Thursday, August 22, 2013

মমতার নিন্দায় গুরুং, সমর্থনের আর্জি সিপিএমকে

মমতার নিন্দায় গুরুং, সমর্থনের আর্জি সিপিএমকে

মমতার নিন্দায় গুরুং, সমর্থনের আর্জি সিপিএমকে
সঞ্জয় চক্রবর্তী

দার্জিলিং: রাজ্যপালের মধ্যস্থতায় মুখ রক্ষার উপায় খুঁজছেন বিমল গুরুং৷ পাহাড়ের আবেগকে অসম্মান করছেন বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে ফেসবুকে পাল্টা আক্রমণ করলেও, রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে তাঁর আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে রাজ্যপালের উপর আস্থা প্রকাশ করায়৷ মোর্চা সরাসরি যোগাযোগ না-করলেও, গোর্খাল্যান্ডের আন্দোলনের প্রতি বুধবার সিপিএমের সমর্থন চেয়েছে পাহাড়ের জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি৷ সিপিএম এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের মতের সঙ্গেই সুর মিলিয়েছে৷ জিটিএ-কে সচল করে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার পরামর্শ দিয়েছেন সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য৷

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ভোগান্তি এখনও থেকে গেলেও বৃহস্পতিবার থেকে আবার বন্ধে ফেরার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন মোর্চা নেতৃত্ব৷ যদিও এই দু'দিনও পাহাড়ের জনজীবন অচলই ছিল৷ দোকানপাট খোলেনি৷ যানবাহন চলেনি৷ সরকারি অফিসে হাজিরা ছিল না বললেই চলে৷ যদিও দু'দিন পর শনিবার থেকে বন্ধ চালিয়ে যাওয়া নিয়ে মোর্চার মধ্যে বিরোধ বেধেছে৷ দলের একাংশ রাজ্য সরকারের সঙ্গে এখনই আলোচনায় বসার পক্ষপাতী৷ কিন্ত্ত সেই প্রস্তাব কি ভাবে দেওয়া হবে, তা নিয়ে ধন্দে তাঁরা৷

তাতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আর আলোচনা নয় বলে গুরুংয়ের পূর্ব ঘোষণাকে অসম্মান করা হয়৷ কর্মীদের চাপে তাই রাজ্যপালের মধ্যস্থতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহারের কৌশল নিয়েছেন মোর্চা সুপ্রিমো৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় মঙ্গলবার রাতে ফেসবুকে নাম না-করে মোর্চার কড়া সমালোচনা করে বলেছিলেন ওই দলটি পাহাড়ের উন্নয়নে বাধা দিচ্ছে৷ তিনি পাহাড়ের মানুষকে সম্মান করেন বলেও জানিয়েছিলেন ফেসবুকে৷

বিমল গুরুং পাল্টা ফেসবুকে বুধবার লেখেন, 'মুখ্যমন্ত্রী যদি পাহাড়বাসীকে সম্মান করেন, তবে তাঁর উচিত এখানকার আবেগকেও মর্যাদা দেওয়া৷ গোর্খা ও পাহাড়ের অন্যান্য সম্প্রদায়ের আবেগ হল গোর্খাল্যান্ডের দাবি৷ মুখ্যমন্ত্রী ওই আবেগকে সম্মান না-জানিয়ে নিজে রাফ অ্যান্ড টাফ হওয়ার কথা বলছেন৷' রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে জিটিএ চুক্তি অমান্য করার অভিযোগও তুলেছেন গুরুং৷ ফেসবুকে তিনি বলেন, '২০০৭-২০০১১-র মধ্যে মোর্চা নেতাদের বিরুদ্ধে রুজু রাজনৈতিক মামলাগুলি তুলে নেওয়ার কথা চুক্তিতে বলা হলেও মুখ্যমন্ত্রী তা করেননি৷'

বরং মোর্চার নেতা-কর্মীদের বেপরোয়া গ্রেপ্তার সরকার চালিয়ে যাচ্ছে বলে সরকারের কড়া নিন্দা করেছেন মোর্চা সভাপতি৷ তিনি দাবি করেছেন, ২০ দিনে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়েছে৷ পাহাড়ের ইতিহাসে এর কোনও রেকর্ড নেই৷ তাঁর প্রশ্ন, 'এটা কি পাহাড়ের মানুষের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর সম্মান প্রদর্শনের নমুনা?' মুখে এমন কড়া বার্তা দিলেও গোর্খাল্যান্ডের দাবিদারদের দিশাহীনতা স্পষ্ট হয়েছে সিপিএমের সমর্থন চাওয়ায়৷ তাঁদের অস্বস্তির আরও কারণ ৪ সেপ্টেম্বর জিটিএ-র বৈঠকে দিন ধার্য হওয়ায়৷ জিটিএ-র প্রধান সচিব রামদাস মীনা বৈঠকের নোটিশ দিয়েছেন বুধবার৷

গোর্খাল্যান্ডপন্থী দলগুলিকে নিয়ে গঠিত জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির আহ্বায়ক এনোস দাস প্রধান বুধবার দুপুরে টেলিফোন করেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য অশোক ভট্টাচার্যকে৷ পৃথক রাজ্যের দাবিতে পাহাড়ের রাজনৈতিক দলগুলির আন্দোলনে তিনি সিপিএমের সমর্থন চান৷ পরে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি বলেছি, পৃথক রাজ্যের দাবি আমরা কেন সমর্থন করব? পাহাড় সম্পর্কে আমাদের দলের ঘোষিত অবস্থান হল রাজ্যের মধ্যে আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসন প্রদান৷'
অশোকবাবু বন্ধ প্রত্যাহার করে জিটিএ-কে সচল করে আলোচনায় বসারও পরামর্শ দিয়েছেন জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির আহ্বায়ককে৷ প্রাক্তন পুরমন্ত্রী বলেন, 'আমি ওঁকে বলেছি, জিটিএ-র একজন চিফ নির্বাচিত করুন৷ তার পর আলোচনার পথে এগোন৷' রাজনৈতিক ভাবে বিপরীত মেরুতেও থাকলেও জিটিএ সম্পর্কে সিপিএমের অবস্থান রাজ্য সরকারের সঙ্গে মিলে গিয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, জিটিএ-কে কার্যকর করা না-হলে কোনও আলোচনা হবে না৷ তিনি সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আবার পাহাড়ে যাবেন বলে মঙ্গলবার মোর্চার উপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন৷

তাতে অস্বস্তিতে পড়লেও কর্মী-সমর্থকদের চাপে আন্দোলনের রাস্তাতেই ফিরতে হচ্ছে মোর্চা নেতৃত্বকে৷ দলের সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, 'প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য দু'দিন আন্দোলন স্থগিত রাখা হয়েছিল৷ বৃহস্পতিবার তা শুরু হবে৷ আপাতত শুক্রবার পর্যন্ত বন্ধ চলবে৷' তার পরের কর্মসূচি এখনও স্পষ্ট নয়৷ মোর্চা বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রী জানিয়েছেন, '২৫ অথবা ২৬ অগস্ট দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক রয়েছে৷ সেখানে পরবর্তী কর্মসূচি স্থির করা হবে৷'

পাহাড়ে কিন্ত্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের রেশ এখনও কাটেনি৷ সোমবার রাতের ঝড়ের পর বুধবারও ঝোড়ো বাতাসের সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি চলেছে৷ বিদ্যুত্‍ পরিষেবা পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি৷ ফলে পানীয় জলের সরবরাহ এ দিনও ব্যহত হয়েছে৷ তাছাড়া লাগাতার আন্দোলনে শহর এলাকায় বিভিন্ন পরিষেবা ভেঙে পড়েছে৷ সাফাই না-হওয়ায় শহর জুড়ে ডাঁই হয়ে পড়ে আছে আর্বজনার স্ত্তপ৷ দার্জিলিংয়ের পুরপ্রধান অমর সিং রাই অবশ্য দাবি করেন, 'আমাদের আন্দোলনে জরুরি পরিষেবাকে ছাড় দেওয়া হয়েছে৷ পুর পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার কথা নয়৷ তবু এমন অভিযোগ উঠলে খতিয়ে দেখা হবে৷'

No comments:

Post a Comment