Wednesday, June 8, 2011

মোর্চার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি রাজ্যের, এবার জুড়তে পারে নতুন এলাকাও

Image

মোর্চার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি রাজ্যের,
এবার জুড়তে পারে নতুন এলাকাও

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ৭ই জুন — গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে মঙ্গলবার রাজ্য সরকারের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সই হয়েছে। তবে চুক্তিটি রাজ্য সরকার প্রকাশ করেনি। চুক্তিতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সই করেছেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব জ্ঞানদত্ত গৌতম। মোর্চার পক্ষ থেকে সই করেছেন রোশন গিরি। তবে চুক্তির পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সাংবাদিকদের সামনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেই বলেছেন, '' দার্জিলিঙের ভাইবোনরা দীর্ঘদিন তাঁদের দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছেন। আজ ঐতিহাসিক দিন। দার্জিলিঙ সমস্যার সমাধান হয়ে গেলো। চুক্তি সই হয়ে গেলো।'' অন্যদিকে আলোচনায় এবং চুক্তি সইয়ের সময় উপস্থিত মোর্চার নেতা, বিধায়ক হরকা বাহাদুর ছেত্রী জানিয়েছেন, '' নতুন কোন্‌ কোন্‌ এলাকা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত হবে, তা বিচার করতে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গড়ার চুক্তি করতে হয়েছে রাজ্য সরকারকে। এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আমাদের লক্ষ্যে আরো এক ধাপ এগোলাম।''

তাঁদের লক্ষ্য গোর্খাল্যান্ড। সোমবারও রোশন গিরি মহাকরণে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তারা গোর্খাল্যান্ডের দাবি ছাড়ছেন না। তৃণমূল পরিচালিত নতুন রাজ্য সরকারের আধিকারিকদের সঙ্গে মোর্চার বৈঠক শুরু হয়েছিল সোমবারই। সেদিন তা সম্পূর্ণ হয়নি। তাই মঙ্গলবার তা আবার হয়। 

পার্বত্য পরিষদের নতুন কাঠামো বলতে ঠিক কী বোঝানো হচ্ছে, তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েই গেছে। নির্বাচিত অন্তর্বর্তী পরিষদের বিষয়ে আলোচনা চলছিল ত্রিপাক্ষিক পর্যায়ে। এদিনের চুক্তি সম্পর্কে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে রাজ্যের প্রাক্তন নগরোন্নয়ন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য জানান, '' এদিন যে সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তার সবগুলিই গত ২৫শে জানুয়ারির বৈঠকে হয়েছিল। যদিও তারপরই দার্জিলিঙে ফিরে মোর্চার নেতারা আবার গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। এতদিনের সমস্যার যদি সমাধান হয়, তাতে অখুশি হওয়ার প্রশ্ন নেই। কিন্তু কী সূত্রে সমাধান বলা হচ্ছে, তা সবাইকে জানাতে হবে। আর নির্বাচনের কথা তো বামফ্রন্টের সরকারের সময়েই হয়েছে।'' 

এদিন দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বিষয়টি নিজেই ফোন করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরমকে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। চিদাম্বরমের প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য, গত ২১শে জানুয়ারি চিদাম্বরম তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে চিঠি লিখে রাজ্য সরকারের সঙ্গে বৈঠক করতে চান। তার আগে ১৯শে জানুয়ারি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে ফোনে দার্জিলিঙ নিয়ে কথা বলেন চিদাম্বরম। ২৫শে জানুয়ারি নয়াদিল্লিতে চিদাম্বরম রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য এবং মোর্চার নেতা রোশন গিরিসহ অন্যান্যদের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেন। বৈঠকে চিদাম্বরম স্পষ্টই জানিয়েছিলেন, অন্তর্বর্তী পরিষদ হবে। সেই পরিষদ হবে বর্তমান পরিষদের এলাকা নিয়েই। নতুন কোনো এলাকা অন্তর্ভুক্ত করার কথা চিদাম্বরম বলেননি, তাঁর লেখা চিঠিতেও নেই। এমনকি গত ৩১শে জানুয়ারি রাজ্যের মুখ্য সচিব সমর ঘোষকে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক যে খসড়া মেমোরেন্ডাম অব সেটল্‌মেন্ট পাঠায়, তাতেও নতুন এলাকা অন্তর্ভুক্ত কিংবা তা নিয়ে কোন সমীক্ষা, কমিটি, সুপারিশের কথা ছিল না। নতুন এলাকা অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে মোর্চা নেতৃত্বের অনমনীয় মনোভাবকে 'গোঁয়ার্তুমি' হিসাবে নিজেদের সাম্প্রতিক রিপোর্টে চিহ্নিত করেছে চিদাম্বরমেরই মন্ত্রক। এদিনের চুক্তির পরে আগামী ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে এই বিষয়গুলিতে আলোচনা করে দু'পক্ষকে তাদের ঐকমত্যে পৌঁছানোর বিষয়টি জানাতে হবে। এখন দেখার কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপ কী হয়। কারণ এই বিষয়ে চূড়ান্ত শিলমোহর পড়বে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকেই। যদিও এই বিষয়ে মমতা ব্যানার্জি এদিন বলেন, '' ওটি কোন বিষয় নয়। টেকনিক্যাল ব্যাপার। চাইলে ১ সপ্তাহের মধ্যেই ঐ বৈঠক হয়ে যেতে পারে।''

কিন্তু কী কী রয়েছে এদিনের চুক্তিতে ? কোন্‌ কোন্‌ বিষয়ে দু'পক্ষ একমত হতে পারলো ? এই প্রশ্ন স্বাভাবিক। মুখ্যমন্ত্রী নিজে এই সব প্রশ্নের কোন জবাব দেননি। বলেছেন, ''এমন মার্কেট প্লেসে ( সাংবাদিক সম্মেলনের জায়গাটিকে বোঝাতে চেয়েছেন উনি) এই সব বলা সম্ভব নয়। ঐ গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলি সাংবাদিকদের ব্যাখ্যা করার দায়িত্ব তিনি দেন মুখ্যসচিবের ঘাড়ে। মুখ্যসচিব সমর ঘোষ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে ৪টি বিষয়ে মূলত এদিন একমত হওয়া গেছে। সেগুলি হলো — (১) পার্বত্য পরিষদ পরিচালনার নতুন সংস্থা তৈরি করতে নির্বাচন হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে সংস্থার পরিচালক তৈরি করতে একটি আইন করতে হবে। আইন তৈরির জন্য যে বিল বিধানসভায় পাস করাতে হয়, তা বিধানসভার আগামী অধিবেশনে পেশ করা হবে। (২) এই মুহূর্তে পার্বত্য পরিষদ পরিচালনা করেন একজন প্রশাসক। রাজ্য সরকার এই ক্ষেত্রে একটি বোর্ড অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটরস বানাবে। তার সদস্য হবেন ৯জন। একজন চেয়ারম্যান থাকবেন। চেয়ারম্যান কে হবেন, তা ঠিক করবে রাজ্য সরকার। দার্জিলিঙের পাহাড়ী এলাকার ৩টি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ৩ বিধায়ক ঐ বোর্ডের সদস্য হবেন। মূলত থমকে থাকা উন্নয়নের কাজ চালু করাই এই নতুন বোর্ড গঠনের কারণ বলে সমর ঘোষ জানান। (৩) গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার দাবি ডুয়ার্স এবং শিলিগুড়ির ৩৫৫টি মৌজাকে দার্জিলিঙ গোর্খা পার্বত্য পরিষদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ২০০৮-র ৮ই সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে প্রথম ত্রিপাক্ষিক বৈঠকেও মোর্চার প্রতিনিধিরা ঐ মৌজাগুলিকে নিয়ে তাদের 'গোর্খাল্যান্ডের মানচিত্র' হাজির করেছিলেন। এদিন মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি তৈরি হবে। তা তৈরি হবে আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে। মোর্চা যে এলাকা সংস্থার এক্তিয়ারভুক্ত করতে চাইছেন, সেই অঞ্চলগুলিতে সমীক্ষা করবে ঐ উচ্চপর্যায়ের কমিটি। সেখানকার ভৌগোলিক অবস্থা, সমাজের বিভিন্ন অংশের মধ্যে তার প্রতিক্রিয়া প্রভৃতি বিচার করে ঐ কমিটি তার সুপারিশ পেশ করবে রাজ্য সরকারের কাছে। রাজ্য সরকার চাইছে ঐ কমিটি পারলে আগামী ৬ মাসের মধ্যে ঐ সুপারিশ জমা দিক। যা হবে সকলের ঐকমত্যের ভিত্তিতেই হবে। নতুন সংস্থার নির্বাচন হবে বর্তমানে পার্বত্য পরিষদের যে এলাকা রয়েছে তার মধ্যেই। 

প্রসঙ্গত, এই এলাকা বাড়ানোর দাবিতেই সর্বাধিক জোর দিয়েছিল মোর্চা। তাদের দাবি ডুয়ার্সের ২২০ এবং শিলিগুড়ির ১৩৫টি মৌজা। এদিন সেই দাবির ভিত্তিতে কোন্‌ কোন্‌ এলাকা পার্বত্য পরিষদে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে তার সুপারিশ করার জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে। এদিন এই বিষয়ে মোর্চার নেতা হরকা বাহাদুর ছেত্রী জানান, '' এদিনের বৈঠকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এটিকেই আমরা মনে করছি। আমাদের লক্ষ্যে আমরা অনেকখানি এগিয়েছি।'' আর এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের মনোভাব, বক্তব্য কী ? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের 'অ্যাকশন প্ল্যান-৪, ফর দ্য পিরিয়ড ১লা এপ্রিল, ২০১০ থেকে ৩১শে মার্চ, ২০১১' শীর্ষক রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়েছে। সেই রিপোর্টের ১০-১১ পাতায় দার্জিলিঙ সমস্যার বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে অন্তর্বর্তী পরিষদ সম্পর্কে আলোচনার জন্য ২০১০-র ১৫ই মে আধিকারিকদের পর্যায়ে আলোচনা হয়েছিল। বৈঠকে প্রস্তাবিত অন্তর্বর্তী পরিষদে শিলিগুড়ি এবং ডুয়ার্সের অংশ অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার মনোভাব ছিল 'গোঁয়ারের' মতো — এমনই স্পষ্ট মন্তব্য করা হয়েছে চিদাম্বরমের মন্ত্রকের রিপোর্টে।

এদিন মোট ৭ দফা বিষয়ে আলোচনা হয় মহাকরণের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে। মোর্চার আরো কিছু দাবি ছিল। যেমন চা বাগানের জমির পরিচালনা, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অধিকার তাদের হাতে দেওয়া, পার্বত্য পরিষদের অস্থায়ী, অ্যাডহক ভিত্তিতে কর্মরত কর্মচারীদের স্থায়ী করা। এই বিষয়ে মুখ্যসচিব সমর ঘোষ জানিয়েছেন, বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। চা বাগানের জমি (তৌজি)-র বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আর একটি কমিটি হবে দু' সপ্তাহের মধ্যে। অস্থায়ী কর্মচারীদের মধ্যে যাঁরা ১০বছর ইতোমধ্যেই কাজ করেছেন, তাঁরা ৬০বছর পর্যন্ত কাজ করতে পারবেন। অবসরের পরে অন্যান্য সরকারী কর্মীরা যে সুবিধা পান, তাঁরাও পাবেন। আর যাঁরা ১০বছরের কম কাজ করছেন, তাঁরাও ১০বছর হলে একই সুবিধার আওতায় আসবেন। পার্বত্য পরিষদে এমন ৬০০০-র বেশি কর্মী আছেন। আর সংরক্ষিত বনাঞ্চল যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকারের আওতাধীন, তাই এই বিষয়ে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা কেন্দ্রীয় সরকার নেবে। 

নতুন কী কী ক্ষমতা পেল পার্বত্য পরিষদ ? সেই বিষয়ে এদিন স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। সমর ঘোষ বলেছেন, ''আর্থিক সহ কোন্‌ কোন্‌ বিষয়ে আরো ক্ষমতা পরিষদ পাবে তা আগের বৈঠকগুলিতেই আলোচনা হয়েছে। ফলে এই বিষয়ে আজ নতুন করে কিছু আলোচনা হয়নি।'' সেগুলি বলা বাহুল্য, ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে চূড়ান্ত হবে। তবে যে মোর্চা নেতৃত্ব গত জানুয়ারিতেও বৈঠকের পর ফিরে গিয়ে গোর্খাল্যান্ডের দাবি তুলেছিলেন, তারা এদিন মাত্র কয়েক ঘণ্টার আলোচনায় কী করে এত কিছু মেনে নিলেন, আর পরিষদের এলাকা বাড়ানোর জন্য কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারের ভাবনা কী — এই বিষয় দুটিই আগামী দিনের জন্য উল্লেখযোগ্য। প্রসঙ্গত, বামফ্রন্ট পরাজিত হওয়ায় খুবই আনন্দ পেয়েছিলেন মোর্চার নেতারা। তাঁরা তৃণমূলের প্রতি তাঁদের সমর্থন ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন। গত ২৬শে মে রোশন গিরি এবং ৩০শে মোর্চার প্রধান বিমল গুরুঙ সপারিষদ মহাকরণে এসেছিলেন। দু'জনেই মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে ৩৪বছরের 'বামফ্রন্ট জমানার পতনে' তাঁদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।


সর্বোচ্চ আনন্দ আসুক
মানুষের ভালোবাসায়

গৌতম দেব

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন বিশ্বে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করা ঘটনা; সমাজতান্ত্রিক শক্তির পক্ষে বড় ধরনের বিপর্যয়। কেন ভেঙে পড়লো বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক দেশ — সোভিয়েত ইউনিয়ন? আজো বিশ্বের দেশে দেশে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পোস্ট মর্টেম চলছে। সি পি আই (এম) ঘটনার অগ্নুৎপাতের মধ্যেই অনুষ্ঠিত চতুর্দশ পার্টি কংগ্রেসে (১৯৯২/চেন্নাই) বিনম্র প্রয়াস গ্রহণ করে পতনের কারণ খোঁজার এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, অনেকটাই মৌলিক চরিত্রের একটি দলিল গ্রহণ করে। প্রস্তাবটির নাম — ''কয়েকটি মতাদর্শগত বিষয় প্রসঙ্গে।'' পার্টির সকলের অবশ্য পাঠ্য; আর বিশেষ করে ভোটে হেরে মন খারাপ করা কমরেডদের কয়েকবার পড়ে ফেলা দরকার। লেনিন-স্তালিনের পার্টি। প্রথম বিপ্লব করা পার্টি। প্রথম সমাজতন্ত্র গড়ে তোলা পার্টি। হিটলারের নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদের করাল গ্রাস থেকে বিশ্বকে মুক্ত করতে দুই কোটি মানুষের জীবন কুরবানি দেওয়া সোভিয়েতের বুক ভরা গর্বের পার্টি; রূপকথার শৌর্য্য বীর্জের প্রতীক লালফৌজের অন্তরাত্মা সোভিয়েত পার্টি; মহান চীন বিপ্লবের পাশে অচঞ্চল, নিঃস্বার্থ, আন্তরিক সাহায্যের ডালি নিয়ে উপস্থিত হওয়া পার্টি; মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সাথে সমানে সমানে টেক্কা দেওয়া সোভিয়েত দেশের মূল প্রাণ শক্তি — সি পি এস ইউ .... তার অবক্ষয় শেষ পর্যন্ত এমন মাত্রা এবং গভীরতা পেলো যে বিনা প্রতিরোধে তাসের ঘরের মতো সোভিয়েত দেশটা ভেঙে পড়লো; কমিউনিস্ট পার্টির অবস্থাও তথৈবচ!

আমরা এদেশে বিপ্লব করিনি; রাষ্ট্রক্ষমতা দখলও করিনি। দেশের সংসদীয় ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমতের সমর্থনে তিনটি রাজ্যে রাজ্য সরকার গঠন করেছি। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে একনাগাড়ে ৩৪ বছর ভোটে জিতে সরকারে ছিলাম। ১৯৭৭ সালের পর একটানা ২৮টি নির্বাচনে পর পর জি‍তে এসেছে বামফ্রন্ট। অন্যদিকে ২০০৮, ২০০৯, ২০১০, ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত চারটি নির্বাচনে টানা খারাপ ফলাফল হ'ল বামপন্থীদের। জিতলে, কেন জিতেছি এটা নিয়ে বড় একটা তর্ক-বিতর্ক হয় না; এমনকি ভোটের শতাংশ কিছুটা কম হলেও লোকে তা নিয়ে শোকস্তব্ধ হয় না। জেতাটাই বড় ব্যাপার। সরকার গঠন করতে পারাটাই বিশাল বিজয়! আর সেটা যে ঘটনা এব্যাপারে সন্দেহ নেই। কিন্তু জয়টা ভালোভাবে নেড়েচে‍ড়ে দেখা দরকার। জয়টা ভালোরকম হলো না কোন প্রকারে পাশ কাটিয়ে হলো সেটাও জানা জরুরী। জয় কেন হলো সেটা বোঝার মধ্যে নিহিত আছে পরাজয় কোন্‌ পথে আসতে পারে তার গুগুলীয় দিক নির্দেশ।



মতাদর্শগত দলিলে আমরা আমাদের পূর্বেকার অনেক ভ্রান্তি চিহ্নিত করেছি এবং অনেক প্রশ্নে ভ্রান্ত অবস্থানের পরিবর্তন ঘটিয়েছি। যেমন ''ভারতীয় পরিস্থিতিতে সমাজতন্ত্র বলতে কি বোঝায়?'' ৭.৯, ৯.১০, ৯.১১ প্যারায় এই বিষয়ে রূপরেখা টানা হয়েছে। অর্থনীতিতে সামাজিক মালিকানার পাশাপাশি থাকবে সম্পত্তির অন্যান্য রূপ। যতদিন পণ্য উৎপাদন থাকবে, ততদিন বাজারও থাকতে বাধ্য। কিন্তু বাজারের শক্তি থাকবে কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার অধীন। আর সামাজিক মালিকানা হবে নির্ণায়ক রূপ। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সমাজতন্ত্রে ভিন্নমত ব্যক্ত করবার অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার এবং মতামতের বহুত্ব বিকশিত হবে। এদেশে বিদ্যমান গণতান্ত্রিক অধিকারগুলি রক্ষা করা ও বিকশিত করা হবে। সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র হঠাৎ আকাশ থেকে পড়া কোনো বস্তু নয়। মানবজীবনের উৎকর্ষতার ধারাবাহিক বিকাশ ও নিরন্তর তাকে গভীর করার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই এটা সম্ভব।

মতাদর্শগত এই নতুন বোঝাপড়ার ভিত্তিতে গৃহীত হলো পার্টির সময়োপযোগী কর্মসূচী (২০০০ সালে)। সেই কর্মসূচীতে বলা হলো বিপ্লবের পর জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ''The right to form political parties and associations, freedom of movement and Occupation, right to dissent shall be ensured.''

অর্থাৎ বিপ্লবের পরেও জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কমিউনিস্ট পার্টির হাতে ক্ষমতা আপনা আপনি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হবে না। লাগাতার ভালো কাজ করে যেতে হবে লাগাতার ক্ষমতায় থাকতে গেলে। প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলও থাকবে। উলটোপালটা কাজ করলে মানুষের কাছে তারা পৌঁছে যাবে এবং কমিউনিস্টদের ক্ষমতাচ্যুত করবার ক্ষমতা তাদের থাকবে। অর্থাৎ জনগণের হাতেই সর্বোচ্চ ক্ষমতা। আর এটার জন্য আর একটা বিপ্লব বা প্রতিবিপ্লবের দরকার হবে না। সার্বজনীন ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে ভদ্রসভ্য পরিবেশেই ক্ষমতায় আসা যাওয়া চলতে পারে। কিন্তু আমি বিপ্লব করেছি, সেকারণে আমিই একমাত্র ক্ষমতায় থাকবো একশ বছর এটা চলে না। যেমন কংগ্রেস বলতে পারে না যে, স্বাধীনতা সংগ্রামে আমরা প্রধান ভূমিকা নিয়েছি অতএব দেশ শাসনের অধিকার একমাত্র আমাদের! সমাজতন্ত্রকে রক্ষা করে যদি দলগুলির মধ্যে ভালো কাজ করার প্রতিযোগিতা হয় তা তো সকলের পক্ষে মঙ্গলকর।



বিপ্লবের পরে যেখানে ক্ষমতাহীন হওয়ার আশঙ্কা, সেখানে বিপ্লব-পূর্ব ভারতবর্ষের একটি অঙ্গরাজ্য। যেখানে ৫ বছর অন্তর ভোটের ব্যবস্থা, লাগাতার ভালো কাজ করে যেতে না পারলে যে রাজ্য সরকার থেকে সরতে হবে এটা স্বাভাবিক। এছাড়া দেশের বণিক-মালিক-সাট্টা আর মিডিয়া ডনেরা যে বাম সরকার হটা‍‌তে কিঞ্চিৎ একে ওকে Cultivate করবে এটা পূব দিকে সূর্য ওঠার মতো শ্বাস্বত সত্য। তারপরে যদি বামেদের কাজকর্ম কোথাও অবামসুলভ হয় তাহলে তো কথাই নেই। কেন্দ্রীয় সরকারের পিছনে লাগা তো আছেই। প্রথম যুক্তফ্রন্ট আর দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট সরকারকে ওরা কলকাঠি নেড়ে ভেস্তেই দিলো। ১৯৭১ সালে সি পি আই (এম)-কে সরকার গড়তে ডাকলোই না। ১৯৭২ সালে নির্বাচনে জালিয়াতি করলো। তারপর আধাফ্যাসিবাদী সন্ত্রাস এবং জরুরী অবস্থা। এই অভিজ্ঞতা হেতু ১৯৭৭ সালে যখন প্রথম বামফ্রন্ট সরকার গঠিত হয়, কোনো বামনেতা ভাবেননি যে এই সরকার ১০/২০ বছর চলবে। সকলের ধারণা ছিলো যে, কয়েক বছর চলবে তারপর এটা ওটা অছিলায় ভেঙে দেবে। আবার মারামারি কাটাকাটি, এইসব চলবে। কিন্তু নানান কারণে বামফ্রন্ট সরকার একটানা ৩৪ বছর চললো। জাতীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ডামাডোল, রাজ্যে বিরোধীদের অবস্থান, বিকল্প পথে জনকল্যাণে বামফ্রন্ট সরকারের নানাবিধ কর্মসূচী, বাম পার্টিগুলি ও তাদের গণ-সংগঠনের জনসাধারণের সঙ্গে নিবিড়, জীবন্ত যোগাযোগ, সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে বামফ্রন্টের অনমনীয় মনোভাব, কংগ্রেসের জনবিরোধী ভাবমূর্তি ইত্যাদি নানান উপাদান এই প্রশ্নে ভূমিকা পালন করেছে।

একথা সত্য যে, ৩৪ বছর ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন যদি ধরে রাখা যায় তাহলে সেটা ৪০ বছর অথবা ৪৫ বছরও সম্ভব। অন্তত তাত্ত্বিক এবং প্রয়োগের দিক থেকে। ৩৪ বছরটা কাট অফ্‌ বছর — এটা কোথাও ঠিক হয়নি। anti-incumbency ৩৪ বছর পরে full maturity অর্জন করে; ১০/১৫ বছরে হামাগুড়ি দিয়ে চলে এটাও কোনো পণ্ডিত বলে যায়নি। ফলে ৩৪ বছর পরে ভোটে হারাটা অনিবার্য, ঈশ্বর নির্দিষ্ট এটা ঠিক নয়। অন্যদিকে, ভোটের লড়াই-এ একটি অঙ্গরাজ্যে ৩৫ বছর, ৪০ বছর, ৫০ বছর .... এইভাবে আদি অনন্তকাল জয় অব্যাহত থাকবে — এটা কোনো সাধারণ কমরেডও মনে করেন না। ৫০ বছর ধরে বামফ্রন্ট সরকার চলবে? এই প্রশ্নে মাথা চুলকোতে হয়। অর্থাৎ সব কার্য কারণ আমার মাথায় ঢুকুক অথবা না ঢুকুক, পার্টির সাধারণ কর্মীর widsom অথবা commonsense ও একথা বলে যে একটা সময়ে এসে ভোটে হার ঘাড়ে এসে পড়বে। সেই পর্যায় মোকাবিলা করে আবার জয়ের রাস্তায় ফিরতে হবে। সেই পর্যায় অথবা হারটা ৩৫ বছর ঠেকিয়ে রাখা বিশ্বের সংসদীয় ইতিহাসে বিরল ঘটনা।

প্রশ্ন উঠছে মমতার জয়কে এবারও কি বামপন্থীরা বলবে নেগেটিভ ভোট? অর্থাৎ মমতা টানে নয়; বাম বিরাগে এই ভোট! অনেক পণ্ডিত সজোরে বলছেন যে, মমতার পক্ষে এবার সর্বাত্মক ইতিবাচক ভোট হলো। বামেরা বলছে অন্যতম কারণ ''পরিবর্তনের'' তীব্র আকাঙ্ক্ষা। পরিবর্তন এখানে মূল উৎসভূমি। পরিবর্তন কার? বাম সরকারের। অনিবার্যভাবেই সেটা সম্ভব কংগ্রেস-তৃণমূল জোটকে ভোট দিলে। তাই হয়েছে। ইতিবাচকপন্থীরা এতে খুশি নয়। পরিবর্তনের উপাদান থাকলেও মমতার আকর্ষণেই এই বিপুল গণ-অভ্যুত্থান। এই প্রসঙ্গে তারা মমতার জনমোহিনী ক্ষমতার কথা উল্লেখ করেন। প্রশ্ন হচ্ছে, বঙ্গবাসী মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন কোনো রাজ্য সরকার কোনোদিন দেখেননি। যা দেখেননি তার সমর্থনে ইতিবাচক ভোটের লাইন পরে কি ভাবে? এটা দেখা যাবে ৫ বছর পরে। বলা যেতে পারে যে, রাজ্য সরকার না দেখলেও মনমোহন-মমতা-রাজাদের কেন্দ্রীয় সরকারের কাজে মানুষ বিগলিত এবং ঐ গতিতে ও বাহাদুরীতে কংগ্রেস-তৃণমূল রাজ্যেও সরকার চালাবে এই বিবেচনা থেকে ইতিবাচক ভোট এসেছে! অর্থাৎ সারা দেশ যখন ওদের কেন্দ্রীয় সরকারকে শতাব্দীর সেরা চোর সরকারের শিরোপা দিচ্ছেন; জিনিসপত্রের আকাশছোঁয়া দামে যখন আমজনতা বিপর্যস্ত; ইউ পি এ টু হওয়ার পরে গত দু'বছরে অনুষ্ঠিত বেশিরভাগ নির্বাচনে যখন কংগ্রেস ও তার জোট সঙ্গীরা হেরে ভূত; তখন পশ্চিমবাংলার সচেতন জনগণের বড় অংশ সেই কেন্দ্রীয় সরকারের কাজকর্মে বিমোহিত হয়ে মমতাদের ঢেলে ভোট দিলেন। ইতিবাচকের আর একটা সূত্র আছে। তা হচ্ছে মমতার স্ট্রিট ফাইট। গত ১০/১২ বছর ধরে মহিলা একনাগারে বামেদের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন। কোনো অবস্থাতে সমঝোতা করেননি। মুখ্যমন্ত্রীর মুখ দর্শন পর্যন্ত করেননি। রাইটার্সে পা দেননি। নেতা, এম এল এ-দের বলেছেন মন্ত্রীদের মুখ না দেখার জন্য। সরকারী সব সভা বয়কট। রাষ্ট্রপতিকে এনে রেলমন্ত্রী হিসাবে অনুষ্ঠান করেছেন; কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে ডাকেননি। কি লড়াকু মহিলা!! সিঙ্গুরটা আটকে ছাড়লো তো। নন্দীগ্রামে তো ঘেষতেই দিলো না। হরিপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানাবার জন্য আসা কেন্দ্রীয় সংস্থার বিজ্ঞানীদের জায়গা দেখতেই দেওয়া হলো না। রাজারহাটের শেষ দেখার হুঙ্কার ছাড়লেন। বাইপাসের বিকল্প বাইপাস আটকে দিলেন। জাতীয় সড়ক চওড়া হবে। ফলে জমিতে হাত পড়বে। পতাকা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো দিদির বাহিনী। আটকে গেলো। কাটোয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র — আটকে ‍‌দাও। কংগ্রেস মার্কা হেলে সাপের মতো বিরোধী দল না। এস ইউ সি'র চাইতেও বিশুদ্ধ, কেউটের বিষওয়ালা বিরোধী দল। এ না হলে বিরোধী দল! এই কাজে ধন্য ধন্য করে উঠেছে বঙ্গবাসী। তারই পুরস্কার দিলেন এবারে প্রাণ ভরে ভোট দিয়ে। দিদির অফুরন্ত প্রাণশক্তির কিয়দংশও যদি নয়া সরকারের প্রাণ ফিরিয়ে আনতে ব্যয় করেন, তাহলে বাংলার অগ্রগমন রোখে সাধ্য কার? অতএব এটি একটি ইতিবাচক ভোট।



ফেলুদার সাহায্য ছাড়াই ভোট বিপর্যয়ের রহস্যে যবনিকা উন্মোচন করতে হবে আমাদেরই। পার্টির শাখা থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি — সবাইকে। পার্টিকে ভালোবাসেন এমন লাখো লাখো মানুষ এগিয়ে আসছেন তাদের ক্ষুরধার অভিজ্ঞতা ও চেতনা নিয়ে। কমবয়সী ছেলেমেয়েদের উপরে আমাদের বিপুল ভরসা। একথা ঠিক যে, যাদবপুরে দেবী জনমোহিনী মমতার পদযাত্রায় যে মানুষ শামিল হয়েছেন তার দ্বিগুণেরও বেশি মানুষ আছড়ে পড়েছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের রোড শো-এ; কিন্তু একথাও ঠিক যে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য হেরেছেন ১৬,৬০৪ হাজার ভোটে! এই সত্য কোনো কিছু দিয়েই ঢাকা যাবে না যে, বর্ধমান শহরে বামফ্রন্টের সভার ভিড় অভূতপূর্ব; মাঠ ছাপিয়ে জি টি রোডে আছড়ে পড়েছে; আবার একথাও সত্য যে, নিরুপম সেন ভোটে হেরেছেন ৩৬,৯১৬ ভোটে। দমদমে প্রধানমন্ত্রী-মমতার যৌথ সভায় ১০ হাজার মানুষও জেল ময়দানে জড়ো হননি; অন্যদিকে চার প্রার্থীকে নিয়ে ভি আই পি রোড থেকে বিরাটী পর্যন্ত রোড শো'-এ অংশ নিয়েছেন লক্ষাধিক সাধারণ মানুষ। কিন্তু সবার উপরে EVM সত্য — লেখক গৌতম দেব হেরেছেন ৩১,৪৯৭ ভোটে।

ভোটের আগে পরে হুড়মুড়িয়ে জনমত সমীক্ষা করেছে দেশ বিদেশের ফাইভ স্টার মার্কা বিশেষজ্ঞরা। এই রকম এক বিশেষজ্ঞ সংস্থা যা বলেছে তাই হয়েছে। তাদেরই সমীক্ষার একটা সারণিতে (Table-13) চোখ বোলানো যাক। জনমত কি বলছে আর ফলাফলের ভবিষ্যৎবাণী কি!

Table-13 : Some appreciations of improvement in basic amenities in the last five years.

Improved Deteriorated

Condition of Roads 76% 22%

Supply of electricity 67% 36%

Supply of Drinking Water 60% 36%

Qty. of education in govt. 61% 31%

Schools

Medical facilities 45% 46%

Law & order 46% 39%

Public Bus services 57% 24%

বাকিটা জানিনা-গোত্রে পড়েন।

অথচ ভোট দেবতার খনার বচন। ৬০-এর কাছাকাছি বামফ্রন্ট। তাই হলো। পরের বার সব ফেলে এই দেবতার পূজায় সময় দিলে কাজের কাজ হবে!!



আমরা ভোট পেয়েছি ১,৯৫,৫৫,৮৪৪ জন মানুষের। যা প্রদত্ত ভোটের ৪১.০৫ শতাংশ। ৭টি জেলায় (কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা) আমাদের ভোট ২০০৯ সালের তুলনায় শতাংশে বেড়েছে। বাকি জেলায় কমেছে। রাজ্যে ১০৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে আমাদের বেড়েছে। বাকিগুলিতে কমেছে। বি জে পি খানিকটা ভোট পেয়েছে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, মালদহ, বীরভূমে। ট্রাইবাল অধ্যুষিত এলাকায়ও বি জে পি'র ভোট অন্য জায়গার তুলনায় বেশ বেশি। ট্রাইবালদের জন্য সংরক্ষিত ১৬টি আসনের মধ্যে ১০টিতে জিতেছে বামফ্রন্ট। আদিবাসী বিকাশ পরিষদ, ঝাড়খণ্ড পার্টি, জোটের ঘোট প্রার্থী উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভোট পেয়েছে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, পুরুলিয়া এবং কলকাতায়। আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষিত ১৬টি আসনে আদিবাসীদের দু-একটি সংগঠন মোট ভোট পেয়েছে ১৭.৭ শতাংশ। উত্তর ২৪ পরগনার ৩৩টি আসনের মধ্যে ১১টিতে আমাদের ভোট বেড়েছে। প্রকৃত পক্ষে সবক'টি আসনই গ্রামের দিকে। শুধু বসিরহাট মহকুমায় ৭টি। উত্তরবাংলায় দেশী-বিদেশী প্রতিক্রিয়ার শক্তি আগুন নিয়ে খেলছে। নেপালীদের ক্ষেপাবার পর এবার হাত বাড়িয়েছে আদিবাসীদের দিকে। এই পরিস্থিতিতে জলপাইগুড়ি জেলার শান্তি ইতোমধ্যে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এই জেলার কুমারগ্রাম, কালচিনি, মাদারীহাট, মাল, নাগরাকাটা আসনে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ যে ভোট পেয়েছে তা সকলের কপালে ভাজ ফেলবে।



রাজ্য কমিটির প্রাথমিক পর্যালোচনা হয়েছে। প্রতিটি বিধানসভা ধরে, বুথ ধরে আরও গভীর পর্যালোচনা চলবে। রহস্যের ধুম্রজাল ভেদ করে সত্যের কাছাকাছি পৌঁছতে হবে। সত্যের মুখোমুখি হবার জন্য পরাজয়কে জয়ের লঞ্চিং প্যাডে রূপান্তরিত করতে হবে। নতুন করে বামফ্রন্টের ইনিংস শুরুর আগে এই কঠিন, শ্রমসাধ্য অনুশীলন একান্তই জরুরী। কমিউনিস্টরা সরকারে থেকেও দায়িত্বশীল, বিরোধীদলে থেকেও জনগণের প্রতি সমান দায়বদ্ধ। জনগণকে জয় করার মধ্যেই কমিউনিস্টদের সর্বোচ্চ অনন্দ। সেই আনন্দে কাজ চলবে গ্রাম-শহরে।

গুরুদক্ষিণা

সীমাহীন দুর্নীতি এবং জনবিরোধী পদক্ষেপ নিয়ে ইউ পি এ সরকারের ভেতরে ও বাইরে নাজেহাল অবস্থার মধ্যেও আমেরিকার প্রতি দায়বদ্ধতার কথা কণামাত্রও বিস্মৃত হননি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। কালো টাকা এবং রামদেবের অনশনকে কেন্দ্র করে দিল্লিতে যখন ধুন্ধুমার কাণ্ড চলছে তার মধ্যেই অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় মার্কিন রাষ্ট্রপতি ওবামাকে দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করলেন। তাঁর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটির বৈঠক ওবামার দেশ থেকে ৪১০ কোটি ডলার মূল্যের (প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা) সামরিক বিমান কেনার সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়েছে। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এক লপ্তে এত বড়মাপের সামরিক ক্রয়চুক্তি আগে কখনও হয়নি। এই বৃহত্তম সামরিক ক্রয়চুক্তি করে মনমোহন সিংরা বুঝিয়ে দিলেন আমেরিকার সঙ্গে তাঁদের সামরিক স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্কের ক্রমবর্ধমান নিবিড়তা শুধু কাগজে কলমে নয়, বাস্তব ক্ষেত্রেও। তাই বুশ-মনমোহন সামরিক স্ট্র্যাটেজিক চুক্তির পর থেকে গণ্ডা গণ্ডা সামরিক সহযোগিতা চুক্তির পাশাপাশি ইতোমধ্যে অন্তত ৬টি সামরিক ক্রয়চুক্তি হয়েছে। তার মাধ্যমে আমেরিকার কাছ থেকে ৮৬৪ কোটি ডলারেরে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মনমোহন সিংয়ের জমানায় ভারতের কাছ থেকে ৪০ হাজার কোটিরও বেশি সামরিক বরাত পেয়েছে আমেরিকা। এইভাবে মার্কিন অস্ত্র কিনে মার্কিন অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখার ব্যবস্থা ভারত ছাড়া খুব কম দেশই করেছে। আসলে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রদর্শিত উদার অর্থনীতিকে গ্রহণ করে ভারতের অর্থনীতিকে ওয়াশিংটন সহমতের সঙ্গে অঙ্গীভূত করেই ইউ পি এ সরকার ক্ষান্ত হয়নি। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দুনিয়াদারিকে শিরোধার্য করে তাদের সামরিক সঙ্গী হবার কাজটাও অনেকটা এগিয়ে এনেছে। সেই সুবাদে আর্থিক সঙ্কটে জেরবার আ‍‌মেরিকার অর্থনীতিকে সাহায্য করতে ও বেকার জর্জরিত আমেরিকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে মনমোহন সিংরা হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

গত নভেম্বর মাসে ওবামা ভারত সফরে এসেছিলেন প্রধানত বাণিজ্যের লক্ষ্যে। ভারতের ওপর সব দিক থেকে চাপ সৃষ্টি করে ভারতের বাজার মার্কিন পণ্যের জন্য খোলার প্রতিশ্রুতি যেমন আদায় করেছিলেন তেমনি ১০টি সি-১৭ গ্লোবমাস্টার থ্রি সামরিক পরিবহন বিমান ক্রয়ের ব্যবস্থাও পাকা করেছিলেন। মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে এই প্রতিশ্রুতির কথা প্রকাশ করে ওবামা বলেছিলেন, এর ফলে আমেরিকায় ২২ হাজার নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। মার্কিন অর্থনীতি চাঙ্গা করা ও আমেরিকার সঙ্গে সামরিক-স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্ক দৃঢ়তর করার দ্বিবিধ লক্ষ্যে যে ১০টি বিমান কেনা হচ্ছে সেগুলির নির্মাতা বোয়িং কোম্পানি। বস্তুত দীর্ঘদিন ধরে এই বিশেষ ধরনের বিমানের বরাত না থাকায় শুধু কর্মীরাই কাজ হারাননি, বোয়িং কর্তৃপক্ষ নিরূপায় হয়ে এর উৎপাদনই বন্ধ করার কথা ভাবছিল। মনমোহন সিংরা ১০টি বিমান কেনার বরাত দিয়ে আমেরিকায় একদিকে যেমন ২২ হাজার চাকরির ব্যবস্থা করলেন অন্যদিকে বোয়িং কোম্পানির এই কারখানা বন্ধ হওয়া আরও এক বছরের জন্য ঠেকিয়ে দিলেন। বিমানবাহিনীর জন্য ১২৬টি জঙ্গী বিমানের বরাত গত এপ্রিল মাসে মার্কিন বোয়িং ও লকহিড মার্টিন না পাওয়ায় প্রবল ক্ষুব্ধ হয় আমেরিকা। তখন থেকে প্রবল চাপ সৃষ্টি হয়। শেষে কেন্দ্র ৪১০ কোটি ডলারের বরাত দিয়ে ওয়াশিংটনকে শান্ত করে। আপাতত ১২৬টি জঙ্গী বিমানের বরাত আমেরিকা পায়নি ঠিকই তবে অন্য কেউই পায়নি। ফলে অদূর ভবিষ্যতে যে সেই ৬০ হাজার কোটি টাকার বরাত আমেরিকা পাবে না এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। আমেরিকা কিন্তু এব্যাপারে এখনো হাল ছাড়েনি। বিভিন্ন কায়দায় ভারতের সঙ্গে নেপথ্য আলোচনায় দূতিয়ালি চালিয়ে যাচ্ছে। ঘনিষ্ঠ মহলের মাধ্যমে সরকারের উপর চাপও সৃষ্টি করে চলেছে। শেষ পর্যন্ত হয়তো দেখা যাবে এই বরাত আমেরিকার হাতেই গেল। এখন হয়তো তা দেখার অপেক্ষা।

সচিবালয় থেকে বদলি করা হল ৩৬জনকে

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ৭ই জুন — নজিরবিহীনভাবে বদলি করে দেওয়া হলো মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ের ৩৬জন সরকারী কর্মচারীকে। মঙ্গলবার ২৪জনকে সচিবালয় থেকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ হাতে আসে। বাকি ১২জনেরও বদলির আদেশ তৈরি বলে জানা গেছে। একসঙ্গে এতজন কর্মচারীকে বদলির সিদ্ধান্ত এরআগে কখনও হয়নি বলে এদিন কর্মচারীদের মধ্যে চাপা অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। সচিবালয় থেকে বদলির এই নির্দেশে সেকশান অফিসার থেকে এল ডি ক্লার্ক সমস্ত পদমর্যাদার কর্মচারীরাই আছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির প্রাইভেট সেক্রেটারির কাছ থেকে হোম(পার) বিভাগে দু'টি আলাদাভাবে নির্দেশ যায়। একটি নির্দেশে এই মুহূর্তে সচিবালয় থেকে কাদের অন্যত্র সরিয়ে দিতে হবে তাদের তালিকা পাঠানো হয়। পাশাপাশি কাদের নতুন করে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে নিয়ে আসতে হবে সেই তালিকাও পাঠানো হয়েছিলো। সচিবালয় থেকে সরিয়ে বেশিরভাগ কর্মচারীকেই পাঠানো হয়েছে অর্থ দপ্তরে।

হাওড়ার দুই কলেজে তৃণমূলীদের
আক্রমণে আবার রক্তাক্ত ছাত্ররা

নিজস্ব সংবাদদাতা

হাওড়া, ৭ই জুন— ফের আক্রান্ত হল কলেজ প্রাঙ্গণ। বেধড়ক নৃশংস মারধরের পর কলেজের সামনেই রাস্তায় ফেলে পিঠে তরোয়াল চালিয়ে রক্তাক্ত করা হল কলেজ ছাত্রকেই। স্কুলের মেয়াদ শেষ করে কলেজ জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছে যে ছাত্রছাত্রীরা, তাদের চোখের সামনেই এই বেপরোয়া হামলা চালালো তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা। ভর্তির সময় পড়ুয়ার সঙ্গে আসা অভিভাবকরা বাধা দিলে তাঁদেরও শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায় তৃণমূলীরা। মঙ্গলবার হাওড়ার বালি লালবাবা কলেজ প্রাঙ্গণে এভাবেই উন্মত্ত হাঙ্গামা চললো বহিরাগত তৃণমূলী দুষ্কৃতীদের আক্রমণে। 

মঙ্গলবার দুপুরে এই হামলায় দুষ্কৃতীদের নেতৃত্ব দিয়েছেন বালি পৌরসভার বিরোধী দলনেতা রিয়াজ আহমেদ, বালি ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মল্লিকা দাস। মঙ্গলবার দুপুরে এই তৃণমূলী হামলায় শুধু কলেজছাত্র বা এস এফ আই সংগঠক বা ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকরাই নন, পথচলতি সাধারণ মানুষও আক্রান্ত হন। তবে এদিন দুপুরের পর রাত পর্যন্ত লালবাবা কলেজ ছেড়ে বালিতে সি পি আই (এম)-র একটি লোকাল কমিটির অফিসেও সশস্ত্র হামলা চালায় তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা। হামলায় আহত হয়েছেন আরও তিন-চারজন পার্টিকর্মী।

শনিবারই হাওড়ার নরসিংহ দত্ত কলেজে অস্ত্র উদ্ধারের নাটকের মোড়কে এস এফ আই-এর কর্মী সংগঠকদের ওপর সশস্ত্র তৃণমূলীদের আক্রমণ ও আক্রান্তদেরই নামে জামিন অযোগ্য মিথ্যা মামলা দায়ের করে ছাত্র সংসদ দখলের চেষ্টা চলে। এরপর মঙ্গলবারই হাওড়ার বালি লালবাবা কলেজে চললো ফের তৃণমূলী সশস্ত্র হামলা। বালি লালবাবা কলেজে এই হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন এস এফ আই সংগঠক সৌমেন চ্যাটার্জি, দেবরাজ পাত্র, অরিন্দম রায়, সুকোমল আচার্য, রাজদীপ মুখার্জি এবং কলেজের বি কম তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ভাস্কর মুখার্জি, বি কম প্রথম বর্ষের ছাত্র অভিজিৎ বাগ, দেবাংশু ঘোষ প্রমুখ।

মঙ্গলবার থেকেই বালি লালবাবা কলেজে স্নাতক স্তরে ভর্তির ফরম দেওয়া শুরু হয়। স্বভাবতই এইসময় কলেজে অনেক নতুন ছাত্রছাত্রী ও তাঁদের অভিভাবকরা আসেন। ঠিক এই ভর্তির সময়টাই বেছে নিয়ে এদিন দুপুরে বহিরাগত তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা হামলা চালালো কলেজছাত্রদের ওপর। সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের সঙ্গে নিয়েই তৃণমূল নেতা বলরাম ভট্টাচার্য, বালি ব্লকের তৃণমূলী সভানেত্রী মল্লিকা দাস এবং বালি পৌরসভার বিরোধী দলনেতা লালবাবা কলেজে ঢুকতে গেলে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের বাধা দেয়। কলেজের বৈধ পরিচয়পত্র তাদের না থাকলেও জোর করেই ভয় দেখিয়ে তারা কলেজে ঢোকে। এরপর কলেজের এস এফ আই কর্মী-সমর্থক, ছাত্রছাত্রীদের দুষ্কৃতীরা মারধর শুরু করে। এইসময়েই এস এফ আই নেতা সৌমেন চ্যাটার্জিকে রাস্তায় ফেলে পিঠে তরোয়াল চালানো হয়। আহত সৌমেনকে বেলুড় স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তাঁর পিঠে পাঁচটি সেলাই করতে হয়। এলাকার দাগী দুষ্কৃতী ভীম দাস এস এফ আই কর্মী রাজদীপ মুখার্জির মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে এস এফ আই ছাড়ার হুমকি দেয়।

কলেজ কর্তৃপক্ষ এই ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনায় থানায় অভিযোগ জানালে পুলিস ও আধা-সামরিক বাহিনী কলেজে আসে বটে, কিন্তু তাদের সামনেই চলে তৃণমূলী দুষ্কৃতীদের অকথ্য মারধর, অশালীন আচরণ। কলেজেই আত্মীয়কে ভর্তি করতে এসেছিলেন এক অভিভাবিকা। ছাত্রীদের উদ্দেশে অশালীন ব্যবহারের প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। তার ফলে উন্মত্ত দুষ্কৃতীরা তাঁরও শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায়। কলেজের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এদিন তৃণমূলীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন পথচারী সন্টু দে, চিরঞ্জীব দে, সোমনাথ মল্লিকরা। আক্রান্ত হয়ে তাঁরাও বালি থানায় পৃথকভাবেই অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু না, কোনক্ষেত্রেই পুলিস প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। 

এদিকে এদিন রাত পর্যন্ত বালিতে সি পি আই (এম)-র অফিসও ঘেরাও করে আক্রমণের চেষ্টা চালায় সশস্ত্র তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা। জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে লালবাবা কলেজে একপ্রস্থ হামলা চালানোর পরে উলটে তৃণমূলী আক্রমণকারীরাই বালি থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করে। এরপর সেই সশস্ত্র তৃণমূলী বাহিনী থানা থেকে দলবেঁধে যায় বালি দক্ষিণ আঞ্চলিক কমিটির দপ্তরে। সেখানে ইঁট-পাটকেল ছুঁড়ে আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গেই ফের আক্রান্ত জখম সৌমেন চ্যাটার্জিকে পেয়ে আরও মারধর করে। তাঁর মুখ, চোখ ফেটে যায়। তৃণমূলীদের আক্রমণে আহত হয়েছেন পার্টিকর্মী রাকেশ গাঙ্গুলি, চিরঞ্জীব দে, স্নেহজিৎ ভাওয়াল। দীর্ঘক্ষণ পার্টি দপ্তর ঘিরে 'অস্ত্র রয়েছে' এমন সাজানো অভিযোগ তুলে হামলা চালানো হয়। পুলিস এলেও পুলিসের সামনেই পার্টিকর্মীরা আক্রান্ত হন। 

পার্টির দপ্তরে তৃণমূলী দুষ্কৃতীদের এই আক্রমণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সি পি আই (এম)-র হাওড়া জেলা কমিটির সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকে আমাদের পার্টির দপ্তরগুলি বন্ধ করার জন্য যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, এই আক্রমণও তার অঙ্গ। এঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। প্রশাসনকে অত্যন্ত কড়া হাতে এই আক্রমণ বন্ধের জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। সাধারণ মানুষের কাছেও আমাদের আবেদন, জনজীবনের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলি হরণের এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সরব হোন। 

মঙ্গলবার দুপুরে বালিতে লালবাবা কলেজেই শুধু তৃণমূলীরা হামলা চালায়নি একইসঙ্গে হাওড়ার উলুবেড়িয়া কলেজেও তৃণমূলী হামলায় চালায়। বহিরাগত তৃণমূলী দুষ্কৃতীদের সশস্ত্র আক্রমণে কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকের হাত ভেঙে যায়। উলুবেড়িয়া কলেজে বুধবার থেকে ভর্তির ফরম দেওয়া শুরু হবে। তাই আগের দিনই অনেক ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা এসেছিলেন কলেজে প্রয়োজনীয় জরুরী তথ্য জানতে। ভর্তি সংক্রান্ত সেই তথ্য দিয়েই পড়ুয়াদের সাহায্য করছিলেন কলেজের এস এফ আই কর্মী এবং বি এ প্রথম বর্ষের ছাত্র সৌমিক পাঁজা এবং কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধি আসিফুজ্জামান। লাঠি, রড দিয়ে তাঁদের ওপর আক্রমণ চালায় সশস্ত্র তৃণমূলীরা। এই আক্রমণের নিন্দা করে প্রতিবাদ জানাতেই কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সোয়েব মহম্মদ অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জানাতে গেলে অধ্যক্ষের ঘরের সামনেই তাঁকে বেধড়ক মারে তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা। দুষ্কৃতীদের আক্রমণে তাঁর একটি হাত ভেঙে যায়। এই আক্রমণের প্রতিবাদ জানিয়েই এদিন উলুবেড়িয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এস এফ আই-র পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করে দুষ্কৃতীদের শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে এবং কলেজের ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তারও দাবি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার হাওড়ার এই দুটি কলেজেই তৃণমূলীদের ন্যক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এস এফ আই হাওড়া জেলা কমিটির সম্পাদক বিশ্বজিৎ ঘোষ। তিনি বলেন, নির্বাচিত কলেজ ছাত্র সংসদগুলি অগণতান্ত্রিক উপায়ে দখলের লক্ষ্যেই বহিরাগত দুষ্কৃতীদের নিয়ে কলেজে কলেজে হামলার কর্মসূচীতে নেমেছে তৃণমূলীরা। কলেজের ছাত্রছাত্রীদের সতর্ক থেকে প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এদিকে মঙ্গলবার একইসঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে এবং মেদিনীপুর কলেজেও নৃশংস হামলা চালিয়েছে তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা। এদিন ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়ায় ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার্থেই ক্যাম্প করে তথ্য জানানোর কাজ করছিলেন এস এফ আই কর্মী সংগঠকরা। ঐ ক্যাম্পেই হামলা চালিয়ে এস এফ আই-র ইউনিট সভাপতি অরিজিৎ ঘোষকে জখম করে তৃণমূলীরা। একইরকমভাবে এদিন মেদিনীপুর কলেজেও বহিরাগত তৃণমূলী দুষ্কৃতীদের আক্রমণে জখম হয়েছেন এস এফ আই-র নেতা প্রসেনজিৎ মুদলি।

পাহাড় নিয়ে চুক্তির বয়ান প্রকাশের
দাবি বিরোধী দলনেতার

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ৭ই জুন - পাহাড়ের সমস্যা সমাধানে কী চুক্তি হয়েছে, তা জনসমক্ষে প্রকাশ করার দাবি জানালেন বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। একইসঙ্গে এই চুক্তি কার্যকর করতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তাও মানুষকে জানানোর দাবি জানিয়েছেন তিনি। 

মঙ্গলবার মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ ভবনে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মুখে যা বললেন সেটা শুনেছি। কিন্তু বুঝতে পারছি না ঠিক কী কী শর্তে এই চুক্তি হয়েছে। মুখের কথায় তো কিছু বলা যায় না। যদি উনি একটা লিখিত বিবৃতি দিতেন, তাহলেও সেটা বোঝা যেত এবং তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট মতামত দেওয়া সম্ভব হতো। রাজ্যবাসীরই শুধু নয়, গোটা দেশের মানুষের জানার অধিকার রয়েছে কোন শর্তে এই চুক্তি হয়েছে। সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, সেজন্য আমরা দাবি জানাচ্ছি যে এই চুক্তির বয়ান অবিলম্বে প্রকাশ করা হোক। পাশাপাশি চুক্তি কার্যকর করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে সেটাও জানানো হোক।

Image

হিন্দুস্তান কেবলস লোয়ার কেশিয়ায় সি আই টি ইউ অফিস দখলমুক্ত করছেন শ্রমিকরা।

Back Previous Pageমতামত

লালঝাণ্ডা কাঁধে শ্রমিকরাই দখলমুক্ত করলেন ইউনিয়ন অফিস

নিজস্ব প্রতিনিধি

চিত্তরঞ্জন, ৭ই জুন— শ্রমিক ইউনিয়ন অফিস তৃণমূলের দখলদারি থেকে মুক্ত করে নিলেন এলাকার শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষই। হিন্দুস্তান কেবলসের লোয়ার কেশিয়ায় সোমবার সন্ধ্যায় সি আই টি ইউ অফিস পরিতোষ শীল স্মৃতিভবনের তালা ভেঙে, সি আই টি ইউ-র রক্তপতাকা নামিয়ে তৃণমূলের পতাকা তুলে দখল করে তৃণমূলের দুষ্কৃতীবাহিনী।

চিত্তরঞ্জন, হিন্দুস্তান কেবলস, এমনকি ঝাড়খণ্ডের হাসিপহাড়ির দুষ্কৃতীদের জড়ো করে সি আই টি ইউ অফিস দখলের অভিযান চালানো হয়। দুষ্কৃতীরা আগ্নেয়াস্ত্র, রড, লাঠি সহ বড় রকমের হামলার প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল। সি আই টি ইউ নেতৃবৃন্দ কোনোভাবেই প্ররোচতে পা দেননি। অভিযোগ জানান রূপনারায়ণপুর ফাঁড়িতে। রাতেই সি আই টি ইউ জরুরী বৈঠক করে মঙ্গলবার অফিস দখলমুক্ত করার কর্মসূচী গ্রহণ করে। মঙ্গলবার সকাল ১১টায় রূপনারায়ণপুর পুলিস ফাঁড়িতে ডেপুটেশন দেন সি আই টি ইউ কর্মীরা। স্মারকলিপি দেওয়া হয় ভারপ্রাপ্ত আধিকারিককে। ডেপুটেশনে সি আই টি ইউ নেতৃবৃন্দ পুলিস প্রশাসনকে এলাকায় আইনের শাসন বজায় রাখার দাবি জানিয়েছেন। দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানানো হয়েছে। বক্তব্য রাখেন শ্রমিকনেতা মেঘনাদ ব্যানার্জি, প্রদীপ সাহা। 

রূপনারায়ণপুর ফাঁড়ি থেকে এরপর লালপতাকা কাঁধে দীর্ঘ মিছিলে সি আই টি ইউ কর্মীরা লোয়ার কেশিয়ায় এসে শহীদ পরিতোষ শীল স্মৃতিভবনের দ্বার উন্মোচন করেন, রক্তপতাকা তুলে, পুনরায় সাইনবোর্ড লাগিয়ে অফিস ঘর দখলমুক্ত করেন। প্রায় চারশো সি আই টি ইউ কর্মী এদিন লোয়ার কেশিয়ায় উপস্থিত ছিলেন। দখলমুক্ত হওয়ার পর বক্তব্য রাখেন সি পি আই (এম) রাজ্য কমিটির সদস্য ডি ওয়াই এফ আই রাজ্য সম্পাদক আভাস রায়চৌধুরী, কৃষকনেতা নুরুল ইসলাম, শ্রমিকনেতা অলোক ঘোষ, প্রদীপ সাহা প্রমুখ। নেতৃবৃন্দ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে, বামপন্থী নেতাকর্মীদের উপর আক্রমণ হলে রাজনৈতিকভাবেই তা মোকাবিলা করবে বামপন্থীরা। সি আই টি ইউ-র অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিস তৃণমূলের এক দুষ্কৃতী সুকান্ত রায়কে গ্রেপ্তার করে জামিনে মুক্তি দেয়। মঙ্গলবার পুলিস এসে অফিসের তালা তুলে দেয়।

পশ্চিমবঙ্গে হামলার প্রতিবাদ পাঞ্জাবেও

নিজস্ব প্রতিনিধি

চণ্ডীগড়, ৭ই জুন— পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থী কর্মী সমর্থকদের ওপর আক্রমণের প্রতিবাদে পাঞ্জাবজুড়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে সি আই টি ইউ। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের পর সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলার ঘটনায় ১২জন বামপন্থী কর্মী-সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে সি আই টি ইউ-র দপ্তরে। এই বর্বরোচিত আক্রমণের প্রতিবাদে মঙ্গলবার পাঞ্জাবের লঙ্গোয়াল, সাঙরুর, রোপার এবং হোসিয়ারপুর জেলায় মিছিল এবং বিক্ষোভ সমাবেশ করেন সি আই টি ইউ কর্মীরা। লঙ্গোয়াল জেলায় বিরাট মিছিল হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন প্রায় ৫০০জন সি আই টি ইউ কর্মী ও সমর্থক। এই মিছিল থেকে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস-কংগ্রেসের হামলায় সাধারণ মানুষ, সি আই টি ইউ কর্মী ও সমর্থক এবং বামপন্থায় বিশ্বাসী মানুষকে নৃশংস আক্রমণ ও সুপরিকল্পিতভাবে খুন করার ঘটনাকে ধিক্কার জানানো হয়। মিছিল শেষে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সি আই টি ইউ পাঞ্জাব রাজ্য কমিটি-র সাধারণ সম্পাদক রঘুনাথ সিং। পশ্চিমবঙ্গে সি আই টি ইউ কর্মী সমর্থকদের ওপর তৃণমূল কংগ্রেস-কংগ্রেস জোটের তরফে এই হামলার ঘটনাগুলির প্রতিবাদ জানান তিনি। অবিলম্বে এই হামলা বন্ধ করার ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করারও দাবি জানান তিনি। 

মঙ্গলবার রাজ্যের রোপার শহরে সি আই টি ইউ অনুমোদিত স্বরাজ মাজদা ঠিকাচালক ইউনিয়নের ডাকে মিছিল হয়। এই মিছিলে ২০০জন অংশগ্রহণ করেন। মিছিল থেকে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস-কংগ্রেস জোটের দুষ্কৃতীদের আক্রমণে সি আই টি ইউ কর্মী সমর্থকদের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়। অন্যদিকে হোসিয়ারপুরের সাতনাউর গ্রামে সভা হয়। এই সভায় স্থানীয় ইটভাটা ও রেগা-র শ্রমিকরা অংশগ্রহণ করেন।

 


পাহাড়ে ফের আশার আলো
নতুন সংস্থা গড়েই অবশেষে সমঝোতা
ক্ষমতায় এলে তিন মাসের মধ্যে পাহাড়-সমস্যার সমাধান করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসার ১৮ দিনের মাথাতেই 'কথা রাখলেন' মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার মহাকরণে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতৃত্বের সঙ্গে দার্জিলিং চুক্তি স্বাক্ষর করল রাজ্য সরকার। সেই চুক্তি মোতাবেক পাহাড়ে গড়া হবে নতুন বিধিবদ্ধ স্বশাসিত সংস্থা। গোর্খাল্যান্ডের দাবি 'হৃদয়ে রেখে'ও যে ব্যবস্থায় আপাতত খুশি মোর্চা নেতৃত্ব। 
পাহাড়ের সমস্যার সমাধানের রাস্তা মসৃণ করতে পেরে তৃপ্ত মুখ্যমন্ত্রীও। মহাকরণে তিনি বলেন, "অফিসার পর্যায়ে এ দিন দার্জিলিং চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়ে গিয়েছে। আজকের দিনটি একটি ঐতিহাসিক দিন। রাজ্যবাসী, দার্জিলিঙের ভাই-বোনদের কাছে আজ খুবই আনন্দের দিন।" 
পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি যে মানবেন না, তা আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন মমতা। অতীতের 'বঞ্চনা' ভুলে দার্জিলিংকে সামনে রেখে উত্তরবঙ্গকে 'সুইৎজারল্যান্ড' গড়ে তোলার ডাক দিয়েছিলেন তিনি। সেই ডাকে সাড়া না-দিয়ে উন্নয়নের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ালে বন্ধ-বয়কটে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত পাহাড়বাসীর ক্ষোভ সামাল দেওয়া যে মুশকিল হবে, তা বিলক্ষণ বুঝেছিলেন মোর্চা নেতৃত্ব। সেই কারণেই মহাকরণে চুক্তি স্বাক্ষরের পরে দার্জিলিঙে বসে মুখ্যমন্ত্রীর আন্তরিকতায় উচ্ছ্বসিত মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ বলেন, "আমাদের হৃদয়ে রয়েছে গোর্খাল্যান্ড। সেই দাবি থেকে আমরা সরিনি। তবে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন সংস্থা গড়ার যে দাবি আমরা তুলেছিলাম, নতুন রাজ্য সরকার তা মেনে নিয়েছে। তাতে তরাই-ডুয়ার্সের কিছু এলাকা অন্তর্ভুক্ত করার দাবিও খতিয়ে দেখবে রাজ্য। এটা অবশ্যই পাহাড়বাসীর জয়।" 
মোর্চা প্রতিনিধিদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের আলোচনা শুরু হয়েছিল সোমবার। দ্বিতীয় দফায় আলোচনার পরে এ দিন মহাকরণে চুক্তিপত্রে সই করেন স্বরাষ্ট্রসচিব জ্ঞানদত্ত গৌতম এবং মোর্চা নেতা রোশন গিরি। চুক্তি সইয়ের সময় রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষও উপস্থিত ছিলেন। এর পর খুব শীঘ্রই কেন্দ্রের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যসচিব।
বোঝাপড়া। চুক্তি সইয়ের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
সঙ্গে মোর্চা নেতা রোশন গিরি। মঙ্গলবার মহাকরণে। সুমন বল্লভ
মোর্চা নেতাদের সঙ্গে চুক্তির খবর এ দিন মহাকরণ থেকেই টেলিফোনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদমম্বরমকে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, "কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমি চুক্তি স্বাক্ষরের সুখবরটি দিয়েছি। কেন্দ্র বরাবরই পাহাড়ের সমস্যার সমাধানে আন্তরিক ছিল। তারা আরও ত্রিপাক্ষিক বৈঠক করতে চেয়েছিল। আমরা চাইছি, টেকনিক্যাল কিছু বিষয় নিয়ে সর্বশেষ বৈঠকটি আমরা দার্জিলিঙেই করব। আমরা সবাই মিলে পাহাড়ে গিয়ে চকবাজারে মিলিত হব। আমরা চাই, এক সপ্তাহের মধ্যেই ত্রিপাক্ষিক বৈঠকটি ডাকা হোক।" মোর্চা সূত্রের খবর, গুরুঙ্গও চাইছেন, আগামী ১৫ জুনের মধ্যেই পাহাড়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হোক। সেই মতো মোর্চার তরফেও কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। 
কী ভাবে সমস্যার জট কাটল? 
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "হৃদয় এবং সমস্যার সমাধান করার সদিচ্ছা থেকেই সমস্যার সমাধান হয়েছে। এর মধ্যে আর কোনও জটিলতা নেই। সব পক্ষই শান্তি চেয়েছেন। ফর্মুলা মূলত ওই একটাই।" তিনি আরও বলেন, "পাহাড়ের মানুষের দীর্ঘদিনের আন্দোলন, তাঁদের ইচ্ছা ও ভাবাবেগকে মর্যাদা দিয়েই সব করা হয়েছে। আমরা চাই, পাহাড়ের ভাই-বোনেরা ভাল থাকুন। শান্তিতে থাকুন। সমতলের মানুষেরাও শান্তিতে থাকুন, ভাল থাকুন।" সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আপনারা কী বলতে চাইছেন, বুঝতে পারছি। খুঁতখুঁত করে লাভ নেই। আমরা আমাদের মাতৃভূমিকে ভালবাসি। ওঁরাও দার্জিলিঙের পাহাড়কে ভালবাসেন। সব পক্ষেরই মর্যাদা রাখা হয়েছে।" 
এ দিন যে চুক্তি হয়েছে তাতে মোর্চা খুশি। কারণ, নতুন স্বশাসিত সংস্থা গড়ার প্রক্রিয়া শেষ করতে অন্তত ৬ মাস লাগবে। তার আগে পর্যন্ত বর্তমান পার্বত্য পরিষদ চালাতে যে বোর্ড গঠন করা হবে তাতে মোর্চার ৩ বিধায়ককেও রাখবে রাজ্য সরকার। ওই বোর্ডের অধীনে নয়া সংস্থার নির্বাচন হওয়ার কথা। মোর্চা যখন আগের বাম সরকারের সঙ্গে আলোচনায় অন্তর্বর্তী স্বশাসনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছিল, তখন সাময়িক ভাবে তারা মনোনীত বোর্ড গঠনের প্রস্তাব দিলেও সরকার তা মানতে চায়নি। কিন্তু নতুন সরকার মনে করছে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিতদের বোর্ডে মনোনীত করলে কোনও বিতর্ক উঠবে না।
বহু বার বৈঠক করেও আগের বাম সরকার দ্বিপাক্ষিক কোনও চুক্তিপত্রে মোর্চাকে সই করাতে পারেনি। মাত্র ১৮ দিনে কোন জাদুবলে তা সম্ভব হল? মোর্চার অন্দরের খবর, দায়িত্ব গ্রহণের পরেই মুখ্যমন্ত্রী গুরুঙ্গদের জানিয়ে দেন, আলোচনার নামে গোটা বিষয়টিকে ঝুলিয়ে না-রেখে চটজলদি সমাধানের রাস্তা খুঁজতে হবে। জনজীবন ও অর্থনীতি বিপর্যস্ত করে দীর্ঘদিন আন্দোলনও বরদাস্ত করা হবে না। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবও রোশন গিরি, গুরুঙ্গদের সঙ্গে কথা বলেন।
দ্বিপাক্ষিক চুক্তি
এক নজরে

* দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদের পরিবর্তে নতুন সংস্থা
*
 নির্বাচনের মাধ্যমে এই সংস্থা গঠন। আগামী অধিবেশনেই বিল
প্রশাসনিক, আর্থিক ক্ষমতা ও অন্য কিছু ক্ষেত্রে বিধি তৈরির ক্ষমতা
তরাই-ডুয়ার্সের কিছু এলাকা সংযোজনের দাবি দেখতে কমিটি
দু'সপ্তাহের মধ্যে সেই কমিটি গঠন। রিপোর্ট ছ'মাসে 
কমিটির রিপোর্টের জন্য আটকাবে না নতুন আইন তৈরি
সংস্থাকে চা বাগানের জমির দখল দেওয়ার প্রশ্নেও কমিটি 
সংস্থাকে অভয়ারণ্যের দায়িত্ব প্রশ্নে কেন্দ্র-রাজ্য কথা হবে
এখনই রাজ্য যা করবে
বর্তমান পার্বত্য পরিষদ চালাবে নয়া বোর্ড।
প্রশাসনের প্রতিনিধিরা ছাড়াও বোর্ডে মোর্চার তিন বিধায়ক
পার্বত্য পরিষদের ৬ হাজার অস্থায়ী কর্মীকে সব সরকারি সুবিধা
পাহাড়ের সার্বিক উন্নয়নে বিশেষ প্যাকেজ
সম্ভব হলে এক সপ্তাহের ম
ধ্যেই দার্জিলিঙে ত্রিপাক্ষিক।
মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে চূড়ান্ত সমঝোতাপত্র সই
মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া না-দিলে মোর্চার বিরুদ্ধে পাহাড়ের মানুষের ক্ষোভ যে তুঙ্গে পৌঁছবে, তা আঁচ করেই চুক্তিপত্রে সই করতে দ্বিরুক্তি করেননি রোশন গিরি, হরকাবাহাদুর ছেত্রীরা। চুক্তি সইয়ের পরে রোশন বলেছেন, "আমরা খুশি। ভীষণ খুশি। সামান্য কিছু সমস্যা ছিল তার কিছু মিটে গিয়েছে। বাকিটা মুখ্যমন্ত্রী মিটিয়ে দেবেন। আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে পাহাড়ে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি।" তবে পাহাড়ে এখনই বিজয় উৎসবের রাস্তায় হাঁটছে না মোর্চা। গুরুঙ্গ এ দিন বলেন, "আমাদের প্রতিনিধিরা কলকাতা থেকে ফিরুন। ওঁরা ফিরলে দলীয় বৈঠকের পরে পাহাড়বাসীর সামনে সব খোলাখুলি জানিয়ে যা করার করব।" 
এ দিনের চুক্তিতে পাহাড়বাসীর জন্য উপহার কিছু কি দেওয়া হয়েছে? জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "কোনও বিয়েবাড়িতে গেলে আমি কি খালি হাতে যাই? কিছু উপহার তো নিয়েই যাই। এর মধ্যে নতুনত্ব কী আছে?" 
সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, বর্তমানে যে পার্বত্য পরিষদ রয়েছে, তা জিএনএলএফের আন্দোলনের জেরে সুবাস ঘিসিংয়ের সঙ্গে রাজ্য ও কেন্দ্রের ত্রিপাক্ষিক চুক্তির ফসল। ওই চুক্তিতে প্রধানত আর্থিক ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়েছিল ঘিসিঙের হাতে। এ বার আর্থিক ক্ষমতার পাশাপাশি নতুন সংস্থার হাতে প্রশাসনিক ক্ষমতাও তুলে দেওয়া হবে। মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, আইনের সংস্থানকে মাথায় রেখে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিধি তৈরির ক্ষমতাও দেওয়া হবে নতুন সংস্থাকে। সেই সঙ্গে আগের পরিষদের অস্থায়ী কর্মীরা যাতে সরকারি বিধি মেনে সব সুবিধে পান, সেই ব্যবস্থাও করবে রাজ্য। 
এর পাশাপাশি মোর্চার বক্তব্য, তরাই-ডুয়ার্সের কিছু এলাকাকে সংস্থার আওতায় আনার যে দাবি এত দিন গ্রাহ্যই হয়নি, তা এ বার খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে সরকার। উপরন্তু, চা বাগান ও অভয়ারণ্যের উপরে কর্তৃত্ব করার দাবি বিবেচনারও আশ্বাস মিলেছে। মোর্চার এক কেন্দ্রীয় কমিটির নেতার কথায়, "ঘিসিংয়ের আমলের চেয়ে বেশি ক্ষমতা ও বাড়তি এলাকা নিয়ে নয়া সংস্থা হচ্ছে। সেই সঙ্গে রয়েছেন 'আন্তরিক' মুখ্যমন্ত্রী। তা হলে অন্য কোনও বিতর্কে এখনই যাব কেন? মিলেমিশে থাকতে চাই আমরাও।"

প্রসঙ্গ পাহাড়-সমস্যার 'সমাধান'
কেউ বলছেন, চুক্তিপত্র দেখে নিই, কেউ হুমকি দিচ্ছেন আন্দোলনের
কেউ চুক্তিপত্র ভাল করে দেখে বুঝেশুনে এগোতে চাইছেন। কেউ আবার গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যেমন বামেরা চুক্তিপত্র দেখার পরেই সবিস্তার মন্তব্য করতে চান। একই ভাবে সুবাস ঘিসিংও ক'দিন পরিস্থিতি দেখার পরে মুখ খুলতে চান। পক্ষান্তরে, আদিবাসী বিকাশ পরিষদ তো রাজ্য সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। পরিষদের রাজ্য সভাপতি বিরসা তিরকে বলেছেন, "সরকার কী ভাবে পাহাড় সমস্যা মেটাবে, তা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। সীমানা ঠিক করার জন্য কমিটি হচ্ছে শুনেছি। আমরা বলতে চাই, ওতে তরাই-ডুয়ার্স কোনও ভাবে থাকবে না। তা হলে আমরা চুপ করে বসে থাকব না। জোরদার আন্দোলন হবে।"
মঙ্গলবার দুপুরে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মোর্চা নেতৃত্বের বৈঠকের পরে সরকারের তরফে পাহাড় সমস্যার সমাধান হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এর পরেই দার্জিলিং পাহাড় এবং সমতল জুড়ে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। পাহাড়ের মোর্চা বিরোধী দলগুলি বিমল গুরুঙ্গের বিরুদ্ধে 'বিশ্বাসঘাতকতা'র অভিযোগ তুলেছে। সিপিআরএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অরুণ ঘাটানি বলেন, "মোর্চা পাহাড়ের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করল। আলাদা রাজ্যের দাবিকে সামনে রেখে ওঁরা ভোটে লড়েছিল। এমনকী, প্রয়োজনে রাজ্যের জন্য বিধায়কেরা ইস্তফা দেবেন বলে গুরুঙ্গ ঘোষণা করেন। অথচ কলকাতা গিয়ে 'গোর্খাল্যান্ডের' নামও মুখে আনছেন না। আমরা মোর্চার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামব।"
গোর্খা লিগও চুক্তিপত্রের বিষয়টি নিয়ে সংশয়ে পড়েছে। দলের এক নেতা জানান, গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সামনে রেখে যে দলের উত্থান, তারা কী ভাবে এমন চুক্তি করতে পারেন, সেটা স্পষ্ট হয়নি। গোর্খা লিগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহন শর্মা বলেন, "আমরা শীঘ্রই বৈঠক ডেকে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করব। তার পরেই কর্মসূচি চূড়ান্ত করব।"
গত ডিসেম্বরে নয়াদিল্লিতে মোর্চার সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে যিনি অংশ নিয়েছিলেন, সেই প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যও চুক্তিপত্র ভাল করে দেখে বিশদে মন্তব্য করতে চান। আপাতত তাঁর বক্তব্য, "অন্তর্বর্তী স্বশাসনের ব্যাপারে মোর্চা তো আগেও রাজি হয়েছিল। পাহাড়ে গিয়েই সুর বদলে ফেলে। যাই হোক, পাহাড় সমস্যার দ্রুত সমাধান হলে আমরা সবচেয়ে বেশি খুশি হব। কিন্তু নতুন স্বশাসিত সংস্থার সীমানা, পার্বত্য পরিষদের অবস্থা, গোর্খাল্যান্ড নিয়ে বক্তব্য ছাড়াও চুক্তির বিস্তারিত বিষয় এখনও স্পষ্ট নয়। আমরা তা পুরোপুরি খতিয়ে দেখেই মন্তব্য করতে চাই।" একই ভাবে সিপিআই-এর দার্জিলিং জেলা সম্পাদক উজ্জ্বল চৌধুরীর বক্তব্য, "ভোটের আগে রাজ্য, কেন্দ্রের সঙ্গে মোর্চার কথাবার্তা যে দিকে এগোচ্ছিল, তাই হয়েছে বলে আপাতত মনে হচ্ছে। এতো তা হলে নতুন কিছু নয়!" যাঁর বিরোধিতা করে বিমল গুরুঙ্গের উত্থান, সেই সুবাস ঘিসিং এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি। জলপাইগুড়িতে অরবিন্দনগরে ভাড়াবাড়িতে থাকেন ঘিসিং। দোতলা বাড়ির বড় ঘরে টিভি পর্দাতেই দুপুর থেকে মনোনিবেশ করেছিলেন জিএনএলএফ সুপ্রিমো। গোটা পাহাড়, তরাই থেকে বহু অনুগামী, কর্মী সমর্থকদের টেলিফোনও এসেছে তাঁর কাছে। তবে তিনি কোনও টেলিফোন ধরেননি। শুধুমাত্র পাহাড়ের কয়েক জন জিএনএলএফ নেতাকে টেলিফোন করে পরিস্থিতির উপরে নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এক বিশ্বস্ত সঙ্গীর মাধ্যমে এ দিন ঘিসিং জানিয়েছেন, সরকার ও মোর্চার মধ্যে চুক্তিপত্র খতিয়ে দেখার পরেই দ্রুত তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করে যা বলার বলবেন। অন্য দিন বিকেলের পরে বাড়ির ছাদে ও বারান্দায় সময় কাটালেও এ দিন তিনি ঘরের বাইরে আসেননি।
বিতর্কিত জমির ১১ ঘর ছাই
চাপানউতোর দু'দলে
কটি জমির দখল নিয়ে বিবাদ ছিলই। ওই জমিতে থাকা ১১টি ঘর আগুনে পুড়ে যাওয়ার ঘটনায় রহস্য দানা বাঁধছে রাজগঞ্জ থানার বেলাকোবার স্টেশন কলোনি এলাকায়। সোমবার সন্ধ্যায় সাড়ে ৬ টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। খবর পেয়ে দমকলের দুটি ইঞ্জিন পৌঁছে ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় আগুন আয়ত্বে আনে। ঘটনাস্থলে যান জলপাইগুড়ি সদর সার্কেল ইন্সপেক্টর পিনাকী মজুমদার। এলাকায় উত্তেজনা ছড়ালে জেলা পুলিশের তরফে ঘটনাস্থলে র্যাফও পাঠানো হয়। সেখানে যান রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায়ও। জেলা পুলিশের এক অফিসার বলেন, "একটি বিতর্কিত জমির দখল নিয়ে বেলাকোবা স্টেশন কলোনি এলাকার দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে গোলমাল চলছিল। ভোটের আগে এলাকার বেশ কিছু লোকজন প্রায় ৬ বিঘা জমি জোর করে দখল করে নিয়ে ঘর তোলে বলে অভিযোগ। এ দিন সাড়ে ৬ নাগাদ কে বা কারা ওই ঘরগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। ঘটনার তদন্ত চলছে। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে।" রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায়ের অভিযোগ, ওই জমির মূল মালিক বেলাকোবা পন্ডিতের বাড়ি এলাকার হাতেম আলি নামে এক ব্যক্তির। স্টেশন কলোনির সুরেন বর্মন ও তাপস দাসরা ওই জমির বর্গাদার ছিল। চাষআবাদ করতেন। একশ্রেণির সিপিএম নেতার মদতে সিপিএমের কিছু লোকজন এবার বিধানসভা ভোটের আগে রাতের অন্ধকারে জমিটি দখল নিয়ে ঘরবাড়ি তোলে। পুলিশে অভিযোগও হয়। আদালতে মামলাও চলছে। মামলায় হেরে যাওয়ার ভয়ে সিপিএমের ওই দখলদাররা এদিন নিজেরাই ঘরগুলিতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে তৃণমূলের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চাইছে।" অন্তত ১১ টি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১১ টি ঘরে ভাঙচুর করা হয়েছে বলে খগেশ্বরবাবুরা দাবি করেছেন। সিপিএম অবশ্য অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে। সিপিএমের রাজগঞ্জ জোনাল কমিটির সম্পাদক সুশীল সোম বলেন, "এই ঘটনার সঙ্গে সিপিএমের কোনও সম্পর্ক নেই। তৃণমূল বিষয়টিতে রাজনৈতিক রং চড়ানোর চেষ্টা করেছে। প্রায় ২২ টির মতো গরিব পরিবার মিলে ওই জমিটা দখল করেছিল। দখলদারদের মধ্যে তৃণমূলের লোকজনও রয়েছে।" সিপিএমের দাবি,  জমিটা ছিল জলপাইগুড়ির রাজপরিবারের। বেলাকোবাতে রাজার প্রায় ৩০০ বিঘের মতো জমি ছিল। বেলাকোবার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য রাজার আমলেই "মঙ্গলপল্লি' ট্রাস্টের নামে জমিটি দান করা হয়। বহু জমি জবর দখল হয়ে যায়। তার মধ্যে সুরেন বর্মন ও তাপস দাসরা ওই দখল করে চাষবাস করত। একসময়ে জমিটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। খাস জমি বলে মনে করে ওই পরিবারগুলি বসতবাড়ির জন্য জমিটি দখল করে। অভিযোগ অস্বীকার করে সুরেন বর্মন ও তাপস দাসরা বলেন, "ওরা মঙ্গলপল্লি ট্রাস্টের জমি বলে দাবি করলে করলেও তাঁরা কোনও কাগজপত্র দেখাতে পারছে না। আমাদের নামে জমির বর্গাদার রের্কডের কাগজপত্র রয়েছে। প্রায় ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে ওই জমি আমরা ভোগদখল করে আসছি। এবারও আমরা ধান চাষ করেছিলাম। গত ২৯ নভেম্বর ধান কেটে ঘরে তোলার পর ওই দিন রাতের অন্ধকারে সিপিএমের লোকজন জমিটি দখল করে নেয়।" সিপিএমের সব নেতাদের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। লাভ হয়নি।"

No comments:

Post a Comment