Follow palashbiswaskl on Twitter

ArundhatiRay speaks

PalahBiswas On Unique Identity No1.mpg

Unique Identity No2

Please send the LINK to your Addresslist and send me every update, event, development,documents and FEEDBACK . just mail to palashbiswaskl@gmail.com

Website templates

Jyoti basu is dead

Dr.B.R.Ambedkar

Friday, August 23, 2013

খাদ্য সুরক্ষা বিল প্রকৃতপক্ষে কাদের জন্য?

খাদ্য সুরক্ষা বিল প্রকৃতপক্ষে কাদের জন্য?

খাদ্য সুরক্ষা বিল প্রকৃতপক্ষে কাদের জন্য?
'পরিকল্পনা কমিশন হয়তো সরকারের মন রাখতেই দারিদ্রের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন৷ আবার এটাই সঠিক দারিদ্রের পরিমাণ হলে খাদ্য-সুরক্ষার এত বিস্তৃতি ব্যাখ্যা করা শক্ত৷' লিখছেন সুগত মারজিত্‍

জগদীশ ভগবতী এবং অমর্ত্য সেনের লেখা দু'টি বই নিয়ে দেশব্যাপী বিতর্কের ঝড় বইছে৷ প্রথমেই বলে রাখা প্রয়োজন দু'টি বই অত্যন্ত সুরচিত এবং যাঁরা এই দু'টি বইয়ের অপেক্ষাকৃত বয়স্ক লেখক তাঁরা ঐতিহাসিক মাপেই অর্থনীতির দু'জন দিকপাল৷ যাঁদের নিয়ে ভারতবর্ষ গর্বিত৷ দু'জনের মধ্যে বা দু'টি বইয়ের মধ্যে ঝগড়া বেধেছে বলে রাজনৈতিক মহল যতই উত্তেজিত হোক না কেন, বা সংবাদমাধ্যম যতই উত্‍সাহিত হোক না কেন আসলে তেমন কোনও বিরোধ আদৌ আছে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে৷ বস্ত্ততপক্ষে বিষয়টা নিয়ে তেমন মাথা ঘামানোর প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়নি৷ কিন্ত্ত ব্যাপারটা যে অনেকটা গড়িয়েছে সেটা বুঝতে পারলাম যখন সম্প্রতি এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্কে একটি বক্তৃতা দেবার সময় কেউ কেউ জানতে চাইলেন বিতর্কটি নিয়ে আমার কী মতামত৷ তখন মনে হল বিষয়টি নিয়ে হয়তো কিছু একটা লেখার প্রয়োজন আছে৷

বস্ত্ততপক্ষে ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক প্রগতি নিয়ে দু'ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির কথা বহুল প্রচারিত এবং সমাদৃত৷ তা ছাড়া গোটা বিশ্বেই উন্নয়নশীল দেশগুলোর কোন কোন সমস্যা নিয়ে আমাদের আলোচনা এবং সমাধানসূূত্র বার করার চেষ্টা করতে হবে তা নিয়েও মোটামুটি অনেকেই একমত৷ অধ্যাপক জগদীশ ভগবতীর আর্থিক উন্নয়নের বা জাতীয় আয় বৃদ্ধির হারের উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া এবং অধ্যাপক সেনের সামাজিক উন্নয়নের সোপান যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গবৈষম্য ইত্যাদির উপর বেশি নজর দেওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে কোনও বিতর্কের জায়গা থাকতে পারে না৷ একটি নীতি অপরটির পরিপূরক৷ আমার যদি ১০০ টাকা থাকে তা হলে তাকে না বাড়িয়ে শুধু এর থেকে নিয়ে ওকে দিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্যের উন্নতি অসম্ভব৷ বলা হয় 'কেক'-এর আকার-আকৃতি অপরিবর্তিত রেখে শুধু তাকে ভাগাভাগি করে নিলে চলে না৷ 'কেক'-এর আকার বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হয়৷ আবার জাতীয় আয় শুধু বেড়ে গেলেই কি চলে? চলে না৷ ভারতবর্ষে বেশ কিছু দিন ধরেই আয় বৃদ্ধির হার ৭-৮ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল৷ আজ নয় সেটা কমে ৫ শতাংশ মতো৷ কিন্ত্ত এত আয় বৃদ্ধি সত্ত্বেও ভারতবর্ষে শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যাপ্তি, অপুষ্টি ইত্যাদি সমস্যা তেমন ভাবে কমেনি৷ তা হলে জাতীয় আয় বৃদ্ধি হলেই তো সব সমস্যার সমাধান হয় না৷ কিন্ত্ত একবারও বলা যাবে না যে আয় বৃদ্ধির হার নিচুতলায় পৌঁছয়নি- হয়তো কম হারে পৌঁছেছে- আমরা দারিদ্র নিয়ে যতই বিতর্ক করি না কেন- গ্রাম ও শহর ভারতবর্ষে দারিদ্রের হার নিঃসন্দেহে কমেছে৷
যে কোনও মানুষই প্রথমেই দেখে তার পকেটে কত টাকা রয়েছে অর্থাত্‍ যে গ্রামে বা প্রত্যন্ত জায়গায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে উন্নতির সুযোগ কম, সেখানেও মানুষদের যদি জিজ্ঞেস করা যায় যে তারা তাঁদের রোজগার বাড়াতে চান না হাসপাতাল চান, তা হলে তাঁরা বলবেন আমাদের রোজগার আগে বাড়ুক৷ ফলে শিক্ষা-স্বাস্থ্য, লিঙ্গবৈষম্য ইত্যাদি নিয়ে সরকারকে যেমন সদাসতর্ক থাকতে হবে তেমনই আয়বৃদ্ধির হারকে বৃদ্ধি করার দিকেও সব সময় নজর দিতে হবে৷ এ কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না৷ তবে সেন-ভগবতী বক্তব্যের দার্শনিক স্তরে একটি ফারাক আছে এবং সেই বিতর্কের সমাধান বিশ্বে কোথাও হয়েছে বলে জানা নেই৷ তা হল সরকারের ভূমিকা নিয়ে৷

সরকার বা রাষ্ট্রের কী করা উচিত, তার ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, কোথায় কোথায় সরকার হস্তক্ষেপ করবেন, কতটা করবেন, কোন ক্ষেত্রের গুরুত্ব বেশি ইত্যাদি ইত্যাদি৷ অনেকে হয়তো জানেন না ভারতবর্ষে '৯০ দশকের যে সংস্কারের ফলে আর্থিক বৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পেয়েছিল তার অনেকটা, এমনকী হুবহু প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায় ভগবতী ও পদ্মা দেশাই-এর 'প্ল্যানিং ফর ইন্ডাস্স্ট্রিয়ালাইজেশন' বইটিতে৷ বইটি '৬০-এর দশকে লেখা৷ সেই সময় ভারতবর্ষের তাবড় তাবড় সমাজবাদী ও রাষ্ট্রবাদী অর্থনীতির মানুষজন বইটিকে তেমন পাত্তা দিতেন না৷ প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সুবাদে আমরা ভালো ভালো বইয়ের খবর পেতাম- পরে নিজের প্রথম বই লেখার সময় বইটি আবার কাজে দিয়েছিল৷ দীর্ঘকাল ধরেই ভগবতী সেই ধরনের বাজারমুখী উদারনৈতিক সংস্কারের কথা বলে আসছেন, আজও বলছেন৷ তবে এখন আরও বেশি সংস্কারের কথা স্বভাবতই উঠে আসছে৷ মানুষের রোজগার বাড়ানোই যে আর্থিক নীতি বা সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য তা নিয়ে বিতর্কের কোনও জায়গাই নেই৷

ভারতবর্ষের মূল সমস্যা এই যে আয় বৃদ্ধির হার সর্বস্তরে সমান নয়৷ আর সমান নয় বলেই স্বাভাবিক ভাবেই গরিব মানুষেরা বিশেষ উপকৃত হচ্ছেন না৷ এমনটা বলছেন অনেকে৷ তা হলে কী উপায়৷ প্রশ্ন হল খাদ্য-সুরক্ষা আইন নিয়ে৷ কারণ খাদ্য-সুরক্ষা আইন অনুযায়ী বা নীতি অনুযায়ী অধ্যাপক সেনের মতামতকে খানিকটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ যখনই সরকার গরিব মানুষদের জন্য প্রভূত টাকা সরাসরি খরচ করেন তখনই এই ধরনের কল্যাণমূলক অর্থনীতির সপক্ষে সরকারি সিলমোহর পড়ে৷ আবার সেই টাকাটা যদি সরকার ধরা যাক- বিদ্যুতের জোগান বা রাস্তাঘাটে খরচা করেন কিংবা টাকাটা খরচ না করে বাজেট ঘাটতি না বাড়িয়ে পরোক্ষ ভাবে দেশে ঋণের বাজারকে খানিকটা স্বস্তি দিয়ে বিদেশি ও স্বদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির ব্যবস্থা করেন- তখন সেখানে খানিকটা অধ্যাপক ভগবতীর উপদেশের মেজাজ আঁচ করা যায়৷ আপাতত খাদ্য-সুরক্ষা আইন নিয়ে কথা বলা যাক৷

কার সুরক্ষায় এই আইন বলবত্‍ হচ্ছে বলা শক্ত৷ মনে হচ্ছে দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ লোকই খেতে পায় না৷ তাই ৭০ শতাংশ মানুষ এর থেকে সুবিধে পাবেন৷ যদি সরকারি হিসেব অনুযায়ী ২২ শতাংশ মানুষ দেশে 'গরিব' বলে পরিগণিত হন তা হলে ৭০ শতাংশ মানুষের বাকি ৫০ শতাংশ মতো মানুষ নিশ্চয় গরিব নন৷ ধরা যাক, আরও ১০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র, তা হলে বাকি ৪০ শতাংশ মানুষ কেন ২ টাকা দরে চাল-গম পাবেন? অর্থাত্‍ বাজারে যদি ১৫ টাকা দাম (গমের হিসেবে) হয় তা হলে সরকার প্রতি কিলোতে ১৩ টাকা ক্ষতি স্বীকার করবেন৷ ৪০ শতাংশ মানুষকে যদি মাসে ২ কিলো করে চাল-গম দেওয়া হয়, তা হলে মোটামুটি মাসে ১০০ কোটি (= ১২০ কোটির ৪০ শতাংশ x ২ = প্রায় ১০০ কোটি) কিলো চাল-গমে ১৩ টাকা করে ক্ষতি মানে ১৩০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচা করা হচ্ছে যার কোনও প্রয়োজন ছিল বলে আমার মনে হয় না৷ যদি ৭০ শতাংশ মানুষকে ২ কিলো মাসে দিতে হয় তা হলে এক মাসে দিতে হবে মোটামুটি ভাবে ১৬০ কোটি কিলো৷ এ বার ধরুন এর মধ্যে ২৫ শতাংশ চুরি হল- তা হলে ৪০ কোটি কিলোতে কিলোপ্রতি ১৩ টাকা মুনাফা হবে৷ অর্থাত্‍ ২ টাকায় কিনে ১৫ টাকায় বিক্রি করা- অর্থাত্‍ ১৩ x ৪০ = ৫২০ কোটি টাকা৷ ২ কিলোর জায়গায় ২০ কিলো হলে হবে ৫২০০ কোটি টাকা৷ সরকারের প্রতি ভীষণ সদয় হয়ে বিচার করলেও ৩-৪ হাজার কোটি টাকা মাসে দুর্নীতির জন্য অপচয় হবে৷ ৬ মাসে সেটা দাঁড়াবে ২৪-২৫ হাজার কোটি টাকার মতো৷ এই টাকাটা যাঁরা রোজগার করবেন তাঁরা কারা? এই প্রশ্নের মুখোমুখি সরকারকে দাঁড়াতেই হবে৷ আর এখানেই ভারতবর্ষের মতো জায়গায় সরাসরি সরকারি অনুদান বিতরণের যত সমস্যা৷ যাঁরা রাষ্ট্রবাদী অর্থনীতিতে বিশ্বাস করেন তাঁদের দিকে কয়েকটি প্রশ্ন না করে পারা যায় না -

(১) দীর্ঘকাল ধরে গণ-বণ্টন ব্যবস্থায় অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি এবং প্রত্যন্ত জায়গায় এই ব্যবস্থার প্রসারে অব্যবস্থার কথা আমরা জানি৷ গণ-বণ্টন ব্যবস্থার সংস্কার করলেও তো খাদ্য-সুরক্ষার ব্যবস্থা হত৷ তা হলে সেটা না করে গাদা-গাদা টাকা বিতরণ করার সুফল আসলে কী?

(২) সচ্ছল মানুষদের ২ টাকা দরে চাল-গম দিলে তাঁদের সুরক্ষিত জীবনে আরও সুরক্ষার প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে, না কি সবটাই ভোটের জন্য৷ তাঁরা কি এতে প্রলোভিত হয়ে সরকারকে ভোট দেবেন?

(৩) যাঁদের প্রয়োজন নেই তাঁরা ২ টাকায় কিনে ১৫ টাকায় বিক্রি করবেন বা যাঁরা এমনটা করে থাকেন যেমন গ্রামীণ কর্মসংস্থা যোজনায় অন্যান্য রাজ্যে আখছার হয়েছে৷ তাঁদের সুদিন আগতপ্রায়। কেউ তো বলতে পারেন যে এসব নীতি চালু হলে শাসকদলেরও 'অন্য ভাবে' সুবিধে হবে- সেখানে উত্তরটা কী হবে?

(৪) সরকার যদি যথেষ্ট পরিমাণে কর আদায় করতে না পারে - যা মূলত আর্থিক উন্নয়নের হারের উপর নির্ভরশীল - তা হলে সরকারি ঋণের পরিমাণ বাড়বে৷ ফলে মূলধন জোগাড় করার খরচা বাড়বে কারণ সুদের হার বাড়বে - আয় বৃদ্ধির হারের উপর তার প্রভাব পড়তে বাধ্য৷ সেই সমস্যার কথা সরকার ভাবছেন কি?

(৫) অনেকদিন ধরে ভারতবর্ষে 'পলিসি টার্গেটিং' নিয়ে প্রভূত সমালোচনার কথা শোনা যাচ্ছে৷ গরিবদের জন্য প্রদত্ত ১০০ টাকার অনেকটা যাঁরা গরিব নন তাঁরাই পেয়ে যান - এই 'টার্গেটিং'-এর সমস্যাকে এখনও কোনও ভাবে বাগে আনা যায়নি৷ গরিব মানুষদের সঠিক ভাবে চিহ্নিত করার কাজ একেবারেই এগোয়নি৷ অনেকে বলতে পারেন যে তা যখন করাই যাচ্ছে না তখন অন্য সবাইকে দিয়ে দিলেই হয় - এ রকম কথা আশা করি নীতি নির্ধারকেরা ভাবছেন না৷ কিন্ত্ত যাঁদের সাহায্য প্রাপ্য তাঁদের নির্দিষ্ট করার কাজ একটি বড়ো সংস্কারের কাজ৷ সেই সংস্কারই বা হবে কবে? তা না হলে আবার হাজার হাজার কোটি জলাঞ্জলি যাবে৷

অধ্যাপক ভগবতী এবং অধ্যাপক সেন অর্থনীতির গোড়ার কথাটাই বারে বারে মনে করিয়ে দেন - সঠিক আয় বৃদ্ধি ছাড়া গতি নেই কিন্ত্ত সেটাই পাখির চোখ করে রাখলে অনেক কঠোর বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করা হবে৷ তাই সরকারকে, যাঁরা এই মুহূর্তে পিছিয়ে পড়ছেন বা যাঁদের আয় বৃদ্ধি একেবারেই হচ্ছে না, যাঁদের খেয়ে-পরে বেঁচে থাকারই সমস্যা, তাঁদের কথা ভাবতেই হবে - কবে তাঁদের আয় বৃদ্ধি হবে বা সামাজিক শৃঙ্খলামোচন হবে তার জন্য তাঁরা না খেতে পেয়ে মারা যাবেন তা হয় না৷ কিন্ত্ত আমরা এ বিষয়ে একটি প্রশ্ন তাঁদের কাছে রাখতে পারি৷

আমাদের গণতান্ত্রিক এবং দলীয় রাজনীতির পরিসরে যাঁরা আছেন তাঁরা কি সত্যি জানেন না কী করণীয়? তা সে আয় বৃদ্ধির জন্য সংস্কারই বলুন বা খাদ্য-সুরক্ষা আইনই বলুন, না কি তাঁরা ইচ্ছে করেই চোখে ঠুলি পরে থাকেন৷ অর্থাত্‍ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশেষ করে আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থায় কোন রাজনীতি সর্বশ্রেষ্ঠ স্ট্র্যাটেজি সেটা আমাদের রাজনীতির নেতারা খুবই ভালো বোঝেন৷ রাজনৈতিক সদিচ্ছায় কি হতে পারে সেটা পশ্চিমবঙ্গে একদা মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় উন্নয়নের কাজকর্ম দেখে খানিকটা বোঝা যায়৷ এ রাজ্যে খাদ্য-সংগ্রহের পরিমাণ এবং উন্নতির জন্য বরাদ্দ টাকার উপযুক্ত ব্যবহার দেখেও বোঝা যায়৷

যদি রাজনৈতিক ক্ষমতা বা শাসনক্ষমতা জিইয়ে রাখার জন্য মানুষকে কাজ করে দেখানোটা মোক্ষ হয় তা হলে অর্থনীতি আর রাজনীতির মধ্যে একটা তাত্ত্বিক এবং সাবেকি মেলবন্ধন ঘটে৷ মানুষ কাজ দেখে ভোট দেবেন- কিন্ত্ত রাজনীতি ও অর্থনীতির এই সম্পর্কটা আমরা অনেক ক্ষেত্রে ভুলতে বসেছি কারণ ধরে নেওয়া হয় আরও অনেক ভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে শুধু পুনর্বণ্টন করলেই ভোট আসবে৷ কিংবা সন্ত্রাসের রাজনীতিকে সংগঠিত করলে ভোট প্রক্রিয়াটি অন্য ভাবে করা যাবে৷ রাজনীতি যে অর্থনীতি চালাবে সেটাই হবে- তাই অর্থনীতির বিতর্কের সঙ্গে সঙ্গে এটাও বোঝা প্রয়োজন যে কেন ভালো অর্থনীতির উপদেশ , তা যে দিক থেকেই আসুক না কেন- রাজনীতি তাকে পাত্তা দেয় না৷ যে সরকার 'সংস্কার, সংস্কার' বলে জ্বালানির দাম বাড়িয়ে, ভর্তুকি কমিয়ে, বিদেশি বিনিয়োগের পথ সুগম করে, উন্নয়নমূলক এবং পরিষেবা ক্ষেত্রে সরকারি খরচা কমিয়ে টাকা সাশ্রয়ের ব্যবস্থা করে, সেই সরকারই মুক্তকচ্ছ হয়ে সবাইকে গরিব আখ্যা দিয়ে দেদার খরচ করে৷ এখন খানিকটা শাঁখের করাতের মতো অবস্থা৷ পরিকল্পনা কমিশন হয়তো সরকারের মন রাখতেই দারিদ্রের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন৷ আবার এটাই সঠিক দারিদ্রের পরিমাণ হলে খাদ্য-সুরক্ষার এত বিস্তৃতি ব্যাখ্যা করা শক্ত৷ দারিদ্রের পরিমাণ এবং খাদ্য সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার হাতে হাত ধরে এগোনো উচিত৷ সহজ বুদ্ধিতে সেটাই তো মনে হয়৷

যে বিতর্কের কথা বলে শুরু করেছিলাম তার সঙ্গে জাতির স্তরে ভবিষ্যত কাম্য নেতৃত্ব নিয়েও কথাবার্তা উঠেছে৷ কিন্ত্ত সর্বক্ষেত্রেই সমস্যাটি একপ্রকার আয়বৃদ্ধি এবং সামাজিক বা মানব-উন্নয়ন সংক্রান্ত অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে তার সম্পর্ক৷ গুজরাটে মানব-উন্নয়ন সূচক তেমন ভালো নয়৷ গুজরাট ও তামিলনাড়ু দেশের তুলনায় বেশ বর্ধিষ্ণু রাজ্য কিন্ত্ত সেখানেও অপুষ্টিতে ভোগে প্রচুর৷ অন্য দিকে ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে বহুদিন জাতীয় আয় বৃদ্ধির হার বেড়েছে- সংস্কারধর্মী সরকারের জয়ধ্বজা উড়েছে- কিন্ত্ত গোটা দেশেই মারাত্মক অপুষ্টি- তা হলে কাকে ছেড়ে কাকে দেখবে মানুষ৷ বলা শক্ত৷

রাজনৈতিক সদিচ্ছা আর মানুষের প্রতি কর্তব্যপরায়ণতা ও ভালোবাসা থাকলে অনেক কিছুই করা যায়৷ যিনিই আসুন- যদি তাঁর সুশাসনে ধনবান ও ক্ষমতাশালীদের মধ্যে চোরের সংখ্যা এবং সামগ্রিক ভাবে চুরির পরিমাণ কমে দেশ এমনিতেই তরতর করে এগোবে৷ যেহেতু আমি অত রাষ্ট্রবাদী অর্থনীতিতে বিশ্বাস করি না তাই একটি গল্প বলে শেষ করব৷

এক সমাজবাদী অর্থনীতি বিশারদ আমার বন্ধু বললেন যে ভারতবর্ষে কত জায়গায় কত ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে যেমন- বিদ্যুত্‍, সার, জ্বালানি ইত্যাদি আর খাদ্য-সুরক্ষার নামে খরচা করলেই যত আপত্তি৷ আমি প্রতিবাদ করার ইচ্ছা থাকলেও আমি করিনি- শুধু ভাবলাম সত্যিই তো যে মানুষটার প্রাণ প্রায় বেরিয়ে গিয়েছে তার গলায় আরও দু-পোঁচ বসালে কী বা যায় আসে৷

লেখক অর্থনীতিবিদ, পশ্চিমবঙ্গ উচ্চশিক্ষা সংসদ-এর সভাপতি

No comments: