Wednesday, February 6, 2013

সাহারার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে সেবিকে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

সাহারার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে সেবিকে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
সাহারার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে সেবিকে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
নয়াদিল্লি: সাহারা গোষ্ঠীর দুই সংস্থা, সাহারা ইন্ডিয়া রিয়েল এস্টেট কর্পোরেশন এবং সাহারা ইন্ডিয়া হাউজিং কর্পোরেশনের যাবতীয় সম্পত্তি দ্রুত বাজেয়াপ্ত করতে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবিকে নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট৷ সেই সঙ্গে আদালতের নির্দেশ অবমাননার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তার জবাব চেয়ে বুধবার সাহারার দুই সংস্থার কাছ নোটিশও পাঠিয়েছে বিচারপতি কেএস রাধাকৃষ্ণন এবং বিচারপতি জেএস খেহারের ডিভিশন বেঞ্চ৷ 

গত ৩১ অগস্ট সুপ্রিম কোর্টের এই ডিভিশন বেঞ্চ সাহারার দুই সংস্থাকে আদেশ দেয়, তিন কোটি বিনিয়োগকারীর ২৪,০০০ কোটি টাকা আমানত ১৫ শতাংশ সুদ-সহ তিন মাসের মধ্যে ফেরত দিতে৷ ওই আদেশে বলা হয়, সাহারার দুই সংস্থা সেবির কাছে ওই টাকা জমা দেবে এবং সেবির বিনিয়োগকারীদের তথ্য মিলিয়ে তাদের পাওনা টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারটি তদারকি করবে৷ দশ দিনের মধ্যে সাহারার সংস্থাকে বিনিয়োগকারীদের সম্পর্কে সমস্ত তথ্য সেবির কাছে জমা দিতে হবে৷ কিন্তু, আদালতের আদেশ জারি হওয়ার দু'সপ্তাহ পরেও সাহারা বিনিয়োগকারীদের সম্পর্কে কোনও তথ্য না দিলে সেবি সুপ্রিম কোর্টে ওই ডিভিশন বেঞ্চের কাছে সাহারার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনে৷ ১০ অক্টোবর আদালত সেবিকে নির্দেশ দেয় তারা সাহারার সংস্থা দু'টির যাবতীয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারে৷ 

এর পর ২ নভেম্বর সেবি সুপ্রিম কোর্টে ফের সাহারার বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত না দেওয়ার এবং আদালতের আদেশ অবমাননার অভিযোগে আনে৷ কিন্তু, এত দিন এ বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় সেবিকেও তীব্র ভর্ত‍সনা করে সুপ্রিম কোর্ট৷ বিচারপতিরা বলেন, 'আপনারা কী ব্যবস্থা করেছেন? কিছুই করেননি৷ আদালতের আদেশে পরিষ্কার বলা ছিল আপনাদের কী করনীয়, কিন্ত্ত আপনারা তার কিছুই করেননি৷' 

সেবির পক্ষ থেকে বলা হয় যে তাঁরা ব্যবস্থা নিচ্ছেন৷ ওই দুই সাহারা সংস্থার কাছে নোটিশ পাঠানো হয়েছে এবং তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করার জন্য বম্বের এক দায়রা আদালতের অনুমতিও চাওয়া হয়েছে৷ এই উত্তরে অসন্তুষ্ট সুপ্রিম কোর্ট সেবিকে বলেছে যে শুধু নোটিশ পাঠালেই হবে না, আদালত গত বছর (৩১ অগস্ট) যে আদেশ দিয়েছিল সেই নির্দেশ মোতাবেক তাদের ব্যবস্থা নিতে হবে৷ 'কেন আপনারা শুধু নোটিশ পাঠিয়েই বসে থেকেছেন, কোনও ব্যবস্থা নেননি৷ আমাদের আদেশ পালন করতে হবে আপনাদের,' বিচারপতিরা বলেন৷ 

বুধবার বিচারপতিদের ডিভিশন বেঞ্চ এটাও পরিষ্কার করে দেন যে সাহারা বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার সহ অন্য মামলা জারি থাকলেও তাতে ওই গোষ্ঠীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে সেবির কোনও অসুবিধা হবে না৷ 'এই ধরণের আর্থিক কুকীর্তি কঠিন হাতে দমন করতে হবে,' সুপ্রিম কোর্ট বলে৷ সাহারার ওই দুই সংস্থা অনিয়ম করে বাজার থেকে টাকা তুলেছে৷ এই অভিযাগ প্রমাণিত হওয়ায় গত বছর ৩১ অগস্ট সাহারাকে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, তিন কোটি বিনিয়োগকারীকে ১৫ শতাংশ সুদ সমেত ২৪ হাজার কোটি টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে৷ সেই নির্দেশ পুনর্বিবেচনার জন্যই সুপ্রিম কোর্টে ফের আবেদন জানায় সাহারা৷ 

কিন্তু, গত ৯ জানুয়ারি সেই আবেদন খারিজ করে দেয় দেশের সর্ব্বোচ্চ আদালত৷ ১৮ জানুয়ারি সেবি জানায়, বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় সমস্ত কাগজপত্র এখনও দেয়নি সাহারা৷ সেবি চেয়ারম্যান ইউকে সিনহা বলেন, 'শেয়ার হোল্ডারদের সত্যতা সম্পর্কীত যাবতীয় তথ্য খতিয়ে দেখতে তাঁরা প্রস্তুত৷ সমস্ত কাগজপত্র আমাদের হাতে এলে তার সত্যতা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যাচাই করতে পারবে আমাদের নিজস্ব সংস্থা৷ কিন্তু আমাদের সব কাগজপত্র দেওয় হয়নি৷' 

দেখা গিয়েছে, বিনিয়োগকারীদের তথ্য পেশের বিষয়ে প্রথম থেকেই অসহযোগিতা করে আসছে সাহারা৷ সংস্থার দু'টি যাবতীয় তথ্য প্রথমে দিতে অস্বীকার করে সাহারা গোষ্ঠী৷ পরে পাসওয়ার্ড ছাড়া কয়েকটি সিডি পাঠায়৷ সবশেষে কয়েক ট্রাক নথি পাঠানো হয় সেবিকে৷ 

তথ্য পেশ নিয়ে টালবাহানা চালানোর পাশাপাশি ফেরতযোগ্য অর্থের অংশ নিয়েও অনেক প্রশ্ন তুলেছিল সাহারা৷ আদালতের রায়ের রিভিউ পিটিশনে অঙ্কের হিসাব পুনর্নবিবেচনা করার আর্জি জানিয়েছিল সাহারা৷ তবে শীর্ষ আদালত সেই আবেদনও খারিজ করে দেয়৷ 

এদিন সাহারার পক্ষে সওয়াল করে বর্ষীয়ান আইনজীবি রাম জেঠমালানি বলেন, আদালতের নির্দেশের আগেই বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীদেরই পাওনা টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ এখন আর কোনও বকেয়া নেই৷ তাছাড়া, ১০,০০০ কোটি টাকা জমা দেওয়াও মুশকিল৷ 

No comments:

Post a Comment