তানের এই আচরণের পর দু'দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আগের মতো স্বাভাবিক থাকা সম্ভব নয়৷ এর পর কংগ্রেসের চিন্তন শিবিরে তাঁর এই বক্তব্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের কড়া অবস্থান আরেকবার প্রমাণিত হল৷ প্রসঙ্গত, ভারতের একটি বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দিতে পাকিস্তানের বাণিজ্য মন্ত্রী মাখদুম আমিন ফহিমের ভারতে আসার কথা ছিল৷ কিন্ত্ত দুই দেশের সাম্প্রতিক সীমান্ত-সমস্যা ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতির কারণে এই ভারত-সফর বাতিল করেছেন তিনি৷ 

অন্য দিকে বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ রবিবার জানান, ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আপাতত শান্তিপূর্ণ৷ সেই সম্পর্ক আবার পুরনো পথে ফিরতে চলেছে৷ তবে পরিবেশ অনুকূল না হওয়া পর্যন্ত দু'দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের কোনও বৈঠক হবে না বলেও জানিয়ে দেন তিনি৷ রবিবার এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, 'মিডিয়ার বেশ কিছু অংশের বক্তব্যে দু'দেশের মধ্যে যুদ্ধের বার্তা দেওয়া হয়েছে৷ মিডিয়া স্বাধীন, যা খুশি প্রচার করতে পারে৷ কিন্ত্ত এর দ্বারা ভারত কোনও ভাবেই প্রভাবিত হবে না৷' দু'দেশের সেনাপ্রধানের কথাবার্তার মধ্যেও ইতিবাচক বার্তা গিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি৷ - 

ভোটের জন্য প্রস্তুতির নির্দেশ সনিয়ার
চিন্তন শিবিরে সনিয়া -- পিটিআই
জয়পুর: শুরুর দিন যা বলেছিলেন, শেষের দিনেও সেই একই বার্তা দিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী৷ 
'লোকসভা ভোটের আর মাত্র ১৫ মাস বাকি, তৈরি হন', কংগ্রেস কর্মীদের উজ্জীবিত করে বললেন সনিয়া৷ ফের মনে করিয়ে দিলেন, দলে নিয়মানুবর্তীতার অভাব৷ বলেন, 'আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করি, তাহলে আমাদের জনতার রায়ে মসনদে ফেরা নিশ্চিত৷' তবে দলকে অনেক বেশি শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে তা বলেন 'রাজমাতা'৷ স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দলের নেতাদের কাজ করার নির্দেশ দিলেন তিনি৷ 

মহিলাদের নিরাপত্তা বিষয়ে বলেন, 'নির্ভয়ার মৃত্যু কখনও বিফলে যাবে না৷ দেশে মহিলাদের জন্য নিরাপত্তা বাড়ানো হবেই৷' এ রকম আরও ঘটনা যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটছে, তা যে লজ্জার ও দুঃখের সে কথা তিনি বারবার বলেন৷ 
বলেন, 'সাধারণ মানুষকে বোঝানোর প্রয়োজন রয়েছে, কেন সরকারকে আর্থিক ক্ষেত্রে কিছু কঠোর পদক্ষেপ করতে হয়েছে৷ না হলে ভুল বার্তা যাবে৷ আর তা জনসংযোগ বাড়িয়েই করতে হবে৷' 

তিনি জানান, দুর্নীতি রুখতে সংসদে লোকপাল বিল, দালালরাজ ঠেকাতে ঐতিহাসিক 'আপ কা পয়সা, আপ কা হাত' ইত্যাদি ইতিমধ্যেই পাশ করনো হয়েছে৷ রয়েছে খাদ্য সুরক্ষা বিল, মহিলা সংরক্ষণ বিল৷ তা আগামী দিনে পাশ করানোর চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি৷ বলেন, 'সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষ ও কৃষিজীবীদের উন্নতির জন্য কংগ্রেস দায়বদ্ধ৷' তাঁর কথায়, 'রাজনীতির প্রতি মানুষের কেন মোহভঙ্গ হয়েছে তা বেশ বোঝা যাচ্ছে৷ আমাদের উদ্যোগী হয়ে সেই মনোভাবের পরিবর্তন ঘটাতে হবে৷' 

জানান, এই চিন্তন শিবিরে যুব প্রজন্ম অনেক বেশি অংশ নেওয়ায় তিনি খুশি৷ খুশি ছেলে রাহুল সহ-সভাপতি হওয়ায়৷ আর রাজনৈতিক মহল বলছে, এনডিএ শিবিরে নরেন্দ্র মোদীর ২০১৪-এ প্রচারে নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে নানা জটিলতা রয়েছে৷ কিন্ত্ত কংগ্রেসে 'রাহুল সেনাপতি'কে সকলে মেনে নিয়েছেন৷ আর আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা না হলেও যে সনিয়া-পুত্রই ইউপিএ শিবিরের 'ব্রহ্মাস্ত্র' তা নিয়ে দ্বিমত নেই কারোরই৷ 


 টিভি চ্যানেল 24 ঘন্ডার রিপোর্ট অনুযায়ী মারমুখী মুখ্যমন্ত্রী বললেন, 

"এবার কী তাহলে প্রধানমন্ত্রীকে মারব"

সারের দাম বাড়ানো নিয়ে কেন্দ্রের সমালোচনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে নজিরবিহীন ভাবে আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। ক্যানিংয়ের সভায় তিনি বলেন, সারের দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করে তিনি দশবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, "তাহলে আর কী করব? তাহলে কী মারব?"

রাজ্যের প্রাপ্র্য টাকা কেটে নিয়ে, নিজেদের প্রকল্পে ভর্তুকি দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। পরে তা নিয়েই বড়াই করে। ক্যানিংয়ের একটি জনসভায় আজ এই অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং জয়পুরের চিন্তন বৈঠকে কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়ে একটি অভিযোগ করেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল, প্রচারের অভাবেই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বাহবা নিচ্ছে কিছু অকংগ্রেসি সরকার। প্রধানমন্ত্রীর সেই বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, রাজ্যের উপার্জন করা অর্থ অন্যায় ভাবে কেটে নিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্র। তার থেকে সামান্য টাকা কেন্দ্রীয় প্রকল্পে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে।


আদর্শ মানুষ গড়ার প্রতিষ্ঠান তৈরি করুক বেলুড় মঠ। তার জন্য যাবতীয় সাহায্য করবে সরকার। বেলুড়মঠে স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এই অনুরোধ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

হাতি চলে বাজার--কুত্তা ভকে হাজার। সম্প্রতি বিভিন্ন জনসভায় মুখ্যমন্ত্রীর গলায় শোনা গেছে এই মন্তব্য। এই মন্তব্যকে ঘিরে প্রবল সমালোচনা হলেও যদিও বেপরোয়া মুখ্যমন্ত্রী। রবিবার বেলুড় মঠে স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করলেন এই মন্তব্য তিনি শিখেছেন খোদ স্বামীজির বাণী থেকেই। 
 
সম্প্রতি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন কর্তৃপক্ষকে ঢালাও স্বাধীনতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রবিবার আদর্শ মানুষ গড়ায় প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য অনুরোধ করলেন বেলুড় মঠ ও মিশন কর্তৃপক্ষের কাছে। সঙ্গে দিলেন সাহায্যের সবরকম প্রতিশ্রুতি। 
 
স্বামীজির বাণী কীভাবে তাঁকে  অনুপ্রাণিত করেছে এদিনের অনুষ্ঠানে সেকথাও তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী।


আজ ক্যানিংয়ে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেলা দু`টো নাগাদ ক্যানিং স্পোর্টস কম্পলেক্সের ময়দানে সভায় যোগ দেবেন তিনি। এখান থেকেই সুন্দরবন উপকূল পুলিস স্টেশন, জেলা শাসকের `ই` অফিসের উদ্বোধন করবেন তিনি। 

এ ছাড়া ছটি প্রকল্পের শিল্যান্যাস  করবেন তিনি। এর পাশাপাশি ছাত্রীদের সাইকেল, জমির পাট্টা, গীতাঞ্জলী আবাসনের চেকের মতো একাধিক সরকারি পরিষেবা প্রদান করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। এখানেই রাজ্য পুলিসের উদ্যোগে আয়োজিত সুন্দরবন কাপ ফুটবল খেলারও পুরস্কার প্রদান করবেন মুখ্যমন্ত্রী।


কলকাতা: শনিবার মেট্রো চ্যানেলের সমাবেশ থেকে পঞ্চায়েত ভোটের বাঁশি বাজিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি দলীয় কর্মীদের পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি বাতলে দিলেন প্রচার-কৌশলও৷ দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে মমতার প্রচার-বার্তা, ৩৪ বছরের বাম জমানার ব্যর্থতা ও সন্ত্রাসের অভিযোগকে ফের সামনে তুলে ধরতে হবে৷ এফডিআই, রান্নার গ্যাস-পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির মতো কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ও বঞ্চনার অভিযোগে সরব হতে হবে৷ তুলে ধরতে হবে রাজ্য সরকারের সাফল্য৷ বিরোধী ও সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগকে অন্যতম হাতিয়ার করতে হবে৷ উন্নয়নকে হাতিয়ার করে ১০ বছরের মধ্যে বাংলাকে এক নম্বরে নিয়ে যাওয়া তাঁর নতুন চ্যালেঞ্জ বলেও জানান মমতা৷ তাঁর কথায়, উন্নয়ন করব, চক্রান্ত রুখব৷ গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে জেলা পরিষদ, সব আসন দখল করব৷ 
পঞ্চায়েত ভোটের লক্ষ্যে দলীয় কর্মীদের প্রতিদিন মিটিং-মিছিল করার নির্দেশ দিলেও একইসঙ্গে মমতা বলেন, মানুষের অসুবিধা না করে প্রচার-আন্দোলন করতে হবে৷ সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে আঁতাত গড়ে তুলেছে বলেও অভিযোগ করেন তৃণমূল নেত্রী৷ 
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ব্যাখ্যা, ২০১১-র আগে পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনের আগে বাহাত্তরের সন্ত্রাসের অভিযোগ সামনে এনে মানুষের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করত শাসক সিপিএম৷ এবার সেই কৌশলেই ৩৪ বছরের বাম রাজত্বের অপশাসনের অভিযোগকে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে অন্যতম অস্ত্র করতে চাইছে শাসক তৃণমূল৷ 

http://abpananda.newsbullet.in/state/34-more/32701-2013-01-19-15-47-46


তিলজলা-তপসিয়ায় শিশুচোর সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনায় গ্রেফতার আরও ৪৷ ঘটনায় ধৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৬৷ ধৃতেরা বেআইনি নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত কি না খতিয়ে দেখছে পুলিশ৷
শিশুচোর সন্দেহে শহরের নানা প্রান্তে গণপিটুনির ঘটনায় ইতিমধ্যেই ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ ঘটনার তদন্তে নেমে তিলজলা এলাকায়, আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা তৈরির ছোটখাট কারখানার খোঁজও পেয়েছেন গোয়েন্দারা৷ বেআইনি নির্মাণের সঙ্গে যুক্তদের উপরও শুরু হয়েছে নজরদারি৷ ধৃতদের জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই এবার আরও ৪ জনকে গ্রেফতার করলেন তিলজলা থানা এবং লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের গুন্ডাদমন শাখার আধিকারিকরা৷ 
ধৃতেরা বেআইনি নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত কি না খতিয়ে দেখছে পুলিশ৷ পাশাপাশি তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ 
সম্প্রতি শিশুচোর সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনাকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় তিলজলা৷ পুলিশের উপর হামলাও চালানো হয় বলে অভিযোগ৷ পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরেরও অভিযোগ ওঠে৷ ঘটনায় জখম হন তিলজলা থানার ওসি-সহ বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী৷ ঘটনার নেপথ্যে কারও প্ররোচনা ছিল কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ গুজবের জেরে ফের যাতে এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেজন্য এলাকায় প্রচার চালাচ্ছে পুলিশ৷ 

http://abpananda.newsbullet.in/kolkata/59-more/32726-2013-01-21-08-20-33


জয়-পরাজয় নয়, বিধানসভা নির্বাচনে ষাটটি আসন দখলই ত্রিপুরায় বামেদের টার্গেট। আগরতলায় এক বিরাট সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের আবেদন, সব আসনেই জয়ী করুন বাম প্রার্থীদের। তাহলে তা দেশের নির্বাচনী ইতিহাসে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। একই সুর শোনা যায় সিপিআইএম সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাতের গলায়ও।  

দেশজুড়ে একশ দিনের কাজের প্রকল্প চালু করার দাবি প্রথম তোলে বামেরা। তাঁদের দাবিতেই প্রথম ইউপিএ সরকার এই প্রকল্প চালু করে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ বা কেরালা কোথাওই সেভাবে সাফল্যের মুখ দেখেনি এই প্রকল্প। ব্যতিক্রম বামশাসিত ত্রিপুরা। 

একশ দিনের কাজের প্রকল্পে এই মুহূর্তে ত্রিপুরা দেশের মধ্যে এক নম্বরে। আর এই সাফল্য নির্বাচনী লড়াইয়ে মানিক সরকারদের অন্যতম বড় হাতিয়ার। গত আর্থিক বছরে এই প্রকল্পে ৮৬ দিন কাজ হয়েছে ত্রিপুরায়। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত ৭৫ দিন। মানিক সরকারের দাবি, শুধু গ্রামীণ প্রকল্পের সাফল্যই নয়, সন্ত্রাসবাদকে মোকাবিলা করে, শান্তি ফিরিয়ে আনাও তাঁর সরকারের অন্যতম বড় সাফল্য। আর এই দুই সাফল্যই নির্বাচনী প্রচারে বামেদের  অস্ত্র। 

 
চোদ্দই ফেব্রুয়ারি ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন। নির্বাচনের প্রাক্কালে, রবিবার আগরতলার বিবেকানন্দ ময়দানে বামেদের সমাবেশে কার্যত মানুষের ঢল নামে। সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার ষাটটি আসনেই বাম প্রার্থীদের জয়ী করার আবেদন জানান। তাঁর দাবি, বিকল্প উন্নয়নের মাধ্যমে যে গতিতে উত্তর পূর্বাঞ্চলের এই রাজ্য এগোচ্ছে তাতে আগামী পাঁচ বছরে দেশের সামনে দৃষ্টান্ত হবে ত্রিপুরা। কংগ্রেসের দলীয় কাজিয়া বাড়তি অক্সিজেন জোগাচ্ছে বামেদের। রাজ্যের বহু জেলাতেই শয়ে শয়ে কংগ্রেস কর্মী বাম শিবিরে যোগদান করছেন।


সোদপুর স্টেশন লাগোয়া সাইকেল গ্যারাজে বোমা ফেটে মৃত্যু হল একজনের। মৃতের নাম বিশ্বজিত্ সরকার। তিনি সাইকেল গ্যারাজে কাজ করতেন বলে জানা গিয়েছে। আহত হয়েছেন আরও একজন। 

আজ ভোরবেলায় গ্যারাজে বিস্ফোরণের জেরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন রেল যাত্রীরাও। কীভাবে বোমাটি গ্যারাজে এলো তার তদন্ত শুরু করেছে পুলিস। প্রাথমিক ভাবে পুলিসের অনুমান ওই গ্যারাজে বোমা বানানো হচ্ছিল। সেই থেকেই বিস্ফোরণটি ঘটে।


 ওদিকে রাজধর্ম প্রতিষ্ঠিত করে আবার মুক্ত বিহঙ্গ আরাবুল ইসলাম।


ভাঙড়ে বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লার উপর হামলার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের জামিন পেলেন। অসুস্থ আরাবুল হাসপাতালে ভর্তি। এই মামলার শুনানি এখনও হয়নি। বামনঘাটায় বাম মিছিলে হামলার ঘটনা আরাবুলের গ্রেফতারের ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। ওই মামলার শুনানি হয়নি। 

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার ভাঙড়কাণ্ডে গ্রেফতার হয়েছিলেন আরাবুল ইসলাম। তাঁকে পাঁচ দিনের পুলিসি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিল বারুইপুর আদালত। তাঁর বিরুদ্ধে দুটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। ভারতীয় দন্ডবিধির একাধিক ধারা আনা হয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এরমধ্যে চারটি জামিন অযোগ্য ধারা রয়েছে। যেমন, খুনের চেষ্টা, অস্ত্র মামলা, বিস্ফোরক প্রতিরোধক আইন এবং মারধরের অভিযোগ। এছাড়াও সংঘর্ষ বাধানো এবং গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ আনা হয়েছিল আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে। 

টিভি নেই, হেডফোন কানে আফসোস আরাবুলের
বিছানায় আধশোয়া হয়ে হেডফোনে গান শুনছেন। চোখ বোজা। মেজাজে অল্প অল্প মাথা দোলাচ্ছেন। পাশে কয়েকটা দৈনিক সংবাদপত্র। ইতস্তত ছড়িয়ে রয়েছে ওষুধ, জলের গ্লাস। তাঁর খেদ, "একটা টিভি থাকলে বেশ হত। কোথায় কী হচ্ছে, তার সব খবরাখবর পাওয়া যেত। কিন্তু এখানে তো টিভি পাওয়া যায় না।"
তিনি আরাবুল ইসলাম। পুলিশ হাজতে বুকে ব্যথা হয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন। তাই বাঙুর হাসপাতাল ঘুরিয়ে তাঁকে নিয়ে আসা হয়েছে এসএসকেএমে। শুক্রবার গভীর রাত থেকে সেখানকার আইসিসিইউ-এর সাত নম্বরশয্যায় তিনি ভর্তি। আরাবুলের ঠিক কী হয়েছে, তিনি কেমন আছেন তা সরেজমিনে জানতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম রবিবার বিকেলে। পৌঁছলাম আরাবুলের শয্যার পাশে। কোনও ভাবে তাঁর ধারণা হয়েছিল এই প্রতিবেদক বোধ হয় স্বাস্থ্য দফতর থেকে আসা কোনও কর্মী (তাঁর সেই ভুল আমরা ভাঙাইনি)।
ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিওভাস্কুলার সায়েন্সেস-এর এক তলায় আইসিসিইউ। বিকেল সাড়ে চারটে। বাড়ির মূল গেট দিয়ে ঢোকার পরেই চোখে পড়ল, কয়েকটা চেয়ারে হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে গল্প জমিয়েছেন আরাবুলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীরা। পুলিশ হেফাজতে থাকা রোগীর কাছে কে, কখন আসছেন তা নিয়ে সতর্ক মনে হল না কাউকেই। ওয়ার্ডে ঢোকার পরে আরাবুল ইসলাম কোন শয্যায় আছেন, তা জানতে চাইলে কর্তব্যরত চতুর্থ শ্রেণির কর্মী অদূরে একটি শয্যার দিকে আঙুল দেখালেন। ভিজিটিং আওয়ারে অন্য রোগীরা কেউ জেগে, কেউ শয্যায় বসে বাড়ির লোকের অপেক্ষা করছেন। শুধু সেই শয্যাটি ব্যতিক্রম! চারপাশে খয়েরি পর্দা দিয়ে ঘেরা। বাইরে থেকে দেখার উপায় নেই। পর্দা সরাতেই নজরে পড়ল আধশোয়া হয়ে গান শুনছেন আরাবুল। 
বিরক্ত এবং জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন ভাঙড়ের তাজা (এক মন্ত্রীর দেওয়া বিশেষণ) তৃণমূল নেতা। 
প্রশ্ন করি, কেমন আছেন? খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো হচ্ছে? তিক্ত মুখে উত্তর দিলেন, "কেন? কী দরকার?" তার পর বলতে থাকেন, "খাওয়াদাওয়ার ঠিকঠাক ব্যবস্থা তো বাড়িতে থাকে। এখানে একেবারেই হচ্ছে না। বাড়িতে যা যা দেয় বলেছিলাম, সে সব দেয়নি। ডাক্তারদের বলব, এ ভাবে কি চলতে পারে?" হাসপাতাল সূত্রে খবর, এ দিন দুপুরেও তাঁকে সব্জি আর চিকেন স্টু দেওয়া হয়েছিল। তিনি খুশি মনে খাননি। 
আর শরীর? আরাবুল বললেন, "ভাল নয়, বুকে ব্যথাটা মাঝেমধ্যেই হচ্ছে।" 
যাঁর অধীনে এই তৃণমূল নেতার চিকিৎসা চলছে, সেই সইদুল ইসলাম কিন্তু রোগীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে কোনও কথা বলতেই রাজি নন। এ দিন সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "রোগীর শারীরিক অবস্থা আমার কাছে কেন জানতে চাইছেন? যা বলার কর্তৃপক্ষ বলবেন।"
কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ এসএসকেএমের অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র এবং সুপার তমালকান্তি ঘোষ একই সুরে জানান, যা বলার তা ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসকই বলতে পারেন। আরাবুলের অবস্থা কি আইসিসিইউ-তে থাকার মতো? প্রদীপবাবু বলেন, "আমাদের কিছু বলার নেই। চিকিৎসক বলেছেন আইসিসিইউ দরকার। তাই আইসিসিইউ-এ আছেন। সোমবার বোর্ড বসছে। তখন বোর্ড যা বলবে, তাই করব।" একই বক্তব্য সুপারেরও। 
সে কথা উল্লেখ করে চিকিৎসক সইদুল ইসলামের মতামত জানতে চাওয়ায় এ বার তিনি কিছুটা উত্তেজিত। তাঁর জবাব, "এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজি নই। বাধ্যও নই।" আরাবুলের মতো উপসর্গ নিয়ে যে কেউ এলে তাঁদেরও কি আইসিসিইউ-তেই ভর্তি করবেন তাঁরা? অধিকর্তা ও সুপার দুজনেই তো বলছেন আপনার কথাতেই আরাবুল আইসিসিইউ-তে রয়েছেন। সইদুল ইসলামের জবাব, "অদ্ভুত ব্যাপার! এটা ওঁরা কী ভাবে বলছেন সেটাই বুঝতে পারছি না। সবাই আমার উপরে সব কিছু চাপাচ্ছে। আমি কোনও কথা বলব না।" 
শনিবার আরাবুলকে দেখতে আইসিসিইউ-এর ভিতরে ঢুকেছিলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, রাজারহাট-নিউটাউনের বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত, দক্ষিণ ২৪ পরগনা তৃণমূলের ক্যানিং ২-এর সভাপতি সওকত মোল্লা-সহ তৃণমূলের বেশ কয়েক জন নেতা-কর্মী। রবিবার সকালেও কয়েক জন নেতাকে ওয়ার্ডে দেখা গিয়েছে। এ দিন বিছানায় হাঁটু মুড়ে বসে স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে আরাবুল বহু ক্ষণ গল্প করেছেন বলেও হাসপাতাল সূত্রে খবর। অথচ পুলিশ হেফাজতে থাকা এই রোগীকে পুলিশ এখনও জেরা করে উঠতে পারেনি।
যে ওয়ার্ডে গুরুতর অসুস্থ রোগীরাই থাকেন, যে ওয়ার্ডকে সংক্রমণমুক্ত রাখার জন্য সব সময়ে সতর্ক থাকা জরুরি, সেখানে এত লোকজন এক সঙ্গে ঢুকে পড়েন কী ভাবে, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তার পরেও পরিস্থিতি যে বদলায়নি, তা এ দিন সহজে ওয়ার্ডে পৌঁছতে পারাতেই বোঝা গেল। ওয়ার্ডের কর্মীরা জানিয়েছেন, আরাবুলকে তাঁরা মোবাইল ফোনে কথাও বলতে দেখেছেন। কী ভাবে আইসিসিইউ-এ পুলিশ হেফাজতে থাকা রোগীর কাছে গান শোনার যন্ত্র বা মোবাইল ফোন পৌঁছে যাচ্ছে? সুপারের বক্তব্য, "এটা দেখা তো পুলিশের কাজ। আমরা বারবার পুলিশকে এটা জানিয়েছি। আসলে বোঝেনই তো, কোনও কোনও রোগী কথা শোনেন না। আমরা কত দিকে খেয়াল রাখব?"
সুপার জানিয়েছেন, আরাবুলের অবস্থা স্থিতিশীল। রক্তে শর্করার পরিমাণ খানিকটা বেড়ে যাওয়ায় এ দিন ইনসুলিন দেওয়া হয়েছে। তবে রক্তচাপ স্বাভাবিক। সোমবার মেডিক্যাল বোর্ড তাঁকে পরীক্ষা করবে। তার পরেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত।
http://www.anandabazar.com/21cal1.html

তৃণমূলের শহীদ দিবসের অনুষ্ঠানে গিয়ে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করলেন মন্ত্রী বেচারাম মান্না। অশালীন মন্তব্য ঝরে পড়েছে সিপিআইএমের অন্য নেতৃত্বের উদ্দেশেও। বাদ যাননি প্রয়াত নেতাও। পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণা দাসেরবাঁধের অনুষ্ঠানে কৃষি প্রতিমন্ত্রীর মন্তব্য, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাইপো নন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে `কবির ভাইপো বলতে লজ্জা হয়` বলে মন্তব্য বেচারাম মান্নার।

মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সহ অন্য সিপিআইএম নেতাদের সম্পর্কে বেচারাম মান্নার এই মন্তব্য পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁসেরবাঁধের শহীদ সভায় দাঁড়িয়ে। প্রশ্ন উঠেছে, এ ধরনের কুরুচিকর মন্তব্য করার পর দল কী তাঁকে সতর্ক করবে? দুঃখপ্রকাশ করবেন বেচারাম মান্না? যেমনটা দেখা গিয়েছিল, সিপিআইএম নেতা আনিসুর রহমানের ক্ষেত্রে। মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে মন্তব্য করার পর দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন তিনি। দিল্লি গণধর্ষনকাণ্ড নিয়ে মন্তব্য করার পর ক্ষমা চেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি-পুত্র অভিজিত্ মুখার্জি। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, দুঃখপ্রকাশ করার কোনও সম্ভাবনা নেই বেচারাম মান্নার। কারণ, অতীতে তৃণমূল নেতাদের কেউই অশালীন মন্তব্য করার পর দুঃখপ্রকাশ করেননি।


ধনেখালিতে পুলিস লকআপে তৃণমূল কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায়  ডিজিকে রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দিল মানবাধিকার কমিশন। তিন সপ্তাহের মধ্যে গোটা ঘটনার রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনার তদন্তের জন্য আইজি পর্যায়ের অফিসার নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। 

লকআপে তৃণমূল কর্মীর মৃত্যুকে ঘিরে শনিবার সকাল থেকেই রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় হুগলির ধনেখালি। শুক্রবার রাতে তৃণমূল কর্মী কাজী নাসিরুদ্দিনকে থানায় নিয়ে যায় পুলিস। পরের দিন মৃত্যু হয় তাঁর। তৃণমূলের একাংশের দাবি পুলিসের অত্যাচারেই মৃত্যু হয়েছে নাসিরউদ্দীনের। এই ঘটনায় প্রকাশ্যে চলে আসে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বও। মৃতের পরিবার সদ্রাসরি অভিযোগ আনে স্থানীয় বিধায়ক অসীমা পাত্রের বিরুদ্ধে। থানায় অভিযোগও দায়ের করা হয়। 

আজ সেই ঘটনারই রিপোর্ট চেয়ে পাঠাল মানবাধিকার কমিশন।


ঋণের দায়ে কৃষকের আত্মহত্যা কিংবা বেতন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবহণকর্মীর আত্মহত্যার মতো ঘটনা এরাজ্যে নতুন নয়। এবার সেই তালিকায় যোগ হল বৃত্তিমূলক শাখার এক শিক্ষকের আত্মহত্যা। মাসের পর মাস বেতন না পেয়ে বাঁকুড়ার সিমলাপালের বাসিন্দা ওই শিক্ষক চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়েছিলেন। এর জেরে মানসিক অবসাদে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি মৃতের পরিবারের।    

সিমলাপাল থানার তিলাবনি গ্রামের বাসিন্দা তপন কুমার সত্‍পতির শিক্ষকতা জীবন দীর্ঘ সাত বছরের। স্থানীয় গড়রাইপুর বয়েজ হাইস্কুলে বৃত্তিমূলক শাখায় কম্পিউটার শিক্ষক ছিলেন তিনি। মাসিক বেতন ছিল ৭,৮৫০ টাকা। যদিও মাসের পর মাস এই প্রাপ্য টাকার কানাকড়িও পেতেন না বলে অভিযোগ। ২০১২ জুন মাসে শেষবার তপনবাবু বেতন পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবার। চরম আর্থিক সঙ্কটে ধুঁকছিল গোটা পরিবার। তাঁদের অভিযোগ, অভাবের তাড়নাই তপনবাবুকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিয়েছে।  
 
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কাউন্সিল বৃত্তিমুলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ- এর অধীনে বাঁকুড়া জেলায় প্রায় ২০০টি হাইস্কুলে বৃত্তিমূলক শাখায় শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। প্রতিমাসে তাঁদের বেতন দেওয়া সরকারি এই বিভাগেরই দায়িত্ব। অথচ কখনই নির্দিষ্ট সময়ে এই শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। বিষয়টি বারবার প্রশাসনকে জানানো হলেও কোনও ফল হচ্ছে না বলে অভিযোগ ক্ষুব্ধ শিক্ষকদের। এনিয়ে আগামী ২৪ জানুয়ারি কলেজ স্কোয়্যারে বিক্ষোভ-সমাবেশেরও ডাক দিয়েছেন তাঁরা। শীঘ্রই এই বেতন-সমস্যার সুরাহা না হলে আরও অনেক শিক্ষককেই তপনবাবুর পথ বেছে নিতে হবে বলে তাঁদের আশঙ্কা। 


সরকারি উদ্যোগে বিমানবন্দরের আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টাকে এবার দরাজ গলায় সার্টিফিকেট দিলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। রবিবার আধুনীকিকরণের পরে কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের উদ্বোধনে করেন রাষ্ট্রপতি। কলকাতা বিমানবন্দরের আধুনিকীকরণের দায়িত্ব কোনও বেসরকারি সংস্থা নয় সরকারি হাতেই দেওয়া হোক এই দাবিতে একসময়ে সরব হয়েছিল বামেরা।  রবিবার রাষ্ট্রপতি বলেন, "সরকারি হাতে কলকাতা বিমানবন্দরের আধুনীকিরণের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা তা পালন করে দেখিয়েছে।" 

কলকাতা বিমানবন্দরের আধুনীকিকরণের উদ্যোগ নেওয়ার সময়েই স্থির হচ্ছিল যে অন্যান্য বিমানবন্দরের মত এক্ষেত্রে দায়িত্ব দেওয়া হোক বেসরকারি সংস্থাকে। কিন্তু সেই সময়ে বাদ সাধে বামেরা। দাবি ওঠে বেসরকারি নয় সরকারি সংস্থাই পাক এই দায়িত্ব। শেষপর্যন্ত সরকারি সংস্থাকেই আধুনিকিকরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। রবিবার সেই অত্যাধিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ বিমানবন্দরের উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। সে দিন যাঁরা বেসরকারি সংস্থার হাতে দায়িত্ব দেওয়ার বিরুদ্ধে সরব হন তাঁদের অন্যতম সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরিও রবিবার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মঞ্চে বসার ডাক না পেলেও দর্শকাসনে বসে থাকা সীতারাম ইয়েচুরির সামনেই রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকারি সংস্থাকে দিয়ে আধুনীকিকররণের প্রচেষ্টা সফল হয়েছে।

মঞ্চে ডাক না পাওয়া নিয়ে মন্তব্য না করলেও উপস্থিত সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, "রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে, বামেদের দাবির যৌক্তিকতাই প্রমাণিত হয়েছে।"
 
শুধু সরকারি সংস্থাকে দিয়ে আধুনীকিকরণের সিদ্ধান্তের প্রশংসাই নয়। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেন, "সরকারের লুক-ইস্ট পলিসির ক্ষেত্রেও আগামী দিনে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমনবন্দর বড় ভূমিকা নিতে চলেছে।"


ওষুধ বিক্রেতাদের সমাবেশের জেরে, আজ রাজ্যের বেশিরভাগ ওষুধের দোকান বন্ধ রয়েছে।  রাজ্যে পিপিপি মডেলে জেনেরিক ওষুধের দোকান খোলার সরকারি সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনা সহ ৭ দফা দাবিকে সামনে রেখে আজ ধর্মতলায় সমাবেশের ডাক দিয়েছে  বেঙ্গল কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট  অ্যাসোসিয়েশন (বিসিডিএ)। সংগঠনের আওতায়  রয়েছে রাজ্যের পঁয়তিরিশ হাজারের বেশি ওষুধের দোকান। এর মধ্যে আপত্কালীন পরিস্থিতির জন্য কিছু দোকান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিডিএ। 

কলকাতা ও শহরতলির বিভিন্ন হাসপাতাল চত্বরে ৭০টি দোকান খোলা রেখেছে বিসিডিএ। এর মধ্যে এসএসকেএম হাসপাতালের সামনে ৬টি, এআরএসের সামনে ৩টি ও মেডিক্যাল কলেজ,  বাঙ্গুর ও আর জি কর হাসপাতাল সংলগ্ন ২টি করে দোকান খোলা রাখা হয়েছে। শহর ও শহরতলি বেশিরভাগ দোকান বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে কন্ট্রোল রুম খুলছে বিসিডিএ। কন্ট্রোল রুমের ফোন নম্বর ২২৪২ ৮৯৪৪ এবং ২২১০ ৪৫৩৭।


মালদহে হবে দেশের প্রথম মহিলা আদালত



মালদহ: দেশের প্রথম মহিলা আদালত পেতে চলেছে মালদহ৷ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনে আদালতটি গঠনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র৷ মহিলাদের উপর নানা অপরাধের বিচার করবে ওই আদালত৷ বিচারকের দায়িত্বেও থাকবেন মহিলারা৷ মামলায় পুরুষ আইনজীবীরা অংশ নিতে পারলেও, সরকারি আইনজীবী নিয়োগ করা হবে মহিলাদের মধ্যে থেকেই৷ এর পর দেশের দ্বিতীয় মহিলা আদালত হবে দেশের রাজধানী দিল্লিতে৷ 

দিল্লিতে বাসে তুলে এক যুবতীকে ধর্ষণ ও তাঁর উপর নৃশংস অত্যাচারের জেরে তরুণীটির মৃত্যুর জেরে উত্তাল এখন সারা দেশ৷ মহিলা সম্পর্কিত অপরাধে আরও কড়া হওয়া এবং ওই বিষয়ক মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি উঠেছে৷ ইতিমধ্যে ওই ধরনের মামলার বিচার ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই মহিলা আদালত গঠনের ভাবনা এসেছে বলে মালদহ জেলা আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে৷ 

মালদহ জেলা আদালতের নতুন ভবনে ২৪ জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু করবে ওই মহিলা আদালত৷ তার আগের দিন মালদহে আসবেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি৷ তাঁর সঙ্গে শঙ্কর বন্দোপাধ্যায়, জয়মাল্য বাগচির মতো হাইকোর্টের কয়েক জন বিচারপতি থাকবেন৷ তাঁরা সেদিন স্থানীয় টাউন হলে মহিলাদের উপর অপরাধ ও তার বিচার বিষয়ে একটি আলোচনা সভায় যোগ দেবেন৷ ওই মঞ্চ থেকেই প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র মহিলা আদালত গঠনের ঘোষণা করবেন মালদহ বার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে রবিবার জানানো হয়েছে৷ 

রাজ্য বার কাউন্সিলের সদস্য অসিতবরণ বসু জানিয়েছেন, আপাতত দু'জন বিচারক থাকবেন ওই আদালতে৷ তাঁদের এক জন অতিরিক্ত দায়রা বিচারক ও অপর জন বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট৷ ধর্ষণ, মহিলাদের খুন বা পণ সংক্রান্ত বিরোধের বিচার করার দায়িত্ব থাকবে প্রথম জনের এক্তিয়ারে৷ আর দ্বিতীয় জন পারিবারিক হিংসা-সহ তুলনামূলক ভাবে লঘু অপরাধগুলির বিচার করবেন৷ ইতিমধ্যে ওই দু'টি পদে নিয়োগের জন্য বিচারক বাছাইয়ের কাজও হয়ে গিয়েছে৷ অসিতবাবু বলেন, 'মহিলা আদালতের প্রথম অতিরিক্ত দায়রা বিচারক হচ্ছেন মীনা সরকার৷ আর বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে কেয়া সরকারকে৷ দু'জনই বর্তমানে মালদহ জেলা আদালতে কর্মরত আছেন৷' ওই আদালতে মহিলা সরকারী আইনজীবীদের নাম এখনও স্থির হয়নি বলে জানা গিয়েছে৷ আদালতের কর্মচারীও নিয়োগ করা হবে মহিলাদের মধ্যে থেকেই৷ স্বভাবতই এই প্রান্তিতে খুশি মালদহের মানুষ৷ জনপ্রতিনিধিরাও এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ 

রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, 'এই খবর নিঃসন্দেহে মালদহের জন্য বড় ঘটনা৷ এই জেলায় মেয়েদের উপর নানা নির্যাতনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে৷ দীর্ঘসূত্রিতায় বিচার পেতে মহিলাদের সমস্যা হয়৷ অনেক সময় পার পেয়ে যায় অপরাধীরা৷ এবার থেকে আশা করছি, সেই সমস্যা হবে না৷ মেয়েরা অনেক নিশ্চিন্তে থাকবেন৷ যারা মহিলাদের উপর অত্যাচার করেন, তাঁরাও সতর্ক হবেন৷' 

নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন৷ তিনি বলেছেন, 'এই রাজ্যে মহিলাদের জন্য আলাদা আদালত গড়ার বিশেষ উদ্যোগ প্রথম আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় নিয়েছিলেন৷ তার ফল হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় মহিলা আদালত চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ আমি খুশি যে রাজ্য তো বটেই, গোটা দেশের মধ্যে প্রথম মহিলা আদালত হচ্ছে আমাদের জেলা মালদহে৷' 

ফের পঞ্জাব, এবার গণধর্ষণের শিকার নার্স
ভাটিন্ডা (পঞ্জাব): পাটিয়ালা গণধর্ষণ এবং আত্মহত্যার ঘটনা এখনও টাটকা। তার মধ্যেই ফের গণধর্ষণ পঞ্জাবে। চণ্ডীগড়ে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন বছর ছাব্বিশের এক নার্স।

রবিবার সন্ধেয় ওই নার্সকে ভাটিন্ডা-ডাবাওয়ালি রোডের উপর ফেলে দিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। এর দু'দিন আগে থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন। পুলিশের সন্দেহ, তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ভাটিন্ডা সিভিল হাসপাতালে এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ওই নার্স।

এখনও পর্যন্ত পুলিশ জানতে পেরেছে, চণ্ডীগড়ের সেক্টর ৩৪ হাসপাতালে চাকরির সুযোগ রয়েছে বলে বন্ধুর থেকে খবর পেয়েছিলেন নির্যাতিতা। শুক্রবার সকালে বাসে করে সেক্টর ৪৩-এ নামার পর এক অপরিচিত ব্যক্তি তাঁর কাছে একটি ঠিকানা জানতে চান। কিন্তু একটি শব্দও উচ্চারণ করার আগে তাঁকে টেনে-হিঁচড়ে একটি গাড়িতে তোলা হয়। গাড়ির ভিতর এক মহিলা ও আর এক পুরুষ বসেছিল। এর পর তিন জন মিলে তাঁকে জোর করে মাদক ইঞ্জেকশন দেয়।

জ্ঞান ফেরার পর তিনি দেখেন, একটি ঘরে চার জন মিলে তাঁর ছবি তুলছে। চিত্‍কার করতেই ফের দেওয়া হয় মাদকের ইঞ্জেকশন। নির্যাতিতার অভিযোগ, তাঁকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। এর পর রবিবার সকালে তাঁকে রাস্তায় ফেলে যায় দুষ্কৃতীরা। ডাক্তারি পরীক্ষায় নিশ্চিত করা হয়েছে যে, ওই মহিলা গণধর্ষণের শিকার।


চণ্ডীগড়ঃ ফের গণধর্ষণের অভিযোগ৷ দিল্লির পর এ বার পঞ্জাব৷ চণ্ডীগড়ে ধর্ষণের অভিযোগ করলেন এক তরুণী৷ তাঁর অভিযোগ, গত শুক্রবার চণ্ডীগড় শহরে ইন্টারভিউ দিতে যান তিনি৷  তাঁকে লিফট দেওয়ার নাম করে গাড়িতে তোলেন দুই অচেনা যুবক৷ সেসময় গাড়িতে ছিলেন অপর এক তরুণীও৷ তারপর তাঁকে জোর করে ইঞ্জেকশন দিয়ে বেহুঁশ করা হয় বলে অভিযোগ৷ এরপর দু'দিন অজ্ঞাত কোনও জায়গায় তাঁকে রেখে ধর্ষণ করা হয় বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি৷ রবিবার তাঁকে আবার রাস্তায় ফেলে দিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা৷ পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের খোঁজে পুলিশি তল্লাশি শুরু হয়েছে৷ 

http://abpananda.newsbullet.in/national/60-more/32724-2013-01-21-06-16-19


২৪ জানুয়ারি জাতীয় শিশু কন্যা দিবস। কিন্তু তার আগে দেশে মেয়েদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সমীক্ষা যথেষ্ট উদ্বেগ তৈরি করেছে। কন্যাভ্রূণ হত্যার মত ভয়ঙ্কর সমস্যার বাড়বাড়ন্ত এবং অপুষ্টি ও নারী শিক্ষার হতাশাজনক ছবি ক্রমেই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

আজকের নারী আর চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ নয়। শিক্ষা, পেশাগত দক্ষতা, কোনও ক্ষেত্রেই পিছিয়ে নেই আজকের অর্ধেক আকাশ। কিন্তু প্রদীপের নীচে পিলসুজের মতই আজকের নারীর এই এগিয়ে চলার আড়ালে রয়েছে অন্য এক উদ্বেগ। দেশে যখন সমারোহে পালিত হচ্ছে জাতীয় শিশু কন্যা দিবস। তখন দেশেরই বিভিন্ন প্রান্তে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে কন্যা ভ্রূণহত্যার সংখ্যা। গ্রাম কিংবা শহরের গন্ডি পেরিয়ে সারা দেশে ব্যাধির মত ছড়াচ্ছে এই সমস্যা। আইন প্রণয়ন হলেও তার বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে। জি রিসার্চ গ্রুপের সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০০৯ জাতীয় শিশু কন্যা দিবস থেকে সারা দেশে মোট ৪৮১টি কন্যা ভ্রুণ হত্যার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কিন্তু চার্জ গঠন হয়েছে মাত্র ২৭টি মামলার। ২০১১-১২ সালে ২৭৯টি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য বেআইনি ডায়গনস্টিক সেন্টার। যেগুলিতে প্রতিনিয়ত আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলছে গর্ভপাত। 

২০১২ সালের অক্টোবরে মহারাষ্ট্রের থানেতে অভিযান চালানোর পর একশটি বেআইনি গর্ভপাত কেন্দ্র এবং ৩১৯টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিল করার নির্দেশ দেন জেলাশাসক। রয়েছে অন্য সমস্যাও। পরিসংখ্যান বলছে সমগ্র দেশে শিশুপুত্রের তুলনায় কমছে শিশুকন্যার সংখ্যা। সবচেয়ে উদ্বেগজনক ছবি হরিয়ানার ঝাজ্জর এবং মহেন্দ্রগড় জেলার। 
 

শিশুকন্যাকে পৃথিবীর আলো দেখানোর মতোই তাকে স্কুলে পাঠানোর পরিসংখ্যানের ছবিটাও উদ্বেগজনক। জি রিসার্চ গ্রুপের সমীক্ষা অনুযায়ী, একটি ৫ থেকে ২৯ বছরের ছাত্রের ক্ষেত্রে শিক্ষাখাতে বছরে যা ব্যয় হয় ছাত্রীর ক্ষেত্রে তা অনেক কম হয়ে থাকে। বিহার এবং রাজস্থানে মেয়েদের স্বাক্ষরতার হার সবচেয়ে খারাপ।
 
এসবের সঙ্গে রয়েছে অপুষ্টিজনিত সমস্যা। সমীক্ষার রিপোর্ট অনুসারে ২০১১ সালে ৪১.৪ শতাংশ শিশুকন্যা অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগেছে। ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেল্থ সার্ভে অনুসারে মেয়েদের মধ্যে বাড়ছে রক্তাল্পতার সমস্যা। অসম, ঝাড়খন্ড ৬৯.৫ শতাংশ নারী রক্তাল্পতার শিকার। তারপরেই রয়েছে বিহার এবং ত্রিপুরা। যথাক্রমে ৬৭.৪ এবং ৬৫.১ শতাংশ।

তবে এইসব সমস্যা সত্ত্বেও নারী শক্তি জাগরনে কিশোরী শক্তি প্রকল্প ও রাজীব গান্ধী প্রকল্পের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। নারীর বিকাশ, পুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষার উন্নয়নের প্রসারে কাযকর ভূমিকা নিয়েছে এই দুটি প্রকল্প। ২০০৮-০৯ কিশোরী শক্তি প্রকল্পে ৫২.২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। ২০১২-১৩ সেই বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯৬.৭৩ কোটি টাকা। 


নারী নিগ্রহে 'শীর্ষে' থাকার জের
কেন্দ্রীয় ব্যুরোয় অপরাধের তথ্য দিচ্ছে না রাজ্য
নারী নিগ্রহের ঘটনার নিরিখে ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের স্থান দেশে সবার উপরে। গত মে মাসে কেন্দ্রীয় এই পরিসংখ্যান প্রকাশ পাওয়ার পরে রাজ্যের অপরাধ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (এনসিআরবি)-য় পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে মহাকরণ। ফলে দেশের অপরাধ-তথ্যপঞ্জির পরবর্তী সংস্করণ (যা ২০১৩-য় প্রকাশের কথা) কী ভাবে নির্দিষ্ট সময়ে বার করা যাবে, সে সম্পর্কে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে।
এনসিআরবি সাধারণত মে-জুন মাসে জাতীয় অপরাধ-তথ্যপঞ্জি প্রকাশ করে। ব্যুরোর এক কর্তা বলেন, "প্রতি মাসের শেষে রাজ্যগুলো জেলাওয়াড়ি তথ্য পাঠায়। জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে আসে গোটা বছরের সংগৃহীত তথ্য। কিন্তু গত জুনের পরে পশ্চিমবঙ্গ মাসিক রিপোর্ট পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে।" বলেন ব্যুরোর এক কর্তা। এতে যে পরবর্তী প্রকাশনায় সমস্যা হবে, তা জানিয়ে এনসিআরবি-র ডিজি মাস দু'য়েক আগে রাজ্যকে চিঠি দিয়েছেন। সাড়া না-মেলায় ফের চিঠি দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তথ্য পাঠানো বন্ধ হল কেন?
মহাকরণের পুলিশ-কর্তারা মুখ খোলেননি। তবে প্রশাসনিক সূত্রের খবর: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সরকারের প্রথম বছরেই পশ্চিমবঙ্গের এই 'রেকর্ড' জেনে ক্ষুব্ধ। তিনি মনে করেন, এ ভাবে শুধু পরিসংখ্যান দেওয়ায় রাজ্যের 'মর্যাদাহানি' হয়েছে। পুলিশের কর্তাদের ডেকে সে কথা জানিয়েও দেন তিনি। আর তার পরেই মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের নির্দেশে রাজ্যের অপরাধ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য দিল্লিতে পাঠানো বন্ধ করে দেয় পুলিশ। পরিসংখ্যানে আপত্তিটা কী?
প্রশাসনের এক মহলের যুক্তি: মহিলাদের উপরে অত্যাচার বেড়েছে কি না, নিছক পরিসংখ্যান তার সূচক হতে পারে না। এই মহলের দাবি: অন্য রাজ্যে নিগৃহীতা মহিলাদের অনেকে ভয়ে ও সামাজিক বাধায় থানায় যেতে সাহস পান না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তা পারেন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোও অনেক বেশি সক্রিয়। তাই পশ্চিমবঙ্গে বেশি ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।
এবং এই যুক্তির ভিত্তিতে পরিসংখ্যানের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ঘটনার আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিও তুলে ধরার দাবি জানিয়ে এনসিআরবি-কে চিঠি লিখেছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়। স্বরাষ্ট্র-সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ও একই সুরে চিঠি লেখেন বলে মহাকরণ সূত্রের খবর। 
তবে রাজ্যের কথা এনসিআরবি মানেনি। পাল্টা চিঠিতে ব্যুরো বলেছে, তাদের তথ্যপঞ্জিতে শুধু পরিসংখ্যানই থাকবে। পশ্চিমবঙ্গ চাইলে নিজের মতো করে অপরাধ-পুস্তিকা তৈরি করতে পারে। রাজ্য তাতে রাজি হয়ে যায়। অপরাধ সংক্রান্ত তথ্য পেশের পাশাপাশি ঘটনার প্রেক্ষিত ও তদন্তের সাফল্যের খতিয়ান বিস্তারিত ভাবে জানানোর জন্য প্রতিটি জেলার পুলিশকে নির্দেশ পাঠায় মহাকরণ। যদিও সে কাজও খুব একটা এগোয়নি। 
পাশাপাশি কেন্দ্রীয় অপরাধ-তথ্যপঞ্জি আরও মজবুত করার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। "প্রকাশনার ঢং না-বদলালেও অপরাধের নানা ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান কী ভাবে আরও সুনির্দিষ্ট চেহারায় পেশ করা যায়, তা জানতে সব রাজ্যের মত চাওয়া হচ্ছে।" বলেন এনসিআরবি-র এক কর্তা। যার অঙ্গ হিসেবে গত ১০ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গ-উত্তরপ্রদেশ-দিল্লি-পঞ্জাব-মহারাষ্ট্র-রাজস্থানের পুলিশ-কর্তাদের ডেকে পাঠিয়েছিল ব্যুরো। বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের তরফে বেশ কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কী রকম?
যেমন, নারী নিগ্রহের অভিযোগ সরাসরি থানায় অথবা কোর্ট মারফত লিপিবদ্ধ হয়ে থাকলে তথ্যপঞ্জিতে আলাদা ভাবে উল্লেখ করা হোক। আবার বর্তমান তথ্যপঞ্জিতে 'অত্যাচারিতাদের' নাবালিকা ও সাবালিকা হিসেবে ভাগ করা হয়। রাজ্যের প্রস্তাব, 'নাবালিকা'র মধ্যেই আর একটা অতিরিক্ত স্তর (০-১২ বছর এবং ১২-১৮ বছর) থাকা উচিত, যাতে কোন বয়সীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, তার একটা ধারণা পাওয়া যায়। উপরন্তু মাদক আটক কিংবা অস্ত্র-বিস্ফোরক উদ্ধারের মতো যে সব কৃতিত্বের কাজ পুলিশ করে থাকে, জাতীয় অপরাধ-তথ্যপঞ্জিতে সে সবেরও উল্লেখ থাকা জরুরি বলে রাজ্য মনে করছে।
http://www.anandabazar.com/21raj2.html

লক্ষ্য, 'উন্নত মানুষ গড়ার' কেন্দ্র
মিশন চাইলে ছবি এঁকে টাকা তুলতে রাজি মমতা
ঞ্চায়েত ভোটে দলের জন্য টাকা তুলতে তাঁর নিজের আঁকা ছবির প্রদর্শনী শুরু করে দিয়েছেন। তা এখনও চলছে। এ বার রামকৃষ্ণ মিশনের মাধ্যমে 'উন্নত মানুষ গড়ার কেন্দ্র' নির্মাণে একই ভাবে ছবি এঁকে টাকা তুলে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 
রবিবার বেলুড় মঠে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মের সার্ধ-শতবর্ষ উদ্যাপনের সমাপ্তি-অনুষ্ঠানে সন্ন্যাসীদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান, "আপনারা উন্নত মানুষ গড়ার একটা প্রতিষ্ঠান করুন। এর জন্য যা বলবেন, করব। দরকার হলে, ৩৬৫ দিন একটা করে ছবি এঁকে দেব।"
স্বামী আত্মস্থানন্দকে প্রণাম মুখ্যমন্ত্রীর। রবিবার। ছবি: দেবাশিস রায়
প্রচারমাধ্যম তথা সমালোচকদের বিরুদ্ধে তাঁর মতামত প্রকাশের জন্যও স্বামী বিবেকানন্দকেই 'ঢাল' করেন মমতা। তিনি বলেন, "আমি একটা কথা বলার জন্য অনেকে অনেক কথা বলেছেন। হাতি চলে বাজার/ কুত্তা ভোঁকে হাজার...এটা আমি স্বামীজির বইতেই পড়েছি!" কয়েক দিন আগে উত্তর কলকাতায় স্বামীজির পৈতৃকবাড়ির অনুষ্ঠানে বিবেকানন্দকেও মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে সংবাদমাধ্যমের সমালোচনার মুখে পড়তে হয় বলে খেদোক্তি করেন মমতা। এবং প্রকারান্তরে স্বামীজির সঙ্গে নিজের তুলনা টেনে বলেন, "এখন ভাল কাজেরও সমালোচনা হচ্ছে। কেউ কিছু করছে, তাকে টেনে নামাও।" একই সুরে এ দিনও বলেছেন, "আমরা বড্ড হিংসুটে হয়ে যাচ্ছি!" উন্নত মানুষ গড়ার প্রতিষ্ঠান গড়তে মঠের সন্ন্যাসীদের আহ্বান জানিয়েই চারপাশের মানুষের হিংসা নিয়ে এই আক্ষেপ মুখ্যমন্ত্রীর। 
এ দিন সন্ধ্যায় বিমানবন্দরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে অনুষ্ঠান থাকার দরুণ বেলুড়ে কিছুটা তাড়া ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। মিশন কর্তৃপক্ষও দ্রুত অনুষ্ঠান শেষ করতে তৎপর হন। কিন্তু বক্তৃতার সময়ে আবেগতাড়িত হয়ে ওঠেন মমতা। "রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের সাবজেক্ট মহামানব-সাগর! অল্প কথায় স্বামীজিকে নিয়ে বলা যায় না!" তিনি এ দিনও বলেন, সমালোচকদের তিরে স্বামীজির বিদ্ধ হওয়ার কথা। "দুঃখ পেলেও স্বামীজি বলতেন, যে যা ইচ্ছে বলে যাক! শুধু একটু মুখটা বন্ধ রাখ!" স্বামীজির আদর্শ-মাফিক 'রাফ অ্যান্ড টাফ' হওয়ার কথাও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার কথায়, "স্বামীজি বলেছেন, তোমায় আক্রমণ করলে, তুমিও থাপ্পড় মারবে। আবার ভালবাসবে! একই সঙ্গে রাফ অ্যান্ড টাফ্, পদ্মের মত কোমল, বাঘের মতো শক্তিশালী হতে হবে।" 
আট খণ্ডের একটি বই ও স্বামীজির শিক্ষা-সংক্রান্ত দু'টি ডিভিডি-সঙ্কলন এ দিন প্রকাশ করেন মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী আত্মস্থানন্দ। ১৫ হাজার দর্শক এসেছিলেন। মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দ বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী সাংস্কৃতিক বিপ্লব আনার চেষ্টা করছেন। উনি স্বামীজির জন্মদিনে অত বড় অনুষ্ঠান করবেন জানলে, আমরা হয়তো এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করতাম না।"
http://www.anandabazar.com/21raj3.html

মামলার পাহাড় নিয়ে উদ্বেগ
সুবিচারে বিলম্ব মানেই বিচার না-পাওয়া: প্রণব
লকাতা হাইকোর্টে বিচারপতির বহু পদ শূন্য পড়ে থাকায় এবং বিভিন্ন আদালতে মামলার পাহাড় জমে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। এর ফলে দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে না, মামলার খরচ ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে এবং বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করা যাচ্ছে না বলে মনে করেন তিনি। রাষ্ট্রপতির কথায়, "দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি হওয়া জরুরি। কারণ, সুবিচার পেতে বিলম্ব হওয়ার অর্থই হল সুবিচার না-পাওয়া।"
রবিবার দুপুরে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কলকাতা হাইকোর্টের সার্ধশতবর্ষ পূর্তির সমাপ্তি অনুষ্ঠানে যোগ দেন রাষ্ট্রপতি। সেখানেই জানান, বিচারক ও বিচারপতির পদ খালি পড়ে থাকা এবং মামলার পর মামলা 
জমে যাওয়াটা শুধু কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গের সমস্যা নয়। সামগ্রিক ভাবে ভারতীয় বিচার ব্যবস্থাতেই এই সমস্যা আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। প্রণববাবুর মতে, "ভারতের বিচার ব্যবস্থা এই একটি ক্ষেত্রে পিছিয়ে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ করা যাচ্ছে না। সুবিচার পেতে যাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন, মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি না-হওয়ায় সুবিচার পাওয়াটা তাঁদের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে।"
বিচারকর্তার অভাবে কী ভাবে মামলা বিলম্বিত হচ্ছে, তা জানাতে গিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের কথাই টেনে আনেন রাষ্ট্রপতি। পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি জানান, হাইকোর্টে ৫৮টি বিচারপতি-পদ রয়েছে। কিন্তু আছেন ৪১ জন বিচারপতি। ২০১১-র ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হাইকোর্টে তিন লক্ষ ৪৭ হাজার মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। এর মধ্যে দেওয়ানি মামলা তিন লক্ষেরও বেশি। কলকাতা হাইকোর্টের অধীন আদালতগুলিতে প্রায় ২৬ লক্ষ মামলা ঝুলে রয়েছে, যার মধ্যে ২১ লক্ষেরও বেশি ফৌজদারি মামলা।
স্বাগত: আমতলার বিদ্যানগর কলেজে টিচার-ইন-চার্জ থাকার সময় তাঁর দোকান থেকেই
চা খেতেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। রাষ্ট্রপতির কনভয় দেখে অভিবাদন সেই বিমল জানার। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র
এর প্রতিকারে আদালতগুলিকে শক্তিশালী করার কথা বলেন রাষ্ট্রপতি। তার জন্য আদালতগুলির যে অতিরিক্ত সাহায্যের প্রয়োজন, সেই প্রসঙ্গও তোলেন। আদালতের খালি পদ দ্রুত পূরণ করা দরকার বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, "বিচারপতি মনোনয়ন এবং তাঁদের নিয়োগের গোটা প্রক্রিয়াটি যাতে সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে এবং সুপ্রতিষ্ঠিত ও স্বচ্ছ নীতির ভিত্তিতে করা হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।"
মামলার বোঝা কমাতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার দু'পক্ষই কলকাতা হাইকোর্টকে সাহায্য করবে বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, "আমি জানি, এই কাজে প্রয়োজনীয় অর্থ পেতে যাতে সমস্যা না-হয়, কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়েই সেটা নিশ্চিত করবে। বিশেষ করে এটা যে-হেতু নাগরিকদের সুবিচার দেওয়ার বিষয়, তাই কেন্দ্র ও রাজ্য দু'পক্ষই সাহায্য করবে বলে আমার বিশ্বাস।"
এ দিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন, বার লাইব্রেরি ক্লাব এবং ইনকর্পোরেটেড ল সোসাইটি। মঞ্চে ছিলেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আলতামাস কবীর, হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র, অ্যাডভোকেট জেনারেল অনিন্দ্য মিত্র, রাজ্যের আইন ও বিচার প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য প্রমুখ।
নেতাজি ইন্ডোরের পরে ন্যাশনাল টেস্ট হাউসের শতবর্ষ পূর্তির অনুষ্ঠানে টাউন হলে যান রাষ্ট্রপতি। সেখানে তিনি বলেন, "আমাদের দেশে উৎপাদিত সামগ্রীর মান উন্নত করা দরকার, যাতে সেগুলি আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় পাল্লা দিতে পারে।" দুপুরের কর্মসূচির আগে প্রণববাবু গিয়েছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলায় বিদ্যানগর কলেজে। সেখানে তিনি এক সময় শিক্ষকতা করেছেন। এক সময়ের কর্মক্ষেত্রে গিয়ে শিক্ষক-জীবনের স্মৃতিচারণায় ডুবে যান রাষ্ট্রপতি।
http://www.anandabazar.com/21cal2.html


সাঁওতালি মাধ্যমের স্কুলগুলিকে বঞ্চিত করছে রাজ্য সরকার। এই অভিযোগ তুলে এবার পথে নামতে চলেছে বাঁকুড়ার সাঁওতাল ভাষাভাষী ২১টি  সংগঠন। এক যোগে আজ বাঁকুড়ার বিভিন্ন জায়গায় প্রতীকী পথ অবরোধ ডাক দিয়েছে তারা। ২৪ জানুয়ারি অর্থাত্‍ বৃহস্পতিবার জেলাজুড়ে পথ অবরোধের সামিল হচ্ছে ওই ২১টি সংগঠন। 


লাগাতার আন্দোলনের জেরে ২০০৩ সালে সাঁওতালি ভাষা সংবিধানের অষ্টম তফসিলে অন্তর্ভূক্ত হয়। ২০০৮ সালে জঙ্গলমহলের বেশ কয়েকটি প্রাথমিক স্কুলে সাঁওতালি মাধ্যমে পঠনপাঠনের ব্যবস্থা করে তত্কালীন বামফ্রন্ট সরকার। প্রাথমিক স্তর পেরিয়ে গত বছর পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয় প্রথম ব্যাচ। কিন্তু রাজ্য সরকারের তরফে হাইস্কুলগুলিতে পরিকাঠামো না তৈরি হওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। গত বছর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনে নামে বাঁকুড়ার আদিবাসী সংগঠনগুলি। শেষ পর্যন্ত বাঁকু়ড়ার ১৪টি হাইস্কুলে সাঁওতালি মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি করা হয়। কিন্তু এ বছর পর্যন্ত ওই স্কুলগুলিতে সাঁওতালি ভাষার শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। এমনকী ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্যপুস্তকও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। ব্যবস্থা হয়নি সাঁওতালি মাধ্যমে পড়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য হোস্টেলেরও।
 
 
আন্দোলনে সামিল সংগঠনগুলির অভিযোগ, রাজ্য সরকারের শিক্ষা দফতরের ঔদাসীন্যের জন্যই হাজার হাজার সাঁওতালি মাধ্যমের ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে সাঁওতালি শিক্ষার অধিকার মঞ্চ গড়ে আন্দোলন নামতে চলেছে সংগঠনগুলি। 


ছাতনাতলায় গুলি করে খুনে অভিযোগ দায়ের হল পাত্রী ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে। এবার প্রতারণা ও খুনের অভিযোগ দায়ের করলেন হালিশহরের ওই মর্মান্তিক ঘটনায় মূল অভিযুক্ত রাজীব বসুর পরিবার। পাত্রপক্ষের তরফেও রবিবার সরকার পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। 

শনিবার রাতে হালিশহরে বিয়ের আসরে ঢুকে পাত্র শৌভিক দেকে গুলি করে খুন করা হয়। ঘটনায় মূল অভিযুক্ত রাজীব  বসুও জনতার মারে মারা যান। ছেলের মৃত্যুর জন্য সুমিতা আর তার পরিবারের বিরুদ্ধেই অভিযোগ দায়ের করেছে অভিযুক্ত রাজীবের পরিবার। 
  
কাঁচরাপাড়া রেল কলোনির  বাবু ব্লকের বাসিন্দা বসু পরিবারের দাবি সুমিতা ও তাঁর পরিবার তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। মর্মান্তিক ঘটনার পরে সুমিতা বারবার রাজীবের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে দাবি করেছিলেন, অনেক বছর ধরেই পান দোকানের মালিক রাজীব তাঁকে উত্যক্ত করতেন। রবিবারই সুমিতার পরিবারের বিরুদ্ধে পুলিসে অভিযোগ দায়ের করেছিল পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার শৌভিকের পরিবার। সুমিতার সঙ্গে বিয়ের সময় ছাতনাতলায় রাজীবের গুলিতে নিহত হন সৌভিক। 


কলকাতা: ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, নির্যাতনের শিকার মহিলারা, যাঁরা আদালত থেকে ন্যয়বিচার পাওয়ার আশায় দিন গুনছেন, কিন্তু মামলার পাহাড়ে চাপা পড়ে যাচ্ছে তাঁদের সুবিচার পাওয়ার আর্তি, তাঁদের মনের কথাই যেন বললেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র৷ চার মাসের মধ্যে রাজ্যের নিম্ন আদালতগুলিতে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা ধর্ষণের মামলার বিচার শেষ করতে নির্দেশ দিলেন তিনি৷ নারী নির্যাতন সংক্রান্ত মামলার দ্রুত বিচারের জন্য রাজ্যজুড়ে আরও স্থায়ী ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট তৈরি করতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্যও তিনি হাইকোর্টের প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন৷ 
দিল্লিতে রাতের বাসে তরুণীর গণধর্ষণের প্রতিবাদে দেশজুড়ে দানা বেঁধে ওঠা জনমতের প্রেক্ষাপটে বিচারবিভাগও নারী নির্যাতনের ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে৷  সেদিন পুলিশের ভূমিকায় তীব্র অসন্তোষ জানিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট৷ দেশজুড়ে নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণের বকেয়া মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যাপারে উদ্যোগী হতে সম্প্রতি সমস্ত হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিদের নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আলতামাস কবীর৷ তার ঠিক পরই হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির এই নির্দেশ৷ অর্থাত ধর্ষণের প্রতি সেই 'জিরো টলারেন্স' মনোভাবই দেখা গেল কলকাতা হাইকোর্টের অবস্থানে৷

প্রসঙ্গত, পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণকাণ্ডের এক বছর পেরিয়ে গেলেও চার্জ গঠন হয়নি৷ মঙ্গলবার চার্জ গঠনের দিন স্থির হওয়ার কথা৷ রাজ্যে এরকম বহু ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মামলায় অভিযোগকারীরা এখনও বিচারের অপেক্ষায়৷ সেই প্রেক্ষিতে এবার এইসব বকেয়া মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে উদ্যোগী হল কলকাতা হাইকোর্ট৷ সমস্ত জেলা বিচারককে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র নির্দেশ দিয়েছেন, জেলা এবং গুরুত্বপূর্ণ মহকুমায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারকের এক বা একাধিক আদালত চিহ্নিত করে চার মাসের মধ্যে ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতনের মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে৷ প্রধান বিচারপতির নির্দেশ, এই আদালতগুলিতে মহিলা আইনি আধিকারিক এবং মহিলা অফিসার নিয়োগ করতে হবে৷ প্রসঙ্গত রবিবারই হাইকোর্টের সার্ধশতবর্ষের এক অনুষ্ঠানে আদালতে মহিলা অফিসার নিয়োগের কথা শোনা গিয়েছে রাজ্যের আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের মুখেও৷ 

http://abpananda.newsbullet.in/state/34-more/32746-2013-01-21-13-38-37


দাবিপূরণ না করেই জমি অধিগ্রহণ, অনশনে চাষিরা


দাবিপূরণ না করেই জমি অধিগ্রহণ, অনশনে চাষিরা
প্রতিবাদে আন্দোলন কালিয়াগঞ্জে -- রণবীর দেব অধিকারী
রায়গঞ্জ: দাবিপূরণ না করেই জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করেছিল রেল দফতর৷ প্রতিবাদে আমরণ অনশন শুরু করলেন উত্তর দিনাজপুরের কৃষকরা৷ ক্ষতিপূরণের প্যাকেজ ও চাকরির প্রতিশ্রীতি না দেওয়া পর্যন্ত অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা৷

কালিয়াগঞ্জ-বুনিয়াদপুর রেলপথ প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে শুরু করেছে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল৷ এরই প্রতিবাদে উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ ব্লকের ধনকোল মোড়ে মঞ্চ বেঁধে 'কালিয়াগঞ্জ নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি'র ব্যানারে আমরণ অনশন শুরু করেছেন ২০ জন কৃষক৷ ২ ০১১ সালের রেল বাজেটে কালিয়াগঞ্জ থেকে বুনিয়াদপুর পর্যন্ত নতুন রেলপথ তৈরির কথা ঘোষণা করা হয়৷ তার পর থেকেই জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল৷ ৩৩.৮৬ কিলোমিটার ওই রেলপথে উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমণ্ডি ও বংশীহারী ব্লকের মোট ৩৯টি মৌজার ১১৩৪ জন কৃষকের জমি পড়ছে ওই প্রকল্পের আওতায়৷ ২০১১-র মার্চে সংবাদপত্রে জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত বিজ্ঞন্তি জারি করে রেল দন্তর৷ তার পর থেকেই উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্যাকেজ ঘোষণা ও জমিদাতা পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন কৃষকরা৷ তৈরি হয় 'কালিয়াগঞ্জ নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি'৷ গত দেড় বছরে একাধিক বার আন্দোলনে নেমেছেন কৃষকরা৷ ব্লক ও জেলা প্রশাসন তো বটেই, রেল দন্তরকেও দাবির কথা লিখিত ভাবে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা৷ কিন্ত্ত তাতে কোনও কাজ হয়নি৷

নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির সভাপতি প্রদীপ সরকার বলেন, 'উপযুক্ত প্যাকেজ এবং চাকরির প্রতিশ্রীতি না-পাওয়া পর্যন্ত রেল দন্তরকে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার আবেদন জানানো হয়েছে৷ কিন্ত্ত রেল তাতে কর্ণপাত না করে বিশেষ আইন বলে জোর করে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে৷ ইতিমধ্যে বেশ কিছু এলাকায় জমিতে খুঁটিও পুঁতে দেওয়া হয়েছে রেলের তরফে৷ প্রতিবাদ জানিয়েও লাভ হয়নি৷ তাই অনশন আন্দোলন শুরু করা হয়েছে৷'

অনশনকারী নসিরহাট মৌজার পরিমল রায়, বোঁচাডাঙ্গির সুষেণ বর্মন, গণেশবাটির বুধু রায়রা বলেন, 'চাষবাস করেই সংসার চলে৷ জমিই আমাদের আয়ের একমাত্র উত্স৷ জমি চলে গেলে আমাদের উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যাবে৷ সে জন্যই ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি জমিদাতা পরিবারের এক জনকে চাকরি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি৷ দাবি মেনে রেল জমি অধিগ্রহণ করলে কোনও আপত্তি নেই৷ কিন্ত্ত দাবি পূরণ না হলে কোনও মতেই জমি দেব না৷ অনশন করে জীবন দিয়ে দেব৷'

গোর্খাল্যান্ডের দাবি না মানলে জিটিএ ছাড়তে পারে মোর্চা



গোর্খাল্যান্ডের দাবি না মানলে জিটিএ ছাড়তে পারে মোর্চা
চকবাজারে মোর্চা নেতারা -- মোহন প্রসাদ
সঞ্জয় চক্রবর্তী 

দার্জিলিং: গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে নতুন করে আন্দোলনে নামল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা৷ রবিবার দার্জিলিংয়ের চকবাজারে জনসভায় মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুংয়ের স্ত্রী আশা রাজ্য সরকারকে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বললেন,গোর্খাল্যান্ডের দাবি না মানলে জিটিএ থেকে সরে আসবে মোর্চা৷ 

মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সরকারের সাফল্য হিসেবে প্রায় প্রতিটি সভায় দাবি করেন, 'পাহাড় হাসছে'৷ কিন্ত্ত পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্যের দাবি কেন্দ্রীয় সরকার মেনে নিতে পারে, এই ইঙ্গিত মেলার পর থেকেই রাজ্যের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে মোর্চা৷ রবিবার কনকনে ঠান্ডায় চকবাজারে 'গোর্খাল্যান্ড মেরো মাঙ হো'( গোর্খাল্যান্ডই আমাদের দাবি) বলে নতুন করে অশান্তির সম্ভাবনা উসকে দিল মোর্চার সভা৷ বিমল গুরুংকে আড়ালে রেখে মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি ও বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রীর মতো প্রথম সারির নেতারা উপস্থিত থাকলেও, মূল বিষয় উত্থাপনের দায়িত্ব ছিল গোর্খা নারীমুক্তি মোর্চার সভানেত্রী আশা গুরুংয়েরই হাতে৷ এ দিনের সভায় আশা বলেন, 'মমতা দিদিকে বলছি, জিটিএ দিয়ে আমাদের ভোলানো যাবে না৷ মনে রাখবেন, বিমল গুরুং জিটিএ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেননি৷ গোর্খাল্যান্ড গঠনে রাজি না হলে আমরা জিটিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসব৷ গোর্খাল্যান্ড নিয়েই ছাড়ব৷' 

বিদ্রোহের সুর শোনা গিয়েছে দলের প্রচারসচিব তথা বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রী৷ সভার শেষ বক্তা হিসেবে বলতে উঠে তিনি বলেন, 'জিটিএ-র সদস্যরা কী করবেন আমি বলতে পারব না, তবে এই সভায় দাঁড়িয়ে আমি বলে যাচ্ছি, গোর্খারা রাজ্য না পেলে আমি বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেব৷' মোর্চার সমস্ত গণ সংগঠনকেই এ দিনের সভা থেকে আলাদা করে আন্দোলনের নির্দেশ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি দাবি করেন, 'আলাদা রাজ্যের দাবি আমরা কোনও দিনই ছাড়িনি৷ চুক্তিতেই তা স্পষ্ট বলা আছে৷' 

হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শ্যামল সেনের নেতৃত্বে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি তাঁদের ধোঁকা দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন রোশন গিরি৷ তিনি বলেন, 'বাংলায় গোর্খারা সুরক্ষিত নন৷ দেশের জন্য এত বলিদান দেওয়া সত্ত্বেও, তাঁদের প্রতি সুবিচার করা হচ্ছে না৷' কয়েক দিন আগেও যাঁরা জিটিএ-তে সরকারি দন্তর হস্তান্তর নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি করছিলেন, তাঁরা আচমকা পৃথক রাজ্যের দাবিতে তেড়েফুঁড়ে নামায় প্রশ্ন উঠবে বুঝেই সম্ভবত তিনি আগাম জানিয়ে দিলেন, 'রাজ্য সরকারের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রেখে আমরা কী করব? স্যুপ বানিয়ে খাব?' 

নিজেদের দাবির যৌক্তিকতা বোঝাতে এ দিন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রায় সমস্ত বক্তাই দার্জিলিঙের অবস্থানগত স্পর্শকাতরতার উল্লেখ করে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে সতর্ক করেন৷ রোশন বলেন, 'দার্জিলিঙের চারপাশে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটান সীমান্ত রয়েছে৷ এই এলাকা সংবেদনশীল৷ তা বুঝতে হবে৷' মোর্চা নেতারা এ দিনের সভায় তাঁদের বিরোধীদেরও এক হাত নিয়েছেন৷ জিটিএ চুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে সুবাস ঘিসিঙের মামলা সম্পর্কে কটাক্ষ করে কালিম্পঙের বিধায়ক হরকাবাহাদুর বলেন, 'মামলায় যদি কেউ জেতে তাতে কী হবে? গোর্খাল্যান্ড হবে?' তবে মোর্চার এই হুমকি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব৷ তিনি বলেন, 'পাহাড়ে রাজ্য সরকার উন্নয়নের কাজ করছে৷ সেই কাজই করে যাব৷ তবে আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি৷' সিপিএম নেতা অশোক ভাচার্য অবশ্য সরকারকে কিছুটা কটাক্ষ করেই বলেছেন, 'আমরা তো আগেই বলেছিলাম এমনটাই হতে চলেছে৷ জিটিএ চুক্তির মধ্যেই গোর্খাল্যান্ডের বীজ লুকিয়ে রয়েছে৷' 

পরে সাংবাদিকদের রোশন গিরি বলেন, 'আমরা গোড়া থেকেই জানি যে জিটিএ একটা অস্থায়ী ব্যবস্থা৷ তাই জিটিএ-র সাংবিধানিক গ্যারান্টি নিয়ে আমরা চিন্তিত নই৷ বরং ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থার জন্য সংবিধান সংশোধন চেয়েছি৷' দার্জিলিংঙের বিধায়ক তিলক দেওয়ান বলেন, 'বিরোধীরা কেবল সমালোচনা করছেন৷ আমি বলছি আসুন, এক সঙ্গে আন্দোলন করি৷' তাঁর ওই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সিপিআরএম নেতা গোবিন ছেত্রী বলেন, 'আগে ওঁরা জিটিএ থেকে পদত্যাগ করুন৷ বিমল গুরুং তাঁর ক্যাবিনেট পদমর্যাদা ছাড়ুন৷ তার পর এক সঙ্গে আন্দোলনের কথা ভাবা যাবে৷' 

রাজ্যকে সুপারিশ কমিশনের
নিহতের দেহ বহনে চাই মানুষের মর্যাদা
বাঁশে ঝুলিয়ে তো নয়ই। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহতদের দেহ আদৌ দায়সারা ভাবে সরানো যাবে না। 'উপযুক্ত মর্যাদা'র সঙ্গেই সেই মৃতদেহ বহন এবং তার শেষকৃত্য করতে হবে। রাজ্য মানবাধিকার কমিশন এই সুপারিশ করেছে রাজ্য সরকারের কাছে। তারা জানিয়ে দিয়েছে, এই সুপারিশ রূপায়ণে কী ব্যবস্থা নেওয়া হল, দু'মাসের মধ্যেরাজ্যের তরফে তা জানাতে হবে কমিশনকে।
'উপযুক্ত মর্যাদা' বলতে ঠিক কী বোঝানো হচ্ছে?
কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে:
• সংঘর্ষস্থল থেকে মৃতদেহ শববাহী গাড়ি, লরি বা ভ্যানে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে হবে। এবং সেটা করতে হবে সংশ্লিষ্ট পুলিশ-কর্তৃপক্ষকেই। ঘটনাস্থলে গাড়িতে চলাচলের রাস্তা না-থাকলে লোকজন দিয়ে ভাল ভাবে মৃতদেহ আনতে হবে।
• শবদেহ ওয়াটারপ্রুফ কাপড় বা প্লাস্টিকে মুড়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
• সভ্য সমাজে মৃতকে যে-ভাবে শ্রদ্ধা জানানো হয়, সেই ভাবেই প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে নিহতদের।
• যথাযথ ভাবে শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করতে হবে।
২০১০ সালে জঙ্গলমহলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত কয়েক জন মাওবাদীর দেহ বাঁশে ঝুলিয়ে বহন করা হয়েছিল। সংবাদপত্রে সেই ছবি দেখে সমাজের বিভিন্ন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী এবং অন্য কয়েক জন মানবাধিকার কর্মী এই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন পেশ করেন। সেই আবেদন পড়ে হাইকোর্ট সেটি পাঠিয়ে দেয় রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের কাছে। ২০১২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট ওই কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছিল, এ ব্যাপারে তারা যেন যথোচিত তদন্ত করে এবং সংঘর্ষে নিহতদের দেহ কী ভাবে বহন ও শেষকৃত্য করতে হবে, সেই সুপারিশ রাজ্যের কাছে পাঠিয়ে দেয়।
উচ্চ আদালতের নির্দেশ পেয়ে মানবাধিকার কমিশন রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল নপরাজিত মুখোপাধ্যায়কে একটি চিঠি দেয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহতদের দেহ এখন কী ভাবে নিয়ে যাওয়া হয়, সেই চিঠিতে তা জানতে চাওয়া হয়। ওই সব মৃতদেহ কী করে আরও ভাল ভাবে বহন করা যায়, সেই বিষয়ে ডিজি-র পরামর্শও চায় কমিশন। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ডিজি একটি চিঠি দেন কমিশনকে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহতদের দেহ বর্তমানে যে-পদ্ধতিতে বহন করা হয়, চিঠিতে তা বিস্তারিত ভাবে জানান ডিজি।
মানবিকতার চতুরঙ্গ
• মৃতদেহ বহনে চাই গাড়ি
• শব মুড়তে হবে প্লাস্টিকে
• প্রাপ্য শ্রদ্ধা দেখাতে হবে
• যথাযথ ভাবে অন্ত্যেষ্টি
বাঁশে ঝুলিয়ে মাওবাদীদের দেহ বহনের যে-ছবিকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছিল, সেই ছবি, ডিজি-র রিপোর্ট এবং সংশ্লিষ্ট তথ্য খতিয়ে দেখে কমিশন। তার পরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহতদের দেহ কী ভাবে সরানো হবে, সেই বিষয়ে গত ২০ ডিসেম্বর রাজ্য সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠিয়ে দেয় তারা।
রিট আবেদনকারীরা কিন্তু এই সুপারিশে খুশি নন। অন্যতম আবেদনকারী, মানবাধিকার কর্মী সুজাত ভদ্র বলেন, "মানবাধিকার কমিশন তো আমাদের ডাকেইনি। আমাদের বক্তব্যও শোনেনি। শুধু একতরফা বক্তব্য শুনে এই সুপারিশ করা হয়েছে। এই সুপারিশে আমরা আদৌ সন্তুষ্ট নই।" সুজাতবাবু মনে করেন, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তির দেহ 'মর্যাদা'র সঙ্গে সরানোর বিষয়টি এই সুপারিশে অস্পষ্ট থেকে গিয়েছে। তিনি বলেন, "উপদ্রুত অঞ্চলে কোনও সংঘর্ষে কারও মৃত্যু হলে তার দেহ কী ভাবে আনা হবে, কী ভাবে আত্মীয়পরিজনদের দিয়ে সেটি শনাক্ত করানো হবে, কী ভাবে শেষকৃত্য করা হবে সেই সব বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিধি রয়েছে। কিন্তু মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশে তা প্রতিফলিত হচ্ছে না।"

http://www.anandabazar.com/21raj1.html


খুনে জড়িত বিধায়ক, অভিযোগ মৃতের স্ত্রীর



খুনে জড়িত বিধায়ক, অভিযোগ মৃতের স্ত্রীর
মৃত তৃণমূল নেতার স্ত্রী ও কন্যা -- মৃণাল বসু
প্রদীপ চক্রবর্তী 

ধনেখালি: 'দিদির পুলিশের যেন কঠিন সাজা হয়৷' আল্লার কাছে প্রার্থনায় কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন মানুজা বিবি৷ হুগলির ধনেখালির মৃত তৃণমূল নেতা শেখ নাসিরুদ্দিনের স্ত্রী তিনি৷ শোকের মধ্যেও উসকে উঠেছে ক্ষোভ৷ স্থানীয় বিধায়ক অসীমা পাত্রকেই আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন সদ্য বিধবা৷ তাঁর সরাসরি অভিযোগ, বিধায়কের নির্দেশেই পুলিশ শেখ নাসিরুদ্দিনকে গলা টিঁপে খুন করেছে৷ তিনি আল্লার কাছে মাথা কুটছেন, স্বামীকে যারা খুন করল তাঁদের যেন তিনি ক্ষমা না করেন৷ 

মূল অভিযোগ যার বিরুদ্ধে, সেই অসীমা পাত্র তৃণমূল বিধায়ক৷ তাঁর বিরুদ্ধে যাকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে, তিনি এলাকার সক্রিয় তৃণমূল নেতা ছিলেন৷ মানুজা বিবি আক্ষেপ করছেন, যাকে জেতাতে গত বিধানসভা নির্বাচনে প্রাণপাত করেছিলেন তাঁর স্বামী, তিনিই পুলিশ দিয়ে খুন করালেন৷ আর পুলিশ দন্তর তাঁদেরই শীর্ষনেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের হাতে৷ দলীয় নেতা খুন হওয়ার পর ৪৮ ঘণ্টা কেটে গেলও মানুজার পরিবারের পাশে কোনও তৃণমূল নেতার দেখা নেই৷ 

শেখ নাসিরুদ্দিনের স্ত্রীর সোজা-সাপ্টা অভিযোগে বিড়ম্বনার একশেষ হলেও, পাল্টা প্রত্যাঘাতে যাচ্ছেন না হুগলির তৃণমূল নেতারা৷ এমনকী, বিধায়ক অসীমা পাত্রের গলার সুরও নরম৷ তিনি বলেন, 'এলাকার পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হলে, আমি নাসিরুদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে ওর পরিবারের সঙ্গে কথা বলবো৷' অন্য দিকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুন্ত বলেন, 'আমরা ওই পরিবারের পাশেই রয়েছি৷ তৃণমূল ওদের সব রকম সহযোগিতা করবে৷' 


তবে ধনেখালির পরিস্থিতি রবিবার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে৷ তবে এলাকা ছিল শুনশান৷ কড়া পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে শেখ নাসিরুদ্দিনের অন্তোষ্টি শেষ হয়েছে৷ শনিবার থানা ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ধৃত ২২জনকেই ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ৷ 


দমদমে অসম্পূর্ণ টার্মিনালের উদ্বোধন
লগ্নির আশায় সুন্দরবনেও উড়ানের স্বপ্ন মমতার
'বেঙ্গল লিডস'-এর ছবিটা যতই করুণ হয় হোক! হলদিয়া থেকে তাবড় শিল্পপতিরা যতই মুখ ফিরিয়ে থাকতে চান থাকুন! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, "পশ্চিমবঙ্গ এখন বিশ্বের গন্তব্য (বেঙ্গল ইজ দ্য ডেস্টিনেশন অফ দ্য ওয়ার্ল্ড)।" রবিবার সন্ধ্যায় কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের উদ্বোধনী মঞ্চ ব্যবহার করে তিনি এই বার্তা দিলেন অতিথি-অভ্যাগতদের।
যদিও ওই টার্মিনালের কাজ এখনও শেষ হয়নি। সেখানে নিয়মিত উড়ান চালু হতে আরও অন্তত দু'মাস লাগবে। স্বপ্ন দেখাতে মমতা অবশ্য সেই অসম্পূর্ণতার তোয়াক্কা করেননি। বরং ঘোষণা করেছেন, "বালুরঘাট, মালদহ, সুন্দরবন, দিঘা এবং শান্তিনিকেতনেও আমরা বিমানবন্দর তৈরি করতে চাই।" মঞ্চে তখন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ও বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ প্রমুখ। তাঁদের উদ্দেশে মমতা বলেন, "আমাদের রাজ্যে নতুন বিমানবন্দর তৈরি করতে আপনারা সাহায্য করুন।"
একই মঞ্চে। রবিবার কলকাতা বিমানবন্দরে।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের প্রতিনিধিরা। তাঁদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান, "পশ্চিমবঙ্গ এখন শিল্প-বাণিজ্য ও লগ্নির পক্ষে আদর্শ জায়গা। ছোট শিল্পের সঙ্গে বড় শিল্পও হচ্ছে। আপনাদের (দূতাবাসের প্রতিনিধিদের) বলছি, আপনাদের দেশ থেকে সরাসরি কলকাতায় উড়ান চালু করুন।"
কাজ শেষ না-হলেও কলকাতার নতুন টার্মিনালের ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রায় সকলেই। প্রণববাবু বলেন, "আধুনিকীকরণ নিয়ে আলোচনার সময় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সব প্রধান বিমানবন্দরকেই বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হবে। ব্যতিক্রম শুধু চেন্নাই ও কলকাতা। কলকাতার এই টার্মিনাল প্রমাণ করে দিয়েছে, সরকারি সংস্থাও বিশ্ব মানের পরিকাঠামো বানাতে সক্ষম।" দক্ষ হাতে এই টার্মিনাল রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার ব্যাপারে বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষকে সতর্কও করে দেন তিনি। রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের মতে, "প্রমাণিত হয়ে গেল যে, সরকারি সংস্থাও সক্ষম।" এই নতুন টার্মিনাল আরও বেশি বিনিয়োগ টেনে আনবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। নতুন টার্মিনাল তৈরির জন্য কর্মী-অফিসারদের প্রশংসা করেন বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, উদ্বোধন হয়ে গেলেও এখন নিয়মিত কাজ চলবে নতুন টার্মিনালে। বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষের দাবি, মাস দুয়েকের মধ্যেই যাত্রীরা এই টার্মিনাল নিয়মিত ব্যবহার করতে পারবেন। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য অনুরোধ জানান, ১৫ দিনের মধ্যে এই টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীণ উড়ান চালু করা যায় কি না, সেটা দেখা হোক।
বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষ প্রতিটি বিমান সংস্থাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি তাদের চলে আসতে হবে নতুন টার্মিনালে। যদিও বিভিন্ন বিমান সংস্থার কর্তাদের ধারণা, এই টার্মিনাল চালু হতে এখনও কমপক্ষে তিন-চার মাস লাগবে। এক বিমান সংস্থার কর্তা বলেন, "টার্মিনালের কাজ পুরোপুরি শেষ না-হওয়া পর্যন্ত সেখানে যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম স্থানান্তরিত করা সম্ভব হবে না। কর্তৃপক্ষ চাইছেন, টার্মিনালের চূড়ান্ত পর্বের কাজ চলুক। তারই মধ্যে বিমান সংস্থাগুলিও জিনিসপত্র সরাতে থাকুক। কিন্তু কার্যত সেটা সম্ভব নয়।" পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, নতুন টার্মিনালে বিমান সংস্থার কাউন্টারে যে-লাইন বসেছে, সেখান থেকে বোর্ডিং কার্ড বেরোতে দেরি হচ্ছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
সুভাষচন্দ্র বসুর নামে চিহ্নিত কলকাতা বিমানবন্দরে এ দিন তাঁর একটি মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন রাষ্ট্রপতি। নেতাজি-তনয়া অনিতা বসু পাফ এবং পরিবারের সদস্য কৃষ্ণা বসু, সুগত বসুও অনুষ্ঠানে ছিলেন। টার্মিনাল চালু না-হলেও বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বেদপ্রকাশ অগ্রবাল জানান, ২৩ জানুয়ারি, সুভাষচন্দ্রের জন্মদিনে নতুন টার্মিনাল থেকে প্রথম উড়ান চালানো হবে। এয়ার ইন্ডিয়ার ওই বিমান সকাল ১০টায় যাত্রী নিয়ে দিল্লি ও লন্ডন যাবে। তার পরে ফের টার্মিনাল বন্ধ রেখে বাকি কাজ শেষ করা হবে। এ দিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন বিমান প্রতিমন্ত্রী কে সি বেণুগোপাল, বিমানবন্দর পরামর্শদাতা কমিটির চেয়ারম্যান ও সাংসদ সৌগত রায়, বিমানসচিব কাশীনাথ শ্রীবাস্তব।
http://www.anandabazar.com/21bus1.html

বাংলা ভাষা আন্দোলন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার অধিকার আদায়ে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় আয়োজিত মিছিল

ভাষা আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) সংঘটিত একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন, যা ছিল বাংলা ভাষাকে তৎকালীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার আন্দোলন।১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে এই আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নিলেও বস্তুত এর বীজ বপিত হয় বহু আগে, এবং এর ফলও ছিল সুদূরপ্রসারি।

১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান গঠিত হয়, কিন্তু পাকিস্তানের দুটি অংশ পূর্ব পাকিস্তান (পূর্ব বাংলা হিসেবেও পরিচিত) ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও ভাষাগত দিক থেকে অনেক পার্থক্য ছিল । ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করে উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, যা পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী জনগণের মধ্যে তুমুল ক্ষোভের সৃষ্টি করে। পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী মানুষ (যারা সংখ্যার বিচারে সমগ্র পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল) এ সিদ্ধান্তকে মোটেই মেনে নিতে চায়নি। পূর্ব পাকিস্তানে বাংলাভাষার সম-মর্যাদার দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরখাজা নাজিমুদ্দিন জানান যে পাকিস্তান সরকারের সিদ্ধান্তই মেনে নেওয়া হবে। এই ঘোষণার ফলে আন্দোলন আরো জোরদার হয়ে ওঠে। পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে মিটিং-মিছিল ইত্যাদি বেআইনি ঘোষণা করে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) এই আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুসংখ্যক ছাত্র ও কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে মিছিল শুরু করেন। মিছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ মিছিলের উপর গুলি চালায়। গুলিতে নিহত হন সালামরফিকবরকতজব্বারসহ আরো অনেকে। এই ঘটনায় সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে কেন্দ্রীয় সরকার গণআন্দোলনের মুখে নতি স্বীকার করে এবং ১৯৫৬ সালে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি প্রদান করে। ২০০০ সালে ইউনেস্কো বাংলা ভাষা আন্দোলন ও মানুষের ভাষা ও কৃষ্টির অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করে।[১]

রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই আন্দোলনের মাধ্যমেই প্রথম বাংলা ভাষার রাষ্ট্র চাই ধারণাটির জন্ম হয় এবং এ ধারণাই পরবর্তীতে বিভিন্ন বাঙালি জাতীয়তা আন্দোলন, যেমন ৬ দফা আন্দোলন এবং পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রেরণা যোগায়। বাংলাদেশে ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবসহিসেবে উদযাপিত হয় এবং দিনটিতে জাতীয় ছুটি থাকে। এ আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে।

পরিচ্ছেদসমূহ

  [আড়ালে রাখো

[সম্পাদনা]পটভূমি

বর্তমানের পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র দুটি পূর্বে ব্রিটিশ শাসনাধীন অবিভক্ত ভারতবর্ষের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে উর্দু ভাষাটি মুসলমান রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতা যেমন স্যার খাজা সলিমুল্লাহস্যার সৈয়দ আহমদ খাননবাব ওয়াকার-উল-মুলক মৌলভী‎‎ এবং মৌলভী আবদুল হকের চেষ্টায় ভারতীয় মুসলমানদের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কায় উন্নীত হয়।[২][৩] উর্দু একটি ইন্দো-আর্য ভাষা, যা ইন্দো-ইরানীয় ভাষাগোষ্ঠীর সদস্য, যা আবার ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা-পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। উর্দু ভাষাটি অপভ্রংশের (মধ্যযুগের ইন্দো-আর্য ভাষা পালি-প্রাকৃতের সর্বশেষ ভাষাতাত্ত্বিক অবস্থা) ওপর ফার্সিআরবি এবং তুর্কির ঘনিষ্ঠভাবে প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে[৪] দিল্লি সুলতানাত এবং মুঘল সাম্রাজ্যের সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় বিকশিত হয়।[৫] এরপারসিক-আরবি লিপির কারণে উর্দুকে ভারতীয় মুসলমানদের ইসলামী সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হত; যেখানে হিন্দি এবংদেবনাগরী লিপিকে হিন্দুধর্মের উপাদান বিবেচনা করা হত।[২]

উর্দুর ব্যবহার ক্রমেই উত্তর ভারতের মুসলমানদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে, কিন্তু বাংলার (ব্রিটিশ ভারতের পূর্বাঞ্চলের একটি প্রদেশ) মুসলমানেরা বাংলা ভাষাকে তাদের প্রধান ভাষা হিসাবে ব্যবহারেই অভ্যস্ত ছিল। বাংলা পূর্বাঞ্চলীয় মধ্য ইন্দো ভাষাসমূহ হতে উদ্ভূত একটি পূর্বাঞ্চলীয় ইন্দো-আর্য ভাষা,[৬] যা বাংলার নবজাগরণের সময়ে বিপুল বিকাশ লাভ করে। উনিশ শতকের শেষভাগ হতেই মুসলিম নারী শিক্ষার অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চা শুরু করেন এবং আধুনিক ভাষা হিসেবে বাংলার বিকাশ তখন থেকেই শুরু হয়। বাংলা ভাষার সমর্থকরা ভারত ভাগের পূর্বেই উর্দুর বিরোধিতা শুরু করেন, যখন ১৯৩৭ সালে মুসলিম লীগের লক্ষ্মৌ অধিবেশনে বাংলার সভ্যরা উর্দুকে ভারতের মুসলিমদের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা মনোনয়নের প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন। মুসলিম লীগ ছিল ব্রিটিশ ভারতের একটি রাজনৈতিক দল, যা ভারত বিভাজনের সময় পাকিস্তানকে একটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।[৭]

[সম্পাদনা]আন্দোলনের সূচনা

ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসিত অঞ্চলগুলো ১৯৪৭ এবং ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভ করে চারটি সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত হয়:ভারতবার্মা (বর্তমান মায়ানমার), সিংহল (বর্তমান শ্রীলঙ্কা) এবং পাকিস্তান (যার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানও অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা অধুনা বাংলাদেশ নামে পরিচিত)।

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানের (পূর্ব বাংলা হিসেবেও পরিচিত) বাংলাভাষী ৪ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষ ৬ কোটি ৯০ লাখ জনসংখ্যাবিশিষ্ট নবগঠিত পাকিস্তানের নাগরিকে পরিণত হয়।[৮]কিন্তু পাকিস্তান সরকার, প্রশাসন এবং সামরিক বাহিনীতে পশ্চিম পাকিস্তানীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল।[৯]১৯৪৭ সালে করাচীতে অনুষ্ঠিত জাতীয় শিক্ষা সম্মেলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাপত্রে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ব্যবহারের সুপারিশ করা হয় এবং প্রচারমাধ্যম ও বিদ্যালয়ে কেবলমাত্র উর্দু ব্যবহারের প্রস্তাব করা হয়।[১০][১১] তাৎক্ষণিকভাবে এ প্রস্তাবের বিরোধিতা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। ঢাকার ছাত্রসমাজ আবুল কাসেমের নেতৃত্বে মিছিল করে, যিনি ছিলেন তমদ্দুন মজলিসনামক একটি মুসলমানপ্রধান বাঙালি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সম্পাদক। ওই সমাবেশে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা এবং পূর্ব পাকিস্তানে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের প্রবল দাবী উত্থাপন করা হয়।[১২] কিন্তু পাকিস্তান পাবলিক সার্ভিস কমিশন বাংলাকে তাদের অনুমোদিত বিষয়তালিকা হতে বাদ দেয় ও সাথে সাথে মুদ্রা এবং ডাকটিকেট হতেও বাংলা অক্ষর লুপ্ত হয়। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান মালিক উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা বানানোর জন্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।[১৩] পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং ১৯৪৭ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ছাত্রদের একটি বিশাল সমাবেশে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদাদানের আনুষ্ঠানিক দাবী উত্থাপন করা হয়। দাবী আদায়ের লক্ষ্যে ছাত্ররা ঢাকায় মিছিল এবং সমাবেশের আয়োজন করে।[৮]

নেতৃস্থানীয় বাঙ্গালী পণ্ডিতগণ উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার বিপক্ষে মত দেন। পাকিস্তানের কোনো অংশেই উর্দু স্থানীয় ভাষা ছিল না বলে উল্লেখ করেছেন ভাষাবিদ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি বলেন যে, "আমাদের যদি একটি দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা নির্ধারণ করার প্রয়োজন হয়, তবে আমরা উর্দুর কথা বিবেচনা করতে পারি।"[১৪] সাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমেদ বলেছেন যে, উর্দুকে যদি রাষ্ট্রভাষা করা হয় তবে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষিত সমাজ 'নিরক্ষর' এবং সকল সরকারী পদের ক্ষেত্রেই 'অনুপযুক্ত' হয়ে পড়বে।[১৫] ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সমর্থনে প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। তমদ্দুন মজলিশের অধ্যাপক নূরুল হক ভূঁইয়া এই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন।[৮][১৬] পরবর্তীতে সংসদ সদস্য সামসুল হক আহ্বায়ক হয়ে নতুন কমিটি গঠন করেন এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে কার্যক্রম আরও জোরদার করেন।

[সম্পাদনা]গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের রাষ্ট্রভাষার দাবি

১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তান গণপরিষদে এর সদস্যদের বাংলায় কথা বলা এবং সরকারী কাজে ব্যবহারের জন্য একটি সংশোধনী প্রস্তাব করেন।[৮] বক্তৃতায় বাংলাকে অধিকাংশ জাতিগোষ্ঠীর ভাষা হিসেবে উল্লেখ করে ধীরেন্দ্রনাথ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবি করেন। এছাড়াও সরকারী কাগজে বাংলা ভাষা ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান। সংসদ সদস্য প্রেমহরি বর্মনভূপেন্দ্র কুমার দত্ত এবংশিরিষ চন্দ্র চট্টপাধ্যায় এই প্রস্তাবে সমর্থন দেন। তাঁরা পূর্ব পাকিস্তান থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন এবং তাদের এই সমর্থনের মাধ্যমে মূলত পূর্ব পাকিস্তানের মতামতই প্রকাশিত হয়েছে। তমিজুদ্দিন খানের নেতৃত্বে পরিষদের সকল মুসলমান সদস্য (সবাই মুসলিম লীগের) এই প্রস্তাবের বিরোধীতা করেন। খাজা নাজিমুদ্দিন এই প্রস্তাবের বিরোধীতা করে বক্তৃতা দেন। তিনি বলেন যে, "পূর্ব বাংলার অধিকাংশ মানুষ চায় রাষ্ট্রভাষা উর্দু হোক"।[১৭][১৮]পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান একে পাকিস্তানে বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা বলে উল্লেখ করেন। উর্দুকে লক্ষ কোটি মুসলমানের ভাষা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কেবল মাত্র উর্দুই হতে পারে। অনেক বিতর্কের পর সংশোধনীটি ভোটে বাতিল গণ্য হয়।[৮][১৯][২০] সংসদীয় দলের আপত্তির কারণে অনেক বাঙালি মুসলমান সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উত্থাপিত সংশোধনীটিকে সমর্থন করতে পারেননি।[২১]

[সম্পাদনা]প্রথম প্রতিক্রিয়া

গণপরিষদের ঘটনার প্রথম প্রতিক্রিয়া শুরু হয় ঢাকায়। ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও জগন্নাথ কলেজের উদ্যোগে শহরের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ক্লাস বর্জন করে। ২৯শে ফেব্রুয়ারি তারিখেও ধর্মঘট ঘোষিত হয় এবং এই দিন সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিবাদ দিবস ও ধর্মঘট পালন করা হয়। সরকারের প্ররোচনায় পুলিশ মিছিলে লাঠিচার্জ করে এমন অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে।[১৭] তমদ্দুন মজলিসএই সময়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে ছাত্র-বুদ্ধিজীবিদের এক সমাবেশ ঘটে।[১৮] এই সভায় দ্বিতীয়বারের মত রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয় এবং শামসুল আলম আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। এই পরিষদে অন্যান্য সংগঠনের ২জন করে প্রতিনিধি রাখার ব্যবস্থা করা হয়।[১৭] সেখান হতে ছাত্ররা ১১ই মার্চ ধর্মঘট আহবান করে এবং ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে তাঁর পদক্ষেপের জন্য ধন্যবাদ জানায়।

১১ই মার্চের কর্মসূচী নির্ধারণের জন্য ১০ মার্চ ফজলুল হক হলে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১১ই মার্চ ভোরে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে ছাত্ররা বের হয়ে আসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্ণ ধর্মঘট পালিত হয়। সকালে ছাত্রদের একটি দল রমনা পোস্ট অফিসে গেলে তাদের গ্রেফতার করা হয়। ছাত্রদের আরও একটি দল রাজনৈতিক নেতাদের সাথে সচিবালয়ের সামনে নবাব আবদুল গণি রোডে পিকেটিংয়ে অংশ নেয়। তারা গণপরিষদ ভবন (ভেঙ্গে পড়া জগন্নাথ হলের মিলনায়তন), প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন বর্ধমান হাউস (বর্তমান বাংলা একাডেমি), হাইকোর্ট ও সচিবালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে অফিস বর্জনের জন্যে সবাইকে চাপ দিতে থাকে, ফলে বিভিন্ন স্থানে তাদের পুলিশের লাঠিচার্জের সম্মুখীন হতে হয়। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা খাদ্যমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ আফজল ও শিক্ষামন্ত্রী আবদুল হামিদকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। এই বিক্ষোভ দমনের জন্য সেনাবাহিনী তলব করা হয়। পূর্ব পাকিস্তানের জিওসি ব্রিগেডিয়ার আইয়ুব খান (পরে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি) মেজর পীরজাদার অধীনে একদল পদাতিক সৈন্য নিয়োগ করেন এবং স্বয়ং গণপরিষদে গিয়ে খাজা নাজিমুদ্দিনকে বাবুর্চিখানার মধ্য দিয়ে বের করে আনেন।[২২]বিকেলে এর প্রতিবাদে সভা অনুষ্ঠিত হলে পুলিশ সভা ভেঙ্গে দেয় এবং কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের মাঝে অন্যতম ছিলেন শামসুল হকশেখ মুজিবুর রহমানঅলি আহাদশওকত আলীকাজী গোলাম মাহবুব, রওশন আলম, রফিকুল আলম, আব্দুল লতিফ তালুকদার, শাহ্ মোঃ নাসিরুদ্দীন, নুরুল ইসলাম প্রমুখ। ঐ সভায় সভাপতিত্ব করেন নঈমুদ্দিন আহমদ।[১৮]

[সম্পাদনা]খাজা নাজিমুদ্দিনের সাথে চুক্তি

১১ তারিখের এই ঘটনার পর ১২ থেকে ১৫ মার্চ ধর্মঘট পালন করা হয়। আন্দোলনের তীব্রতার মুখে ১৫ মার্চ খাজা নাজিউদ্দিন সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের সাথে বৈঠকে মিলিত হন। সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে আবুল কাশেম, কামরুদ্দীন আহম্মদমোহাম্মদ তোয়াহাসৈয়দ নজরুল ইসলাম, আবদুর রহমান চৌধুরী প্রমূখ অংশগ্রহণ করেছিলেন। আলোচনাসাপেক্ষে দুই পক্ষের মধ্যে ৮টি বিষয়ে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে সরকারের এ নমনীয় আচরণের কারণ ছিল ১৯ মার্চ জিন্নাহ'র ঢাকা আগমন। তার আসার পূর্বে পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য নাজিমুদ্দিন চুক্তিতে সম্মত হয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবিটি তখন পর্যন্ত মেনে নেয়া হয়নি। চুক্তিতে আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তারকৃত বন্দিদের মুক্তি, পুলিশের অত্যাচারের নিরপেক্ষ তদন্ত, বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যম ও রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া, সংবাদপত্রের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল।[১৭]

[সম্পাদনা]মুহম্মদ আলী জিন্নাহ্‌র ঢাকা সফর

১৯শে মার্চ, ১৯৪৮-এ ঢাকায় এসে পৌছান পাকিস্তানের স্থপতি মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ্‌। ২১শে মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যান) এক গণ-সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যেখানে তিনি একটি ভাষণ প্রদান করেন। তার ভাষণে তিনি ভাষা আন্দোলনকে পাকিস্তানের মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেন।[২৩][২৪][২৫][২৬][২৭] যদিও তিনি বলেন পূর্ববঙ্গের প্রাদেশিক ভাষা নির্ধারিত হবে প্রদেশের অধিবাসীদের ভাষা অনুযায়ী, কিন্তু দ্ব্যর্থহীন চিত্তে ঘোষণা করেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, অন্য কোন ভাষা নয়।[৮][২৫][২৮][২৯] তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন জনগণের মধ্যে যারা ষড়যন্ত্রকারী রয়েছে, তারা পাকিস্তানের শত্রু এবং তাদের কখনোই ক্ষমা করা হবে না। জিন্নাহ্‌-র এই মন্তব্যে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে উপস্থিত ছাত্রসহ জনতার একাংশ। উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা- এই বিরূপ উক্তিতে আন্দোলনকারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।[২৪] ২৪শে মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে গিয়ে তিনি একই ধরনের বক্তব্য রাখেন।[৯] তিনি উল্লেখ করেন এই আন্দোলন সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গীর বহিঃপ্রকাশ এবং অভিযোগ করেন কিছু লোক এর মাধ্যমে তাদের স্বার্থসিদ্ধি করতে চাইছে। যখন তিনি উর্দুর ব্যাপারে তার অবস্থানের পুণরুল্লেখ করেন, উপস্থিত ছাত্ররা সমস্বরে না, না বলে চিৎকার করতে থাকে। একই দিনে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের একটি প্রতিনিধিদল জিন্নাহর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়ে একটি স্মারকলিপি দেন। এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন শামসুল হক, কামরুদ্দিন আহমদ, আবুল কাশেম, তাজউদ্দিন আহমদে, মোহাম্মদ তোয়াহা, আজিজ আহমদ, অলি আহাদ, নঈমুদ্দিন আহমদ, শামসুল আলম এবং নজরুল ইসলাম।[৮] কিন্তু জিন্নাহ্ খাজা নাজিমুদ্দিনের স্বাক্ষরিত চুক্তিকে একপেশে এবং চাপের মুখে সম্পাদিত বলে প্রত্যাখান করেন।[৩০] অনেক তর্ক-বিতর্ক ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্ররা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য জিন্নাহ্‌-র নিকট স্মারকলিপি পেশ করে।[২১] ২৮শে মার্চ জিন্নাহ্‌ ঢাকা ত্যাগ করেন এবং সেদিন সন্ধ্যায় রেডিওতে তার দেয়া বক্তব্যে তার অবস্থানের কথা পুণর্ব্যক্ত করেন।[৩১] জিন্নাহ্‌-র ঢাকা ত্যাগের পর ছাত্রলীগ এবং তমুদ্দন মজলিসের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে তমুদ্দন মজলিসের আহ্বায়ক শামসুল আলম তার দায়িত্ব মোহাম্মদ তোয়াহার কাছে হস্তান্তর করেন।[২৪] পরবর্তীতে তমুদ্দন মজলিস আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার জন্য কমিউনিস্টদের দায়ী করে একটি বিবৃতি প্রদান করে এবং পরে তারা আস্তে আস্তে আন্দোলনের পথ থেকে সরে আসে।

[সম্পাদনা]লিয়াকত আলি খানের ঢাকা সফর

১৯৪৮ সালের ১৮ নভেম্বর পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান পূর্ব পাকিস্তান সফরে আসেন। ২৭ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে তিনি এক ছাত্রসভায় ভাষণ দেন। এই সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের তরফ থেকে প্রদত্ত মানপত্রে বাংলা ভাষার দাবি পুণরায় উত্থাপন করা হয়, কিন্তু তিনি কোন মন্তব্য করেননি। ১৭ নভেম্বর তারিখে আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের এক সভায় আজিজ আহমদ, আবুল কাশেম, শেখ মুজিবুর রহমান, কামরুদ্দীন আহমদ, আবদুল মান্নান, তাজউদ্দিন আহমদ প্রমুখ একটি স্মারকলিপি প্রণয়ন করেন এবং সেটি প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খানের কাছে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রী এক্ষেত্রেও কোন সাড়া দেননি।[১৭][৩২]

[সম্পাদনা]ভাষা সমস্যার প্রস্তাবিত সমাধান

এর কিছুদিন পরই, পূর্ব বাংলা সরকারের পক্ষ থেকে ভাষা সমস্যার ব্যাপারে একটি বিস্তারিত জানতে মাওলানা আকরাম খানের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটি গঠন করে এবং তাদের এই বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরী করতে বলে।[৩৩] ৬ ডিসেম্বর ১৯৫০ সালের মধ্যে কমিটি তাদের প্রতিবেদন তৈরী করে যদিও এটি ১৯৫৮ সালের আগে প্রকাশ করা হয়নি। এখানে ভাষা সমস্যার সমাধানের লক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে একটি কার্য ব্যবস্থার প্রস্তাব করা হয়, যেখানে তারা বাংলাকে আরবি অক্ষরের মাধ্যমে লেখার সুপারিশ করে।[৩৪]

[সম্পাদনা]১৯৫২: ভাষা আন্দোলনের পুনর্জাগরণ

ভাষা আন্দোলনের ন্যায় আবেগিক বিষয়টির পুণরায় জোরালো হবার পেছনে ২৭শে জানুয়ারি ১৯৫২ সালের খাজা নাজিমুদ্দিনের ভাষণ প্রধান নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে।[২১] তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন খাজা নাজিমুদ্দিন ২৫শে জানুয়ারি ঢাকায় আসেন এবং ২৭শে জানুয়ারি পল্টন ময়দানের এক জনসভায় দীর্ঘ ভাষণ দেন। তিনি মূলতঃ জিন্নাহ্‌-র কথারই পুণরুক্তি করে বলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু।[৩০] রেডিওতে সরাসরি সম্প্রচারিত তার ভাষণে তিনি আরো উল্লেখ করেন কোন জাতি দু'টি রাষ্ট্রভাষা নিয়ে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে পারেনি।[৩০] নাজিমুদ্দিনের বক্তৃতার প্রতিবাদে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ২৯শে জানুয়ারি প্রতিবাদ সভা এবং ৩০শে জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট পালন করে। সেদিন ছাত্রসহ নেতৃবৃন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সমবেত হয়ে ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট ও প্রতিবাদ সভা এবং ২১শে ফেব্রুয়ারী প্রদেশব্যাপী হরতাল পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।[১৭]পরে তারা তাদের মিছিল নিয়ে বর্ধমান হাউসের (বর্তমান বাংলা একাডেমী) দিকে অগ্রসর হয়।[১৬]

১৯৫২ সালের ৩১শে জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার লাইব্রেরি হলে অনুষ্ঠিত সভায় মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ৪০ সদস্যের সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মী পরিষদ গঠিত হয়।[৮][৩৫] সভায় আরবি লিপিতে বাংলা লেখার সরকারি প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করা হয় এবং ৩০শে জানুয়ারির সভায় গৃহীত ধর্মঘটে সমর্থন দেয়া হয়। পরিষদ ২১শে ফেব্রুয়ারি হরতাল, সমাবেশ ও মিছিলের বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে।[৩০]

পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এসে সমবেত হয়। সমাবেশ থেকে আরবি লিপিতে বাংলা লেখার প্রস্তাবের প্রতিবাদ এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণের দাবি জানানো হয়। ছাত্ররা তাদের সমাবেশ শেষে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করে।[৩৬]

২০শে ফেব্রুয়ারি সরকার স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ২১শে ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকায় ১ মাসের জন্য সভা, সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিভিন্ন হলে সভা করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ৯৪, নবাবপুর রোডে অবস্থিত আওয়ামী মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মী পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরিষদের কিছু সদস্য নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার পক্ষে থাকলেও, সবশেষে ১১-৩ ভোটে [৩৭] ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।[১৭] ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে একই বিষয় নিয়ে পৃথক পৃথক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় সলিমুল্লাহ হলে ফকির সাহাবুদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ফজলুল হক মুসলিম হলে অনুষ্ঠিত সভায় নেতৃত্ব দেন আবদুল মোমিন। শাহাবুদ্দিন আহমদের প্রস্তাবে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদকে এই সিদ্ধান্তটি জানিয়ে দেয়ার দায়িত্ব নেন আবদুল মোমিন এবং শামসুল আলম।[৩৮]

[সম্পাদনা]২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনা

রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার অধিকার আদায়ে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় আয়োজিত মিছিল পুলিশের গুলিতে নিহত আবুল বরকত

সকাল ৯টা থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এসে জড়ো হয়। তারা ১৪৪ ধারা জারির বিপক্ষে স্লোগান দিতে থাকে এবং পূর্ব বঙ্গ আইন পরিষদের সদস্যদের ভাষা সম্পর্কে সাধারণ জনগণের মতকে বিবেচনা করার আহ্বান জানাতে থাকে। পুলিশ অস্ত্র হাতে সভাস্থলের চারদিক ঘিরে রাখে। বিভিন্ন অনুষদের ডীন এবং উপাচার্য সে সময় উপস্থিত ছিলেন। বেলা সোয়া এগারটার দিকে ছাত্ররা গেটে জড়ো হয়ে প্রতিবন্ধকতা ভেঙে রাস্তায় নামতে চাইলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে ছাত্রদের সতর্ক করে দেয়।[৮] কিছু ছাত্র এই সময়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের দিকে দৌঁড়ে চলে গেলেও বাকিরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পুলিশ দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে এবং পুলিশের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। উপাচার্য তখন পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ বন্ধ করতে এবং ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ত্যাগের নির্দেশ দেয়। কিন্তু ছাত্ররা ক্যাম্পাস ত্যাগ করার সময় কয়েকজনকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার শুরু করলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। অনেক ছাত্রকে গ্রেফতার করে তেজগাঁও নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় ছাত্ররা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের বিক্ষোভ পুণরায় শুরু করে।

বেলা ২টার দিকে আইন পরিষদের সদস্যরা আইনসভায় যোগ দিতে এলে ছাত্ররা তাদের বাঁধা দেয় এবং সভায় তাদের দাবি উত্থাপনের দাবি জানায়। কিন্তু পরিস্থিতি নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে যখন কিছু ছাত্র সিদ্ধান্ত নেয় তারা আইন সভায় গিয়ে তাদের দাবি উত্থাপন করবে। ছাত্ররা ঐ উদ্দেশ্যে আইনসভার দিকে রওনা করলে বেলা ৩টার দিকে পুলিশ দৌঁড়ে এসে ছাত্রাবাসে গুলিবর্ষণ শুরু করে।[২১] পুলিশের গুলিবর্ষণে আব্দুল জব্বার এবং রফিক উদ্দিন আহমেদ ঘটনাস্থলেই নিহত হন।[৩৯] এছাড়া আব্দুস সালাম, আবুল বরকতসহ আরও অনেকে সেসময় নিহত হন।[৮][৪০]এই দিন অহিউল্লাহ নামের একজন ৮/৯ বছরেরে কিশোরও নিহত হয়।[৮]

ছাত্র হত্যার সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে জনগণ ঘটনাস্থলে আসার উদ্যোগ নেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সমস্ত অফিস, দোকানপাট ও পরিবহণ বন্ধ হয়ে যায়। ছাত্রদের শুরু করা আন্দোলন সাথে সাথে জনমানুষের আন্দোলনে রূপ নেয়।[২৮] রেডিও শিল্পীরা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে শিল্পী ধর্মঘট আহ্বান করে এবং রেডিও স্টেশন পূর্বে ধারণকৃত অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে থাকে।[৪১]

এই সময় গণপরিষদে অধিবেশন শুরুর প্রস্তুতি চলছিল। পুলিশের গুলির খবর জানতে পেরেমাওলানা তর্কবাগিশসহ বিরোধী দলীয় বেশ কয়েকজন অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করে বিক্ষুদ্ধ ছাত্রদের পাশে এসে দাঁড়ান।[৮] গণপরিষদে মনোরঞ্জন ধর, বসন্তকুমার দাস, শামসুদ্দিন আহমেদ এবং ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত-সহ ছোট ছয়জন সদস্য মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিনকে হাসপাতালে আহত ছাত্রদের দেখতে যাবার জন্যে অনুরোধ করেন এবং শোক প্রদর্শনের লক্ষ্যে অধিবেশন স্থগিত করার কথা বলেন।[২১] কোষাগার বিভাগের মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগিশ, শরফুদ্দিন আহমেদ, সামশুদ্দিন আহমেদ খন্দকার এবং মসলেউদ্দিন আহমেদ এই কার্যক্রমে সমর্থন দিয়েছিলেন। যদিও নুরুল আমিন অন্যান্য নেতাদের অনুরোধ রাখেননি এবং অধিবেশনে বাংলা ভাষার বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন।[৮][২১]

[সম্পাদনা]পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্য

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার লালবাগ থানার ওসি ছিলেন এম এ গোফরান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাটি সেদিন তার দায়িত্বে ছিল। ঐ দিন ছাত্রদের প্রধামমন্ত্রী নুরুল আমিনকে বাংলা ভাষার দাবিতে স্মারকলিপি দেবার কথা ছিল। ২১ ফেব্রুয়ারি এসেম্বলি চলাকালীন ছাত্রদের কর্মসূচিতে বাধা দেবার নির্দেশ আসে রাওয়ালপিন্ডি থেকে। তখন ঢাকার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট (ডিএম) ছিলেন কোরেইশী নামের এক পঞ্জাবি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে রাত ১০টায় এম এ গোফরানের কাছে ডিসি স্বাক্ষরিত সেই চিঠিটি পৌঁছায় এবং তখনই তা সাধারণ ডায়েরিভুক্ত করা হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজারবাগ থেকে স্পেশাল আর্মস ফোর্সের একটি বড় দল ক্যাম্পাসে আসে। তাদের ইন-চার্জ ছিলেন পঞ্জাবি কর্মকর্তা আর আই নবীশের খান। ঢাকার ডিএম কোরেইশী, ডিআইজিপি এ জেড ওবায়দুল্লাহ, এসপি ইদ্রিস ও এডিশনাল এসপি মাসুদ মাহমুদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

৫ জন ছাত্র একত্রিত হলেই ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার অভিযোগে ধরে নিতে প্রস্তুত ছিল পুলিশ। এ অবস্থায় বেলা ৩টা-সাড়ে ৩টার দিকে ছাত্ররা ৪ জন করে অ্যাসেম্বলি হলের দিকে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তাতেও বাধা দেওয়া হয়। পুলিশের মারমুখী আচরণের প্রতিবাদে ইটপাটকেল নিক্ষেপও শুরু হয়ে যায়। হস্টেল থেকে বয়রা টুকরিতে করে, লুঙ্গিতে ভরে ইটের টুকরো ছাত্রদের কাছে সরবরাহ করতে থাকে। তারা নিজেরাও ইটপাটকেল ছুড়ে পুলিশকে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। ওই সময় ডিআইজিপি ওবায়দুল্লাহর পিঠে ইট পড়ে। আর আই নবীশের খানের মাথায় পড়ে ইটের একটি টুকরো। তখনই ডিএম কোরেইশী গুলি করার নির্দেশ দেন। অন্যদিকে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার নিয়াজ মোহাম্মদ খান ছাত্রদের মিছিল সমাবেশে বাঁধা দেওয়ায় বিপক্ষে অবস্থান নেন।

পুলিশ লাশগুলো সরিয়ে ফেলে। একমাত্র আবুল বরকতের মা ছাড়া কাউকে লাশ দেখার সুযোগ দেয়া হয়নি। মিল ব্যারাক পুলিশ লাইন মসজিদের ইমাম সাহেব লাশের গোসল ও জানাজা পড়ান। কাফনের জন্য থান কাপড় আনা হয় পুরনো ঢাকার পাটুয়াটুলীর "আম্বিয়া ক্লথ স্টোর" থেকে। ঐ দোকানের মালিক ছিলেন তখনকার সিটি ডিএসপি কুদ্দুস দেওয়ান। লাশ দাফনের সময় উপস্থিত ছিলেন ডিআইজি এজেড ওবায়দুল্লাহ, এসপি ইদ্রিস। দাফনের কাজ রাত চারটার দিকে শেষ হয়।[৪২]

[সম্পাদনা]২২ ফেব্রুয়ারির ঘটনা

২২শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে জানাজ শেষে বিশাল মিছিল বের হয়।

সেদিন আইন পরিষদে বিরোধী দলের সদস্যরা বিষয়টি উত্থাপন করেন। তারা প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমিনকে হাসপাতালে আহত ছাত্রদের দেখতে এবং অধিবেশন মুলতবি ঘোষণার আহ্বান জানান। ক্ষমতাসীন দলের কিছু সদস্যও এই আহ্বানে সমর্থন জানান। কিন্তু নুরুল আমিন তাদের আহ্বানের সাড়া না দিয়ে অধিবেশন অব্যাহত রাখেন এবং হাসপাতালে যেতে অস্বীকৃত হন।

ফেব্রুয়ারির ২২ তারিখে সারা দেশ হয়ে উঠে মিছিল ও বিক্ষোভে উত্তাল। জনগণ ১৪৪ ধারা অমান্য করার পাশাপাশি শোক পালন করতে থাকে।[২১] বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থল ত্যাগ করে ছাত্রদের মিছিলে যোগ দেয়। সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শহরের নাগরিক সমাজ ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাস পরিদর্শন করেন। পরে তাদের অংশগ্রহণে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে বিশাল মিছিলে অংশগ্রহণ করে। বেলা ১১টার দিকে ৩০ হাজার লোকের একটি মিছিল কার্জন হলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। প্রথমে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে এবং এক পর্যায়ে তাদের উপর গুলিবর্ষণ করে। এই ঘটনায় সরকারি হিসেবে ৪ জনের মৃত্যু হয়।

শহরের বিভিন্ন অংশে একইভাবে জানাজা ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন কলেজ, ব্যাংক-সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে এই মিছিলে অংশগ্রহণ করতে আসে।[২৮] বিকেলে আর একটি বিশাল মিছিল পুলিশ দ্বারা আক্রান্ত হয়। বিক্ষুদ্ধ জনতা সরকার পক্ষের প্রথম সারির দুটি সংবাদপত্র জুবিলী প্রেস এবং মর্নিং নিউজ অফিসে অগ্নিসংযোগ করে।[৪৩][৪৪] উল্লেখ্য, জুবিলী প্রেস থেকে সকালের পত্রিকা বের হয়েছিল।

একই দিনে পুলিশ দ্বারা আক্রমণ ও হত্যার বিভিন্ন ঘটনা ঘটে। নবাবপুর রোডের বিশাল জানাজার মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষন করে। এই গুলিবর্ষনে শহীদ হন ঢাকা হাইকোর্টের কর্মচারী শফিউর রহমান, ওয়াহিদুল্লাহ এবং আবদুল আউয়াল।[১৭] একই রাস্তায় অহিদুল্লাহ নামে নয় বছরের এক বালকের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়।[৮][৪৫] জনশ্রুতি আছে, পুলিশ কিছু লাশ কৌশলে সরিয়ে ফেলে। দৈনিক আজাদের তথ্যমতে মৃতের সংখ্যা ছিল ৪ এবং সৈনিকের তথ্যমতে ছিল ৮।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

[সম্পাদনা]ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের ভাষ্য

বদরুদ্দীন উমর ও বশীর আল হেলাল তাঁদের ভাষা আন্দোলন সম্পর্কিত ইতিহাস গ্রন্থে মুসলিম লীগের প্রতিক্রিয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। ২১শে ফেব্রুয়ারি গুলিবর্ষণের ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন, বর্তমান বাংলা একাডেমীতে (তৎকালীন বর্ধমান হাউস) ক্ষমতাসীন প্রাদেশিক মুসলিম লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক আহ্বান করা হয়। এ বৈঠক সম্পর্কে জানা যায় মোহন মিঞার জবানিতে যা বদরুদ্দীন উমর উদ্ধৃত করেছেন। (তাঁর নেয়া সাক্ষাৎকার) 'পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতির তৃতীয় খণ্ডে।' মোহন মিঞা তাঁকে জানিয়েছিলেন যে "সেই রাত্রেই বর্ধমান হাউসে প্রাদেশিক লীগ ওয়ার্কিং কমিটির একটি জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হল। এই মিটিং পার্লামেন্টারি পার্টির মিটিং-এর পর হয়েছিল। মিটিং ২৪ তারিখের ভোর পর্যন্ত চলেছিল। এই সভাতে আমরা বিষয়টির নিন্দা করলাম এবং একই সাথে বিচারিক তদন্ত দাবি করলাম। অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও আমরা সুপারিশ করেছিলাম। এসব খবর সংবাদপত্রেও প্রকাশিত হয়েছিল।"

আসলে মিটিং ২৩ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলেছিল। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রাদেশিক লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল্লাহেল বাকী। এরপর তারা 'ঢাকার গোলযোগ সম্পর্কে মুসলিম লীগ' শিরোনামে চারপাতার একটি প্রচারপত্র প্রকাশ করেন। এতে ছিল নেতৃবৃন্দের বিবৃতি, মুসলিম লীগ ওয়ার্কিং কমিটির প্রস্তাব, মুসলিম লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির প্রস্তাব। স্বাক্ষর করেছিলেন আবদুল্লাহেল বাকী, সহ-সভাপতি খাজা হবিবুল্লাহ, সম্পাদক ইউসুফ আলী চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক গিয়াসুদ্দীন পাঠান ও শাহ্ আজিজুর রহমান। প্রচারপত্রে বলা হয়,

"দুঃখের বিষয়, আমাদের সরলপ্রাণ ছাত্রবৃন্দের এই আন্দোলনকে অবলম্বন করিয়া রাষ্ট্রের দুশমন ও স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিগণ জনসাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি এবং আইন ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করিয়া দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করিবার প্রয়াস পাইতেছে। এই আন্দোলন আরম্ভ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বহু সন্ত্রাসবাদী ও কম্যুনিস্টবাদী এবং পাকিস্তানের শত্রুর গুপ্তচর অলক্ষ্যে পাকিস্তানে প্রবেশ করিয়া ভিত্তিহীন, উত্তেজনামূলক, অতিরঞ্জিত প্রচারণা ও গুজব রটাইয়া এবং অজস্র অর্থ ব্যয়ে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করিবার চেষ্টা করিতেছে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ক্ষমতালোলুপ কতিপয় ব্যক্তি ইহাকে সুবর্ণ সুযোগ মনে করিয়া ইন্ধন যোগাইতেছে।... যে মুসলিম লীগের আপ্রাণ চেষ্টায় এবং ত্যাগের ফলে পাকিস্তান অর্জিত হইয়াছে তাহার মূলোৎপাটন করতঃ কম্যুনিজমের বীজ রোপণ করিয়া পাকিস্তানের ধ্বংস সাধনই আমাদের দুশমনদের মুখ্য উদ্দেশ্য। "

প্রচারপত্রটি সরকারি প্রেস থেকে ৫ লক্ষ কপি ছেপে বিলি করা হয়েছিল।[৪৬]

[সম্পাদনা]পরবর্তী ঘটনা (১৯৫২)

২৩ ফেব্রুয়ারি সারা রাত ধরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ তৈরিতে কাজ করেন, যা ২৪ ফেব্রুয়ারি তারিখের মধ্যে সম্পূর্ণ হয়েছিল। তাতে একটি হাতে লেখা কাগজ গেঁথে দেয়া হয়, যাতে লেখা ছিল শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ[৪৭] স্মৃতিস্তম্ভটি উদ্বোধন করেন আন্দোলনে নিহত শফিউর রহমানের পিতা মাহবুবুর রহমান। স্মৃতিস্তম্ভটি পুলিশ ফেব্রুয়ারি ২৬ তারিখে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছিল।[৪৮] ফেব্রুয়ারি ২৫ তারিখে, কল-কারখানার শ্রমিকরা নারায়ণগঞ্জ শহরে ধর্মঘটের ডাক দেয়।[৪৭] ফেব্রুয়ারির ২৯ তারিখে প্রতিবাদে অংশগ্রহকারীরা ব্যাপক পুলিশী হামলার শিকার হন।[৪৯]

২১ ও ২২শে ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর সরকার আন্দোলনের বিপক্ষে জোরালো অপপ্রচার চালাতে থাকে। তারা জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করতে থাকে যে কমিউনিস্ট ও পাকিস্তানবিরোধীদের প্ররোচনায় ছাত্ররা পুলিশকে আক্রমণ করেছিল। তারা বিভিন্নভাবে তাদের এই প্রচার অব্যাহত রাখে। তারা সারা দেশে প্রচারণাপত্র বিলি করে। সংবাদপত্রগুলোকে তাদের ইচ্ছানুসারে সংবাদ পরিবেশনে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে।[৫০] পাশাপাশি ব্যাপক হারে সাধারণ জনগণ ও ছাত্র গ্রেফতার অব্যাহত রাখে। ২৫শে ফেব্রুয়ারি আবুল বরকতের ভাই একটি হত্যা মামলা দায়ের করার চেষ্টা করলে, উপযুক্ত কাগজের অভাব দেখিয়ে সরকার মামলাটি গ্রহণ করেনি।[৫১] রফিকউদ্দিন আহমদের পরিবার একই ধরনের একটি প্রচেষ্টা নিলে, ঐ একই কারণে তা-ও বাতিল হয়। ৮ই এপ্রিল সরকার তদন্ত শুরু করে। কিন্তু এর প্রতিবেদনে মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রদের উপর গুলি করার কোন উল্লেখযোগ্য কারণ দেখাতে পারেনি।[৫২] সরকারের প্রতিশ্রুত প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ প্রত্যাখান করে। ১৪ই এপ্রিল গণপরিষদের অধিবেশন শুরু হলে রাষ্ট্রভাষার প্রশ্ন সামনে চলে আসে।[৫৩] এই সমস্যা নিরসনের পক্ষে অনেক সদস্য মত প্রকাশ করলেও মুসলিম লীগের সদস্যরা এই ব্যাপারে নীরব থাকেন। এই বিষয়ের বিপক্ষে তারা ভোট দিলে তা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। এর মাধ্যমে তারা ২১ ও ২২শে ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর গণপরিষদে বাংলা ভাষার পক্ষে কথা বলার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন।[৫৪] ২৭শে এপ্রিল বার সেমিনার হলে কেন্দ্রীয় সর্বদলীয় কর্মপরিষদ একটি সেমিনার আহ্বান করে এবং সরকারের কাছে ২১-দফা দাবি উত্থাপন করে। ১৬ই এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খুললে সেদিন ছাত্ররা সমাবেশ করে। বিশ্ববিদ্যালয় লীগ কমিটির প্রধান নেতা আব্দুল মতিন গ্রেফতার হলে কমিটি আবার পুণঃর্গঠিত হয়।

[সম্পাদনা]শহীদ মিনার

মূল নিবন্ধ: কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা ২৩ ফেব্রুয়ারির রাত শেষে শহীদ মিনার তৈরির কাজ শুরু করে। কাজ শেষ হয় ২৪ ফেব্রুয়ারির ভোরে। শহীদ মিনারের নির্মাণের খবর দৈনিক সংবাদপত্রগুলোতে পাঠানো হয় ঐ দিনই। শহীদ বীরের স্মৃতিতে - এই শিরোনামে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ছাপা হয় শহীদ মিনারের খবর।[১৮]

মিনারটি তৈরি হয় মেডিকেলের ছাত্র হোস্টেলের (ব্যারাক) বার নম্বর শেডের পূর্ব প্রান্তে। কোণাকুণিভাবে হোস্টেলের মধ্যবর্তী রাস্তার গা-ঘেষে। উদ্দেশ্য ছিল যাতে বাইরের রাস্তা থেকে সহজেই দৃশ্যমান হয় এবং যে-কোনো শেড থেকে বেরিয়ে এসে ভেতরের লম্বা টানা রাস্তাতে দাঁড়ালেই যেন চোখে পড়ে। শহীদ মিনারটি ছিল ১০ ফুট উচ্চ ও ৬ ফুট চওড়াবিশিষ্ট। মিনার তৈরির তদারকিতে ছিলেন জিএস শরফুদ্দিন (ইঞ্জিনিয়ার শরফুদ্দিন নামে পরিচিত), নকশা অঙ্কন করেছিলেন বদরুল আলম। তাঁদের সাথে ছিলেন সাঈদ হায়দার। শহীদ মিনার নির্মাণে সহযোগিতা করেন দুইজন রাজমিস্ত্রী। মেডিকেল কলেজের সম্প্রসারণের জন্য জমিয়ে রাখা ইট, বালু এবং পুরনো ঢাকার পিয়ারু সর্দারের গুদাম থেকে সিমেন্ট আনা হয়। ভোর হবার পর একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় মিনারটি।[১৮] ঐ দিনই অর্থাৎ ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে, ২২ ফেব্রুয়ারির শহীদ শফিউরের পিতা অনানুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন।[৩২] ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে দশটার দিকে শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন দৈনিক আজাদ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন[১৮]উদ্বোধনের দিন অর্থাৎ ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ও পাকিস্তান সেনাবাহিনী মেডিকেলের ছাত্রদের আবাসিক হোস্টেল ঘিরে ফেলে এবং প্রথম শহীদ মিনার ভেঙ্গে ফেলে।[১৮] এরপর ঢাকা কলেজেও একটি শহীদ মিনার তৈরি করা হয়,[৩২] এটিও একসময় সরকারের নির্দেশে ভেঙ্গে ফেলা হয়।

অবশেষে, বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেবার পরে ১৯৫৭ সালে সরকারীভাবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাজ শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির তত্ত্বাবধানে ১৯৬৩ সালে শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ শেষ হয়।[৩২]

[সম্পাদনা]একুশের গান

মূল নিবন্ধ: আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো

২১ ফেব্রুয়ারি গুলিবর্ষণের ঘটনার পর, একুশ নিয়ে প্রথম গান লেখেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। গানটি হল - আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি। প্রথমে আব্দুল লতিফ সুর দেন।[৫৫] পরে করাচী থেকে ঢাকা ফিরে ১৯৫৪ সালে আলতাফ মাহমুদ আবার নতুন সুর দিলেন।[৫৬] সেই থেকে ওটা হয়ে গেল একুশের প্রভাতফেরীর গান। বর্তমানে আলতাফ মাহমুদের সুর করা গানটিই গাওয়া হয়। ১৯৫৪ সালে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত একুশে সঙ্কলনে প্রকাশিত গানটি। তৎকালীন সরকার সঙ্কলনটি বাজেয়াপ্ত করে। জহির রায়হান তাঁর জীবন থেকে নেয়াছবিতে এই গানটি ব্যবহার করার পর এর জনপ্রিয়তা আরো বৃদ্ধি পায়। ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাবার পর এই গানটিও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এর সুনাম আরো বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ইতিমধ্যে সুইডিশ ও জাপানি ভাষার অনুদিত হয়েছে।[৫৭] বিবিসি শ্রোতা জরিপে বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ গানের তালিকায় এটি তৃতীয় স্থান লাভ করেছে।

[সম্পাদনা]চূড়ান্ত পর্যায় (১৯৫৩–৫৬)

কেন্দ্রীয় সর্বদলীয় কর্মপরিষদ ২১শে ফেব্রুয়ারি স্মরণে শহীদ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শেখ মজিবুর রহমানও দিবসটি পালনে সম্মত হন।[৫৮] ১৮ই ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা শান্তিপূর্ণভাবে ২১শে ফেব্রুয়ারি পালনের উদ্দেশ্যে প্রশাসনের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। ভাষা আন্দোলনের এক বছর পূর্তিতে সারা দেশব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ দিবস পালিত হয়। অধিকাংশ অফিস, ব্যাংক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মানুষ প্রভাত ফেরীতে যোগ দেন। হাজার হাজার মানুষ শোকের প্রতীক কালো ব্যাজ ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে আসে এবং মিছিল করে প্রাঙ্গন ত্যাগ করে। সহিংসতা রোধের জন্য স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়। প্রায় লক্ষ লোকের উপস্থিতিতেআরমানিটোলায় বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে এক-দফা দাবি জানানো হয়, ভাষার দাবির পাশাপাশি মাওলানা ভাসানীসহ রাজবন্দীদের মুক্তির দাবি উত্থাপন করা হয়।[৮] রেলওয়ের কর্মচারীরা ছাত্রদের দাবির সাথে একমত হয়ে ধর্মঘট পালন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রাবাসের ছাত্ররা শহীদদের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করে।[৫৯] অন্যদিকে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ফজলুর রহমান বলেন যে, বাংলাকে যারা রাষ্ট্রভাষা করতে চায় তারা দেশদ্রোহী। তার এই বক্তব্যে জনগণ হতাশ হয়ে তাঁকে কালো ব্যাজ দেখায়। সাধারণ মানুষের মাঝে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই লেখা সম্বলিত স্মারক ব্যাজ বিলি করা হয়। ভাষা সংগ্রাম কমিটি দিবসটি পালন উপলক্ষে সমাবেশ আহ্বান করে। আন্দোলনকে আরো বেগবান করার জন্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ভাষা আন্দোলনের মূল অনুপ্রেরণাদায়ী অমর সঙ্গীত আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো... সেই বছর কবিতা আকারে লিফলেটে প্রকাশিত হয়। ১৯৫৪ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ছাদে কালো পতাকা উত্তোলনের সময় পুলিশ কিছু ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে।[৬০]

[সম্পাদনা]যুক্তফ্রন্ট গঠন

১৯৫৪ সালকে পূর্ব বঙ্গের রাজনৈতিক ও ভাষা আন্দোলনের ব্যাপক পট পরিবর্তনের বছর হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে গঠিত যুক্তফ্রন্ট এবং আওয়ামী লীগ বৃহত্তর প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসনের প্রস্তাবে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ নিন্দা জানায়। নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তফ্রন্ট যেন আন্দোলনের কোন সুযোগ না পায় সেজন্য মুসলিম লীগ তাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখে।[৬১] সেজন্য তারা ভাষা আন্দোলন দিবসের আগে যুক্তফ্রন্টের একাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে।[৬২] অন্যদিকে ভাষা সংক্রান্ত বিষয়ের অচলাবস্থা নিরসনের উদ্দেশ্যে মুসলিম লীগের সংসদীয় কমিটির একটি সভা করাচীতে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী বগুড়া এবং সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বাংলা ভাষাকে উর্দু ভাষার সমমর্যাদা দিয়ে রাষ্ট্রভাষা করে হবে।[৬৩] এই সিদ্ধান্তের ফলে পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশের ছয়টি ভাষাকে একই মর্যাদা দেয়ার দাবি তোলে সেখানকার প্রতিনিধিত্বকারীরা।[৬৪] আবদুল হক (বাবা উর্দু নামে পরিচিত) এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান এবং তাঁর এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষ অবস্থানে অনড় থাকেন। তাঁর নেতৃত্বে ২২শে এপ্রিল করাচীতে এক বিশাল প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হয়। প্রায় ১ লক্ষ মানুষ এই মিছিলে অংশ নেয় ও মুসলিম লীগের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায়।[৬৫][৬৬] সেখানে সহিংস ঘটনায় সিন্ধি ভাষার দৈনিক আল ওয়াহিদ পত্রিকার অফিস পুড়িয়ে দেয়া হয়।[৬৭] অন্যদিকে ২৭শে এপ্রিল বাংলা ও অন্যান্য ভাষাকে সমমর্যাদা দেয়ার দাবিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তাঁরা সংখ্যালঘু উর্দুভাষী যারা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছিল তাদের মানসিকতার তীব্র সমালোচনা করেন। এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে, সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নের উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যায়। গণপরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট এবার অধিকাংশ আসনে জয়লাভ করে; যেখানে মুসলিম লীগের আসনসংখ্যা ছিল অত্যন্ত কম।[২৮][৬৬]

যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় এলে বাংলা একাডেমী গঠন করে। এই প্রতিষ্ঠান বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের সংরক্ষণ গবেষণা এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করবে।[৬৮] যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার কিছুদিনের মধ্যেই পাকিস্তানের গভর্ণর জেনারেল মালিক গোলাম মাহমুদ ৩০ মে ১৯৫৪ সালে কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক সরকার বাতিল ঘোষনা করে।[৬২] ৬ জুন ১৯৫৫ তারিখে যুক্তফ্রন্ট পুণর্গঠন করা হয়; যদিও আওয়ামী লীগ মন্ত্রীপরিষদে যোগ দেয়নি।[৬১]

১৯৫৬ সালে প্রথমবারের মতো সরকারের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতায় ২১শে ফেব্রুয়ারি পালিত হয়। শহীদ মিনার নতুন করে তৈরী করার লক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে একটি বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পুলিশের গুলিতে নিহত ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে পাকিস্তানের গণপরিষদে কার্যক্রম পাঁচ মিনিট বন্ধ রাখা হয়। সারাদেশব্যাপী পালিত হয় শহীদ দিবস এবং বেশীরভাগ প্রতিষ্ঠান ছিল বন্ধ।[৬১][৬৯] আরমানীটোলায় এক বিশাল সমাবেশের নেতৃত্ব দেন মাওলানা ভাসানী।[৬১][৭০][৭১]

[সম্পাদনা]সংবিধান সংশোধন

৭ মে ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগের সমর্থনে বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দেয়া হয়।[৬৬] বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃত দিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয় ২৯ ফেব্রুয়ারী ১৯৫৬ সালে। সংবিধানের ২১৪(১) অধ্যায়ে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে লেখা হয়:

"214.(1) The state language of Pakistan shall be Urdu and Bengali "

অর্থাৎ, উর্দু এবং বাংলা হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। যদিও আইয়ুব খানের প্রতিষ্ঠিত সামরিক সরকার উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছিল। ৬ জানুয়ারী ১৯৫৯ সালে সামরিক শাসন কোনো সরকারী বিবৃতি জারি করে এবং ১৯৫৬ সালের সংবিধানে উল্লেখিত দুই রাষ্ট্র ভাষার উপর সরকারী অবস্থান পুণরায় ব্যক্ত করে।[৭২]

[সম্পাদনা]বাংলাদেশের স্বাধীনতা

মূল নিবন্ধ: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ
ভাষা শহীদদের স্মরণে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত "মোদের গরব" ভাস্কর্য

যদিও ১৯৫৬ সালের পর সরকারি ভাষার বিতর্ক সম্পন্ন হয়, কিন্তু আয়ুব খানের সামরিক শাসন পাকিস্তানের পাঞ্জাবি, ও পশতুনদের দেনাগুলো বাঙালিদের ওপর চাপিয়ে দেয়। জনসংখ্যার দিক থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও সামরিক ও বেসামরিক চাকুরীর ক্ষেত্রে বাঙালিদের উপস্থিতি ছিলো নগণ্য। এছাড়া জাতীয় রাজস্ব ও সরকারি সাহায্যের দিক থেকেও বাঙালিদের প্রাপ্ত অংশ ছিলো খুবই কম। জাতিগতভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে বাঙালিদের এই বৈষম্যের ফলে বাঙালির মধ্যে ক্ষোভের জন্ম নিতে থাকে। এরই প্রভাব হিসেবে আঞ্চলিক স্বার্থসংরক্ষণকারী রাজনৈতিক দল হিসেবে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের সমর্থন বাড়তে থাকে।[২৫] এর ফলেই পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ ভাষা আন্দোলনের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আরো বড় অধিকার আদায় ও গণতন্ত্রের দাবিতে ছয় দফা আন্দোলন শুরু করে। এই ছয় দফার একটি দাবি ছিলো পূর্ব পাকিস্তানের নাম বাংলাদেশ ঘোষণা করতে হবে। এবং এই আন্দোলনই পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে রূপ নেয়।[৩] [৯]

[সম্পাদনা]প্রভাব

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার; ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে নির্মিত

বাঙালির সাংস্কৃতিক জীবনে বাংলা ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব বিদ্যমান। বাঙালির মধ্যে বাংলা ভাষার বিভিন্ন উপলক্ষ্য উদযাপন ও ভাষার উন্নয়নের কাজ করার মানসিকতা তৈরিতে এ আন্দোলনের যথেষ্ট ভূমিকা আছে। বাংলাদেশে ২১ ফেব্রুয়ারি 'মাতৃভাষা দিবস' বা 'শহীদ দিবস' হিসেবে ও একই সাথে একটি রাষ্ট্রীয় ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। এছাড়া ফেব্রুয়ারি মাসটিকে আরো নানাভাবে উদযাপিত হয় যার মধ্যে আছে, মাসব্যাপী বইমেলা উদযাপন, যা একুশে বইমেলা নামে পরিচিত। এছাড়াও ভাষা আন্দোলনে আত্মত্যাগকারীদের ত্যাগের সম্মানে এ মাসেই ঘোষণা ও প্রদান করা হয় বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাষ্ট্রীয় বেসামরিক পদক 'একুশে পদক'।[৭৩] মানুষের ভেতর একুশের আবেগ পৌঁছে দিতে একুশের ঘটনা ও চেতনা নিয়ে রচিত হয়েছে বিভিন্ন প্রকার দেশাত্মবোধক গান, নাটক, কবিতা ও চলচ্চিত্র। তন্মধ্যে সবিশেষ উল্লেখযোগ্য আবদুল গাফফার চৌধুরী রচিত গান আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, যা সুরারোপ করেছেন সুরকার আলতাফ মাহমুদ[৭৪] ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর থেকেই বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাষা আন্দোলন প্রভাব সূচিত হয়ে আসছে। রচনাগুলোর মধ্যে আছে - শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী রচিত নাটক কবর; কবিশামসুর রাহমান রচিত কবিতা বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা এবং ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯; জহির রায়হান রচিত উপন্যাস একুশে ফেব্রুয়ারি; বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান রচিত আর্তনাদউল্লেখযোগ্য। এছাড়া ভাষা আন্দোলনকে উপজীব্য করে নির্মিত হয়েছে জহির রায়হান পরিচালিতচলচ্চিত্র জীবন থেকে নেয়া[৭৫] ২১শে ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার ইউনেস্কোর কাছে লিখিতভাবে প্রস্তাব করে, যা ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর সংস্থার ৩০তম সাধারণ অধিবেশনে নিরঙ্কুশ সমর্থন পেয়ে পাশ হয়।[৭৬]

প্রথম শহীদ মিনারটি ভেঙ্গে ফেলার ২বছর পর ১৯৫৪ সালে নিহতদের স্মরণে নতুন একটি শহীদ মিনার তৈরী করা হয়। ১৯৫৭ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের সহযোগিতায় বড় পরিসরে শহীদ মিনার তৈরীর কাজ শুরু করা হয়। নতুন শহীদ মিনারের স্থপতি ছিলেন হামিদুর রহমান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল চত্ত্বরে বড় আকারের এই স্থাপনাটি নির্মাণ করা হয়। মূল বেদির উপর অর্ধ-বৃত্তাকারে সাজানো ৫টি স্তম্ভের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে মা তার শহীদ সন্তানদের সাথে দাঁড়িয়ে আছেন। ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসনের কারণে স্থাপনাটির নির্মাণ কাজের অগ্রগতি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ১৯৬৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি আবুল বরকতের মা হাসনা বেগম শহীদ মিনারটির উদ্বোধন করেন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী এটি ভেঙ্গে দেয়া। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার এটি পুণরায় নির্মাণ করে।[৭৭]

পূর্ব পাকিস্তান ছাড়াও ভারতের আসম রাজ্যে বাংলা ভাষাকে সমমর্যাদা দেয়ার লক্ষ্যে আন্দোলন হয়েছিল। ১৯ মে, ১৯৬১ সালে সিলচার রেল স্টেশনে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য দাবি জানালে পুলিশের গুলিতে ১১ বাঙ্গালী শহীদ হন। পরবর্তীতে আসামের বাংলাভাষী লোকসংখ্যা বেশি রয়েছে এমন ৩টি জেলাতে বাংলাকে আধা-সরকারী ভাষার মর্যাদা দেয়া হয়েছে।[৭৮]

[সম্পাদনা]সমালোচনা

যদিও পূর্ব পাকিস্তানের অনেক বাঙালি মনে করেন যে, বাংলা ভাষা আন্দোলন জাতিগত জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে সংঘটিত হয়েছিল; কিন্তু, এই আন্দোলনের মাধ্যমে পাকিস্তানের দুই অংশের সংস্কৃতির পার্থক্যগুলো সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে।[৩][২৫][৭৯] পশ্চিম পাকিস্তানে এই আন্দোলনটি পাকিস্তানি জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে বিভাগীয় উত্থান বলে মনে করা হয়।[৮০] দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিকে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রে "একমাত্র উর্দু" নীতি প্রত্যাখ্যান করাকে মুসলমানদের পারসিক-আরবি সংস্কৃতি এবং পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠার মূল মতাদর্শের গুরুতর লঙ্ঘন হিসাবে দেখা হয়।[৩] পূর্ব পাকিস্তানের বেশ কয়েকজন শক্তিশালী রাজনীতিবিদ মনে করেন যে "উর্দু" হল ভারতীয় ইসলামী সংস্কৃতির অংশ, আর বাংলাকে তারা হিন্দু সংস্কৃতির সংমিশ্রণে তৈরী বাংলা সংস্কৃতি হিসাবে বিবেচনা করতো।[৯] অধিকাংশই যারা "একমাত্র উর্দু" নীতির পক্ষে ছিলেন, তারা মনে করতেন যে উর্দু কেবলমাত্র পাকিস্তান দেশের ভাষা হিসাবেই নয়, বরং সমগ্র জাতির ভাষা হিসাবে উর্দুকে প্রতিষ্ঠিত করা প্রয়োজন। এই ধরনের চিন্তা-ভাবনাও উর্দু নীতির বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার অন্যতম কারণ হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল; কেননা, পাকিস্তানে তখন আরও বেশ কিছু ভাষাগত পার্থক্যের সম্প্রদায় ছিল।[৯] ১৯৬৭ সালের শেষের দিকে আইয়ুব খান বলেন যে, "পূর্ব পাকিস্তান... এখনো হিন্দু সংস্কৃতি এবং প্রভাবের অধীনে রয়েছে।"[৯]

আন্দোলনের পর আওয়ামী মুসলিম লীগ বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে শুরু করে এবং দলের নাম থেকে "মুসলিম" শব্দটি বাদ দিয়ে দেয়।[৮১] ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানের জাতিগত জাতীয়তাবাদীভিত্তিক দলগুলোর কার্যক্রমে গতির সঞ্চার করে।[৩]পাশাপাশি পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতা, কেন্দ্রীয় সরকার এবং যুক্তফ্রন্টের নেতৃত্বে প্রদেশিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ছিল ১৯৫৮ সালে সেনাবাহিনী প্রধান আইয়ুব খানের সামরিক অভ্যূত্থানের অন্যতম প্রধান কারণ।[২৮]

[সম্পাদনা]আরো দেখুন

[সম্পাদনা]পাদটীকা

  1.  Glassie, Henry and Mahmud, Feroz.2008.Living Traditions. Cultural Survey of Bangladesh Series-II. Asiatic Society of Bangladesh. Dhaka. p.578
  2. ↑ ২.০ ২.১ Upadhyay, R (2003-05-01). Urdu Controversy - is dividing the nation furtherPapers. প্রকাশক: South Asia Analysis Group। সংগৃহীত হয়েছে: 2008-02-20.
  3. ↑ ৩.০ ৩.১ ৩.২ ৩.৩ ৩.৪ Rahman, Tariq (1997). "The Medium of Instruction Controversy in Pakistan" (PDF). Journal of Multilingual and Multicultural Development খণ্ড: 18 (2): 145–154. ডিওআই:10.1080/01434639708666310ISSN 0143-4632। সংগৃহীত হয়েছে: 2007-06-21.
  4.  Halder, Shashwati. ApabhrangshaBanglapedia. প্রকাশক: Asiatic Society of Bangladesh। সংগৃহীত হয়েছে: 2007-07-08.
  5.  A Historical Perspective of Urdu. প্রকাশক: National Council for Promotion of Urdu language। সংগৃহীত হয়েছে: 2007-06-15.
  6.  Bhattacharya, T (2001). Bangla. in Gary, J. and Rubino, C. (Eds) (PDF). Encyclopedia of World's Languages: Past and Present (Facts About the World's Languages). প্রকাশক: HW Wilson. (New York). আইএসবিএন 0824209702। সংগৃহীত হয়েছে: 2007-06-20.
  7.  Rahman, Tariq (February 1997). "The Urdu-English Controversy in Pakistan". Modern Asian Studies খণ্ড: 31 (1): 177–207.ডিওআই:10.1017/S0026749X00016978ISSN 1469-8099.
  8. ↑ ৮.০০ ৮.০১ ৮.০২ ৮.০৩ ৮.০৪ ৮.০৫ ৮.০৬ ৮.০৭ ৮.০৮ ৮.০৯ ৮.১০ ৮.১১ ৮.১২ ৮.১৩ ৮.১৪ Language Movement (PHP). Banglapedia - The National Encyclopedia of Bangladesh. প্রকাশক: Asiatic Society of Bangladesh। সংগৃহীত হয়েছে: 2007-02-06.
  9. ↑ ৯.০ ৯.১ ৯.২ ৯.৩ ৯.৪ ৯.৫ Oldenburg, Philip (August 1985). ""A Place Insufficiently Imagined": Language, Belief, and the Pakistan Crisis of 1971". The Journal of Asian Studies (The Journal of Asian Studies, Vol. 44, No. 4) খণ্ড: 44 (4): 711–733.ডিওআই:10.2307/2056443ISSN 0021-9118.
  10.  Morning News. 7 December 1947
  11.  (Bengali ভাষায়)দৈনিক আজাদ (a daily newspaper) (Abul Kalam Shamsuddin, Dhaka). 11 December 1948
  12.  Umar 1979, p. 35
  13.  Al Helal 2003, pp. 227–28
  14.  দৈনিক আজাদ. 29 July 1947
  15.  Umar 1979, pp. 30–32
  16. ↑ ১৬.০ ১৬.১ (Bengali ভাষায়) Ekusher Shongkolon '80. প্রকাশক: Bangla Academy. (Dhaka). 1980. পৃষ্ঠাসমূহ- 102–103.
  17. ↑ ১৭.০ ১৭.১ ১৭.২ ১৭.৩ ১৭.৪ ১৭.৫ ১৭.৬ ১৭.৭ মালেক, আবদুল (২০০০). হোসেন, আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার. ed. ভাষা আন্দোলনের আঞ্চলিক ইতিহাস. প্রকাশক: সেলিনা হোসেন, পরিচালক, গবেষণা সংকলন ফোকলোর বিভাগ, বাংলা একাডেমি. (ঢাকা). পৃষ্ঠাসমূহ- ৫-২৭. আইএসবিএন 984-07-4045-8.
  18. ↑ ১৮.০ ১৮.১ ১৮.২ ১৮.৩ ১৮.৪ ১৮.৫ ১৮.৬ একুশের ইতিহাস আমাদের ইতিহাস - আহমদ রফিক পৃষ্ঠা: ৫৬,১৪২, ৫৯
  19.  Rahman, Hasan Hafizur (1982). Bangladesher Swadhinotajuddher Dolilpotro. প্রকাশক: Ministry of Information, People's Republic of Bangladesh.
  20.  "বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র. পৃ-৫৪-৬৫
  21. ↑ ২১.০ ২১.১ ২১.২ ২১.৩ ২১.৪ ২১.৫ ২১.৬ Al Helal 2003, pp. 377–393
  22.  আইয়ুব খান 'প্রভু নয় বন্ধু'; পৃষ্ঠা: ৩৮
  23.  Choudhury, G. W. (April 1972). "Bangladesh: Why It Happened". International Affairs (Royal Institute of International Affairs) খণ্ড: 48 (2): 242–249. ডিওআই:10.2307/2613440ISSN 0020-5850.
  24. ↑ ২৪.০ ২৪.১ ২৪.২ Umar 1979, p. 279
  25. ↑ ২৫.০ ২৫.১ ২৫.২ ২৫.৩ Uddin 2006, pp. 3–16, 120–124
  26.  দৈনিক আজাদ. 24 February 1948
  27.  R. Upadhyay (2007-04-07). De-Pakistanisation of Bangladesh. প্রকাশক: Bangladesh Monitor, South Asia Analysis Group. Archived from the original on June 11, 2007। সংগৃহীত হয়েছে: 2007-06-16.
  28. ↑ ২৮.০ ২৮.১ ২৮.২ ২৮.৩ ২৮.৪ James Heitzman and Robert Worden (eds), ed (1989). Pakistan Period (1947–71)Bangladesh: A Country Study. প্রকাশক: Government Printing Office, Country Studies US. আইএসবিএন 0-16-017720-0। সংগৃহীত হয়েছে: 2007-06-16.
  29.  Sayeed, Khalid Bin (September 1954). "Federalism and Pakistan". Far Eastern Survey খণ্ড: 23 (9): 139–143.ডিওআই:10.1525/as.1954.23.9.01p0920lISSN 0362-8949.
  30. ↑ ৩০.০ ৩০.১ ৩০.২ ৩০.৩ Al Helal 2003, pp. 263–265
  31.  Umar 1979, p. 290
  32. ↑ ৩২.০ ৩২.১ ৩২.২ ৩২.৩ Islam, Rafiqul (2000) (Bengali ভাষায়). Amar Ekushey O Shaheed Minar. প্রকাশক: Poroma. (Dhaka). পৃষ্ঠাসমূহ- 62–85. আইএসবিএন 984-8245-39-1.
  33.  Mandal, Ranita (2002-06-24). Chapter 4 : Other ActivitiesMuhammad Shahidullah & His Contribution To Bengali Linguistics. প্রকাশক: Central Institute of Indian Languages, Mysore, India। সংগৃহীত হয়েছে: 2007-06-23.
  34.  দৈনিক আজাদ. 24 May 1950
  35.  দৈনিক আজাদ. 1 February 1952
  36.  দৈনিক আজাদ, ফেব্রুয়ারি ৫, ১৯৫২
  37.  পরিষদের সভায় মোট ১৫জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু মোহাম্মদ তোয়াহা ভোট দানে বিরত ছিলেন।
  38.  গাজীউল হক, একুশের সংকলন, প্রকশিত: ১৯৮০, পৃষ্ঠা: ১৩৮
  39.  ইতিহাস, কবির উদ্দিন আহমেদ. পৃ-২২৫-২৬
  40.  "Dhaka Medical College Hostel Prangone Chatro Shomabesher Upor Policer Guliborshon. Bishwabidyalayer Tinjon Chatroshoho Char Bekti Nihoto O Shotero Bekti Ahoto" (Bengali ভাষায়). দৈনিক আজাদ. 22 February 1952.
  41.  দৈনিক আজাদ, ফেব্রুয়ারি ২২, ১৯৫২
  42.  দৈনিক আমারদেশ, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০০৭, প্রথম পাতা
  43.  দৈনিক আজাদ, ফেব্রুয়ারি ২৩, ১৯৫২
  44.  "Banglake Pakistaner Onnotomo Rashtrabhasa Korar Jonno Purbobongo Babostha Porishoder Shoparesh. Shukrobar Shohorer Obosthar Aaro Obonoti : Shorkar Kortrik Shamorik Bahini Tolob. Police O Shenader Gulite Charjon Nihoto O Shotadhik Ahoto : Shatghontar Jonno Curfew Jari. Shohidder Smritir Proti Sroddha Gyaponarthay Shotosfurto Hartal Palan" (Bengali ভাষায়). দৈনিক আজাদ. 23 February 1952.
  45.  Al Helal 2003, p. 483
  46.  http://www.shaptahik.com/v2/?Sup_Details=149
  47. ↑ ৪৭.০ ৪৭.১ দৈনিক আজাদ,February 25, 1952
  48.  The Daily Star,February 27, 1952
  49.  Umar 1979, pp. 417–418
  50.  Al Helal 2003, pp. 515-523
  51.  দৈনিক আজাদ, ফেব্রুয়ারি ২৬, ১৯৫২
  52.  Al Helal 2003, pp. 546–552
  53.  দৈনিক আজাদ, মার্চ ২০, ১৯৫২
  54.  দৈনিক আজাদ, এপ্রিল ১১, ১৯৫২
  55.  প্রিয় অস্ট্রেলিয়া.কম
  56.  বাংলাপিডিয়া নিবন্ধ
  57.  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমএ/এমআই/১৮১১ ঘ.
  58.  সাপ্তাহিক ইত্তেফাক, ফেব্রুয়ারি ৮, ১৯৫৩
  59.  সাপ্তাহিক ইত্তেফাক, ১৯৫৩
  60.  Al Helal 2003, pp. 604–609
  61. ↑ ৬১.০ ৬১.১ ৬১.২ ৬১.৩ Al Helal 2003, pp. 608–613
  62. ↑ ৬২.০ ৬২.১ Al Helal 2003, pp. 600–603
  63.  সাপ্তাহিক ইত্তেফাক, এপ্রিল ২১, ১৯৫৩
  64.  দৈনিক আজাদ, এপ্রিল ২১, ১৯৫৪
  65.  দৈনিক আজাদ. 22 April 1954
  66. ↑ ৬৬.০ ৬৬.১ ৬৬.২ UF elections victoryChronicles of Pakistan। সংগৃহীত হয়েছে: 2011-12-11.
  67.  দৈনিক আজাদ, এপ্রিল ২২, ১৯৫৪
  68.  Bangla AcademyBanglapedia: The National Encyclopedia of Bangladesh. প্রকাশক: Asiatic Society of Bangladesh। সংগৃহীত হয়েছে: 2007-07-05.
  69.  "Gambhirjopurno Poribeshay Shaheed Dibosh Utjapon" (Bengali ভাষায়). Weekly Notun Khobor. 26 February 1956.
  70.  "Gambhirjopurno Poribeshay Shaheed Dibosh Utjapon" (Bengali ভাষায়). Weekly Notun Khobor. 26 February 1956.
  71.  সাপ্তাহিক নতুন খবর, ফেব্রুয়ারি ২৬, ১৯৫৬
  72.  Lambert, Richard D. (April 1959). "Factors in Bengali Regionalism in Pakistan". Far Eastern Survey খণ্ড: 28 (4): 49–58.ডিওআই:10.1525/as.1959.28.4.01p1259xISSN 0362-8949.
  73.  Khan, Sanjida. National AwardsBanglapedia. প্রকাশক: Asiatic Society of Bangladesh। সংগৃহীত হয়েছে: 2007-06-23.
  74.  Aminzade, Ronald; Douglas McAdam, Charles Tilly (17 September 2001). Emotions and Contentious PoliticsSilence and Voice in the Study of Contentious Politics. প্রকাশক: Cambridge University Press. (Cambridge). পৃষ্ঠা- 42. আইএসবিএন 0521001552। সংগৃহীত হয়েছে: 2007-06-24.
  75.  Islam, Rafiqul (2000) (Bengali ভাষায়). Amar Ekushey O Shaheed Minar. প্রকাশক: Poroma. (Dhaka). পৃষ্ঠাসমূহ- 62–85.আইএসবিএন 984-8245-39-1.
  76.  International Mother Language Day - Background and Adoption of the ResolutionGovernment of Bangladesh। সংগৃহীত হয়েছে: 2007-06-21.
  77.  Imam, Jahanara (1986) (Bengali ভাষায়). Ekattorer Dingulee. প্রকাশক: Shondhani Prokashani. (Dhaka). পৃষ্ঠা- 44. আইএসবিএন 984-480-000-5.
  78.  Court route for language status , The Telegraph, May 20, 2008.
  79.  বাংলাদেশের ইতিহাস (ইংরেজি ভাষায়). প্রকাশক: ডিসকভার বাংলাদেশ। সংগৃহীত হয়েছে: ২১-০৬-২০০৭.
  80.  Rahman, Tariq (September 1997). "Language and Ethnicity in Pakistan". Asian Survey খণ্ড: 37 (9): 833–839.ডিওআই:10.1525/as.1997.37.9.01p02786ISSN 0004-4687.
  81.  Lintner, Bertil (January 2004). Chapter 17: Religious Extremism and Nationalism in Bangladesh. in eds Satu Limaye, Robert Wirsing, Mohan Malik (PDF). Religious Radicalism and Security in South Asia. প্রকাশক: Asia-Pacific Center for Security Studies. (Honolulu, Hawaii). পৃষ্ঠা- 413. আইএসবিএন 0-9719416-6-1। সংগৃহীত হয়েছে: 2007-06-28.

[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র

  • আল হেলাল, বশীর (২০০৩), ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, আগামী প্রকাশনী, ঢাকা, ISBN 984-401-523-5 (বাংলা)
  • Uddin, Sufia M. (2006), written at Chapel Hill, Constructing Bangladesh: Religion, Ethnicity, and Language in an Islamic Nation, The University of North Carolina Press, ISBN 0807830216
  • ওমর (১৯৭৯), পূর্ব বাংলা ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি, আগামী প্রকাশনী, ঢাকা (বাংলা)

[সম্পাদনা]আরো পড়ুন

বাংলা ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে আরও তথ্য পেতে হলে উইকিপিডিয়ার সহপ্রকল্পগুলোতে অনুসন্ধান করে দেখতে পারেন:

Wiktionary-logo-en.svg সংজ্ঞা, উইকিঅভিধান হতে
Wikibooks-logo.svg পাঠ্যবই, উইকিবই হতে
Wikiquote-logo.svg উক্তি, উইকিউক্তি হতে
Wikisource-logo.svg রচনা সংকলন, উইকিউৎস হতে
Commons-logo.svg ছবি ও অন্যান্য মিডিয়া, কমন্স হতে
Wikinews-logo.png সংবাদ, উইকিসংবাদ হতে

Badruddin Umar (2004). The Emergence of Bangladesh: Class Struggles in East Pakistan (1947-1958). প্রকাশক: Oxford University Press, USA. আইএসবিএন 978-0195795714.

Anwar S. Dil (2000). Bengali language movement to Bangladesh. প্রকাশক: Ferozsons.আইএসবিএন 978-9690015778.

Robert S. Stern (2000). Democracy and Dictatorship in South Asia: Dominant Classes and Political Outcomes in India, Pakistan, and Bangladesh. প্রকাশক: Praeger Publishers.আইএসবিএন 978-0275970413.

Syed Manzoorul Islam (1994). Essays on Ekushey: The Language Movement 1952. প্রকাশক: Bangla Academy. আইএসবিএন 984-07-2968-3.

[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ


No comments: