Thursday, August 22, 2013

যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল

যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল

যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল
আপনি কি হাঁ করলেই পা ধরতে পারেন? মানে কথায় কথায় 'দাদা আমিকিন্ত্ত বাঁচতে চাই'? (জানি এটা হুবহু সংলাপ নয়) নন, আচ্ছা, তা হলেকিআপনি মিনিমাম বড়োলোক? পয়সা আছে? অ্যাটলিস্ট একখান গাড়ি? তা-ও নেই? তো অত কথা কীসের? জাস্ট উবু হয়ে চেপে যান৷ আরএকান্তই যদি জাতে বাচাল, তা হলে বকবকুন, কিন্ত্ত প্রাণে ধরে রাস্তায় নামবেন না৷ আরএই মেন্টালি রিটার্ডেড, চালচুলোহীন, গোঁয়ারগোবিন্দ বৃষ্টির সময় তো নয়ই৷ পার্সোনাল অপমান রূপে নেবেন না, ব্যাপার হল গিয়ে সেফ্টি৷আপনার সেফ্টি৷ গাড়ি নাপেলে বাড়ি, হবে কী করে?


এখন শহরের যা অবস্থা, পাবলিক বাস-এর কনসেপ্ট প্রায় উঠতে বসেছে, দু'দিন পর নির্ঘাত্‍ হেরিটেজ হয়ে যাবে, যেমন ট্রাম৷ এ বার, অটো, সেখানে তো ধরে লিগালি চার জন (আর আমি যে হেতু রুটিনমাফিক সাত বা ন'নম্বর আবেদনকারী হই, তাই বেআইনের দলেও ভিড়তে পারি না, কপাল!), তো রইল কী, না সবেধন ট্যাক্সি৷ সে তো আবার লম্বা ডাউন না পেলে, পাশ ফিরেও দেখবে না৷ আর দেখলেও আপনার বাড়ি পঁচাশি মিটার আগে নামিয়ে দিয়ে বলবে, বলেছিলেন গড়িয়া, এই তো, আর যাব না৷ কে যে ওদের বোঝাবে, গড়িয়া বা মানিকতলা বা পৃথিবীর যে কোনও জায়গা মানে একটা নির্দিষ্ট পয়েন্ট নয়৷ সে অঞ্চল মানে আরও কিছু কিলোমিটার, অন্তত কিছু মিটার তো বটেই৷ যাক গে জাস্ট ভাবুন এক বার, সে সিন, যখন আপনি স্বাস্থ্যবতী জলপ্রপাতের মতো বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে একা, আর আপনার সামনে দিয়ে একে একে উড়ে যাচ্ছে প্রতি বারের লাস্ট হোপ৷ এক-একটা সবে ভর্তি হওয়া ট্যাক্সি৷ কয়েকটাকে আবার আপনার দেখে মনে হবে ফাঁকা, পেয়েছি ফাইনালি, কিন্ত্ত হুশ করে গায়ে জল গিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় দেখবেন, পিছনের সিট-এ প্রায় আধশোওয়া দুই বান্ধব৷ আহা কী রোম্যান্টিক! ছাগল কোথাকার৷ 
তা হলে উপায়? এক, বস্কে বলে বউ-বাচ্চা সমেত অফিসেই থাকতে পারেন, যদ্দিন না ইডিয়টটা (অর্থাত্‍ বৃষ্টি) থামে৷ দুই, হচ্ছে অফিস বয়কট করুন৷ তিন হচ্ছে, খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে বাড়তি টাকা বিলিয়ে দিন ট্যাক্সিওলার উপর (একেবারে ওল্ডটাইমের জমিদাররা যে ভাবে বাইজিদের গায়ে টাকা ছুঁড়ত, সেই স্টাইলে)৷ না আর একটা লাস্ট উপায় রয়েছে, তলপেট থেকে একটা মারাত্মক জয় মাআআআআ চিত্‍কার তুলে, রাস্তায় নেমে পড়া৷ বাকিটা বুঝে নেবে ঠাকুর (এ ক্ষেত্রে অফ আটমোস্ট ইম্পর্ট্যান্স হল, স্কুল-কলেজ ও প্রেম জীবনে নানা বিপত্তির সময় ঠাকুরকে দেওয়া যাবতীয় খিস্তির জন্য হাঁউমাউ করে ক্ষমাপ্রার্থনা)৷ কিন্ত্ত আমি এমন তীব্র আনলাকি এক জীব, যে উপরের একটাও সমাধান খাটে না, শেষেরটা তো নয়ই৷
গত পরশু অফিস থেকে বেরিয়ে এই এত কিছু ভাবছিলাম৷ ঘোর সন্ধে হয়েছে তখন, বৃষ্টিও নিশ্চিত্‍ শুয়োর, উপরের সব ক'টা ঘটনা পরীক্ষায় কমন প্রশ্নের মতো রিপিট দিচ্ছে, আর আমিও দাঁড়িয়ে আছি একটা শিক বের করা ছাতা নিয়ে, বাংলায় মেগা-শিল্প আসার আশা যেন৷ দাঁড়িয়ে আছি তো আছি, কোনও স্পষ্ট রোডম্যাপ নেই৷ জাস্ট আরবিট৷ গোঁজামিল দিয়ে যা হয় কিছু একটা ঠিক হয়ে যাবেই৷ রোজকার অভ্যেস তো৷ 
সে দিনের গোঁজামিল ছিল একটা উটকো ট্যাক্সি৷ যে এক বার মৃদু হাত দেখাতেই থামল, ধরা গলায় যেখানে যেতে চাই নিয়ে গেল, ধীরে ফিরে পাওয়া আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলে দেওয়া রুটেই, মাঝে এক বার এ টি এম-ও যেতে দিল, গলির মধ্যে বেশ কিছুটা ঢুকতেও আপত্তি করল না৷ আর শেষে এক্সট্রা এক পয়সাও নিল না৷ ট্যাক্সিচালক কোনও কালে নিশ্চয়ই আমার মতো এ ভাবেই অফিস ফেরতা দাঁড়িয়ে ভিজতেন৷ আমি জানি৷ এ জন্মে তাই তিনি দেবদূত হয়ে পথেঘাটে ঘোরেন৷ রাইটার্স-এর পাশ দিয়ে তিনি কি যান? প্রশ্ন৷
অনির্বাণ ভট্টাচার্য 

No comments:

Post a Comment